alt

জাতীয়

‘অবৈধভাবে’ গড়ে উঠেছে অসংখ্য মিনি পেট্রোল পাম্প, শঙ্কায় ডিমলাবাসী

ময়েন কবীর, ডিমলা (নীলফামারী) : রোববার, ০৩ আগস্ট ২০২৫

ডিমলায় যত্রতত্র গড়ে ওঠা একটি মিনি ফিলিং স্টেশন -সংবাদ

নীলফামারীর ডিমলায় একের পর এক গড়ে উঠছে মিনি পেট্রোল পাম্প। উৎকন্ঠায় ও চরম জীবনের ঝুঁকিতে ডিমলাবাসী। এ যেন জ্বলন্ত বারুদ, যা গোটা উপজেলাজুড়ে দখল নিয়ে বসে আছে। উপজেলা সদর ও আশপাশের ইউনিয়নগুলোতে অনুমোদনহীন গড়ে উঠেছে অন্তত ৭০টি মিনি পেট্রোল পাম্প। এসব মিনি পাম্পে প্রতিদিন ব্যবহার করা হচ্ছে আধুনিক ডিসপেন্সার মেশিন, বিক্রি হচ্ছে ডিজেল, পেট্রোল ও অকটেন। কিন্তু এসব কার্যক্রমের নেই কোনো সরকারি অনুমোদন, অগ্নিনির্বাপক ব্যবস্থা কিংবা পরিবেশগত ছাড়পত্র। ফলে এলাকাবাসীর শঙ্কা- যেকোনো মুহূর্তে ঘটতে পারে ভয়াবহ দুর্ঘটনা।

উপজেলা সদর ও ইউনিয়নে অন্তত ৭০টি মিনি পেট্রোল পাম্প, অনুমোদিত ফিলিং স্টেশন মাত্র চারটি

এদের বেশিরভাগই স্থাপিত হয়েছে অতি ঝুঁকিপূর্ণ স্থানে

নেই সরকারি অনুমোদন, অগ্নিনির্বাপক ব্যবস্থা কিংবা পরিবেশগত ছাড়পত্র

সম্প্রতি ডিমলা সদর ইউনিয়নের বাবুরহাট বাজারসংলগ্ন টিএনটি সড়কে অবস্থিত ‘মেসার্স বক্কর অ্যান্ড সন্স’ নামক একটি অনুমোদনহীন মিনি পাম্পে ঘটে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ড। আগুনে দগ্ধ হন শ্রাবণ কুমার রায় (১৮) নামের এক তরুণ। সেই সঙ্গে পুড়ে যায় আশপাশের দোকানঘর, একটি মোটরসাইকেল শোরুম ও অন্যান্য স্থাপনা যার ক্ষয়-ক্ষতির পরিমাণ দাঁড়ায় প্রায় কোটি টাকা। বিস্ফোরণের বিকট শব্দে কম্পিত হয়ে পুরো বাজারজুড়ে আতঙ্কের সৃষ্টি হয়। মানুষ এদিক-সেদিক ছোটাছুটি করতে থাকে ।

সরজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, এসব মিনি পাম্পের বেশিরভাগই স্থাপিত হয়েছে অতি ঝুঁকিপূর্ণ স্থানে। আবাসিক ভবনের নিচে, জনবহুল বাজার এলাকায়, স্কুলের পাশে এমনকি সড়কের ধার ঘেঁষে টিনশেড ঘর কিংবা মুদি দোকানে। এসব স্থানে কোনো অগ্নিনির্বাপক ব্যবস্থা নেই। নেই বালুর বস্তা কিংবা নিরাপদ দূরত্বের ন্যূনতম ব্যবধান। খোলা জায়গায় রাখা হয় বিশাল তেলের ড্রাম, যেকোনো সময় একটি সিগারেটের আগুন বা ইলেকট্রিক স্পার্ক পুরো এলাকা ধ্বংস করে দিতে পারে।

স্থানীয়রা জানান, এসব পাম্পে বিক্রি হওয়া তেল অনেক সময় থাকে ময়লামিশ্রিত, নিম্নমানের ও ভেজাল। এতে যানবাহনের ইঞ্জিন দ্রুত নষ্ট হয়ে যায়। এছাড়া অনেক পাম্পে পরিমাপেও কম দেয়া হয়। এভাবে সাধারণ ভোক্তারা আর্থিকভাবে যেমন ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন, তেমনি মানুষের স্বাস্থ্য ও পরিবেশও ক্ষতির মুখে পড়ছে। বাতাসে ছড়াচ্ছে বিষাক্ত কালো ধোঁয়া, যা জনস্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর ।

বাংলাদেশে জ্বালানি তেল সংরক্ষণ ও বিক্রয়ের জন্য ১৯৩৪ সালের এক্সক্লুসিভ আইন এবং ১৯৩৭ সালের পেট্রোলিয়াম বিধান অনুযায়ী সংশ্লিষ্ট ব্যবসার জন্য বিস্ফোরক পরিদপ্তরের অনুমোদন বাধ্যতামূলক করা হয়েছে । তাছাড়াও প্রয়োজনীয় অগ্নিনির্বাপক ব্যবস্থা, পরিবেশগত ছাড়পত্র এবং সুনির্দিষ্ট নিরাপত্তা মানদণ্ড পূরণের শর্ত আরোপ করা হয়েছে। অথচ ডিমলায় কোনোটারই বালাই নেই।

দেখা গেছে, অনেক ব্যবসায়ী কেবল ট্রেড লাইসেন্স অথবা স্থানীয় কিছু মৌখিক অনুমতির ভিত্তিতে এসব ঝুঁকিপূর্ণ ব্যবসা চালিয়ে বিপজ্জনক পরিবেশ তৈরি করেছে। যা সম্পূর্ণ বেআইনি।

বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশন (বিপিসি) সূত্র জানায়, ডিমলায় অনুমোদিত ফিলিং স্টেশন

রয়েছে মাত্র চারটি- উপজেলা সদরে দুটি এবং খালিশা চাপানি ও ঝুনাগাছ চাপানি ইউনিয়নে একটি করে। কিন্তু বাস্তব চিত্র সম্পূর্ণ বিপরীত উপজেলাজুড়ে ছড়িয়ে আছে অন্তত প্রায় ৭০টির বেশি অবৈধ মিনি পেট্রোল পাম্প।

প্রশাসনের পক্ষ থেকে মাঝে মধ্যে ২/১ টিতে মোবাইল কোর্ট অভিযান চালানো হয়। তাতে এগুলোতে তেমন একটা প্রভাব পড়ে না। কয়েকদিন বন্ধ থাকলেও আবার চালু করে দিব্যি ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে। প্রশাসনের নীরবতার কারণে ও গাফিলতির সুযোগে ব্যবসায়ীরা আরও সাহসী ও বেপরোয়া হয়ে উঠছে।

উপজেলা সদরের ব্যবসায়ী আলতাব হোসেন বলেন, আমরা প্রতিনিয়ত বিস্ফোরণের আশঙ্কা নিয়ে দিন কাটাচ্ছি। মাঝে মাঝে অভিযান হয়, কিন্তু কিছুদিন পর আবার আগের মতোই চলে।

একাধিক সূত্র ও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, এসব মিনি তেল পাম্পে কোনো প্রকার নিয়ম-নীতি নেই, গভীর রাত পর্যন্ত খোলা রেখে তেল বিক্রি করা হয়। কোনো ধরনের দুর্ঘটনা ঘটলে প্রাণঘাতীসহ পুরো এলাকা পুড়ে ছাই হয়ে যেতে পারে।

বিশেষজ্ঞদের দাবি, প্রয়োজন কঠোর পদক্ষেপ ও টেকসই পরিকল্পনাগ্রহণ করে শুধুমাত্র অভিযান নয় পদ্ধতিগত ও সমন্বিত উদ্যোগ ছাড়া এ সমস্যার সমাধান সম্ভব নয়। তারা পাঁচটি দাবি তুলছেন। সেগুলো হলো (১) অবৈধ মিনি পাম্পগুলো চিহ্নিত করে মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করা। (২) টাস্কফোর্স গঠন করে ফায়ার সার্ভিস, বিস্ফোরক পরিদপ্তর ও পরিবেশ অধিদপ্তরের সমন্বয়ে নিয়মিত মনিটরিং চালানো। (৩) শুধুমাত্র ট্রেড লাইসেন্সের ভিত্তিতে তেল বিক্রিকে সম্পূর্ণভাবে নিষিদ্ধ ঘোষণা করা। (৪) জনসচেতনতা বাড়াতে স্থানীয় গণমাধ্যম, সামাজিক সংগঠন ও প্রশাসনের যৌথ প্রচার কার্যক্রম চালানো। (৫) বৈধ ফিলিং স্টেশনগুলোর মান ও সেবা উন্নত করা, যেন জনগণ অবৈধ পাম্পের ওপর নির্ভরশীল না হয়।

ডিমলা ফায়ার সার্ভিসের স্টেশন কর্মকর্তা নূর মোহাম্মদ বলেন, এসব মিনি পাম্পে অগ্নিনির্বাপক যন্ত্র, বালুর বস্তা বা নিরাপদ দূরত্ব কিছুই নেই। আগুন লাগলে তা ভয়াবহ রূপ নিতে পারে।

পরিবেশ অধিদপ্তর নীলফামারীর সহকারী পরিচালক মো. আব্দুল্লাহ-আল-মামুন জানান, আমাদের দপ্তর থেকে মিনি পাম্প স্থাপনের কোনো অনুমোদন দেওয়া হয়নি। খুব দ্রুত এসব পাম্প পরিদর্শন করে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।

ডিমলা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. ইমরানুজ্জামান বলেন, অবৈধ মিনি পাম্পগুলো চিহ্নিত করা হয়েছে। খুব শিগগিরই ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে অভিযান পরিচালনা করা হবে। জননিরাপত্তাকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিয়ে বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে দেখা হচ্ছে।

ছবি

ডেঙ্গু: আরও ৩৪৩ জন আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি

ছবি

নৌ ও বিমানবাহিনী নির্বাচনী পর্ষদের উদ্বোধন প্রধান উপদেষ্টার

ছবি

গুলশানে চাঁদাবাজি: রিয়াদের ‘দোষ স্বীকার’,৪ জন কারাগারে

ছবি

জামায়াতের ‘শৃঙ্খলা-সততা’র প্রশংসায় প্রেস সচিব

ছবি

ফ্লাইট এক্সপার্ট কাণ্ড: গ্রেপ্তার তিনজনের জামিন আবেদন নাকচ

ছবি

সুগার মিলে ডাকাতি: লুট করা মালামালসহ পালিয়েছে ডাকাতদল

ছবি

যুদ্ধবিমান বিধ্বস্তের ১২ দিন পর খুললো মাইলস্টোন স্কুল

ছবি

এলপি গ্যাস: ১২ কেজি সিলিন্ডারে ৯৩ টাকা কমে এখন ১২৭৩

ছবি

সাত কলেজে আসন কমছে ৭৮ শতাংশ

ছবি

সপ্তাহের প্রথম কর্মদিবস: সমাবেশ, পরীক্ষা, রাজধানীতে তীব্র যানজট

ছবি

ইসিকে ‘হুঁশিয়ারি’ দিয়ে সংশোধনের সুযোগ দিলেন এনসিপির নাসির

ছবি

সমাবেশে ছাত্রদলের ৯ প্রতিশ্রুতি

ছবি

শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে ট্রাইব্যুনালে প্রথম সাক্ষ্য দিলেন খোকন চন্দ্র

ছবি

এবার বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে বসবে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন

ছবি

এনসিপির সমাবেশ থেকে ‘নতুন বাংলাদেশের ইশতেহার’ ঘোষণা

ছবি

মঙ্গলবার মানিক মিয়ায় দিনব্যাপী আয়োজন, ‘জুলাই ঘোষণাপত্র’ দেবেন প্রধান উপদেষ্টা

ছবি

সরকার পতনের বর্ষপূর্তিতে ‘জুলাই ঘোষণাপত্র’ উপস্থাপনসহ দিনব্যাপী আয়োজন

ছবি

‘স্বাস্থ্য ব্যবস্থা সংস্কারে দৃঢ় ভূমিকা চান’ প্রধান উপদেষ্টার কাছে কমিশনের অনুরোধ

ছবি

আইসিজের মতামত আইনি বাধ্যতামূলক নয়, তবে নৈতিক দায়বদ্ধতা: রিজওয়ানা

ছবি

৩০ লাখ টাকা ভাড়ায় বিশেষ ট্রেনে ঢাকায় আনা হবে ছাত্র-জনতা

ছবি

‘স্বৈরাচার’ হিসেবে সর্বোচ্চ শাস্তির দাবি; শুরু হলো প্রথম সাক্ষ্যগ্রহণ

ছবি

ঢাকায় আজ তিন সমাবেশ ও দুই পরীক্ষা: বিকল্প কোন পথে যাবেন

ছবি

হাসিনার বিরুদ্ধে সাক্ষ্য শুরু, সরাসরি সম্প্রচার করবে ট্রাইব্যুনাল

ছবি

পরমাণু বিজ্ঞানী অধ্যাপক শমশের আলী আর নেই

ছবি

রাজসাক্ষী সাবেক আইজিপি মামুন ট্রাইব্যুনালে হাজির, শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দেবেন

ছবি

করোনাভাইরাসে আরও ২ জন শনাক্ত, চলতি বছর মোট শনাক্ত ৭২২ জন

প্রবাসীদের রেমিটেন্সে অর্থনীতির চাকা সচল হচ্ছে: রেমিটেন্সযোদ্ধাদের সম্মাননা

ছবি

আগস্টজুড়ে রাজধানীতে পুলিশের ‘চিরুনি অভিযান’

পরিচয় শনাক্তে আন্দোলনে নিহতদের মরদেহ কবর থেকে তোলা হবে: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা

আইন শিক্ষার্থীদের সঙ্গে সুপ্রিম কোর্টের সংলাপ অনুষ্ঠিত

ছবি

৩৯ বাংলাদেশিকে ফেরত পাঠালো যুক্তরাষ্ট্র

ছবি

সময় এসেছে শিক্ষার্থীদের শ্রেণীকক্ষে ফিরে যাওয়ার: শিক্ষা উপদেষ্টা

ছবি

ডেঙ্গুতে আরও একজনের মৃত্যু, আক্রান্ত ২০৯

মালয়েশিয়ায় শ্রমিক পাচার সিন্ডিকেটের তদন্ত বন্ধ করতে দুই দেশ সম্মত

ছবি

গুলিস্তানে মার্কেটে আগুন: দুই গোডাউন পুড়ে ছাই, কোটি টাকার ক্ষতি

ছবি

অপু বাইক কেনে এমপির বাসা থেকে ‘চাঁদা নেয়ার দিন’: পুলিশ

tab

জাতীয়

‘অবৈধভাবে’ গড়ে উঠেছে অসংখ্য মিনি পেট্রোল পাম্প, শঙ্কায় ডিমলাবাসী

ময়েন কবীর, ডিমলা (নীলফামারী)

ডিমলায় যত্রতত্র গড়ে ওঠা একটি মিনি ফিলিং স্টেশন -সংবাদ

রোববার, ০৩ আগস্ট ২০২৫

নীলফামারীর ডিমলায় একের পর এক গড়ে উঠছে মিনি পেট্রোল পাম্প। উৎকন্ঠায় ও চরম জীবনের ঝুঁকিতে ডিমলাবাসী। এ যেন জ্বলন্ত বারুদ, যা গোটা উপজেলাজুড়ে দখল নিয়ে বসে আছে। উপজেলা সদর ও আশপাশের ইউনিয়নগুলোতে অনুমোদনহীন গড়ে উঠেছে অন্তত ৭০টি মিনি পেট্রোল পাম্প। এসব মিনি পাম্পে প্রতিদিন ব্যবহার করা হচ্ছে আধুনিক ডিসপেন্সার মেশিন, বিক্রি হচ্ছে ডিজেল, পেট্রোল ও অকটেন। কিন্তু এসব কার্যক্রমের নেই কোনো সরকারি অনুমোদন, অগ্নিনির্বাপক ব্যবস্থা কিংবা পরিবেশগত ছাড়পত্র। ফলে এলাকাবাসীর শঙ্কা- যেকোনো মুহূর্তে ঘটতে পারে ভয়াবহ দুর্ঘটনা।

উপজেলা সদর ও ইউনিয়নে অন্তত ৭০টি মিনি পেট্রোল পাম্প, অনুমোদিত ফিলিং স্টেশন মাত্র চারটি

এদের বেশিরভাগই স্থাপিত হয়েছে অতি ঝুঁকিপূর্ণ স্থানে

নেই সরকারি অনুমোদন, অগ্নিনির্বাপক ব্যবস্থা কিংবা পরিবেশগত ছাড়পত্র

সম্প্রতি ডিমলা সদর ইউনিয়নের বাবুরহাট বাজারসংলগ্ন টিএনটি সড়কে অবস্থিত ‘মেসার্স বক্কর অ্যান্ড সন্স’ নামক একটি অনুমোদনহীন মিনি পাম্পে ঘটে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ড। আগুনে দগ্ধ হন শ্রাবণ কুমার রায় (১৮) নামের এক তরুণ। সেই সঙ্গে পুড়ে যায় আশপাশের দোকানঘর, একটি মোটরসাইকেল শোরুম ও অন্যান্য স্থাপনা যার ক্ষয়-ক্ষতির পরিমাণ দাঁড়ায় প্রায় কোটি টাকা। বিস্ফোরণের বিকট শব্দে কম্পিত হয়ে পুরো বাজারজুড়ে আতঙ্কের সৃষ্টি হয়। মানুষ এদিক-সেদিক ছোটাছুটি করতে থাকে ।

সরজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, এসব মিনি পাম্পের বেশিরভাগই স্থাপিত হয়েছে অতি ঝুঁকিপূর্ণ স্থানে। আবাসিক ভবনের নিচে, জনবহুল বাজার এলাকায়, স্কুলের পাশে এমনকি সড়কের ধার ঘেঁষে টিনশেড ঘর কিংবা মুদি দোকানে। এসব স্থানে কোনো অগ্নিনির্বাপক ব্যবস্থা নেই। নেই বালুর বস্তা কিংবা নিরাপদ দূরত্বের ন্যূনতম ব্যবধান। খোলা জায়গায় রাখা হয় বিশাল তেলের ড্রাম, যেকোনো সময় একটি সিগারেটের আগুন বা ইলেকট্রিক স্পার্ক পুরো এলাকা ধ্বংস করে দিতে পারে।

স্থানীয়রা জানান, এসব পাম্পে বিক্রি হওয়া তেল অনেক সময় থাকে ময়লামিশ্রিত, নিম্নমানের ও ভেজাল। এতে যানবাহনের ইঞ্জিন দ্রুত নষ্ট হয়ে যায়। এছাড়া অনেক পাম্পে পরিমাপেও কম দেয়া হয়। এভাবে সাধারণ ভোক্তারা আর্থিকভাবে যেমন ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন, তেমনি মানুষের স্বাস্থ্য ও পরিবেশও ক্ষতির মুখে পড়ছে। বাতাসে ছড়াচ্ছে বিষাক্ত কালো ধোঁয়া, যা জনস্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর ।

বাংলাদেশে জ্বালানি তেল সংরক্ষণ ও বিক্রয়ের জন্য ১৯৩৪ সালের এক্সক্লুসিভ আইন এবং ১৯৩৭ সালের পেট্রোলিয়াম বিধান অনুযায়ী সংশ্লিষ্ট ব্যবসার জন্য বিস্ফোরক পরিদপ্তরের অনুমোদন বাধ্যতামূলক করা হয়েছে । তাছাড়াও প্রয়োজনীয় অগ্নিনির্বাপক ব্যবস্থা, পরিবেশগত ছাড়পত্র এবং সুনির্দিষ্ট নিরাপত্তা মানদণ্ড পূরণের শর্ত আরোপ করা হয়েছে। অথচ ডিমলায় কোনোটারই বালাই নেই।

দেখা গেছে, অনেক ব্যবসায়ী কেবল ট্রেড লাইসেন্স অথবা স্থানীয় কিছু মৌখিক অনুমতির ভিত্তিতে এসব ঝুঁকিপূর্ণ ব্যবসা চালিয়ে বিপজ্জনক পরিবেশ তৈরি করেছে। যা সম্পূর্ণ বেআইনি।

বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশন (বিপিসি) সূত্র জানায়, ডিমলায় অনুমোদিত ফিলিং স্টেশন

রয়েছে মাত্র চারটি- উপজেলা সদরে দুটি এবং খালিশা চাপানি ও ঝুনাগাছ চাপানি ইউনিয়নে একটি করে। কিন্তু বাস্তব চিত্র সম্পূর্ণ বিপরীত উপজেলাজুড়ে ছড়িয়ে আছে অন্তত প্রায় ৭০টির বেশি অবৈধ মিনি পেট্রোল পাম্প।

প্রশাসনের পক্ষ থেকে মাঝে মধ্যে ২/১ টিতে মোবাইল কোর্ট অভিযান চালানো হয়। তাতে এগুলোতে তেমন একটা প্রভাব পড়ে না। কয়েকদিন বন্ধ থাকলেও আবার চালু করে দিব্যি ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে। প্রশাসনের নীরবতার কারণে ও গাফিলতির সুযোগে ব্যবসায়ীরা আরও সাহসী ও বেপরোয়া হয়ে উঠছে।

উপজেলা সদরের ব্যবসায়ী আলতাব হোসেন বলেন, আমরা প্রতিনিয়ত বিস্ফোরণের আশঙ্কা নিয়ে দিন কাটাচ্ছি। মাঝে মাঝে অভিযান হয়, কিন্তু কিছুদিন পর আবার আগের মতোই চলে।

একাধিক সূত্র ও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, এসব মিনি তেল পাম্পে কোনো প্রকার নিয়ম-নীতি নেই, গভীর রাত পর্যন্ত খোলা রেখে তেল বিক্রি করা হয়। কোনো ধরনের দুর্ঘটনা ঘটলে প্রাণঘাতীসহ পুরো এলাকা পুড়ে ছাই হয়ে যেতে পারে।

বিশেষজ্ঞদের দাবি, প্রয়োজন কঠোর পদক্ষেপ ও টেকসই পরিকল্পনাগ্রহণ করে শুধুমাত্র অভিযান নয় পদ্ধতিগত ও সমন্বিত উদ্যোগ ছাড়া এ সমস্যার সমাধান সম্ভব নয়। তারা পাঁচটি দাবি তুলছেন। সেগুলো হলো (১) অবৈধ মিনি পাম্পগুলো চিহ্নিত করে মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করা। (২) টাস্কফোর্স গঠন করে ফায়ার সার্ভিস, বিস্ফোরক পরিদপ্তর ও পরিবেশ অধিদপ্তরের সমন্বয়ে নিয়মিত মনিটরিং চালানো। (৩) শুধুমাত্র ট্রেড লাইসেন্সের ভিত্তিতে তেল বিক্রিকে সম্পূর্ণভাবে নিষিদ্ধ ঘোষণা করা। (৪) জনসচেতনতা বাড়াতে স্থানীয় গণমাধ্যম, সামাজিক সংগঠন ও প্রশাসনের যৌথ প্রচার কার্যক্রম চালানো। (৫) বৈধ ফিলিং স্টেশনগুলোর মান ও সেবা উন্নত করা, যেন জনগণ অবৈধ পাম্পের ওপর নির্ভরশীল না হয়।

ডিমলা ফায়ার সার্ভিসের স্টেশন কর্মকর্তা নূর মোহাম্মদ বলেন, এসব মিনি পাম্পে অগ্নিনির্বাপক যন্ত্র, বালুর বস্তা বা নিরাপদ দূরত্ব কিছুই নেই। আগুন লাগলে তা ভয়াবহ রূপ নিতে পারে।

পরিবেশ অধিদপ্তর নীলফামারীর সহকারী পরিচালক মো. আব্দুল্লাহ-আল-মামুন জানান, আমাদের দপ্তর থেকে মিনি পাম্প স্থাপনের কোনো অনুমোদন দেওয়া হয়নি। খুব দ্রুত এসব পাম্প পরিদর্শন করে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।

ডিমলা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. ইমরানুজ্জামান বলেন, অবৈধ মিনি পাম্পগুলো চিহ্নিত করা হয়েছে। খুব শিগগিরই ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে অভিযান পরিচালনা করা হবে। জননিরাপত্তাকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিয়ে বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে দেখা হচ্ছে।

back to top