সংবাদ অনলাইন রিপোর্ট

শুক্রবার, ০৮ আগস্ট ২০২৫

কর্মচারীকে মালিক সাজিয়ে ৪৮ কোটি টাকা লোপাট

মামলার আসামি সাইফুজ্জামানসহ ৪৭ জন

image

কর্মচারীকে মালিক সাজিয়ে ৪৮ কোটি টাকা লোপাট

মামলার আসামি সাইফুজ্জামানসহ ৪৭ জন

শুক্রবার, ০৮ আগস্ট ২০২৫
সংবাদ অনলাইন রিপোর্ট

সাবেক ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী ও তার স্ত্রীসহ মোট ৪৭ জনের বিরুদ্ধে প্রায় ৪৮ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগে দুটি পৃথক মামলা দায়ের করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। কর্মচারীকে মালিক সাজিয়ে নামসর্বস্ব ও ভুয়া প্রতিষ্ঠানের নামে ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংক (ইউসিবি) থেকে এই বিপুল অঙ্কের ঋণ নেয়া হয়েছিল বলে অভিযোগে বলা হয়েছে।

গতকাল বৃহস্পতিবার দুদকের ঢাকা ও চট্টগ্রামের সমন্বিত জেলা কার্যালয়ে মামলা দুটি দায়ের করা হয়। এতে সাইফুজ্জামান চৌধুরী ও তার স্ত্রী রুকমীলা জামানকে প্রধান আসামি করা হয়েছে। এছাড়াও ইউসিবি ব্যাংকের সাবেক চেয়ারম্যান, দুই ব্যবস্থাপনা পরিচালকসহ মোট ৪৭ জনকে আসামি করা হয়েছে। এই মামলার বাদী দুদকের সহকারী পরিচালক শোয়াইব ইবনে আলম ও উপ-সহকারী পরিচালক মো. সজীব আহমেদ।

প্রথম মামলার এজাহার সূত্রে জানা যায়, ক্রিসেন্ট ট্রেডার্স নামে একটি ভুয়া প্রতিষ্ঠানের নামে ইউসিবির চট্টগ্রামের জুবলী রোড শাখায় একটি হিসাব খোলা হয়। প্রতিষ্ঠানটির মালিক হিসেবে দেখানো হয় সাইফুজ্জামান চৌধুরীর মালিকানাধীন আরামিট গ্রুপের একজন কর্মচারীর আত্মীয়কে। কোনো প্রকার যাচাই-বাছাই ছাড়াই ব্যাংক কর্মকর্তারা মিথ্যা প্রতিবেদন তৈরি করে ২৫ কোটি টাকা ঋণের সুপারিশ করেন। ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ের ক্রেডিট কমিটি ঋণ প্রস্তাবে ১৭টি নেতিবাচক পর্যবেক্ষণ থাকা সত্ত্বেও পরিচালনা পর্ষদ সভায় ঋণটি অনুমোদন করে। পরে এই অর্থ নগদে উত্তোলন ও স্থানান্তরের মাধ্যমে আত্মসাৎ করা হয়।

এ মামলার আসামিরা হলেন- সাইফুজ্জামান চৌধুরী, তার স্ত্রী ও ইউসিবি ব্যাংকের সাবেক চেয়ারম্যান রুকমীলা জামান, সাবেক চেয়ারম্যান এম এ সবুর, সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ শওকত জামিল, ইউসিবি ব্যাংকের সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান বজল আহমেদ বাবুল, সাবেক পরিচালক ইউনুছ আহমদ, হাজী আবু কালাম, নুরুল ইসলাম চৌধুরী, রোকসানা জামান চৌধুরী, বশির আহমেদ, সৈয়দ কামরুজ্জামান, মো. শাহ আলম, প্রফেসর ড. মো. জোনাইদ শফিক ও ব্যাংকটির সাবেক পরিচালক তৌহিদ সিপার রফিকজ্জামান।

এছাড়া অন্য আসামিরা হলেন- ব্যাংকটির সাবেক এফএভিপি মো. মজিবুর রহমান, সাবেক ভাইস-প্রেসিডেন্ট ও ম্যানেজার অপারেশন মোহাম্মদ লোকমান আহম্মেদ, সাবেক সিনিয়র এক্সিকিউটিভ অফিসার সাইফুল ইসলাম, সাবেক এফএভিপি ও ক্রেডিট ইনচার্জ কান্তা দাশ গুপ্তা, সাবেক এসভিপি ও জুবলী রোড শাখা প্রধান মোহাম্মদ আবদুল করিম, ক্রিসেন্ট ট্রেডার্সের মালিক সৈয়দ নুরুল ইসলাম, প্রগ্রেসিভ ট্রেডিংয়ের মালিক মেহাম্মদ হোছাইন চৌধুরী, মালিক সল্ট ইন্ডাস্ট্রিজ ইউনিট-২ ও রিভারসাইড এন্টারপ্রাইজের মালিক আব্দুল খালেক ও ব্যাংকের গ্রাহক মো. ইয়াছিনুর রহমান।

দ্বিতীয় মামলাটি দায়ের করা হয়েছে ২৩ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগে। এজাহারে বলা হয়েছে, প্রগ্রেসিভ ট্রেডিং নামে আরেকটি নামসর্বস্ব প্রতিষ্ঠানের নামে ইউসিবির কারওয়ান বাজার শাখায় একটি হিসাব খোলা হয়। একইভাবে আরামিট গ্রুপের কর্মচারীর আত্মীয়কে মালিক সাজিয়ে ভুয়া নথিপত্রের মাধ্যমে ২৩ কোটি টাকার ঋণ অনুমোদন করানো হয়। এই ঋণ অনুমোদন প্রক্রিয়ায় ব্যাংকের কর্মকর্তারা মিথ্যা তথ্য দিয়ে পরিদর্শন প্রতিবেদন তৈরি করেন। ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ের ক্রেডিট কমিটির নেতিবাচক পর্যবেক্ষণ সত্ত্বেও পরিচালনা পর্ষদ এই ঋণ অনুমোদন করে। পরবর্তীতে এই অর্থ উত্তোলন করে মানিলন্ডারিং করা হয়।

এই মামলার আসামিরা হলেন- সাইফুজ্জামান, তার স্ত্রী রুকমীলা জামান, ব্যাংকের সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান বজল আহমেদ বাবুল, সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক আবুল এহতেশাম আবদুল মোহাইমিন, সাবেক পরিচালক ইউনুছ আহমদ, এম এ সবুর, আসিফুজ্জামান চৌধুরী, হাজী আবু কালাম,নুরুল ইসলাম চৌধুরী, রোকসানা জামান চৌধুরী, বশির আহমেদ, সৈয়দ কামরুজ্জামান, মো. শাহ আলম, শরীফ জহির ও ড. সেলিম মাহমুদ।

এছাড়া অন্য আসামিরা হলেন-ব্যাংকটির সাবেক সিনিয়র এক্সিকিউটিভ অফিসার শ্রাবন্তী মজুমদার, সাবেক এক্সিকিউটিভ অফিসার মুঝায়োনা সিদ্দিকা, সাবেক এভিপি ও ক্রেডিট অফিসার মোহাম্মদ গোলাম রাকিব, সাবেক এফএভিপি ও ম্যানেজার অপারেশন মোসাদ্দেক মো. ইউসুফ, সাবেক এফভিপি ও কারওয়ান বাজার শাখার প্রধান আলমগীর কবির।

নাম সর্বস্ব প্রতিষ্ঠানের মালিকের মধ্যে রয়েছে- প্রোগ্রেসিভ ট্রেডিংয়ের মালিক ও আরামিট সিমেন্ট লিমিটেডের সহকারী ব্যবস্থাপক (হিসাব) মোহাম্মদ হোছাইন চৌধুরী, ইম্পেরিয়াল ট্রেডিংয়ের মালিক ও আরামিটের এজিএম মো. আব্দুল আজিজ এবং আরামিট সিমেন্টের পিয়ন মো. ইয়াছিনুর রহমান।

দুদক জানিয়েছে, আসামিদের বিরুদ্ধে দণ্ডবিধির বিভিন্ন ধারা, দুর্নীতি প্রতিরোধ আইন, ১৯৪৭ এবং মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইন, ২০১২-এর আওতায় মামলা দায়ের করা হয়েছে। এর আগেও সাইফুজ্জামান চৌধুরী ও তার পরিবারের বিরুদ্ধে আরও দুটি মামলা দায়ের করে দুদক। গত ৩০ জুলাই রিলায়েবল ট্রেডিং নামে একটি প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে ১৫ কোটি টাকা এবং গত ২৪ জুলাই ভিশন ট্রেডিং নামে আরেকটি প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে ২৫ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগে তাদের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছিল।

জুলাই গণঅভ্যুত্থানের পর থেকেই দুদকের তদন্তে সাইফুজ্জামান চৌধুরীর বিপুল সম্পদের খোঁজ মেলে। আদালত ইতোমধ্যে তার এবং তার পরিবারের নামে যুক্তরাজ্য, সংযুক্ত আরব আমিরাত, যুক্তরাষ্ট্রসহ বিভিন্ন দেশে থাকা মোট ৫৭৯টি বাড়ি, অ্যাপার্টমেন্ট ও জমি ক্রোক ও ফ্রিজ করার আদেশ দিয়েছে। এছাড়া, তার পরিবারের নামে থাকা ৩৯টি ব্যাংক হিসাবে ৫ কোটি ২৬ লাখ ৮৩ হাজার টাকা ফ্রিজ করা হয়েছে এবং ১০২ কোটি টাকার শেয়ার ও ৯৫৭ বিঘা জমি জব্দেরও আদেশ দিয়েছে আদালত। গত বছর ৭ অক্টোবর সাইফুজ্জামান চৌধুরী ও তার স্ত্রীর দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়।

‘জাতীয়’ : আরও খবর

» ‘সঞ্জীবন প্রকল্পে’ উৎপাদনমুখী সামাজিক বিনিয়োগ আত্মনির্ভরশীলতা বৃদ্ধিতে মাইলফলক: আনসার প্রধান

» সিইসির আগামীকালের ভাষণ রেকর্ডের প্রস্তুতি নিতে নির্বাচন কমিশনের চিঠি

» প্রবাসী ভোটার নিবন্ধন ২ লাখ ৫৯ হাজার ছাড়ালো

» বেগম রোকেয়া দিবস

» কিছু ব্যবসায়ী ও আমলা নবায়নযোগ্য জ্বালানি রূপান্তরের ক্ষেত্রে বাধা: জ্বালানি উপদেষ্টা

» ডেঙ্গু: হাসপাতালে ভর্তি ৯৮ হাজার ছাড়িয়েছে, মৃত্যু ৩৯৮ জন

» খালেদা জিয়ার লন্ডন যাত্রা অনিশ্চিত

» কারাগারে শওকত মাহমুদ, রিমান্ড শুনানি বৃহস্পতিবার

» বেক্সিমকো এভিয়েশনের সালমান ও সোহেলসহ ৬ জনের বিরুদ্ধে প্রতারণার মামলা

» রোজা ও পূজা বিতর্ক : শিশির মনিরের বিরুদ্ধে মামলা

» মার্কিন নাগরিকের মামলায় শওকত মাহমুদ গ্রেপ্তার

» ডেঙ্গু: আরও ৫১৬ জন হাসপাতালে, মৃত্যু ২

» খাদ্যদূষণ নিয়ে প্রধান উপদেষ্টার উদ্বেগ, সংকট মোকাবিলায় সবাইকে একসঙ্গে কাজ করার আহ্বান

» ‘মিনেসোটা প্রটোকল’ মেনেই জুলাই শহীদদের শনাক্ত করা হবে: সিআইডি

» দুর্নীতি আছে, দখল-চাঁদাবাজিও চলছে, সরকারের অভ্যন্তরেও দুর্নীতি হয়েছে

» প্রান্তিক আদিবাসী জনগোষ্ঠী মারাত্মক বৈষম্যের শিকার

» গুম: ট্রাইব্যুনালে অভিযোগ গঠন নিয়ে আসামিপক্ষের শুনানি কাল

» বিদেশে নেয়ার অবস্থায় নেই খালেদা জিয়া

» ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে নির্বাচনের জন্য ‘সম্পূর্ণ প্রস্তুত’ ইসি, ‘সন্তুষ্ট’ প্রধান উপদেষ্টা

» বাংলাদেশে আমরা ভিন্ন মতকে প্রতিষ্ঠা করতে চাই-উপদেষ্টা ফাওজুল কবির খান