অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ বলেছেন, গত এক বছরে অন্তর্বর্তী সরকারের সময়ে দেশের তেমন কোনো পরিবর্তন দেখা যায়নি। বিশেষ করে জুলাই আন্দোলনে আহত, নিহত ও নিখোঁজদের পূর্ণ তালিকা ও পরিবারের দায়িত্ব নেয়ার ক্ষেত্রে সরকার ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছে। এতে সমন্বয়হীনতাও স্পষ্ট ফুটে উঠেছে।
শনিবার,(০৯ আগস্ট ২০২৫) দুপুরে রাজধানীর বিজয়নগরে ইকোনোমিক রিপোর্টার্স ফোরাম মিলনায়তনে গণতান্ত্রিক অধিকার কমিটি আয়োজিত ‘অন্তর্বর্তী সরকারের এক বছর: দায়িত্ব ও ভূমিকা পর্যালোচনা’ শীর্ষক সেমিনারে সভাপতির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। সেমিনারে গত এক বছরে বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের বিভিন্ন কর্মকাণ্ডের পর্যালোচনা করেন বক্তারা। এতে বিভিন্ন সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও শ্রমিক সংগঠনের প্রতিনিধিরা অংশ নেন।
আনু মুহাম্মদ বলেন, জুলাই ঘোষণাপত্রে এক-এগারোর প্রেক্ষাপট উল্লেখ করা হয়েছে। এটা ভালো কথা। তবে সে সময় ড. মুহাম্মদ ইউনূসের ভূমিকা কী ছিল, সেটি ব্যাখ্যা করতে হবে। কারণ তখন তাকে অনেক তৎপর দেখা গেছে। তিনি নিজেও নাগরিক শক্তি নামে একটি রাজনৈতিক দল খুলতে চেয়েছিলেন। পরে নানা কারণে এ ক্ষেত্রে আর এগোননি।
তিনি বলেন, একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচন করতে হলে সরকারকে পক্ষপাতহীন হতে হবে। না হলে নির্বাচন নিয়ে নতুন বিপর্যয় নেমে আসবে। তাই সরকারকে সব পক্ষের সঙ্গে আলোচনা করতে হবে এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে ঢেলে সাজাতে হবে।
তিনি আরও বলেন, মব ভায়োলেন্সের মাধ্যমে মাজার, ভাস্কর্য ভাঙচুর ও হামলায় জড়িতদের বিরুদ্ধে পদক্ষেপে সন্তোষজনক অগ্রগতি নেই। সরকারের কোনো কোনো দায়িত্বশীল ব্যক্তি এটিকে সাফাই গেয়েছেন। বলছেন, এটি নাকি পেসার গ্রুপ হিসেবে কাজ করছে।
অথচ পেসার গ্রুপে কাজ হওয়ার কথা দাবি আদায়ের শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি। আর মব সৃষ্টিকারীরা জাতিগত, ধর্মীয় সংখ্যালঘু ও নারীবিদ্বেষী কর্মকাণ্ড করছে।
আনু মুহাম্মদ অভিযোগ করেন, বিগত সরকারের সময়ে করা শ্রমিকদের মামলা প্রত্যাহার হয়নি। কিন্তু ড. ইউনূসসহ ক্ষমতাবানদের মামলা ঠিকই তুলে নেয়া হয়েছে। আর বিচার বিভাগের ক্ষেত্রেও কোনো পরিবর্তন হয়নি। বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড এখনও হচ্ছে। এসব বিষয়ে বিশেষ তদন্ত কমিটি হওয়া উচিত।
তিনি ’৭৪-এর বিশেষ ক্ষমতা আইন বাতিল না করার সমালোচনা করেন। বিগত সরকারের নিবর্তনমূলক আইন বাতিলের দাবি জানান।
তিনি বলেন, এক বছরে বিশ্বব্যাংক, আইএএফ ও জাইকার ওপর নির্ভরশীলতা কমার পরিবর্তে বেড়েছে। শিক্ষা ও চিকিৎসার বাণিজ্যকীকরণ করা হয়েছে। এ নিয়ে সরকারের দৃশ্যমান কোনো অগ্রগতি হয়নি। তবে সরকারের বিভিন্ন সমালোচনা থাকলেও এক বছরে অর্থ পাচার কমেছে। ব্যাংকিং ব্যবস্থায় যে ধস নেমেছিল, তাতে কিছুটা শৃঙ্খলা ফিরেছে। অন্যদিকে বিগত সরকারের আমলে রামপাল, আদানি ও এলএনজি চুক্তির তথ্য প্রকাশ করা হয়নি। বিদেশি আমদানিনির্ভর জ্বালানি চুক্তিতে সরকার কোনো পরিবর্তন করতে পারেনি।
তিনি বলেন, সরকার রাষ্ট্র সংস্কারে বিভিন্ন কমিশন গঠন করলেও শিক্ষা ও সংস্কৃতি নিয়ে কমিশন নেই। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে অনেকে ছাত্রলীগের মতো হতে চায়। সেটি অশনিসংকেত। তবে আশার দিক হলো, ছাত্র সংসদ নির্বাচনের দাবি পূরণ হতে যাচ্ছে।
শিল্পকলা অ্যাকাডেমির দুর্দশা দূর করা হয়নি মন্তব্য করে তিনি বলেন, শিল্পকলা অ্যাকাডেমি সামরিক বাহিনীর দখলমুক্ত করতে হবে। সাংস্কৃতিক পরিবেশনা না বাড়িয়ে তা দখল করা হয়েছে। অথচ জুলাই আন্দোলনে সাংস্কৃতিক কর্মীদের ভূমিকা ছিল প্রশংসনীয়। আমাদের তরুণদের ক্রীড়া চর্চার জন্য উন্মুক্ত জায়গা দখলমুক্ত করতে হবে। এছাড়াও পাহাড় ও সমতলে বৈষম্য, নারী কমিশনের প্রতি হিংস্র আক্রমণ, লিঙ্গ বৈষম্য ও বিভিন্ন দেশে রেমিট্যান্সযোদ্ধাদের নিপীড়নসহ গুরুত্বপূর্ণ অনেক ইস্যুতে সরকার দৃশ্যমান পদক্ষেপ নিতে পারেনি বলে উল্লেখ করেন আনু মুহাম্মদ।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক মোশাহিদা সুলতানা ঋতু বলেন, হিমাগারে কৃষককে বেশি টাকায় আলু রাখতে হচ্ছে। অথচ কৃষক ন্যায্য দাম পাচ্ছে না। টিএনজেডসহ অনেক কারখানা বন্ধ হয়ে যাওয়ায় অনেক মানুষ বেকার হয়ে গেছে। গত এক বছরে এ বিষয়ে রাষ্ট্রীয় কোনো উদ্যোগ নেয়া হয়নি।
চিনিকলগুলো দেশীয় কোম্পানিগুলোকে না দিয়ে বিদেশি প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে চুক্তি কেন করা হচ্ছে তা বোধগম্য নয়। শিক্ষাকে এখনও বাণিজ্যিকীকরণ করা হয়েছে। আবাসন সংকট বিরাজমান। আর কারিকুলামে বিতর্কিত জিনিস সংযোজন করা হয়েছে। গোপালগঞ্জে সেনাবাহিনী গুলি করে কয়েকজনকে হত্যা করেছে। সেখানে নিহতদের লাশের ময়নাতদন্ত করা হয়নি।
চলচ্চিত্র নির্মাতা আকরাম খান বলেন, ঐক্যের পরিবর্তে সরকার বিভেদ তৈরি করেছে। বিভিন্ন স্থানে মাজার ভাঙা হয়েছে। অথচ মাজার হলো প্রান্তিক মানুষের সাংস্কৃতিক কেন্দ্রবিন্দু। আর শিল্পকলায় এক বছর ডিজি নেই। কিছু ব্যক্তির কাছে কুক্ষিগত। সারাদেশের শিল্পকলা অ্যাকাডেমির অবস্থাও নাজুক। বিটিভিতেও প্রচার হচ্ছে নিম্নমানের অনুষ্ঠান। চলচ্চিত্র শিল্পও ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে। নজরুল ও রবীন্দ্রনাথ নিয়ে নানা ধরনের বিভক্তি তৈরি করা হচ্ছে। এক বছরে ক্রীড়া ও সাহিত্যও তেমন উন্নতি নেই।
লেখক ও গবেষক কল্লোল মোস্তফা বলেন, জুলাইয়ের অনেক অভিযুক্তের বিচার হলেও কার্যকর কতটুকু? কারণ ইতোমধ্যে অনেক প্রভাবশালী পালিয়ে গেছেন। আর সাধারণ অনেককে গণহারে মামলা দেয়া হচ্ছে। অনেক ক্ষেত্রে হয়রানিও করা হচ্ছে।
তিনি বলেন, ঐকমত্য কমিশনের ১৬৬টি সুপারিশের মধ্যে ৭৩টিতে ঐকমত্য হয়েছে। যেগুলো ঐকমত্য হয়েছে বা যেগুলো হয়নি সেগুলোর সমাধানের নির্দেশনা দেয়া হয়নি। আমলাতন্ত্রের পরিবর্তন হয়নি। ঢালাওভাবে বদলি করা হচ্ছে। রাজনৈতিক বিবেচনায় ১৮ জন বিচারককে বাধ্যতামূলক অবসর দেয়া হয়। এটি নীতিবহির্ভূত। তিনি অভিযোগ করেন, এনসিপির প্রতি সরকারের দুর্বলতা দেখা গেছে।
জুলাইয়ের আহতদের চিকিৎসা নিয়ে কাজ করা স্থপতি ফারহানা শারমিন ইমু বলেন, জুলাই আন্দোলনে আহত, নিহত ও নিখোঁজদের তালিকা তৈরিতে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কেন্দ্রীয় উপ-কমিটিকে প্রয়োজনীয় অর্থবরাদ্দ দেয়া হয়নি। ভুক্তভোগীদের নাম অন্তর্ভুক্তর বিষয়ে বিভিন্ন কমিটির সমন্বয়হীনতা কাজ করছে। একাধিক কাগজপত্র জমা নিয়ে হয়রানি করা হচ্ছে। অনেকে আর্থিক ও শারীরিক চাপে পড়ছেন। বিভিন্ন দপ্তরে যেতে হচ্ছে। আমাদের কাছে এটি একটি বিশাল লড়াইয়ের ময়দানে পরিণত করেছে। অনেক আহতযোদ্ধাকে সরকার বিদেশে পাঠিয়েছে। এ জন্য সরকারকে ধন্যবাদ। এ ক্ষেত্রে আমাদের দেশের চিকিৎসকদের প্রতিও কৃতজ্ঞতা। তবে বিদেশে পাঠানো রোগীদের আর্থিক খরচ দিতেও সরকার কার্পণ্য করছে।
শনিবার, ০৯ আগস্ট ২০২৫
অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ বলেছেন, গত এক বছরে অন্তর্বর্তী সরকারের সময়ে দেশের তেমন কোনো পরিবর্তন দেখা যায়নি। বিশেষ করে জুলাই আন্দোলনে আহত, নিহত ও নিখোঁজদের পূর্ণ তালিকা ও পরিবারের দায়িত্ব নেয়ার ক্ষেত্রে সরকার ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছে। এতে সমন্বয়হীনতাও স্পষ্ট ফুটে উঠেছে।
শনিবার,(০৯ আগস্ট ২০২৫) দুপুরে রাজধানীর বিজয়নগরে ইকোনোমিক রিপোর্টার্স ফোরাম মিলনায়তনে গণতান্ত্রিক অধিকার কমিটি আয়োজিত ‘অন্তর্বর্তী সরকারের এক বছর: দায়িত্ব ও ভূমিকা পর্যালোচনা’ শীর্ষক সেমিনারে সভাপতির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। সেমিনারে গত এক বছরে বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের বিভিন্ন কর্মকাণ্ডের পর্যালোচনা করেন বক্তারা। এতে বিভিন্ন সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও শ্রমিক সংগঠনের প্রতিনিধিরা অংশ নেন।
আনু মুহাম্মদ বলেন, জুলাই ঘোষণাপত্রে এক-এগারোর প্রেক্ষাপট উল্লেখ করা হয়েছে। এটা ভালো কথা। তবে সে সময় ড. মুহাম্মদ ইউনূসের ভূমিকা কী ছিল, সেটি ব্যাখ্যা করতে হবে। কারণ তখন তাকে অনেক তৎপর দেখা গেছে। তিনি নিজেও নাগরিক শক্তি নামে একটি রাজনৈতিক দল খুলতে চেয়েছিলেন। পরে নানা কারণে এ ক্ষেত্রে আর এগোননি।
তিনি বলেন, একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচন করতে হলে সরকারকে পক্ষপাতহীন হতে হবে। না হলে নির্বাচন নিয়ে নতুন বিপর্যয় নেমে আসবে। তাই সরকারকে সব পক্ষের সঙ্গে আলোচনা করতে হবে এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে ঢেলে সাজাতে হবে।
তিনি আরও বলেন, মব ভায়োলেন্সের মাধ্যমে মাজার, ভাস্কর্য ভাঙচুর ও হামলায় জড়িতদের বিরুদ্ধে পদক্ষেপে সন্তোষজনক অগ্রগতি নেই। সরকারের কোনো কোনো দায়িত্বশীল ব্যক্তি এটিকে সাফাই গেয়েছেন। বলছেন, এটি নাকি পেসার গ্রুপ হিসেবে কাজ করছে।
অথচ পেসার গ্রুপে কাজ হওয়ার কথা দাবি আদায়ের শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি। আর মব সৃষ্টিকারীরা জাতিগত, ধর্মীয় সংখ্যালঘু ও নারীবিদ্বেষী কর্মকাণ্ড করছে।
আনু মুহাম্মদ অভিযোগ করেন, বিগত সরকারের সময়ে করা শ্রমিকদের মামলা প্রত্যাহার হয়নি। কিন্তু ড. ইউনূসসহ ক্ষমতাবানদের মামলা ঠিকই তুলে নেয়া হয়েছে। আর বিচার বিভাগের ক্ষেত্রেও কোনো পরিবর্তন হয়নি। বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড এখনও হচ্ছে। এসব বিষয়ে বিশেষ তদন্ত কমিটি হওয়া উচিত।
তিনি ’৭৪-এর বিশেষ ক্ষমতা আইন বাতিল না করার সমালোচনা করেন। বিগত সরকারের নিবর্তনমূলক আইন বাতিলের দাবি জানান।
তিনি বলেন, এক বছরে বিশ্বব্যাংক, আইএএফ ও জাইকার ওপর নির্ভরশীলতা কমার পরিবর্তে বেড়েছে। শিক্ষা ও চিকিৎসার বাণিজ্যকীকরণ করা হয়েছে। এ নিয়ে সরকারের দৃশ্যমান কোনো অগ্রগতি হয়নি। তবে সরকারের বিভিন্ন সমালোচনা থাকলেও এক বছরে অর্থ পাচার কমেছে। ব্যাংকিং ব্যবস্থায় যে ধস নেমেছিল, তাতে কিছুটা শৃঙ্খলা ফিরেছে। অন্যদিকে বিগত সরকারের আমলে রামপাল, আদানি ও এলএনজি চুক্তির তথ্য প্রকাশ করা হয়নি। বিদেশি আমদানিনির্ভর জ্বালানি চুক্তিতে সরকার কোনো পরিবর্তন করতে পারেনি।
তিনি বলেন, সরকার রাষ্ট্র সংস্কারে বিভিন্ন কমিশন গঠন করলেও শিক্ষা ও সংস্কৃতি নিয়ে কমিশন নেই। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে অনেকে ছাত্রলীগের মতো হতে চায়। সেটি অশনিসংকেত। তবে আশার দিক হলো, ছাত্র সংসদ নির্বাচনের দাবি পূরণ হতে যাচ্ছে।
শিল্পকলা অ্যাকাডেমির দুর্দশা দূর করা হয়নি মন্তব্য করে তিনি বলেন, শিল্পকলা অ্যাকাডেমি সামরিক বাহিনীর দখলমুক্ত করতে হবে। সাংস্কৃতিক পরিবেশনা না বাড়িয়ে তা দখল করা হয়েছে। অথচ জুলাই আন্দোলনে সাংস্কৃতিক কর্মীদের ভূমিকা ছিল প্রশংসনীয়। আমাদের তরুণদের ক্রীড়া চর্চার জন্য উন্মুক্ত জায়গা দখলমুক্ত করতে হবে। এছাড়াও পাহাড় ও সমতলে বৈষম্য, নারী কমিশনের প্রতি হিংস্র আক্রমণ, লিঙ্গ বৈষম্য ও বিভিন্ন দেশে রেমিট্যান্সযোদ্ধাদের নিপীড়নসহ গুরুত্বপূর্ণ অনেক ইস্যুতে সরকার দৃশ্যমান পদক্ষেপ নিতে পারেনি বলে উল্লেখ করেন আনু মুহাম্মদ।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক মোশাহিদা সুলতানা ঋতু বলেন, হিমাগারে কৃষককে বেশি টাকায় আলু রাখতে হচ্ছে। অথচ কৃষক ন্যায্য দাম পাচ্ছে না। টিএনজেডসহ অনেক কারখানা বন্ধ হয়ে যাওয়ায় অনেক মানুষ বেকার হয়ে গেছে। গত এক বছরে এ বিষয়ে রাষ্ট্রীয় কোনো উদ্যোগ নেয়া হয়নি।
চিনিকলগুলো দেশীয় কোম্পানিগুলোকে না দিয়ে বিদেশি প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে চুক্তি কেন করা হচ্ছে তা বোধগম্য নয়। শিক্ষাকে এখনও বাণিজ্যিকীকরণ করা হয়েছে। আবাসন সংকট বিরাজমান। আর কারিকুলামে বিতর্কিত জিনিস সংযোজন করা হয়েছে। গোপালগঞ্জে সেনাবাহিনী গুলি করে কয়েকজনকে হত্যা করেছে। সেখানে নিহতদের লাশের ময়নাতদন্ত করা হয়নি।
চলচ্চিত্র নির্মাতা আকরাম খান বলেন, ঐক্যের পরিবর্তে সরকার বিভেদ তৈরি করেছে। বিভিন্ন স্থানে মাজার ভাঙা হয়েছে। অথচ মাজার হলো প্রান্তিক মানুষের সাংস্কৃতিক কেন্দ্রবিন্দু। আর শিল্পকলায় এক বছর ডিজি নেই। কিছু ব্যক্তির কাছে কুক্ষিগত। সারাদেশের শিল্পকলা অ্যাকাডেমির অবস্থাও নাজুক। বিটিভিতেও প্রচার হচ্ছে নিম্নমানের অনুষ্ঠান। চলচ্চিত্র শিল্পও ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে। নজরুল ও রবীন্দ্রনাথ নিয়ে নানা ধরনের বিভক্তি তৈরি করা হচ্ছে। এক বছরে ক্রীড়া ও সাহিত্যও তেমন উন্নতি নেই।
লেখক ও গবেষক কল্লোল মোস্তফা বলেন, জুলাইয়ের অনেক অভিযুক্তের বিচার হলেও কার্যকর কতটুকু? কারণ ইতোমধ্যে অনেক প্রভাবশালী পালিয়ে গেছেন। আর সাধারণ অনেককে গণহারে মামলা দেয়া হচ্ছে। অনেক ক্ষেত্রে হয়রানিও করা হচ্ছে।
তিনি বলেন, ঐকমত্য কমিশনের ১৬৬টি সুপারিশের মধ্যে ৭৩টিতে ঐকমত্য হয়েছে। যেগুলো ঐকমত্য হয়েছে বা যেগুলো হয়নি সেগুলোর সমাধানের নির্দেশনা দেয়া হয়নি। আমলাতন্ত্রের পরিবর্তন হয়নি। ঢালাওভাবে বদলি করা হচ্ছে। রাজনৈতিক বিবেচনায় ১৮ জন বিচারককে বাধ্যতামূলক অবসর দেয়া হয়। এটি নীতিবহির্ভূত। তিনি অভিযোগ করেন, এনসিপির প্রতি সরকারের দুর্বলতা দেখা গেছে।
জুলাইয়ের আহতদের চিকিৎসা নিয়ে কাজ করা স্থপতি ফারহানা শারমিন ইমু বলেন, জুলাই আন্দোলনে আহত, নিহত ও নিখোঁজদের তালিকা তৈরিতে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কেন্দ্রীয় উপ-কমিটিকে প্রয়োজনীয় অর্থবরাদ্দ দেয়া হয়নি। ভুক্তভোগীদের নাম অন্তর্ভুক্তর বিষয়ে বিভিন্ন কমিটির সমন্বয়হীনতা কাজ করছে। একাধিক কাগজপত্র জমা নিয়ে হয়রানি করা হচ্ছে। অনেকে আর্থিক ও শারীরিক চাপে পড়ছেন। বিভিন্ন দপ্তরে যেতে হচ্ছে। আমাদের কাছে এটি একটি বিশাল লড়াইয়ের ময়দানে পরিণত করেছে। অনেক আহতযোদ্ধাকে সরকার বিদেশে পাঠিয়েছে। এ জন্য সরকারকে ধন্যবাদ। এ ক্ষেত্রে আমাদের দেশের চিকিৎসকদের প্রতিও কৃতজ্ঞতা। তবে বিদেশে পাঠানো রোগীদের আর্থিক খরচ দিতেও সরকার কার্পণ্য করছে।