alt

জাতীয়

আগামী সপ্তাহে জুলাই সনদ ‘বাস্তবায়ন’ নিয়ে আবার বসবে ঐকমত্য কমিশন

সংবাদ অনলাইন রিপোর্ট : শুক্রবার, ০৮ আগস্ট ২০২৫

আগামী সপ্তাহ থেকে আবারও আলোচনা শুরু করবে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন। এবার আলোচনা হবে জুলাই সনদের বাধ্যবাধকতা নিশ্চিত করা ও বাস্তবায়নের পদ্ধতি নির্ধারণের বিষয়। তবে এবার বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে প্রথম আলোচনা হবে। তারপর রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনায় বসবে কমিশন। এ আলোচনা হবে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে তৃতীয় পর্বের আলোচনা।

শুক্রবার,(৮ আগস্ট ২০২৫) ঐকমত্য কমিশনের এক সংবাদ সম্মেলনে এ কথা জানান, কমিশনের সহ-সভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ। জাতীয় সংসদের এলডি হলে জুলাই সনদ নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে প্রায় সাড়ে পাঁচ মাসের আলোচনায় কতটুকু অগ্রগতি হলো, তা জানাতে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের বর্ষপূর্তির দিনে এ সংবাদ সম্মেলন আয়োজন করে ঐকমত্য কমিশন।

১৬৫টি প্রস্তাবের মধ্যে

৬২টিতে ঐকমত্য

সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, প্রথম পর্বের আলোচনায় ১৬৫টি প্রস্তাবের মধ্যে ৬২টিতে রাজনৈতিক ঐকমত্য অর্জিত হয়েছে। যার কিছু কিছু সরকার এরই মধ্যে বাস্তবায়ন করেছে (অধ্যাদেশ, নীতি ও নির্বাহী সিদ্ধান্তের মাধ্যমে)। দ্বিতীয় পর্বের সংলাপে গুরুত্বপূর্ণ ২০টি সাংবিধানিক বিষয়ে আলোচনা হয়। সেখানে ১১টি বিষয়ে সব দলের সমর্থনে জাতীয় ঐকমত্য এবং বাকি ৯টি বিষয়ে নোট অব ডিসেন্টসহ (ভিন্নমত) সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। এ ৯ বিষয়ে কোন দলের কী ভিন্নমত রয়েছে তা উল্লেখ থাকবে।

জাতীয় ঐকমত্য কমিশন গত ১৫ ফেব্রুয়ারি থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে তার কাজ শুরু করে। ২৮ ফেব্রুয়ারির মধ্যে ছয়টি কমিশনের প্রতিবেদনের ছাপানো কপি সব রাজনৈতিক দলের কাছে পাঠানো হয়। এরপর ৫ মার্চ পুলিশ সংস্কার কমিশন বাদে পাঁচটি কমিশনের প্রতিবেদনের গুরুত্বপূর্ণ ১৬৬টি সুপারিশ স্প্রেডশিট আকারে ৩৮টি রাজনৈতিক দল ও জোটের কাছে মতামতের জন্য পাঠানো হয়। এর মধ্যে সংবিধান সংস্কারবিষয়ক ৭০টি, নির্বাচন সংস্কারবিষয়ক ২৭টি, বিচার বিভাগসংক্রান্ত ২৩টি, জনপ্রশাসনসংক্রান্ত ২৬টি ও দুর্নীতি দমন কমিশনবিষয়ক ২৭টি সুপারিশ ছিল। পুলিশ সংস্কার কমিশনের সুপারিশগুলো সরাসরি প্রশাসনিক সিদ্ধান্তে বাস্তবায়নযোগ্য হওয়ায় সেগুলো স্প্রেডশিটে রাখা হয়নি। প্রথম পর্যায়ের আলোচনায় রাজনৈতিক দলগুলোর ব্যাপক মতভিন্নতার কারণে ২৫টি বিষয়ে আলোচনা হয়নি।

ভিন্নমত ছাড়া যেসব প্রস্তাব গৃহীত

ঐকমত্য কমিশনের আলোচনায় কোনো দলের কোনোরকম ভিন্নমত ছিল না- এমন ১১টি প্রস্তাব কমিশনের আলোচনায় গৃহীত হয়েছে। প্রস্তাবগুলো হলো- (১) সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি; (২) নির্বাচনী এলাকার সীমানা নির্ধারণ; (৩) রাষ্ট্রপতির ক্ষমা-সম্পর্কিত বিধান; (৪) বিচার বিভাগ বিকেন্দ্রীকরণ- (ক) সুপ্রিম কোর্টের বিকেন্দ্রীকরণ, (খ) উপজেলা পর্যায়ে অধস্তন আদালতের সম্প্রসারণ; (৫) জরুরি অবস্থা ঘোষণা; (৬) প্রধান বিচারপতি নিয়োগ; (৭) সংবিধান সংশোধন; (৮) প্রধানমন্ত্রীর মেয়াদকাল; (৯) নির্বাচন কমিশন গঠন; (১০) পুলিশ কমিশন গঠন এবং (১১) নাগরিকের মৌলিক অধিকার সম্প্রসারণ সম্পর্কিত প্রস্তাব।

ভিন্নমতসহ যেসব প্রস্তাব গৃহীত

বিভিন্ন দলের বক্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে ঐকমত্য কমিশনের আলোচনায় কয়েকটি রাজনৈতিক দলের পক্ষ থেকে ভিন্নমত দেয়া হয়েছে। দলগুল্যোর বিভিন্ন রকম ভিন্নমতসহ ৯টি প্রস্তাব কমিশনের বৈঠকে গৃহীত হয়েছে। সে প্রস্তাবগুলো হলো- (১) সংবিধানের অনুচ্ছেদ ৭০ সংশোধন; (২) প্রধানমন্ত্রীর একাধিক পদে থাকার বিধান, (৩) সরকারি কর্ম কমিশন, মহাহিসাব নিরীক্ষক ও নিয়ন্ত্রক, দুর্নীতি দমন কমিশন এবং ন্যায়পাল নিয়োগের বিধান-সম্পর্কিত, (৪) সংসদে নারী প্রতিনিধিত্ব (সংখ্যা বৃদ্ধি, নির্বাচনপদ্ধতি ইত্যাদি), (৫) দ্বিকক্ষবিশিষ্ট পার্লামেন্ট (উচ্চকক্ষের গঠন, সদস্য নির্বাচনের পদ্ধতি, এখতিয়ার ইত্যাদি), (৬) রাষ্ট্রপতি নির্বাচনপদ্ধতি; (৭) তত্ত্বাবধায়ক সরকার; (৮) রাষ্ট্রের মূলনীতি এবং (৯) রাষ্ট্রপতির ক্ষমতা ও দায়িত্ব সম্পর্কিত প্রস্তাব।

গত বছরে ৮ আগস্ট অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেয়ার দুই মাস পর অক্টোবরে সংবিধান, নির্বাচনব্যবস্থা, বিচার বিভাগ, দুর্নীতি দমন কমিশন, প্রশাসন ও পুলিশ সংস্কার কমিশন গঠন করে অন্তর্বর্তী সরকার। গত ফেব্রুয়ারিতে কমিশনগুলো প্রতিবেদন দেয়। পরে সংস্কার প্রশ্নে ঐকমত্য তৈরির লক্ষ্যে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন গঠন করা হয়। এরপর ছয়টি সংস্কার কমিশনের সুপারিশগুলো দুই ভাগে ভাগ করা হয়। একটি হলো- ‘আশু বাস্তবায়নযোগ্য’ সুপারিশ, সেগুলো বাস্তবায়নে কাজ চলছে। অন্যটি হলো- ১৬৬টি গুরুত্বপূর্ণ সুপারিশ। এগুলো নিয়ে দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা করেছে ঐকমত্য কমিশন। প্রথম পর্বে ৩৩টি দলের সঙ্গে (২০ মার্চ-১৯ মে) আলাদাভাবে আলোচনা হয়। গত ৩ জুন থেকে ৩১ জুলাই পর্যন্ত দ্বিতীয় পর্বে ৩০টি দলের সঙ্গে বিষয়ভিত্তিক আলোচনা করে ঐকমত্য কমিশন।

তৃতীয় পর্বে জুলাই জাতীয় সনদের বাস্তবায়ন পদ্ধতি নির্ধারণে বিশেষজ্ঞ ও রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা করবে কমিশন। পরে সনদে রাজনৈতিক দলগুলোর সই নেয়া হবে। এর মধ্য দিয়ে পূর্ণাঙ্গ রূপ পাবে জুলাই জাতীয় সনদ। দুই পর্যায়ে ঐকমত্য কশিনের সংলাপে মতৈক্য হওয়া প্রস্তাবগুলো নিয়ে জুলাই সনদ বা জাতীয় সনদ চূড়ান্ত করার কাজ চলছে।

গত নভেম্বরে দ্বিতীয় ধাপে গঠিত শ্রম, গণমাধ্যম, স্থানীয় সরকার, নারী ও স্বাস্থ্য খাতসংক্রান্ত সংস্কার কমিশনের সুপারিশ নিয়ে ঐকমত্য কমিশনে সংলাপে আলোচনা হয়নি। এসব কমিশনের সুপারিশ জাতীয় সনদে অন্তর্ভুক্ত করতে মুহাম্মদ ইউনূসকে আহ্বান জানিয়েছেন কমিশনগুলোর প্রধানরা।

গণঅভ্যুত্থানে উল্লেখযোগ্যসংখ্যক শ্রমিক, নারী ও সাংবাদিক প্রাণ দেয়ার কথা তুলে ধরে পাঁচ কমিশনের প্রধানরা বলেছেন, তাদের আত্মত্যাগ থেকে যে আশা ও স্বপ্ন জন্ম নিয়েছে, তা উপেক্ষিত হলে, ব্যাপক ‘হতাশা ও ক্ষোভের’ জন্ম দিতে পারে। তাদের সুপারিশের আলোকে ‘প্রয়োজনীয়’ সংস্কারসমূহকে বিবেচনায় নিয়ে পদক্ষেপ নিতে আহ্বান জানিয়েছেন তারা।

৫ কমিশন প্রধানরা হলেন- শ্রম সংস্কার কমিশন প্রধান সৈয়দ সুলতান উদ্দিন আহমেদ, নারীবিষয়ক সংস্কার কমিশন প্রধান শিরীন পারভিন হক, স্থানীয় সরকার সংস্কার কমিশন প্রধান তোফায়েল আহমেদ, স্বাস্থ্য খাত সংস্কার কমিশন প্রধান জাতীয় অধ্যাপক এ কে আজাদ খান ও গণমাধ্যম সংস্কার কমিশন প্রধান কামাল আহমেদ।

তারা বলেছেন, জাতীয় সনদে গণমাধ্যম, নারী, শ্রম, স্বাস্থ্য ও স্থানীয় সরকারবিষয়ক সংস্কারসমূহ অন্তর্ভুক্ত না হলে রাজনৈতিক দলগুলো ভবিষ্যতে তা ‘বাতিল বা উপেক্ষা’ করার সুযোগ পাবে।

*সহ-সভাপতি আলী রিয়াজের বক্তব্য

শুক্রবার জাতীয় সংসদের এলডি হলে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সংবাদ সম্মেলনে কমিশনের সহ-সভাপতি আলী রীয়াজ বলেন, ‘ঐকমত্যের ভিত্তিতে রচিত এবং প্রত্যাশিত স্বাক্ষরিত সনদের বাধ্যবাধকতা নিশ্চিত করা এবং বাস্তবায়নের পদ্ধতি কী হবে, তা রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে নির্ধারণ করা দরকার। সেই লক্ষ্যে কমিশন এ বিষয়ে বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে আগামী সপ্তাহে আলোচনা করবে। ওই আলোচনার আলোকেই রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে পরবর্তী পর্যায়ের আলোচনায় বসবে কমিশন। আশা করা যায় যে, এই প্রক্রিয়ায় স্বল্প সময়ের মধ্যেই উপযুক্ত সিদ্ধান্তে পৌঁছানো সম্ভব হবে।’

আলী রীয়াজ আরও বলেন, ‘রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে গত দুই পর্বের আলোচনায় কাক্সিক্ষত জাতীয় সনদ প্রণয়নের লক্ষ্যে তাৎপর্যপূর্ণসংখ্যক সুপারিশ বা সংস্কার ব্যাপারে জাতীয় ঐকমত্য সম্ভব হয়েছে। আশা করা যায়, এই প্রক্রিয়ায় স্বল্প সময়ের মধ্যে একটি উপযুক্ত সিদ্ধান্তে পৌঁছানো সম্ভব হবে।’

সংবাদ সম্মেলনে কমিশনের সদস্য বদিউল আলম মজুমদার, বিচারপতি মো. এমদাদুল হক, ইফতেখারুজ্জামান, সফর রাজ হোসেন, মো. আইয়ুব মিয়া ও প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মনির হায়দার উপস্থিত ছিলেন।

ছবি

চব্বিশের গণঅভ্যুত্থানে রাজধানীতে ৭০৭ মামলা, গ্রেপ্তার ৫,০৭৯ জন

ছবি

কর্মচারীকে মালিক সাজিয়ে ৪৮ কোটি টাকা লোপাট

ছবি

৩ বিভাগে ভারী বৃষ্টির পূর্বাভাস

ছবি

ডেঙ্গুতে ২৪ ঘণ্টায় হাসপাতালে ভর্তি ১৯০ জন

ছবি

ভয়াবহ ভাঙনে নিঃস্ব শরণখোলার শত শত ‘পরিবার’

ছবি

চাঁদপুরে কম দামে মিলছে সাগরের ইলিশ, অপরিবর্তিত পদ্মা-মেঘনার বড় ইলিশ

ছবি

‘হিট প্রকল্পে’ অনিয়ম ও পক্ষপাতের অভিযোগ শাবিপ্রবির শিক্ষকদের

ছবি

রাজনীতি নিষিদ্ধ সত্ত্বেও ছাত্রদলের একযোগে ১৮ হল কমিটি

ছবি

বেগমগঞ্জে জলাবদ্ধতা: পানিবন্দী এখনও হাজারো পরিবার

ছবি

পার্বত্য চট্টগ্রামের ১০০ স্কুলে শিগগির স্টারলিংক ইন্টারনেট চালু

ছবি

কলকাতায় আওয়ামী লীগের ‘পার্টি অফিস’, চলছে ‘কার্যক্রম’

ছবি

লালবাগে বাসার নিচ থেকে রক্তাক্ত কলেজ ছাত্রকে উদ্ধার, পরে মৃত্যু

ছবি

জামায়াত কি ‘বিএনপিবিরোধী’ জোট গঠনে নেমেছে?

ছবি

পিআর পদ্ধতি নির্বাচন বানচালের ষড়যন্ত্র হতে পারে, সন্দেহ হাফিজের

ছবি

তেজগাঁও কলেজে ছাত্রদলের বিরুদ্ধে এনসিপি কর্মীদের মারধরের অভিযোগ

ছবি

কোপানোর ‘ভিডিও ধারণ করায়’ খুন হন সাংবাদিক তুহিন

তামাবিল দিয়ে ভারত থেকে দেশে ফিরলেন ২২ বাংলাদেশি

ছবি

সকাল থেকেই বৃষ্টি, ভারী বর্ষণের শঙ্কা তিন বিভাগে

ছবি

তিস্তার ভাঙন: দিশেহারা পীরগাছাবাসী, একপাশে জিও ব্যাগ, অন্যদিকে ড্রেজিং!

‘অসম্পূর্ণ’ জুলাই ঘোষণাপত্রের ‘নীরব প্রতিবাদেই’ কক্সবাজার: হাসনাত

কুড়িগ্রামে তরুণী ধর্ষণ, মূল আসামি বাপ্পী গ্রেপ্তার

গবেষণা: পাঁচশ’ শিশুর সবার রক্তেই সিসা!

এএসপি পরিচয়ে কে বি কনভেনশনে ঢুকেছে অন্য কেউ: সুমাইয়া

‘রাজনীতির ভবিষ্যৎ ভাবতে’ সাগর পাড়ে গিয়েছিলেন পাটওয়ারী

বেরোবির সাবেক উপাচার্য কলিমউল্লাহ কারাগারে

ছবি

বিপর্যস্ত তথ্য আপা: ৭২ দিনের মাথায় স্বস্তির আশ্বাস দিলো সরকার

ছবি

মুক্তেশ্বরী নদী ভরাট করে প্লট বিক্রির সাইনবোর্ড!

ছবি

মানিলন্ডারিং : ১০ বছরের সাজা থেকে জি কে শামীম খালাস

কার্নিশে ঝুলে থাকা তরুণকে গুলি: ট্রাইব্যুনালে অভিযোগ দাখিল

ছবি

বক্তব্য শুনতে চাইলো আদালত, খায়রুল হক বললেন না কিছুই

ছবি

নির্বিচারে গ্রেপ্তার ও বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের ‘পুনরাবৃত্তি’ দেখছে আসক

ইউনূস সরকারের এক বছরের ‘সাফল্য’ তুলে ধরলেন প্রেস সচিব

ছবি

ডিসেম্বরের দ্বিতীয় সপ্তাহে জাতীয় নির্বাচনের তফসিল: ইসি সানাউল্লাহ

ছবি

অন্তর্বর্তী সরকারের দ্বিতীয় অধ্যায় শুরু, প্রধান কাজ ‘সুন্দর’ নির্বাচন: মুহাম্মদ ইউনূস

গণঅভ্যুত্থানে নিহত অজ্ঞাত ছয়জনকে এক বছর পর দাফন

ছবি

বসুন্ধরায় নিষিদ্ধ ছাত্রলীগের ‘গোপন বৈঠক’: মেজর সাদিকুলের স্ত্রী জাফরিন ৫ দিনের রিমান্ডে

tab

জাতীয়

আগামী সপ্তাহে জুলাই সনদ ‘বাস্তবায়ন’ নিয়ে আবার বসবে ঐকমত্য কমিশন

সংবাদ অনলাইন রিপোর্ট

শুক্রবার, ০৮ আগস্ট ২০২৫

আগামী সপ্তাহ থেকে আবারও আলোচনা শুরু করবে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন। এবার আলোচনা হবে জুলাই সনদের বাধ্যবাধকতা নিশ্চিত করা ও বাস্তবায়নের পদ্ধতি নির্ধারণের বিষয়। তবে এবার বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে প্রথম আলোচনা হবে। তারপর রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনায় বসবে কমিশন। এ আলোচনা হবে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে তৃতীয় পর্বের আলোচনা।

শুক্রবার,(৮ আগস্ট ২০২৫) ঐকমত্য কমিশনের এক সংবাদ সম্মেলনে এ কথা জানান, কমিশনের সহ-সভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ। জাতীয় সংসদের এলডি হলে জুলাই সনদ নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে প্রায় সাড়ে পাঁচ মাসের আলোচনায় কতটুকু অগ্রগতি হলো, তা জানাতে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের বর্ষপূর্তির দিনে এ সংবাদ সম্মেলন আয়োজন করে ঐকমত্য কমিশন।

১৬৫টি প্রস্তাবের মধ্যে

৬২টিতে ঐকমত্য

সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, প্রথম পর্বের আলোচনায় ১৬৫টি প্রস্তাবের মধ্যে ৬২টিতে রাজনৈতিক ঐকমত্য অর্জিত হয়েছে। যার কিছু কিছু সরকার এরই মধ্যে বাস্তবায়ন করেছে (অধ্যাদেশ, নীতি ও নির্বাহী সিদ্ধান্তের মাধ্যমে)। দ্বিতীয় পর্বের সংলাপে গুরুত্বপূর্ণ ২০টি সাংবিধানিক বিষয়ে আলোচনা হয়। সেখানে ১১টি বিষয়ে সব দলের সমর্থনে জাতীয় ঐকমত্য এবং বাকি ৯টি বিষয়ে নোট অব ডিসেন্টসহ (ভিন্নমত) সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। এ ৯ বিষয়ে কোন দলের কী ভিন্নমত রয়েছে তা উল্লেখ থাকবে।

জাতীয় ঐকমত্য কমিশন গত ১৫ ফেব্রুয়ারি থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে তার কাজ শুরু করে। ২৮ ফেব্রুয়ারির মধ্যে ছয়টি কমিশনের প্রতিবেদনের ছাপানো কপি সব রাজনৈতিক দলের কাছে পাঠানো হয়। এরপর ৫ মার্চ পুলিশ সংস্কার কমিশন বাদে পাঁচটি কমিশনের প্রতিবেদনের গুরুত্বপূর্ণ ১৬৬টি সুপারিশ স্প্রেডশিট আকারে ৩৮টি রাজনৈতিক দল ও জোটের কাছে মতামতের জন্য পাঠানো হয়। এর মধ্যে সংবিধান সংস্কারবিষয়ক ৭০টি, নির্বাচন সংস্কারবিষয়ক ২৭টি, বিচার বিভাগসংক্রান্ত ২৩টি, জনপ্রশাসনসংক্রান্ত ২৬টি ও দুর্নীতি দমন কমিশনবিষয়ক ২৭টি সুপারিশ ছিল। পুলিশ সংস্কার কমিশনের সুপারিশগুলো সরাসরি প্রশাসনিক সিদ্ধান্তে বাস্তবায়নযোগ্য হওয়ায় সেগুলো স্প্রেডশিটে রাখা হয়নি। প্রথম পর্যায়ের আলোচনায় রাজনৈতিক দলগুলোর ব্যাপক মতভিন্নতার কারণে ২৫টি বিষয়ে আলোচনা হয়নি।

ভিন্নমত ছাড়া যেসব প্রস্তাব গৃহীত

ঐকমত্য কমিশনের আলোচনায় কোনো দলের কোনোরকম ভিন্নমত ছিল না- এমন ১১টি প্রস্তাব কমিশনের আলোচনায় গৃহীত হয়েছে। প্রস্তাবগুলো হলো- (১) সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি; (২) নির্বাচনী এলাকার সীমানা নির্ধারণ; (৩) রাষ্ট্রপতির ক্ষমা-সম্পর্কিত বিধান; (৪) বিচার বিভাগ বিকেন্দ্রীকরণ- (ক) সুপ্রিম কোর্টের বিকেন্দ্রীকরণ, (খ) উপজেলা পর্যায়ে অধস্তন আদালতের সম্প্রসারণ; (৫) জরুরি অবস্থা ঘোষণা; (৬) প্রধান বিচারপতি নিয়োগ; (৭) সংবিধান সংশোধন; (৮) প্রধানমন্ত্রীর মেয়াদকাল; (৯) নির্বাচন কমিশন গঠন; (১০) পুলিশ কমিশন গঠন এবং (১১) নাগরিকের মৌলিক অধিকার সম্প্রসারণ সম্পর্কিত প্রস্তাব।

ভিন্নমতসহ যেসব প্রস্তাব গৃহীত

বিভিন্ন দলের বক্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে ঐকমত্য কমিশনের আলোচনায় কয়েকটি রাজনৈতিক দলের পক্ষ থেকে ভিন্নমত দেয়া হয়েছে। দলগুল্যোর বিভিন্ন রকম ভিন্নমতসহ ৯টি প্রস্তাব কমিশনের বৈঠকে গৃহীত হয়েছে। সে প্রস্তাবগুলো হলো- (১) সংবিধানের অনুচ্ছেদ ৭০ সংশোধন; (২) প্রধানমন্ত্রীর একাধিক পদে থাকার বিধান, (৩) সরকারি কর্ম কমিশন, মহাহিসাব নিরীক্ষক ও নিয়ন্ত্রক, দুর্নীতি দমন কমিশন এবং ন্যায়পাল নিয়োগের বিধান-সম্পর্কিত, (৪) সংসদে নারী প্রতিনিধিত্ব (সংখ্যা বৃদ্ধি, নির্বাচনপদ্ধতি ইত্যাদি), (৫) দ্বিকক্ষবিশিষ্ট পার্লামেন্ট (উচ্চকক্ষের গঠন, সদস্য নির্বাচনের পদ্ধতি, এখতিয়ার ইত্যাদি), (৬) রাষ্ট্রপতি নির্বাচনপদ্ধতি; (৭) তত্ত্বাবধায়ক সরকার; (৮) রাষ্ট্রের মূলনীতি এবং (৯) রাষ্ট্রপতির ক্ষমতা ও দায়িত্ব সম্পর্কিত প্রস্তাব।

গত বছরে ৮ আগস্ট অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেয়ার দুই মাস পর অক্টোবরে সংবিধান, নির্বাচনব্যবস্থা, বিচার বিভাগ, দুর্নীতি দমন কমিশন, প্রশাসন ও পুলিশ সংস্কার কমিশন গঠন করে অন্তর্বর্তী সরকার। গত ফেব্রুয়ারিতে কমিশনগুলো প্রতিবেদন দেয়। পরে সংস্কার প্রশ্নে ঐকমত্য তৈরির লক্ষ্যে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন গঠন করা হয়। এরপর ছয়টি সংস্কার কমিশনের সুপারিশগুলো দুই ভাগে ভাগ করা হয়। একটি হলো- ‘আশু বাস্তবায়নযোগ্য’ সুপারিশ, সেগুলো বাস্তবায়নে কাজ চলছে। অন্যটি হলো- ১৬৬টি গুরুত্বপূর্ণ সুপারিশ। এগুলো নিয়ে দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা করেছে ঐকমত্য কমিশন। প্রথম পর্বে ৩৩টি দলের সঙ্গে (২০ মার্চ-১৯ মে) আলাদাভাবে আলোচনা হয়। গত ৩ জুন থেকে ৩১ জুলাই পর্যন্ত দ্বিতীয় পর্বে ৩০টি দলের সঙ্গে বিষয়ভিত্তিক আলোচনা করে ঐকমত্য কমিশন।

তৃতীয় পর্বে জুলাই জাতীয় সনদের বাস্তবায়ন পদ্ধতি নির্ধারণে বিশেষজ্ঞ ও রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা করবে কমিশন। পরে সনদে রাজনৈতিক দলগুলোর সই নেয়া হবে। এর মধ্য দিয়ে পূর্ণাঙ্গ রূপ পাবে জুলাই জাতীয় সনদ। দুই পর্যায়ে ঐকমত্য কশিনের সংলাপে মতৈক্য হওয়া প্রস্তাবগুলো নিয়ে জুলাই সনদ বা জাতীয় সনদ চূড়ান্ত করার কাজ চলছে।

গত নভেম্বরে দ্বিতীয় ধাপে গঠিত শ্রম, গণমাধ্যম, স্থানীয় সরকার, নারী ও স্বাস্থ্য খাতসংক্রান্ত সংস্কার কমিশনের সুপারিশ নিয়ে ঐকমত্য কমিশনে সংলাপে আলোচনা হয়নি। এসব কমিশনের সুপারিশ জাতীয় সনদে অন্তর্ভুক্ত করতে মুহাম্মদ ইউনূসকে আহ্বান জানিয়েছেন কমিশনগুলোর প্রধানরা।

গণঅভ্যুত্থানে উল্লেখযোগ্যসংখ্যক শ্রমিক, নারী ও সাংবাদিক প্রাণ দেয়ার কথা তুলে ধরে পাঁচ কমিশনের প্রধানরা বলেছেন, তাদের আত্মত্যাগ থেকে যে আশা ও স্বপ্ন জন্ম নিয়েছে, তা উপেক্ষিত হলে, ব্যাপক ‘হতাশা ও ক্ষোভের’ জন্ম দিতে পারে। তাদের সুপারিশের আলোকে ‘প্রয়োজনীয়’ সংস্কারসমূহকে বিবেচনায় নিয়ে পদক্ষেপ নিতে আহ্বান জানিয়েছেন তারা।

৫ কমিশন প্রধানরা হলেন- শ্রম সংস্কার কমিশন প্রধান সৈয়দ সুলতান উদ্দিন আহমেদ, নারীবিষয়ক সংস্কার কমিশন প্রধান শিরীন পারভিন হক, স্থানীয় সরকার সংস্কার কমিশন প্রধান তোফায়েল আহমেদ, স্বাস্থ্য খাত সংস্কার কমিশন প্রধান জাতীয় অধ্যাপক এ কে আজাদ খান ও গণমাধ্যম সংস্কার কমিশন প্রধান কামাল আহমেদ।

তারা বলেছেন, জাতীয় সনদে গণমাধ্যম, নারী, শ্রম, স্বাস্থ্য ও স্থানীয় সরকারবিষয়ক সংস্কারসমূহ অন্তর্ভুক্ত না হলে রাজনৈতিক দলগুলো ভবিষ্যতে তা ‘বাতিল বা উপেক্ষা’ করার সুযোগ পাবে।

*সহ-সভাপতি আলী রিয়াজের বক্তব্য

শুক্রবার জাতীয় সংসদের এলডি হলে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সংবাদ সম্মেলনে কমিশনের সহ-সভাপতি আলী রীয়াজ বলেন, ‘ঐকমত্যের ভিত্তিতে রচিত এবং প্রত্যাশিত স্বাক্ষরিত সনদের বাধ্যবাধকতা নিশ্চিত করা এবং বাস্তবায়নের পদ্ধতি কী হবে, তা রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে নির্ধারণ করা দরকার। সেই লক্ষ্যে কমিশন এ বিষয়ে বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে আগামী সপ্তাহে আলোচনা করবে। ওই আলোচনার আলোকেই রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে পরবর্তী পর্যায়ের আলোচনায় বসবে কমিশন। আশা করা যায় যে, এই প্রক্রিয়ায় স্বল্প সময়ের মধ্যেই উপযুক্ত সিদ্ধান্তে পৌঁছানো সম্ভব হবে।’

আলী রীয়াজ আরও বলেন, ‘রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে গত দুই পর্বের আলোচনায় কাক্সিক্ষত জাতীয় সনদ প্রণয়নের লক্ষ্যে তাৎপর্যপূর্ণসংখ্যক সুপারিশ বা সংস্কার ব্যাপারে জাতীয় ঐকমত্য সম্ভব হয়েছে। আশা করা যায়, এই প্রক্রিয়ায় স্বল্প সময়ের মধ্যে একটি উপযুক্ত সিদ্ধান্তে পৌঁছানো সম্ভব হবে।’

সংবাদ সম্মেলনে কমিশনের সদস্য বদিউল আলম মজুমদার, বিচারপতি মো. এমদাদুল হক, ইফতেখারুজ্জামান, সফর রাজ হোসেন, মো. আইয়ুব মিয়া ও প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মনির হায়দার উপস্থিত ছিলেন।

back to top