ছবি : অনলাইন থেকে সংগৃহীত
গত ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে আরও ৩২৫ জন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে। তার মধ্যে চিকিৎসাধীন অবস্থায় বরিশালে ১ জন ও ঢাকা দক্ষিণ সিটিতে ২ জনের মৃত্যু হয়েছে।
এ নিয়ে চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে শনিবার,(০৯ আগস্ট ২০২৫) পর্যন্ত ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছে ২৩ হাজার ৭৩৫ জন। আর চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছে ৯৮ জন।
২৪ ঘণ্টায় আক্রান্তদের মধ্যে বরিশাল বিভাগে ৬৬ জন, চট্টগ্রাম বিভাগে ৫৪ জন, ঢাকা বিভাগে ৪৯ জন, ঢাকা উত্তর সিটিতে ৩৩ জন, ঢাকা দক্ষিণ সিটিতে ৬২ জন, খুলনা বিভাগে ১৪ জন, ময়মনসিংহ বিভাগে ৬ জন, রাজশাহীতে ৪১ জন।
আক্রান্তদের মধ্যে ৫ বছর বয়সের শিশু ২৪টি, ৬-১০ বছর বয়সের শিশু ১০টি, ১১-১৫ বছর বয়সের শিশু ২৮টি, ১৬-২০ বছর বয়সের ৩৪ জন, ২১-২৫ বছর বয়সের ৬৭ জন, ২৬-৩০ বছর বয়সের ৪২ জন, ৭৬-৮০ বছর বয়সের ৩ জন আক্রান্ত হয়েছে। এভাবে প্রতিদিন শিশু ও বৃদ্ধসহ নানা বয়সের মানুষ ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হচ্ছে। আবার মারাও যাচ্ছে।
হাসপাতালের তথ্যমতে, আক্রান্তদের মধ্যে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি আছে ৬২
জন, মিটফোর্ড হাসপাতালে ৩২ জন, সোহ্রাওয়ার্দী হাসপাতালে ২৯ জন, মুগদা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ৬৮ জন, কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে ২৫ জন, মহাখালী ডিএনসিসি ডেডিকেটেড কোভিড-১৯ হাসপাতালে ২৮ জন ভর্তি আছে। এভাবে রাজধানীর ১৮টি সরকারি হাসপাতালে এখনও ২৮১ জন ভর্তি আছে। এভাবে সারাদেশের বিভিন্ন হাসপাতাল ও স্বাস্থ্যকেন্দ্রে এখনও ১৩৩৩ জন ভর্তি আছে।
ডেঙ্গু পরিস্থিতি নিয়ে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের কীটতত্ত্ব বিশেষজ্ঞ কবিরুল বাসার তার এক প্রতিবেদনে বলেছেন, ডেঙ্গু বাংলাদেশের জন্য একটি জনস্বাস্থ্য সমস্যা হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে।
জলবায়ু পরিবর্তন, অপরিকল্পিত নগরায়ণ এবং জনসচেতনতার অভাবের ফলে এডিস মশাবাহিত এই রোগের প্রকোপ ক্রমশ বৃদ্ধি পাচ্ছে।
প্রতিবছর বর্ষা মৌসুমে ডেঙ্গুর সংক্রমণ ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়ে। যা জনস্বাস্থ্য ব্যবস্থার ওপর মারাত্মক চাপ সৃষ্টি করে। এখনই আগাম ব্যবস্থা না নিলে ২০২৫ সালে ডেঙ্গু পরিস্থিতি খারাপ হওয়ার সম্ভবনা রয়েছে।
বাংলাদেশে ডেঙ্গু সংক্রমণ প্রথম ধরা পড়ে ২০০০ সালে, তবে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে এর প্রকোপ আশঙ্কাজনকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। বর্তমানে ডেঙ্গু শুধু ঢাকায় সীমাবদ্ব নেই। বরং সারাদেশে ছড়িয়ে পড়েছে।
এডিস মশা সাধারণত পরিষ্কার ও জমে থাকা পানিতে ডিম পাড়ে। যেমন- ফুলের টব, পরিত্যক্ত টায়ার, প্লাস্টিকের পাত্র, ফ্রিজের ট্রে, এসির পানির জমানো স্থান ইত্যাদিতে মশা ডিম পাড়ে।
বাংলাদেশের গ্রাম থেকে শহরে প্রায় সব জায়গায় অপরিকল্পিত নগরায়ণ ও দুর্বল বর্জ্য ব্যবস্থাপনার ফলে ডেঙ্গুর প্রকোপ দ্রুত ছড়িয়ে পড়েছে।
অপরিকল্পিত ড্রেনেজ ব্যবস্থা এবং বৃষ্টির পানি নিষ্কাশনের অভাবে বিভিন্ন স্থানে পানি জমে থাকে। যা মশার বংশ বৃদ্ধির ক্ষেত্র তৈরি করে। শহরে উঁচু ভবন ও ঘনবসতিপূর্ণ এলাকায় আলো-বাতাস চলাচল কম হওয়ায় মশার সংখ্যা দ্রুত বৃদ্ধি পায়।
জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে বাংলাদেশে তাপমাত্রা ও আর্দ্রতা বৃদ্ধি পেয়েছে, যা ডেঙ্গু সংক্রমণের জন্য অত্যন্ত সহায়ক পরিবেশ তৈরি করছে। গবেষণায় দেখা গেছে, উষ্ণ আবহাওয়ায় ডিম থেকে পূর্ণবয়স্ক মশা হয়ে উঠতে কম সময় লাগে। ফলে মশার সংখ্যা দ্রুত বৃদ্ধি পায়।
আগে শুধু বর্ষাকালে ডেঙ্গু দেখা যেত, কিন্তু জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে এখন গ্রীষ্মকালেও ডেঙ্গুর প্রকোপ দেখা যাচ্ছে। জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে অনিয়মিত ও অতি বর্ষণের ফলে বিভিন্ন স্থানে পানি জমে থাকে, যা মশার জন্মের জন্য উপযুক্ত পরিবেশ তৈরি করে।
ডেঙ্গু খুব দ্রুত মিউটেটেড বা পরিবর্তন হতে পারে। গবেষণায় দেখা গেছে, ডেঙ্গুর ধরন পরিবর্তন হলে সংক্রমণ আরও মারাত্মক হতে পারে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, নগর পরিকল্পনা উন্নত করা, বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কার্যকর করা এবং জনগণকে সচেতন করা হলে ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব। এখনই কার্যকর ব্যবস্থা না নিলে ভবিষ্যতে আরও মারাত্মক আকার ধারণ করতে পারে বলে তারা আশঙ্কা করছেন।
ডেঙ্গু এখন বাংলাদেশের জন্য একটি ক্রমবর্ধমান স্বাস্থ্যঝুঁকি হয়ে উঠেছে। এটি প্রতিরোধে সরকারি উদ্যোগ, গবেষণা, জনসচেতনতা এবং ব্যক্তিগত প্রতিরোধ ব্যবস্থা একসঙ্গে কাজ করতে হবে।
ছবি : অনলাইন থেকে সংগৃহীত
রোববার, ১০ আগস্ট ২০২৫
গত ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে আরও ৩২৫ জন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে। তার মধ্যে চিকিৎসাধীন অবস্থায় বরিশালে ১ জন ও ঢাকা দক্ষিণ সিটিতে ২ জনের মৃত্যু হয়েছে।
এ নিয়ে চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে শনিবার,(০৯ আগস্ট ২০২৫) পর্যন্ত ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছে ২৩ হাজার ৭৩৫ জন। আর চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছে ৯৮ জন।
২৪ ঘণ্টায় আক্রান্তদের মধ্যে বরিশাল বিভাগে ৬৬ জন, চট্টগ্রাম বিভাগে ৫৪ জন, ঢাকা বিভাগে ৪৯ জন, ঢাকা উত্তর সিটিতে ৩৩ জন, ঢাকা দক্ষিণ সিটিতে ৬২ জন, খুলনা বিভাগে ১৪ জন, ময়মনসিংহ বিভাগে ৬ জন, রাজশাহীতে ৪১ জন।
আক্রান্তদের মধ্যে ৫ বছর বয়সের শিশু ২৪টি, ৬-১০ বছর বয়সের শিশু ১০টি, ১১-১৫ বছর বয়সের শিশু ২৮টি, ১৬-২০ বছর বয়সের ৩৪ জন, ২১-২৫ বছর বয়সের ৬৭ জন, ২৬-৩০ বছর বয়সের ৪২ জন, ৭৬-৮০ বছর বয়সের ৩ জন আক্রান্ত হয়েছে। এভাবে প্রতিদিন শিশু ও বৃদ্ধসহ নানা বয়সের মানুষ ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হচ্ছে। আবার মারাও যাচ্ছে।
হাসপাতালের তথ্যমতে, আক্রান্তদের মধ্যে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি আছে ৬২
জন, মিটফোর্ড হাসপাতালে ৩২ জন, সোহ্রাওয়ার্দী হাসপাতালে ২৯ জন, মুগদা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ৬৮ জন, কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে ২৫ জন, মহাখালী ডিএনসিসি ডেডিকেটেড কোভিড-১৯ হাসপাতালে ২৮ জন ভর্তি আছে। এভাবে রাজধানীর ১৮টি সরকারি হাসপাতালে এখনও ২৮১ জন ভর্তি আছে। এভাবে সারাদেশের বিভিন্ন হাসপাতাল ও স্বাস্থ্যকেন্দ্রে এখনও ১৩৩৩ জন ভর্তি আছে।
ডেঙ্গু পরিস্থিতি নিয়ে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের কীটতত্ত্ব বিশেষজ্ঞ কবিরুল বাসার তার এক প্রতিবেদনে বলেছেন, ডেঙ্গু বাংলাদেশের জন্য একটি জনস্বাস্থ্য সমস্যা হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে।
জলবায়ু পরিবর্তন, অপরিকল্পিত নগরায়ণ এবং জনসচেতনতার অভাবের ফলে এডিস মশাবাহিত এই রোগের প্রকোপ ক্রমশ বৃদ্ধি পাচ্ছে।
প্রতিবছর বর্ষা মৌসুমে ডেঙ্গুর সংক্রমণ ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়ে। যা জনস্বাস্থ্য ব্যবস্থার ওপর মারাত্মক চাপ সৃষ্টি করে। এখনই আগাম ব্যবস্থা না নিলে ২০২৫ সালে ডেঙ্গু পরিস্থিতি খারাপ হওয়ার সম্ভবনা রয়েছে।
বাংলাদেশে ডেঙ্গু সংক্রমণ প্রথম ধরা পড়ে ২০০০ সালে, তবে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে এর প্রকোপ আশঙ্কাজনকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। বর্তমানে ডেঙ্গু শুধু ঢাকায় সীমাবদ্ব নেই। বরং সারাদেশে ছড়িয়ে পড়েছে।
এডিস মশা সাধারণত পরিষ্কার ও জমে থাকা পানিতে ডিম পাড়ে। যেমন- ফুলের টব, পরিত্যক্ত টায়ার, প্লাস্টিকের পাত্র, ফ্রিজের ট্রে, এসির পানির জমানো স্থান ইত্যাদিতে মশা ডিম পাড়ে।
বাংলাদেশের গ্রাম থেকে শহরে প্রায় সব জায়গায় অপরিকল্পিত নগরায়ণ ও দুর্বল বর্জ্য ব্যবস্থাপনার ফলে ডেঙ্গুর প্রকোপ দ্রুত ছড়িয়ে পড়েছে।
অপরিকল্পিত ড্রেনেজ ব্যবস্থা এবং বৃষ্টির পানি নিষ্কাশনের অভাবে বিভিন্ন স্থানে পানি জমে থাকে। যা মশার বংশ বৃদ্ধির ক্ষেত্র তৈরি করে। শহরে উঁচু ভবন ও ঘনবসতিপূর্ণ এলাকায় আলো-বাতাস চলাচল কম হওয়ায় মশার সংখ্যা দ্রুত বৃদ্ধি পায়।
জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে বাংলাদেশে তাপমাত্রা ও আর্দ্রতা বৃদ্ধি পেয়েছে, যা ডেঙ্গু সংক্রমণের জন্য অত্যন্ত সহায়ক পরিবেশ তৈরি করছে। গবেষণায় দেখা গেছে, উষ্ণ আবহাওয়ায় ডিম থেকে পূর্ণবয়স্ক মশা হয়ে উঠতে কম সময় লাগে। ফলে মশার সংখ্যা দ্রুত বৃদ্ধি পায়।
আগে শুধু বর্ষাকালে ডেঙ্গু দেখা যেত, কিন্তু জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে এখন গ্রীষ্মকালেও ডেঙ্গুর প্রকোপ দেখা যাচ্ছে। জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে অনিয়মিত ও অতি বর্ষণের ফলে বিভিন্ন স্থানে পানি জমে থাকে, যা মশার জন্মের জন্য উপযুক্ত পরিবেশ তৈরি করে।
ডেঙ্গু খুব দ্রুত মিউটেটেড বা পরিবর্তন হতে পারে। গবেষণায় দেখা গেছে, ডেঙ্গুর ধরন পরিবর্তন হলে সংক্রমণ আরও মারাত্মক হতে পারে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, নগর পরিকল্পনা উন্নত করা, বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কার্যকর করা এবং জনগণকে সচেতন করা হলে ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব। এখনই কার্যকর ব্যবস্থা না নিলে ভবিষ্যতে আরও মারাত্মক আকার ধারণ করতে পারে বলে তারা আশঙ্কা করছেন।
ডেঙ্গু এখন বাংলাদেশের জন্য একটি ক্রমবর্ধমান স্বাস্থ্যঝুঁকি হয়ে উঠেছে। এটি প্রতিরোধে সরকারি উদ্যোগ, গবেষণা, জনসচেতনতা এবং ব্যক্তিগত প্রতিরোধ ব্যবস্থা একসঙ্গে কাজ করতে হবে।