বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় জুলাইয়ের একদিন রাজধানীতে কাজ শেষে বাসায় ফেরার পথে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় এক কিশোরকে রাস্তায় পড়ে থাকতে দেখেন পারভীন। তাকে বাঁচাতে এগিয়ে যান তিনি। কিন্তু ওই কিশোরকে লক্ষ্য করে পুলিশের গুলি চালানো থেমে থাকেনি।
এ সময় পারভীন নিজেও গুলিবিদ্ধ হন এবং তার বাম চোখ অন্ধ হয়ে যায়, ক্ষতিগ্রস্ত হয় ডান চোখও। সোমবার আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের বেঞ্চে পারভীন এই ঘটনার বর্ণনা দেন।
আন্দোলনের সময় রাজধানীর যাত্রাবাড়ীতে বসবাস করতেন পারভীন। তিনি বলেন, “পুলিশ ছেলেটাকে এমনভাবে গুলি করছিল, মনে হচ্ছিল খই ফুটছে। টুস টুস শব্দ হচ্ছিল।”
তিনি জানান, ঘটনার দিন সকালে কাজে গিয়ে বিকালে বাসায় ফেরার পথে যাত্রাবাড়ীতে অনেক রক্তাক্ত মানুষের মাঝে পড়ে থাকা এক ছেলেকে সাহায্য করতে যান। সাদা শার্ট ও প্যান্ট পরা, প্রায় ১৮-১৯ বছরের ছেলেটি রক্তে ভেজা অবস্থায় বাঁচার আকুতি জানায়। পারভীন তাকে ধরতেই তার মাথা পারভীনের ঘাড়ে রাখে। তখন ১৪-১৫ জন সশস্ত্র পুলিশ ছেলেটিকে লক্ষ্য করে গুলি চালায়।
পারভীন বলেন, “আমি বাম হাত তুলে পুলিশকে বলি, আর গুলি কইরেন না। তখন একটা পুলিশ চোখ বরাবর গুলি করে, গুলি এসে পড়ে বাম চোখে।” এ সময় আরও গুলি তার শরীরের বিভিন্ন স্থানে লাগে।
তিনি কাঁদতে কাঁদতে বলেন, “চোখ থেকে এমনভাবে রক্ত বের হচ্ছিল যেন ফিনকি দিয়ে রক্ত বের হচ্ছিল।” পরে পারভীন ও ছেলেটি মাটিতে লুটিয়ে পড়েন। ছেলেটির নিঃশ্বাস ধীরে ধীরে থেমে যায়।
পরে লোকজন পারভীনকে ঢাকা মেডিকেলে নিয়ে যায়। সেখানে চিকিৎসার জন্য ২৫০ টাকার একটি ড্রপের প্রয়োজন হয়। কিন্তু সঠিক চিকিৎসা পাননি বলে অভিযোগ করেন তিনি।
একজন নারী তাকে ড্রপ কিনে দেন। ড্রপ দেওয়ার পর ব্যথায় কাতরাতে থাকেন। হাসপাতালের বারান্দায় পড়ে থাকেন তিনি। কেউ তার স্বামীর নম্বর নিয়ে ফোন করে বরিশালে থাকা স্বামীকে খবর দেয়। পরদিন সকালে স্বামী হাসপাতালে পৌঁছান।
চিকিৎসার খরচ জোগাতে পারভীনের কানের দুল বিক্রি করেন তার স্বামী। এ সময় পথে কিছু লোক তাকে মারধর করে, যাতে তিনটি সেলাই পড়ে। পরে পারভীনের চোখে অপারেশন করে তিনটি গুলি বের করা হয়, আরও গুলি রয়ে গেছে বলে জানান চিকিৎসকরা।
তিনি বলেন, “দেশ স্বাধীন হওয়ার পর অপারেশন হয়। তখন একটি গুলি বের করা হয়।”
আদালতে পারভীন বলেন, তিনি আট মাসের অন্তঃসত্ত্বা। এই অবস্থায়ও ন্যায়বিচারের জন্য আদালতে এসেছেন। তার ডান চোখে আবছা দেখেন, বাম চোখ সম্পূর্ণ অন্ধ। তিনি এই অবস্থার জন্য শেখ হাসিনাকে দায়ী করেন।
তার অভিযোগ, “শেখ হাসিনা পুলিশের বাপ-মা। তার নির্দেশ ছাড়া পুলিশ গুলি করে না। তার নির্দেশেই পুলিশ গুলি করে হাজার হাজার মানুষকে আহত ও নিহত করেছে।”
তিনি আরও বলেন, “এই সরকার থাকাকালে যেন শেখ হাসিনার বিচার হয়। না হলে ভবিষ্যত সরকারও মানুষ হত্যা করে পার পেয়ে যাবে।”
এরপর আসামিপক্ষের আইনজীবী আমির হোসেন তাকে জেরা করেন।
সোমবার পারভীনের আগে সাক্ষ্য দেন ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থী আব্দুল্লাহ আল ইমরান। রোববার সাক্ষ্য দেন খোকন চন্দ্র বর্মণ। মামলায় মোট ৮১ জন সাক্ষীর মধ্যে তিনজনের সাক্ষ্য গ্রহণ শেষ হয়েছে।
মামলায় শেখ হাসিনা ও আসাদুজ্জামান খান কামালকে পলাতক এবং সাবেক আইজিপি মামুনকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে। মামুন রাজসাক্ষী হওয়ার আবেদন করেছেন।
সোমবার, ০৪ আগস্ট ২০২৫
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় জুলাইয়ের একদিন রাজধানীতে কাজ শেষে বাসায় ফেরার পথে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় এক কিশোরকে রাস্তায় পড়ে থাকতে দেখেন পারভীন। তাকে বাঁচাতে এগিয়ে যান তিনি। কিন্তু ওই কিশোরকে লক্ষ্য করে পুলিশের গুলি চালানো থেমে থাকেনি।
এ সময় পারভীন নিজেও গুলিবিদ্ধ হন এবং তার বাম চোখ অন্ধ হয়ে যায়, ক্ষতিগ্রস্ত হয় ডান চোখও। সোমবার আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের বেঞ্চে পারভীন এই ঘটনার বর্ণনা দেন।
আন্দোলনের সময় রাজধানীর যাত্রাবাড়ীতে বসবাস করতেন পারভীন। তিনি বলেন, “পুলিশ ছেলেটাকে এমনভাবে গুলি করছিল, মনে হচ্ছিল খই ফুটছে। টুস টুস শব্দ হচ্ছিল।”
তিনি জানান, ঘটনার দিন সকালে কাজে গিয়ে বিকালে বাসায় ফেরার পথে যাত্রাবাড়ীতে অনেক রক্তাক্ত মানুষের মাঝে পড়ে থাকা এক ছেলেকে সাহায্য করতে যান। সাদা শার্ট ও প্যান্ট পরা, প্রায় ১৮-১৯ বছরের ছেলেটি রক্তে ভেজা অবস্থায় বাঁচার আকুতি জানায়। পারভীন তাকে ধরতেই তার মাথা পারভীনের ঘাড়ে রাখে। তখন ১৪-১৫ জন সশস্ত্র পুলিশ ছেলেটিকে লক্ষ্য করে গুলি চালায়।
পারভীন বলেন, “আমি বাম হাত তুলে পুলিশকে বলি, আর গুলি কইরেন না। তখন একটা পুলিশ চোখ বরাবর গুলি করে, গুলি এসে পড়ে বাম চোখে।” এ সময় আরও গুলি তার শরীরের বিভিন্ন স্থানে লাগে।
তিনি কাঁদতে কাঁদতে বলেন, “চোখ থেকে এমনভাবে রক্ত বের হচ্ছিল যেন ফিনকি দিয়ে রক্ত বের হচ্ছিল।” পরে পারভীন ও ছেলেটি মাটিতে লুটিয়ে পড়েন। ছেলেটির নিঃশ্বাস ধীরে ধীরে থেমে যায়।
পরে লোকজন পারভীনকে ঢাকা মেডিকেলে নিয়ে যায়। সেখানে চিকিৎসার জন্য ২৫০ টাকার একটি ড্রপের প্রয়োজন হয়। কিন্তু সঠিক চিকিৎসা পাননি বলে অভিযোগ করেন তিনি।
একজন নারী তাকে ড্রপ কিনে দেন। ড্রপ দেওয়ার পর ব্যথায় কাতরাতে থাকেন। হাসপাতালের বারান্দায় পড়ে থাকেন তিনি। কেউ তার স্বামীর নম্বর নিয়ে ফোন করে বরিশালে থাকা স্বামীকে খবর দেয়। পরদিন সকালে স্বামী হাসপাতালে পৌঁছান।
চিকিৎসার খরচ জোগাতে পারভীনের কানের দুল বিক্রি করেন তার স্বামী। এ সময় পথে কিছু লোক তাকে মারধর করে, যাতে তিনটি সেলাই পড়ে। পরে পারভীনের চোখে অপারেশন করে তিনটি গুলি বের করা হয়, আরও গুলি রয়ে গেছে বলে জানান চিকিৎসকরা।
তিনি বলেন, “দেশ স্বাধীন হওয়ার পর অপারেশন হয়। তখন একটি গুলি বের করা হয়।”
আদালতে পারভীন বলেন, তিনি আট মাসের অন্তঃসত্ত্বা। এই অবস্থায়ও ন্যায়বিচারের জন্য আদালতে এসেছেন। তার ডান চোখে আবছা দেখেন, বাম চোখ সম্পূর্ণ অন্ধ। তিনি এই অবস্থার জন্য শেখ হাসিনাকে দায়ী করেন।
তার অভিযোগ, “শেখ হাসিনা পুলিশের বাপ-মা। তার নির্দেশ ছাড়া পুলিশ গুলি করে না। তার নির্দেশেই পুলিশ গুলি করে হাজার হাজার মানুষকে আহত ও নিহত করেছে।”
তিনি আরও বলেন, “এই সরকার থাকাকালে যেন শেখ হাসিনার বিচার হয়। না হলে ভবিষ্যত সরকারও মানুষ হত্যা করে পার পেয়ে যাবে।”
এরপর আসামিপক্ষের আইনজীবী আমির হোসেন তাকে জেরা করেন।
সোমবার পারভীনের আগে সাক্ষ্য দেন ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থী আব্দুল্লাহ আল ইমরান। রোববার সাক্ষ্য দেন খোকন চন্দ্র বর্মণ। মামলায় মোট ৮১ জন সাক্ষীর মধ্যে তিনজনের সাক্ষ্য গ্রহণ শেষ হয়েছে।
মামলায় শেখ হাসিনা ও আসাদুজ্জামান খান কামালকে পলাতক এবং সাবেক আইজিপি মামুনকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে। মামুন রাজসাক্ষী হওয়ার আবেদন করেছেন।