ছবি: ইন্টারনেট থেকে সংগৃহীত
রংপুরের তারাগঞ্জে মুচি সম্প্রদায়ের দুই ব্যক্তিকে চোর অপবাদ দিয়ে মব ভায়োলেন্সের মাধ্যমে গণপিটুনি দিয়ে নৃশংসভাবে হত্যার ঘটনায় গ্রেপ্তার ৪ আসামিকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ৩ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছে আদালত।
বৃহস্পতিবার,(১৪ আগস্ট ২০২৫) রংপুরের তারাগঞ্জ আমলি আদালতের বিচারক কৃষ্ণ কমল রায় এ আদেশ দেন।
অন্যদিকে মুচি সম্প্রদায়ের দুইজনকে মব জাস্টিসের নামে পিটিয়ে হত্যার অভিযোগে দায়িত্বে অবহেলার জন্য দুই এসআইসহ ৮ পুলিশ সদস্যকে সাসপেন্ড করা হয়েছে। এরা হলেন- তারাগঞ্জ থানার এসআই আবু জোবায়ের, এসআই শফিকুল ইসলাম, কনস্টেবল ফারিকুদ আখতার জামান, বিরাজ কুমার রায়, হাসান আলী, ফিরোজ কবীর, মোক্তার হোসেন ও বাবুল চন্দ্র রায়। পুলিশ জানায়, ওই পুলিশের দুই এসআইসহ ৮ পুলিশ সদস্য তারা মোবাইল টিমের সদস্য ছিলেন।
সেই সঙ্গে ঘটনা তদন্ত করার জন্য রংপুর তারাগঞ্জ সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার শরীফকে প্রধান করে কমিটি গঠন করা হয়েছে। গতকাল বুধবার রাত পৌনে ১০ টার সময় রংপুরের পুলিশ সুপার বিষয়টি নিশ্চিত করে এ প্রতিনিধিকে জানান, গণপিটুনিতে নিহত মুচি সম্প্রদায়ের ব্যক্তির নিহত হওয়ার ঘটনায় পুলিশ কী দায়িত্ব পালন করেছে তা জানতে তদন্ত কমিটি গঠন করে দেয়া হয়েছে।
অন্যদিকে ওই ঘটনায় দায়ের করা মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই আবু জোবায়রকে তদন্তের দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দিয়ে তারাগঞ্জ থানার ওসি তদন্ত রফিকুল ইসলামকে নতুন তদন্ত কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে।
অন্যদিকে মব ভায়োলেন্সের সঙ্গে জড়িত ৪ আসামিকে রংপুর জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের কোর্ট পরিদর্শক আমিনুল ইসলাম ৩ দিনের রিমান্ড দেয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
এর আগে রংপুর কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে ৪ আসামি এবাদত হোসেন, আখতারুল ইসলাম (৪৫), রফিকুল ইসলাম (৩৩) ও মিজানুর রহমান (২২)কে কড়া পুলিশি পাহারায় আদালতে তোলা হয়। আদালতে মামলার তদন্তকারী পুলিশ কর্মকর্তা তারাগঞ্জ থানার ওসি তদন্ত রফিকুল ইসলাম আদালতে আসামিদের ৫ দিনের রিমান্ডের আবেদন করে জানান, আসামিরা মব ভায়োলেন্সের সঙ্গে জড়িত। তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করে আরও তথ্য জানা প্রয়োজন। বিজ্ঞ বিচারক শুনানি শেষে আসামিদের ৩ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। পরে তাদের তদন্তকারী পুলিশ কর্মকর্তার কাছে হস্তান্তর করা হয়।
এদিকে রুপলাল দাস ও প্রবীর দাসকে চোর অপবাদ দিয়ে তাদের আটক করার ঘটনাটি ছিল পরিকল্পিত। তাদের গণপিটুনি দেয়ার বিষয়টিও ঘটানো হয়েছে আমিনুল ইসলাম ও মেহেদী হাসান নামে দুই যুবকের পরিকল্পনায়। তারা প্রচার করে, কয়েকদিন আগে এক কিশোরকে জবাই করে তার রিকশা-ভ্যান ছিনতাই করার ঘটনার সঙ্গে রুপলাল দাস ও প্রবীর দাস জড়িত। এটি একটি সাজানো নাটক বলে প্রত্যক্ষদর্শীদের অনেকেই জানিয়েছেন। হত্যার ৩ দিন পর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া দুটি ভিডিও দেখলেই পরিষ্কার বোঝা যায়- কী বর্বরতা চালানো হয়েছে তাদের ওপরে। রুপলাল দাসের হাত জোর করে কথোপকথন থেকে দেখা যায়, তিনি বার বার হাত জোড় করে বলছেন, আমরা চোর নই, আমরা মুচি স্থানীয় বাজারে জুতা, সেন্ডেল সেলাই করি। আমাদের মারবেন না। এত আকুতি করার পরেও কেন তাদের পুলিশের হাতে তুলে না দিয়ে রাস্তার পাশে বুড়িহাট স্কুলমাঠে নিয়ে যাওয়া হলো। কেন তাদের এভাবে পিটিয়ে হত্যা করা হলো। এর রহস্য উদ্ঘাটন করার জন্য প্রশাসনের প্রতি দাবি জানিয়েছেন তার বড় মেয়ে নুপুর। একই কথা বলেছেন রুপলালের স্ত্রী ভারতী রানী। তিনি বলেন, ভাইরাল হওয়া ভিডিও আমরাও দেখেছি। ট্রিপল নাইনে ফোন করার পর পুলিশ এসেও কেন তাদের উদ্ধার করলো না- সে প্রশ্ন তুলেছেন তিনি। ভারতী রানী বলেছেন, পুলিশ আসার পর অবস্থা যদি সামাল দিতে নাই পারেন, তাহলে ফোন করে কেন আরও পুলিশ আনা হলো না। কেনইবা সেনাবাহিনীর সহায়তা চাওয়া হলো না। বরং পুলিশ মবের কাছে তাদের অসহায়ত্ব প্রকাশ করে চলে গেল কেন? এসব প্রশ্নের উত্তর চান তিনি।
তবে তারাগঞ্জ থানার ওসি এম এ ফারুখ বার বার একই কথা বলেছেন, আমরা খবর পেয়ে পুলিশ পাঠিয়েছিলাম। কিন্তু অনেক লোক মববাজি করে অবস্থান নেয়ায় আমরা পরিস্থিতি সামাল দিতে পারি নাই।
বৃহস্পতিবার ও তিনি সাংবাদিকদের একই কথা বলেছেন। সেই সঙ্গে সাসপেন্ড করা পুলিশ কর্মকর্তা ও সদস্যদের ডিফেন্ড করার চেষ্টা করেছেন বলে স্বজনরা অভিযোগ করেছেন।
উল্লেখ্য, গত ৯ আগস্ট রাতে মুচি সম্প্রদায়ের রুপলাল দাস ও ভাগ্নি জামাই প্রবীর দাস রিকশাভ্যান যোগে তাদের বাসায় ফিরছিল। এ সময় বুড়িরহাট এলাকায় তাদের আটক করে চোর বানিয়ে মব ভায়োলেন্সের মাধ্যম নৃশংসভাবে হত্যা করা হয়। এ ঘটনায় পরের দিন ১০ আগস্ট নিহত রুপলাল দাসের স্ত্রী ভারতী রানী বাদী হয়ে অজ্ঞাত ৫/৭শ’ জনের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা দায়ের করেন।
ছবি: ইন্টারনেট থেকে সংগৃহীত
বৃহস্পতিবার, ১৪ আগস্ট ২০২৫
রংপুরের তারাগঞ্জে মুচি সম্প্রদায়ের দুই ব্যক্তিকে চোর অপবাদ দিয়ে মব ভায়োলেন্সের মাধ্যমে গণপিটুনি দিয়ে নৃশংসভাবে হত্যার ঘটনায় গ্রেপ্তার ৪ আসামিকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ৩ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছে আদালত।
বৃহস্পতিবার,(১৪ আগস্ট ২০২৫) রংপুরের তারাগঞ্জ আমলি আদালতের বিচারক কৃষ্ণ কমল রায় এ আদেশ দেন।
অন্যদিকে মুচি সম্প্রদায়ের দুইজনকে মব জাস্টিসের নামে পিটিয়ে হত্যার অভিযোগে দায়িত্বে অবহেলার জন্য দুই এসআইসহ ৮ পুলিশ সদস্যকে সাসপেন্ড করা হয়েছে। এরা হলেন- তারাগঞ্জ থানার এসআই আবু জোবায়ের, এসআই শফিকুল ইসলাম, কনস্টেবল ফারিকুদ আখতার জামান, বিরাজ কুমার রায়, হাসান আলী, ফিরোজ কবীর, মোক্তার হোসেন ও বাবুল চন্দ্র রায়। পুলিশ জানায়, ওই পুলিশের দুই এসআইসহ ৮ পুলিশ সদস্য তারা মোবাইল টিমের সদস্য ছিলেন।
সেই সঙ্গে ঘটনা তদন্ত করার জন্য রংপুর তারাগঞ্জ সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার শরীফকে প্রধান করে কমিটি গঠন করা হয়েছে। গতকাল বুধবার রাত পৌনে ১০ টার সময় রংপুরের পুলিশ সুপার বিষয়টি নিশ্চিত করে এ প্রতিনিধিকে জানান, গণপিটুনিতে নিহত মুচি সম্প্রদায়ের ব্যক্তির নিহত হওয়ার ঘটনায় পুলিশ কী দায়িত্ব পালন করেছে তা জানতে তদন্ত কমিটি গঠন করে দেয়া হয়েছে।
অন্যদিকে ওই ঘটনায় দায়ের করা মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই আবু জোবায়রকে তদন্তের দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দিয়ে তারাগঞ্জ থানার ওসি তদন্ত রফিকুল ইসলামকে নতুন তদন্ত কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে।
অন্যদিকে মব ভায়োলেন্সের সঙ্গে জড়িত ৪ আসামিকে রংপুর জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের কোর্ট পরিদর্শক আমিনুল ইসলাম ৩ দিনের রিমান্ড দেয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
এর আগে রংপুর কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে ৪ আসামি এবাদত হোসেন, আখতারুল ইসলাম (৪৫), রফিকুল ইসলাম (৩৩) ও মিজানুর রহমান (২২)কে কড়া পুলিশি পাহারায় আদালতে তোলা হয়। আদালতে মামলার তদন্তকারী পুলিশ কর্মকর্তা তারাগঞ্জ থানার ওসি তদন্ত রফিকুল ইসলাম আদালতে আসামিদের ৫ দিনের রিমান্ডের আবেদন করে জানান, আসামিরা মব ভায়োলেন্সের সঙ্গে জড়িত। তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করে আরও তথ্য জানা প্রয়োজন। বিজ্ঞ বিচারক শুনানি শেষে আসামিদের ৩ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। পরে তাদের তদন্তকারী পুলিশ কর্মকর্তার কাছে হস্তান্তর করা হয়।
এদিকে রুপলাল দাস ও প্রবীর দাসকে চোর অপবাদ দিয়ে তাদের আটক করার ঘটনাটি ছিল পরিকল্পিত। তাদের গণপিটুনি দেয়ার বিষয়টিও ঘটানো হয়েছে আমিনুল ইসলাম ও মেহেদী হাসান নামে দুই যুবকের পরিকল্পনায়। তারা প্রচার করে, কয়েকদিন আগে এক কিশোরকে জবাই করে তার রিকশা-ভ্যান ছিনতাই করার ঘটনার সঙ্গে রুপলাল দাস ও প্রবীর দাস জড়িত। এটি একটি সাজানো নাটক বলে প্রত্যক্ষদর্শীদের অনেকেই জানিয়েছেন। হত্যার ৩ দিন পর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া দুটি ভিডিও দেখলেই পরিষ্কার বোঝা যায়- কী বর্বরতা চালানো হয়েছে তাদের ওপরে। রুপলাল দাসের হাত জোর করে কথোপকথন থেকে দেখা যায়, তিনি বার বার হাত জোড় করে বলছেন, আমরা চোর নই, আমরা মুচি স্থানীয় বাজারে জুতা, সেন্ডেল সেলাই করি। আমাদের মারবেন না। এত আকুতি করার পরেও কেন তাদের পুলিশের হাতে তুলে না দিয়ে রাস্তার পাশে বুড়িহাট স্কুলমাঠে নিয়ে যাওয়া হলো। কেন তাদের এভাবে পিটিয়ে হত্যা করা হলো। এর রহস্য উদ্ঘাটন করার জন্য প্রশাসনের প্রতি দাবি জানিয়েছেন তার বড় মেয়ে নুপুর। একই কথা বলেছেন রুপলালের স্ত্রী ভারতী রানী। তিনি বলেন, ভাইরাল হওয়া ভিডিও আমরাও দেখেছি। ট্রিপল নাইনে ফোন করার পর পুলিশ এসেও কেন তাদের উদ্ধার করলো না- সে প্রশ্ন তুলেছেন তিনি। ভারতী রানী বলেছেন, পুলিশ আসার পর অবস্থা যদি সামাল দিতে নাই পারেন, তাহলে ফোন করে কেন আরও পুলিশ আনা হলো না। কেনইবা সেনাবাহিনীর সহায়তা চাওয়া হলো না। বরং পুলিশ মবের কাছে তাদের অসহায়ত্ব প্রকাশ করে চলে গেল কেন? এসব প্রশ্নের উত্তর চান তিনি।
তবে তারাগঞ্জ থানার ওসি এম এ ফারুখ বার বার একই কথা বলেছেন, আমরা খবর পেয়ে পুলিশ পাঠিয়েছিলাম। কিন্তু অনেক লোক মববাজি করে অবস্থান নেয়ায় আমরা পরিস্থিতি সামাল দিতে পারি নাই।
বৃহস্পতিবার ও তিনি সাংবাদিকদের একই কথা বলেছেন। সেই সঙ্গে সাসপেন্ড করা পুলিশ কর্মকর্তা ও সদস্যদের ডিফেন্ড করার চেষ্টা করেছেন বলে স্বজনরা অভিযোগ করেছেন।
উল্লেখ্য, গত ৯ আগস্ট রাতে মুচি সম্প্রদায়ের রুপলাল দাস ও ভাগ্নি জামাই প্রবীর দাস রিকশাভ্যান যোগে তাদের বাসায় ফিরছিল। এ সময় বুড়িরহাট এলাকায় তাদের আটক করে চোর বানিয়ে মব ভায়োলেন্সের মাধ্যম নৃশংসভাবে হত্যা করা হয়। এ ঘটনায় পরের দিন ১০ আগস্ট নিহত রুপলাল দাসের স্ত্রী ভারতী রানী বাদী হয়ে অজ্ঞাত ৫/৭শ’ জনের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা দায়ের করেন।