alt

জাতীয়

‘জুলাই সনদ’: মতপার্থক্য নিরসনে বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে আলোচনা শুরু করেছে ঐকমত্য কমিশন

নিজস্ব বার্তা পরিবেশক : রোববার, ১০ আগস্ট ২০২৫

রাষ্ট্র সংস্কারের লক্ষ্যে অন্তর্বর্তী সরকার ‘জুলাই সনদ’ প্রণয়নের যে উদ্যোগ নিয়েছিল সেটি এখনও চূড়ান্ত করা যায়নি। আবার, এই সনদ চূড়ান্ত হলে এর বাস্তবায়ন কীভাবে হবে- এ নিয়েও বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী ও বৈষম্যবিরোধীদের গড়া দল জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) মতপার্থক্য প্রকাশ্যে এসেছে।

‘জুলাই জাতীয় সনদের’ আইনি বাধ্যবাধকতা নিশ্চিত করা এবং বাস্তবায়নের পদ্ধতি কী হবে- তার উপায় খুঁজে বের করতে বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে আলোচনা শুরু করেছে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন। গতকাল জাতীয় সংসদ ভবনের এলডি হলে আইন ও সংবিধান বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে কমিশনের আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়।

গত সপ্তাহে ঐকমত্য কমিশন জানিয়েছিল, ‘জুলাই সনদ’ চূড়ান্ত করা ও এর বাস্তবায়ন পদ্ধতি ঠিক করতে তারা আবারও আলোচনা শুরু করবে। প্রথমে বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে আলোচনায় বসবে কমিশন। এরপর ওই আলোচনাকে ভিত্তি হিসেবে নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে তৃতীয় দফায় বৈঠক করে সনদ বাস্তবায়নের বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।

গতকাল ঐকমত্য কমিশনের আলোচনায় বিশেষজ্ঞ হিসেবে অংশ নেন সুপ্রিম কোর্টের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি এম এ মতিন, বিচারপতি মইনুল ইসলাম চৌধুরী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন অনুষদের ডিন মোহাম্মদ ইকরামুল হক, বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের সিনিয়র অ্যাডভোকেট ড. শরিফ ভূঁইয়া, ব্যারিস্টার তানিম হোসেইন শাওন ও ব্যারিস্টার ইমরান সিদ্দিক। সভায় ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতি আলী রীয়াজ, সদস্য বিচারপতি মো. এমদাদুল হক, ইফতেখারুজ্জামান, বদিউল আলম মজুমদার, সফর রাজ হোসেন ও মো. আইয়ুব মিয়া এবং প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মনির হায়দার উপস্থিত ছিলেন।

‘জুলাই সনদ’ তৈরি করতে দফায় দফায় দলগুলোর সঙ্গে আলোচনায় বসেছে ঐকমত্য কমিশন এবং দলগুলোর কাছে একাধিকবার সনদের খসড়াও পাঠানো হয়েছে। সবশেষ গত ২৮ জুলাই সনদের খসড়া পাঠানো হয় দলগুলোর কাছে। দলগুলোও তার জবাব দিয়েছে।

শিক্ষার্থী-জনতার অভ্যুত্থানে গত বছর ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতন ঘটে। দলটির প্রধান ও তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ওইদিনই দেশত্যাগ করে ভারতে চলে যান। তিন দিন পর ৮ আগস্ট মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব নেয় অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। এই সরকার ক্ষমতা গ্রহণের পর বাংলাদেশের বিভিন্ন খাতে সংস্কার আনার জন্য নানারকম উদ্যোগ গ্রহণ করে। এই লক্ষ্যে সংবিধান, নির্বাচন ব্যবস্থা, বিচার বিভাগ, জনপ্রশাসন, দুর্নীতি দমন কমিশনসহ মোট ১১টি কমিশন গঠন করা হয়।

কমিশনগুলো রাষ্ট্র সংস্কারের জন্য বিভিন্ন প্রস্তাব দেয়, যা নিয়ে গত কয়েক মাস ধরে ৩০টি রাজনৈতিক দলের সঙ্গে ধারাবাহিক বৈঠক করেছে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন। কমিশনগুলোর প্রস্তাবিত যেসব সুপারিশ বাস্তবায়নে সব রাজনৈতিক দল একমত হবে, সেগুলো নিয়ে ‘জুলাই জাতীয় সনদ’ তৈরি হওয়ার কথা রয়েছে।

সব রাজনৈতিক দলের ঐকমত্যের ভিত্তিতে রাষ্ট্র সংস্কার করতে চলতি বছরের ১৫ ফেব্রুয়ারি থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে ছয় মাসের জন্য কাজ শুরু করে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন। স্বভাবতই কমিশনের মেয়াদ শেষ হওয়ার কথা ১৫ আগস্ট।

প্রাথমিকভাবে লক্ষ্য ছিল, চলতি বছরের জুলাই মাসের মধ্যে সনদ চূড়ান্ত করা হবে। কিন্তু দলগুলো সব প্রস্তাবের সঙ্গে একমত না হওয়ায় সনদের খসড়া তৈরি হলেও এখনও পর্যন্ত এটিকে চূড়ান্ত করা যায়নি। ওই খসড়ায় বলা আছে, আগামী নির্বাচনের মাধ্যমে সরকার গঠনের পরবর্তী দুই বছরের মধ্যে সংস্কার প্রস্তাবগুলো বাস্তবায়নের অঙ্গীকার করবে দলগুলো।

এখন যদি ঐকমত্যে পৌঁছে চূড়ান্ত সনদে রাজনৈতিক দলগুলোর স্বাক্ষর করা সম্ভব না হয়, তখন কী হবে- এই আলোচনাও রয়েছে।

দুই বছরের মধ্যে সংস্কার প্রস্তাব বাস্তবায়নের অঙ্গীকারের বিষয়ে বিএনপির আপত্তি না থাকলেও কিছু দলের এখানে আপত্তি রয়েছে। বিশেষ করে, জামায়াতে ইসলামী ও এনসিপি অন্তর্বর্তী সরকারের অধীনেই বাস্তবায়ন চাইছে। কারণ সংস্কার প্রস্তাবগুলো বাস্তবায়নের দায়িত্ব নির্বাচিত সরকারের হাতে ছেড়ে দেয়া হলে, তা শেষ পর্যন্ত কতটা বাস্তবায়ন হবে- এই প্রশ্ন জামায়াত ও এনসিপির। তারা চায়, জুলাই সনদকে একটি আইনি ভিত্তি দেয়া হোক।

তবে বিএনপি বলছে, ‘জুলাই সনদের আইন ভিত্তি প্রয়োজন নেই। এ বিষয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ সাংবাদিকের বলেন, ‘স্বাক্ষর করার জন্য সব দল একমত। শুধু দুই-তিনটি দল বলেছে, এটি কীভাবে বাস্তবায়ন হবে এবং এর আইনি ভিত্তি কী হবে, তা নির্ধারণ না হলে তারা সই করবেন, কী করবেন না, সে বিষয়ে চিন্তা করবেন।’

বিএনপির এই নেতা আরও বলেন, ‘আমরা বলেছি, সাংবিধানিক সংশোধনীগুলো বাদে বাকি সব সংস্কার প্রস্তাব এই সরকার এই সময়ের ভেতরেই বাস্তবায়ন করতে পারে। এজন্য সর্বোচ্চ প্রয়োজন, আইনের সংশোধনীর জন্য অধ্যাদেশ জারি ও কিছু কিছু ক্ষেত্রে নির্বাহী আদেশ এবং অফিস আদেশ। এটি প্রতিদিন বাস্তবায়ন হচ্ছে। সাংবিধানিক সংশোধনীগুলো বাস্তবায়নের বৈধ ফোরাম জাতীয় সংসদ’।

দলগুলো ঐকমত্যে না আসতে পারলে ‘জুলাই সনদ’ বাস্তবায়ন কীভাবে হবে। এ প্রসঙ্গে ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতি আলী রীয়াজ সংবাদমাধ্যমকে বলেন, ‘কমিশনের পরবর্তী কাজ জুলাই সনদ বাস্তবায়নের পদ্ধতি নির্ধারণ করা। তবে দলগুলোকেই বাস্তবায়নের পথ খুঁজে বের করতে হবে। ঐকমত্য কমিশন অনুঘটকের কাজ করতে পারে।’

তিনি বলেন, ‘সনদে যে সমস্ত জায়গায় ঐকমত্য হওয়ার, তা হয়েছে। এরপর আর এটা নিয়ে নতুন কিছু করার আমরা চেষ্টা করছি না। যেগুলো নোট অব ডিসেন্ট আছে। ওগুলো নিয়েই সনদ হবে।’

ছবি

সরকার বদলালেও বৈষম্য কমেনি, আদিবাসী দিবসের আলোচনায় বক্তারা

এসএসসি ও সমমান পরীক্ষার খাতা পুনঃনিরীক্ষণে নতুন করে পাস প্রায় ৫ হাজার শিক্ষার্থী

গ্রেপ্তার ৯ জন তিন দিনের রিমান্ডে

ট্রাইব্যুনালে ‘জঙ্গি নাটক’ সাজিয়ে জাহিদুল হত্যার অভিযোগ

ছবি

নিরাপদ সড়কের রূপরেখা দিলো রোড সেইফটি ফাউন্ডেশন

ছবি

হারুন, বিপ্লব, নুরুলসহ ৪০ পুলিশ কর্মকর্তার পদক প্রত্যাহার

ছবি

প্রধান উপদেষ্টা মালয়েশিয়া যাচ্ছেন আজ

ছবি

পাটুরিয়া ফেরিঘাটে ভেসে গেছে পন্টুন-জেটি, জনদুর্ভোগ

খসড়া ভোটার তালিকা প্রকাশ: মোট ভোটার ১২ কোটি ৬১ লাখ, নতুন যুক্ত প্রায় ৪৬ লাখ

কলকাতায় ‘আওয়ামী লীগের অফিস’: অন্তর্বর্তী সরকারের ‘নিবিড় পর্যবেক্ষণে’

ছবি

ডেঙ্গু: এ বছর ১শ’ ছাড়িয়েছে মৃত্যু

‘শূন্য রিটার্নের’ গুজব: মিথ্যা তথ্য দিলে ৫ বছরের কারাদণ্ড

ছবি

অর্থনৈতিক ‘শ্বেতপত্রের’ সুপারিশের বাস্তবায়ন দেখছে না সিপিডি

ছবি

সংস্কার বাস্তবায়নে বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে বৈঠক করেছে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন

ছবি

প্রধান উপদেষ্টার মালয়েশিয়া সফর সোমবার: ৫টি সমঝোতা স্মারক সইয়ের সম্ভাবনা

ছবি

ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগের দেড় দশকে পদক পাওয়া ৪০ পুলিশ কর্মকর্তার পদক প্রত্যাহার

ছবি

রাজউকের আয়-ব্যয় ও প্লট বরাদ্দ যাচাইয়ে ১৬ বছরের নিরীক্ষার নির্দেশ দিলো গৃহায়ন মন্ত্রণালয়

ছবি

লুট হওয়া অস্ত্র উদ্ধারে তথ্যদাতাকে পুরস্কার দেবে সরকার

ছবি

ডেঙ্গুতে মৃত্যু ছাড়াল ১০০, হাসপাতালে ভর্তি রোগী ২৪ হাজার ছাড়িয়েছে

ছবি

আসন্ন সংসদ নির্বাচনে প্রিজাইডিং অফিসারের নিরাপত্তায় অস্ত্রসহ আনসার মোতায়েন থাকবে: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা

ছবি

অর্থনৈতিক ‘শ্বেতপত্রের’ সুপারিশের বাস্তবায়ন হয়নি: সিপিডি

নির্বাচনে পুলিশের জন্য ৪০ হাজার বডি ওর্ন ক্যামেরা কিনবে সরকার

ছবি

ত্রয়োদশ জাতীয় নির্বাচন: সম্পূরক ভোটার তালিকা প্রকাশ, সংশোধনের সুযোগ ২১ আগস্ট পর্যন্ত

ছবি

ডেঙ্গুতে ২৪ ঘণ্টায় ৩ জনের মৃত্যু

ছবি

আগৈলঝাড়া স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স: বৃষ্টির পানিতে তলিয়ে যায় ফ্লোর

ছবি

চরম নাজুক অবস্থায় ঢাকা-ফরিদপুর-বরিশাল মহাসড়কের ৮০ শতাংশ

ছবি

দখল-দূষণে বিপন্ন চট্টগ্রামের কালিরছড়া খাল

ছবি

বনানীতে সড়ক বিভাজকে প্রাইভেটকারের ধাক্কা, নিহত ২

ছবি

নটর ডেমে ভর্তি পরীক্ষা ঘিরে শিক্ষার্থী-অভিভাবকদের উপচেপড়া ভিড়

ছবি

এক বছরে দেশে তেমন কোনো পরিবর্তন দেখা যায়নি: আনু মুহাম্মদ

ছবি

তারেক রহমানই হবেন ভবিষ্যৎ প্রধানমন্ত্রী: মির্জা ফখরুল

ছবি

সংস্কারের ৯৯ শতাংশই বিএনপি আগে উপস্থাপন করেছে: তারেক রহমান

ছবি

জি এম কাদেরকে বাদ দিয়ে জাতীয় পার্টির ‘আংশিক ঐক্য’

ছবি

৮ উপদেষ্টার ‘দুর্নীতি’: প্রমাণের দাবি সাবেক সচিবের, নাকচ মন্ত্রিপরিষদ সচিবের

ছবি

ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে জাতীয় নির্বাচন: সিইসি

ছবি

১২ আগস্ট থেকে সারাদেশে পরিবহন ধর্মঘট

tab

জাতীয়

‘জুলাই সনদ’: মতপার্থক্য নিরসনে বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে আলোচনা শুরু করেছে ঐকমত্য কমিশন

নিজস্ব বার্তা পরিবেশক

রোববার, ১০ আগস্ট ২০২৫

রাষ্ট্র সংস্কারের লক্ষ্যে অন্তর্বর্তী সরকার ‘জুলাই সনদ’ প্রণয়নের যে উদ্যোগ নিয়েছিল সেটি এখনও চূড়ান্ত করা যায়নি। আবার, এই সনদ চূড়ান্ত হলে এর বাস্তবায়ন কীভাবে হবে- এ নিয়েও বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী ও বৈষম্যবিরোধীদের গড়া দল জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) মতপার্থক্য প্রকাশ্যে এসেছে।

‘জুলাই জাতীয় সনদের’ আইনি বাধ্যবাধকতা নিশ্চিত করা এবং বাস্তবায়নের পদ্ধতি কী হবে- তার উপায় খুঁজে বের করতে বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে আলোচনা শুরু করেছে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন। গতকাল জাতীয় সংসদ ভবনের এলডি হলে আইন ও সংবিধান বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে কমিশনের আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়।

গত সপ্তাহে ঐকমত্য কমিশন জানিয়েছিল, ‘জুলাই সনদ’ চূড়ান্ত করা ও এর বাস্তবায়ন পদ্ধতি ঠিক করতে তারা আবারও আলোচনা শুরু করবে। প্রথমে বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে আলোচনায় বসবে কমিশন। এরপর ওই আলোচনাকে ভিত্তি হিসেবে নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে তৃতীয় দফায় বৈঠক করে সনদ বাস্তবায়নের বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।

গতকাল ঐকমত্য কমিশনের আলোচনায় বিশেষজ্ঞ হিসেবে অংশ নেন সুপ্রিম কোর্টের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি এম এ মতিন, বিচারপতি মইনুল ইসলাম চৌধুরী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন অনুষদের ডিন মোহাম্মদ ইকরামুল হক, বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের সিনিয়র অ্যাডভোকেট ড. শরিফ ভূঁইয়া, ব্যারিস্টার তানিম হোসেইন শাওন ও ব্যারিস্টার ইমরান সিদ্দিক। সভায় ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতি আলী রীয়াজ, সদস্য বিচারপতি মো. এমদাদুল হক, ইফতেখারুজ্জামান, বদিউল আলম মজুমদার, সফর রাজ হোসেন ও মো. আইয়ুব মিয়া এবং প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মনির হায়দার উপস্থিত ছিলেন।

‘জুলাই সনদ’ তৈরি করতে দফায় দফায় দলগুলোর সঙ্গে আলোচনায় বসেছে ঐকমত্য কমিশন এবং দলগুলোর কাছে একাধিকবার সনদের খসড়াও পাঠানো হয়েছে। সবশেষ গত ২৮ জুলাই সনদের খসড়া পাঠানো হয় দলগুলোর কাছে। দলগুলোও তার জবাব দিয়েছে।

শিক্ষার্থী-জনতার অভ্যুত্থানে গত বছর ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতন ঘটে। দলটির প্রধান ও তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ওইদিনই দেশত্যাগ করে ভারতে চলে যান। তিন দিন পর ৮ আগস্ট মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব নেয় অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। এই সরকার ক্ষমতা গ্রহণের পর বাংলাদেশের বিভিন্ন খাতে সংস্কার আনার জন্য নানারকম উদ্যোগ গ্রহণ করে। এই লক্ষ্যে সংবিধান, নির্বাচন ব্যবস্থা, বিচার বিভাগ, জনপ্রশাসন, দুর্নীতি দমন কমিশনসহ মোট ১১টি কমিশন গঠন করা হয়।

কমিশনগুলো রাষ্ট্র সংস্কারের জন্য বিভিন্ন প্রস্তাব দেয়, যা নিয়ে গত কয়েক মাস ধরে ৩০টি রাজনৈতিক দলের সঙ্গে ধারাবাহিক বৈঠক করেছে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন। কমিশনগুলোর প্রস্তাবিত যেসব সুপারিশ বাস্তবায়নে সব রাজনৈতিক দল একমত হবে, সেগুলো নিয়ে ‘জুলাই জাতীয় সনদ’ তৈরি হওয়ার কথা রয়েছে।

সব রাজনৈতিক দলের ঐকমত্যের ভিত্তিতে রাষ্ট্র সংস্কার করতে চলতি বছরের ১৫ ফেব্রুয়ারি থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে ছয় মাসের জন্য কাজ শুরু করে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন। স্বভাবতই কমিশনের মেয়াদ শেষ হওয়ার কথা ১৫ আগস্ট।

প্রাথমিকভাবে লক্ষ্য ছিল, চলতি বছরের জুলাই মাসের মধ্যে সনদ চূড়ান্ত করা হবে। কিন্তু দলগুলো সব প্রস্তাবের সঙ্গে একমত না হওয়ায় সনদের খসড়া তৈরি হলেও এখনও পর্যন্ত এটিকে চূড়ান্ত করা যায়নি। ওই খসড়ায় বলা আছে, আগামী নির্বাচনের মাধ্যমে সরকার গঠনের পরবর্তী দুই বছরের মধ্যে সংস্কার প্রস্তাবগুলো বাস্তবায়নের অঙ্গীকার করবে দলগুলো।

এখন যদি ঐকমত্যে পৌঁছে চূড়ান্ত সনদে রাজনৈতিক দলগুলোর স্বাক্ষর করা সম্ভব না হয়, তখন কী হবে- এই আলোচনাও রয়েছে।

দুই বছরের মধ্যে সংস্কার প্রস্তাব বাস্তবায়নের অঙ্গীকারের বিষয়ে বিএনপির আপত্তি না থাকলেও কিছু দলের এখানে আপত্তি রয়েছে। বিশেষ করে, জামায়াতে ইসলামী ও এনসিপি অন্তর্বর্তী সরকারের অধীনেই বাস্তবায়ন চাইছে। কারণ সংস্কার প্রস্তাবগুলো বাস্তবায়নের দায়িত্ব নির্বাচিত সরকারের হাতে ছেড়ে দেয়া হলে, তা শেষ পর্যন্ত কতটা বাস্তবায়ন হবে- এই প্রশ্ন জামায়াত ও এনসিপির। তারা চায়, জুলাই সনদকে একটি আইনি ভিত্তি দেয়া হোক।

তবে বিএনপি বলছে, ‘জুলাই সনদের আইন ভিত্তি প্রয়োজন নেই। এ বিষয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ সাংবাদিকের বলেন, ‘স্বাক্ষর করার জন্য সব দল একমত। শুধু দুই-তিনটি দল বলেছে, এটি কীভাবে বাস্তবায়ন হবে এবং এর আইনি ভিত্তি কী হবে, তা নির্ধারণ না হলে তারা সই করবেন, কী করবেন না, সে বিষয়ে চিন্তা করবেন।’

বিএনপির এই নেতা আরও বলেন, ‘আমরা বলেছি, সাংবিধানিক সংশোধনীগুলো বাদে বাকি সব সংস্কার প্রস্তাব এই সরকার এই সময়ের ভেতরেই বাস্তবায়ন করতে পারে। এজন্য সর্বোচ্চ প্রয়োজন, আইনের সংশোধনীর জন্য অধ্যাদেশ জারি ও কিছু কিছু ক্ষেত্রে নির্বাহী আদেশ এবং অফিস আদেশ। এটি প্রতিদিন বাস্তবায়ন হচ্ছে। সাংবিধানিক সংশোধনীগুলো বাস্তবায়নের বৈধ ফোরাম জাতীয় সংসদ’।

দলগুলো ঐকমত্যে না আসতে পারলে ‘জুলাই সনদ’ বাস্তবায়ন কীভাবে হবে। এ প্রসঙ্গে ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতি আলী রীয়াজ সংবাদমাধ্যমকে বলেন, ‘কমিশনের পরবর্তী কাজ জুলাই সনদ বাস্তবায়নের পদ্ধতি নির্ধারণ করা। তবে দলগুলোকেই বাস্তবায়নের পথ খুঁজে বের করতে হবে। ঐকমত্য কমিশন অনুঘটকের কাজ করতে পারে।’

তিনি বলেন, ‘সনদে যে সমস্ত জায়গায় ঐকমত্য হওয়ার, তা হয়েছে। এরপর আর এটা নিয়ে নতুন কিছু করার আমরা চেষ্টা করছি না। যেগুলো নোট অব ডিসেন্ট আছে। ওগুলো নিয়েই সনদ হবে।’

back to top