চট্টগ্রামের কালিরছড়া খালের বর্তমান অবস্থা -সংবাদ
মহানগরীর আকবর শাহ থানাধীন কালিরছড়া খালটি দখলে আর দূষণে বিপন্ন হয়ে উঠেছে। প্রভাবশালীরা একের পর এক খালটি ভরাট করে নির্মাণ করেছেন নানা স্থাপনা। শুধু কালিরছড়া খাল নয় আশপাশের সরকারি জমি বিভিন্ন স্থানে অবৈধভাবে দখল করা হয়েছে। লেকসিটি ও ঢাকা-চট্টগ্রাম লিঙ্করোড অংশে বেশিরভাগ বেদখল হয়ে গেছে। যার ফলে খালে পানি প্রবাহে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হচ্ছে। এজন্য বর্ষাকালে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়। এমতবস্থায় এই কালিরছড়া খাল পুনরুদ্ধার ও পুনর্খননের পরিকল্পনা নিয়েছে পানি উন্নয়ন বোর্ড -(পাউবো)। এ প্রকল্পের মাধ্যমে অবৈধ দখলদার উচ্ছেদ ও খাল পুনর্খননের পরিকল্পনা রয়েছে। প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হলে বর্ষাকালে পানি নিষ্কাশন ও নগরীর জলাবদ্ধতা নিরসনে ভূমিকা রাখবে এমনটি বলেছেন পাউবোর সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।
সূত্র জানায়, খালের বিভিন্ন অংশ দখল করে প্রভাবশালী ও রাজনৈতিক নেতারা ভবন নির্মাণ করেছেন। ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকার আমলে স্থানীয় সাবেক কাউন্সিলর আকবর শাহ এলাকায় খালের জায়গা বেশি দখল করেছে। প্রভাবশালীরা খাল দখল করে বিভিন্ন স্থানে নানা স্থাপনা নির্মাণ করেছে। এসব স্থাপনা উচ্ছেদ ও দখলদারমুক্ত এখন বড় চ্যালেঞ্জ।
সরজমিনে দেখা যায়, আকবর শাহ থানার বিশ্ব কলোনির লেকসিটি হাউজিং প্রকল্প এলাকায় কালিরছড়া খাল দুই পাশ থেকে দখল করে দেয়াল দেয়া হয়। এ অংশে খালটি নালায় পরিণত হয়েছে। সিটি করপোরেশনের একটি রাস্তাও রয়েছে। বিভিন্ন অংশে খালের জায়গা দখল করে ভবন নির্মাণ করা হয়েছে। বিশ্ব কলোনি এলাকায় খাল ভবন ও টিনশেড বাড়ি রয়েছে। খালের জায়গা দখল করে আবাসিক ও বাণিজ্যিক ভবন নির্মাণ করেছেন প্রভাবশালীরা।
পানি উন্নয়ন বোর্ড জানায়, নগরের আকবর শাহ থেকে লতিফপুরের উত্তর কাট্টলী পর্যন্ত পুনরুজ্জীবিত করার উদ্যোগ নেয়া হয়। আকবর শাহ থেকে লতিফপুর খালের পাঁচ দশমিক ৩০০ মিটার পুনর্খনন করা হবে। আর আট দশমিক ৬০ কিলোমিটার অংশে রিটেইনিং ওয়াল নির্মাণ করা হবে। প্রকল্পে দশমিক ২০০ হেক্টর জমি অধিগ্রহণ করা হবে। ওই খাল খনন ও দুই ধারে রিটেইনিং ওয়াল নির্মাণে প্রাথমিকভাবে ব্যয় ধরা হয়েছে ২১৯ কোটি ৬৭ লাখ টাকা।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী শওকত ইবনে সাহীদ বলেন, প্রকল্পটি পানি উন্নয়ন বোর্ডে জমা দেয়া হয়েছে। সেখান থেকে যাচাই-বাছাই করে পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হবে।
তিনি বলেন, কালিরছড়া খাল এবং আশপাশের সরকারি জমি বিভিন্ন স্থানে অবৈধভাবে দখল করা হয়েছে। লেকসিটি ও ঢাকা-চট্টগ্রাম লিঙ্করোড অংশে বেশির ভাগ বেদখল হয়ে গেছে। যার ফলে খালে পানি প্রবাহে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হচ্ছে। এজন্য বর্ষাকালে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়। এ প্রকল্পের মাধ্যমে অবৈধ দখলদার উচ্ছেদ ও খাল পুনর্খননের পরিকল্পনা রয়েছে। এতে বর্ষাকালে পানি নিষ্কাশন ও নগরীর জলাবদ্ধতা নিরসনে ভূমিকা রাখবে।
পাউবো সূত্র আরও জানায়, কালিরছড়া খালের ওপর একতলা থেকে পাঁচতলা ভবন, কাঁচা-পাকা বাড়িসহ নানা ধরনের স্থাপনা নির্মাণ করা হয়েছে। বেশি দখল হয়েছে বিশ্ব কলোনি, সিটি গেট, কৈবল্যধাম ও লতিফপুর অংশে। লেকসিটি এলাকায় খালের প্রস্থ ১৮ দশমিক ৫ ফুট থাকলেও এখন তিন থেকে চার ফুটে ঠেকেছে। দখলের কারণে এখন বিভিন্ন স্থানে খালের অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া দুস্কর হয়ে দাঁড়িয়েছে।সরজমিনে স্থানীয়রা জানায়, গত বছরের (২০২৪ সাল) অক্টোবর মাসে কালিরছড়া খালের অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করেছিল জেলা প্রশাসন। অভিযানে লেক সিটি আবাসিক এলাকার বাসিন্দা বাধা দেয়। পরে পুলিশের হস্তক্ষেপে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসে। অভিযানে আকবর শাহ এলাকার হারবাতলী থেকে উজানে কালিরছড়া খালের এক কিলোমিটার অংশ দখলমুক্ত করা হয়। তবে পরবর্তী সময়ে তা আবার বেদখল হয়ে যায়। আকবর শাহ সুপারি বাগান এলাকায় সাবেক কাউন্সিলর জহুরুল আলম জসিম পাহাড় কেটে কালিরছড়া খাল ভরাট করে স্থাপনা নির্মাণ করার অভিযোগ ছিল। ২০২৩ সালের ২৬ জানুয়ারি কালিরছড়া খাল দখল ও পাহাড় কাটা স্থান পরিদর্শনে গিয়েছিলেন বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতির (বেলা) নির্বাহী প্রধান সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান। এ সময় তার গাড়ি বহরে হামলা করা হয়। সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বর্তমানে পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা। সেই মৃতপ্রায় কালিরছড়া খালে প্রাণ ফেরানোর পরিকল্পনা নিয়েছে পানি উন্নয়ন বোর্ড।
সাম্প্রতিক সময়ে হালিশহর ও কাট্টলী এলাকায় বড় ধরনের উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করেছে পানি উন্নয়ন বোর্ড। জেলা প্রশাসন, সেনাবাহিনীসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সহায়তায় অভিযান চালিয়ে ১১৭ একর জায়গা অবৈধ দখলমুক্ত করেছে।
চট্টগ্রামের কালিরছড়া খালের বর্তমান অবস্থা -সংবাদ
শনিবার, ০৯ আগস্ট ২০২৫
মহানগরীর আকবর শাহ থানাধীন কালিরছড়া খালটি দখলে আর দূষণে বিপন্ন হয়ে উঠেছে। প্রভাবশালীরা একের পর এক খালটি ভরাট করে নির্মাণ করেছেন নানা স্থাপনা। শুধু কালিরছড়া খাল নয় আশপাশের সরকারি জমি বিভিন্ন স্থানে অবৈধভাবে দখল করা হয়েছে। লেকসিটি ও ঢাকা-চট্টগ্রাম লিঙ্করোড অংশে বেশিরভাগ বেদখল হয়ে গেছে। যার ফলে খালে পানি প্রবাহে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হচ্ছে। এজন্য বর্ষাকালে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়। এমতবস্থায় এই কালিরছড়া খাল পুনরুদ্ধার ও পুনর্খননের পরিকল্পনা নিয়েছে পানি উন্নয়ন বোর্ড -(পাউবো)। এ প্রকল্পের মাধ্যমে অবৈধ দখলদার উচ্ছেদ ও খাল পুনর্খননের পরিকল্পনা রয়েছে। প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হলে বর্ষাকালে পানি নিষ্কাশন ও নগরীর জলাবদ্ধতা নিরসনে ভূমিকা রাখবে এমনটি বলেছেন পাউবোর সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।
সূত্র জানায়, খালের বিভিন্ন অংশ দখল করে প্রভাবশালী ও রাজনৈতিক নেতারা ভবন নির্মাণ করেছেন। ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকার আমলে স্থানীয় সাবেক কাউন্সিলর আকবর শাহ এলাকায় খালের জায়গা বেশি দখল করেছে। প্রভাবশালীরা খাল দখল করে বিভিন্ন স্থানে নানা স্থাপনা নির্মাণ করেছে। এসব স্থাপনা উচ্ছেদ ও দখলদারমুক্ত এখন বড় চ্যালেঞ্জ।
সরজমিনে দেখা যায়, আকবর শাহ থানার বিশ্ব কলোনির লেকসিটি হাউজিং প্রকল্প এলাকায় কালিরছড়া খাল দুই পাশ থেকে দখল করে দেয়াল দেয়া হয়। এ অংশে খালটি নালায় পরিণত হয়েছে। সিটি করপোরেশনের একটি রাস্তাও রয়েছে। বিভিন্ন অংশে খালের জায়গা দখল করে ভবন নির্মাণ করা হয়েছে। বিশ্ব কলোনি এলাকায় খাল ভবন ও টিনশেড বাড়ি রয়েছে। খালের জায়গা দখল করে আবাসিক ও বাণিজ্যিক ভবন নির্মাণ করেছেন প্রভাবশালীরা।
পানি উন্নয়ন বোর্ড জানায়, নগরের আকবর শাহ থেকে লতিফপুরের উত্তর কাট্টলী পর্যন্ত পুনরুজ্জীবিত করার উদ্যোগ নেয়া হয়। আকবর শাহ থেকে লতিফপুর খালের পাঁচ দশমিক ৩০০ মিটার পুনর্খনন করা হবে। আর আট দশমিক ৬০ কিলোমিটার অংশে রিটেইনিং ওয়াল নির্মাণ করা হবে। প্রকল্পে দশমিক ২০০ হেক্টর জমি অধিগ্রহণ করা হবে। ওই খাল খনন ও দুই ধারে রিটেইনিং ওয়াল নির্মাণে প্রাথমিকভাবে ব্যয় ধরা হয়েছে ২১৯ কোটি ৬৭ লাখ টাকা।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী শওকত ইবনে সাহীদ বলেন, প্রকল্পটি পানি উন্নয়ন বোর্ডে জমা দেয়া হয়েছে। সেখান থেকে যাচাই-বাছাই করে পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হবে।
তিনি বলেন, কালিরছড়া খাল এবং আশপাশের সরকারি জমি বিভিন্ন স্থানে অবৈধভাবে দখল করা হয়েছে। লেকসিটি ও ঢাকা-চট্টগ্রাম লিঙ্করোড অংশে বেশির ভাগ বেদখল হয়ে গেছে। যার ফলে খালে পানি প্রবাহে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হচ্ছে। এজন্য বর্ষাকালে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়। এ প্রকল্পের মাধ্যমে অবৈধ দখলদার উচ্ছেদ ও খাল পুনর্খননের পরিকল্পনা রয়েছে। এতে বর্ষাকালে পানি নিষ্কাশন ও নগরীর জলাবদ্ধতা নিরসনে ভূমিকা রাখবে।
পাউবো সূত্র আরও জানায়, কালিরছড়া খালের ওপর একতলা থেকে পাঁচতলা ভবন, কাঁচা-পাকা বাড়িসহ নানা ধরনের স্থাপনা নির্মাণ করা হয়েছে। বেশি দখল হয়েছে বিশ্ব কলোনি, সিটি গেট, কৈবল্যধাম ও লতিফপুর অংশে। লেকসিটি এলাকায় খালের প্রস্থ ১৮ দশমিক ৫ ফুট থাকলেও এখন তিন থেকে চার ফুটে ঠেকেছে। দখলের কারণে এখন বিভিন্ন স্থানে খালের অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া দুস্কর হয়ে দাঁড়িয়েছে।সরজমিনে স্থানীয়রা জানায়, গত বছরের (২০২৪ সাল) অক্টোবর মাসে কালিরছড়া খালের অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করেছিল জেলা প্রশাসন। অভিযানে লেক সিটি আবাসিক এলাকার বাসিন্দা বাধা দেয়। পরে পুলিশের হস্তক্ষেপে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসে। অভিযানে আকবর শাহ এলাকার হারবাতলী থেকে উজানে কালিরছড়া খালের এক কিলোমিটার অংশ দখলমুক্ত করা হয়। তবে পরবর্তী সময়ে তা আবার বেদখল হয়ে যায়। আকবর শাহ সুপারি বাগান এলাকায় সাবেক কাউন্সিলর জহুরুল আলম জসিম পাহাড় কেটে কালিরছড়া খাল ভরাট করে স্থাপনা নির্মাণ করার অভিযোগ ছিল। ২০২৩ সালের ২৬ জানুয়ারি কালিরছড়া খাল দখল ও পাহাড় কাটা স্থান পরিদর্শনে গিয়েছিলেন বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতির (বেলা) নির্বাহী প্রধান সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান। এ সময় তার গাড়ি বহরে হামলা করা হয়। সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বর্তমানে পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা। সেই মৃতপ্রায় কালিরছড়া খালে প্রাণ ফেরানোর পরিকল্পনা নিয়েছে পানি উন্নয়ন বোর্ড।
সাম্প্রতিক সময়ে হালিশহর ও কাট্টলী এলাকায় বড় ধরনের উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করেছে পানি উন্নয়ন বোর্ড। জেলা প্রশাসন, সেনাবাহিনীসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সহায়তায় অভিযান চালিয়ে ১১৭ একর জায়গা অবৈধ দখলমুক্ত করেছে।