এনায়েতপুর থানায় ১৫ পুলিশসহ সারাদেশে আগুন, পিটুনিতে ৪৪ পুলিশের মৃত্যু
২০২৪ সালে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় সিরাজগঞ্জের এনায়েতপুর থানায় উত্তেজিত জনতা হামলা চালিয়ে ১৫ পুলিশ সদস্য ও কর্মকর্তাকে পিটিয়ে, কুপিয়ে ও পুড়িয়ে হত্যা করা হয়েছে।
ওই সময় রাজধানীর যাত্রাবাড়ী ও উত্তরা, আশুলিয়া, শ্যামপুরসহ দেশের অন্যান্য থানা এলাকায় পুলিশ কর্মকর্তা ও সদস্যদের পিটিয়ে ও ধাওয়া করে মারপিট করা হয়েছে। এতে কমপক্ষে পুলিশ সদর দপ্তরের তথ্যমতে ৪৪ জন পুলিশের মৃত্যু হয়েছে। এসব ঘটনায় থানায় কয়েকটি মামলাও করা হয়েছে। তবে গত এক বছরেও এসব মামলার তদন্ত এখনও শেষ হয়নি। কেন পুলিশের ওপর ক্ষোভ তাও উদ্ঘাটন করা হয়নি।
অভিযোগ রয়েছে, আওয়ামী লীগের পক্ষ নিয়ে ছাত্র-জনতার ওপর নির্বিচারে গুলি, সাধারণ ও বিরোধী রাজনৈতিক নেতাকর্মীদের ওপর দমনপীড়ন ও নির্যাতনের কারণে পুলিশের ওপর ক্ষোভ থেকে মারপিট ও হত্যা করা হয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে। এনায়েতপুর থানার মামলার তদন্ত কর্মকর্তা স্থানীয় সাংবাদিককে জানিয়েছেন, সিরাজগঞ্জ শহীদ এম মনসুর আলী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন এবং বিস্ফোরক পরীক্ষার রিপোর্ট এখনও না আসায় তদন্ত চূড়ান্ত করা যাচ্ছে না।
২০২৪ সালের ৪ আগস্টের সেই ঘটনায় মামলা হয় ঘটনার ২১ দিন পর, ২৭ আগস্ট মামলাটি দায়ের করেন এনায়েতপুর থানার এসআই আব্দুল মালেক। মামলায় এনায়েতপুর থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকসহ চার নেতার নাম উল্লেখ করে আরও পাঁচ থেকে ছয় হাজার অজ্ঞাতপরিচয় ব্যক্তিকে আসামি করেন।
মামলার এজাহার অনুযায়ী, ঘটনার দিন দুপুর ১২টার দিকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতা এনায়েতপুর থানার সামনে অবস্থান নেয়। পরিস্থিতি উত্তপ্ত হলেও ওসি আব্দুর রাজ্জাক হ্যান্ডমাইকে বক্তব্য দিয়ে ছাত্র-জনতাকে শান্ত থাকতে বলেন এবং তাদের থানার এলাকা ত্যাগে আহ্বান জানান।ছাত্র-জনতা শান্তিপূর্ণভাবে সরে গেলেও কিছুক্ষণ পর আওয়ামী লীগ নেতা আহমদ মোস্তফা খান বাচ্চুর নেতৃত্বে দেশীয় অস্ত্রসহ পাঁচ-ছয় হাজার ব্যক্তি থানা ঘিরে ফেলে এবং হামলা চালায়।
আত্মরক্ষায় পুলিশ কাঁদুনে গ্যাস নিক্ষেপ করে। পরে আসামিরা পুলিশের কোয়ার্টার ও ওসির বাসভবনে আগুন ধরিয়ে দেয়।
আতঙ্কিত পুলিশ সদস্যরা যখন আশ্রয়ের চেষ্টা করছিলেন, তখন আসামিরা থানায় প্রবেশ করে সাত পুলিশ সদস্যকে পিটিয়ে ও কুপিয়ে হত্যা করে। এরপর থানা ভবনের অস্ত্রাগার ভেঙে সরকারি ও ব্যক্তিগত আগ্নেয়াস্ত্র এবং গুলি লুট করে। এসব অস্ত্র দিয়ে তারা থানার ভেতর ও বাইরে থাকা পুলিশ সদস্যদের লক্ষ্য করে এলোপাতাড়ি গুলি চালায়।
ওসি আব্দুর রাজ্জাকসহ অনেক পুলিশ সদস্য কাছাকাছি বাবু মিয়ার বাড়িতে আশ্রয় নেন। কিন্তু হামলাকারীরা সেখানেও পৌঁছে কয়েকজনকে পিটিয়ে ও কুপিয়ে হত্যা করে। নারী কনস্টেবল রেহেনা পারভীনকেও শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করা হয় বলে এজাহারে উল্লেখ রয়েছে। ঘটনার খবর পেয়ে সেনাবাহিনীর একটি দল ঘটনাস্থলে গিয়ে হতাহতদের উদ্ধার করে। নিহত পুলিশ সদস্যরা হলেন ওসি আব্দুর রাজ্জাক, এসআই রইস উদ্দিন খান, তহছেনুজ্জামান, প্রনবেশ কুমার বিশ্বাস, নাজমুল হোসাইন, আনিসুর রহমান মোল্লা, এএসআই ওবায়দুর রহমান, কনস্টেবল আব্দুস সালেক, হাফিজুর ইসলাম, রবিউল আলম শাহ, হুমায়ন কবির, আরিফুল ইসলাম, রিয়াজুল ইসলাম, শাহিন উদ্দিন ও হানিফ আলী।
মামলার বর্তমান তদন্ত কর্মকর্তা এসআই ফরিদ উদ্দিন জানান, দুই মাস ধরে তিনি মামলার তদন্ত করছেন। এর আগে দুইজন কর্মকর্তা মামলাটি তদন্ত করেন। ময়নাতদন্ত এবং সিআইডির রিপোর্ট ছাড়া তদন্ত প্রতিবেদন দেয়া সম্ভব হচ্ছে না বলে জানান তিনি।
এ ঘটনায় শুধু এই একটি নয়, জেলায় মোট নয়টি মামলা হয়। সিরাজগঞ্জ সদর থানায় চারটি, এনায়েতপুর থানায় তিনটি এবং উল্লাপাড়া থানায় একটি করে মামলা করা হয়। এসব মামলায় এজাহারভুক্ত আসামি ৬৭২ জন এবং অজ্ঞাতপরিচয় আসামি পাঁচ থেকে ছয় হাজার।
এছাড়া, গত এক বছরে রাজনৈতিক ঘটনার জেরে জেলার বিভিন্ন থানায় আরও ২০টির বেশি মামলা হয়। এসব মামলায় সাবেক মন্ত্রী আব্দুল লতিফ বিশ্বাস, সাবেক সংসদ সদস্য জান্নাত আরা হেনরী, তানভীর ইমাম, চয়ন ইসলাম, আব্দুল আজিজ, জেলা পরিষদের অপসারিত চেয়ারম্যান শামীম তালুকদার লাবু, উল্লাপাড়া উপজেলার সাবেক চেয়ারম্যান সেলিনা মির্জা মুক্তি ও সিরাজগঞ্জ বারের সাবেক পিপি আব্দুর রহমানসহ আওয়ামী লীগের অন্তত ১৬৩ জন নেতাকর্মী গ্রেপ্তার হয়েছেন।
এদিকে পুলিশ সদর দপ্তর থেকে জানিয়েছে, জুলাই আন্দোলনের সময় এনায়েতপুর থানাসহ সারাদেশে ৪৪ জন পুলিশ কর্মকর্তা ও সদস্য পেশাগত দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে নিহত হয়েছেন। আরও প্রায় আড়াই হাজার পুলিশ সদস্য আহত হয়েছেন। এই সব ঘটনার পর সংশ্লিষ্ট থানাগুলোতে পুলিশ অভিযোগ করে রাখছে। তবে মামলা তদন্তের অগ্রগতি সম্পর্কে জানা নেই।
পুলিশ সদর দপ্তরের তালিকা মতে, জুলাই-আগস্ট আন্দোলনের সময় উত্তরা পূর্ব থানার সামনে পুলিশ পরিদর্শক রাশেদুল ইসলাম মারা গেছেন। যাত্রাবাড়ী থানার সামনে এসআই সুজন চন্দ্র দে, উত্তরা পূর্ব থানার সামনে এসআই খগেশ চন্দ্র, যাত্রাবাড়ী থানার সামনে সঞ্জয় কুমার দাস, যাত্রাবাড়ী থানার সামনে এএসআই ফিরোজ হোসেন, যাত্রাবাড়ী মহাসড়কে নায়েক গিয়াস উদ্দিন, যাত্রাবাড়ীর থানার সামনে কনস্টেবল আব্দুল মজিদ, যাত্রাবাড়ী থানার সামনে কনস্টেবল রেজাউল, জাতীয় সংসদ ভবন এলাকায় কনস্টেবল মাহফুজুর রহমান, উত্তরা পূর্ব থানার সামনে কনস্টেবল শহিদুল আলম, উত্তরা পূর্ব থানার সামনে কনস্টেবল আবু হাসিনাত রনি, যাত্রাবাড়ী থানার সামনে কনস্টেবল মীর মোনতাজ আলী, খুলনা লবনচরা থানার গল্লামারী বাজারে কনস্টেবল সুমন কুমার ঘরামী, গাজীপুর বাসন থানার সামনে কনস্টেবল আব্দুল মালেক, আশুলিয়া থানার সামনে এএসআই সোহেল রানা, এএসআই রাজু আহমেদ, কুমিল্লা তিতাসে এসআই রেজাউল করিম, কনস্টেবল মাইন উদ্দিন, চাঁদপুরের কচুয়ায় এসআই মামুনুর রশিদ সরকার, নোয়াখালীর সোনাইমুড়ীতে এসআই বাছির উদ্দিন, সোনাইমুড়ীতে কনস্টেবল ইব্রাহিম, এসবির এএসআই রফিকুল ইসলাম, পিবিআইয়ের ইন্সপেক্টর মাসুদ পারভেজ ভূইয়া, ট্যুরিস্ট পুলিশের এএসআই মোক্তাদির, হাইওয়ে পুলিশের সদস্য এরশাদ আলী, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কসবা থানার এটিএসআই আলি হোসেন চৌধুরী, ডিএমপির কনস্টেবল সুজন, শ্যামপুরের কনস্টেবল খলিলুর রহমানসহ ৪৪ জনের মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করেছে পুলিশ সদর দপ্তর।
পেশাগত দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন থানা এলাকায় প্রায় আড়াই হাজার পুলিশ কর্মকর্তা ও সদস্য আহত হয়েছেন। এই সংখ্যা আরও বাড়তে পারে।
পুলিশ সদর দপ্তর থেকে বলা হয়েছে, জুলাই আন্দোলনের সময় পুলিশ নিহত ও আহতের ঘটনায় কয়েকটি মামলা দায়ের করা হয়েছে। তবে মামলা তদন্তের অগ্রগতি তাৎক্ষণিকভাবে জানা যায়নি।
পুলিশের কয়েকজন কর্মকর্তা বলেন, দেশে ২ লাখ ১৪ হাজার পুলিশ কর্মকর্তা ও সদস্য রয়েছে। তাদের মধ্যে দলবাজ ডিবি হারুণ ওরফে জিন হারুনসহ প্রায় অর্ধশত পুলিশ কর্মকর্তার দলবাজি ও বেপরোয়া আচরণের কারণে পুলিশ বাহিনী ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সাধারণ পুলিশ সদস্যরা নিহত ও আহত হলেও দলবাজ হারুনসহ অনেকেই ধরাছোঁয়ার বাইরে রয়ে গেছে। দলবাজ ও ডিবি হারুনের বিরুদ্ধে ১৯৬টি মামলা ও দলবাজ সাবেক আইজিপি বেনজীর আহমেদের বিরুদ্ধে ৬৭টি মামলা দায়ের করা হয়েছে। দলবাজগুলো এখনও পলাতক। তাদের গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় আনলে নির্বিচারে গুলি, মানুষ হত্যা, ছাত্রদের ওপর নির্যাতন, ও হামলার ও নেপথ্য কাহিনী বেরিয়ে আসবে বলে অনেকেই মন্তব্য করেন।
এনায়েতপুর থানায় ১৫ পুলিশসহ সারাদেশে আগুন, পিটুনিতে ৪৪ পুলিশের মৃত্যু
মঙ্গলবার, ০৫ আগস্ট ২০২৫
২০২৪ সালে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় সিরাজগঞ্জের এনায়েতপুর থানায় উত্তেজিত জনতা হামলা চালিয়ে ১৫ পুলিশ সদস্য ও কর্মকর্তাকে পিটিয়ে, কুপিয়ে ও পুড়িয়ে হত্যা করা হয়েছে।
ওই সময় রাজধানীর যাত্রাবাড়ী ও উত্তরা, আশুলিয়া, শ্যামপুরসহ দেশের অন্যান্য থানা এলাকায় পুলিশ কর্মকর্তা ও সদস্যদের পিটিয়ে ও ধাওয়া করে মারপিট করা হয়েছে। এতে কমপক্ষে পুলিশ সদর দপ্তরের তথ্যমতে ৪৪ জন পুলিশের মৃত্যু হয়েছে। এসব ঘটনায় থানায় কয়েকটি মামলাও করা হয়েছে। তবে গত এক বছরেও এসব মামলার তদন্ত এখনও শেষ হয়নি। কেন পুলিশের ওপর ক্ষোভ তাও উদ্ঘাটন করা হয়নি।
অভিযোগ রয়েছে, আওয়ামী লীগের পক্ষ নিয়ে ছাত্র-জনতার ওপর নির্বিচারে গুলি, সাধারণ ও বিরোধী রাজনৈতিক নেতাকর্মীদের ওপর দমনপীড়ন ও নির্যাতনের কারণে পুলিশের ওপর ক্ষোভ থেকে মারপিট ও হত্যা করা হয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে। এনায়েতপুর থানার মামলার তদন্ত কর্মকর্তা স্থানীয় সাংবাদিককে জানিয়েছেন, সিরাজগঞ্জ শহীদ এম মনসুর আলী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন এবং বিস্ফোরক পরীক্ষার রিপোর্ট এখনও না আসায় তদন্ত চূড়ান্ত করা যাচ্ছে না।
২০২৪ সালের ৪ আগস্টের সেই ঘটনায় মামলা হয় ঘটনার ২১ দিন পর, ২৭ আগস্ট মামলাটি দায়ের করেন এনায়েতপুর থানার এসআই আব্দুল মালেক। মামলায় এনায়েতপুর থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকসহ চার নেতার নাম উল্লেখ করে আরও পাঁচ থেকে ছয় হাজার অজ্ঞাতপরিচয় ব্যক্তিকে আসামি করেন।
মামলার এজাহার অনুযায়ী, ঘটনার দিন দুপুর ১২টার দিকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতা এনায়েতপুর থানার সামনে অবস্থান নেয়। পরিস্থিতি উত্তপ্ত হলেও ওসি আব্দুর রাজ্জাক হ্যান্ডমাইকে বক্তব্য দিয়ে ছাত্র-জনতাকে শান্ত থাকতে বলেন এবং তাদের থানার এলাকা ত্যাগে আহ্বান জানান।ছাত্র-জনতা শান্তিপূর্ণভাবে সরে গেলেও কিছুক্ষণ পর আওয়ামী লীগ নেতা আহমদ মোস্তফা খান বাচ্চুর নেতৃত্বে দেশীয় অস্ত্রসহ পাঁচ-ছয় হাজার ব্যক্তি থানা ঘিরে ফেলে এবং হামলা চালায়।
আত্মরক্ষায় পুলিশ কাঁদুনে গ্যাস নিক্ষেপ করে। পরে আসামিরা পুলিশের কোয়ার্টার ও ওসির বাসভবনে আগুন ধরিয়ে দেয়।
আতঙ্কিত পুলিশ সদস্যরা যখন আশ্রয়ের চেষ্টা করছিলেন, তখন আসামিরা থানায় প্রবেশ করে সাত পুলিশ সদস্যকে পিটিয়ে ও কুপিয়ে হত্যা করে। এরপর থানা ভবনের অস্ত্রাগার ভেঙে সরকারি ও ব্যক্তিগত আগ্নেয়াস্ত্র এবং গুলি লুট করে। এসব অস্ত্র দিয়ে তারা থানার ভেতর ও বাইরে থাকা পুলিশ সদস্যদের লক্ষ্য করে এলোপাতাড়ি গুলি চালায়।
ওসি আব্দুর রাজ্জাকসহ অনেক পুলিশ সদস্য কাছাকাছি বাবু মিয়ার বাড়িতে আশ্রয় নেন। কিন্তু হামলাকারীরা সেখানেও পৌঁছে কয়েকজনকে পিটিয়ে ও কুপিয়ে হত্যা করে। নারী কনস্টেবল রেহেনা পারভীনকেও শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করা হয় বলে এজাহারে উল্লেখ রয়েছে। ঘটনার খবর পেয়ে সেনাবাহিনীর একটি দল ঘটনাস্থলে গিয়ে হতাহতদের উদ্ধার করে। নিহত পুলিশ সদস্যরা হলেন ওসি আব্দুর রাজ্জাক, এসআই রইস উদ্দিন খান, তহছেনুজ্জামান, প্রনবেশ কুমার বিশ্বাস, নাজমুল হোসাইন, আনিসুর রহমান মোল্লা, এএসআই ওবায়দুর রহমান, কনস্টেবল আব্দুস সালেক, হাফিজুর ইসলাম, রবিউল আলম শাহ, হুমায়ন কবির, আরিফুল ইসলাম, রিয়াজুল ইসলাম, শাহিন উদ্দিন ও হানিফ আলী।
মামলার বর্তমান তদন্ত কর্মকর্তা এসআই ফরিদ উদ্দিন জানান, দুই মাস ধরে তিনি মামলার তদন্ত করছেন। এর আগে দুইজন কর্মকর্তা মামলাটি তদন্ত করেন। ময়নাতদন্ত এবং সিআইডির রিপোর্ট ছাড়া তদন্ত প্রতিবেদন দেয়া সম্ভব হচ্ছে না বলে জানান তিনি।
এ ঘটনায় শুধু এই একটি নয়, জেলায় মোট নয়টি মামলা হয়। সিরাজগঞ্জ সদর থানায় চারটি, এনায়েতপুর থানায় তিনটি এবং উল্লাপাড়া থানায় একটি করে মামলা করা হয়। এসব মামলায় এজাহারভুক্ত আসামি ৬৭২ জন এবং অজ্ঞাতপরিচয় আসামি পাঁচ থেকে ছয় হাজার।
এছাড়া, গত এক বছরে রাজনৈতিক ঘটনার জেরে জেলার বিভিন্ন থানায় আরও ২০টির বেশি মামলা হয়। এসব মামলায় সাবেক মন্ত্রী আব্দুল লতিফ বিশ্বাস, সাবেক সংসদ সদস্য জান্নাত আরা হেনরী, তানভীর ইমাম, চয়ন ইসলাম, আব্দুল আজিজ, জেলা পরিষদের অপসারিত চেয়ারম্যান শামীম তালুকদার লাবু, উল্লাপাড়া উপজেলার সাবেক চেয়ারম্যান সেলিনা মির্জা মুক্তি ও সিরাজগঞ্জ বারের সাবেক পিপি আব্দুর রহমানসহ আওয়ামী লীগের অন্তত ১৬৩ জন নেতাকর্মী গ্রেপ্তার হয়েছেন।
এদিকে পুলিশ সদর দপ্তর থেকে জানিয়েছে, জুলাই আন্দোলনের সময় এনায়েতপুর থানাসহ সারাদেশে ৪৪ জন পুলিশ কর্মকর্তা ও সদস্য পেশাগত দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে নিহত হয়েছেন। আরও প্রায় আড়াই হাজার পুলিশ সদস্য আহত হয়েছেন। এই সব ঘটনার পর সংশ্লিষ্ট থানাগুলোতে পুলিশ অভিযোগ করে রাখছে। তবে মামলা তদন্তের অগ্রগতি সম্পর্কে জানা নেই।
পুলিশ সদর দপ্তরের তালিকা মতে, জুলাই-আগস্ট আন্দোলনের সময় উত্তরা পূর্ব থানার সামনে পুলিশ পরিদর্শক রাশেদুল ইসলাম মারা গেছেন। যাত্রাবাড়ী থানার সামনে এসআই সুজন চন্দ্র দে, উত্তরা পূর্ব থানার সামনে এসআই খগেশ চন্দ্র, যাত্রাবাড়ী থানার সামনে সঞ্জয় কুমার দাস, যাত্রাবাড়ী থানার সামনে এএসআই ফিরোজ হোসেন, যাত্রাবাড়ী মহাসড়কে নায়েক গিয়াস উদ্দিন, যাত্রাবাড়ীর থানার সামনে কনস্টেবল আব্দুল মজিদ, যাত্রাবাড়ী থানার সামনে কনস্টেবল রেজাউল, জাতীয় সংসদ ভবন এলাকায় কনস্টেবল মাহফুজুর রহমান, উত্তরা পূর্ব থানার সামনে কনস্টেবল শহিদুল আলম, উত্তরা পূর্ব থানার সামনে কনস্টেবল আবু হাসিনাত রনি, যাত্রাবাড়ী থানার সামনে কনস্টেবল মীর মোনতাজ আলী, খুলনা লবনচরা থানার গল্লামারী বাজারে কনস্টেবল সুমন কুমার ঘরামী, গাজীপুর বাসন থানার সামনে কনস্টেবল আব্দুল মালেক, আশুলিয়া থানার সামনে এএসআই সোহেল রানা, এএসআই রাজু আহমেদ, কুমিল্লা তিতাসে এসআই রেজাউল করিম, কনস্টেবল মাইন উদ্দিন, চাঁদপুরের কচুয়ায় এসআই মামুনুর রশিদ সরকার, নোয়াখালীর সোনাইমুড়ীতে এসআই বাছির উদ্দিন, সোনাইমুড়ীতে কনস্টেবল ইব্রাহিম, এসবির এএসআই রফিকুল ইসলাম, পিবিআইয়ের ইন্সপেক্টর মাসুদ পারভেজ ভূইয়া, ট্যুরিস্ট পুলিশের এএসআই মোক্তাদির, হাইওয়ে পুলিশের সদস্য এরশাদ আলী, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কসবা থানার এটিএসআই আলি হোসেন চৌধুরী, ডিএমপির কনস্টেবল সুজন, শ্যামপুরের কনস্টেবল খলিলুর রহমানসহ ৪৪ জনের মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করেছে পুলিশ সদর দপ্তর।
পেশাগত দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন থানা এলাকায় প্রায় আড়াই হাজার পুলিশ কর্মকর্তা ও সদস্য আহত হয়েছেন। এই সংখ্যা আরও বাড়তে পারে।
পুলিশ সদর দপ্তর থেকে বলা হয়েছে, জুলাই আন্দোলনের সময় পুলিশ নিহত ও আহতের ঘটনায় কয়েকটি মামলা দায়ের করা হয়েছে। তবে মামলা তদন্তের অগ্রগতি তাৎক্ষণিকভাবে জানা যায়নি।
পুলিশের কয়েকজন কর্মকর্তা বলেন, দেশে ২ লাখ ১৪ হাজার পুলিশ কর্মকর্তা ও সদস্য রয়েছে। তাদের মধ্যে দলবাজ ডিবি হারুণ ওরফে জিন হারুনসহ প্রায় অর্ধশত পুলিশ কর্মকর্তার দলবাজি ও বেপরোয়া আচরণের কারণে পুলিশ বাহিনী ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সাধারণ পুলিশ সদস্যরা নিহত ও আহত হলেও দলবাজ হারুনসহ অনেকেই ধরাছোঁয়ার বাইরে রয়ে গেছে। দলবাজ ও ডিবি হারুনের বিরুদ্ধে ১৯৬টি মামলা ও দলবাজ সাবেক আইজিপি বেনজীর আহমেদের বিরুদ্ধে ৬৭টি মামলা দায়ের করা হয়েছে। দলবাজগুলো এখনও পলাতক। তাদের গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় আনলে নির্বিচারে গুলি, মানুষ হত্যা, ছাত্রদের ওপর নির্যাতন, ও হামলার ও নেপথ্য কাহিনী বেরিয়ে আসবে বলে অনেকেই মন্তব্য করেন।