ছবি: ইন্টারনেট থেকে সংগৃহিত
রাজধানীর মোহাম্মদপুরের জেনেভা ক্যাম্পে মাদক কারবারের আধিপত্য বিস্তার নিয়ে আবারও দুই গ্রুপের মধ্যে সংঘর্ষে শাহ আলম নামে একজন নিহত ও বেশ কয়েকজন আহত হয়েছেন।
এই ঘটনার পর মাদকের ‘হটস্পট’ হিসেবে চিহ্নিত জেনেভা ক্যাম্পে মাদক কারবারিদের ধরতে অভিযানে নেমেছে পুলিশ। এ সময় দেশীয় অস্ত্রসহ দুজনকে হাতেনাতে আটক করা হয়েছে। তারা হলেন- ফয়সাল ও সেলিম। তারা স্থানীয় মাদক কারবারি।
সোমবার,(১১ আগস্ট ২০২৫) দুপুরের পর ৭নং সেক্টর এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। মোহাম্মদপুর জোনের সহকারী পুলিশ কমিশনার মেহেদী হাসান সংবাদকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তিনি জানান, এ ঘটনায় ফয়সাল নামে একজনকে চাপাতিসহ গ্রেপ্তার করা হয়েছে। পরে সেলিম নামে আরেকজনকে আটক করা হয়েছে।
তিনি বলেন, মাদক কারবারিরা তাদের আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়েছে। আমরা নিয়মিত তাদের গ্রেপ্তার করে আদালতে প্রেরণ করছি। এরপরও তারা জামিনে এসে তাদের ব্যবসা দখলে নিতে সংঘর্ষে লিপ্ত হচ্ছে। তাদের বিরুদ্ধে আমাদের নিয়মিত অভিযান অব্যাহত আছে।
কথা বলার সময় সেনাবাহিনীর নেতৃত্বে যৌথ অভিযান শুরু হয়েছে বলেও জানান মেহেদী হাসান।
জেনেভা ক্যাম্পের একাধিক বাসিন্দার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, রাজধানীর মোহাম্মদপুর জেনেভা ক্যাম্পে শীর্ষ মাদক কারবারিরা মাদকের স্পট দখলে নিতে কয়েকদিন ধরে ভয়াবহ সংঘর্ষে জড়িয়েছে। মাদক কারবারকে কেন্দ্র করে একের পর এক ককটেল বিস্ফোরণ। মুহুর্মুহু গুলির ঘটনায় আতঙ্কিত হয়ে পড়েছেন স্থানীয় বাসিন্দারা।
ক্যাম্পের বাসিন্দা এক স্কুলশিক্ষক জানান, সোমবার ভোররাত থেকে সকাল পর্যন্ত ক্যাম্পের ৭ নম্বর সেক্টর এলাকায় দফায় দফায় ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া ও ইটপাটকেল নিক্ষেপ করেছে দুইপক্ষ। কয়েকটি ককটেলের বিস্ফোরণের শব্দও শোনা গেছে।
এর আগে গতকাল রোববার রাতে ককটেল বিস্ফোরণে এক নারী আহত হন। তিনি বলেন, ‘প্রশাসন এলে সব ঠাণ্ডা, চলে যাওয়ার পর আবারও সংঘাতে জড়ায় মাদক কারবারিরা।’
‘পুরনে’ দ্বন্দ্বই নতুন করে, জেনেভা ক্যাম্পে ফের সংঘাত:
জেনিভা ক্যাম্পের বাসিন্দাদের ভাষ্যানুযায়ী, বছরকয়েক আগে পুরো ক্যাম্পের মাদক কারবার নিয়ন্ত্রণ ছিল নাদিম হোসেন ওরফে পাঁচ্চিশ ও ইশতিয়াক নামের দুই যুবকের হাতে। দুজনই মাদক কারবার করে বিপুল অর্থের মালিক হয়েছিলেন, পালতেন ব্যক্তিগত বাহিনী।
২০১৮ সালের জুলাইয়ে পূর্বাচলে র্যাবের ‘ক্রসফায়ারে’ নিহত হন পাঁচ্চিশ। এরপর ভারতে পালিয়ে যান ইশতিয়াক। মহামারির সময় কোভিড আক্রান্ত হয়ে তিনি মারা যান বলে ক্যাম্পে জনশ্রুতি আছে।
পাঁচ্চিশ ও ইশতিয়াকের অবর্তমানে ক্যাম্পের শতকোটি টাকার মাদক কারবারের দখল নিতে উঠেপড়ে লাগে দুটি পক্ষ। একটি পক্ষের নেতৃত্বে আছেন বুনিয়া সোহেল, আরেকটি পক্ষের নেতা চুয়া সেলিম। আর বুনিয়া সোহেলের সঙ্গে যুক্ত হন সৈয়দপুইরা (নীলফামারীর সৈয়দপুর থেকে আসা ‘বিহারি’ নামের আরেকটি পক্ষের নেতা বাবু ওরফে সৈয়দপুইরা বাবু।
রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর সংঘাতের কারণে প্রায়ই সংবাদের শিরোনাম হচ্ছিল জেনিভা ক্যাম্প। এর মধ্যে গত বছরের ৩১ অক্টোবর সিলেটের কোতোয়ালি ও হবিগঞ্জের মাধবপুর এলাকা থেকে বুনিয়া সোহেলসহ ১২ জনকে গ্রেপ্তার করে র্যাব। তার দুই মাস বাদে চুয়া সেলিমও গ্রেপ্তার হন। এর আগে ২৯ সেপ্টেম্বর পিচ্চি রাজাসহ ৩১ জনকে গ্রেপ্তারের খবর দিয়েছিল র্যাব।
সম্প্রতি বুনিয়া সোহেল ও পিচ্চি রাজা (বর্তমানে চুয়া সেলিম সমর্থক) জামিনে বেরিয়ে এসে নতুন করে দখলদারিত্বে নামলে এ সংঘাত ধীরে ধীরে তীব্র আকার ধারণ করেছে।
ক্যাম্পের বাসিন্দারা জানান, এই ক্যাম্পের বিভিন্ন এলাকায় বিভিন্ন মাদক কারবারিদের নিয়ন্ত্রণে। ক্যাম্পের প্রধান তিনটি গ্রুপের মধ্যে বুনিয়া সোহেল ও তার লোকজনেরা বেশিরভাগই থাকেন ক্যাম্পের ৭ নম্বর সেক্টরে, এই এলাকায় মাদক বেচাকেনা করে বুনিয়া সোহেলের লোকজন। সৈয়দপুইরা বাবু গ্রুপের এলাকা হচ্ছে এনএলজে স্কুল রোড, সেখানেই তাদের মাদক বেচাকেনার কেন্দ্র বা স্পট। আর চুয়া সেলিমের এলাকা হচ্ছে এবি ব্লক পাক্কা (পাকা) ক্যাম্প।
সম্প্রতি ৭ নম্বর সেক্টরের হুমায়ুন রোড এলাকায় নতুন করে মাদক বিক্রি করা শুরু করেছে পিচ্চি রাজা ও ইমতিয়াজ। পিচ্চি রাজা একসময় বুনিয়া সোহেলের সঙ্গে কাজ করলেও এখন তিনি চুয়া সেলিমের সঙ্গে হাত মিলিয়েছেন বলে ক্যাম্পের বাসিন্দারা জানিয়েছেন। আর ইমতিয়াজ ক্যাম্প এলাকায় চুয়া সেলিমের পুরনো বন্ধু হিসেবে পরিচিত।
অন্যদিকে ৭ নম্বর সেক্টর এলাকাটি বুনিয়া সোহেলের পুরনো এলাকা। কয়েকদিন ধরে ওই এলাকার মাদক ব্যবসার দখল নিয়ে দুই গ্রুপের মধ্যে সংঘাত ও অস্থিরতা চলছে।
গত বৃহস্পতিবার রাতে চুয়া সেলিমের আস্তানা পাক্কা ক্যাম্প এলাকায় একটি বিয়ের অনুষ্ঠানের সামনে পরপর তিনটি ককটেল বিস্ফোরণে দুজন আহত হন। স্থানীয়দের ভাষ্য, বুনিয়া সোহেল নিজে মোটরসাইকেলে করে এসে ককটেল ফাটিয়ে চলে যান।
সেদিন থেকেই ক্যাম্পের বিভিন্ন জায়গায় কয়েক দফায় ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছে। গতকাল রোববার দুপুরেও ককটেলের আওয়াজ পেয়েছেন ক্যাম্পবাসী। সোমবার ভোর থেকে দুপুর পর্যন্ত কয়েক দফায় ককটেল ফুটেছে বিভিন্ন জায়গায়।
ছবি: ইন্টারনেট থেকে সংগৃহিত
সোমবার, ১১ আগস্ট ২০২৫
রাজধানীর মোহাম্মদপুরের জেনেভা ক্যাম্পে মাদক কারবারের আধিপত্য বিস্তার নিয়ে আবারও দুই গ্রুপের মধ্যে সংঘর্ষে শাহ আলম নামে একজন নিহত ও বেশ কয়েকজন আহত হয়েছেন।
এই ঘটনার পর মাদকের ‘হটস্পট’ হিসেবে চিহ্নিত জেনেভা ক্যাম্পে মাদক কারবারিদের ধরতে অভিযানে নেমেছে পুলিশ। এ সময় দেশীয় অস্ত্রসহ দুজনকে হাতেনাতে আটক করা হয়েছে। তারা হলেন- ফয়সাল ও সেলিম। তারা স্থানীয় মাদক কারবারি।
সোমবার,(১১ আগস্ট ২০২৫) দুপুরের পর ৭নং সেক্টর এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। মোহাম্মদপুর জোনের সহকারী পুলিশ কমিশনার মেহেদী হাসান সংবাদকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তিনি জানান, এ ঘটনায় ফয়সাল নামে একজনকে চাপাতিসহ গ্রেপ্তার করা হয়েছে। পরে সেলিম নামে আরেকজনকে আটক করা হয়েছে।
তিনি বলেন, মাদক কারবারিরা তাদের আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়েছে। আমরা নিয়মিত তাদের গ্রেপ্তার করে আদালতে প্রেরণ করছি। এরপরও তারা জামিনে এসে তাদের ব্যবসা দখলে নিতে সংঘর্ষে লিপ্ত হচ্ছে। তাদের বিরুদ্ধে আমাদের নিয়মিত অভিযান অব্যাহত আছে।
কথা বলার সময় সেনাবাহিনীর নেতৃত্বে যৌথ অভিযান শুরু হয়েছে বলেও জানান মেহেদী হাসান।
জেনেভা ক্যাম্পের একাধিক বাসিন্দার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, রাজধানীর মোহাম্মদপুর জেনেভা ক্যাম্পে শীর্ষ মাদক কারবারিরা মাদকের স্পট দখলে নিতে কয়েকদিন ধরে ভয়াবহ সংঘর্ষে জড়িয়েছে। মাদক কারবারকে কেন্দ্র করে একের পর এক ককটেল বিস্ফোরণ। মুহুর্মুহু গুলির ঘটনায় আতঙ্কিত হয়ে পড়েছেন স্থানীয় বাসিন্দারা।
ক্যাম্পের বাসিন্দা এক স্কুলশিক্ষক জানান, সোমবার ভোররাত থেকে সকাল পর্যন্ত ক্যাম্পের ৭ নম্বর সেক্টর এলাকায় দফায় দফায় ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া ও ইটপাটকেল নিক্ষেপ করেছে দুইপক্ষ। কয়েকটি ককটেলের বিস্ফোরণের শব্দও শোনা গেছে।
এর আগে গতকাল রোববার রাতে ককটেল বিস্ফোরণে এক নারী আহত হন। তিনি বলেন, ‘প্রশাসন এলে সব ঠাণ্ডা, চলে যাওয়ার পর আবারও সংঘাতে জড়ায় মাদক কারবারিরা।’
‘পুরনে’ দ্বন্দ্বই নতুন করে, জেনেভা ক্যাম্পে ফের সংঘাত:
জেনিভা ক্যাম্পের বাসিন্দাদের ভাষ্যানুযায়ী, বছরকয়েক আগে পুরো ক্যাম্পের মাদক কারবার নিয়ন্ত্রণ ছিল নাদিম হোসেন ওরফে পাঁচ্চিশ ও ইশতিয়াক নামের দুই যুবকের হাতে। দুজনই মাদক কারবার করে বিপুল অর্থের মালিক হয়েছিলেন, পালতেন ব্যক্তিগত বাহিনী।
২০১৮ সালের জুলাইয়ে পূর্বাচলে র্যাবের ‘ক্রসফায়ারে’ নিহত হন পাঁচ্চিশ। এরপর ভারতে পালিয়ে যান ইশতিয়াক। মহামারির সময় কোভিড আক্রান্ত হয়ে তিনি মারা যান বলে ক্যাম্পে জনশ্রুতি আছে।
পাঁচ্চিশ ও ইশতিয়াকের অবর্তমানে ক্যাম্পের শতকোটি টাকার মাদক কারবারের দখল নিতে উঠেপড়ে লাগে দুটি পক্ষ। একটি পক্ষের নেতৃত্বে আছেন বুনিয়া সোহেল, আরেকটি পক্ষের নেতা চুয়া সেলিম। আর বুনিয়া সোহেলের সঙ্গে যুক্ত হন সৈয়দপুইরা (নীলফামারীর সৈয়দপুর থেকে আসা ‘বিহারি’ নামের আরেকটি পক্ষের নেতা বাবু ওরফে সৈয়দপুইরা বাবু।
রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর সংঘাতের কারণে প্রায়ই সংবাদের শিরোনাম হচ্ছিল জেনিভা ক্যাম্প। এর মধ্যে গত বছরের ৩১ অক্টোবর সিলেটের কোতোয়ালি ও হবিগঞ্জের মাধবপুর এলাকা থেকে বুনিয়া সোহেলসহ ১২ জনকে গ্রেপ্তার করে র্যাব। তার দুই মাস বাদে চুয়া সেলিমও গ্রেপ্তার হন। এর আগে ২৯ সেপ্টেম্বর পিচ্চি রাজাসহ ৩১ জনকে গ্রেপ্তারের খবর দিয়েছিল র্যাব।
সম্প্রতি বুনিয়া সোহেল ও পিচ্চি রাজা (বর্তমানে চুয়া সেলিম সমর্থক) জামিনে বেরিয়ে এসে নতুন করে দখলদারিত্বে নামলে এ সংঘাত ধীরে ধীরে তীব্র আকার ধারণ করেছে।
ক্যাম্পের বাসিন্দারা জানান, এই ক্যাম্পের বিভিন্ন এলাকায় বিভিন্ন মাদক কারবারিদের নিয়ন্ত্রণে। ক্যাম্পের প্রধান তিনটি গ্রুপের মধ্যে বুনিয়া সোহেল ও তার লোকজনেরা বেশিরভাগই থাকেন ক্যাম্পের ৭ নম্বর সেক্টরে, এই এলাকায় মাদক বেচাকেনা করে বুনিয়া সোহেলের লোকজন। সৈয়দপুইরা বাবু গ্রুপের এলাকা হচ্ছে এনএলজে স্কুল রোড, সেখানেই তাদের মাদক বেচাকেনার কেন্দ্র বা স্পট। আর চুয়া সেলিমের এলাকা হচ্ছে এবি ব্লক পাক্কা (পাকা) ক্যাম্প।
সম্প্রতি ৭ নম্বর সেক্টরের হুমায়ুন রোড এলাকায় নতুন করে মাদক বিক্রি করা শুরু করেছে পিচ্চি রাজা ও ইমতিয়াজ। পিচ্চি রাজা একসময় বুনিয়া সোহেলের সঙ্গে কাজ করলেও এখন তিনি চুয়া সেলিমের সঙ্গে হাত মিলিয়েছেন বলে ক্যাম্পের বাসিন্দারা জানিয়েছেন। আর ইমতিয়াজ ক্যাম্প এলাকায় চুয়া সেলিমের পুরনো বন্ধু হিসেবে পরিচিত।
অন্যদিকে ৭ নম্বর সেক্টর এলাকাটি বুনিয়া সোহেলের পুরনো এলাকা। কয়েকদিন ধরে ওই এলাকার মাদক ব্যবসার দখল নিয়ে দুই গ্রুপের মধ্যে সংঘাত ও অস্থিরতা চলছে।
গত বৃহস্পতিবার রাতে চুয়া সেলিমের আস্তানা পাক্কা ক্যাম্প এলাকায় একটি বিয়ের অনুষ্ঠানের সামনে পরপর তিনটি ককটেল বিস্ফোরণে দুজন আহত হন। স্থানীয়দের ভাষ্য, বুনিয়া সোহেল নিজে মোটরসাইকেলে করে এসে ককটেল ফাটিয়ে চলে যান।
সেদিন থেকেই ক্যাম্পের বিভিন্ন জায়গায় কয়েক দফায় ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছে। গতকাল রোববার দুপুরেও ককটেলের আওয়াজ পেয়েছেন ক্যাম্পবাসী। সোমবার ভোর থেকে দুপুর পর্যন্ত কয়েক দফায় ককটেল ফুটেছে বিভিন্ন জায়গায়।