মালয়েশিয়ায় কাজ করতে ইচ্ছুক বাংলাদেশি শ্রমিকদের শোষণের অভিযোগে গঠিত সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে তদন্ত কার্যক্রম বন্ধের সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাংলাদেশ সরকার। মালয়েশিয়ার প্রভাবশালী অনলাইন সংবাদমাধ্যম মালয়েশিয়াকিনি’কে এক উচ্চপদস্থ বাংলাদেশি কর্মকর্তা এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই কর্মকর্তা জানান, দুই সপ্তাহ আগে কুয়ালালামপুরে মালয়েশিয়ার মানবসম্পদ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে এক বৈঠকে বাংলাদেশ সরকারের বিশেষ দূত ও প্রধান উপদেষ্টার একজন বিশেষ সহকারী অংশ নেন। বৈঠকে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে তদন্ত বন্ধ করার প্রতিশ্রুতি দেয়া হয়, যাতে মালয়েশিয়া আবারও বাংলাদেশি শ্রমিক নিয়োগ শুরু করতে পারে।
তিনি বলেন, ‘আমাদের দুই প্রতিনিধি মালয়েশিয়ায় গিয়ে একটি উচ্চপর্যায়ের বৈঠকে অংশ নেন। সেখানে তদন্ত কার্যক্রম বন্ধের বিষয়ে সমঝোতা হয়। তবে মালয়েশিয়ার মানবসম্পদ মন্ত্রণালয়ের একজন মুখপাত্র মালয়েশিয়াকিনি’কে বলেন, সেই বৈঠকের কোনো অস্তিত্ব নেই। এর বাইরে তিনি বিস্তারিত কিছু জানাননি।’
এর আগে মালয়েশিয়ার পক্ষ থেকে বাংলাদেশে একটি চিঠি পাঠানো হয়। যেখানে বলা হয়, তদন্তগুলো ভিত্তিহীন এবং এটি মালয়েশিয়ার ভাবমূর্তি ক্ষুণ্য করছে। ২০২৫ সালের ২৩ এপ্রিল পাঠানো চিঠিতে আরও উল্লেখ করা হয়, যেসব মামলা আগে প্রক্রিয়ার মাধ্যমে বাতিল হয়েছে, সেগুলো পুনরায় খোলার কোনো যৌক্তিকতা নেই। এতে আমাদের মানবপাচার প্রতিরোধে অগ্রগতি ব্যাহত হবে।
২০২৪ সালের ২১ অক্টোবর ঢাকায় গ্রেপ্তার হন প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সাবেক মন্ত্রী ইমরান আহমেদ। তখন বিভিন্ন পত্রিকার খবরে জানানো হয়, মালয়েশিয়ায় কর্মী পাঠানোর প্রক্রিয়ায় জড়িত একটি সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে তদন্তে তার নাম উঠে আসে।
গত বছরের সেপ্টেম্বরে একটি শ্রমিক নিয়োগ সংস্থার মালিক ১০৩ জনের বিরুদ্ধে পুলিশে অভিযোগ দায়ের করেন, যার মধ্যে ইমরান আহমেদের নামও ছিল। অভিযোগে বলা হয়, ২০২১ সালের ১৯ ডিসেম্বর স্বাক্ষরিত দ্বিপক্ষীয় সমঝোতা স্মারক (এমওইউ)-এর আওতায় নির্বাচিত এজেন্সিগুলোর মাধ্যমে মানবপাচার,
দুর্নীতি ও শোষণের ঘটনা ঘটে।
২০২২ থেকে ২০২৪ সালের মধ্যে ৪ লাখ ৮০ হাজারেরও বেশি বাংলাদেশি শ্রমিক মালয়েশিয়ায় প্রবেশ করেন। কিন্তু বিভিন্ন এনজিও অভিযোগ করেছে, অনেক শ্রমিক প্রতিশ্রুত চাকরি পাননি, ঋণের বোঝায় জর্জরিত হয়ে পড়েছেন এবং কিছু ক্ষেত্রে মালয়েশিয়ান কর্তৃপক্ষের হাতে গ্রেপ্তারও হয়েছেন। একাধিক শ্রমিক জানিয়েছেন, মালয়েশিয়ায় যাওয়ার জন্য প্রতিজনকে ২৫ হাজার রিঙ্গিত পর্যন্ত দিতে হয়েছে, যা প্রায়ই ঋণ নিয়ে পরিশোধ করতে হয়েছে অথচ গন্তব্যে পৌঁছে কোনো চাকরি মেলেনি।