বার্ন ইনস্টিটিউট থেকে বাসায় ফিরেছে আরও এক শিক্ষার্থী
শনিবার মাইলস্টোন স্কুলে যুদ্ধবিমান বিধ্বস্তের ঘটনায় হতাহতদের জন্য দোয়া করা হয় -সংবাদ
‘পৌনে দুই বছর ধরে আমি এই কলেজের দায়িত্বে আছি। কোনো দিন একটার সময়, ছুটির সময় আমি বাইরে যাই না। আমি বারান্দায় দাঁড়াই, হাঁটাহাঁটি করি, শিক্ষকদের, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের দায়িত্ব পালন দেখি, স্টুডেন্টদের দেখি। ওই দিন প্রধান শিক্ষিকা (দিয়াবাড়ি ক্যাম্পাসের বাংলা ভার্সনের ) ডেকে নিয়ে গেলেন, ১টার সময় দুইজন নতুন শিক্ষকের সাক্ষাৎকার নেবেন। বেলা ১টা ৪ মিনিটের দিকে বের হয়ে সেখানে গেলাম। আর ১টা ১২ থেকে ১৩ মিনিটের মাঝামাঝি সময়ে দুর্ঘটনা ঘটল। না হলে হয়তো আমিও লাশ হতে যেতাম।’
শনিবার,(২ আগস্ট ২০২৫) সকালে উত্তরার দিয়াবাড়িতে মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজে যুদ্ধবিমান বিধ্বস্তের ঘটনায় নিহত ব্যক্তিদের আত্মার মাগফিরাত ও আহত ব্যক্তিদের দ্রুত আরোগ্য লাভের কামনায় শোক ও দোয়া অনুষ্ঠানের আয়োজন করে কর্তৃপক্ষ। সেখানে এসব কথা বলেন মাইলস্টোন স্কুলের দিয়াবাড়ী ক্যাম্পাসের অধ্যক্ষ ক্যাপ্টেন (অব.) জাহাঙ্গীর খান। অধ্যক্ষ বলেন, ‘যে বাচ্চারা আমাদের ছেড়ে গেছে, তাদের আত্মার মাগফিরাত কামনা করি। এই দুর্ঘটনা যদি ১টা ৪-৫ মিনিটের দিকেও হতো, তাহলে আমরা যে কত কিছু হারাতাম, আরও কতজন মা-বাবা যে সন্তানহারা হতেন, কারণ, স্কুল ছুটির পর প্রায় ১০ মিনিট লাগে বাচ্চাদের বের হতে।’
এ সময় অধ্যক্ষ উদ্ধারকাজে শিক্ষক-কর্মচারীদের ভূমিকার কথা স্মরণ করেন। তিনি বলেন,‘আপনাদের কষ্ট, আপনাদের বেদনা সবকিছুর প্রতি আন্তরিক শ্রদ্ধা জানাই। যদি কারও মনে এতটুকুও মনে হয় অবহেলাজনিত কারণে, এর দায় একমাত্র আমার আর কারও নয়। আপনারা যেকোনো বিচার করতে পারেন।’
অনুষ্ঠানে মাইলস্টোন স্কুলের সপ্তম শ্রেণির ইংরেজি মাধ্যমের শিক্ষার্থী জারিফ ফারহানের বাবাকে কিছু বলার জন্য অনুরোধ জানানো হয়। বাবা হাবিবুর রহমান বলেন, ‘সেদিন নাকি ও (জারিফ) স্কুলে আসতে চায়নি।
ওর মা বলল।’ তিনি আরও বলেন, ‘ছেলেটা আমার খুব চটপটে ছিল। সে খুব ফ্রেন্ডলি ছিল।’
স্কুলের বাংলা মাধ্যমের সহকারী শিক্ষক মাসুকা বেগমও যুদ্ধবিমান বিধ্বস্ত হওয়ার ঘটনায় নিহত হয়েছেন। তার শরীরের ৮৫ শতাংশ পুড়ে গিয়েছিল। সহকর্মীরা বলেছেন, তিনি চাইলে কক্ষ থেকে দৌড়ে বের হয়ে যেতে পারতেন। কিন্তু বাচ্চাদের রেখে রুম থেকে বের হননি। মাসুকার দুলাভাই খলিলুর রহমান বলেন,‘আমরা ব্রাহ্মণবাড়িয়া থেকে বিমান বিধ্বস্তের ঘটনা শুনতে পাই। সঙ্গে সঙ্গে মাসুকার সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করি। কিন্তু পাচ্ছিলাম না। ঢাকায় স্কুলে এসেও তার খোঁজ নেয়া হয়। তারপরও পাচ্ছিলাম না। পরে হাসপাতালে তার খোঁজ পাওয়া যায়।’
শোক ও দোয়া অনুষ্ঠানের শুরুতে নিহত ব্যক্তিদের স্মরণে দাঁড়িয়ে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়। পরে বক্তব্য দেন প্রধান শিক্ষিকা খাদিজা আক্তার।
শেষে নিহত ব্যক্তিদের স্মরণে দোয়া করা হয়। এ সময় মাইলস্টোনের নির্বাহী অধ্যক্ষ রিফাত নবী আলম উপস্থিত ছিলেন। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন কলেজের ইংরেজি
শিক্ষক নুসরাত আলম।
বাসায় ফিরেছে আরও
এক শিক্ষার্থী
জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউট থেকে চিকিৎসা শেষে বাসায় ফিরেছে মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের আরও এক আহত শিক্ষার্থী। ৯ বছর বয়সী ওই শিক্ষার্থীর নাম শ্রেয়া ঘোষ। গত শনিবার সকালে বার্ন ইনস্টিটিউটের আবাসিক চিকিৎসক শাওন বিন রহমান বলেন, মাইলস্টোনে যুদ্ধবিমান বিধ্বস্তের ঘটনায় আহত হয়ে শ্রেয়া হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিল। তার শারীরিক অবস্থা এখন স্থিতিশীল। তাই তাকে হাসপাতাল থেকে ছুটি দেয়া হয়েছে।
বার্ন ইনস্টিটিউটের তথ্য অনুযায়ী, এখন পর্যন্ত মাইলস্টোন স্কুলে যুদ্ধবিমান বিধ্বস্তের ঘটনায় আহত হয়ে ভর্তি হওয়া ৯ জন শিক্ষার্থী চিকিৎসা শেষে বাসায় ফিরেছে। বর্তমানে আরও ২৮ জন ইনস্টিটিউটের বিভিন্ন ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন রয়েছে। গত ২১ জুলাই দুপুরে রাজধানীর উত্তরা এলাকায় মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের মূল ভবনে বাংলাদেশ বিমানবাহিনীর একটি যুদ্ধবিমান বিধ্বস্ত হয়। ভয়াবহ আগুন আর ধ্বংসস্তূপের নিচে চাপা পড়ে ঘটনাস্থলেই প্রাণ হারায় বেশ কয়েকজন। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, ওই ঘটনায় এখন পর্যন্ত ৩৪ জন নিহত হয়েছে। তাদের অধিকাংশই স্কুলের শিক্ষার্থী। আহত অবস্থায় বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছে আরও অন্তত ৪৮ জন।
বার্ন ইনস্টিটিউট থেকে বাসায় ফিরেছে আরও এক শিক্ষার্থী
শনিবার মাইলস্টোন স্কুলে যুদ্ধবিমান বিধ্বস্তের ঘটনায় হতাহতদের জন্য দোয়া করা হয় -সংবাদ
শনিবার, ০২ আগস্ট ২০২৫
‘পৌনে দুই বছর ধরে আমি এই কলেজের দায়িত্বে আছি। কোনো দিন একটার সময়, ছুটির সময় আমি বাইরে যাই না। আমি বারান্দায় দাঁড়াই, হাঁটাহাঁটি করি, শিক্ষকদের, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের দায়িত্ব পালন দেখি, স্টুডেন্টদের দেখি। ওই দিন প্রধান শিক্ষিকা (দিয়াবাড়ি ক্যাম্পাসের বাংলা ভার্সনের ) ডেকে নিয়ে গেলেন, ১টার সময় দুইজন নতুন শিক্ষকের সাক্ষাৎকার নেবেন। বেলা ১টা ৪ মিনিটের দিকে বের হয়ে সেখানে গেলাম। আর ১টা ১২ থেকে ১৩ মিনিটের মাঝামাঝি সময়ে দুর্ঘটনা ঘটল। না হলে হয়তো আমিও লাশ হতে যেতাম।’
শনিবার,(২ আগস্ট ২০২৫) সকালে উত্তরার দিয়াবাড়িতে মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজে যুদ্ধবিমান বিধ্বস্তের ঘটনায় নিহত ব্যক্তিদের আত্মার মাগফিরাত ও আহত ব্যক্তিদের দ্রুত আরোগ্য লাভের কামনায় শোক ও দোয়া অনুষ্ঠানের আয়োজন করে কর্তৃপক্ষ। সেখানে এসব কথা বলেন মাইলস্টোন স্কুলের দিয়াবাড়ী ক্যাম্পাসের অধ্যক্ষ ক্যাপ্টেন (অব.) জাহাঙ্গীর খান। অধ্যক্ষ বলেন, ‘যে বাচ্চারা আমাদের ছেড়ে গেছে, তাদের আত্মার মাগফিরাত কামনা করি। এই দুর্ঘটনা যদি ১টা ৪-৫ মিনিটের দিকেও হতো, তাহলে আমরা যে কত কিছু হারাতাম, আরও কতজন মা-বাবা যে সন্তানহারা হতেন, কারণ, স্কুল ছুটির পর প্রায় ১০ মিনিট লাগে বাচ্চাদের বের হতে।’
এ সময় অধ্যক্ষ উদ্ধারকাজে শিক্ষক-কর্মচারীদের ভূমিকার কথা স্মরণ করেন। তিনি বলেন,‘আপনাদের কষ্ট, আপনাদের বেদনা সবকিছুর প্রতি আন্তরিক শ্রদ্ধা জানাই। যদি কারও মনে এতটুকুও মনে হয় অবহেলাজনিত কারণে, এর দায় একমাত্র আমার আর কারও নয়। আপনারা যেকোনো বিচার করতে পারেন।’
অনুষ্ঠানে মাইলস্টোন স্কুলের সপ্তম শ্রেণির ইংরেজি মাধ্যমের শিক্ষার্থী জারিফ ফারহানের বাবাকে কিছু বলার জন্য অনুরোধ জানানো হয়। বাবা হাবিবুর রহমান বলেন, ‘সেদিন নাকি ও (জারিফ) স্কুলে আসতে চায়নি।
ওর মা বলল।’ তিনি আরও বলেন, ‘ছেলেটা আমার খুব চটপটে ছিল। সে খুব ফ্রেন্ডলি ছিল।’
স্কুলের বাংলা মাধ্যমের সহকারী শিক্ষক মাসুকা বেগমও যুদ্ধবিমান বিধ্বস্ত হওয়ার ঘটনায় নিহত হয়েছেন। তার শরীরের ৮৫ শতাংশ পুড়ে গিয়েছিল। সহকর্মীরা বলেছেন, তিনি চাইলে কক্ষ থেকে দৌড়ে বের হয়ে যেতে পারতেন। কিন্তু বাচ্চাদের রেখে রুম থেকে বের হননি। মাসুকার দুলাভাই খলিলুর রহমান বলেন,‘আমরা ব্রাহ্মণবাড়িয়া থেকে বিমান বিধ্বস্তের ঘটনা শুনতে পাই। সঙ্গে সঙ্গে মাসুকার সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করি। কিন্তু পাচ্ছিলাম না। ঢাকায় স্কুলে এসেও তার খোঁজ নেয়া হয়। তারপরও পাচ্ছিলাম না। পরে হাসপাতালে তার খোঁজ পাওয়া যায়।’
শোক ও দোয়া অনুষ্ঠানের শুরুতে নিহত ব্যক্তিদের স্মরণে দাঁড়িয়ে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়। পরে বক্তব্য দেন প্রধান শিক্ষিকা খাদিজা আক্তার।
শেষে নিহত ব্যক্তিদের স্মরণে দোয়া করা হয়। এ সময় মাইলস্টোনের নির্বাহী অধ্যক্ষ রিফাত নবী আলম উপস্থিত ছিলেন। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন কলেজের ইংরেজি
শিক্ষক নুসরাত আলম।
বাসায় ফিরেছে আরও
এক শিক্ষার্থী
জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউট থেকে চিকিৎসা শেষে বাসায় ফিরেছে মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের আরও এক আহত শিক্ষার্থী। ৯ বছর বয়সী ওই শিক্ষার্থীর নাম শ্রেয়া ঘোষ। গত শনিবার সকালে বার্ন ইনস্টিটিউটের আবাসিক চিকিৎসক শাওন বিন রহমান বলেন, মাইলস্টোনে যুদ্ধবিমান বিধ্বস্তের ঘটনায় আহত হয়ে শ্রেয়া হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিল। তার শারীরিক অবস্থা এখন স্থিতিশীল। তাই তাকে হাসপাতাল থেকে ছুটি দেয়া হয়েছে।
বার্ন ইনস্টিটিউটের তথ্য অনুযায়ী, এখন পর্যন্ত মাইলস্টোন স্কুলে যুদ্ধবিমান বিধ্বস্তের ঘটনায় আহত হয়ে ভর্তি হওয়া ৯ জন শিক্ষার্থী চিকিৎসা শেষে বাসায় ফিরেছে। বর্তমানে আরও ২৮ জন ইনস্টিটিউটের বিভিন্ন ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন রয়েছে। গত ২১ জুলাই দুপুরে রাজধানীর উত্তরা এলাকায় মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের মূল ভবনে বাংলাদেশ বিমানবাহিনীর একটি যুদ্ধবিমান বিধ্বস্ত হয়। ভয়াবহ আগুন আর ধ্বংসস্তূপের নিচে চাপা পড়ে ঘটনাস্থলেই প্রাণ হারায় বেশ কয়েকজন। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, ওই ঘটনায় এখন পর্যন্ত ৩৪ জন নিহত হয়েছে। তাদের অধিকাংশই স্কুলের শিক্ষার্থী। আহত অবস্থায় বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছে আরও অন্তত ৪৮ জন।