ছবি: ইন্টারনেট থেকে সংগৃহিত
গত দেড়যুগ ধরে সারাদেশে বন বিভাগের জমি ও নতুন নতুন দ্বীপের জায়গা দখল করে রেখেছিল একদল লোক। যারা সরকারি এসব ভূমি ব্যবহার করে নিজেরা লাভবান হয়েছে। তাদের হাত
সোনাদিয়ায় ৯ হাজার একর জমি উদ্ধার
মানুষের সঙ্গে হাতি ও বন্যপ্রাণীর দ্বন্দ্ব নিরসনে উদ্যোগ
ওয়াইল্ড লাইফ ক্রাইম কন্ট্রোলের অভিযানে ৫ হাজার ৬৬৮টি প্রাণী উদ্ধার
থেকে বন উদ্ধার কার্যক্রম শুরু করেছে পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয়।
২০২৪ সালের আগস্ট মাস থেকে শুরু করে চলতি ২০২৫ সালের জুন মাস পর্যন্ত দখলকৃত ৫ হাজার ৯৩ একর বনভূমি উদ্ধার করা হয়েছে। বনের এই সব জায়গায় আবার বনায়ন করা হচ্ছে। পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয় থেকে এসব তথ্য জানা গেছে। মন্ত্রণালয় থেকে সংবাদকে জানিয়েছেন, গত এক বছরে বনের জমিতে সরকারি প্রকল্প স্থাপনের পুরনো সিদ্ধান্ত বাতিলের ধারাবাহিকতায় কক্সবাজারে ৭শ’ একর জমি এবং বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন-বাফুফের জন্য নির্ধারিত ২০ একর সংরক্ষিত বনভূমি ফিরিয়ে আনা হয়েছে।
কক্সবাজারের সোনাদিয়ার ৯ হাজার ৪৬৭ একর জমি ও জাফর আলম ক্যাডেট কলেজের নামে বন্দোবস্ত ১৫৫ দশমিক ৭০ একর জমিও পুনরুদ্ধার করা হয়েছে।
চুনতি বন পুনরুদ্ধার প্রকল্পের আওতায় ৩৭ হাজার ১৮২ একর জমি থেকে আকাশমনি গাছ সরিয়ে প্রাকৃতিক বন ফিরিয়ে আনার কাজ শুরু হয়েছে। মধুপুর ও শেরপুরেও আকাশমনি গাছ সরিয়ে বনকে প্রাকৃতিক পরিবেশে ফিরিয়ে আনার উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে, যাতে হাতির করিডোর পুনরায় কার্যকর হয়। শুধু তাই নয়, বিলুপ্ত প্রজাতির দেশি ময়ূর ফিরিয়ে আনাসহ সাম্বার, কালোমুখ প্যারা পাখি, উল্লুক ও হাতির সুরক্ষায় নেয়া হয়েছে সফল উদ্যোগ। খাদ্যের অভাবে বন ছেড়ে বন্যপ্রাণীরা লোকালয়ে চলে আসছে। এতে মানুষের সঙ্গে হাতি ও অন্যান্য বন্যপ্রাণীর দ্বন্দ্ব নিরসনে ১৫৯টি ইআরটি টিম গঠন ও জনসচেতনতা কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে। মৌলভীবাজারের লাঠিটিলা সাফারি পার্ক প্রকল্প বাতিল এবং ক্যাপটিভ হাতি সংরক্ষণের অভয়ারণ্য গঠনের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে বলেও জানায় পরিবেশ মন্ত্রণালয়।
রাজশাহীর বিল জোয়ানা ও বিল ভেলাসহ কয়েকটি জলাভূমিকে অভয়ারণ্য ঘোষণা এবং অন্যান্য এলাকায় জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণেরও উদ্যোগ চলমান।
বণ্যপ্রাণী আইন সংশোধন ও ট্রাস্ট গঠনের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। এরই মধ্যে ওয়াইল্ড লাইফ ক্রাইম কন্ট্রোল ইউনিট ২৯৩টি অভিযান চালিয়ে ৫ হাজার ৬৬৮টি প্রাণী উদ্ধার করছে। সাফারি পার্ক থেকে চুরি হওয়া লেমুরও উদ্ধার করা হয়েছে।
ইতিহাসে প্রথমবারের মতো বনপ্রাণী ও বৃক্ষ নিধনের অপরাধে কারাদ- কার্যকর করা হয়েছে। আর জনদাবির প্রেক্ষিতে ইউক্যালিপটাস ও একাশিয়া গাছের চারা উৎপাদন, বিপণন, রোপণ নিষিদ্ধ করা হয়েছে। নার্সারিতে থাকা এসব গাছ ধ্বংস করা হয়েছে। পরিবেশ সচেতনতা বৃদ্ধিতে গাছ থেকে পেরেক তুলে ফেলার কাজ হাতে নেয়া হয়েছে। জাতীয় উদ্যান, ইকোপার্ক ও উদ্ভিদ উদ্যানে প্লাস্টিক ও বনভোজন নিষিদ্ধ করা হয়েছে। পূর্বাচলে ১৪৪ একরকে জীববৈচিত্র্য এলাকা ঘোষণা করা হয়েছে।
এছাড়াও গাজীপুর, চট্টগ্রাম ও সীতাকু-সহ দেশের বিভিন্ন স্থানে বনখেকোদের দখল থেকে বিপুল পরিমাণ বনের জায়গাও উদ্ধার করা হয়েছে। জানা গেছে, এসব সম্পত্তি দখলবাজরা দখল করে নানাভাবে নিজেরাই লাভবান হচ্ছিল। নির্বিচারে গাছ কেটে পরিবেশও নষ্ট করছে তারা। বছরের পর বছর বন্যপ্রাণী- হরিণ, বাঘ, হাতিসহ অন্যান্য প্রাণী শিকার করে চোরাই পথে পাচার করত এক দল বনদস্যু। এসব চোরাই চক্রকে শনাক্ত করতে নতুন করে আইনি ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে।
সম্প্রতি তালগাছ থেকে বাবুই পাখি হত্যার ঘটনায় জড়িত ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করে আইনি ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। ফলে অনেক অপরাধী ও বনখেকো এখন পিছু হটছে।
এসব ব্যাপারে আলাপচারিতায় নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বন মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা গত শুক্রবার রাতে সংবাদকে জানান, উদ্ধারকৃত সম্পদের পরিমাণ হাজার হাজার একর। এর টাকার অঙ্কে এখনই হিসাব করা কঠিন হবে। উদ্ধার তৎপরতা এখনও চলমান আছে। বন বিভাগকে ঢেলে সাজাতে নানামুখী পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে।
এদিকে সোমবার,(১১ আগস্ট ২০২৫) ও পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয়ের জনসংযোগ কর্মকর্তা দীপংকর বর সংবাদকে জানিয়েছেন, গাজীপুরের ভাওয়াল রেঞ্জের ভবানীপুর এলাকায় যৌথবাহিনী অভিযান চালিয়ে বনখেকোদের কবল থেকে ১ দশমিক ৯৫ একর বনভূমি উদ্ধার করা হয়েছে। ১২০টি অবৈধ স্থাপনায় অভিযান চালিয়ে বনের এই সম্পদ উদ্ধার করা হয়েছে।
সেনাবাহিনী, বিজিবি, র্যাব, পুলিশ ও বনবিভাগের যৌথ এই অভিযান চালানো হয়। অভিযানের সময় বনের জায়গায় নির্মাণ করা ভবন, দোকানপাটসহ মোট ১২০টি ছোট-বড় স্থাপনা ছিল।
বনখেকোদের দখল থেকে বনের সম্পত্তি উদ্ধারে এই অভিযান অব্যাহত আছে।
ছবি: ইন্টারনেট থেকে সংগৃহিত
সোমবার, ১১ আগস্ট ২০২৫
গত দেড়যুগ ধরে সারাদেশে বন বিভাগের জমি ও নতুন নতুন দ্বীপের জায়গা দখল করে রেখেছিল একদল লোক। যারা সরকারি এসব ভূমি ব্যবহার করে নিজেরা লাভবান হয়েছে। তাদের হাত
সোনাদিয়ায় ৯ হাজার একর জমি উদ্ধার
মানুষের সঙ্গে হাতি ও বন্যপ্রাণীর দ্বন্দ্ব নিরসনে উদ্যোগ
ওয়াইল্ড লাইফ ক্রাইম কন্ট্রোলের অভিযানে ৫ হাজার ৬৬৮টি প্রাণী উদ্ধার
থেকে বন উদ্ধার কার্যক্রম শুরু করেছে পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয়।
২০২৪ সালের আগস্ট মাস থেকে শুরু করে চলতি ২০২৫ সালের জুন মাস পর্যন্ত দখলকৃত ৫ হাজার ৯৩ একর বনভূমি উদ্ধার করা হয়েছে। বনের এই সব জায়গায় আবার বনায়ন করা হচ্ছে। পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয় থেকে এসব তথ্য জানা গেছে। মন্ত্রণালয় থেকে সংবাদকে জানিয়েছেন, গত এক বছরে বনের জমিতে সরকারি প্রকল্প স্থাপনের পুরনো সিদ্ধান্ত বাতিলের ধারাবাহিকতায় কক্সবাজারে ৭শ’ একর জমি এবং বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন-বাফুফের জন্য নির্ধারিত ২০ একর সংরক্ষিত বনভূমি ফিরিয়ে আনা হয়েছে।
কক্সবাজারের সোনাদিয়ার ৯ হাজার ৪৬৭ একর জমি ও জাফর আলম ক্যাডেট কলেজের নামে বন্দোবস্ত ১৫৫ দশমিক ৭০ একর জমিও পুনরুদ্ধার করা হয়েছে।
চুনতি বন পুনরুদ্ধার প্রকল্পের আওতায় ৩৭ হাজার ১৮২ একর জমি থেকে আকাশমনি গাছ সরিয়ে প্রাকৃতিক বন ফিরিয়ে আনার কাজ শুরু হয়েছে। মধুপুর ও শেরপুরেও আকাশমনি গাছ সরিয়ে বনকে প্রাকৃতিক পরিবেশে ফিরিয়ে আনার উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে, যাতে হাতির করিডোর পুনরায় কার্যকর হয়। শুধু তাই নয়, বিলুপ্ত প্রজাতির দেশি ময়ূর ফিরিয়ে আনাসহ সাম্বার, কালোমুখ প্যারা পাখি, উল্লুক ও হাতির সুরক্ষায় নেয়া হয়েছে সফল উদ্যোগ। খাদ্যের অভাবে বন ছেড়ে বন্যপ্রাণীরা লোকালয়ে চলে আসছে। এতে মানুষের সঙ্গে হাতি ও অন্যান্য বন্যপ্রাণীর দ্বন্দ্ব নিরসনে ১৫৯টি ইআরটি টিম গঠন ও জনসচেতনতা কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে। মৌলভীবাজারের লাঠিটিলা সাফারি পার্ক প্রকল্প বাতিল এবং ক্যাপটিভ হাতি সংরক্ষণের অভয়ারণ্য গঠনের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে বলেও জানায় পরিবেশ মন্ত্রণালয়।
রাজশাহীর বিল জোয়ানা ও বিল ভেলাসহ কয়েকটি জলাভূমিকে অভয়ারণ্য ঘোষণা এবং অন্যান্য এলাকায় জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণেরও উদ্যোগ চলমান।
বণ্যপ্রাণী আইন সংশোধন ও ট্রাস্ট গঠনের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। এরই মধ্যে ওয়াইল্ড লাইফ ক্রাইম কন্ট্রোল ইউনিট ২৯৩টি অভিযান চালিয়ে ৫ হাজার ৬৬৮টি প্রাণী উদ্ধার করছে। সাফারি পার্ক থেকে চুরি হওয়া লেমুরও উদ্ধার করা হয়েছে।
ইতিহাসে প্রথমবারের মতো বনপ্রাণী ও বৃক্ষ নিধনের অপরাধে কারাদ- কার্যকর করা হয়েছে। আর জনদাবির প্রেক্ষিতে ইউক্যালিপটাস ও একাশিয়া গাছের চারা উৎপাদন, বিপণন, রোপণ নিষিদ্ধ করা হয়েছে। নার্সারিতে থাকা এসব গাছ ধ্বংস করা হয়েছে। পরিবেশ সচেতনতা বৃদ্ধিতে গাছ থেকে পেরেক তুলে ফেলার কাজ হাতে নেয়া হয়েছে। জাতীয় উদ্যান, ইকোপার্ক ও উদ্ভিদ উদ্যানে প্লাস্টিক ও বনভোজন নিষিদ্ধ করা হয়েছে। পূর্বাচলে ১৪৪ একরকে জীববৈচিত্র্য এলাকা ঘোষণা করা হয়েছে।
এছাড়াও গাজীপুর, চট্টগ্রাম ও সীতাকু-সহ দেশের বিভিন্ন স্থানে বনখেকোদের দখল থেকে বিপুল পরিমাণ বনের জায়গাও উদ্ধার করা হয়েছে। জানা গেছে, এসব সম্পত্তি দখলবাজরা দখল করে নানাভাবে নিজেরাই লাভবান হচ্ছিল। নির্বিচারে গাছ কেটে পরিবেশও নষ্ট করছে তারা। বছরের পর বছর বন্যপ্রাণী- হরিণ, বাঘ, হাতিসহ অন্যান্য প্রাণী শিকার করে চোরাই পথে পাচার করত এক দল বনদস্যু। এসব চোরাই চক্রকে শনাক্ত করতে নতুন করে আইনি ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে।
সম্প্রতি তালগাছ থেকে বাবুই পাখি হত্যার ঘটনায় জড়িত ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করে আইনি ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। ফলে অনেক অপরাধী ও বনখেকো এখন পিছু হটছে।
এসব ব্যাপারে আলাপচারিতায় নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বন মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা গত শুক্রবার রাতে সংবাদকে জানান, উদ্ধারকৃত সম্পদের পরিমাণ হাজার হাজার একর। এর টাকার অঙ্কে এখনই হিসাব করা কঠিন হবে। উদ্ধার তৎপরতা এখনও চলমান আছে। বন বিভাগকে ঢেলে সাজাতে নানামুখী পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে।
এদিকে সোমবার,(১১ আগস্ট ২০২৫) ও পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয়ের জনসংযোগ কর্মকর্তা দীপংকর বর সংবাদকে জানিয়েছেন, গাজীপুরের ভাওয়াল রেঞ্জের ভবানীপুর এলাকায় যৌথবাহিনী অভিযান চালিয়ে বনখেকোদের কবল থেকে ১ দশমিক ৯৫ একর বনভূমি উদ্ধার করা হয়েছে। ১২০টি অবৈধ স্থাপনায় অভিযান চালিয়ে বনের এই সম্পদ উদ্ধার করা হয়েছে।
সেনাবাহিনী, বিজিবি, র্যাব, পুলিশ ও বনবিভাগের যৌথ এই অভিযান চালানো হয়। অভিযানের সময় বনের জায়গায় নির্মাণ করা ভবন, দোকানপাটসহ মোট ১২০টি ছোট-বড় স্থাপনা ছিল।
বনখেকোদের দখল থেকে বনের সম্পত্তি উদ্ধারে এই অভিযান অব্যাহত আছে।