দুই থেকে চার বছর বয়সী পাঁচশ’ শিশুর ওপর ঢাকার এক গবেষণা করা হয়। সেখানে প্রতিটি শিশুর রক্তে সিসার উপস্থিতি পাওয়া গেছে। এতে সিসার মাত্রা ৬৭ মাইক্রোগ্রাম/লিটারের বেশি সিসা ছিল।
আইসিডিডিআর,বির সায়েয়ন্টিস্ট ডা. জেসমিন সুলতানা ২০২২ সাল থেকে ২০২৪ সালের মধ্যে পরিচালিত গবেষণায় এই ফলাফল তুলে ধরেন।
গবেষণায় চিহ্নিত সিসানির্ভর শিল্প স্থাপনার ১ কিলোমিটারের মধ্যে বসবাসকারী শিশুদের রক্তে সিসার মাত্রা ছিল ৫ কিলোমিটারের বেশি দূরত্বে বসবাসকারী শিশুদের তুলনায় ৪৩ ভাগ বেশি।
অপর দিকে, গবেষণায় আশার আলো দেখিয়েছেন আইসিডিডিআর,বির প্রজেক্ট কোঅডিনেটর ডা. মাহবুবুর রহমান। তিনি গত ১০ বছরের সিসা সম্পর্কিত গবেষণার ফলাফল তুলে ধরে বলেন, সিসাদূষণের প্রধান উৎসগুলোর মধ্যে রয়েছে, সিসা ও ব্যাটারি সম্পর্কিত শিল্প কারখানা, সিসাযুক্ত রং এবং প্রসাধনী ও রান্নার পাত্রের মতো নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্র।
তার গবেষণার আশার কথা হলো, রান্নায় ব্যবহৃত হলুদে ভেজাল (লেড ক্রোমেট দিয়ে পালিশ করা) প্রতিরোধে বেশ সফলতা এসেছে। আইসিডিডিআর,বি ও স্ট্যানফোর্ডের একটি গবেষণা দল গর্ভবতী মহিলাদের রক্তে সিসাদূষণের অন্যতম উৎস হিসেবে রান্নার হলুদের গুঁড়াকে চিহ্নিত করার পর বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের নেতৃত্বে এই বিষয়ে সচেতনতামূলক কার্যক্রম ও আইন প্রয়োগের উদ্যোগ নেয়া হয়। এর ফলে ২০১৯ সালে যেখানে শতকরা ৪৭ ভাগ রান্নার হলুদের নমুনায় সিসা পাওয়া যেত, তা কমে ২০২১ সালে শূন্যের কাছাকাছি চলে আসছে।
শিশুদের সিসাদূষণ থেকে বাঁচাতে জরুরি পদক্ষেপ নেয়ার আহ্বান জানিয়ে আইসিডিডিআর,বির গতকাল বুধবার বাংলাদেশে সিসাদূষণ প্রতিরোধ: অগ্রগতি ও চ্যালেঞ্জ শীর্ষক এক আলোচনা সভার আয়োজন করেছিল। সেখানে সভার মূল উদ্দেশ্য ছিল বাংলাদেশে সিসাদূষণের ব্যাপকতা ও এর ভয়াবহতা তুলে ধরা এবং এর থেকে মুক্তির উপায় নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে। সেখানে গবেষকরা তাদের গবেষণার এসব তথ্য তুলে ধরেন।
অনুষ্ঠানে যুক্তরাষ্ট্রের স্ট্যানফোর্ড ইউনিভার্সিটির মেডিসিন বিভাগের অধ্যাপক এবং আইসিডিডিআর,বির সাবেক পরিচালক প্রফেসর স্টিব লুবি বলেন, সিসা শিশুদের মস্তিষ্কের বিকাশকে মারাত্মকভাবে ব্যাহত করে। যার ফলে তাদের বুদ্ধিবৃত্তির সক্ষমতা (আইকিউ) ও শেখার ক্ষমতা হ্রাস পায়।
এর প্রভাব পরবর্তী প্রজন্মের ওপরও স্থায়ীভাবে থেকে যেতে পারে। আমরা নিঃশ্বাসের সঙ্গে যে বাতাস নেই, যে খাবার খাই, যে দূষিত মাটি বা ধূলিকণা স্পর্শ করি। এমনকি গর্ভাবস্থায় মায়ের প্লাসেন্টার মাধ্যমে সিসা আমাদের শরীরে প্রবেশ করে। বিভিন্ন উপায়ে সিসা প্রবেশ করে বলে এর সংস্পর্শ থেকে বাঁচা প্রায় অসম্ভব, যদি না আমরা পরিবেশে এর মূল উৎসগুলো, বিশেষ করে যেগুলো আমাদের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে, তা বন্ধ করি।
গবেষকরা বলেন, সিসানির্ভর শিল্প স্থাপনা, যেমন: লেড-অ্যাসিড, ব্যাটারি বানানো বা রিসাইক্লিং, করার কারখানা বা স্থান, অথবা যেসব কারখানা বা স্থাপনায় সিসা গলানো বা পোড়ানো হয়। এগুলোর বিরুদ্ধে দ্রুত ব্যবস্থা নেয়ার আহ্বান জানান।
কারণ এই প্রতিষ্ঠানগুলোকে সরিয়ে নিলে বা দূষণ কমানোর ব্যবস্থা নিলে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকার শিশুদের সিসাদূষণ থেকে বাঁচানো সম্ভব। পরিচালক তাহমিদ আহমেদ বলেন, সিসার বিষক্রিয়া নীরবে আমাদের শিশুদের ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা কেড়ে নিচ্ছে। এটি তাদের মস্তিষ্কের পরিপূর্ণ বিকাশ বাধাগ্রস্ত করে। দেহে পুষ্টির ঘাটতি সৃষ্টি করে। যা বাংলাদেশের ভবিষ্যৎকে পিছিয়ে দেয়। তাই সিসা নিঃসরণকারী উৎসগুলো বন্ধ করতে হবে, যাতে প্রতিটি শিশু সুস্থ ও বৃদ্ধিদীপ্ত হয়ে বেড়ে উঠে দেশের উন্নয়নে সক্রিয় ভূমিকা রাখতে পারে।
অনুষ্ঠানে আইসিডিডিআর,বির হেলথ সিস্টেমস অ্যান্ড পপুলেশন স্টাডিজের সিনিয়র ডিরেক্টর সারাহ স্যালগুয়ে বলেন, সিসাদূঘণ বাংলাদেশের একটি বড় জনস্বাস্থ্য সমস্যা। যা প্রায়ই আমাদের নজর এড়িয়ে যায়। দূষণ সৃষ্টিকারী কারখানার আশপাশের শিশুরা সবচেয়ে বড় ভুক্তভোগী। তাই ঢাকায় সিসা নির্গমণকারী শিল্প-স্থাপনার বিরুদ্ধে জরুরি পদক্ষেপে বাঁচাতে পারে শিশুদের ভবিষ্যৎ।
বিশেষজ্ঞদের মতে, সিসা একটি বিষাক্ত ভারী ধাতু। যা নীরবে লাখ লাখ মানুষের, বিশেষ করে শিশু ও গর্ভবতী মহিলাদের স্বাস্থ্যের ক্ষতি করছে। রক্তে সিসার কোনো নিরাপদ মাত্রা নেই। তবে যুক্তরাষ্ট্রের সেন্টারস ফর ডিজিজি কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশন (সিডিসি) শিশুদের রক্তে প্রতি লিটারে ৩৫ মাইক্রোগ্রামেরও বেশি সিসার উপস্থিতি উদ্বেগজনক বলে মনে করে।
গবেষণা অনুষ্ঠানে ইউনিসেফের দেয়া তথ্যানুযায়ী, বিশ্বজুড়ে সিসাদূষণে আক্রান্ত দেশের তালিকায় বাংলাদেশ চতুর্থ অবস্থানে রয়েছে। যেখানে প্রায় ৩ কোটি ৬০ লাখ শিশু রক্তে উচ্চমাত্রার সিসা নিয়ে জীবন ধারণ করছে। সিসার অন্য উৎসগুলোর মধ্যে রয়েছে, ঘরের ভেতরে ধূমপান, দূষিত ধূলিকণা, সিসাযুক্ত প্রসাধনী সামগ্রী ও রান্নার পাত্র।
বৃহস্পতিবার, ০৭ আগস্ট ২০২৫
দুই থেকে চার বছর বয়সী পাঁচশ’ শিশুর ওপর ঢাকার এক গবেষণা করা হয়। সেখানে প্রতিটি শিশুর রক্তে সিসার উপস্থিতি পাওয়া গেছে। এতে সিসার মাত্রা ৬৭ মাইক্রোগ্রাম/লিটারের বেশি সিসা ছিল।
আইসিডিডিআর,বির সায়েয়ন্টিস্ট ডা. জেসমিন সুলতানা ২০২২ সাল থেকে ২০২৪ সালের মধ্যে পরিচালিত গবেষণায় এই ফলাফল তুলে ধরেন।
গবেষণায় চিহ্নিত সিসানির্ভর শিল্প স্থাপনার ১ কিলোমিটারের মধ্যে বসবাসকারী শিশুদের রক্তে সিসার মাত্রা ছিল ৫ কিলোমিটারের বেশি দূরত্বে বসবাসকারী শিশুদের তুলনায় ৪৩ ভাগ বেশি।
অপর দিকে, গবেষণায় আশার আলো দেখিয়েছেন আইসিডিডিআর,বির প্রজেক্ট কোঅডিনেটর ডা. মাহবুবুর রহমান। তিনি গত ১০ বছরের সিসা সম্পর্কিত গবেষণার ফলাফল তুলে ধরে বলেন, সিসাদূষণের প্রধান উৎসগুলোর মধ্যে রয়েছে, সিসা ও ব্যাটারি সম্পর্কিত শিল্প কারখানা, সিসাযুক্ত রং এবং প্রসাধনী ও রান্নার পাত্রের মতো নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্র।
তার গবেষণার আশার কথা হলো, রান্নায় ব্যবহৃত হলুদে ভেজাল (লেড ক্রোমেট দিয়ে পালিশ করা) প্রতিরোধে বেশ সফলতা এসেছে। আইসিডিডিআর,বি ও স্ট্যানফোর্ডের একটি গবেষণা দল গর্ভবতী মহিলাদের রক্তে সিসাদূষণের অন্যতম উৎস হিসেবে রান্নার হলুদের গুঁড়াকে চিহ্নিত করার পর বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের নেতৃত্বে এই বিষয়ে সচেতনতামূলক কার্যক্রম ও আইন প্রয়োগের উদ্যোগ নেয়া হয়। এর ফলে ২০১৯ সালে যেখানে শতকরা ৪৭ ভাগ রান্নার হলুদের নমুনায় সিসা পাওয়া যেত, তা কমে ২০২১ সালে শূন্যের কাছাকাছি চলে আসছে।
শিশুদের সিসাদূষণ থেকে বাঁচাতে জরুরি পদক্ষেপ নেয়ার আহ্বান জানিয়ে আইসিডিডিআর,বির গতকাল বুধবার বাংলাদেশে সিসাদূষণ প্রতিরোধ: অগ্রগতি ও চ্যালেঞ্জ শীর্ষক এক আলোচনা সভার আয়োজন করেছিল। সেখানে সভার মূল উদ্দেশ্য ছিল বাংলাদেশে সিসাদূষণের ব্যাপকতা ও এর ভয়াবহতা তুলে ধরা এবং এর থেকে মুক্তির উপায় নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে। সেখানে গবেষকরা তাদের গবেষণার এসব তথ্য তুলে ধরেন।
অনুষ্ঠানে যুক্তরাষ্ট্রের স্ট্যানফোর্ড ইউনিভার্সিটির মেডিসিন বিভাগের অধ্যাপক এবং আইসিডিডিআর,বির সাবেক পরিচালক প্রফেসর স্টিব লুবি বলেন, সিসা শিশুদের মস্তিষ্কের বিকাশকে মারাত্মকভাবে ব্যাহত করে। যার ফলে তাদের বুদ্ধিবৃত্তির সক্ষমতা (আইকিউ) ও শেখার ক্ষমতা হ্রাস পায়।
এর প্রভাব পরবর্তী প্রজন্মের ওপরও স্থায়ীভাবে থেকে যেতে পারে। আমরা নিঃশ্বাসের সঙ্গে যে বাতাস নেই, যে খাবার খাই, যে দূষিত মাটি বা ধূলিকণা স্পর্শ করি। এমনকি গর্ভাবস্থায় মায়ের প্লাসেন্টার মাধ্যমে সিসা আমাদের শরীরে প্রবেশ করে। বিভিন্ন উপায়ে সিসা প্রবেশ করে বলে এর সংস্পর্শ থেকে বাঁচা প্রায় অসম্ভব, যদি না আমরা পরিবেশে এর মূল উৎসগুলো, বিশেষ করে যেগুলো আমাদের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে, তা বন্ধ করি।
গবেষকরা বলেন, সিসানির্ভর শিল্প স্থাপনা, যেমন: লেড-অ্যাসিড, ব্যাটারি বানানো বা রিসাইক্লিং, করার কারখানা বা স্থান, অথবা যেসব কারখানা বা স্থাপনায় সিসা গলানো বা পোড়ানো হয়। এগুলোর বিরুদ্ধে দ্রুত ব্যবস্থা নেয়ার আহ্বান জানান।
কারণ এই প্রতিষ্ঠানগুলোকে সরিয়ে নিলে বা দূষণ কমানোর ব্যবস্থা নিলে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকার শিশুদের সিসাদূষণ থেকে বাঁচানো সম্ভব। পরিচালক তাহমিদ আহমেদ বলেন, সিসার বিষক্রিয়া নীরবে আমাদের শিশুদের ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা কেড়ে নিচ্ছে। এটি তাদের মস্তিষ্কের পরিপূর্ণ বিকাশ বাধাগ্রস্ত করে। দেহে পুষ্টির ঘাটতি সৃষ্টি করে। যা বাংলাদেশের ভবিষ্যৎকে পিছিয়ে দেয়। তাই সিসা নিঃসরণকারী উৎসগুলো বন্ধ করতে হবে, যাতে প্রতিটি শিশু সুস্থ ও বৃদ্ধিদীপ্ত হয়ে বেড়ে উঠে দেশের উন্নয়নে সক্রিয় ভূমিকা রাখতে পারে।
অনুষ্ঠানে আইসিডিডিআর,বির হেলথ সিস্টেমস অ্যান্ড পপুলেশন স্টাডিজের সিনিয়র ডিরেক্টর সারাহ স্যালগুয়ে বলেন, সিসাদূঘণ বাংলাদেশের একটি বড় জনস্বাস্থ্য সমস্যা। যা প্রায়ই আমাদের নজর এড়িয়ে যায়। দূষণ সৃষ্টিকারী কারখানার আশপাশের শিশুরা সবচেয়ে বড় ভুক্তভোগী। তাই ঢাকায় সিসা নির্গমণকারী শিল্প-স্থাপনার বিরুদ্ধে জরুরি পদক্ষেপে বাঁচাতে পারে শিশুদের ভবিষ্যৎ।
বিশেষজ্ঞদের মতে, সিসা একটি বিষাক্ত ভারী ধাতু। যা নীরবে লাখ লাখ মানুষের, বিশেষ করে শিশু ও গর্ভবতী মহিলাদের স্বাস্থ্যের ক্ষতি করছে। রক্তে সিসার কোনো নিরাপদ মাত্রা নেই। তবে যুক্তরাষ্ট্রের সেন্টারস ফর ডিজিজি কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশন (সিডিসি) শিশুদের রক্তে প্রতি লিটারে ৩৫ মাইক্রোগ্রামেরও বেশি সিসার উপস্থিতি উদ্বেগজনক বলে মনে করে।
গবেষণা অনুষ্ঠানে ইউনিসেফের দেয়া তথ্যানুযায়ী, বিশ্বজুড়ে সিসাদূষণে আক্রান্ত দেশের তালিকায় বাংলাদেশ চতুর্থ অবস্থানে রয়েছে। যেখানে প্রায় ৩ কোটি ৬০ লাখ শিশু রক্তে উচ্চমাত্রার সিসা নিয়ে জীবন ধারণ করছে। সিসার অন্য উৎসগুলোর মধ্যে রয়েছে, ঘরের ভেতরে ধূমপান, দূষিত ধূলিকণা, সিসাযুক্ত প্রসাধনী সামগ্রী ও রান্নার পাত্র।