গণমাধ্যমের মালিকানা যত দিন ব্যবসাকেন্দ্রিক থাকবে, তত দিন সাংবাদিকতা পুঁজি রক্ষার হাতিয়ার হয়ে থাকবে বলে মনে করেন জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহ-সভাপতি আলী রীয়াজ। তিনি বলেছেন, বাংলাদেশের গণমাধ্যমের স্বাধীনতা নিশ্চিত করতে কেবল আইন প্রণয়ন যথেষ্ট নয়; এর জন্য প্রয়োজন গণমাধ্যমের মালিকানা কাঠামো ও সাংস্কৃতিক মানসিকতার পরিবর্তন। যত দিন না গণমাধ্যমকে শুধু ব্যবসার অংশ হিসেবে দেখা বন্ধ হবে, তত দিন এর প্রকৃত স্বাধীনতা সম্ভব নয় বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
বুধবার,(৬ আগস্ট ২০২৫) সকালে ঢাকার সিরডাপ মিলনায়তনে ‘গণমাধ্যমের স্বাধীনতা: অভিযোগ নিষ্পত্তি ও স্ব-নিয়ন্ত্রণের বিশ্লেষণ’ শীর্ষক এক সংলাপে আলী রীয়াজ এসব কথা বলেন। সংলাপ আয়োজন করে সেন্টার ফর গভর্ন্যান্স স্টাডিজ (সিজিএস)।
আলী রীয়াজ বলেন, গণমাধ্যমের ওপর চাপ শুধু সরকার, মালিকপক্ষ বা সম্পাদকীয় স্তর থেকেই নয়- এর বাইরেও একটি ‘সামাজিক শক্তি’ সক্রিয় রয়েছে। তিনি বলেন, কর্তৃত্ববাদী সরকার থেকে গণতান্ত্রিক ধারায় রূপান্তরের সময় এ ধরনের শক্তি তৈরি হয়। তার বিবেচনায়, বাংলাদেশেও একই ঘটনা ঘটছে। গণমাধ্যমের স্বাধীনতা প্রসঙ্গে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহ-সভাপতি বলেন, দীর্ঘদিন ধরে গণমাধ্যমের স্বাধীনতার কথা বলা হচ্ছে। কিন্তু বেশ কিছু বাধার কারণে তা সম্ভব হয় না। এর মধ্যে অন্যতম বাধা হিসেবে গণমাধ্যমগুলোর নিজেদের করপোরেট স্বার্থ অনুসরণ না করাকে দায়ী করেন তিনি।
অধিকাংশ মিডিয়া হাউজ (গণমাধ্যমের পরিচালক প্রতিষ্ঠান) এখন তাদের অন্যান্য ব্যবসা-বাণিজ্যের নিরাপত্তার জন্য মিডিয়াকে ঢাল হিসেবে ব্যবহার করছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, যতদিন এই বাস্তবতা থাকবে, ততদিন প্রকৃত অর্থে স্বাধীন সাংবাদিকতা সম্ভব নয়। সংলাপে আলী রীয়াজ বলেন, সারাবিশ্বেই কর্তৃত্ববাদী শাসন থেকে গণতন্ত্রে উত্তরণের সময় নতুন সামাজিক শক্তিগুলোর উদ্ভব ঘটে, তারা সংঘাতে জড়িয়ে পড়ে এবং কখনো কখনো তা ভয়াবহ সহিংসতায় রূপ নেয়। দেশেও তার কিছু প্রতিফলন দেখা যাচ্ছে। তবে এ ধরনের ঘটনায় যে পরিমাণ সহিংসতা হয়, বাংলাদেশে তা হয়নি বলে মনে করেন আলী রীয়াজ। এজন্য রাজনৈতিক শক্তিগুলোকে ধন্যবাদ দেয়া দরকার মন্তব্য করে তিনি বলেন, সরকারও চেষ্টা করেছে, যদিও আরও বেশি করা যেত।
তিনি বলেন, ‘বিশ্বের বড় বড় গণমাধ্যমের মালিক কে, তা সাধারণ মানুষ জানে না। কিন্তু বাংলাদেশে প্রায় প্রতিটি সংবাদপত্রের মালিক কে, তিনি কোন রাজনৈতিক চিন্তা বা ব্যবসা করেন, তা সবাই জানে। এই বাস্তবতা না বদলালে মিডিয়ার স্বাধীনতা নিশ্চিত করা অসম্ভব। মালিকানা যত দিন ব্যবসাকেন্দ্রিক থাকবে, তত দিন সাংবাদিকতা পুঁজি রক্ষার হাতিয়ার হয়ে থাকবে। গণমাধ্যমে কর্মরত সাংবাদিকদের রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতা নিয়েও প্রশ্ন তোলেন আলী রীয়াজ। তিনি বলেন, এখন এমন অনেকে নিজেদের সাংবাদিক পরিচয় দেন, যিনি একটি রাজনৈতিক দলের নির্বাচনী প্রচার সেলের সদস্য। এটি খুবই অপ্রীতিকর। সাংবাদিক ইউনিয়নগুলোর ভূমিকা নিয়েও হতাশা প্রকাশ করে আলী রীয়াজ। তিনি বলেন, ইউনিয়নগুলো দলীয় দৃষ্টিভঙ্গিতে বারবার বিভক্ত হয়েছে। তারা ট্রেড ইউনিয়ন হিসেবে কাজ করেনি, আবার রাজনৈতিক সংগঠনের মতো ভূমিকাও পালন করতে পারেনি।’
অন্তর্বর্তী সরকারের করা আইন-অধ্যাদেশ সংসদ অনুমোদন না দিলে তা মূল্যহীন হবে বলে উল্লেখ করেন অধ্যাপক আলী রীয়াজ। তিনি বলেন, সংসদ অনুমোদন না দিলে আইনের দুই পয়সার দাম নেই। গণমাধ্যম সংস্কারে আইন দিয়ে কতটুকু পরিবর্তন সম্ভব, তা নিয়েও প্রশ্ন তোলেন অধ্যাপক আলী রীয়াজ। তিনি বলেন, গণমাধ্যমের সংস্কৃতি যদি না বদলায়, মালিকানার ধরন যদি না বদলায়, তাহলে লিখিত নীতিমালায় কোনো কাজ হবে না। যতই ম্যাকানিজম বানানো হোক, বাস্তবতাকে অস্বীকার করে কোনো কিছু দাঁড় করানো সম্ভব নয়।
প্রেস কাউন্সিল থাকুক বা না থাকুক, বড় পার্থক্য ঘটবে না বলে মন্তব্য করেন আলী রীয়াজ। তিনি বলেন, স্বাধীন ও কার্যকর গণমাধ্যম কমিশন গঠন করা গেলে তবেই কিছু পরিবর্তন আসতে পারে। অন্তর্বর্তী সরকার সেটি গঠন করে দিয়ে যেতে পারে, কিন্তু ভবিষ্যৎ সরকার সেটিকে কীভাবে গ্রহণ করবে, তা নিয়েও সন্দেহ আছে।
সংলাপে আরও বক্তব্য রাখেন মানবজমিনের সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী, গণফোরামের নির্বাহী সভাপতি সুব্রত চৌধুরী, বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থার (বাসস) ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান সম্পাদক মাহবুব মোর্শেদ, বিএনপির মিডিয়া সেলের আহ্বায়ক মওদুদ হোসেন আলমগীর (পাভেল), জর্জিয়া স্টেট ইউনিভার্সিটির পিএইচডি গবেষক আসিফ বিন আলী প্রমুখ। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন সেন্টার ফর গভর্ন্যান্স স্টাডিজের সভাপতি জিল্লুর রহমান।
বুধবার, ০৬ আগস্ট ২০২৫
গণমাধ্যমের মালিকানা যত দিন ব্যবসাকেন্দ্রিক থাকবে, তত দিন সাংবাদিকতা পুঁজি রক্ষার হাতিয়ার হয়ে থাকবে বলে মনে করেন জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহ-সভাপতি আলী রীয়াজ। তিনি বলেছেন, বাংলাদেশের গণমাধ্যমের স্বাধীনতা নিশ্চিত করতে কেবল আইন প্রণয়ন যথেষ্ট নয়; এর জন্য প্রয়োজন গণমাধ্যমের মালিকানা কাঠামো ও সাংস্কৃতিক মানসিকতার পরিবর্তন। যত দিন না গণমাধ্যমকে শুধু ব্যবসার অংশ হিসেবে দেখা বন্ধ হবে, তত দিন এর প্রকৃত স্বাধীনতা সম্ভব নয় বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
বুধবার,(৬ আগস্ট ২০২৫) সকালে ঢাকার সিরডাপ মিলনায়তনে ‘গণমাধ্যমের স্বাধীনতা: অভিযোগ নিষ্পত্তি ও স্ব-নিয়ন্ত্রণের বিশ্লেষণ’ শীর্ষক এক সংলাপে আলী রীয়াজ এসব কথা বলেন। সংলাপ আয়োজন করে সেন্টার ফর গভর্ন্যান্স স্টাডিজ (সিজিএস)।
আলী রীয়াজ বলেন, গণমাধ্যমের ওপর চাপ শুধু সরকার, মালিকপক্ষ বা সম্পাদকীয় স্তর থেকেই নয়- এর বাইরেও একটি ‘সামাজিক শক্তি’ সক্রিয় রয়েছে। তিনি বলেন, কর্তৃত্ববাদী সরকার থেকে গণতান্ত্রিক ধারায় রূপান্তরের সময় এ ধরনের শক্তি তৈরি হয়। তার বিবেচনায়, বাংলাদেশেও একই ঘটনা ঘটছে। গণমাধ্যমের স্বাধীনতা প্রসঙ্গে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহ-সভাপতি বলেন, দীর্ঘদিন ধরে গণমাধ্যমের স্বাধীনতার কথা বলা হচ্ছে। কিন্তু বেশ কিছু বাধার কারণে তা সম্ভব হয় না। এর মধ্যে অন্যতম বাধা হিসেবে গণমাধ্যমগুলোর নিজেদের করপোরেট স্বার্থ অনুসরণ না করাকে দায়ী করেন তিনি।
অধিকাংশ মিডিয়া হাউজ (গণমাধ্যমের পরিচালক প্রতিষ্ঠান) এখন তাদের অন্যান্য ব্যবসা-বাণিজ্যের নিরাপত্তার জন্য মিডিয়াকে ঢাল হিসেবে ব্যবহার করছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, যতদিন এই বাস্তবতা থাকবে, ততদিন প্রকৃত অর্থে স্বাধীন সাংবাদিকতা সম্ভব নয়। সংলাপে আলী রীয়াজ বলেন, সারাবিশ্বেই কর্তৃত্ববাদী শাসন থেকে গণতন্ত্রে উত্তরণের সময় নতুন সামাজিক শক্তিগুলোর উদ্ভব ঘটে, তারা সংঘাতে জড়িয়ে পড়ে এবং কখনো কখনো তা ভয়াবহ সহিংসতায় রূপ নেয়। দেশেও তার কিছু প্রতিফলন দেখা যাচ্ছে। তবে এ ধরনের ঘটনায় যে পরিমাণ সহিংসতা হয়, বাংলাদেশে তা হয়নি বলে মনে করেন আলী রীয়াজ। এজন্য রাজনৈতিক শক্তিগুলোকে ধন্যবাদ দেয়া দরকার মন্তব্য করে তিনি বলেন, সরকারও চেষ্টা করেছে, যদিও আরও বেশি করা যেত।
তিনি বলেন, ‘বিশ্বের বড় বড় গণমাধ্যমের মালিক কে, তা সাধারণ মানুষ জানে না। কিন্তু বাংলাদেশে প্রায় প্রতিটি সংবাদপত্রের মালিক কে, তিনি কোন রাজনৈতিক চিন্তা বা ব্যবসা করেন, তা সবাই জানে। এই বাস্তবতা না বদলালে মিডিয়ার স্বাধীনতা নিশ্চিত করা অসম্ভব। মালিকানা যত দিন ব্যবসাকেন্দ্রিক থাকবে, তত দিন সাংবাদিকতা পুঁজি রক্ষার হাতিয়ার হয়ে থাকবে। গণমাধ্যমে কর্মরত সাংবাদিকদের রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতা নিয়েও প্রশ্ন তোলেন আলী রীয়াজ। তিনি বলেন, এখন এমন অনেকে নিজেদের সাংবাদিক পরিচয় দেন, যিনি একটি রাজনৈতিক দলের নির্বাচনী প্রচার সেলের সদস্য। এটি খুবই অপ্রীতিকর। সাংবাদিক ইউনিয়নগুলোর ভূমিকা নিয়েও হতাশা প্রকাশ করে আলী রীয়াজ। তিনি বলেন, ইউনিয়নগুলো দলীয় দৃষ্টিভঙ্গিতে বারবার বিভক্ত হয়েছে। তারা ট্রেড ইউনিয়ন হিসেবে কাজ করেনি, আবার রাজনৈতিক সংগঠনের মতো ভূমিকাও পালন করতে পারেনি।’
অন্তর্বর্তী সরকারের করা আইন-অধ্যাদেশ সংসদ অনুমোদন না দিলে তা মূল্যহীন হবে বলে উল্লেখ করেন অধ্যাপক আলী রীয়াজ। তিনি বলেন, সংসদ অনুমোদন না দিলে আইনের দুই পয়সার দাম নেই। গণমাধ্যম সংস্কারে আইন দিয়ে কতটুকু পরিবর্তন সম্ভব, তা নিয়েও প্রশ্ন তোলেন অধ্যাপক আলী রীয়াজ। তিনি বলেন, গণমাধ্যমের সংস্কৃতি যদি না বদলায়, মালিকানার ধরন যদি না বদলায়, তাহলে লিখিত নীতিমালায় কোনো কাজ হবে না। যতই ম্যাকানিজম বানানো হোক, বাস্তবতাকে অস্বীকার করে কোনো কিছু দাঁড় করানো সম্ভব নয়।
প্রেস কাউন্সিল থাকুক বা না থাকুক, বড় পার্থক্য ঘটবে না বলে মন্তব্য করেন আলী রীয়াজ। তিনি বলেন, স্বাধীন ও কার্যকর গণমাধ্যম কমিশন গঠন করা গেলে তবেই কিছু পরিবর্তন আসতে পারে। অন্তর্বর্তী সরকার সেটি গঠন করে দিয়ে যেতে পারে, কিন্তু ভবিষ্যৎ সরকার সেটিকে কীভাবে গ্রহণ করবে, তা নিয়েও সন্দেহ আছে।
সংলাপে আরও বক্তব্য রাখেন মানবজমিনের সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী, গণফোরামের নির্বাহী সভাপতি সুব্রত চৌধুরী, বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থার (বাসস) ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান সম্পাদক মাহবুব মোর্শেদ, বিএনপির মিডিয়া সেলের আহ্বায়ক মওদুদ হোসেন আলমগীর (পাভেল), জর্জিয়া স্টেট ইউনিভার্সিটির পিএইচডি গবেষক আসিফ বিন আলী প্রমুখ। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন সেন্টার ফর গভর্ন্যান্স স্টাডিজের সভাপতি জিল্লুর রহমান।