alt

জাতীয়

আবু সাঈদকে গুলি করার সেই ভিডিও দেখলো ট্রাইব্যুনাল

শিক্ষার্থী রিনা মুর্মু ও রংপুরে কর্মরত এনটিভির জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক মঈনুল আদালতে সাক্ষ্য দেন

সংবাদ অনলাইন রিপোর্ট : বুধবার, ০৬ আগস্ট ২০২৫

জুলাই গণঅভ্যুত্থানের সময় বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আবু সাঈদের নিহত হওয়ার ভিডিও সাক্ষ্য হিসেবে মানবতাবিরোধী অপরাধ ট্রাইব্যুনালে প্রদর্শন করা হয়েছে। বুধবার,(৬ আগস্ট ২০২৫) ট্রাইব্যুনাল-১ এ গণঅভ্যুত্থানে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল ও পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের বিরুদ্ধে সাক্ষ্যগ্রহণের সময় এ ভিডিও দেখানো হয়।

ট্রাইব্যুনালের অন্য দুই সদস্য হলেন, বিচারপতি মো. শফিউল আলম মাহমুদ ও বিচারক মো. মোহিতুল হক এনাম চৌধুরী। বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী রিনা মুর্মু এবং রংপুরে কর্মরত এনটিভির জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক এ কে এম মঈনুল হক এদিন আদালতে সাক্ষ্য দেন।

বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের মধ্যে গত বছরের ১৬ জুলাই বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ১ নম্বর গেইট থেকে সরাসরি সম্প্রচারকালে দেখা ঘটনার বিবরণ জবানবন্দীতে তুলে ধরেন মঈনুল হক। তিনি বলেন, ওইদিন দুপুরে তিনি এবং তার সহকর্মী ভিডিও সাংবাদিক আসাদুজ্জামান আরমান ১ নম্বর গেইটের সামনে পার্কের মোড় এলাকায় দায়িত্ব পালন করছিলেন। বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনকারীরা একটি মিছিল নিয়ে প্রেসক্লাব এলাকা থেকে ১ নম্বর গেইটের দিকে আসছিল।

‘মিছিলটি ১ নম্বর গেইটের সামনে এলে সেখানে আগে থেকে উপস্থিত পুলিশসহ ছাত্রলীগ, যুবলীগ ও কিছু সরকারিদলের সমর্থক বাধা দেয়। পরবর্তীতে বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের দেখতে পাই পুলিশের আশপাশে।’ মঈনুল বলেন, আন্দোলনকারীরা গেইট দিয়ে ভেতরে ঢোকার চেষ্টা করলে পুলিশ এবং তাদের সঙ্গে যারা ছিলেন, তারা বাধা দেন। একপর্যায়ে পুলিশ মিছিলকারীদের লাঠিপেটা শুরু করে। মিছিলকারীরা তখন জমায়েত ধরে রাখার চেষ্টা করেন।

‘এ সময় পুলিশ টিয়ারশেল ছোড়ে এবং রাবার বুলেট ও শটগানের গুলিবর্ষণ শুরু করে। তখন এনটিভিতে দুপুর ২টার খবর শুরু হয়ে গেছে। আমি এনটিভিতে গুলিসহ সেখানকার ভীতিকর অবস্থার ভিডিও প্রেরণ শুরু করি। ওই ভিডিও দেখে এনটিভি কর্তৃপক্ষ আমাকে সরাসরি সম্প্রচার করতে বলে। তখন আমি সহকর্মী ভিডিও জার্নালিস্ট আসাদুজ্জামান আরমানকে নিয়ে সরাসরি পাঠাতে থাকি।’

গুলিবর্ষণের বর্ণনায় মঈনুল হক বলেন, দুপুর ২টা ১৭ মিনিটের দিকে ১ নম্বর গেইটের সামনে রোড ডিভাইডারের একটি কাটা অংশ দিয়ে কালো প্যান্ট ও কালো টি-শার্ট পরা এক যুবক এসে দাঁড়িয়ে পড়েন। তিনি দুই হাত দুইদিকে প্রসারিত করে রাখেন।

‘এ সময় পুলিশ সেই যুবকের ওপর গুলি চালায়। তার পেট ও বুকে গুলি লাগে। গুলিবিদ্ধ হওয়ার পর ওই যুবক কয়েক পা পিছিয়ে গিয়ে বসে পড়েন। আবার উঠে কয়েক পা গিয়ে আবার লুটিয়ে পড়েন। এরপর কয়েকজন আন্দোলনকারী তাকে সেখানে থেকে সরিয়ে নিয়ে যান।’ যতক্ষণ দেখা যাচ্ছিল ততক্ষণ ভিডিও করছিলেন বলে জানান মঈনুল। এ সময় প্রসিকিউশনের আবেদনে ট্রাইব্যুনাল সেই ভিডিও প্রদর্শনের অনুমতি দেয়। প্রদর্শনের পর পর

ভিডিওটি ক্লিপ সংবলিত পেনড্রাইভ প্রদর্শনী হিসেবে জমা রাখা হয়।

মঈনুল হকের আগে সাক্ষ্য দেন বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী রিনা মুর্মু। জবানবন্দীতে তিনি বলেন, ‘ঘটনার দিন বিশ্ববিদ্যালয়ের ১ নম্বর গেইটে অবস্থানরত দুই পুলিশ সদস্য আমির হোসেন ও সুজন চন্দ্র সরাসরি আবু সাঈদকে গুলি করেন। আমি নিজ চোখে সেটা দেখেছি। আবু সাঈদকে হত্যার ঘটনায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ও তখনকার পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা দায় এড়াতে পারেন না। আমি তাদের বিচার চাই।’ ওই দিন রিনা মুর্মু নিজেও আহত হয়েছিলেন বলে জবানবন্দীতে জানান।

২০২৪ সালের ১৬ জুলাই রংপুরে পুলিশের গুলিতে রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের শিক্ষার্থী আবু সাঈদ নিহত হন। সেদিন দুই হাত প্রসারিত করে দাঁড়িয়ে থাকা আবু সাঈদকে পুলিশের গুলি করার ভিডিও সংবাদ মাধ্যমে প্রচার হলে ছাত্র-জনতা বিক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে। আন্দোলন ছড়িয়ে পড়ে সারাদেশে। পরদিন থেকে সারাদেশে ডাকা ‘কমপ্লিট শাটডাউন’ কর্মসূচি পালন করা হয়। এরপর বিক্ষোভে দমন-পীড়ন আর সহিংসতার মধ্যে ১৯ জুলাই কারফিউ দিয়েও পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারেনি শেখ হাসিনা সরকার।

গণ-আন্দোলনের মধ্যে ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগের টানা সাড়ে ১৫ বছরের শাসনের অবসান ঘটে। শেখ হাসিনা ক্ষমতা ছেড়ে ভারতে পালিয়ে যান। অন্তর্বর্তী সরকার জুলাই অভ্যুত্থানে দমন-পীড়নকে মানবতাবিরোধী অপরাধ হিসেবে বিবেচনা করে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে বিচারের উদ্যোগ নেয়। তখনই শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে এ মামলা দায়ের করা হয়। এ মামলায় রিনা মুর্মু চতুর্থ এবং এ কে এম মঈনুল হক রাষ্ট্রপক্ষের পঞ্চম সাক্ষী হিসেবে জবানবন্দী দেন।

জবানবন্দী দেয়ার পর রিনা মুর্মু এবং এ কে এম মঈনুল হককে জেরা করেন শেখ হাসিনার পক্ষে রাষ্ট্রনিযুক্ত আইনজীবী আমির হোসেন। প্রসিকিউশনের পক্ষে ছিলেন প্রসিকিউটর মিজানুল ইসলাম, গাজী এম এইচ তামিম, বিএম সুলতান মাহমুদসহ আরও কয়েকজন। গত ৩ আগস্ট এই মামলার প্রথম সাক্ষী হিসেবে জবানবন্দী দেন মাইক্রোবাসচালক খোকন চন্দ্র বর্মণ।

সেদিন সূচনা বক্তব্য উপস্থাপন ও সাক্ষ্যগ্রহণের মধ্য দিয়ে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ এ ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আনুষ্ঠানিক বিচার শুরু হয়। এই মামলায় শেখ হাসিনা ছাড়া অন্য দুই আসামি হলেন সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল ও পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন। তবে সম্পূর্ণ সত্য প্রকাশ করার শর্তে মামুন রাজসাক্ষী হয়েছেন। গত ১০ জুলাই মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেয় ট্রাইব্যুনাল।

ছবি

আরপিও সংস্কার চূড়ান্ত করতে সভায় বসেছে নির্বাচন কমিশন

ছবি

বেরোবির সাবেক উপাচার্য নাজমুল আহসান কলিমউল্লাহ গ্রেপ্তার

ছবি

উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে সচিবালয়ে প্রধান উপদেষ্টা

ছবি

বসুন্ধরায় গোপন বৈঠক: মেজর সাদিকের স্ত্রী সুমাইয়া জাফরিন ডিবি হেফাজতে

ছবি

আরপিও চূড়ান্তে ইসির বৈঠক বৃহস্পতিবার

ছবি

এসিল্যান্ড পদে পদায়ন নীতিমালা জারি

ছবি

৭ কলেজের বিশ্ববিদ্যালয়: অধ্যাদেশ জারির দাবিতে শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ

ছবি

ঝাঁকে ঝাঁকে ধরা পড়ছে রুপালি ইলিশ, খুশি জেলেরা

ছবি

যবিপ্রবিতে পুরনো সিন্ডিকেট সক্রিয় হওয়ার চেষ্টা!

ছবি

নির্বাচন কমিশনের গণমাধ্যম নীতিমালা সংশোধনের দাবি সাংবাদিকদের

ছবি

প্রথমবারের মতো সমুদ্রপথে দেশ থেকে কাঁঠাল রপ্তানি

ছবি

১০ ডিআইজিসহ ওএসডি ৭৬ কর্মকর্তা এবার দেশের বিভিন্ন জায়গায় সংযুক্ত

ছবি

বিমান বিধ্বস্ত: ১৫ দিন পর কিছুটা প্রাণের সঞ্চার মাইলস্টোনে

ছবি

সড়ক দুর্ঘটনা: ৪ জেলায় ১১ জন নিহত, নোয়াখালী ও সুনামগঞ্জেই ৯ জনের প্রাণহানি

ছবি

‘দলকে না জানিয়ে’ কক্সবাজারে, জ্যেষ্ঠ ৫ নেতাকে শোকজ এনসিপির

ছবি

ভোটের তারিখে ‘বিস্মিত’ জামায়াত, বলছে জুলাই ঘোষণাপত্র ‘অপূর্ণাঙ্গ’

ছবি

‘কিন্তু’ নিয়ে ঘোষণাপত্রকে স্বাগত এনসিপির, ভোট নিয়ে শর্ত

ছবি

ভোটের সময় ও ঘোষণাপত্রে খুশি বিএনপি, জানিয়েছে স্বাগত

ছবি

রাজধানীতে তীব্র যানজট, ভোগান্তি

ছবি

ফেব্রুয়ারিতে ভোট: নির্বাচন কমিশনকে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ের চিঠি

ছবি

ত্রয়োদশ জাতীয় নির্বাচনের আগে লটারিতে বদলি হবেন সব এসপি ও ওসি

আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে আবু সাঈদ হত্যা মামলার বিচার শুরুর আদেশ

ছবি

সংস্কারে সময় কম, ফেব্রুয়ারির মধ্যে যতটা সম্ভব করব: অর্থ উপদেষ্টা

ছবি

বিগত তিন নির্বাচনের নির্বাহী হাকিমদের তথ্য নিচ্ছে ইসি

ছবি

ডেঙ্গু: শিশু- কিশোররা বেশি আক্রান্ত হচ্ছে

ছবি

অনুষ্ঠান থেকে জুলাইযোদ্ধাকে মারধর করে ‘তাড়িয়ে’ দেয়ার অভিযোগ

ছবি

বেগমগঞ্জের জলাবদ্ধতা: বহু অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ, পানিবন্দী এখনও হাজারো পরিবার

ছবি

শার্শা-বেনাপোল সীমান্তে গত ১৫ বছরে ৭৯টি ধর্ষণ মামলা, ঘটনা ধামাচাপা দিতে ৪ হত্যা

ছবি

চাঁদপুরে আধুনিক ইলিশ অবতরণ কেন্দ্র স্থাপনের কার্যক্রম শুরু

ছবি

বিশেষ ট্রেন: রাজশাহীতে ‘জুলাই যোদ্ধাদের’ রেলপথ অবরোধ

ছবি

রেললাইনে শিকল বেঁধে ‘নাশকতার’ চেষ্টা

ছবি

জুলাই আন্দোলন: পুলিশের মৃত্যু, এক বছরেও তদন্তে অগ্রগতি নেই

ছবি

টিএসসিতে শিবিরের প্রদর্শনী: ক্ষোভের মুখে সরানো হলো দণ্ডিত যুদ্ধাপরাধীদের ছবি

ছবি

বঙ্গোপসাগরের সম্পদ, রেমিট্যান্স, বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থানে সরকারের উদ্যোগ

ছবি

জুলাই ঘোষণাপত্র: রাজনৈতিক অঙ্গনে মিশ্র প্রতিক্রিয়া

ছবি

সংস্কার, বিচার ও নির্বাচনে অগ্রগতি তুলে ধরে জাতির উদ্দেশে ভাষণ : প্রধান উপদেষ্টা

tab

জাতীয়

আবু সাঈদকে গুলি করার সেই ভিডিও দেখলো ট্রাইব্যুনাল

শিক্ষার্থী রিনা মুর্মু ও রংপুরে কর্মরত এনটিভির জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক মঈনুল আদালতে সাক্ষ্য দেন

সংবাদ অনলাইন রিপোর্ট

বুধবার, ০৬ আগস্ট ২০২৫

জুলাই গণঅভ্যুত্থানের সময় বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আবু সাঈদের নিহত হওয়ার ভিডিও সাক্ষ্য হিসেবে মানবতাবিরোধী অপরাধ ট্রাইব্যুনালে প্রদর্শন করা হয়েছে। বুধবার,(৬ আগস্ট ২০২৫) ট্রাইব্যুনাল-১ এ গণঅভ্যুত্থানে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল ও পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের বিরুদ্ধে সাক্ষ্যগ্রহণের সময় এ ভিডিও দেখানো হয়।

ট্রাইব্যুনালের অন্য দুই সদস্য হলেন, বিচারপতি মো. শফিউল আলম মাহমুদ ও বিচারক মো. মোহিতুল হক এনাম চৌধুরী। বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী রিনা মুর্মু এবং রংপুরে কর্মরত এনটিভির জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক এ কে এম মঈনুল হক এদিন আদালতে সাক্ষ্য দেন।

বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের মধ্যে গত বছরের ১৬ জুলাই বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ১ নম্বর গেইট থেকে সরাসরি সম্প্রচারকালে দেখা ঘটনার বিবরণ জবানবন্দীতে তুলে ধরেন মঈনুল হক। তিনি বলেন, ওইদিন দুপুরে তিনি এবং তার সহকর্মী ভিডিও সাংবাদিক আসাদুজ্জামান আরমান ১ নম্বর গেইটের সামনে পার্কের মোড় এলাকায় দায়িত্ব পালন করছিলেন। বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনকারীরা একটি মিছিল নিয়ে প্রেসক্লাব এলাকা থেকে ১ নম্বর গেইটের দিকে আসছিল।

‘মিছিলটি ১ নম্বর গেইটের সামনে এলে সেখানে আগে থেকে উপস্থিত পুলিশসহ ছাত্রলীগ, যুবলীগ ও কিছু সরকারিদলের সমর্থক বাধা দেয়। পরবর্তীতে বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের দেখতে পাই পুলিশের আশপাশে।’ মঈনুল বলেন, আন্দোলনকারীরা গেইট দিয়ে ভেতরে ঢোকার চেষ্টা করলে পুলিশ এবং তাদের সঙ্গে যারা ছিলেন, তারা বাধা দেন। একপর্যায়ে পুলিশ মিছিলকারীদের লাঠিপেটা শুরু করে। মিছিলকারীরা তখন জমায়েত ধরে রাখার চেষ্টা করেন।

‘এ সময় পুলিশ টিয়ারশেল ছোড়ে এবং রাবার বুলেট ও শটগানের গুলিবর্ষণ শুরু করে। তখন এনটিভিতে দুপুর ২টার খবর শুরু হয়ে গেছে। আমি এনটিভিতে গুলিসহ সেখানকার ভীতিকর অবস্থার ভিডিও প্রেরণ শুরু করি। ওই ভিডিও দেখে এনটিভি কর্তৃপক্ষ আমাকে সরাসরি সম্প্রচার করতে বলে। তখন আমি সহকর্মী ভিডিও জার্নালিস্ট আসাদুজ্জামান আরমানকে নিয়ে সরাসরি পাঠাতে থাকি।’

গুলিবর্ষণের বর্ণনায় মঈনুল হক বলেন, দুপুর ২টা ১৭ মিনিটের দিকে ১ নম্বর গেইটের সামনে রোড ডিভাইডারের একটি কাটা অংশ দিয়ে কালো প্যান্ট ও কালো টি-শার্ট পরা এক যুবক এসে দাঁড়িয়ে পড়েন। তিনি দুই হাত দুইদিকে প্রসারিত করে রাখেন।

‘এ সময় পুলিশ সেই যুবকের ওপর গুলি চালায়। তার পেট ও বুকে গুলি লাগে। গুলিবিদ্ধ হওয়ার পর ওই যুবক কয়েক পা পিছিয়ে গিয়ে বসে পড়েন। আবার উঠে কয়েক পা গিয়ে আবার লুটিয়ে পড়েন। এরপর কয়েকজন আন্দোলনকারী তাকে সেখানে থেকে সরিয়ে নিয়ে যান।’ যতক্ষণ দেখা যাচ্ছিল ততক্ষণ ভিডিও করছিলেন বলে জানান মঈনুল। এ সময় প্রসিকিউশনের আবেদনে ট্রাইব্যুনাল সেই ভিডিও প্রদর্শনের অনুমতি দেয়। প্রদর্শনের পর পর

ভিডিওটি ক্লিপ সংবলিত পেনড্রাইভ প্রদর্শনী হিসেবে জমা রাখা হয়।

মঈনুল হকের আগে সাক্ষ্য দেন বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী রিনা মুর্মু। জবানবন্দীতে তিনি বলেন, ‘ঘটনার দিন বিশ্ববিদ্যালয়ের ১ নম্বর গেইটে অবস্থানরত দুই পুলিশ সদস্য আমির হোসেন ও সুজন চন্দ্র সরাসরি আবু সাঈদকে গুলি করেন। আমি নিজ চোখে সেটা দেখেছি। আবু সাঈদকে হত্যার ঘটনায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ও তখনকার পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা দায় এড়াতে পারেন না। আমি তাদের বিচার চাই।’ ওই দিন রিনা মুর্মু নিজেও আহত হয়েছিলেন বলে জবানবন্দীতে জানান।

২০২৪ সালের ১৬ জুলাই রংপুরে পুলিশের গুলিতে রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের শিক্ষার্থী আবু সাঈদ নিহত হন। সেদিন দুই হাত প্রসারিত করে দাঁড়িয়ে থাকা আবু সাঈদকে পুলিশের গুলি করার ভিডিও সংবাদ মাধ্যমে প্রচার হলে ছাত্র-জনতা বিক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে। আন্দোলন ছড়িয়ে পড়ে সারাদেশে। পরদিন থেকে সারাদেশে ডাকা ‘কমপ্লিট শাটডাউন’ কর্মসূচি পালন করা হয়। এরপর বিক্ষোভে দমন-পীড়ন আর সহিংসতার মধ্যে ১৯ জুলাই কারফিউ দিয়েও পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারেনি শেখ হাসিনা সরকার।

গণ-আন্দোলনের মধ্যে ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগের টানা সাড়ে ১৫ বছরের শাসনের অবসান ঘটে। শেখ হাসিনা ক্ষমতা ছেড়ে ভারতে পালিয়ে যান। অন্তর্বর্তী সরকার জুলাই অভ্যুত্থানে দমন-পীড়নকে মানবতাবিরোধী অপরাধ হিসেবে বিবেচনা করে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে বিচারের উদ্যোগ নেয়। তখনই শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে এ মামলা দায়ের করা হয়। এ মামলায় রিনা মুর্মু চতুর্থ এবং এ কে এম মঈনুল হক রাষ্ট্রপক্ষের পঞ্চম সাক্ষী হিসেবে জবানবন্দী দেন।

জবানবন্দী দেয়ার পর রিনা মুর্মু এবং এ কে এম মঈনুল হককে জেরা করেন শেখ হাসিনার পক্ষে রাষ্ট্রনিযুক্ত আইনজীবী আমির হোসেন। প্রসিকিউশনের পক্ষে ছিলেন প্রসিকিউটর মিজানুল ইসলাম, গাজী এম এইচ তামিম, বিএম সুলতান মাহমুদসহ আরও কয়েকজন। গত ৩ আগস্ট এই মামলার প্রথম সাক্ষী হিসেবে জবানবন্দী দেন মাইক্রোবাসচালক খোকন চন্দ্র বর্মণ।

সেদিন সূচনা বক্তব্য উপস্থাপন ও সাক্ষ্যগ্রহণের মধ্য দিয়ে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ এ ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আনুষ্ঠানিক বিচার শুরু হয়। এই মামলায় শেখ হাসিনা ছাড়া অন্য দুই আসামি হলেন সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল ও পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন। তবে সম্পূর্ণ সত্য প্রকাশ করার শর্তে মামুন রাজসাক্ষী হয়েছেন। গত ১০ জুলাই মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেয় ট্রাইব্যুনাল।

back to top