অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের দ্বিতীয় অধ্যায় শুরু হয়েছে মন্তব্য করে এই সরকারের প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, এখন তাদের প্রধান কাজ হচ্ছে ‘সুন্দরভাবে’ জাতীয় নির্বাচন আয়োজন করা। বৃহস্পতিবার সচিবালয়ে উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে শেষে সংবাদ সম্মেলনে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম এ কথা জানান।
উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে দুই উপদেষ্টা- শেখ বশির ও ফারুকীকে অভিনন্দন
মাইলস্টোনের শিক্ষক মেহরিন চৌধুরীর নামে অ্যাওয়ার্ড চালুর সিদ্ধান্ত
আওয়ামী লীগের বিষয়ে ইসিকে জিজ্ঞেস করতে হবে: প্রেস সচিব
উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠক প্রসঙ্গে প্রেস সচিব বলেন, ‘বৈঠকের সূচনা বক্তব্যে প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, ৫ আগস্ট আমাদের প্রথম অধ্যায় শেষ হয়েছে। আজকে থেকে দ্বিতীয় অধ্যায়ের শুরু, দ্বিতীয় অধ্যায়ের প্রধান কাজ হচ্ছে সুন্দরভাবে নির্বাচন করা। এছাড়া বিচার ও সংস্কারের কাজ তো আছেই।’
গত বছরের ৮ আগস্ট দায়িত্ব নেয়ার পর গত মঙ্গলবার দ্বিতীয়বারের মতো সচিবালয়ে এসে উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে অংশ নেন প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস। সাধারণত রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় প্রধান উপদেষ্টার বাসভবনে এবং তেজগাঁওয়ে প্রধান উপদেষ্টা কার্যালয়ে উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকগুলো হয়।
তবে মাঝে গত নভেম্বর সচিবালয়ের ৬ নম্বর ভবনের ১৩ তলায় মন্ত্রিসভা কক্ষে উপদেষ্টা পরিষদের একটি বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন প্রধান উপদেষ্টা। আর গত মঙ্গলবারের বৈঠক হয় সচিবালয়ে নতুন নির্মিত (এক নম্বর) ভবনের ৫ তলায় মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সম্মেলন কক্ষে।
বিচার প্রক্রিয়া
বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের বিভিন্ন অপরাধের বিচার প্রক্রিয়ার বর্ণনা দিয়ে প্রেস সচিব বলেন, ‘চারটা মামলার বিচার শুরু হয়েছে, ২৭টি মামলার তদন্তের পর্যায়ে আছে এবং ১৬টি মামলার চার্জশিট হয়েছে।’ তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে শুল্ক আলোচনা ‘সফলভাবে’ চালিয়ে নেয়ার জন্য বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশির উদ্দিনকে বৈঠকে অভিনন্দন জানিয়েছে উপদেষ্টা পরিষদ। এছাড়া জুলাইয়ের ৩৬ দিনের রাষ্ট্রীয় অনুষ্ঠানমালা পরিচালনার জন্য সংস্কৃতি উপদেষ্টা মোস্তফা সরয়ার ফারুকীকে শুভেচ্ছা জানানো হয়।
বৈঠকে সরকারের এক বছরের কর্মকা- পর্যালোচনা করা হয় বলেও জানান প্রেস সচিব। পর্যালোচনায় দেখা যায়, দায়িত্ব গ্রহণের পর ৩১ জুলাই পর্যন্ত উপদেষ্টা পরিষদ ৪১টি বৈঠক করেছে। এই সময়ের মধ্যে মোট ৩১৫টি সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছিল, যার মধ্যে বাস্তবায়ন হয়েছে ২৪৭টি (৭৮.৪১ শতাংশ)। সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের প্রক্রিয়ায় রয়েছে ৬৮টি। অধ্যাদেশ প্রণয়ন হয়েছে ৫৬টি, প্রক্রিয়াধীন রয়েছে ১০টি।
বাস্তবায়নের রেকর্ড
মন্ত্রিপরিষদ সচিব শেখ আবদুর রশীদ বৈঠকে বলেন, ‘স্বাধীনতার পরে যে কোনো সরকারের জন্য সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের একটি রেকর্ড এটি।’ মন্ত্রিপরিষদের বৈঠকে সুপারিশ করা হয়, দেশে কোনো বিদেশি রাষ্ট্র বা সংস্থার মিশন এলে তাদের সঙ্গে আলাপ-আলোচনাবিষয়ক প্রতিবেদন ১৫ দিনের মধ্যে উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে উপস্থাপন করতে হবে।
চলমান ১১টি সংস্কার কমিশনের সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের প্রতিবেদন উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে উত্থাপন করা হয়। সেখানে বলা হয়, প্রধান উপদেষ্টার নির্দেশনা অনুযায়ী নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশন, পুলিশ সংস্কার কমিশন, বিচার বিভাগ সংস্থার কমিশন, দুর্নীতি দমন কমিশন সংস্কার কমিশন, জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের সুপারিশ থেকে আইন উপদেষ্টা ১২১টি আশু বাস্তবায়নযোগ্য হিসেবে চিহ্নিত করেছেন। সেগুলো মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে পাঠানো হয়েছে।
এর মধ্যে ১৬টি ইতোমধ্যে বাস্তবায়ন হয়েছে। ৮৫টি সুপারিশের বাস্তবায়ন প্রক্রিয়াধীন। ১০টি সুপারিশ আংশিক বাস্তবায়ন হচ্ছে। আরও ১০টি সুপারিশ বাস্তবায়নযোগ্য কিনা, সেটা নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা হচ্ছে।
গাজীপুর ডিজিটাল
শফিকুল আলম জানান, ‘গাজীপুর ডিজিটাল ইউনিভার্সিটি’র নাম পরিবর্তনের একটি দাবি ছিল। সে আলোকে উপদেষ্টা পরিষদ সিদ্ধান্ত নিয়েছে, এই ইউনিভার্সিটি নতুন নাম হবে
তিনি বলেন, ‘বৈঠকে মাইলস্টোন ট্র্যাজেডি নিয়ে আবারও আলোচনা হয়েছে। ওই কলেজের দুজন টিচার এবং একজন আয়াকে কীভাবে সম্মাননা দেয়া যায়, সে বিষয়ে আলাপ হয়েছে। শিক্ষক মেহরিন চৌধুরী আক্রান্ত শিক্ষার্থীদের উদ্ধারে যে বীরত্ব দেখিয়েছেন, আত্মদান করেছেন। উনার নামে শিক্ষা মন্ত্রণালয় একটা অ্যাওয়ার্ড চালু করবে। এই অ্যাওয়ার্ড এর নাম হবে মেহরিন চৌধুরী অ্যাওয়ার্ড ফর আউটস্ট্যান্ডিং সার্ভিসেস। শুধু সারাদেশের শিক্ষকদের মাঝে এই অ্যাওয়ার্ড দেয়া হবে।’
প্রেস সচিব বলেন, ‘জুলাই শহীদদের মধ্যে যে সম্মানী দেয়া হচ্ছে, তা প্রাপ্তির ক্ষেত্রে স্বজনদের মধ্যে একটা ডিসপিউট দেখা যাচ্ছে। কে টাকাটা কীভাবে পাবেন, সেজন্য আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে একটা বিধি করে দেয়া হবে।’
*নির্বাচনের প্রস্তুতি*
সংবাদ সম্মেলন এক সাংবাদিক আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রস্তুতি কেমন চলছে জানতে চাইলে প্রেস সচিব শফিকুল আলম বলেন, ‘নির্বাচনের প্রস্তুতি নিয়ে প্রচুর সভা হচ্ছে। প্রধান উপদেষ্টা নিজেই গত এক মাসে দুটি সভা করেছেন। প্রাথমিক সিদ্ধান্ত হচ্ছে নির্বাচনে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর আট লাখ সদস্য দায়িত্ব পালন করবেন। এই সংখ্যা আরও ৫০ হাজার বাড়তে পারে। সেনাবাহিনী ৬০ হাজার সদস্য দেবে বলেছে। সেখানে আরও বেশি সদস্য লাগতে পারে।’
নির্বাচনের সময়সীমা নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর বক্তব্য কী জানতে চাইলে শফিকুল আলম বলেন, ‘রাজনৈতিক দলগুলো সরকারের এই সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছে। সরকারের চেষ্টা থাকবে সবচেয়ে ভালো একটি নির্বাচন উপহার দেয়া। এরই মধ্যে নির্বাচন কমিশন তাদের কাজ শুরু করেছে। প্রশাসন প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছে।’
*আওয়ামী লীগের অংশগ্রহণ*
নির্বাচনে আওয়ামী লীগসহ ১৪ দল নির্বাচনে অংশ নিতে পারবে কিনা বা এ ধরনের কোনো আলোচনা হয়েছে কিনা, সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে প্রেস সচিব বলেন, ‘সে বিষয়ে নির্বাচন কমিশনকে জিজ্ঞেস করতে হবে। সরকারের তরফ থেকে আওয়ামী লীগের সব কার্যক্রম নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। যত দিন না পর্যন্ত তাদের লিডারদের ট্রায়ালটা শেষ হচ্ছে।’
সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিচারের বিষয়ে জানতে চাইলে প্রেস সচিব বলেন, ‘অন্তর্বর্তী সরকারের লক্ষ্য সাবেক প্রধানমন্ত্রীকে দেশে ফিরিয়ে আনা। তিনি (হাসিনা) যাতে ন্যায়বিচার পান, সেটি নিশ্চিত করা হবে। আলজাজিরা ও বিবিসির অনুসন্ধানী প্রতিবেদনে দেখা গেছে, তিনি কী করেছেন। প্রাণঘাতী অস্ত্র ব্যবহারের নির্দেশ দিয়েছিলেন। বিশ্ববাসী এখন তা জানে। সরকার আশা করে যে শেখ হাসিনা দেশে ফিরে আসবেন এবং বিচারের মুখোমুখি হবেন।’
*পরিস্থিতির অবনতি*
এক সাংবাদিক জানতে চান, অন্তর্বর্তী সরকারের এক বছর পূর্ণ হতে যাচ্ছে আগামীকাল (৮ আগস্ট)। এ সময় আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে, প্রশাসন ভেঙে পড়েছে। এ বিষয়ে সরকারের বক্তব্য কী?
জবাবে প্রেস সচিব বলেন, ‘আপনি যদি বিগত সময়ের সঙ্গে তুলনা করেন, তাহলে দেখবেন, অপরাধ ও খুন কম হচ্ছে। একটা-দুইটা খুন হলেই বলা হচ্ছে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ভেঙে পড়েছে। প্রতি মাসে অপরাধ ও খুনের চিত্র তুলে ধরতে পুলিশকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। আপনারা সেখান থেকে তথ্য নেন। দেখবেন আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি কী।’
আর প্রশাসন ভেঙে পড়লে গত এক বছরে এত অর্জন হতো কিনা, পাল্টা প্রশ্ন রাখেন শফিকুল আলম। তিনি অর্জনের হিসাব দিতে গিয়ে বলেন, ‘শেখ হাসিনা পালানোর সময় দেশে খাদ্যের মজুত ছিল ১৮ লাখ টন। এখন তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২১ লাখ টনে। প্রথমবারের মতো ৪ বিলিয়ন ডলার বৈদেশিক ঋণ পরিশোধ করা হয়েছে। মূল্যস্ফীতির হার ১০ শতাংশের নিচে নামিয়ে আনা হয়েছে। ব্যাংক পরিস্থিতির উন্নতি হচ্ছে। রিজার্ভ বাড়ছে। এসব কারা করছে? আমলাতন্ত্র করেছে। আমলাতন্ত্র ভেঙে পড়লে ছয়টি বন্যা মোকাবিলা করা সম্ভব হতো না।’
‘পুলিশ যদি সক্রিয়ই হয়, তাহলে সেনাবাহিনীকে মাঠে নামতে হলো কেন’, এক সাংবাদিকের এই প্রশ্নের জবাবে প্রেস সচিব বলেন, ‘এ ধরনের অন্তর্বর্তী সরকারের সময়ে সেনাবাহিনীকে মাঠে নামানো হয়।’
বৃহস্পতিবার, ০৭ আগস্ট ২০২৫
অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের দ্বিতীয় অধ্যায় শুরু হয়েছে মন্তব্য করে এই সরকারের প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, এখন তাদের প্রধান কাজ হচ্ছে ‘সুন্দরভাবে’ জাতীয় নির্বাচন আয়োজন করা। বৃহস্পতিবার সচিবালয়ে উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে শেষে সংবাদ সম্মেলনে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম এ কথা জানান।
উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে দুই উপদেষ্টা- শেখ বশির ও ফারুকীকে অভিনন্দন
মাইলস্টোনের শিক্ষক মেহরিন চৌধুরীর নামে অ্যাওয়ার্ড চালুর সিদ্ধান্ত
আওয়ামী লীগের বিষয়ে ইসিকে জিজ্ঞেস করতে হবে: প্রেস সচিব
উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠক প্রসঙ্গে প্রেস সচিব বলেন, ‘বৈঠকের সূচনা বক্তব্যে প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, ৫ আগস্ট আমাদের প্রথম অধ্যায় শেষ হয়েছে। আজকে থেকে দ্বিতীয় অধ্যায়ের শুরু, দ্বিতীয় অধ্যায়ের প্রধান কাজ হচ্ছে সুন্দরভাবে নির্বাচন করা। এছাড়া বিচার ও সংস্কারের কাজ তো আছেই।’
গত বছরের ৮ আগস্ট দায়িত্ব নেয়ার পর গত মঙ্গলবার দ্বিতীয়বারের মতো সচিবালয়ে এসে উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে অংশ নেন প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস। সাধারণত রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় প্রধান উপদেষ্টার বাসভবনে এবং তেজগাঁওয়ে প্রধান উপদেষ্টা কার্যালয়ে উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকগুলো হয়।
তবে মাঝে গত নভেম্বর সচিবালয়ের ৬ নম্বর ভবনের ১৩ তলায় মন্ত্রিসভা কক্ষে উপদেষ্টা পরিষদের একটি বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন প্রধান উপদেষ্টা। আর গত মঙ্গলবারের বৈঠক হয় সচিবালয়ে নতুন নির্মিত (এক নম্বর) ভবনের ৫ তলায় মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সম্মেলন কক্ষে।
বিচার প্রক্রিয়া
বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের বিভিন্ন অপরাধের বিচার প্রক্রিয়ার বর্ণনা দিয়ে প্রেস সচিব বলেন, ‘চারটা মামলার বিচার শুরু হয়েছে, ২৭টি মামলার তদন্তের পর্যায়ে আছে এবং ১৬টি মামলার চার্জশিট হয়েছে।’ তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে শুল্ক আলোচনা ‘সফলভাবে’ চালিয়ে নেয়ার জন্য বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশির উদ্দিনকে বৈঠকে অভিনন্দন জানিয়েছে উপদেষ্টা পরিষদ। এছাড়া জুলাইয়ের ৩৬ দিনের রাষ্ট্রীয় অনুষ্ঠানমালা পরিচালনার জন্য সংস্কৃতি উপদেষ্টা মোস্তফা সরয়ার ফারুকীকে শুভেচ্ছা জানানো হয়।
বৈঠকে সরকারের এক বছরের কর্মকা- পর্যালোচনা করা হয় বলেও জানান প্রেস সচিব। পর্যালোচনায় দেখা যায়, দায়িত্ব গ্রহণের পর ৩১ জুলাই পর্যন্ত উপদেষ্টা পরিষদ ৪১টি বৈঠক করেছে। এই সময়ের মধ্যে মোট ৩১৫টি সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছিল, যার মধ্যে বাস্তবায়ন হয়েছে ২৪৭টি (৭৮.৪১ শতাংশ)। সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের প্রক্রিয়ায় রয়েছে ৬৮টি। অধ্যাদেশ প্রণয়ন হয়েছে ৫৬টি, প্রক্রিয়াধীন রয়েছে ১০টি।
বাস্তবায়নের রেকর্ড
মন্ত্রিপরিষদ সচিব শেখ আবদুর রশীদ বৈঠকে বলেন, ‘স্বাধীনতার পরে যে কোনো সরকারের জন্য সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের একটি রেকর্ড এটি।’ মন্ত্রিপরিষদের বৈঠকে সুপারিশ করা হয়, দেশে কোনো বিদেশি রাষ্ট্র বা সংস্থার মিশন এলে তাদের সঙ্গে আলাপ-আলোচনাবিষয়ক প্রতিবেদন ১৫ দিনের মধ্যে উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে উপস্থাপন করতে হবে।
চলমান ১১টি সংস্কার কমিশনের সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের প্রতিবেদন উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে উত্থাপন করা হয়। সেখানে বলা হয়, প্রধান উপদেষ্টার নির্দেশনা অনুযায়ী নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশন, পুলিশ সংস্কার কমিশন, বিচার বিভাগ সংস্থার কমিশন, দুর্নীতি দমন কমিশন সংস্কার কমিশন, জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের সুপারিশ থেকে আইন উপদেষ্টা ১২১টি আশু বাস্তবায়নযোগ্য হিসেবে চিহ্নিত করেছেন। সেগুলো মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে পাঠানো হয়েছে।
এর মধ্যে ১৬টি ইতোমধ্যে বাস্তবায়ন হয়েছে। ৮৫টি সুপারিশের বাস্তবায়ন প্রক্রিয়াধীন। ১০টি সুপারিশ আংশিক বাস্তবায়ন হচ্ছে। আরও ১০টি সুপারিশ বাস্তবায়নযোগ্য কিনা, সেটা নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা হচ্ছে।
গাজীপুর ডিজিটাল
শফিকুল আলম জানান, ‘গাজীপুর ডিজিটাল ইউনিভার্সিটি’র নাম পরিবর্তনের একটি দাবি ছিল। সে আলোকে উপদেষ্টা পরিষদ সিদ্ধান্ত নিয়েছে, এই ইউনিভার্সিটি নতুন নাম হবে
তিনি বলেন, ‘বৈঠকে মাইলস্টোন ট্র্যাজেডি নিয়ে আবারও আলোচনা হয়েছে। ওই কলেজের দুজন টিচার এবং একজন আয়াকে কীভাবে সম্মাননা দেয়া যায়, সে বিষয়ে আলাপ হয়েছে। শিক্ষক মেহরিন চৌধুরী আক্রান্ত শিক্ষার্থীদের উদ্ধারে যে বীরত্ব দেখিয়েছেন, আত্মদান করেছেন। উনার নামে শিক্ষা মন্ত্রণালয় একটা অ্যাওয়ার্ড চালু করবে। এই অ্যাওয়ার্ড এর নাম হবে মেহরিন চৌধুরী অ্যাওয়ার্ড ফর আউটস্ট্যান্ডিং সার্ভিসেস। শুধু সারাদেশের শিক্ষকদের মাঝে এই অ্যাওয়ার্ড দেয়া হবে।’
প্রেস সচিব বলেন, ‘জুলাই শহীদদের মধ্যে যে সম্মানী দেয়া হচ্ছে, তা প্রাপ্তির ক্ষেত্রে স্বজনদের মধ্যে একটা ডিসপিউট দেখা যাচ্ছে। কে টাকাটা কীভাবে পাবেন, সেজন্য আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে একটা বিধি করে দেয়া হবে।’
*নির্বাচনের প্রস্তুতি*
সংবাদ সম্মেলন এক সাংবাদিক আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রস্তুতি কেমন চলছে জানতে চাইলে প্রেস সচিব শফিকুল আলম বলেন, ‘নির্বাচনের প্রস্তুতি নিয়ে প্রচুর সভা হচ্ছে। প্রধান উপদেষ্টা নিজেই গত এক মাসে দুটি সভা করেছেন। প্রাথমিক সিদ্ধান্ত হচ্ছে নির্বাচনে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর আট লাখ সদস্য দায়িত্ব পালন করবেন। এই সংখ্যা আরও ৫০ হাজার বাড়তে পারে। সেনাবাহিনী ৬০ হাজার সদস্য দেবে বলেছে। সেখানে আরও বেশি সদস্য লাগতে পারে।’
নির্বাচনের সময়সীমা নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর বক্তব্য কী জানতে চাইলে শফিকুল আলম বলেন, ‘রাজনৈতিক দলগুলো সরকারের এই সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছে। সরকারের চেষ্টা থাকবে সবচেয়ে ভালো একটি নির্বাচন উপহার দেয়া। এরই মধ্যে নির্বাচন কমিশন তাদের কাজ শুরু করেছে। প্রশাসন প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছে।’
*আওয়ামী লীগের অংশগ্রহণ*
নির্বাচনে আওয়ামী লীগসহ ১৪ দল নির্বাচনে অংশ নিতে পারবে কিনা বা এ ধরনের কোনো আলোচনা হয়েছে কিনা, সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে প্রেস সচিব বলেন, ‘সে বিষয়ে নির্বাচন কমিশনকে জিজ্ঞেস করতে হবে। সরকারের তরফ থেকে আওয়ামী লীগের সব কার্যক্রম নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। যত দিন না পর্যন্ত তাদের লিডারদের ট্রায়ালটা শেষ হচ্ছে।’
সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিচারের বিষয়ে জানতে চাইলে প্রেস সচিব বলেন, ‘অন্তর্বর্তী সরকারের লক্ষ্য সাবেক প্রধানমন্ত্রীকে দেশে ফিরিয়ে আনা। তিনি (হাসিনা) যাতে ন্যায়বিচার পান, সেটি নিশ্চিত করা হবে। আলজাজিরা ও বিবিসির অনুসন্ধানী প্রতিবেদনে দেখা গেছে, তিনি কী করেছেন। প্রাণঘাতী অস্ত্র ব্যবহারের নির্দেশ দিয়েছিলেন। বিশ্ববাসী এখন তা জানে। সরকার আশা করে যে শেখ হাসিনা দেশে ফিরে আসবেন এবং বিচারের মুখোমুখি হবেন।’
*পরিস্থিতির অবনতি*
এক সাংবাদিক জানতে চান, অন্তর্বর্তী সরকারের এক বছর পূর্ণ হতে যাচ্ছে আগামীকাল (৮ আগস্ট)। এ সময় আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে, প্রশাসন ভেঙে পড়েছে। এ বিষয়ে সরকারের বক্তব্য কী?
জবাবে প্রেস সচিব বলেন, ‘আপনি যদি বিগত সময়ের সঙ্গে তুলনা করেন, তাহলে দেখবেন, অপরাধ ও খুন কম হচ্ছে। একটা-দুইটা খুন হলেই বলা হচ্ছে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ভেঙে পড়েছে। প্রতি মাসে অপরাধ ও খুনের চিত্র তুলে ধরতে পুলিশকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। আপনারা সেখান থেকে তথ্য নেন। দেখবেন আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি কী।’
আর প্রশাসন ভেঙে পড়লে গত এক বছরে এত অর্জন হতো কিনা, পাল্টা প্রশ্ন রাখেন শফিকুল আলম। তিনি অর্জনের হিসাব দিতে গিয়ে বলেন, ‘শেখ হাসিনা পালানোর সময় দেশে খাদ্যের মজুত ছিল ১৮ লাখ টন। এখন তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২১ লাখ টনে। প্রথমবারের মতো ৪ বিলিয়ন ডলার বৈদেশিক ঋণ পরিশোধ করা হয়েছে। মূল্যস্ফীতির হার ১০ শতাংশের নিচে নামিয়ে আনা হয়েছে। ব্যাংক পরিস্থিতির উন্নতি হচ্ছে। রিজার্ভ বাড়ছে। এসব কারা করছে? আমলাতন্ত্র করেছে। আমলাতন্ত্র ভেঙে পড়লে ছয়টি বন্যা মোকাবিলা করা সম্ভব হতো না।’
‘পুলিশ যদি সক্রিয়ই হয়, তাহলে সেনাবাহিনীকে মাঠে নামতে হলো কেন’, এক সাংবাদিকের এই প্রশ্নের জবাবে প্রেস সচিব বলেন, ‘এ ধরনের অন্তর্বর্তী সরকারের সময়ে সেনাবাহিনীকে মাঠে নামানো হয়।’