যশোর সদর উপজেলার চাঁচড়া ইউনিয়নের মুক্তশ্বরী নদী। এই নদীর প্রায় দশ বিঘা জমি দখল করে নিয়েছে প্রভাবশালী একটি মহল -সংবাদ
যশোরে নদীর একটি অংশ সম্পূর্ণ ভরাট করে প্লট বিক্রির সাইনবোর্ড টাঙিয়ে দেয়া হয়েছে! অবিশ্বাস্য এই ঘটনাটি ঘটেছে যশোর সদর উপজেলার চাঁচড়া ইউনিয়নের মুক্তেশ্বরী নদীতে। চাঁচড়া দক্ষিণপাড়া ও ভাতুড়িয়া পূর্বপাড়ার মাঝের নদীর প্রায় দশ বিঘা জমি ভরাট করে দখল করে নিয়েছে একটি প্রভাবশালী চক্র। অভিযোগ উঠেছে, জাল-জালিয়াতির মাধ্যমে নদীর জমি ব্যক্তিমালিকানায় রেকর্ড করে তা এখন প্লট আকারে বিক্রি করার চেষ্টা চলছে। নদী ভরাট করে দুই অংশকে বিচ্ছিন্ন করে দেয়ায় বিল হরিণায় জলাবদ্ধতা বেড়েছে। পানি লোকালয়ে ঢুকে পড়েছে, এতে স্থানীয়দের মধ্যে তীব্র ক্ষোভ বিরাজ করছে।
চাঁচড়া ইউনিয়নের ভাতুড়িয়া বাজার থেকে পূর্বমুখী সড়কটি চাঁচড়া দক্ষিণপাড়ার দিকে গেছে। কিছু দূর এগোলেই দেখা যাবে একটি কালভার্ট। কালভার্টের দক্ষিণ পাশে পানি থইথই করছে, আর উত্তর পাশ পুরোপুরি ভরাট করে টাঙানো হয়েছে প্লট বিক্রির সাইনবোর্ড। নদীর প্রায় দশ বিঘা জায়গা এভাবে দখল করা হয়েছে। নদীর উত্তর পাশে এখনও জলপ্রবাহ রয়েছে, সেখানে একটি বাঁধ দিয়ে সংযোগ রাখা হয়েছে জিয়ার খালের সঙ্গে। স্থানীয়দের মতে, এই জিয়ার খালের মাধ্যমে নদীর পানি প্রবাহিত হতো, আর সেটিকেই কাজে লাগিয়ে মুক্তেশ্বরী নদী দখল করা হয়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, মুক্তেশ্বরী নদীটি যশোরের চৌগাছা উপজেলা থেকে শুরু হয়ে সদর উপজেলা পেরিয়ে বিল হরিণায় গিয়ে শেষ হয়েছে। এই নদী বর্ষাকালে যশোর শহর ও সদর উপজেলার পানি দক্ষিণমুখী করে বিল হরিণায় প্রবাহিত করে। আশির দশকে সাবেক প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের পরিকল্পনায় মুক্তেশ্বরী নদীর সঙ্গে একটি খাল খনন করা হয়, যেটি সতীঘাটা হয়ে ঢাকুরিয়ার দিকে নিয়ে যাওয়া হয়। এটি ‘জিয়ার খাল’ নামে পরিচিত।
স্থানীয়রা জানান, খাল কাটার পর থেকে মুক্তেশ্বরীর নিচের অংশ ইজারা নিয়ে মাছ চাষ শুরু করে প্রভাবশালীরা। তখনও পানি চলাচল বজায় ছিল। কিন্তু কিছু মাস আগে স্থানীয় একটি প্রভাবশালী চক্র ভাতুড়িয়া-নারায়নপুর সড়কের কালভার্টের উত্তর পাশ থেকে জিয়ার খালের সংযোগমুখ পর্যন্ত মাটি ফেলে পুরো অংশটি ভরাট করে। এখন সেখানে প্লট বিক্রির সাইনবোর্ড ঝুলিয়ে দেয়া হয়েছে।
চাঁচড়া দক্ষিণপাড়ার বাসিন্দা মোবারক হোসেন বলেন, ‘কালভার্ট আছে, এক পাশে নদী আছে, আরেক পাশে নেই! অন্ধ লোকও বুঝতে পারবে এখানে নদী ছিল। অথচ এখন সেটা ব্যক্তিমালিকানার জমি বলে দাবি করা হচ্ছে।’
ভাতুড়িয়া পূর্বপাড়ার বৃদ্ধ তবিবর রহমান বলেন, ‘এই নদীতে পাট জাঁক দিয়েছি, গরু-ছাগল গোসল করিয়েছি, পানি দিয়ে চাষ করেছি। এখন সেটা ভরাট করে প্লট বিক্রি করা হচ্ছে!’
ফিরোজ আহমেদ, ভাতুড়িয়া-নারায়ণপুর গ্রামের বাসিন্দা, জানান, ‘অনেক জায়গায় নদীর পাড় দখল করে গঠনকাজ বা মাছ চাষ হয়। কিন্তু এখানে পুরো নদীটাই দখল করে ফেলা হয়েছে। তারা বলছে, এটা তাদের জমি! নদীর জমি ব্যক্তিমালিকানা হয় কীভাবে, আমরা বুঝি না।’
ভাতুড়িয়া পূর্বপাড়ার বাসিন্দা কাশেম মোড়ল জানান, ‘আগে বর্ষার পানি উজান থেকে মুক্তেশ্বরী দিয়ে বিল হরিণায় যেত। এখন নদীর মাঝখানে ভরাট হয়ে যাওয়ায় শুধু জিয়ার খাল দিয়ে পানি নামছে। ফলে বিলের পানি আটকে যাচ্ছে। এতে হাজার হাজার বিঘা জমিতে এবার আমন ধান চাষ করা সম্ভব হবে না।’
স্থানীয়দের অভিযোগ, দীর্ঘদিন ধরে মাছ চাষে ইজারা নেয়া একটি চক্র গোপনে জমির শ্রেণী পরিবর্তন করে জালিয়াতির মাধ্যমে তা নিজেদের নামে নামজারি করেছে। এখন সেই জমি বিক্রির চেষ্টা চলছে।
ভাতুড়িয়া এলাকার মাসুদ রানা বলেন, ‘ম্যাপেও এই অংশে মুক্তেশ্বরী নদী দেখানো আছে। অথচ এখন তা ভরাট করে বিক্রি করা হচ্ছে। বিলের হাজার হাজার একর জমি জলাবদ্ধ হয়ে আছে, পানি বাড়িঘরে ঢুকছে। আমরা অবিলম্বে দখল উচ্ছেদ করে নদীকে ফিরিয়ে দেয়ার দাবি জানাই।’
বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) যশোর জেলা শাখার আহ্বায়ক খন্দকার আজিজুল হক মনি বলেন, ‘চাঁচড়ায় মুক্তেশ্বরীর একটি অংশ পুরোপুরি ভরাট করে প্লট বিক্রি করা হচ্ছে। এর ফলে জলাবদ্ধতা বাড়ছে, মানুষ দুর্ভোগে পড়ছে। আমরা প্রশাসনের কাছে দাবি জানাচ্ছি অবিলম্বে দখল উচ্ছেদ এবং দখলের সঙ্গে জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে।’
জমি বিক্রির সাইনবোর্ডে দেয়া নম্বরটি যশোর রেজিস্টি অফিসের সাবেক পিয়ন নূর ইসলাম নুরুর। যোগাযোগ করা হলে তিনি দাবি করেন, ‘ওই জমি ব্যক্তিমালিকানার। মালিক জামাল, কামাল, মুন্না তাদের নামে দলিল ও নামজারি রয়েছে। আমি তাদের পক্ষেই বিক্রি করছি।’ তবে তিনি জমির মালিকদের ফোন নম্বর দিতে অস্বীকৃতি জানান এবং বলেন, ‘সব কাগজ আমাদের আছে, ক্রেতাদের বৈধভাবে জমি রেজিস্টি করে দেয়া হবে।’
যশোর পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী পলাশ কুমার ব্যানার্জী বলেন, ‘নদীর জমি কখনোই ব্যক্তিমালিকানায় যাওয়ার সুযোগ নেই। আমরা বিষয়টি খতিয়ে দেখে প্রয়োজনীয় আইনি পদক্ষেপ নেব।’
যশোর সদর উপজেলার চাঁচড়া ইউনিয়নের মুক্তশ্বরী নদী। এই নদীর প্রায় দশ বিঘা জমি দখল করে নিয়েছে প্রভাবশালী একটি মহল -সংবাদ
বৃহস্পতিবার, ০৭ আগস্ট ২০২৫
যশোরে নদীর একটি অংশ সম্পূর্ণ ভরাট করে প্লট বিক্রির সাইনবোর্ড টাঙিয়ে দেয়া হয়েছে! অবিশ্বাস্য এই ঘটনাটি ঘটেছে যশোর সদর উপজেলার চাঁচড়া ইউনিয়নের মুক্তেশ্বরী নদীতে। চাঁচড়া দক্ষিণপাড়া ও ভাতুড়িয়া পূর্বপাড়ার মাঝের নদীর প্রায় দশ বিঘা জমি ভরাট করে দখল করে নিয়েছে একটি প্রভাবশালী চক্র। অভিযোগ উঠেছে, জাল-জালিয়াতির মাধ্যমে নদীর জমি ব্যক্তিমালিকানায় রেকর্ড করে তা এখন প্লট আকারে বিক্রি করার চেষ্টা চলছে। নদী ভরাট করে দুই অংশকে বিচ্ছিন্ন করে দেয়ায় বিল হরিণায় জলাবদ্ধতা বেড়েছে। পানি লোকালয়ে ঢুকে পড়েছে, এতে স্থানীয়দের মধ্যে তীব্র ক্ষোভ বিরাজ করছে।
চাঁচড়া ইউনিয়নের ভাতুড়িয়া বাজার থেকে পূর্বমুখী সড়কটি চাঁচড়া দক্ষিণপাড়ার দিকে গেছে। কিছু দূর এগোলেই দেখা যাবে একটি কালভার্ট। কালভার্টের দক্ষিণ পাশে পানি থইথই করছে, আর উত্তর পাশ পুরোপুরি ভরাট করে টাঙানো হয়েছে প্লট বিক্রির সাইনবোর্ড। নদীর প্রায় দশ বিঘা জায়গা এভাবে দখল করা হয়েছে। নদীর উত্তর পাশে এখনও জলপ্রবাহ রয়েছে, সেখানে একটি বাঁধ দিয়ে সংযোগ রাখা হয়েছে জিয়ার খালের সঙ্গে। স্থানীয়দের মতে, এই জিয়ার খালের মাধ্যমে নদীর পানি প্রবাহিত হতো, আর সেটিকেই কাজে লাগিয়ে মুক্তেশ্বরী নদী দখল করা হয়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, মুক্তেশ্বরী নদীটি যশোরের চৌগাছা উপজেলা থেকে শুরু হয়ে সদর উপজেলা পেরিয়ে বিল হরিণায় গিয়ে শেষ হয়েছে। এই নদী বর্ষাকালে যশোর শহর ও সদর উপজেলার পানি দক্ষিণমুখী করে বিল হরিণায় প্রবাহিত করে। আশির দশকে সাবেক প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের পরিকল্পনায় মুক্তেশ্বরী নদীর সঙ্গে একটি খাল খনন করা হয়, যেটি সতীঘাটা হয়ে ঢাকুরিয়ার দিকে নিয়ে যাওয়া হয়। এটি ‘জিয়ার খাল’ নামে পরিচিত।
স্থানীয়রা জানান, খাল কাটার পর থেকে মুক্তেশ্বরীর নিচের অংশ ইজারা নিয়ে মাছ চাষ শুরু করে প্রভাবশালীরা। তখনও পানি চলাচল বজায় ছিল। কিন্তু কিছু মাস আগে স্থানীয় একটি প্রভাবশালী চক্র ভাতুড়িয়া-নারায়নপুর সড়কের কালভার্টের উত্তর পাশ থেকে জিয়ার খালের সংযোগমুখ পর্যন্ত মাটি ফেলে পুরো অংশটি ভরাট করে। এখন সেখানে প্লট বিক্রির সাইনবোর্ড ঝুলিয়ে দেয়া হয়েছে।
চাঁচড়া দক্ষিণপাড়ার বাসিন্দা মোবারক হোসেন বলেন, ‘কালভার্ট আছে, এক পাশে নদী আছে, আরেক পাশে নেই! অন্ধ লোকও বুঝতে পারবে এখানে নদী ছিল। অথচ এখন সেটা ব্যক্তিমালিকানার জমি বলে দাবি করা হচ্ছে।’
ভাতুড়িয়া পূর্বপাড়ার বৃদ্ধ তবিবর রহমান বলেন, ‘এই নদীতে পাট জাঁক দিয়েছি, গরু-ছাগল গোসল করিয়েছি, পানি দিয়ে চাষ করেছি। এখন সেটা ভরাট করে প্লট বিক্রি করা হচ্ছে!’
ফিরোজ আহমেদ, ভাতুড়িয়া-নারায়ণপুর গ্রামের বাসিন্দা, জানান, ‘অনেক জায়গায় নদীর পাড় দখল করে গঠনকাজ বা মাছ চাষ হয়। কিন্তু এখানে পুরো নদীটাই দখল করে ফেলা হয়েছে। তারা বলছে, এটা তাদের জমি! নদীর জমি ব্যক্তিমালিকানা হয় কীভাবে, আমরা বুঝি না।’
ভাতুড়িয়া পূর্বপাড়ার বাসিন্দা কাশেম মোড়ল জানান, ‘আগে বর্ষার পানি উজান থেকে মুক্তেশ্বরী দিয়ে বিল হরিণায় যেত। এখন নদীর মাঝখানে ভরাট হয়ে যাওয়ায় শুধু জিয়ার খাল দিয়ে পানি নামছে। ফলে বিলের পানি আটকে যাচ্ছে। এতে হাজার হাজার বিঘা জমিতে এবার আমন ধান চাষ করা সম্ভব হবে না।’
স্থানীয়দের অভিযোগ, দীর্ঘদিন ধরে মাছ চাষে ইজারা নেয়া একটি চক্র গোপনে জমির শ্রেণী পরিবর্তন করে জালিয়াতির মাধ্যমে তা নিজেদের নামে নামজারি করেছে। এখন সেই জমি বিক্রির চেষ্টা চলছে।
ভাতুড়িয়া এলাকার মাসুদ রানা বলেন, ‘ম্যাপেও এই অংশে মুক্তেশ্বরী নদী দেখানো আছে। অথচ এখন তা ভরাট করে বিক্রি করা হচ্ছে। বিলের হাজার হাজার একর জমি জলাবদ্ধ হয়ে আছে, পানি বাড়িঘরে ঢুকছে। আমরা অবিলম্বে দখল উচ্ছেদ করে নদীকে ফিরিয়ে দেয়ার দাবি জানাই।’
বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) যশোর জেলা শাখার আহ্বায়ক খন্দকার আজিজুল হক মনি বলেন, ‘চাঁচড়ায় মুক্তেশ্বরীর একটি অংশ পুরোপুরি ভরাট করে প্লট বিক্রি করা হচ্ছে। এর ফলে জলাবদ্ধতা বাড়ছে, মানুষ দুর্ভোগে পড়ছে। আমরা প্রশাসনের কাছে দাবি জানাচ্ছি অবিলম্বে দখল উচ্ছেদ এবং দখলের সঙ্গে জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে।’
জমি বিক্রির সাইনবোর্ডে দেয়া নম্বরটি যশোর রেজিস্টি অফিসের সাবেক পিয়ন নূর ইসলাম নুরুর। যোগাযোগ করা হলে তিনি দাবি করেন, ‘ওই জমি ব্যক্তিমালিকানার। মালিক জামাল, কামাল, মুন্না তাদের নামে দলিল ও নামজারি রয়েছে। আমি তাদের পক্ষেই বিক্রি করছি।’ তবে তিনি জমির মালিকদের ফোন নম্বর দিতে অস্বীকৃতি জানান এবং বলেন, ‘সব কাগজ আমাদের আছে, ক্রেতাদের বৈধভাবে জমি রেজিস্টি করে দেয়া হবে।’
যশোর পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী পলাশ কুমার ব্যানার্জী বলেন, ‘নদীর জমি কখনোই ব্যক্তিমালিকানায় যাওয়ার সুযোগ নেই। আমরা বিষয়টি খতিয়ে দেখে প্রয়োজনীয় আইনি পদক্ষেপ নেব।’