মানিক মিয়া অ্যাভিনিউয়ে দিনব্যাপী আয়োজন
সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কার আন্দোলন থেকে সরকার পতনের আন্দোলনে নেতৃত্বে দেওয়া ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের’ বহুল প্রত্যাশিত ‘জুলাই ঘোষণাপত্র’ মঙ্গলবার উপস্থাপন করা হবে। অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস বিকলে ৫টায় জাতীয় সংসদের দক্ষিণ প্লাজায় এ ঘোষাণপত্র পাঠ করবেন বলে জানিয়েছে তার দপ্তর।
শিক্ষার্থী-জনতার অভ্যুত্থানে গত বছর ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতন ঘটে। এরপর ৮ আগস্ট মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে রাষ্ট্রপরিচালনার দায়িত্ব নেওয়া অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ৫ আগস্টকে ‘জুলাই গণঅভ্যূত্থান দিবস’ নামকরণ করে জাতীয় দিবস হিসেবে ঘোষণা করে। অন্তর্ভূক্ত করা হয় সরকারি (সাধারণ) ছুটির তালিকায়।
‘জুলাই ঘোষণাপত্রের’ সঙ্গে অন্তর্বর্তী সরকার প্রথমে যুক্ত হয়ে চায়নি। প্রায় সাত মাস ধরে নানা আলোচনার পর জুলাই ঘোষণাপত্র দেওয়ার সিদ্ধান্ত জানায় সরকার। শেখ হাসিনা সরকারের পতনের দিনটিতেই এই ‘ঘোষণাপত্র’ প্রকাশের উদ্যোগ নেওয়া হয়।
এ উপলক্ষে ঢাকার মানিক মিয়া অ্যাভিনিউজুড়ে থাকছে দিনভর আয়োজন। প্রধান উপদেষ্টার অফিসিয়াল ফেইসবুক পোস্টে মানিক মিয়া অ্যাভিনিউয়ে ৫ আগস্ট ‘৩৬ জুলাই উদ্যাপন’ শীর্ষক অনুষ্ঠানসূচি যুক্ত করা হয়েছে।
বেলা ১১টা থেকে বিভিন্ন শিল্পী গোষ্ঠীর গান; ২টা ২৫ মিনিটে ‘ফ্যাসিস্ট এর পলায়ন উদযাপন’; এরপর ফের গান; ৫টায় ঘোষণাপত্র উপস্থাপন; ৭টা ৩০ মিনিট থেকে ‘স্পেশাল ড্রোন ড্রামা’ এবং ৮টায় কনসার্ট।
অনুষ্ঠানের আয়োজক সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়। অনুষ্ঠান ব্যবস্থাপনায় থাকছে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি। আর সহযোগিতায় থাকছে বাংলাদেশ জাতীয় সংসদ সচিবালয়। অনুষ্ঠানে সারাদেশ থেকে শিক্ষার্থী-জনতাকে আনতে আটজোড়া ট্রেন ভাড়া করেছে সরকার।
এ বিষয়ে প্রধান উপদেষ্টার দপ্তরের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘ছত্রিশ জুলাই- গত বছর এই দিনে পৃথিবী দেখেছিল এক অভাবনীয় গণ-অভ্যুত্থান। যার ফলে বাংলাদেশ থেকে পালিয়ে গিয়েছিল ফ্যাসিস্ট। বহু শহীদের রক্ত এবং যোদ্ধাদের ত্যাগের পথ ধরে পুরো বাংলাদেশ এক হয়েছিল। পথে পথে ছিলো উল্লাসমুখর জনতার জোয়ার। বাংলাদেশের বহু রাস্তায় আবেগাপ্লুত মানুষ সৃষ্টিকর্তাকে ধন্যবাদ জানাচ্ছিলেন। এক বছর পর আবার ফিরে এসেছে ছত্রিশ জুলাই। এই দিনে ঘোষিত হতে যাচ্ছে জাতির আকাক্সিক্ষত ‘জুলাই ঘোষণাপত্র’।’
২০২৪ সালের মাঝামাঝি সময়ে সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে শুরু হওয়া শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের এক পর্যায়ে তা সরকার উৎখাতের আন্দোলনে রূপ নেয়। শুরুতে এই আন্দোলনের কেন্দ্র ছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, পরে তা দাবানলের মত ছড়িয়ে পড়ে দেশের বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে।
সরকার বলপ্রয়োগের মাধ্যমে পরিস্থিতি সামাল দিতে চাইলেও তা ব্যর্থ হয়। ৩৬ দিনের সেই আন্দোলনের শেষ দিন ৫ আগস্ট ক্ষমতা ছেড়ে দেশত্যাগ করে ভারতে চলে যান সে সময়ের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এরপর ৮ অগাস্ট মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে রাষ্ট্রপরিচালনার দায়িত্ব নিয়ে অন্তর্বর্তী সরকার গঅভ্যুত্থানের পক্ষের শক্তিগুলোর ‘দাবি মেনে’ রাষ্ট্র সংস্কারের উদ্যোগ নেয়।
এদিকে অভ্যুত্থানকে কেন্দ্র করে একটি ‘ঘোষণাপত্র’ প্রকাশের ঘোষণা দেয় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও জাতীয় নাগরিক কমিটি। গতবছর ২৯ ডিসেম্বর ‘জুলাই ঘোষণাপত্র’ প্রকাশের বিষয়টি আনুষ্ঠানিকভাবে সামনে আনে তারা। বছরের শেষ দিন ৩১ ডিসেম্বর ওই ঘোষণাপত্র প্রকাশের কর্মসূচি দেওয়া হয়।
বৈষম্যবিরোধীদের গড়া জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) শুরু থেকেই এই ঘোষণাপত্রের বিষয়ে সোচ্চার ছিল। দলটির নেতারা বিভিন্ন সময় বলেন, এই ঘোষণাপত্র না হলে ভবিষ্যতে জুলাই গণ-অভ্যুত্থানকে ‘অসাংবিধানিক উপায়ে ক্ষমতা দখল’ হিসেবে দেখিয়ে এতে অংশ নেওয়া ছাত্র-জনতা বা এর মধ্য দিয়ে গঠিত অন্তর্বর্তী সরকারের সদস্যদের ‘রাষ্ট্রদ্রোহী’ সাব্যস্ত করে শাস্তি দেওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। সেই জায়গা থেকে এ অভ্যুত্থানের একটি স্বীকৃতি দরকার। এ কাজটিই জুলাই ঘোষণাপত্রের মাধ্যমে সম্পন্ন করতে হবে।
প্রথমে অন্তর্বর্তী সরকার এর সঙ্গে যুক্ত হতে চায়নি। একপর্যায়ে সরকার
বিষয়টি নিয়ে সব দলের সঙ্গে বৈঠক করে এবং সরকারের পক্ষ থেকে জুলাই ঘোষণাপত্র প্রকাশ করার সিদ্ধান্ত হয়। এরপর আবার কয়েকটি দলের সঙ্গে আলোচনা করলেও অত্যন্ত গোপনীয়তার সঙ্গে এই ঘোষনাপত্র তৈরি করে সরকার।
বিভিন্ন পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, ‘জুলাই ঘোষণাপত্র’ হবে- ২০২৪ সালের জুলাইয়ের গণ-অভ্যুত্থানের একটি দলিল। যার মাধ্যমে জুলাই গণ-অভ্যুত্থানকে রাষ্ট্রীয় ও সাংবিধানিকভাবে স্বীকৃতি দেওয়া হবে। তবে এই ঘোষণাপত্রে কী থাকছে, তা এখনো গোপন রয়ে গেছে। অন্যদিকে, জুলাই ঘোষণাপত্রের আইনগত ভিত্তি কি হবে, তা নিয়েও প্রশ্ন রয়েছে।
জুলাই ঘোষণাপত্রের একটি খসড়া প্রস্তুত করে গত মাসে বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী ও এনসিপির মতামত নেওয়া হয়। পরে সেই খসড়ার ওপর ওই তিনটি রাজনৈতিক দল তাদের মতামত জানানোর পর শনিবার এ নিয়ে চূড়ান্ত ঘোষণা আসে অন্তর্বর্তী সরকারের পক্ষ থেকে।
সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্রে জানা গেছে, ‘জুলাই ঘোষণাপত্রের’ খসড়ায় মোট ২৬টি দফার উল্লেখ আছে। এর মধ্যে প্রথম ২১টিতে সংক্ষেপে মহান মুক্তিযুদ্ধসহ বাংলাদেশের মানুষের অতীতের বিভিন্ন ঐতিহাসিক ও গণতান্ত্রিক সংগ্রাম থেকে শুরু করে জুলাই অভ্যুত্থানের প্রেক্ষাপট বর্ণনা করা হয়েছে। এখানে শেখ মুজিবুর রহমানের আমলে সংবিধান সংশোধন করে একদলীয় শাসন ব্যবস্থা বাকশাল কায়েমের সমালোচনা করা হয়েছে। ‘পিলখানা ট্র্যাজেডি’ ‘শাপলা চত্বরে গণহত্যা’র বিষয়েও এখানে উল্লেখ আছে।
খসড়া ঘোষণাপত্রের একটি দফায় বলা হয়েছে, ‘জনগণের সার্বভৌম অভিপ্রায়ের ভিত্তিতে অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে ২০২৪ সালের ৮ আগস্ট একটি অন্তর্বর্তী সরকার গঠন করা হয়।’ বাকি দফাগুলোতে রাষ্ট্রের গণতান্ত্রিক সংস্কারের আকাক্সক্ষা, আওয়ামী লীগ শাসনামলে গুম-খুন, গণহত্যা, মানবতাবিরোধী অপরাধ ও সব ধরনের নির্যাতন-নিপীড়ন এবং রাষ্ট্রীয় সম্পত্তি লুণ্ঠনের অপরাধের দ্রুত উপযুক্ত বিচার, আইনের শাসন ও মানবাধিকার, দুর্নীতি ও শোষণমুক্ত বৈষম্যহীন সমাজ এবং গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার প্রত্যয় ঘোষণা করা হয়েছে।
খসড়ার একটি দফায় বলা হয়েছে, ‘ছাত্র-গণ-অভ্যুত্থান ২০২৪- এর উপযুক্ত রাষ্ট্রীয় ও সাংবিধানিক স্বীকৃতি প্রদান করা হবে। বিশেষত, সংবিধানের প্রস্তাবনায় এর উল্লেখ থাকবে এবং তফসিলে এ ঘোষণাপত্র সংযুক্ত থাকবে।’
খসড়ায় যেভাবে বলা আছে সেভাবে এটি গৃহীত হলে জুলাই ঘোষণাপত্র ভবিষ্যতে সংবিধানের অংশ হবে। অবশ্য এ ক্ষেত্রে বিএনপির কিছুটা ভিন্নমত আছে। তারা জুলাই ঘোষণাপত্রকে সংবিধানের প্রস্তাবনায় না রেখে চতুর্থ তফসিলে রাখার পক্ষে। খসড়ায় বলা হয়েছে, এই ঘোষণাপত্র ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট থেকে কার্যকর বলে ধরে নেওয়া হবে।
এদিকে অন্তর্বর্তী সরকার ‘জুলাই জাতীয় সনদ’ তৈরীর কাজও করছে। এটি হবে- রাষ্ট্রের বিভিন্ন ক্ষেত্রে সংস্কার প্রস্তাব বাস্তবায়নে ঐকমত্যের একটি রাজনৈতিক দলিল। এটি বাস্তবায়ন করছে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন যার নেতৃত্বে আছেন প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস। এটি এখনো চূড়ান্ত হয়নি। ‘জুলাই জাতীয় সনদের’ খসড়ায় তিনটি ভাগ আছে। প্রথম অংশে আছে এই সনদের পটভূমি। দ্বিতীয় অংশে কোন কোন সংস্কার প্রস্তাবে ঐকমত্য ও সিদ্ধান্ত হয়েছে, তার উল্লেখ। আর তৃতীয় অংশে থাকছে, সনদ তথা সংস্কার প্রস্তাবগুলো বাস্তবায়নের বিষয়ে কিছু সুনির্দিষ্ট অঙ্গীকার। সেখানে বলা আছে, আগামী নির্বাচনের মাধ্যমে সরকার গঠনের পরবর্তী দুই বছরের মধ্যে সংস্কার প্রস্তাবগুলো বাস্তবায়নের অঙ্গীকার করবে দলগুলো।
মানিক মিয়া অ্যাভিনিউয়ে দিনব্যাপী আয়োজন
সোমবার, ০৪ আগস্ট ২০২৫
সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কার আন্দোলন থেকে সরকার পতনের আন্দোলনে নেতৃত্বে দেওয়া ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের’ বহুল প্রত্যাশিত ‘জুলাই ঘোষণাপত্র’ মঙ্গলবার উপস্থাপন করা হবে। অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস বিকলে ৫টায় জাতীয় সংসদের দক্ষিণ প্লাজায় এ ঘোষাণপত্র পাঠ করবেন বলে জানিয়েছে তার দপ্তর।
শিক্ষার্থী-জনতার অভ্যুত্থানে গত বছর ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতন ঘটে। এরপর ৮ আগস্ট মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে রাষ্ট্রপরিচালনার দায়িত্ব নেওয়া অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ৫ আগস্টকে ‘জুলাই গণঅভ্যূত্থান দিবস’ নামকরণ করে জাতীয় দিবস হিসেবে ঘোষণা করে। অন্তর্ভূক্ত করা হয় সরকারি (সাধারণ) ছুটির তালিকায়।
‘জুলাই ঘোষণাপত্রের’ সঙ্গে অন্তর্বর্তী সরকার প্রথমে যুক্ত হয়ে চায়নি। প্রায় সাত মাস ধরে নানা আলোচনার পর জুলাই ঘোষণাপত্র দেওয়ার সিদ্ধান্ত জানায় সরকার। শেখ হাসিনা সরকারের পতনের দিনটিতেই এই ‘ঘোষণাপত্র’ প্রকাশের উদ্যোগ নেওয়া হয়।
এ উপলক্ষে ঢাকার মানিক মিয়া অ্যাভিনিউজুড়ে থাকছে দিনভর আয়োজন। প্রধান উপদেষ্টার অফিসিয়াল ফেইসবুক পোস্টে মানিক মিয়া অ্যাভিনিউয়ে ৫ আগস্ট ‘৩৬ জুলাই উদ্যাপন’ শীর্ষক অনুষ্ঠানসূচি যুক্ত করা হয়েছে।
বেলা ১১টা থেকে বিভিন্ন শিল্পী গোষ্ঠীর গান; ২টা ২৫ মিনিটে ‘ফ্যাসিস্ট এর পলায়ন উদযাপন’; এরপর ফের গান; ৫টায় ঘোষণাপত্র উপস্থাপন; ৭টা ৩০ মিনিট থেকে ‘স্পেশাল ড্রোন ড্রামা’ এবং ৮টায় কনসার্ট।
অনুষ্ঠানের আয়োজক সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়। অনুষ্ঠান ব্যবস্থাপনায় থাকছে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি। আর সহযোগিতায় থাকছে বাংলাদেশ জাতীয় সংসদ সচিবালয়। অনুষ্ঠানে সারাদেশ থেকে শিক্ষার্থী-জনতাকে আনতে আটজোড়া ট্রেন ভাড়া করেছে সরকার।
এ বিষয়ে প্রধান উপদেষ্টার দপ্তরের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘ছত্রিশ জুলাই- গত বছর এই দিনে পৃথিবী দেখেছিল এক অভাবনীয় গণ-অভ্যুত্থান। যার ফলে বাংলাদেশ থেকে পালিয়ে গিয়েছিল ফ্যাসিস্ট। বহু শহীদের রক্ত এবং যোদ্ধাদের ত্যাগের পথ ধরে পুরো বাংলাদেশ এক হয়েছিল। পথে পথে ছিলো উল্লাসমুখর জনতার জোয়ার। বাংলাদেশের বহু রাস্তায় আবেগাপ্লুত মানুষ সৃষ্টিকর্তাকে ধন্যবাদ জানাচ্ছিলেন। এক বছর পর আবার ফিরে এসেছে ছত্রিশ জুলাই। এই দিনে ঘোষিত হতে যাচ্ছে জাতির আকাক্সিক্ষত ‘জুলাই ঘোষণাপত্র’।’
২০২৪ সালের মাঝামাঝি সময়ে সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে শুরু হওয়া শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের এক পর্যায়ে তা সরকার উৎখাতের আন্দোলনে রূপ নেয়। শুরুতে এই আন্দোলনের কেন্দ্র ছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, পরে তা দাবানলের মত ছড়িয়ে পড়ে দেশের বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে।
সরকার বলপ্রয়োগের মাধ্যমে পরিস্থিতি সামাল দিতে চাইলেও তা ব্যর্থ হয়। ৩৬ দিনের সেই আন্দোলনের শেষ দিন ৫ আগস্ট ক্ষমতা ছেড়ে দেশত্যাগ করে ভারতে চলে যান সে সময়ের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এরপর ৮ অগাস্ট মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে রাষ্ট্রপরিচালনার দায়িত্ব নিয়ে অন্তর্বর্তী সরকার গঅভ্যুত্থানের পক্ষের শক্তিগুলোর ‘দাবি মেনে’ রাষ্ট্র সংস্কারের উদ্যোগ নেয়।
এদিকে অভ্যুত্থানকে কেন্দ্র করে একটি ‘ঘোষণাপত্র’ প্রকাশের ঘোষণা দেয় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও জাতীয় নাগরিক কমিটি। গতবছর ২৯ ডিসেম্বর ‘জুলাই ঘোষণাপত্র’ প্রকাশের বিষয়টি আনুষ্ঠানিকভাবে সামনে আনে তারা। বছরের শেষ দিন ৩১ ডিসেম্বর ওই ঘোষণাপত্র প্রকাশের কর্মসূচি দেওয়া হয়।
বৈষম্যবিরোধীদের গড়া জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) শুরু থেকেই এই ঘোষণাপত্রের বিষয়ে সোচ্চার ছিল। দলটির নেতারা বিভিন্ন সময় বলেন, এই ঘোষণাপত্র না হলে ভবিষ্যতে জুলাই গণ-অভ্যুত্থানকে ‘অসাংবিধানিক উপায়ে ক্ষমতা দখল’ হিসেবে দেখিয়ে এতে অংশ নেওয়া ছাত্র-জনতা বা এর মধ্য দিয়ে গঠিত অন্তর্বর্তী সরকারের সদস্যদের ‘রাষ্ট্রদ্রোহী’ সাব্যস্ত করে শাস্তি দেওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। সেই জায়গা থেকে এ অভ্যুত্থানের একটি স্বীকৃতি দরকার। এ কাজটিই জুলাই ঘোষণাপত্রের মাধ্যমে সম্পন্ন করতে হবে।
প্রথমে অন্তর্বর্তী সরকার এর সঙ্গে যুক্ত হতে চায়নি। একপর্যায়ে সরকার
বিষয়টি নিয়ে সব দলের সঙ্গে বৈঠক করে এবং সরকারের পক্ষ থেকে জুলাই ঘোষণাপত্র প্রকাশ করার সিদ্ধান্ত হয়। এরপর আবার কয়েকটি দলের সঙ্গে আলোচনা করলেও অত্যন্ত গোপনীয়তার সঙ্গে এই ঘোষনাপত্র তৈরি করে সরকার।
বিভিন্ন পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, ‘জুলাই ঘোষণাপত্র’ হবে- ২০২৪ সালের জুলাইয়ের গণ-অভ্যুত্থানের একটি দলিল। যার মাধ্যমে জুলাই গণ-অভ্যুত্থানকে রাষ্ট্রীয় ও সাংবিধানিকভাবে স্বীকৃতি দেওয়া হবে। তবে এই ঘোষণাপত্রে কী থাকছে, তা এখনো গোপন রয়ে গেছে। অন্যদিকে, জুলাই ঘোষণাপত্রের আইনগত ভিত্তি কি হবে, তা নিয়েও প্রশ্ন রয়েছে।
জুলাই ঘোষণাপত্রের একটি খসড়া প্রস্তুত করে গত মাসে বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী ও এনসিপির মতামত নেওয়া হয়। পরে সেই খসড়ার ওপর ওই তিনটি রাজনৈতিক দল তাদের মতামত জানানোর পর শনিবার এ নিয়ে চূড়ান্ত ঘোষণা আসে অন্তর্বর্তী সরকারের পক্ষ থেকে।
সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্রে জানা গেছে, ‘জুলাই ঘোষণাপত্রের’ খসড়ায় মোট ২৬টি দফার উল্লেখ আছে। এর মধ্যে প্রথম ২১টিতে সংক্ষেপে মহান মুক্তিযুদ্ধসহ বাংলাদেশের মানুষের অতীতের বিভিন্ন ঐতিহাসিক ও গণতান্ত্রিক সংগ্রাম থেকে শুরু করে জুলাই অভ্যুত্থানের প্রেক্ষাপট বর্ণনা করা হয়েছে। এখানে শেখ মুজিবুর রহমানের আমলে সংবিধান সংশোধন করে একদলীয় শাসন ব্যবস্থা বাকশাল কায়েমের সমালোচনা করা হয়েছে। ‘পিলখানা ট্র্যাজেডি’ ‘শাপলা চত্বরে গণহত্যা’র বিষয়েও এখানে উল্লেখ আছে।
খসড়া ঘোষণাপত্রের একটি দফায় বলা হয়েছে, ‘জনগণের সার্বভৌম অভিপ্রায়ের ভিত্তিতে অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে ২০২৪ সালের ৮ আগস্ট একটি অন্তর্বর্তী সরকার গঠন করা হয়।’ বাকি দফাগুলোতে রাষ্ট্রের গণতান্ত্রিক সংস্কারের আকাক্সক্ষা, আওয়ামী লীগ শাসনামলে গুম-খুন, গণহত্যা, মানবতাবিরোধী অপরাধ ও সব ধরনের নির্যাতন-নিপীড়ন এবং রাষ্ট্রীয় সম্পত্তি লুণ্ঠনের অপরাধের দ্রুত উপযুক্ত বিচার, আইনের শাসন ও মানবাধিকার, দুর্নীতি ও শোষণমুক্ত বৈষম্যহীন সমাজ এবং গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার প্রত্যয় ঘোষণা করা হয়েছে।
খসড়ার একটি দফায় বলা হয়েছে, ‘ছাত্র-গণ-অভ্যুত্থান ২০২৪- এর উপযুক্ত রাষ্ট্রীয় ও সাংবিধানিক স্বীকৃতি প্রদান করা হবে। বিশেষত, সংবিধানের প্রস্তাবনায় এর উল্লেখ থাকবে এবং তফসিলে এ ঘোষণাপত্র সংযুক্ত থাকবে।’
খসড়ায় যেভাবে বলা আছে সেভাবে এটি গৃহীত হলে জুলাই ঘোষণাপত্র ভবিষ্যতে সংবিধানের অংশ হবে। অবশ্য এ ক্ষেত্রে বিএনপির কিছুটা ভিন্নমত আছে। তারা জুলাই ঘোষণাপত্রকে সংবিধানের প্রস্তাবনায় না রেখে চতুর্থ তফসিলে রাখার পক্ষে। খসড়ায় বলা হয়েছে, এই ঘোষণাপত্র ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট থেকে কার্যকর বলে ধরে নেওয়া হবে।
এদিকে অন্তর্বর্তী সরকার ‘জুলাই জাতীয় সনদ’ তৈরীর কাজও করছে। এটি হবে- রাষ্ট্রের বিভিন্ন ক্ষেত্রে সংস্কার প্রস্তাব বাস্তবায়নে ঐকমত্যের একটি রাজনৈতিক দলিল। এটি বাস্তবায়ন করছে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন যার নেতৃত্বে আছেন প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস। এটি এখনো চূড়ান্ত হয়নি। ‘জুলাই জাতীয় সনদের’ খসড়ায় তিনটি ভাগ আছে। প্রথম অংশে আছে এই সনদের পটভূমি। দ্বিতীয় অংশে কোন কোন সংস্কার প্রস্তাবে ঐকমত্য ও সিদ্ধান্ত হয়েছে, তার উল্লেখ। আর তৃতীয় অংশে থাকছে, সনদ তথা সংস্কার প্রস্তাবগুলো বাস্তবায়নের বিষয়ে কিছু সুনির্দিষ্ট অঙ্গীকার। সেখানে বলা আছে, আগামী নির্বাচনের মাধ্যমে সরকার গঠনের পরবর্তী দুই বছরের মধ্যে সংস্কার প্রস্তাবগুলো বাস্তবায়নের অঙ্গীকার করবে দলগুলো।