alt

জাতীয়

ভোটের তারিখে ‘বিস্মিত’ জামায়াত, বলছে জুলাই ঘোষণাপত্র ‘অপূর্ণাঙ্গ’

সংবাদ অনলাইন রিপোর্ট : বুধবার, ০৬ আগস্ট ২০২৫

জাতীয় নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করার আগে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সংলাপ করার দীর্ঘদিনের যে ঐতিহ্য, অন্তর্বর্তী সরকারও তা অনুসরণ করবে বলে আশা করেছিল জামায়াতে ইসলামী। প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস ‘রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা না করেই’ আগামী ফেব্রুয়ারিতে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন আয়োজনের ঘোষণা দেয়ায় ‘বিস্মিত ও হতবাক’ হয়েছে দলটি।

বুধবার,(৬ আগস্ট ২০২৫) দুপুরে ঢাকার মগবাজারে এক সংবাদ সম্মেলনে জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির সৈয়দ আব্দুল্লাহ মো. তাহের দলের পক্ষে এই প্রতিক্রিয়া তুলে ধরেন। তবে তিনি বলেন, বিস্মিত হলেও ‘জাতীয় স্বার্থে’ তারা প্রধান উপদেষ্টার ঘোষণাকে ‘ইতিবাচক’ হিসেবে নিতে চান।

জামায়াত অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ঘোষিত নির্বাচনের টাইম লাইন (ডিসেম্বর-জুন) শর্ত সাপেক্ষে সমর্থন দিয়ে আসছে উল্লেখ করে দলটির নায়েবে আমির বলেন, ‘আমাদের প্রত্যাশা ছিল, প্রধান উপদেষ্টা রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা করবেন। তা না করায় জাতি হতবাক ও বিস্মিত হয়েছে। নির্বাচনের তারিখ ঘোষণার পূর্বে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সংলাপ করার দীর্ঘদিনের যে ঐতিহ্য, তা উপেক্ষা করে জুলাই ঘোষণার দিনেই নির্বাচনের সময়সীমা ঘোষণা করা হয়েছে। তথাপি জাতীয় স্বার্থে মাননীয় প্রধান উপদেষ্টার এই ঘোষণাকে আমরা ইতিবাচক হিসেবে দেখছি।’

গত জুন মাসে জাতির উদ্দেশে দেয়া ভাষণে ২০২৬ সালের এপ্রিলের প্রথমার্ধে নির্বাচন আয়োজন করার কথা বলেছিলেন প্রধান উপদেষ্টা। তবে ১৩ জুন লন্ডনে তারেক রহমানের সঙ্গে তার বৈঠকের পর এক ‘যৌথ ঘোষণায়’ বলা হয়, সব প্রস্তুতি শেষ হলে ফেব্রুয়ারিতে রোজার আগেই নির্বাচন হতে পারে। সেই যৌথ ঘোষণা নিয়ে তখন ক্ষোভ প্রকাশ করে জামায়াত বলেছিল, একটি দলের সঙ্গে বৈঠক করে সরকারপ্রধান এভাবে যৌথ ঘোষণা দিতে পারেন না।

বুধবারের সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে আবদুল্লাহ মো. তাহের বলেন, ‘আমাদের আমির আগেই বলেছেন, নির্বাচন ফেব্রুয়ারিতে রমজানের আগে হতে হবে। প্রধান উপদেষ্টা সেটা একইভাবে ঘোষণা দিয়েছেন, এটা ইতিবাচক।’

*জুলাই ঘোষণাপত্র অপূর্ণাঙ্গ*

জুলাই গণঅভ্যুত্থান দিবস উপলক্ষে গতকাল মঙ্গলবার বিকেলে জাতীয় সংসদের দক্ষিণ প্লাজায় প্রধান রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতিনিধিদের পাশে নিয়ে ‘জুলাই ঘোষণাপত্র’ পাঠ (উপস্থাপন) করেন প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস।

এ বিষয়ে জামায়াতের অবস্থান তুলে ধরে সৈয়দ আব্দুল্লাহ মো. তাহের বলেন, ‘মাননীয় প্রধান উপদেষ্টার এই ঘোষণাপত্র একটি অপূর্ণাঙ্গ বিবৃতি। এতে গণমানুষের প্রত্যাশার প্রতিফলন ঘটেনি। ঘোষণাপত্রে দীর্ঘ লড়াই-সংগ্রামের কথা বলা হলেও ১৯৪৭ এর আজাদীকে উপেক্ষা করা হয়েছে। এতে পিলখানা হত্যাকাণ্ড, শাপলা হত্যাকাণ্ড, ২৮ অক্টোবরের (লগি-বৈঠা আন্দোলন) হত্যাকাণ্ডের উল্লেখ নেই। জুলাই গণঅভ্যুত্থানে আলেম-ওলামা, মাদ্রাসা শিক্ষক ও ছাত্র, প্রবাসী ও অনলাইন অ্যাক্টিভিস্টদের ভূমিকার উল্লেখ নেই, যা ইতিহাসের প্রতি অবিচার ও অবহেলা ছাড়া আর কিছুই নয়। জুলাই অভ্যুত্থানের টার্নিং পয়েন্ট ছিল ৯ দফা, যা এক দফায় রূপান্তরিত হয়েছিল। সে বিষয়টিও ঘোষণাপত্রে এড়িয়ে যাওয়া হয়েছে।’

সংস্কারের বিষয়গুলো জুলাই ঘোষণাপত্রে না থাকার কথা তুলে ধরে জামায়াতের নায়েবে আমির বলেন, ‘জুলাই গণঅভ্যুত্থানের প্রধান আকাক্সক্ষা ছিল রাষ্ট্র সংস্কার। এজন্য ছয়টি কমিশন গঠন এবং জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে দু’পর্বে দুই মাসেরও অধিক কাল যে কার্যক্রম পরিচালিত হয়েছে এবং ১৯টি বিষয়ে ঐকমত্যের মাধ্যমে জুলাই জাতীয় সনদ প্রণয়নের সিদ্ধান্ত হয়েছে। অথচ প্রধান উপদেষ্টা কর্তৃক পঠিত জুলাই ঘোষণাপত্রে তার উল্লেখ নেই। ঘোষণায় কখন, কীভাবে তা কার্যকর করা হবে তা উল্লেখ না করে ঘোষণাকে গুরুত্বহীন করা হয়েছে। পরবর্তী সরকারের হাতে বাস্তবায়নের দায়িত্ব দেয়ায় হাজার হাজার মানুষের আত্মত্যাগ, রক্তের বিনিময়ে অর্জিত জুলাই চেতনা ও আশা-আকাঙ্ক্ষা ভূলুণ্ঠিত হয়েছে।’

*নির্বাচন জুলাই সদনের ভিত্তিতে*

আবদুল্লাহ মো. তাহের বলেন, ‘আমরা লক্ষ্য করছি নির্বাচনের উপযুক্ত যে পরিবেশ থাকার কথা ছিল, তা সরকার এখনও নিশ্চিত করতে পারেনি। এজন্য প্রধান উপদেষ্টা ঘোষিত টাইমলাইন অনুযায়ী অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন করতে হলে জুলাই জাতীয় সনদের ভিত্তিতে নির্বাচনের ব্যবস্থা করতে হবে। এ লক্ষ্যে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন যে জুলাই জাতীয় সনদ প্রণয়ন করতে যাচ্ছে, বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারকে তার আইনি ভিত্তি দিতে হবে।’

বাংলাদেশের মানুষ জুলাই ঘোষণাপত্রের জন্য যে প্রত্যাশা নিয়ে অপেক্ষা করছিল, তা ‘পূরণ না হওয়ায়’ জনগণের মধ্যে দেশের ভবিষ্যৎ নিয়ে ‘উদ্বেগ ও উৎকণ্ঠা’ তৈরি হয়েছে বলেও দাবি করেন জামায়াতের এই নেতা।

তিনি বলেন, ‘শহীদ ও আহতদের পরিবারসহ জুলাই যোদ্ধাদের মাঝে নতুনভাবে উৎকণ্ঠা পরিলক্ষিত হচ্ছে। ঐকমত্য কমিশনের মাধ্যমে জুলাই জাতীয় সনদ প্রণয়ন ও বাস্তবায়নের রূপরেখা কী হবে তা জাতির কাছে অস্পষ্ট। আমরা সরকারের প্রতি আহ্বান জানাই, অনতিবিলম্বে জুলাই ঘোষণাপত্রে উপরে জনআকাক্সক্ষার অপরিহার্য বিষয়গুলো অন্তর্ভুক্ত করা হোক। সেই সঙ্গে আরও দাবি জানাই, বাংলাদেশের অতীতের দৃষ্টান্ত অনুসরণ করে অবিলম্বে জুলাই জাতীয় সনদের প্রণয়নের কাজ সুসম্পন্ন করে বর্তমান সরকারকেই তা বাস্তবায়ন করতে হবে এবং এই সনদের ভিত্তিতে অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের ব্যবস্থা করতে হবে।’

*জুলাই সনদের আইনি ভিত্তি*

আবদুল্লাহ মো. তাহের বলেন, ‘আমাদের আকাক্সক্ষা, আসন্ন জাতীয় নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পূর্বে জুলাই জাতীয় সনদ প্রণয়ন দ্রুত সম্পন্ন করে অধ্যাদেশ, এলএফও বা গণভোট এর মাধ্যমে আইনি ভিত্তি প্রদান করা না হলে অন্তর্বর্তী সরকারের সংস্কার কার্যক্রম বিফলে যাবে।’ অতীতেও বিভিন্ন অভ্যুত্থান ও আন্দোলন পরবর্তী সময়ে সম্মিলিত সিদ্ধান্তের আইনি ভিত্তি দেয়ার কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘অতীতে এত নজির থাকার পরও এখন জুলাই জাতীয় ঘোষণাপত্রের আইনি ভিত্তি দিতে বাধা কোথায়?’

নির্বাচনের জন্য সারাদেশে জামায়াতে ইসলামীর প্রস্তুতি চলছে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের লক্ষ্যে রাজনৈতিক দলগুলোর জন্য লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরি করতে হবে। এর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সব বাহিনী ও সংস্থার কার্যকর ভূমিকা নিশ্চিত করতে হবে, সরকার ও প্রশাসনের মধ্যে স্বৈরাচারের দোসরদের মুক্ত করতে হবে এবং নির্বাচন কমিশনসহ প্রশাসনের সব স্তরে নিরপেক্ষতা নিশ্চিত করতে হবে।’

সেই সঙ্গে আনুপাতিক প্রতিনিধিত্ব (পিআর) পদ্ধতিতে নির্বাচন আয়োজনের দাবি আবারও তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘আমরা মনে করি পিআর পদ্ধতি সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য মাইলফলক। ৫৪ বছর আগের ট্র্যাডিশনাল নির্বাচন দেশের জন্য উপযোগী নয়। রাতে ভোটকেন্দ্র দখল-এগুলো আগের ঐতিহ্য।’

সংবাদ সম্মেলনে জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার, সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা এটিএম মাসুম, এএইচএম হামিদুর রহমান আযাদ, মাওলানা আবদুল হালিমসহ নির্বাহী পরিষদের নেতারা উপস্থিত ছিলেন।

ছবি

আরপিও সংস্কার চূড়ান্ত করতে সভায় বসেছে নির্বাচন কমিশন

ছবি

বেরোবির সাবেক উপাচার্য নাজমুল আহসান কলিমউল্লাহ গ্রেপ্তার

ছবি

উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে সচিবালয়ে প্রধান উপদেষ্টা

ছবি

বসুন্ধরায় গোপন বৈঠক: মেজর সাদিকের স্ত্রী সুমাইয়া জাফরিন ডিবি হেফাজতে

ছবি

আরপিও চূড়ান্তে ইসির বৈঠক বৃহস্পতিবার

ছবি

এসিল্যান্ড পদে পদায়ন নীতিমালা জারি

ছবি

৭ কলেজের বিশ্ববিদ্যালয়: অধ্যাদেশ জারির দাবিতে শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ

ছবি

ঝাঁকে ঝাঁকে ধরা পড়ছে রুপালি ইলিশ, খুশি জেলেরা

ছবি

যবিপ্রবিতে পুরনো সিন্ডিকেট সক্রিয় হওয়ার চেষ্টা!

ছবি

নির্বাচন কমিশনের গণমাধ্যম নীতিমালা সংশোধনের দাবি সাংবাদিকদের

ছবি

প্রথমবারের মতো সমুদ্রপথে দেশ থেকে কাঁঠাল রপ্তানি

ছবি

১০ ডিআইজিসহ ওএসডি ৭৬ কর্মকর্তা এবার দেশের বিভিন্ন জায়গায় সংযুক্ত

ছবি

বিমান বিধ্বস্ত: ১৫ দিন পর কিছুটা প্রাণের সঞ্চার মাইলস্টোনে

ছবি

সড়ক দুর্ঘটনা: ৪ জেলায় ১১ জন নিহত, নোয়াখালী ও সুনামগঞ্জেই ৯ জনের প্রাণহানি

ছবি

‘দলকে না জানিয়ে’ কক্সবাজারে, জ্যেষ্ঠ ৫ নেতাকে শোকজ এনসিপির

ছবি

‘কিন্তু’ নিয়ে ঘোষণাপত্রকে স্বাগত এনসিপির, ভোট নিয়ে শর্ত

ছবি

ভোটের সময় ও ঘোষণাপত্রে খুশি বিএনপি, জানিয়েছে স্বাগত

ছবি

আবু সাঈদকে গুলি করার সেই ভিডিও দেখলো ট্রাইব্যুনাল

ছবি

রাজধানীতে তীব্র যানজট, ভোগান্তি

ছবি

ফেব্রুয়ারিতে ভোট: নির্বাচন কমিশনকে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ের চিঠি

ছবি

ত্রয়োদশ জাতীয় নির্বাচনের আগে লটারিতে বদলি হবেন সব এসপি ও ওসি

আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে আবু সাঈদ হত্যা মামলার বিচার শুরুর আদেশ

ছবি

সংস্কারে সময় কম, ফেব্রুয়ারির মধ্যে যতটা সম্ভব করব: অর্থ উপদেষ্টা

ছবি

বিগত তিন নির্বাচনের নির্বাহী হাকিমদের তথ্য নিচ্ছে ইসি

ছবি

ডেঙ্গু: শিশু- কিশোররা বেশি আক্রান্ত হচ্ছে

ছবি

অনুষ্ঠান থেকে জুলাইযোদ্ধাকে মারধর করে ‘তাড়িয়ে’ দেয়ার অভিযোগ

ছবি

বেগমগঞ্জের জলাবদ্ধতা: বহু অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ, পানিবন্দী এখনও হাজারো পরিবার

ছবি

শার্শা-বেনাপোল সীমান্তে গত ১৫ বছরে ৭৯টি ধর্ষণ মামলা, ঘটনা ধামাচাপা দিতে ৪ হত্যা

ছবি

চাঁদপুরে আধুনিক ইলিশ অবতরণ কেন্দ্র স্থাপনের কার্যক্রম শুরু

ছবি

বিশেষ ট্রেন: রাজশাহীতে ‘জুলাই যোদ্ধাদের’ রেলপথ অবরোধ

ছবি

রেললাইনে শিকল বেঁধে ‘নাশকতার’ চেষ্টা

ছবি

জুলাই আন্দোলন: পুলিশের মৃত্যু, এক বছরেও তদন্তে অগ্রগতি নেই

ছবি

টিএসসিতে শিবিরের প্রদর্শনী: ক্ষোভের মুখে সরানো হলো দণ্ডিত যুদ্ধাপরাধীদের ছবি

ছবি

বঙ্গোপসাগরের সম্পদ, রেমিট্যান্স, বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থানে সরকারের উদ্যোগ

ছবি

জুলাই ঘোষণাপত্র: রাজনৈতিক অঙ্গনে মিশ্র প্রতিক্রিয়া

ছবি

সংস্কার, বিচার ও নির্বাচনে অগ্রগতি তুলে ধরে জাতির উদ্দেশে ভাষণ : প্রধান উপদেষ্টা

tab

জাতীয়

ভোটের তারিখে ‘বিস্মিত’ জামায়াত, বলছে জুলাই ঘোষণাপত্র ‘অপূর্ণাঙ্গ’

সংবাদ অনলাইন রিপোর্ট

বুধবার, ০৬ আগস্ট ২০২৫

জাতীয় নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করার আগে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সংলাপ করার দীর্ঘদিনের যে ঐতিহ্য, অন্তর্বর্তী সরকারও তা অনুসরণ করবে বলে আশা করেছিল জামায়াতে ইসলামী। প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস ‘রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা না করেই’ আগামী ফেব্রুয়ারিতে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন আয়োজনের ঘোষণা দেয়ায় ‘বিস্মিত ও হতবাক’ হয়েছে দলটি।

বুধবার,(৬ আগস্ট ২০২৫) দুপুরে ঢাকার মগবাজারে এক সংবাদ সম্মেলনে জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির সৈয়দ আব্দুল্লাহ মো. তাহের দলের পক্ষে এই প্রতিক্রিয়া তুলে ধরেন। তবে তিনি বলেন, বিস্মিত হলেও ‘জাতীয় স্বার্থে’ তারা প্রধান উপদেষ্টার ঘোষণাকে ‘ইতিবাচক’ হিসেবে নিতে চান।

জামায়াত অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ঘোষিত নির্বাচনের টাইম লাইন (ডিসেম্বর-জুন) শর্ত সাপেক্ষে সমর্থন দিয়ে আসছে উল্লেখ করে দলটির নায়েবে আমির বলেন, ‘আমাদের প্রত্যাশা ছিল, প্রধান উপদেষ্টা রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা করবেন। তা না করায় জাতি হতবাক ও বিস্মিত হয়েছে। নির্বাচনের তারিখ ঘোষণার পূর্বে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সংলাপ করার দীর্ঘদিনের যে ঐতিহ্য, তা উপেক্ষা করে জুলাই ঘোষণার দিনেই নির্বাচনের সময়সীমা ঘোষণা করা হয়েছে। তথাপি জাতীয় স্বার্থে মাননীয় প্রধান উপদেষ্টার এই ঘোষণাকে আমরা ইতিবাচক হিসেবে দেখছি।’

গত জুন মাসে জাতির উদ্দেশে দেয়া ভাষণে ২০২৬ সালের এপ্রিলের প্রথমার্ধে নির্বাচন আয়োজন করার কথা বলেছিলেন প্রধান উপদেষ্টা। তবে ১৩ জুন লন্ডনে তারেক রহমানের সঙ্গে তার বৈঠকের পর এক ‘যৌথ ঘোষণায়’ বলা হয়, সব প্রস্তুতি শেষ হলে ফেব্রুয়ারিতে রোজার আগেই নির্বাচন হতে পারে। সেই যৌথ ঘোষণা নিয়ে তখন ক্ষোভ প্রকাশ করে জামায়াত বলেছিল, একটি দলের সঙ্গে বৈঠক করে সরকারপ্রধান এভাবে যৌথ ঘোষণা দিতে পারেন না।

বুধবারের সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে আবদুল্লাহ মো. তাহের বলেন, ‘আমাদের আমির আগেই বলেছেন, নির্বাচন ফেব্রুয়ারিতে রমজানের আগে হতে হবে। প্রধান উপদেষ্টা সেটা একইভাবে ঘোষণা দিয়েছেন, এটা ইতিবাচক।’

*জুলাই ঘোষণাপত্র অপূর্ণাঙ্গ*

জুলাই গণঅভ্যুত্থান দিবস উপলক্ষে গতকাল মঙ্গলবার বিকেলে জাতীয় সংসদের দক্ষিণ প্লাজায় প্রধান রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতিনিধিদের পাশে নিয়ে ‘জুলাই ঘোষণাপত্র’ পাঠ (উপস্থাপন) করেন প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস।

এ বিষয়ে জামায়াতের অবস্থান তুলে ধরে সৈয়দ আব্দুল্লাহ মো. তাহের বলেন, ‘মাননীয় প্রধান উপদেষ্টার এই ঘোষণাপত্র একটি অপূর্ণাঙ্গ বিবৃতি। এতে গণমানুষের প্রত্যাশার প্রতিফলন ঘটেনি। ঘোষণাপত্রে দীর্ঘ লড়াই-সংগ্রামের কথা বলা হলেও ১৯৪৭ এর আজাদীকে উপেক্ষা করা হয়েছে। এতে পিলখানা হত্যাকাণ্ড, শাপলা হত্যাকাণ্ড, ২৮ অক্টোবরের (লগি-বৈঠা আন্দোলন) হত্যাকাণ্ডের উল্লেখ নেই। জুলাই গণঅভ্যুত্থানে আলেম-ওলামা, মাদ্রাসা শিক্ষক ও ছাত্র, প্রবাসী ও অনলাইন অ্যাক্টিভিস্টদের ভূমিকার উল্লেখ নেই, যা ইতিহাসের প্রতি অবিচার ও অবহেলা ছাড়া আর কিছুই নয়। জুলাই অভ্যুত্থানের টার্নিং পয়েন্ট ছিল ৯ দফা, যা এক দফায় রূপান্তরিত হয়েছিল। সে বিষয়টিও ঘোষণাপত্রে এড়িয়ে যাওয়া হয়েছে।’

সংস্কারের বিষয়গুলো জুলাই ঘোষণাপত্রে না থাকার কথা তুলে ধরে জামায়াতের নায়েবে আমির বলেন, ‘জুলাই গণঅভ্যুত্থানের প্রধান আকাক্সক্ষা ছিল রাষ্ট্র সংস্কার। এজন্য ছয়টি কমিশন গঠন এবং জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে দু’পর্বে দুই মাসেরও অধিক কাল যে কার্যক্রম পরিচালিত হয়েছে এবং ১৯টি বিষয়ে ঐকমত্যের মাধ্যমে জুলাই জাতীয় সনদ প্রণয়নের সিদ্ধান্ত হয়েছে। অথচ প্রধান উপদেষ্টা কর্তৃক পঠিত জুলাই ঘোষণাপত্রে তার উল্লেখ নেই। ঘোষণায় কখন, কীভাবে তা কার্যকর করা হবে তা উল্লেখ না করে ঘোষণাকে গুরুত্বহীন করা হয়েছে। পরবর্তী সরকারের হাতে বাস্তবায়নের দায়িত্ব দেয়ায় হাজার হাজার মানুষের আত্মত্যাগ, রক্তের বিনিময়ে অর্জিত জুলাই চেতনা ও আশা-আকাঙ্ক্ষা ভূলুণ্ঠিত হয়েছে।’

*নির্বাচন জুলাই সদনের ভিত্তিতে*

আবদুল্লাহ মো. তাহের বলেন, ‘আমরা লক্ষ্য করছি নির্বাচনের উপযুক্ত যে পরিবেশ থাকার কথা ছিল, তা সরকার এখনও নিশ্চিত করতে পারেনি। এজন্য প্রধান উপদেষ্টা ঘোষিত টাইমলাইন অনুযায়ী অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন করতে হলে জুলাই জাতীয় সনদের ভিত্তিতে নির্বাচনের ব্যবস্থা করতে হবে। এ লক্ষ্যে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন যে জুলাই জাতীয় সনদ প্রণয়ন করতে যাচ্ছে, বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারকে তার আইনি ভিত্তি দিতে হবে।’

বাংলাদেশের মানুষ জুলাই ঘোষণাপত্রের জন্য যে প্রত্যাশা নিয়ে অপেক্ষা করছিল, তা ‘পূরণ না হওয়ায়’ জনগণের মধ্যে দেশের ভবিষ্যৎ নিয়ে ‘উদ্বেগ ও উৎকণ্ঠা’ তৈরি হয়েছে বলেও দাবি করেন জামায়াতের এই নেতা।

তিনি বলেন, ‘শহীদ ও আহতদের পরিবারসহ জুলাই যোদ্ধাদের মাঝে নতুনভাবে উৎকণ্ঠা পরিলক্ষিত হচ্ছে। ঐকমত্য কমিশনের মাধ্যমে জুলাই জাতীয় সনদ প্রণয়ন ও বাস্তবায়নের রূপরেখা কী হবে তা জাতির কাছে অস্পষ্ট। আমরা সরকারের প্রতি আহ্বান জানাই, অনতিবিলম্বে জুলাই ঘোষণাপত্রে উপরে জনআকাক্সক্ষার অপরিহার্য বিষয়গুলো অন্তর্ভুক্ত করা হোক। সেই সঙ্গে আরও দাবি জানাই, বাংলাদেশের অতীতের দৃষ্টান্ত অনুসরণ করে অবিলম্বে জুলাই জাতীয় সনদের প্রণয়নের কাজ সুসম্পন্ন করে বর্তমান সরকারকেই তা বাস্তবায়ন করতে হবে এবং এই সনদের ভিত্তিতে অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের ব্যবস্থা করতে হবে।’

*জুলাই সনদের আইনি ভিত্তি*

আবদুল্লাহ মো. তাহের বলেন, ‘আমাদের আকাক্সক্ষা, আসন্ন জাতীয় নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পূর্বে জুলাই জাতীয় সনদ প্রণয়ন দ্রুত সম্পন্ন করে অধ্যাদেশ, এলএফও বা গণভোট এর মাধ্যমে আইনি ভিত্তি প্রদান করা না হলে অন্তর্বর্তী সরকারের সংস্কার কার্যক্রম বিফলে যাবে।’ অতীতেও বিভিন্ন অভ্যুত্থান ও আন্দোলন পরবর্তী সময়ে সম্মিলিত সিদ্ধান্তের আইনি ভিত্তি দেয়ার কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘অতীতে এত নজির থাকার পরও এখন জুলাই জাতীয় ঘোষণাপত্রের আইনি ভিত্তি দিতে বাধা কোথায়?’

নির্বাচনের জন্য সারাদেশে জামায়াতে ইসলামীর প্রস্তুতি চলছে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের লক্ষ্যে রাজনৈতিক দলগুলোর জন্য লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরি করতে হবে। এর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সব বাহিনী ও সংস্থার কার্যকর ভূমিকা নিশ্চিত করতে হবে, সরকার ও প্রশাসনের মধ্যে স্বৈরাচারের দোসরদের মুক্ত করতে হবে এবং নির্বাচন কমিশনসহ প্রশাসনের সব স্তরে নিরপেক্ষতা নিশ্চিত করতে হবে।’

সেই সঙ্গে আনুপাতিক প্রতিনিধিত্ব (পিআর) পদ্ধতিতে নির্বাচন আয়োজনের দাবি আবারও তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘আমরা মনে করি পিআর পদ্ধতি সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য মাইলফলক। ৫৪ বছর আগের ট্র্যাডিশনাল নির্বাচন দেশের জন্য উপযোগী নয়। রাতে ভোটকেন্দ্র দখল-এগুলো আগের ঐতিহ্য।’

সংবাদ সম্মেলনে জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার, সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা এটিএম মাসুম, এএইচএম হামিদুর রহমান আযাদ, মাওলানা আবদুল হালিমসহ নির্বাহী পরিষদের নেতারা উপস্থিত ছিলেন।

back to top