জুলাই আন্দোলনের সময় যাত্রাবাড়ীতে গুলিবিদ্ধ হওয়া খোকন চন্দ্র বর্মণ রোববার আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে সাক্ষ্য দিয়েছেন। নিজের ক্ষতবিক্ষত মুখমণ্ডল দেখিয়ে তিনি ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সর্বোচ্চ শাস্তি দাবি করেন।
ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটর তাজুল ইসলামের সূচনা বক্তব্যের মধ্য দিয়ে শেখ হাসিনা, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল ও সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুনের বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় প্রথমবার সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু হয়। এই মামলায় ১৪০০ জনকে হত্যার উসকানি, প্ররোচনা, নির্দেশনা, ‘সুপিরিয়র কমান্ড রেসপনসেবিলিটি’ ও ‘জয়েন্ট ক্রিমিনাল এন্টারপ্রাইজ’সহ পাঁচটি অভিযোগ আনা হয়েছে।
আদালতে এদিন হাজির করা হয় কারাগারে থাকা একমাত্র আসামি চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মামুনকে। শর্তসাপেক্ষে ‘রাজসাক্ষী’ হওয়ার তার আবেদন মঞ্জুর করা হয়।
বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন ট্রাইব্যুনাল সোমবার পরবর্তী সাক্ষ্যগ্রহণের দিন ঠিক করেছে।
‘শেখ হাসিনার সর্বোচ্চ শাস্তি চাই’
জুলাই অভ্যুত্থনের সময়কার দমন-পীড়নের ঘটনায় দায়ের করা মামলাগুলোর মধ্যে এই মামলাতেই প্রথম সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু হলো। অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান এদিন আদালতে উপস্থিত থেকে বলেন, “ব্যক্তি নয়, অপরাধই মুখ্য। যেই হোক, অপরাধ করলে বিচার হবেই। পৃথিবীর ইতিহাসে শেখ হাসিনার মত স্বৈরাচার আর জন্ম নেয়নি। তিনি সর্বোচ্চ মিথ্যাবাদী শাসক।”
তিনি আরও বলেন, “স্বৈরাচার ও তার সহযোগীদের সর্বোচ্চ শাস্তি চাই আমরা। এই বিচার মানব সভ্যতার ইতিহাসে একটি মানদণ্ড হয়ে থাকবে। শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে কোনো ক্যাঙ্গারু কোর্ট নয়, প্রকৃত ন্যায়বিচার চাই।”
চিফ প্রসিকিউটর তাজুল ইসলাম বলেন, “এই বিচার অতীতের প্রতিশোধ নয়, জনগণের আস্থা পুনঃস্থাপনের একটি প্রক্রিয়া। জাতীয় ও আন্তর্জাতিক মানদণ্ড মেনে বিচার চলবে।”
‘বাঁচার আশা ছেড়ে দিয়েছিলেন’ খোকন
মামলার প্রথম সাক্ষী হিসেবে ২৩ বছর বয়সী খোকন চন্দ্র বর্মণ আদালতে সাক্ষ্য দেন। যাত্রাবাড়ীতে গুলিবিদ্ধ হয়ে তার বাঁ চোখ নষ্ট হয়ে গেছে এবং নাক-মুখে গুরুতর জখম হয়েছে। দেশে চিকিৎসার পর তাকে রাশিয়ায় পাঠানো হয় চিকিৎসার জন্য।
খোকন বলেন, ১৮ জুলাই নারায়ণগঞ্জের সাইনবোর্ড এলাকায় ছাত্র আন্দোলনে অংশ নেন। পরদিন ফের আন্দোলনে বের হলে ভুঁইঘর থেকে জালকুঁড়ির দিকে যাওয়ার পথে পুলিশের গুলিতে একজন নিহত হন। এরপর থেকেই তিনি নিয়মিত আন্দোলনে যুক্ত ছিলেন।
৫ আগস্ট সকাল ৯টা থেকে সাইনবোর্ড মোড়ে অবস্থান নেন। পরে ঢাকার দিকে মিছিল গেলে দুপুরে যাত্রাবাড়ী পৌঁছালে পুলিশের গুলিতে অনেকেই নিহত ও আহত হন।
খোকনের ভাষায়, তারা “স্বৈরাচার, ভুয়া, ভুয়া” স্লোগান দিচ্ছিলেন। সামনে এগোতেই পুলিশ আবার গুলি চালায়। একজনের মাথা ছেদ করে গুলি বেরিয়ে যায়, আরেকজনও আহত হন।
তিনি বলেন, পরে সেনাবাহিনী এসে পুলিশকে চলে যেতে বলে এবং সেখানে অবস্থান নেয়। খবর আসে শেখ হাসিনা পদত্যাগ করেছেন, এরপর সেনাবাহিনী চলে যায়। তখন পুলিশ ফের বেরিয়ে এসে ‘পাখির মতো’ গুলি চালায়। ফ্লাইওভারের নিচে লুকিয়ে থাকা অবস্থায় তিনি গুলিবিদ্ধ হন।
মুখে গুলি লাগলে তিনি ছটফট করতে থাকেন। এ সময় মুখের মাস্ক সরিয়ে ক্ষতবিক্ষত চেহারা ট্রাইব্যুনালের সামনে তুলে ধরেন।
তিনি জানান, ছাত্ররা তাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যায়। মুগদা, ঢাকা মেডিকেল, মিরপুর ডেন্টাল, এরপর বার্ন ইউনিটে চিকিৎসা হয়। ১০ দিন ছিলেন আইসিইউতে। চিকিৎসা শেষ না হওয়ায় তাকে রাশিয়ায় পাঠানো হয় এবং ৭ এপ্রিল দেশে ফেরেন। আবার ১২ আগস্ট চিকিৎসার জন্য রাশিয়া যাবেন, ১৮ আগস্ট তার অপারেশন।
তিনি শেখ হাসিনা, আসাদুজ্জামান খান কামাল, চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মামুন, ওবায়দুল কাদের, শামীম ওসমানের বিচার চান। তাদের বিরুদ্ধে ‘হাজার হাজার মানুষ হত্যার’ অভিযোগ তোলেন।
‘সত্য বলেছি’— বললেন খোকন
সাক্ষ্য শেষে পলাতক শেখ হাসিনা ও আসাদুজ্জামান খানের পক্ষে রাষ্ট্রনিযুক্ত আইনজীবী আমির হোসেন তাকে জেরা করেন। তিনি দাবি করেন, পুলিশ গুলি চালায়নি; আন্দোলনকারীরাই আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহার করে নিজেদের আহত করেছেন।
খোকন বলেন, “এটা সত্য না।”
আইনজীবী আরও বলেন, শেখ হাসিনা ও অন্যরা দায়ী নন, খোকন ‘সত্য গোপন করে অসত্য জবানবন্দি’ দিয়েছেন।
জবাবে খোকন বলেন, “সত্য জবানবন্দি দিয়েছি।”
সাক্ষ্য ও জেরা শেষে আদালত পরবর্তী শুনানির জন্য সোমবার দিন ধার্য করে শুনানি মুলতবি করে।
গত ১০ জুলাই এ মামলায় শেখ হাসিনাসহ তিনজনের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেয় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। মামলায় অন্তর্বর্তী সরকারের দুই উপদেষ্টা ও এক জাতীয় দৈনিকের সম্পাদকের সহযোগে মোট ৮১ জনকে সাক্ষী করা হয়েছে।
রোববার, ০৩ আগস্ট ২০২৫
জুলাই আন্দোলনের সময় যাত্রাবাড়ীতে গুলিবিদ্ধ হওয়া খোকন চন্দ্র বর্মণ রোববার আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে সাক্ষ্য দিয়েছেন। নিজের ক্ষতবিক্ষত মুখমণ্ডল দেখিয়ে তিনি ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সর্বোচ্চ শাস্তি দাবি করেন।
ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটর তাজুল ইসলামের সূচনা বক্তব্যের মধ্য দিয়ে শেখ হাসিনা, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল ও সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুনের বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় প্রথমবার সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু হয়। এই মামলায় ১৪০০ জনকে হত্যার উসকানি, প্ররোচনা, নির্দেশনা, ‘সুপিরিয়র কমান্ড রেসপনসেবিলিটি’ ও ‘জয়েন্ট ক্রিমিনাল এন্টারপ্রাইজ’সহ পাঁচটি অভিযোগ আনা হয়েছে।
আদালতে এদিন হাজির করা হয় কারাগারে থাকা একমাত্র আসামি চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মামুনকে। শর্তসাপেক্ষে ‘রাজসাক্ষী’ হওয়ার তার আবেদন মঞ্জুর করা হয়।
বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন ট্রাইব্যুনাল সোমবার পরবর্তী সাক্ষ্যগ্রহণের দিন ঠিক করেছে।
‘শেখ হাসিনার সর্বোচ্চ শাস্তি চাই’
জুলাই অভ্যুত্থনের সময়কার দমন-পীড়নের ঘটনায় দায়ের করা মামলাগুলোর মধ্যে এই মামলাতেই প্রথম সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু হলো। অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান এদিন আদালতে উপস্থিত থেকে বলেন, “ব্যক্তি নয়, অপরাধই মুখ্য। যেই হোক, অপরাধ করলে বিচার হবেই। পৃথিবীর ইতিহাসে শেখ হাসিনার মত স্বৈরাচার আর জন্ম নেয়নি। তিনি সর্বোচ্চ মিথ্যাবাদী শাসক।”
তিনি আরও বলেন, “স্বৈরাচার ও তার সহযোগীদের সর্বোচ্চ শাস্তি চাই আমরা। এই বিচার মানব সভ্যতার ইতিহাসে একটি মানদণ্ড হয়ে থাকবে। শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে কোনো ক্যাঙ্গারু কোর্ট নয়, প্রকৃত ন্যায়বিচার চাই।”
চিফ প্রসিকিউটর তাজুল ইসলাম বলেন, “এই বিচার অতীতের প্রতিশোধ নয়, জনগণের আস্থা পুনঃস্থাপনের একটি প্রক্রিয়া। জাতীয় ও আন্তর্জাতিক মানদণ্ড মেনে বিচার চলবে।”
‘বাঁচার আশা ছেড়ে দিয়েছিলেন’ খোকন
মামলার প্রথম সাক্ষী হিসেবে ২৩ বছর বয়সী খোকন চন্দ্র বর্মণ আদালতে সাক্ষ্য দেন। যাত্রাবাড়ীতে গুলিবিদ্ধ হয়ে তার বাঁ চোখ নষ্ট হয়ে গেছে এবং নাক-মুখে গুরুতর জখম হয়েছে। দেশে চিকিৎসার পর তাকে রাশিয়ায় পাঠানো হয় চিকিৎসার জন্য।
খোকন বলেন, ১৮ জুলাই নারায়ণগঞ্জের সাইনবোর্ড এলাকায় ছাত্র আন্দোলনে অংশ নেন। পরদিন ফের আন্দোলনে বের হলে ভুঁইঘর থেকে জালকুঁড়ির দিকে যাওয়ার পথে পুলিশের গুলিতে একজন নিহত হন। এরপর থেকেই তিনি নিয়মিত আন্দোলনে যুক্ত ছিলেন।
৫ আগস্ট সকাল ৯টা থেকে সাইনবোর্ড মোড়ে অবস্থান নেন। পরে ঢাকার দিকে মিছিল গেলে দুপুরে যাত্রাবাড়ী পৌঁছালে পুলিশের গুলিতে অনেকেই নিহত ও আহত হন।
খোকনের ভাষায়, তারা “স্বৈরাচার, ভুয়া, ভুয়া” স্লোগান দিচ্ছিলেন। সামনে এগোতেই পুলিশ আবার গুলি চালায়। একজনের মাথা ছেদ করে গুলি বেরিয়ে যায়, আরেকজনও আহত হন।
তিনি বলেন, পরে সেনাবাহিনী এসে পুলিশকে চলে যেতে বলে এবং সেখানে অবস্থান নেয়। খবর আসে শেখ হাসিনা পদত্যাগ করেছেন, এরপর সেনাবাহিনী চলে যায়। তখন পুলিশ ফের বেরিয়ে এসে ‘পাখির মতো’ গুলি চালায়। ফ্লাইওভারের নিচে লুকিয়ে থাকা অবস্থায় তিনি গুলিবিদ্ধ হন।
মুখে গুলি লাগলে তিনি ছটফট করতে থাকেন। এ সময় মুখের মাস্ক সরিয়ে ক্ষতবিক্ষত চেহারা ট্রাইব্যুনালের সামনে তুলে ধরেন।
তিনি জানান, ছাত্ররা তাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যায়। মুগদা, ঢাকা মেডিকেল, মিরপুর ডেন্টাল, এরপর বার্ন ইউনিটে চিকিৎসা হয়। ১০ দিন ছিলেন আইসিইউতে। চিকিৎসা শেষ না হওয়ায় তাকে রাশিয়ায় পাঠানো হয় এবং ৭ এপ্রিল দেশে ফেরেন। আবার ১২ আগস্ট চিকিৎসার জন্য রাশিয়া যাবেন, ১৮ আগস্ট তার অপারেশন।
তিনি শেখ হাসিনা, আসাদুজ্জামান খান কামাল, চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মামুন, ওবায়দুল কাদের, শামীম ওসমানের বিচার চান। তাদের বিরুদ্ধে ‘হাজার হাজার মানুষ হত্যার’ অভিযোগ তোলেন।
‘সত্য বলেছি’— বললেন খোকন
সাক্ষ্য শেষে পলাতক শেখ হাসিনা ও আসাদুজ্জামান খানের পক্ষে রাষ্ট্রনিযুক্ত আইনজীবী আমির হোসেন তাকে জেরা করেন। তিনি দাবি করেন, পুলিশ গুলি চালায়নি; আন্দোলনকারীরাই আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহার করে নিজেদের আহত করেছেন।
খোকন বলেন, “এটা সত্য না।”
আইনজীবী আরও বলেন, শেখ হাসিনা ও অন্যরা দায়ী নন, খোকন ‘সত্য গোপন করে অসত্য জবানবন্দি’ দিয়েছেন।
জবাবে খোকন বলেন, “সত্য জবানবন্দি দিয়েছি।”
সাক্ষ্য ও জেরা শেষে আদালত পরবর্তী শুনানির জন্য সোমবার দিন ধার্য করে শুনানি মুলতবি করে।
গত ১০ জুলাই এ মামলায় শেখ হাসিনাসহ তিনজনের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেয় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। মামলায় অন্তর্বর্তী সরকারের দুই উপদেষ্টা ও এক জাতীয় দৈনিকের সম্পাদকের সহযোগে মোট ৮১ জনকে সাক্ষী করা হয়েছে।