সাংবাদিক তুহিন হত্যার বিচার ও সাংবাদিকদের নিরাপত্তার দাবিতে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে সাংবাদিকদের বিক্ষোভ -সংবাদ
গাজীপুরে বাদশা মিয়া নামে এক ব্যক্তিকে প্রকাশ্যে কোপানোর ‘ভিডিও মোবাইলে ধারণ করায়’ খুন হন সাংবাদিক তুহিন বলে জানিয়েছে পুলিশ।
গাজীপুরে জনসম্মুখে কুপিয়ে ও গলা কেটে হত্যা করেছে দুর্বৃত্তরা। গতকাল বৃহস্পতিবার রাতে গাজীপুর মহানগরীর ব্যস্ততম এলাকা চান্দনা চৌরাস্তা মোড় ঈদগাহ মার্কেটের সামনে ওই ঘটনা ঘটে।
নিহত মো. আসাদুজ্জামান তুহিন (৩২) দৈনিক প্রতিদিনের কাগজ পত্রিকার গাজীপুর প্রতিনিধি ছিলেন। সাংবাদিকতার পাশাপাশি ওষুধ কোম্পানির বিক্রয় প্রতিনিধির কাজ করতেন। গাজীপুরের চান্দনায় স্ত্রী ও দুই সন্তান নিয়ে ভাড়া বাসায় থাকতেন তিনি।
ঘটনার বর্ণনা দিয়ে নিহতের বড় ভাই মো. সেলিম ও স্থানীয়রা জানান, গত বুধবার রাতে তুহিন চান্দনা চৌরাস্তা থেকে বাসার দিকে যাচ্ছিলেন। এ সময় ৬-৭ জন যুবক দা ও চাপাতি নিয়ে তাকে জনসম্মুখে ধাওয়া করে। তিনি প্রাণ রক্ষার জন্য দৌড়ে ঈদগাহ মার্কেটের চা, পান বিক্রেতা খায়রুল ইসলামের দোকানে গিয়ে আশ্রয় নেন।
সন্ত্রাসীরা সেখানে গিয়ে তাকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে বুকে, গলায়, কাঁধে ও পিঠে এলোপাতাড়ি কোপায়। এতে তার গলার কিছু অংশ কেটে যায় এবং শরীরের বিভিন্ন অংশ ক্ষতবিক্ষত হয়। ফলে তিনি ঘটনাস্থলেই মারা যান। এরপর সন্ত্রাসীরা সদর্পে সেখান থেকে পালিয়ে যায়। এ সময় স্থানীয় কলকারখানা ছুটি হওয়ায় আশপাশে অনেক লোকজনের উপস্থিত ছিল। কিন্তু ভয়ে কেউ তুহিনকে বাঁচাতে এগিয়ে আসেনি।
নিহত তুহিনের বন্ধু দৈনিক নবচেতনা পত্রিকার গাজীপুর মহানগর প্রতিনিধি মো. শামীম হোসেন বলেন, আমরা এক সঙ্গেই হেঁটে যাচ্ছিলাম। হঠাৎ একজন নারী এক ব্যক্তিকে নাজেহাল করছিল। ওই ব্যক্তি নারীটিকে আঘাত করার সঙ্গে সঙ্গে কয়েকজন দুর্বৃত্ত ধারালো অস্ত্র দিয়ে ওই ব্যক্তিকে আঘাত করে। তখন তিনি দৌড়ে পালিয়ে যান। এ সময় সাংবাদিক তুহিন ঘটনাটি দেখে দৌড়ে সাইডে গিয়ে ভিডিও করছিলেন। পরে দুর্বৃত্তরা ভিডিও ধারণ করার দৃশ্য দেখে ফেলায় তুহিনকে ধাওয়া দেয়। তুহিন দৌড়ে পালানোর সময় দুর্বৃত্তরা তাকে ধরে ফেলে এবং প্রকাশ্যে কুপিয়ে মৃত্যু নিশ্চিত করে পালিয়ে যায়। এ খবর শামিম বাসন থানা পুলিশকে জানায়।
গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের উপ-পুলিশ কমিশনার রবিউল ইসলাম সংবাদকে বলেন, খবর পেয়ে পুলিশ দ্রুত ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়। ঘটনা সম্পর্কে স্থানীয়দের কাছ থেকে তথ্য এবং আশপাশের এলাকা থেকে সিসিটিভির ফুটেজ সংগ্রহ করা হয়।
তিনি জানান, সিসিটিভির ফুটেজ পর্যালোচনা এবং প্রত্যক্ষদর্শীদের বর্ণনা মতে দেখা যায়, সন্ধ্যা ৭টার দিকে বাদশা মিয়া নামে এক ব্যক্তি চান্দনা চৌরাস্তা মোড়ে এক নারীর সঙ্গে বিবাদে জড়ান। এ সময় বাদশা মিয়া ওই নারীকে আঘাত করেন। তখন একদল দুর্বৃত্ত নারীর পক্ষ নিয়ে ধারালো চাপাতি হাতে বাদশা মিয়াকে আঘাত করে। এসময় তিনি দৌড়ে পালিয়ে যান। আর এ ঘটনাটি রাস্তার পাশ থেকে মোবাইলে ভিডিও করছিলেন সাংবাদিক তুহিন।
জিএমপির উপ-পুলিশ কমিশনার আরও বলেন, তখন সন্ত্রাসীরা তুহিনকে দেখে ফেলে ভিডিও মুছে ফেলতে বলে। তুহিন ভিডিও মুছতে অস্বীকার করলে তাকে ধাওয়া দেয়। এসময় তুহিন দৌড়ে পালাতে থাকে। সন্ত্রাসীরাও তার পিছু নিয়ে ধাওয়া করে। একপর্যায়ে চান্দনা চৌরাস্তার মসজিদ মার্কেটের সামনে একটি দোকানের কাছে সন্ত্রাসীরা ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে তুহিনের মৃত্যু নিশ্চিত করে চলে যায়।
পুলিশ জানায়, যে নারীটির সঙ্গে বাদশা মিয়ার বিবাদ হয় সে নারীর নাম গোলাপি। নারীটি একজন কল গার্ল। তিনি মানুষের সঙ্গে কৌশলে সম্পর্ক তৈরি করে সন্ত্রাসীদের মাধ্যমে সব লুটে নেয়। এটি কোনো চাঁদাবাজির ঘটনা নয়। নারীঘটিত একটি ঘটনার ভিডিও ধারণ করার কারণে ক্ষিপ্ত হয়ে সন্ত্রাসীরা তুহিনকে কুপিয়ে খুন করে।
তুহিনের ফেইসবুক আইডি ঘেঁটে দেখা যায়, চাঁদাবাজি সম্পর্কিত কোনো লাইভ, ভিডিও বা কোনো রিপোর্ট তার আইডিতে নেই। তিনি চান্দনা চৌরাস্তা এলাকার বিভিন্ন সমস্যা ও মানুষের দুর্ভোগ নিয়ে বিভিন্ন সময়ে ফেইসবুকে পোস্ট করতেন। গতকাল বৃহস্পতিবার সন্ধ্যার দিকে তিনি চান্দনা চৌরাস্তার এক মিনিট ৫ সেকেন্ডের একটি ভিডিও আপলোড করেন। যার ক্যাপশনে লেখা রয়েছে, ‘যেমন খুশি তেমন রাস্তা পার হওয়ার দৃশ্য’। এর কিছু সময় আগে তিনি আরও দুটি ছবি ও ভিডিও আপলোড দেন।
গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের বাসন থানার ওসি শাহীন খান জানান, মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য গাজীপুর শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে। কী কারণে এ হত্যাকাণ্ড তা জানার এবং জড়িতদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে। এছাড়া ফুটেজ ও ক্লু সংগ্রহ করা হচ্ছে। সেগুলো বিশ্লেষণ করে দেখা হচ্ছে।
অন্যদিকে গাজীপুরে সাংবাদিক খুনে জড়িতদের গ্রেপ্তারের দাবি ও প্রতিবাদ সভায় ক্ষোভ
গাজীপুরের সাংবাদিক ইউনিয়নের আয়োজনে সাংবাদিক হত্যার ঘটনায় মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সভা আয়োজন করা হয়েছে।
শুক্রবার,(৮ আগস্ট ২০২৫) সকালে গাজীপুর প্রেসক্লাবের সামনে এই প্রতিবাদ সভা অনুষ্ঠিত হয়।
এ সময় গাজীপুরের কর্মরত সাংবাদিকরা দ্রুত সময়ের মধ্যে তাদের সহকর্মী আসাদুজ্জামান তুহিনকে খুনের সঙ্গে জড়িতদের গ্রেপ্তারের দাবি জানায়। তারা প্রকাশ্যে দিবালোকে গাজীপুরের চান্দনা চৌরাস্তা এলাকায় সন্ত্রাসীদের হামলার নিন্দা ও ক্ষোভ করেন। গাজীপুরে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির ব্যাপক অবনতি হয়েছে বলেও জানান তারা।
এ সময় সাংবাদিকরা গাজীপুরের বিভিন্ন জায়গায় চাঁদাবাজি ও ছিনতাইকারীদের মদদদাতাদেরও চিহ্নিত করার দাবি তোলেন।
তারা বলেন, ঘটনার ১৭ ঘণ্টা অতিক্রম হলেও সন্ত্রাসীদের গ্রেপ্তার করতে পারেনি পুলিশ। আসামিরা চিহ্নিত, তাদের সিসিটিভি ফুটেজে স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে। এরপরেও গ্রেপ্তার করতে না পারা প্রশাসনের ব্যর্থতা।
গাজীপুর সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি দেলোয়ার হোসেনের সভাপতিত্বে বক্তব্য দেন, চ্যানেলের সাংবাদিক ফজলুল হক মোড়ল, দৈনিক প্রথম আলোর গাজীপুর প্রতিনিধি মাসুদ রানা, এটিএন বাংলার মাজহারুল ইসলাম মাসুমসহ অন্য সাংবাদিকরা।
এছাড়াও প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ার গাজীপুর জেলা ও উপজেলা প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।
গাজীপুরে সাংবাদিক তুহিন হত্যার ঘটনায় আটক ৫
জেলা বার্তা পরিবেশক, (গাজীপুর)
গাজীপুরের সাংবাদিক আসাদুজ্জামান তুহিন হত্যাকাণ্ডে জড়িত সন্দেহে পাঁচজনকে আটক করেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। বর্তমানে সিসিটিভি ফুটেজের সঙ্গে তাদের মিলিয়ে শনাক্তকরণের কাজ চলছে।
হত্যার ঘটনায় নিহত সাংবাদিকের বড় ভাই একটি হত্যা মামলা করেছেন।
আটকের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন গাজীপুর মেট্রোপলিটন বাসন থানার ওসি শাহিন খান। তিনি বলেন, ‘ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকার সন্দেহভাজন পাঁচ জনকে আটক করা হয়েছে। তাদের জিজ্ঞাসাবাদ চলছে। তবে তদন্তের স্বার্থে এখনই তাদের নাম পরিচয় প্রকাশ করা হচ্ছে না।’
নিহত মো. আসাদুজ্জামান তুহিন (৩৮) দৈনিক প্রতিদিনের কাগজের গাজীপুরের স্টাফ রিপোর্টার হিসেবে কাজ করতেন। তার বাড়ি ময়মনসিংহের ফুলবাড়িয়া উপজেলার ভাটিপাড়া গ্রামে।
সিসিটিভি ফুটেজে দেখা গেছে, দাড়িওয়ালা ও মাথায় ক্যাপ পরা ফয়সাল ওরফে কেটু মিজান চাপাতি হাতে দৌড়াচ্ছে। তার সঙ্গে শাহজামাল, বুলেট ও সুজনসহ আরও কয়েকজনকে চিহ্নিত করা হয়েছে। পুলিশের একাধিক টিম এখনও পলাতক ও চিহ্নিত আসামিদের গ্রেপ্তারে অভিযান চালাচ্ছে।
পুলিশ সূত্রে জানা যায়, সাংবাদিক হত্যার ঘটনার পর থেকে পুলিশের একাধিক টিম কাজ করছে। সিসিটিভি ফুটেজ ও প্রত্যক্ষদর্শীদের সঙ্গে কথা বলে আসামিদের চিহ্নিত করা হয়।
উল্লেখ্য, গতকাল বৃহস্পতিবার গাজীপুর চন্দনা চৌরাস্তা এলাকায় সাংবাদিক আসাদুজ্জামান তুহিনকে কুপিয়ে হত্যা করে সন্ত্রাসীরা।
সাংবাদিক তুহিন হত্যার বিচার ও সাংবাদিকদের নিরাপত্তার দাবিতে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে সাংবাদিকদের বিক্ষোভ -সংবাদ
শুক্রবার, ০৮ আগস্ট ২০২৫
গাজীপুরে বাদশা মিয়া নামে এক ব্যক্তিকে প্রকাশ্যে কোপানোর ‘ভিডিও মোবাইলে ধারণ করায়’ খুন হন সাংবাদিক তুহিন বলে জানিয়েছে পুলিশ।
গাজীপুরে জনসম্মুখে কুপিয়ে ও গলা কেটে হত্যা করেছে দুর্বৃত্তরা। গতকাল বৃহস্পতিবার রাতে গাজীপুর মহানগরীর ব্যস্ততম এলাকা চান্দনা চৌরাস্তা মোড় ঈদগাহ মার্কেটের সামনে ওই ঘটনা ঘটে।
নিহত মো. আসাদুজ্জামান তুহিন (৩২) দৈনিক প্রতিদিনের কাগজ পত্রিকার গাজীপুর প্রতিনিধি ছিলেন। সাংবাদিকতার পাশাপাশি ওষুধ কোম্পানির বিক্রয় প্রতিনিধির কাজ করতেন। গাজীপুরের চান্দনায় স্ত্রী ও দুই সন্তান নিয়ে ভাড়া বাসায় থাকতেন তিনি।
ঘটনার বর্ণনা দিয়ে নিহতের বড় ভাই মো. সেলিম ও স্থানীয়রা জানান, গত বুধবার রাতে তুহিন চান্দনা চৌরাস্তা থেকে বাসার দিকে যাচ্ছিলেন। এ সময় ৬-৭ জন যুবক দা ও চাপাতি নিয়ে তাকে জনসম্মুখে ধাওয়া করে। তিনি প্রাণ রক্ষার জন্য দৌড়ে ঈদগাহ মার্কেটের চা, পান বিক্রেতা খায়রুল ইসলামের দোকানে গিয়ে আশ্রয় নেন।
সন্ত্রাসীরা সেখানে গিয়ে তাকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে বুকে, গলায়, কাঁধে ও পিঠে এলোপাতাড়ি কোপায়। এতে তার গলার কিছু অংশ কেটে যায় এবং শরীরের বিভিন্ন অংশ ক্ষতবিক্ষত হয়। ফলে তিনি ঘটনাস্থলেই মারা যান। এরপর সন্ত্রাসীরা সদর্পে সেখান থেকে পালিয়ে যায়। এ সময় স্থানীয় কলকারখানা ছুটি হওয়ায় আশপাশে অনেক লোকজনের উপস্থিত ছিল। কিন্তু ভয়ে কেউ তুহিনকে বাঁচাতে এগিয়ে আসেনি।
নিহত তুহিনের বন্ধু দৈনিক নবচেতনা পত্রিকার গাজীপুর মহানগর প্রতিনিধি মো. শামীম হোসেন বলেন, আমরা এক সঙ্গেই হেঁটে যাচ্ছিলাম। হঠাৎ একজন নারী এক ব্যক্তিকে নাজেহাল করছিল। ওই ব্যক্তি নারীটিকে আঘাত করার সঙ্গে সঙ্গে কয়েকজন দুর্বৃত্ত ধারালো অস্ত্র দিয়ে ওই ব্যক্তিকে আঘাত করে। তখন তিনি দৌড়ে পালিয়ে যান। এ সময় সাংবাদিক তুহিন ঘটনাটি দেখে দৌড়ে সাইডে গিয়ে ভিডিও করছিলেন। পরে দুর্বৃত্তরা ভিডিও ধারণ করার দৃশ্য দেখে ফেলায় তুহিনকে ধাওয়া দেয়। তুহিন দৌড়ে পালানোর সময় দুর্বৃত্তরা তাকে ধরে ফেলে এবং প্রকাশ্যে কুপিয়ে মৃত্যু নিশ্চিত করে পালিয়ে যায়। এ খবর শামিম বাসন থানা পুলিশকে জানায়।
গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের উপ-পুলিশ কমিশনার রবিউল ইসলাম সংবাদকে বলেন, খবর পেয়ে পুলিশ দ্রুত ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়। ঘটনা সম্পর্কে স্থানীয়দের কাছ থেকে তথ্য এবং আশপাশের এলাকা থেকে সিসিটিভির ফুটেজ সংগ্রহ করা হয়।
তিনি জানান, সিসিটিভির ফুটেজ পর্যালোচনা এবং প্রত্যক্ষদর্শীদের বর্ণনা মতে দেখা যায়, সন্ধ্যা ৭টার দিকে বাদশা মিয়া নামে এক ব্যক্তি চান্দনা চৌরাস্তা মোড়ে এক নারীর সঙ্গে বিবাদে জড়ান। এ সময় বাদশা মিয়া ওই নারীকে আঘাত করেন। তখন একদল দুর্বৃত্ত নারীর পক্ষ নিয়ে ধারালো চাপাতি হাতে বাদশা মিয়াকে আঘাত করে। এসময় তিনি দৌড়ে পালিয়ে যান। আর এ ঘটনাটি রাস্তার পাশ থেকে মোবাইলে ভিডিও করছিলেন সাংবাদিক তুহিন।
জিএমপির উপ-পুলিশ কমিশনার আরও বলেন, তখন সন্ত্রাসীরা তুহিনকে দেখে ফেলে ভিডিও মুছে ফেলতে বলে। তুহিন ভিডিও মুছতে অস্বীকার করলে তাকে ধাওয়া দেয়। এসময় তুহিন দৌড়ে পালাতে থাকে। সন্ত্রাসীরাও তার পিছু নিয়ে ধাওয়া করে। একপর্যায়ে চান্দনা চৌরাস্তার মসজিদ মার্কেটের সামনে একটি দোকানের কাছে সন্ত্রাসীরা ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে তুহিনের মৃত্যু নিশ্চিত করে চলে যায়।
পুলিশ জানায়, যে নারীটির সঙ্গে বাদশা মিয়ার বিবাদ হয় সে নারীর নাম গোলাপি। নারীটি একজন কল গার্ল। তিনি মানুষের সঙ্গে কৌশলে সম্পর্ক তৈরি করে সন্ত্রাসীদের মাধ্যমে সব লুটে নেয়। এটি কোনো চাঁদাবাজির ঘটনা নয়। নারীঘটিত একটি ঘটনার ভিডিও ধারণ করার কারণে ক্ষিপ্ত হয়ে সন্ত্রাসীরা তুহিনকে কুপিয়ে খুন করে।
তুহিনের ফেইসবুক আইডি ঘেঁটে দেখা যায়, চাঁদাবাজি সম্পর্কিত কোনো লাইভ, ভিডিও বা কোনো রিপোর্ট তার আইডিতে নেই। তিনি চান্দনা চৌরাস্তা এলাকার বিভিন্ন সমস্যা ও মানুষের দুর্ভোগ নিয়ে বিভিন্ন সময়ে ফেইসবুকে পোস্ট করতেন। গতকাল বৃহস্পতিবার সন্ধ্যার দিকে তিনি চান্দনা চৌরাস্তার এক মিনিট ৫ সেকেন্ডের একটি ভিডিও আপলোড করেন। যার ক্যাপশনে লেখা রয়েছে, ‘যেমন খুশি তেমন রাস্তা পার হওয়ার দৃশ্য’। এর কিছু সময় আগে তিনি আরও দুটি ছবি ও ভিডিও আপলোড দেন।
গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের বাসন থানার ওসি শাহীন খান জানান, মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য গাজীপুর শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে। কী কারণে এ হত্যাকাণ্ড তা জানার এবং জড়িতদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে। এছাড়া ফুটেজ ও ক্লু সংগ্রহ করা হচ্ছে। সেগুলো বিশ্লেষণ করে দেখা হচ্ছে।
অন্যদিকে গাজীপুরে সাংবাদিক খুনে জড়িতদের গ্রেপ্তারের দাবি ও প্রতিবাদ সভায় ক্ষোভ
গাজীপুরের সাংবাদিক ইউনিয়নের আয়োজনে সাংবাদিক হত্যার ঘটনায় মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সভা আয়োজন করা হয়েছে।
শুক্রবার,(৮ আগস্ট ২০২৫) সকালে গাজীপুর প্রেসক্লাবের সামনে এই প্রতিবাদ সভা অনুষ্ঠিত হয়।
এ সময় গাজীপুরের কর্মরত সাংবাদিকরা দ্রুত সময়ের মধ্যে তাদের সহকর্মী আসাদুজ্জামান তুহিনকে খুনের সঙ্গে জড়িতদের গ্রেপ্তারের দাবি জানায়। তারা প্রকাশ্যে দিবালোকে গাজীপুরের চান্দনা চৌরাস্তা এলাকায় সন্ত্রাসীদের হামলার নিন্দা ও ক্ষোভ করেন। গাজীপুরে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির ব্যাপক অবনতি হয়েছে বলেও জানান তারা।
এ সময় সাংবাদিকরা গাজীপুরের বিভিন্ন জায়গায় চাঁদাবাজি ও ছিনতাইকারীদের মদদদাতাদেরও চিহ্নিত করার দাবি তোলেন।
তারা বলেন, ঘটনার ১৭ ঘণ্টা অতিক্রম হলেও সন্ত্রাসীদের গ্রেপ্তার করতে পারেনি পুলিশ। আসামিরা চিহ্নিত, তাদের সিসিটিভি ফুটেজে স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে। এরপরেও গ্রেপ্তার করতে না পারা প্রশাসনের ব্যর্থতা।
গাজীপুর সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি দেলোয়ার হোসেনের সভাপতিত্বে বক্তব্য দেন, চ্যানেলের সাংবাদিক ফজলুল হক মোড়ল, দৈনিক প্রথম আলোর গাজীপুর প্রতিনিধি মাসুদ রানা, এটিএন বাংলার মাজহারুল ইসলাম মাসুমসহ অন্য সাংবাদিকরা।
এছাড়াও প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ার গাজীপুর জেলা ও উপজেলা প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।
গাজীপুরে সাংবাদিক তুহিন হত্যার ঘটনায় আটক ৫
জেলা বার্তা পরিবেশক, (গাজীপুর)
গাজীপুরের সাংবাদিক আসাদুজ্জামান তুহিন হত্যাকাণ্ডে জড়িত সন্দেহে পাঁচজনকে আটক করেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। বর্তমানে সিসিটিভি ফুটেজের সঙ্গে তাদের মিলিয়ে শনাক্তকরণের কাজ চলছে।
হত্যার ঘটনায় নিহত সাংবাদিকের বড় ভাই একটি হত্যা মামলা করেছেন।
আটকের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন গাজীপুর মেট্রোপলিটন বাসন থানার ওসি শাহিন খান। তিনি বলেন, ‘ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকার সন্দেহভাজন পাঁচ জনকে আটক করা হয়েছে। তাদের জিজ্ঞাসাবাদ চলছে। তবে তদন্তের স্বার্থে এখনই তাদের নাম পরিচয় প্রকাশ করা হচ্ছে না।’
নিহত মো. আসাদুজ্জামান তুহিন (৩৮) দৈনিক প্রতিদিনের কাগজের গাজীপুরের স্টাফ রিপোর্টার হিসেবে কাজ করতেন। তার বাড়ি ময়মনসিংহের ফুলবাড়িয়া উপজেলার ভাটিপাড়া গ্রামে।
সিসিটিভি ফুটেজে দেখা গেছে, দাড়িওয়ালা ও মাথায় ক্যাপ পরা ফয়সাল ওরফে কেটু মিজান চাপাতি হাতে দৌড়াচ্ছে। তার সঙ্গে শাহজামাল, বুলেট ও সুজনসহ আরও কয়েকজনকে চিহ্নিত করা হয়েছে। পুলিশের একাধিক টিম এখনও পলাতক ও চিহ্নিত আসামিদের গ্রেপ্তারে অভিযান চালাচ্ছে।
পুলিশ সূত্রে জানা যায়, সাংবাদিক হত্যার ঘটনার পর থেকে পুলিশের একাধিক টিম কাজ করছে। সিসিটিভি ফুটেজ ও প্রত্যক্ষদর্শীদের সঙ্গে কথা বলে আসামিদের চিহ্নিত করা হয়।
উল্লেখ্য, গতকাল বৃহস্পতিবার গাজীপুর চন্দনা চৌরাস্তা এলাকায় সাংবাদিক আসাদুজ্জামান তুহিনকে কুপিয়ে হত্যা করে সন্ত্রাসীরা।