‘দুর্নীতি ও রায় জালিয়াতির’ অভিযোগে শাহবাগ থানার মামলায় এ বি এম খায়রুল হকের বক্তব্য শুনতে চেয়েছিল আদালত, তবে সাবেক এই প্রধান বিচারপতি বলেননি কিছুই। ৭ দিনের রিমান্ড শেষে বৃহস্পতিবার,(৭ আগস্ট ২০২৫) খায়রুল হককে আদালতে হাজির করে কারাগারে আটক রাখার আবেদন করেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা শাহবাগ থানার এসআই খালেক মিয়া। বেলা ১২টা ৫ মিনিটের দিকে খায়রুল হককে যখন এজলাসে হাজির করা হয়, তার মাথায় হেলমেট, গায়ে বুলেটপ্রুফ জ্যাকেট, হাতে একটি পানির বোতল। বেলা ১২টা ১৬ মিনিটে বিচারক এজলাসে ওঠেন। খায়রুল হকের পক্ষে তার আইনজীবী মোনায়েম নবী শাহিন জামিন চেয়ে আবেদন করেন।
বিচারক আইনজীবীর উদ্দেশে বলেন, ‘এখানে জামিন শুনানির সুযোগ নাই। আপনি চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে জামিন আবেদন দেন। এ বিষয়ে সেখানে শুনানি হবে।’ এরপর বিচারক খায়রুল হককে বলেন, ‘আপনাকে রিমান্ড শেষে আদালতে আনা হয়েছে, আপনি কিছু বলবেন?’ তবে কোনো কথা বলেননি সাবেক প্রধান বিচারপতি। ১২টা ২০ মিনিটে তাকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেয় বিচারক।
১৫ মিনিট আদালতের কাঠগড়ায় নিশ্চুপ দাঁড়িয়ে ছিলেন খায়রুল হক। পুরা সময় জুড়ে তার মাথায় হেলমেট, বুলেটপ্রুফ জ্যাকেট ও হাতে পানির বোতল দেখা যায়। এ বি এম খায়রুল হক ২০১০ সালের ১ অক্টোবর থেকে ২০১১ সালের ১৭ মে পর্যন্ত প্রধান বিচারপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। তার নেতৃত্বাধীন আপিল বেঞ্চ ২০১১ সালের ১০ মে সংবিধানের ত্রয়োদশ সংশোধনী বাতিল করে রায় দেয়। তাতে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা অবৈধ হয়ে যায়। সেই রায়ে জালিয়াতি এবং দুর্নীতির অভিযোগে গত বছর ২৭ আগস্ট শাহবাগ থানায় এ মামলা করেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মুজাহিদুল ইসলাম শাহীন।
মামলার অভিযোগে বলা হয়, ‘বিচারপতি খায়রুল হক সদ্য সাবেক প্রধানমন্ত্রীর কথায় প্রভাবিত হয়ে অবসরপরবর্তী ভালো পদায়নের লোভে দুর্নীতিমূলকভাবে শেখ হাসিনাকে খুশি করার জন্য ২০১১ সালের ১০ মে ত্রয়োদশ সংশোধনী মামলার সংক্ষিপ্ত আদেশ পরিবর্তন করে বেআইনিভাবে ২০১২ সালের ১৬ সেপ্টেম্বর আপিল মামলার পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশ করেন।’
মামলায় বাদী বলেন, ‘১৯৯৬ সালে ত্রয়োদশ সংশোধনীর মাধ্যমে নির্বাচনকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা প্রবর্তন করা হয়েছিল। আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে পঞ্চদশ সংশোধনীর মাধ্যমে ওই ব্যবস্থা বাতিল করা হয়। ২০০১ সালে বিএনপি ক্ষমতায় থাকাকালে এই সংশোধনীর বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে অ্যাডভোকেট এম সলিম উল্লাহসহ কয়েকজন রিট আবেদন করেন। সেই মামলার শুনানি করে ২০০৪ সালে হাইকোর্ট তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থাকে বৈধ ঘোষণা করে রায় দেয়। রিট আবেদনকারী ওই রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করলে ২০১১ সালের ১০ মে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিল করে রায় দেয় আপিল বিভাগ। তখন প্রধান বিচারপতি ছিলেন এবিএম খায়রুল হক।’
‘ত্রয়োদশ সংশোধনী মামলায় প্রকাশ্য আদালতে ঘোষিত রায়ে সুপ্রিম কোর্ট দুই মেয়াদ তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বহাল রাখার পথ খোলা রেখেছিলেন। কিন্তু ওই বছর সেপ্টেম্বরে আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশের সময় জালিয়াতি করা হয়।’ খায়রুল হক অবসরে যাওয়ার পর ২০১৩ সালের ২৩ জুলাই তাকে তিন বছরের জন্য আইন কমিশনের চেয়ারম্যান হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয়। ওই মেয়াদ শেষে কয়েক দফা পুনর্নিয়োগ দেয়া হয় তাকে।
জুলাই গণঅভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতন হলে ১৩ আগস্ট আইন কমিশন থেকে পদত্যাগ করেন খায়রুল হক। এরপর তার বিরুদ্ধে কয়েকটি মামলা দায়ের হয়। তার ৯ মাসের মাথায় গত ২৪ জুলাই ধানমন্ডির বাসা থেকে এ বি এম খায়রুল হককে গ্রেপ্তার করে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ। পরে ওইদিনই তাকে যাত্রাবাড়ীতে যুবদল কর্মী আবদুল কাইয়ুম আহাদ হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়।
পরে ২৯ জুলাই ‘বেআইনি রায় দেয়া ও জাল রায় তৈরির’ অভিযোগে নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লা থানায় করা মামলায় তাকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়। পরদিন শাহবাগ থানার মামলায় তাকে ৭ দিনের রিমান্ডে পাঠায় আদালত। এ মামলায় গত ৩১ জুলাই দণ্ডবিধির ১২০-বি (অপরাধমূলক ষড়যন্ত্র) এবং ৪২০( প্রতারণা) ধারা সংযোজনের আবেদন করে বাদীপক্ষ। আদালত আবেদনটি নভিভুক্ত করার আদেশ দেয়।
বৃহস্পতিবার, ০৭ আগস্ট ২০২৫
‘দুর্নীতি ও রায় জালিয়াতির’ অভিযোগে শাহবাগ থানার মামলায় এ বি এম খায়রুল হকের বক্তব্য শুনতে চেয়েছিল আদালত, তবে সাবেক এই প্রধান বিচারপতি বলেননি কিছুই। ৭ দিনের রিমান্ড শেষে বৃহস্পতিবার,(৭ আগস্ট ২০২৫) খায়রুল হককে আদালতে হাজির করে কারাগারে আটক রাখার আবেদন করেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা শাহবাগ থানার এসআই খালেক মিয়া। বেলা ১২টা ৫ মিনিটের দিকে খায়রুল হককে যখন এজলাসে হাজির করা হয়, তার মাথায় হেলমেট, গায়ে বুলেটপ্রুফ জ্যাকেট, হাতে একটি পানির বোতল। বেলা ১২টা ১৬ মিনিটে বিচারক এজলাসে ওঠেন। খায়রুল হকের পক্ষে তার আইনজীবী মোনায়েম নবী শাহিন জামিন চেয়ে আবেদন করেন।
বিচারক আইনজীবীর উদ্দেশে বলেন, ‘এখানে জামিন শুনানির সুযোগ নাই। আপনি চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে জামিন আবেদন দেন। এ বিষয়ে সেখানে শুনানি হবে।’ এরপর বিচারক খায়রুল হককে বলেন, ‘আপনাকে রিমান্ড শেষে আদালতে আনা হয়েছে, আপনি কিছু বলবেন?’ তবে কোনো কথা বলেননি সাবেক প্রধান বিচারপতি। ১২টা ২০ মিনিটে তাকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেয় বিচারক।
১৫ মিনিট আদালতের কাঠগড়ায় নিশ্চুপ দাঁড়িয়ে ছিলেন খায়রুল হক। পুরা সময় জুড়ে তার মাথায় হেলমেট, বুলেটপ্রুফ জ্যাকেট ও হাতে পানির বোতল দেখা যায়। এ বি এম খায়রুল হক ২০১০ সালের ১ অক্টোবর থেকে ২০১১ সালের ১৭ মে পর্যন্ত প্রধান বিচারপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। তার নেতৃত্বাধীন আপিল বেঞ্চ ২০১১ সালের ১০ মে সংবিধানের ত্রয়োদশ সংশোধনী বাতিল করে রায় দেয়। তাতে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা অবৈধ হয়ে যায়। সেই রায়ে জালিয়াতি এবং দুর্নীতির অভিযোগে গত বছর ২৭ আগস্ট শাহবাগ থানায় এ মামলা করেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মুজাহিদুল ইসলাম শাহীন।
মামলার অভিযোগে বলা হয়, ‘বিচারপতি খায়রুল হক সদ্য সাবেক প্রধানমন্ত্রীর কথায় প্রভাবিত হয়ে অবসরপরবর্তী ভালো পদায়নের লোভে দুর্নীতিমূলকভাবে শেখ হাসিনাকে খুশি করার জন্য ২০১১ সালের ১০ মে ত্রয়োদশ সংশোধনী মামলার সংক্ষিপ্ত আদেশ পরিবর্তন করে বেআইনিভাবে ২০১২ সালের ১৬ সেপ্টেম্বর আপিল মামলার পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশ করেন।’
মামলায় বাদী বলেন, ‘১৯৯৬ সালে ত্রয়োদশ সংশোধনীর মাধ্যমে নির্বাচনকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা প্রবর্তন করা হয়েছিল। আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে পঞ্চদশ সংশোধনীর মাধ্যমে ওই ব্যবস্থা বাতিল করা হয়। ২০০১ সালে বিএনপি ক্ষমতায় থাকাকালে এই সংশোধনীর বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে অ্যাডভোকেট এম সলিম উল্লাহসহ কয়েকজন রিট আবেদন করেন। সেই মামলার শুনানি করে ২০০৪ সালে হাইকোর্ট তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থাকে বৈধ ঘোষণা করে রায় দেয়। রিট আবেদনকারী ওই রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করলে ২০১১ সালের ১০ মে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিল করে রায় দেয় আপিল বিভাগ। তখন প্রধান বিচারপতি ছিলেন এবিএম খায়রুল হক।’
‘ত্রয়োদশ সংশোধনী মামলায় প্রকাশ্য আদালতে ঘোষিত রায়ে সুপ্রিম কোর্ট দুই মেয়াদ তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বহাল রাখার পথ খোলা রেখেছিলেন। কিন্তু ওই বছর সেপ্টেম্বরে আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশের সময় জালিয়াতি করা হয়।’ খায়রুল হক অবসরে যাওয়ার পর ২০১৩ সালের ২৩ জুলাই তাকে তিন বছরের জন্য আইন কমিশনের চেয়ারম্যান হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয়। ওই মেয়াদ শেষে কয়েক দফা পুনর্নিয়োগ দেয়া হয় তাকে।
জুলাই গণঅভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতন হলে ১৩ আগস্ট আইন কমিশন থেকে পদত্যাগ করেন খায়রুল হক। এরপর তার বিরুদ্ধে কয়েকটি মামলা দায়ের হয়। তার ৯ মাসের মাথায় গত ২৪ জুলাই ধানমন্ডির বাসা থেকে এ বি এম খায়রুল হককে গ্রেপ্তার করে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ। পরে ওইদিনই তাকে যাত্রাবাড়ীতে যুবদল কর্মী আবদুল কাইয়ুম আহাদ হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়।
পরে ২৯ জুলাই ‘বেআইনি রায় দেয়া ও জাল রায় তৈরির’ অভিযোগে নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লা থানায় করা মামলায় তাকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়। পরদিন শাহবাগ থানার মামলায় তাকে ৭ দিনের রিমান্ডে পাঠায় আদালত। এ মামলায় গত ৩১ জুলাই দণ্ডবিধির ১২০-বি (অপরাধমূলক ষড়যন্ত্র) এবং ৪২০( প্রতারণা) ধারা সংযোজনের আবেদন করে বাদীপক্ষ। আদালত আবেদনটি নভিভুক্ত করার আদেশ দেয়।