অতীতে যারাই জাতীয় পার্টি ভেঙেছে, তারাই একটি বা দুটি এমপির দলে পরিণত হয়েছে : শামীম হায়দার পাটোয়ারী
ছবি : অনলাইন থেকে সংগৃহীত
আনিসুল ইসলাম মাহমুদ ও রুহুল আমিন হাওলাদার এর নেতৃত্বে আরেকবার ভাঙলো ’৯০ এর গণঅভ্যুত্থানে ক্ষমতা হারানো হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের প্রতিষ্ঠিতদল জাতীয় পার্টি (জাপা)। শনিবার,(০৯ আগস্ট ২০২৫) রাজধানীর গুলশানে ইমানুয়েল পার্টি সেন্টারে জাতীয় পার্টির একাংশের ডাকে দশম জাতীয় সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছে। এই অংশ জাতীয় পার্টিতে জি এম কাদেরেরবিরোধী অংশ বলে পরিচিত। সম্মেলনে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন আনিসুল ইসলাম মাহমুদ এবং মহাসচিব হয়েছেন রুহুল আমিন হাওলাদার। পাশাপাশি এই অংশের সিনিয়র কো-চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন কাজী ফিরোজ রশিদ এবং নির্বাহী চেয়ারম্যান হয়েছেন সাবেক মহাসচিব মজিবুল হক চুন্নু। সম্মেলনে জাতীয় পার্টির (জেপি) চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন মঞ্জু প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন।
তবে জি এম কাদের অংশ এই সম্মেলনকে ‘বেআইনি’ এবং ‘গঠনতন্ত্রবিরোধী’ বলে অংশগ্রহণ করেনি। বহিষ্কৃত নেতারা কাউন্সিল ডাকার এখতিয়ার রাখেন না, উল্লেখ করে রাজধানীর কাকরাইলে জাপার কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে জি এম কাদেরপন্থি অংশের মহাসচিব শামীম হায়দার পাটোয়ারী বলেন, ‘বহিষ্কৃত এক নেতা নিজেকে মহাসচিব দাবি করছেন। তার পদের বিষয়ে কোর্ট কোনো আদেশ দেয়নি। অতীতে যারাই জাতীয় পার্টি ভেঙেছে, তারাই একটি বা দুটি এমপির দলে পরিণত হয়েছে।’
প্রসঙ্গত, জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সভার সিদ্বান্ত অনুযায়ী গত ২৮ জুন বাংলাদেশ-চীন মৈত্রী সস্মেলন কেন্দ্রে জাতীয় পার্টির দশম জাতীয় সস্মেলন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু তার আগে গত ১৬ জুন সস্মেলনের জন্য প্রধান উপদেষ্টার কর্মসূচির কারণে মিলনায়তন বরাদ্দ না পাওয়ার প্রসঙ্গ তুলে জি এম কাদের সস্মেলন স্থগিত ঘোষণা করেন। এর বিরোধীতা করে আনিসুল ইসলাম মাহমুদ ও রুহুল আমিন হাওলাদার গত ২৮ জুনই সস্মেলন করার ঘোষণা দেয় । এমনকি সস্মেলনে জি এম কাদেরের প্রতিদ্বন্দী হয়ে আনিসুল ইসলাম মাহমুদ ও রুহুল আমিন হাওলাদার নিজেদের চেয়ারম্যান ও মহাসচিব পদে প্যানেল দেয়ার ঘোষণা দেন। জি এম কাদের কাউন্সিল স্থগিত করে এ দুজনসহ জাপার মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নুকে দলের সব পদ থেকে অব্যাহতি দেন। গঠনতন্ত্রের ২০ (১) ‘ক’ ধারার ক্ষমতাবলে আরও চার প্রেসিডিয়াম সদস্যকেও বহিষ্কার করা হয়। এ সিদ্ধান্ত চ্যালেঞ্জ করে জাপার ১০ নেতা মামলা করেন। মামলায় গত ৩০ জুলাই ঢাকার প্রথম যুগ্ম জেলা ও দায়রা জজ মো. নুরুল ইসলাম এক আদেশে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জি এম কাদের ও দপ্তর সম্পাদক মাহমুদ আলমের সাংগঠনিক কার্যক্রম পরিচালনার ওপর অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞা দেয়। জি এম কাদেরের ওপর আদালতের নিষেধাজ্ঞার পর আনিসুল ইসলাম মাহমুদকে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান মনোনীত করেছে তার বিরোধী অংশ। সেই সঙ্গে জি এম কাদের যে নেতাদের দল থেকে বহিষ্কার করেছিলেন, তাদের দলে ফেরানোর ঘোষণা দেয়।
সম্মেলনে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়ে আনিসুল ইসলাম মাহমুদ বলেন, ‘অন্যায়ভাবে কাউকে পার্টি থেকে বহিষ্কার করা হবে না। যারা কাজ করবেন, তাদের কাজের মূল্যায়নের
ভিত্তিতে দলের ভালো পদে দেয়ার চেষ্টা করব। আরেকটি দিক হলো, আমরা অর্থনৈতিক স্বচ্ছতা উপহার দেব, পাশাপাশি একটি আদর্শিক রাজনীতিতে বিশ্বাস করবো। আমরা চেষ্টা করব বাংলাদেশের মানুষের ভাগ্য পরিবর্তনের।’
বিগত নির্বাচনগুলোতে অংশগ্রহণের জন্য জাতির কাছে নিঃশর্ত ক্ষমা চেয়ে জাতীয় পার্টির সাবেক মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নু বলেন, ‘আমরা দলীয়ভাবে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে কোনো বেআইনি কাজ করিনি। যদি নৈতিকভাবে কোনো ভুল হয়ে থাকে, কোনো ভ্রান্তি হয়ে থাকে, তাহলে এই কাউন্সিলে দাঁড়িয়ে জাতীয় পার্টির পক্ষ থেকে দেশবাসীর কাছে আমরা নিঃশর্ত ক্ষমা চাই।’
নতুন কমিটি নির্বাচনের আগে কাউন্সিলের মতামতের ভিত্তিতে জাতীয় পার্টির বর্তমান গঠনতন্ত্রের ২০(ক) ধারাটি বিলুপ্ত করা হয়।
উল্লেখ্য, ১৯৮৬ সালে হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের নেতৃত্বে প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর এখন পর্যন্ত দলটিতে ষষ্ঠবারের মতো ভাঙলো। এরশাদের জীবদ্দশায় চারবার ভাঙনের পরও ২০১৯ সালে জি এম কাদের দলের নেতৃত্বে আসার পর এটি আরও একবার ভেঙেছে। এর আগে গত বছরের ৭ জানুয়ারির নির্বাচনের পর হুসেইন মুহস্মদ এর স্ত্রী রওশন এরশাদের নেতৃত্বে তার অনুসারীরা একই নামে দল করেছে।
অতীতে যারাই জাতীয় পার্টি ভেঙেছে, তারাই একটি বা দুটি এমপির দলে পরিণত হয়েছে : শামীম হায়দার পাটোয়ারী
ছবি : অনলাইন থেকে সংগৃহীত
শনিবার, ০৯ আগস্ট ২০২৫
আনিসুল ইসলাম মাহমুদ ও রুহুল আমিন হাওলাদার এর নেতৃত্বে আরেকবার ভাঙলো ’৯০ এর গণঅভ্যুত্থানে ক্ষমতা হারানো হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের প্রতিষ্ঠিতদল জাতীয় পার্টি (জাপা)। শনিবার,(০৯ আগস্ট ২০২৫) রাজধানীর গুলশানে ইমানুয়েল পার্টি সেন্টারে জাতীয় পার্টির একাংশের ডাকে দশম জাতীয় সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছে। এই অংশ জাতীয় পার্টিতে জি এম কাদেরেরবিরোধী অংশ বলে পরিচিত। সম্মেলনে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন আনিসুল ইসলাম মাহমুদ এবং মহাসচিব হয়েছেন রুহুল আমিন হাওলাদার। পাশাপাশি এই অংশের সিনিয়র কো-চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন কাজী ফিরোজ রশিদ এবং নির্বাহী চেয়ারম্যান হয়েছেন সাবেক মহাসচিব মজিবুল হক চুন্নু। সম্মেলনে জাতীয় পার্টির (জেপি) চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন মঞ্জু প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন।
তবে জি এম কাদের অংশ এই সম্মেলনকে ‘বেআইনি’ এবং ‘গঠনতন্ত্রবিরোধী’ বলে অংশগ্রহণ করেনি। বহিষ্কৃত নেতারা কাউন্সিল ডাকার এখতিয়ার রাখেন না, উল্লেখ করে রাজধানীর কাকরাইলে জাপার কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে জি এম কাদেরপন্থি অংশের মহাসচিব শামীম হায়দার পাটোয়ারী বলেন, ‘বহিষ্কৃত এক নেতা নিজেকে মহাসচিব দাবি করছেন। তার পদের বিষয়ে কোর্ট কোনো আদেশ দেয়নি। অতীতে যারাই জাতীয় পার্টি ভেঙেছে, তারাই একটি বা দুটি এমপির দলে পরিণত হয়েছে।’
প্রসঙ্গত, জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সভার সিদ্বান্ত অনুযায়ী গত ২৮ জুন বাংলাদেশ-চীন মৈত্রী সস্মেলন কেন্দ্রে জাতীয় পার্টির দশম জাতীয় সস্মেলন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু তার আগে গত ১৬ জুন সস্মেলনের জন্য প্রধান উপদেষ্টার কর্মসূচির কারণে মিলনায়তন বরাদ্দ না পাওয়ার প্রসঙ্গ তুলে জি এম কাদের সস্মেলন স্থগিত ঘোষণা করেন। এর বিরোধীতা করে আনিসুল ইসলাম মাহমুদ ও রুহুল আমিন হাওলাদার গত ২৮ জুনই সস্মেলন করার ঘোষণা দেয় । এমনকি সস্মেলনে জি এম কাদেরের প্রতিদ্বন্দী হয়ে আনিসুল ইসলাম মাহমুদ ও রুহুল আমিন হাওলাদার নিজেদের চেয়ারম্যান ও মহাসচিব পদে প্যানেল দেয়ার ঘোষণা দেন। জি এম কাদের কাউন্সিল স্থগিত করে এ দুজনসহ জাপার মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নুকে দলের সব পদ থেকে অব্যাহতি দেন। গঠনতন্ত্রের ২০ (১) ‘ক’ ধারার ক্ষমতাবলে আরও চার প্রেসিডিয়াম সদস্যকেও বহিষ্কার করা হয়। এ সিদ্ধান্ত চ্যালেঞ্জ করে জাপার ১০ নেতা মামলা করেন। মামলায় গত ৩০ জুলাই ঢাকার প্রথম যুগ্ম জেলা ও দায়রা জজ মো. নুরুল ইসলাম এক আদেশে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জি এম কাদের ও দপ্তর সম্পাদক মাহমুদ আলমের সাংগঠনিক কার্যক্রম পরিচালনার ওপর অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞা দেয়। জি এম কাদেরের ওপর আদালতের নিষেধাজ্ঞার পর আনিসুল ইসলাম মাহমুদকে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান মনোনীত করেছে তার বিরোধী অংশ। সেই সঙ্গে জি এম কাদের যে নেতাদের দল থেকে বহিষ্কার করেছিলেন, তাদের দলে ফেরানোর ঘোষণা দেয়।
সম্মেলনে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়ে আনিসুল ইসলাম মাহমুদ বলেন, ‘অন্যায়ভাবে কাউকে পার্টি থেকে বহিষ্কার করা হবে না। যারা কাজ করবেন, তাদের কাজের মূল্যায়নের
ভিত্তিতে দলের ভালো পদে দেয়ার চেষ্টা করব। আরেকটি দিক হলো, আমরা অর্থনৈতিক স্বচ্ছতা উপহার দেব, পাশাপাশি একটি আদর্শিক রাজনীতিতে বিশ্বাস করবো। আমরা চেষ্টা করব বাংলাদেশের মানুষের ভাগ্য পরিবর্তনের।’
বিগত নির্বাচনগুলোতে অংশগ্রহণের জন্য জাতির কাছে নিঃশর্ত ক্ষমা চেয়ে জাতীয় পার্টির সাবেক মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নু বলেন, ‘আমরা দলীয়ভাবে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে কোনো বেআইনি কাজ করিনি। যদি নৈতিকভাবে কোনো ভুল হয়ে থাকে, কোনো ভ্রান্তি হয়ে থাকে, তাহলে এই কাউন্সিলে দাঁড়িয়ে জাতীয় পার্টির পক্ষ থেকে দেশবাসীর কাছে আমরা নিঃশর্ত ক্ষমা চাই।’
নতুন কমিটি নির্বাচনের আগে কাউন্সিলের মতামতের ভিত্তিতে জাতীয় পার্টির বর্তমান গঠনতন্ত্রের ২০(ক) ধারাটি বিলুপ্ত করা হয়।
উল্লেখ্য, ১৯৮৬ সালে হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের নেতৃত্বে প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর এখন পর্যন্ত দলটিতে ষষ্ঠবারের মতো ভাঙলো। এরশাদের জীবদ্দশায় চারবার ভাঙনের পরও ২০১৯ সালে জি এম কাদের দলের নেতৃত্বে আসার পর এটি আরও একবার ভেঙেছে। এর আগে গত বছরের ৭ জানুয়ারির নির্বাচনের পর হুসেইন মুহস্মদ এর স্ত্রী রওশন এরশাদের নেতৃত্বে তার অনুসারীরা একই নামে দল করেছে।