alt

জাতীয়

সপ্তাহের প্রথম কর্মদিবস: সমাবেশ, পরীক্ষা, রাজধানীতে তীব্র যানজট

সংবাদ অনলাইন রিপোর্ট : রোববার, ০৩ আগস্ট ২০২৫

রাজনৈতিক সমাবেশ, এইচএসসি ও বিসিএস পরীক্ষার মতো একাধিক গুরুত্বপূর্ণ কার্যক্রম একদিনে আয়োজনের ফলে রোববার,(০৩ আগস্ট ২০২৫) সকাল থেকে রাজধানীতে সৃষ্টি হয়েছে তীব্র যানজট। দিনের শুরু থেকেই প্রধান প্রধান সড়কে ধীরগতির যানবাহন, গাদাগাদি করে গণপরিবহনে ওঠা, বাসস্টপে অপেক্ষমাণ যাত্রীদের দীর্ঘ সারি এবং অতিরিক্ত সময় ধরে গন্তব্যে পৌঁছাতে গিয়ে নগরবাসীর অসন্তোষ-সবমিলিয়ে শহরজুড়ে সৃষ্টি হয় অস্বস্তিকর পরিবেশ।

সপ্তাহের প্রথম কর্মদিবস হওয়ায় অফিসগামী মানুষের চাপ এমনিতেই বেশি থাকে। এর মধ্যে একযোগে অনুষ্ঠিত হচ্ছে উচ্চমাধ্যমিক সার্টিফিকেট (এইচএসসি) পরীক্ষা এবং ৪৫তম বিসিএসের লিখিত পরীক্ষা। অন্যদিকে ঢাকায় দুটি রাজনৈতিক দলের সমাবেশ, সমাবেশ ঘিরে নগরীতে বাড়তি বাহনের আগমন, এক সাংস্কৃতিক উৎসব এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর নিয়ন্ত্রণমূলক ব্যবস্থা রাজধানীর যানবাহন চলাচলকে করে তোলে প্রায় স্থবির।

জুলাই গণঅভ্যুত্থানের বর্ষপূর্তি উপলক্ষে ঢাকায় সমাবেশে করেছে তিনটি সংগঠন। একদিকে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে ‘জুলাই ঘোষণাপত্র ও সনদের’ দাবিতে সমাবেশ করেছে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি), অন্যদিকে শাহবাগে ‘ছাত্র সমাবেশ’ করেছে বিএনপির ছাত্র সংগঠন বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল। একইসঙ্গে সোহ্রাওয়ার্দী উদ্যানে ছিল সাংস্কৃতিক সংগঠন সাইমুম শিল্পীগোষ্ঠীর অনুষ্ঠান। তিনটি সমাবেশে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ঢাকায় আসেন নেতাকর্মীরা।

রাজধানীর শাহবাগ, কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার ও সোহ্রাওয়ার্দী উদ্যানে রোববার পৃথক সমাবেশ ও অনুষ্ঠান চলছে। এসব আয়োজনকে ঘিরে গতকাল শনিবারই সংশ্লিষ্ট এলাকায় যান চলাচল নিয়ন্ত্রণে বিশেষ নির্দেশনা জারি করে ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি)। হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টাল মোড়, সোনারগাঁও সিগন্যাল/বাংলামোটর ক্রসিং হয়ে উত্তর দিক থেকে আসা যানবাহনকে হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টাল ক্রসিংয়ে সোজা শাহবাগের দিকে না গিয়ে বামে মোড় নিয়ে হেয়ার রোড/মিন্টু রোড হয়ে যাতায়াত করবে।

কাঁটাবন মোড়, সায়েন্সল্যাব ক্রসিং হয়ে পশ্চিম দিক থেকে আসা যানবাহন কাঁটাবন মোড় থেকে শাহবাগের দিকে না গিয়ে ডানে মোড় নিয়ে নীলক্ষেত/পলাশী হয়ে অথবা কাঁটাবন মোড় থেকে বামে মোড় নিয়ে সোনারগাঁও (হাতিরপুল) রোড হয়ে বাংলামোটর লিংক রোড দিয়ে চলাচল করবে।

মৎস্য ভবন মোড়, হাইকোর্ট/কদম ফোয়ারা ক্রসিং হয়ে আসা যানবাহনসমূহ মৎস্য ভবন থেকে শাহবাগের দিকে না গিয়ে সোজা হেয়ার রোড/শহীদ ক্যাপ্টেন মনসুর আলী সরণি (মগবাজার রোড) হয়ে চলাচল করবে। অপরদিকে

কাকরাইল মসজিদ ক্রসিং হয়ে উত্তর দিক থেকে আসা যানবাহন মৎস্যভবন ক্রসিং থেকে শাহবাগের দিকে না গিয়ে সোজা হাইকোর্ট হয়ে গুলিস্তান/ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দিকে চলাচল করবে।

টিএসসি/রাজু ভাস্কর্য, নীলক্ষেত ক্রসিং/দোয়েল চত্বর ক্রসিং থেকে আসা যানবাহন টিএসটি/রাজু ভাস্কর্য ক্রসিংয়ে এসে শাহবাগের দিকে না গিয়ে দোয়েল চত্বর/নীলক্ষেত ক্রসিং হয়ে চলাচল করবে। এছাড়া শহীদ মিনারসংলগ্ন সড়ক এবং সোহ্রাওয়ার্দী উদ্যানের প্রবেশ পথ যথাসম্ভব পরিহার করার জন্য অনুরোধ করেছে পুলিশ। এ কারণে ঢাকাবাসীকে বিশেষ করে এইচএসসি ও বিসিএস পরীক্ষার্থীদের হাতে পর্যাপ্ত সময় নিয়ে পরীক্ষা কেন্দ্রের উদ্দেশে রওনা হতে অনুরোধ জানানো হয়েছে গণবিজ্ঞপ্তিতে।

রাজধানীতে প্রবেশ করে বাড়তি পাবলিক বাস। এতে সকাল ৮টা থেকে শুরু হয় যানজট। বিশেষ করে কারওয়ানবাজার, ফার্মগেট, শ্যামলী, মিরপুর-১০, বিজয় সরণি, রামপুরা, মৌচাক, শাহবাগ, নীলক্ষেত, পলাশী, চাঁদনী চক, গাবতলী, কলাবাগান, যাত্রাবাড়ী, সায়েন্সল্যাব, আজিমপুর ও মালিবাগ এলাকায় গাড়ির গতি ছিল অত্যন্ত ধীর। সড়কে যানবাহনের ভিড়ের কারণে শুধু ব্যক্তি গাড়ি নয়, গণপরিবহনও নির্ধারিত সময়ে চলতে পারছিল না।

সকাল ৯টার দিকে ফার্মগেট দাঁড়িয়ে ইয়াকুব নামের এক বেসরকারি চাকরিজীবী বলেন, ‘আজ তো পুরো নরক পরিস্থিতি। বাসে উঠতেই এক ঘণ্টা লেগে গেছে। তারপর ঝুলে ঝুলে এসেছি। গাবতলী থেকে ফার্মগেট আসতে যেখানে সাধারণত ৩০-৪০ মিনিট লাগে, সেখানে দুই ঘণ্টারও বেশি সময় লেগেছে।

মোটরসাইকেল আরোহী সুমন শেখ বলেন, আমি সাধারণত সাইন্সল্যাব থেকে কাঁটাবন আসতে ৫-৭ মিনিটেই চলে আসি। কিন্তু ৩০ মিনিট লেগে গেছে। রাস্তা বন্ধ, সামনে এগোতেই পারছি না।

নোলক নামের একজন বলেন, বারডেমে রোগী দেখতে আসছিলাম। মৎস্যভবন মোড়ে বাস থেকে নেমে হেঁটে আসতে হয়েছে। সমাবেশ হতেই পারে, কিন্তু সাধারণ মানুষের চলাচলও যেন একেবারে বন্ধ না হয়ে যায়।

শাহবাগ ট্রাফিক জোনের পরিদর্শক তারিকুল আলম সুমন জানান, শাহবাগ মোড়ের উত্তর সিগন্যালের ঠিক মাঝখানে একটি বিশাল মঞ্চ তৈরি করায় চারদিকে যান চলাচলে বিঘ্ন ঘটছে। তিনি বলেন, ‘একটি ক্রসিংয়ের মাঝে মঞ্চ তৈরি করার আগে ট্রাফিক বিভাগের সঙ্গে পরামর্শ করা উচিত ছিল। ভোর ৬টায় এসে দেখি, উত্তর সিগন্যালে রাস্তার মাঝখানে বিশাল মঞ্চ, এতে প্রতিটি দিকের গাড়ি চলাচল ব্যাহত হচ্ছে।’ তার মতে, যদি আয়োজকরা আগে থেকে যোগাযোগ করতেন, তবে তিনি মঞ্চটি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়মুখী দক্ষিণ সিগন্যালে তৈরি করার পরামর্শ দিতেন, যাতে করে যান চলাচলে বাধা সৃষ্টি হতো না এবং টিএসসি পর্যন্ত পুরো রাস্তা সমাবেশের জন্য ব্যবহার করা যেত।

শুধু যাত্রীরা নন, পরিবহন চালকরাও ছিলেন দারুণ বিরক্ত ও অসহায়। টেকনিক্যাল সিগন্যাল থেকে শ্যামলী পর্যন্ত আসতে সময় লেগেছে ৩৫ মিনিট, এমনটি জানালেন বাসচালক শফিক। তিনি বলেন, সাধারণ দিনে যেখানে ১০ মিনিটে যাওয়া যায়, সেখানে একেকটা মোড় পার হতে ১০ মিনিটের বেশি লাগছে। জ্যামই জ্যাম।

এইচএসসি পরীক্ষার্থীরা সকাল ৯টা থেকে বিভিন্ন কেন্দ্রে পরীক্ষা দিতে গেলে তাদের সময়মতো পৌঁছানো দুঃসাধ্য হয়ে পড়ে। একই অবস্থা বিসিএস পরীক্ষার্থীদের ক্ষেত্রেও দেখা যায়। মিরপুর-১৩ থেকে বেরিয়ে পলাশী যাওয়ার পথে সুমাইয়া নামে এক এইচএসসি পরীক্ষার্থী বলেন, যদি আগেভাগে না বের হতাম, তাহলে পরীক্ষা হলে পৌঁছানোই হতো না। এক জায়গায় এতটা সময় দাঁড়িয়ে ছিলাম যে, বাসের কন্ডাক্টরই আমাদের বলল নামতে।

রমনা ট্রাফিক বিভাগের ডিসি শফিকুল ইসলাম বলেন, যান চলাচল স্বাভাবিক। তবে কোথাও যাতে যানজট না হয়, সেজন্য ইন্টারকন্টিনেন্টাল, মৎস্য ভবন ও কাঁটাবন মোড়ে ট্রাফিক ব্যবস্থাপনায় অতিরিক্ত নজরদারি ও নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। সমাবেশ ঘিরে নগরীতে আগমন ঘটে বিপুলসংখ্যক পাবলিক পরিবহনের। এসব বাস নিউ ইস্কাটন, প্রেসক্লাব, সেগুনবাগিচা, পান্থপথ, আজিমপুরসহ বিভিন্ন এলাকায় পার্কিং করে রাখা হয়। মেইন সড়ক দখল করেও এসব এলাকায় অনেক বাস পার্কিং করে রাখতে দেখা গেছে। এতে যানজটের মাত্রা আরও তীব্র হয়। সচরাচর চলাচলকারী যানবাহন স্মথলি চলতে বিঘ্ন ঘটে।

যানজটের প্রভাব পড়ে নগরীর ফ্লাইওভারগুলোতেও। দুপুরের ঠিক পর পর প্রায় সব ফ্লাইওভারে তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়। যা গড়ায় সন্ধ্যা পর্যন্ত। আবার সন্ধ্যার দিকে সমাবেশ শেষ হলেও যানজটের মাত্রা আরও বেড়ে যায়। সমাবেশে আসা লোকজন ছুটতে থাকেন গন্তব্যে। এর আগে অফিস শেষে ঘরমুখী মানুষের চাপও বাড়তে থাকে। এতে সড়কে চাপ পড়ে বাড়তি মানুষের। ফলে জনজটে, যানজটের মাত্রা আরও কয়েক গুণ বেড়ে যায়। পাবলিক বাস, ব্যক্তিগত গাড়ি, বাইক সব মিলিয়ে ঠাসা হয়ে যায় ফ্লাইওভারগুলো। এতে দিনের শেষেটাও ভোগান্তিতে পড়তে হয়েছে নগরবাসীকে।

রাজধানীবাসীর অভিযোগ, এমন দিনে প্রশাসনের দায়িত্ব ছিল সমন্বয় করে সমাবেশ, পরীক্ষা ও উৎসবের সূচি নির্ধারণ করা। বিশেষ করে যেদিন বিপুলসংখ্যক শিক্ষার্থী ও চাকরিপ্রার্থী রাস্তায় থাকবে, সেদিন একাধিক রাজনৈতিক কর্মসূচি ঢাকার মতো ঘনবসতিপূর্ণ শহরের সড়কে মারাত্মক প্রভাব ফেলে। সবমিলিয়ে দিনটি রাজধানীবাসীর জন্য ছিল দুঃসহ স্মৃতি। নাগরিকরা প্রশ্ন করছেন এমন অদূরদর্শী পরিকল্পনার দায় কে নেবে? আর আগামীতে এ ধরনের সমাবেশ-পরীক্ষা একসঙ্গে হলে রাজধানী পুরোপুরি অচল হয়ে পড়বে না তো? সরকার, রাজনৈতিক দল ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী যদি সময়মতো সঠিক সমন্বয় করতে না পারে, তাহলে ভোগান্তির চক্র থেকে ঢাকা আর কখনোই বের হতে পারবে না বলে মনে করছেন নগর পরিকল্পনাবিদ ও পরিবহন বিশেষজ্ঞরা।

ছবি

ডেঙ্গু: আরও ৩৪৩ জন আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি

ছবি

নৌ ও বিমানবাহিনী নির্বাচনী পর্ষদের উদ্বোধন প্রধান উপদেষ্টার

ছবি

গুলশানে চাঁদাবাজি: রিয়াদের ‘দোষ স্বীকার’,৪ জন কারাগারে

ছবি

জামায়াতের ‘শৃঙ্খলা-সততা’র প্রশংসায় প্রেস সচিব

ছবি

‘অবৈধভাবে’ গড়ে উঠেছে অসংখ্য মিনি পেট্রোল পাম্প, শঙ্কায় ডিমলাবাসী

ছবি

ফ্লাইট এক্সপার্ট কাণ্ড: গ্রেপ্তার তিনজনের জামিন আবেদন নাকচ

ছবি

সুগার মিলে ডাকাতি: লুট করা মালামালসহ পালিয়েছে ডাকাতদল

ছবি

যুদ্ধবিমান বিধ্বস্তের ১২ দিন পর খুললো মাইলস্টোন স্কুল

ছবি

এলপি গ্যাস: ১২ কেজি সিলিন্ডারে ৯৩ টাকা কমে এখন ১২৭৩

ছবি

সাত কলেজে আসন কমছে ৭৮ শতাংশ

ছবি

ইসিকে ‘হুঁশিয়ারি’ দিয়ে সংশোধনের সুযোগ দিলেন এনসিপির নাসির

ছবি

সমাবেশে ছাত্রদলের ৯ প্রতিশ্রুতি

ছবি

শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে ট্রাইব্যুনালে প্রথম সাক্ষ্য দিলেন খোকন চন্দ্র

ছবি

এবার বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে বসবে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন

ছবি

এনসিপির সমাবেশ থেকে ‘নতুন বাংলাদেশের ইশতেহার’ ঘোষণা

ছবি

মঙ্গলবার মানিক মিয়ায় দিনব্যাপী আয়োজন, ‘জুলাই ঘোষণাপত্র’ দেবেন প্রধান উপদেষ্টা

ছবি

সরকার পতনের বর্ষপূর্তিতে ‘জুলাই ঘোষণাপত্র’ উপস্থাপনসহ দিনব্যাপী আয়োজন

ছবি

‘স্বাস্থ্য ব্যবস্থা সংস্কারে দৃঢ় ভূমিকা চান’ প্রধান উপদেষ্টার কাছে কমিশনের অনুরোধ

ছবি

আইসিজের মতামত আইনি বাধ্যতামূলক নয়, তবে নৈতিক দায়বদ্ধতা: রিজওয়ানা

ছবি

৩০ লাখ টাকা ভাড়ায় বিশেষ ট্রেনে ঢাকায় আনা হবে ছাত্র-জনতা

ছবি

‘স্বৈরাচার’ হিসেবে সর্বোচ্চ শাস্তির দাবি; শুরু হলো প্রথম সাক্ষ্যগ্রহণ

ছবি

ঢাকায় আজ তিন সমাবেশ ও দুই পরীক্ষা: বিকল্প কোন পথে যাবেন

ছবি

হাসিনার বিরুদ্ধে সাক্ষ্য শুরু, সরাসরি সম্প্রচার করবে ট্রাইব্যুনাল

ছবি

পরমাণু বিজ্ঞানী অধ্যাপক শমশের আলী আর নেই

ছবি

রাজসাক্ষী সাবেক আইজিপি মামুন ট্রাইব্যুনালে হাজির, শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দেবেন

ছবি

করোনাভাইরাসে আরও ২ জন শনাক্ত, চলতি বছর মোট শনাক্ত ৭২২ জন

প্রবাসীদের রেমিটেন্সে অর্থনীতির চাকা সচল হচ্ছে: রেমিটেন্সযোদ্ধাদের সম্মাননা

ছবি

আগস্টজুড়ে রাজধানীতে পুলিশের ‘চিরুনি অভিযান’

পরিচয় শনাক্তে আন্দোলনে নিহতদের মরদেহ কবর থেকে তোলা হবে: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা

আইন শিক্ষার্থীদের সঙ্গে সুপ্রিম কোর্টের সংলাপ অনুষ্ঠিত

ছবি

৩৯ বাংলাদেশিকে ফেরত পাঠালো যুক্তরাষ্ট্র

ছবি

সময় এসেছে শিক্ষার্থীদের শ্রেণীকক্ষে ফিরে যাওয়ার: শিক্ষা উপদেষ্টা

ছবি

ডেঙ্গুতে আরও একজনের মৃত্যু, আক্রান্ত ২০৯

মালয়েশিয়ায় শ্রমিক পাচার সিন্ডিকেটের তদন্ত বন্ধ করতে দুই দেশ সম্মত

ছবি

গুলিস্তানে মার্কেটে আগুন: দুই গোডাউন পুড়ে ছাই, কোটি টাকার ক্ষতি

ছবি

অপু বাইক কেনে এমপির বাসা থেকে ‘চাঁদা নেয়ার দিন’: পুলিশ

tab

জাতীয়

সপ্তাহের প্রথম কর্মদিবস: সমাবেশ, পরীক্ষা, রাজধানীতে তীব্র যানজট

সংবাদ অনলাইন রিপোর্ট

রোববার, ০৩ আগস্ট ২০২৫

রাজনৈতিক সমাবেশ, এইচএসসি ও বিসিএস পরীক্ষার মতো একাধিক গুরুত্বপূর্ণ কার্যক্রম একদিনে আয়োজনের ফলে রোববার,(০৩ আগস্ট ২০২৫) সকাল থেকে রাজধানীতে সৃষ্টি হয়েছে তীব্র যানজট। দিনের শুরু থেকেই প্রধান প্রধান সড়কে ধীরগতির যানবাহন, গাদাগাদি করে গণপরিবহনে ওঠা, বাসস্টপে অপেক্ষমাণ যাত্রীদের দীর্ঘ সারি এবং অতিরিক্ত সময় ধরে গন্তব্যে পৌঁছাতে গিয়ে নগরবাসীর অসন্তোষ-সবমিলিয়ে শহরজুড়ে সৃষ্টি হয় অস্বস্তিকর পরিবেশ।

সপ্তাহের প্রথম কর্মদিবস হওয়ায় অফিসগামী মানুষের চাপ এমনিতেই বেশি থাকে। এর মধ্যে একযোগে অনুষ্ঠিত হচ্ছে উচ্চমাধ্যমিক সার্টিফিকেট (এইচএসসি) পরীক্ষা এবং ৪৫তম বিসিএসের লিখিত পরীক্ষা। অন্যদিকে ঢাকায় দুটি রাজনৈতিক দলের সমাবেশ, সমাবেশ ঘিরে নগরীতে বাড়তি বাহনের আগমন, এক সাংস্কৃতিক উৎসব এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর নিয়ন্ত্রণমূলক ব্যবস্থা রাজধানীর যানবাহন চলাচলকে করে তোলে প্রায় স্থবির।

জুলাই গণঅভ্যুত্থানের বর্ষপূর্তি উপলক্ষে ঢাকায় সমাবেশে করেছে তিনটি সংগঠন। একদিকে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে ‘জুলাই ঘোষণাপত্র ও সনদের’ দাবিতে সমাবেশ করেছে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি), অন্যদিকে শাহবাগে ‘ছাত্র সমাবেশ’ করেছে বিএনপির ছাত্র সংগঠন বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল। একইসঙ্গে সোহ্রাওয়ার্দী উদ্যানে ছিল সাংস্কৃতিক সংগঠন সাইমুম শিল্পীগোষ্ঠীর অনুষ্ঠান। তিনটি সমাবেশে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ঢাকায় আসেন নেতাকর্মীরা।

রাজধানীর শাহবাগ, কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার ও সোহ্রাওয়ার্দী উদ্যানে রোববার পৃথক সমাবেশ ও অনুষ্ঠান চলছে। এসব আয়োজনকে ঘিরে গতকাল শনিবারই সংশ্লিষ্ট এলাকায় যান চলাচল নিয়ন্ত্রণে বিশেষ নির্দেশনা জারি করে ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি)। হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টাল মোড়, সোনারগাঁও সিগন্যাল/বাংলামোটর ক্রসিং হয়ে উত্তর দিক থেকে আসা যানবাহনকে হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টাল ক্রসিংয়ে সোজা শাহবাগের দিকে না গিয়ে বামে মোড় নিয়ে হেয়ার রোড/মিন্টু রোড হয়ে যাতায়াত করবে।

কাঁটাবন মোড়, সায়েন্সল্যাব ক্রসিং হয়ে পশ্চিম দিক থেকে আসা যানবাহন কাঁটাবন মোড় থেকে শাহবাগের দিকে না গিয়ে ডানে মোড় নিয়ে নীলক্ষেত/পলাশী হয়ে অথবা কাঁটাবন মোড় থেকে বামে মোড় নিয়ে সোনারগাঁও (হাতিরপুল) রোড হয়ে বাংলামোটর লিংক রোড দিয়ে চলাচল করবে।

মৎস্য ভবন মোড়, হাইকোর্ট/কদম ফোয়ারা ক্রসিং হয়ে আসা যানবাহনসমূহ মৎস্য ভবন থেকে শাহবাগের দিকে না গিয়ে সোজা হেয়ার রোড/শহীদ ক্যাপ্টেন মনসুর আলী সরণি (মগবাজার রোড) হয়ে চলাচল করবে। অপরদিকে

কাকরাইল মসজিদ ক্রসিং হয়ে উত্তর দিক থেকে আসা যানবাহন মৎস্যভবন ক্রসিং থেকে শাহবাগের দিকে না গিয়ে সোজা হাইকোর্ট হয়ে গুলিস্তান/ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দিকে চলাচল করবে।

টিএসসি/রাজু ভাস্কর্য, নীলক্ষেত ক্রসিং/দোয়েল চত্বর ক্রসিং থেকে আসা যানবাহন টিএসটি/রাজু ভাস্কর্য ক্রসিংয়ে এসে শাহবাগের দিকে না গিয়ে দোয়েল চত্বর/নীলক্ষেত ক্রসিং হয়ে চলাচল করবে। এছাড়া শহীদ মিনারসংলগ্ন সড়ক এবং সোহ্রাওয়ার্দী উদ্যানের প্রবেশ পথ যথাসম্ভব পরিহার করার জন্য অনুরোধ করেছে পুলিশ। এ কারণে ঢাকাবাসীকে বিশেষ করে এইচএসসি ও বিসিএস পরীক্ষার্থীদের হাতে পর্যাপ্ত সময় নিয়ে পরীক্ষা কেন্দ্রের উদ্দেশে রওনা হতে অনুরোধ জানানো হয়েছে গণবিজ্ঞপ্তিতে।

রাজধানীতে প্রবেশ করে বাড়তি পাবলিক বাস। এতে সকাল ৮টা থেকে শুরু হয় যানজট। বিশেষ করে কারওয়ানবাজার, ফার্মগেট, শ্যামলী, মিরপুর-১০, বিজয় সরণি, রামপুরা, মৌচাক, শাহবাগ, নীলক্ষেত, পলাশী, চাঁদনী চক, গাবতলী, কলাবাগান, যাত্রাবাড়ী, সায়েন্সল্যাব, আজিমপুর ও মালিবাগ এলাকায় গাড়ির গতি ছিল অত্যন্ত ধীর। সড়কে যানবাহনের ভিড়ের কারণে শুধু ব্যক্তি গাড়ি নয়, গণপরিবহনও নির্ধারিত সময়ে চলতে পারছিল না।

সকাল ৯টার দিকে ফার্মগেট দাঁড়িয়ে ইয়াকুব নামের এক বেসরকারি চাকরিজীবী বলেন, ‘আজ তো পুরো নরক পরিস্থিতি। বাসে উঠতেই এক ঘণ্টা লেগে গেছে। তারপর ঝুলে ঝুলে এসেছি। গাবতলী থেকে ফার্মগেট আসতে যেখানে সাধারণত ৩০-৪০ মিনিট লাগে, সেখানে দুই ঘণ্টারও বেশি সময় লেগেছে।

মোটরসাইকেল আরোহী সুমন শেখ বলেন, আমি সাধারণত সাইন্সল্যাব থেকে কাঁটাবন আসতে ৫-৭ মিনিটেই চলে আসি। কিন্তু ৩০ মিনিট লেগে গেছে। রাস্তা বন্ধ, সামনে এগোতেই পারছি না।

নোলক নামের একজন বলেন, বারডেমে রোগী দেখতে আসছিলাম। মৎস্যভবন মোড়ে বাস থেকে নেমে হেঁটে আসতে হয়েছে। সমাবেশ হতেই পারে, কিন্তু সাধারণ মানুষের চলাচলও যেন একেবারে বন্ধ না হয়ে যায়।

শাহবাগ ট্রাফিক জোনের পরিদর্শক তারিকুল আলম সুমন জানান, শাহবাগ মোড়ের উত্তর সিগন্যালের ঠিক মাঝখানে একটি বিশাল মঞ্চ তৈরি করায় চারদিকে যান চলাচলে বিঘ্ন ঘটছে। তিনি বলেন, ‘একটি ক্রসিংয়ের মাঝে মঞ্চ তৈরি করার আগে ট্রাফিক বিভাগের সঙ্গে পরামর্শ করা উচিত ছিল। ভোর ৬টায় এসে দেখি, উত্তর সিগন্যালে রাস্তার মাঝখানে বিশাল মঞ্চ, এতে প্রতিটি দিকের গাড়ি চলাচল ব্যাহত হচ্ছে।’ তার মতে, যদি আয়োজকরা আগে থেকে যোগাযোগ করতেন, তবে তিনি মঞ্চটি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়মুখী দক্ষিণ সিগন্যালে তৈরি করার পরামর্শ দিতেন, যাতে করে যান চলাচলে বাধা সৃষ্টি হতো না এবং টিএসসি পর্যন্ত পুরো রাস্তা সমাবেশের জন্য ব্যবহার করা যেত।

শুধু যাত্রীরা নন, পরিবহন চালকরাও ছিলেন দারুণ বিরক্ত ও অসহায়। টেকনিক্যাল সিগন্যাল থেকে শ্যামলী পর্যন্ত আসতে সময় লেগেছে ৩৫ মিনিট, এমনটি জানালেন বাসচালক শফিক। তিনি বলেন, সাধারণ দিনে যেখানে ১০ মিনিটে যাওয়া যায়, সেখানে একেকটা মোড় পার হতে ১০ মিনিটের বেশি লাগছে। জ্যামই জ্যাম।

এইচএসসি পরীক্ষার্থীরা সকাল ৯টা থেকে বিভিন্ন কেন্দ্রে পরীক্ষা দিতে গেলে তাদের সময়মতো পৌঁছানো দুঃসাধ্য হয়ে পড়ে। একই অবস্থা বিসিএস পরীক্ষার্থীদের ক্ষেত্রেও দেখা যায়। মিরপুর-১৩ থেকে বেরিয়ে পলাশী যাওয়ার পথে সুমাইয়া নামে এক এইচএসসি পরীক্ষার্থী বলেন, যদি আগেভাগে না বের হতাম, তাহলে পরীক্ষা হলে পৌঁছানোই হতো না। এক জায়গায় এতটা সময় দাঁড়িয়ে ছিলাম যে, বাসের কন্ডাক্টরই আমাদের বলল নামতে।

রমনা ট্রাফিক বিভাগের ডিসি শফিকুল ইসলাম বলেন, যান চলাচল স্বাভাবিক। তবে কোথাও যাতে যানজট না হয়, সেজন্য ইন্টারকন্টিনেন্টাল, মৎস্য ভবন ও কাঁটাবন মোড়ে ট্রাফিক ব্যবস্থাপনায় অতিরিক্ত নজরদারি ও নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। সমাবেশ ঘিরে নগরীতে আগমন ঘটে বিপুলসংখ্যক পাবলিক পরিবহনের। এসব বাস নিউ ইস্কাটন, প্রেসক্লাব, সেগুনবাগিচা, পান্থপথ, আজিমপুরসহ বিভিন্ন এলাকায় পার্কিং করে রাখা হয়। মেইন সড়ক দখল করেও এসব এলাকায় অনেক বাস পার্কিং করে রাখতে দেখা গেছে। এতে যানজটের মাত্রা আরও তীব্র হয়। সচরাচর চলাচলকারী যানবাহন স্মথলি চলতে বিঘ্ন ঘটে।

যানজটের প্রভাব পড়ে নগরীর ফ্লাইওভারগুলোতেও। দুপুরের ঠিক পর পর প্রায় সব ফ্লাইওভারে তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়। যা গড়ায় সন্ধ্যা পর্যন্ত। আবার সন্ধ্যার দিকে সমাবেশ শেষ হলেও যানজটের মাত্রা আরও বেড়ে যায়। সমাবেশে আসা লোকজন ছুটতে থাকেন গন্তব্যে। এর আগে অফিস শেষে ঘরমুখী মানুষের চাপও বাড়তে থাকে। এতে সড়কে চাপ পড়ে বাড়তি মানুষের। ফলে জনজটে, যানজটের মাত্রা আরও কয়েক গুণ বেড়ে যায়। পাবলিক বাস, ব্যক্তিগত গাড়ি, বাইক সব মিলিয়ে ঠাসা হয়ে যায় ফ্লাইওভারগুলো। এতে দিনের শেষেটাও ভোগান্তিতে পড়তে হয়েছে নগরবাসীকে।

রাজধানীবাসীর অভিযোগ, এমন দিনে প্রশাসনের দায়িত্ব ছিল সমন্বয় করে সমাবেশ, পরীক্ষা ও উৎসবের সূচি নির্ধারণ করা। বিশেষ করে যেদিন বিপুলসংখ্যক শিক্ষার্থী ও চাকরিপ্রার্থী রাস্তায় থাকবে, সেদিন একাধিক রাজনৈতিক কর্মসূচি ঢাকার মতো ঘনবসতিপূর্ণ শহরের সড়কে মারাত্মক প্রভাব ফেলে। সবমিলিয়ে দিনটি রাজধানীবাসীর জন্য ছিল দুঃসহ স্মৃতি। নাগরিকরা প্রশ্ন করছেন এমন অদূরদর্শী পরিকল্পনার দায় কে নেবে? আর আগামীতে এ ধরনের সমাবেশ-পরীক্ষা একসঙ্গে হলে রাজধানী পুরোপুরি অচল হয়ে পড়বে না তো? সরকার, রাজনৈতিক দল ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী যদি সময়মতো সঠিক সমন্বয় করতে না পারে, তাহলে ভোগান্তির চক্র থেকে ঢাকা আর কখনোই বের হতে পারবে না বলে মনে করছেন নগর পরিকল্পনাবিদ ও পরিবহন বিশেষজ্ঞরা।

back to top