বাংলাদেশের স্বাধীনতা আন্দোলনের নেতা শেখ মুজিবুর রহমানের হত্যা দিবস আজ ১৫ আগস্ট। ১৯৭৫ সালের এই দিনে স্বাধীনতার চার বছরের মধ্যে সেনাবাহিনীর একদল কর্মকর্তা ও সৈনিকের হাতে সপরিবারে জীবন দিতে হয় তৎকালীন রাষ্ট্রপতি শেখ মুজিবকে।
সেদিন ধানমন্ডির ৩২ নম্বরে বঙ্গবন্ধুর বাসভবনে সংঘটিত সেই হত্যাকাণ্ডে তার পরিবারের সদস্যদেরও হত্যা করা হয়। হত্যা করা হয় অন্যান্য এলাকায় শেখ মুজিবের অনেক আত্নীয়, স্বজনকেও। ইতিহাসের নৃশংসতম সেই হত্যাকাণ্ডের ৫০ বছর আজ।
১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট রাতে শেখ মুজিবের সহধর্মিণী বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিব, তিন ছেলে শেখ কামাল, শেখ জামাল ও শিশুপুত্র শেখ রাসেল, পুত্রবধূ সুলতানা কামাল ও রোজী জামাল, শেখ মুজিবের একমাত্র ভাই শেখ আবু নাসের, বঙ্গবন্ধুর ফোন পেয়ে তার জীবন বাঁচাতে ছুটে আসা কর্নেল জামিল, এসবির কর্মকর্তা সিদ্দিকুর রহমান ও সেনাসদস্য সৈয়দ মাহবুবুল হককেও হত্যা করা হয়।
১৫ আগস্টের সেই রাতেই সেনাসদস্যদের আরেকটি দল শেখ মুজিবের ভাগনে যুবলীগের তখনকার নেতা শেখ ফজলুল হক মনির বাসায় হামলা চালায়। সেখানে তাকে, তার অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রী আরজু মনিকে হত্যা করে। শেখ মুজিবের ভগ্নিপতি আবদুর রব সেরনিয়াবাতের বাসায় হামলা করে তাকে ও তার কন্যা বেবি, পুত্র আরিফ সেরনিয়াবাত, নাতি সুকান্ত বাবু, সেরনিয়াবাতের বড় ভাইয়ের ছেলে সজীব সেরনিয়াবাত এবং এক আত্মীয় আবদুল নঈম খানকে হত্যা করা হয়।
তবে শেখ মুজিবের দুই মেয়ে — শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা — ওই সময় দেশের বাইরে ছিলেন বলে বেঁচে যান।
সেদিন হত্যাকান্ডের শিকার হন রাজধানীর মোহাম্মদপুরে নারী ও শিশুসহ ১৩ জন, যাদের সঙ্গে শেখ মুজিবের কোনও আত্নীয়তার সম্পর্ক ছিলো না।
সেদিন ভোরে ধানমন্ডির ৩২ নম্বরে বঙ্গবন্ধুর বাড়িতে আক্রমণের সময় সেনা সদস্যরা কামানের গোলা ছুড়লে তা গিয়ে শেরশাহ সুরী রোডের ৮ ও ৯ এবং ১৯৬ ও ১৯৭ নম্বর বাড়ির (টিনশেড বস্তি) ওপর পড়ে। তাতেই নিহত হন ওই ১৩ জন। আহত হন প্রায় ৪০ জন। তাদের মধ্যে কয়েকজন সারাজীবনের জন্য পঙ্গুত্ব বরণ করেন।
১৫ আগস্টের সেই হত্যাকাণ্ডের পর ইনডেমনিটি আইনের ফলে এর বিচার হয়নি। আর মোহাম্মদপুরের ঘটনা নিয়ে মামলাও করতে পারেননি নিহতদের পরিবারের সদস্যরা।
২১ বছর পর ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় যাওয়ার পর খুনিদের রক্ষাকবচ ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ বাতিল করে বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচার শুরু হয়। আর ১৫ আগস্টকে জাতীয় শোক দিবস এবং সরকারি ছুটি ঘোষণা করা হয়।
১৯৯৮ সালের ৮ নভেম্বর শেখ মুজিব হত্যা মামলায় ১৫ জনের মৃত্যুদণ্ড দেয় আদালত। পরে উচ্চ আদালত ১২ আসামির মৃত্যুদণ্ড বহাল রাখে। এখন পর্যন্ত ছয় আসামির মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়েছে। একজন বিদেশে মারা গেছেন। পাঁচজন এখনো পলাতক।
মোহাম্মদপুর হত্যাকান্ড
তবে মোহাম্মদপুরের সেই হত্যাকান্ডের বিচার এখনও শেষ হয়নি। ২১ বছর পর ১৯৯৬ সালের ২৯ নভেম্বর মোহাম্মদপুর থানায় এ ঘটনায় মামলা করেন শেরশাহ সুরী রোডের টিনশেড বস্তির ৮ নম্বর বাড়ির মালিক মোহাম্মদ আলী, যিনি কামানের গোলায় আহত হয়েছিলেন। ঢাকার চতুর্থ অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ আদালতে মামলাটি বিচারাধীন ছিল।
২০১৯ সালের ২২ জানুয়ারি সিআইডির তৎকালীন এএসপি মুন্সী আতিকুর রহমান ১৮ তম সাক্ষী হিসেবে এ মামলায় সাক্ষ্য দেন। এরপর আর কোনো সাক্ষী আদালতে হাজির হননি।
গণঅভ্যুত্থানের পর ১৫ আগস্ট
২০০৮ সালের ডিসেম্বরের নির্বাচনে বিপুল জয় নিয়ে শেখ হাসিনার আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসে। এ দফায় টানা প্রায় সাড়ে ১৫ বছরের শাসনকালে আওয়ামী লীগ ১৫ আগস্ট এবং ২১ আগস্টের গ্রেনেড হামলাকে ঘিরে মাসব্যাপী কর্মসূচি পালন করত। ১৫ আগস্ট ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে এবং গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায় তার কবরে শ্রদ্ধা জানানোসহ নানা আয়োজন করা হতো।
তবে পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে শেখ মুজিবের মৃত্যুবার্ষিকীতে এখন আর সরকারি ছুটি নেই। গত বছর গণঅভ্যুত্থানে শেখ হাসিনা সরকারের ১৫ বছরের কর্তৃত্ববাদী শাসনের পতন হয়। আর তারপরই এই ছুটি বাতিল করা হয়।
৩২ নম্বরের সেই বাড়ি
গত বছরের ৫ আগস্ট গণঅভ্যুত্থানের দিন ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে বঙ্গবন্ধুর বাসভবনে আগুন দেয়া হয় এবং ভাঙচুর করা হয়। আর এর ছয় মাস পর ঘোষণা দিয়ে, হামলা চালিয়ে কয়েকদিন ধরে বাংলাদেশের স্বাধীনতা আন্দোলনের বাড়িটি ভেঙে ফেলা হয়।
শেখ মুজিব থেকে বঙ্গবন্ধু
গত শতকের ষাটের দশকের শেষ দিকে দেশে সুপরিচিত অনেক রাজনীতিবিদ ছিলেন। তবে অন্যদের ছাপিয়ে শীর্ষে চলে যান শেখ মুজিবুর রহমান। বাঙালি জাতীয়তাবাদকে সামনে রেখে পাকিস্তানি অপশাসন-শোষণের বিরুদ্ধে দীর্ঘ সংগ্রামের মধ্য দিয়ে হয়ে ওঠেন বাংলাদেশের স্বাধীনতাসংগ্রামের অবিসংবাদিত নেতা। তাকে উপাধি দেয়া হয় বঙ্গবন্ধু।
১৯৭১ সালের ৭ মার্চ তৎকালীন রমনার রেসকোর্স ময়দানে (বর্তমানে সোহরাওয়ার্দী উদ্যান) সমবেত লাখো মানুষের সামনে শেখ মুজিব বলেছিলেন, ‘এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম।’
শুক্রবার, ১৫ আগস্ট ২০২৫
বাংলাদেশের স্বাধীনতা আন্দোলনের নেতা শেখ মুজিবুর রহমানের হত্যা দিবস আজ ১৫ আগস্ট। ১৯৭৫ সালের এই দিনে স্বাধীনতার চার বছরের মধ্যে সেনাবাহিনীর একদল কর্মকর্তা ও সৈনিকের হাতে সপরিবারে জীবন দিতে হয় তৎকালীন রাষ্ট্রপতি শেখ মুজিবকে।
সেদিন ধানমন্ডির ৩২ নম্বরে বঙ্গবন্ধুর বাসভবনে সংঘটিত সেই হত্যাকাণ্ডে তার পরিবারের সদস্যদেরও হত্যা করা হয়। হত্যা করা হয় অন্যান্য এলাকায় শেখ মুজিবের অনেক আত্নীয়, স্বজনকেও। ইতিহাসের নৃশংসতম সেই হত্যাকাণ্ডের ৫০ বছর আজ।
১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট রাতে শেখ মুজিবের সহধর্মিণী বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিব, তিন ছেলে শেখ কামাল, শেখ জামাল ও শিশুপুত্র শেখ রাসেল, পুত্রবধূ সুলতানা কামাল ও রোজী জামাল, শেখ মুজিবের একমাত্র ভাই শেখ আবু নাসের, বঙ্গবন্ধুর ফোন পেয়ে তার জীবন বাঁচাতে ছুটে আসা কর্নেল জামিল, এসবির কর্মকর্তা সিদ্দিকুর রহমান ও সেনাসদস্য সৈয়দ মাহবুবুল হককেও হত্যা করা হয়।
১৫ আগস্টের সেই রাতেই সেনাসদস্যদের আরেকটি দল শেখ মুজিবের ভাগনে যুবলীগের তখনকার নেতা শেখ ফজলুল হক মনির বাসায় হামলা চালায়। সেখানে তাকে, তার অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রী আরজু মনিকে হত্যা করে। শেখ মুজিবের ভগ্নিপতি আবদুর রব সেরনিয়াবাতের বাসায় হামলা করে তাকে ও তার কন্যা বেবি, পুত্র আরিফ সেরনিয়াবাত, নাতি সুকান্ত বাবু, সেরনিয়াবাতের বড় ভাইয়ের ছেলে সজীব সেরনিয়াবাত এবং এক আত্মীয় আবদুল নঈম খানকে হত্যা করা হয়।
তবে শেখ মুজিবের দুই মেয়ে — শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা — ওই সময় দেশের বাইরে ছিলেন বলে বেঁচে যান।
সেদিন হত্যাকান্ডের শিকার হন রাজধানীর মোহাম্মদপুরে নারী ও শিশুসহ ১৩ জন, যাদের সঙ্গে শেখ মুজিবের কোনও আত্নীয়তার সম্পর্ক ছিলো না।
সেদিন ভোরে ধানমন্ডির ৩২ নম্বরে বঙ্গবন্ধুর বাড়িতে আক্রমণের সময় সেনা সদস্যরা কামানের গোলা ছুড়লে তা গিয়ে শেরশাহ সুরী রোডের ৮ ও ৯ এবং ১৯৬ ও ১৯৭ নম্বর বাড়ির (টিনশেড বস্তি) ওপর পড়ে। তাতেই নিহত হন ওই ১৩ জন। আহত হন প্রায় ৪০ জন। তাদের মধ্যে কয়েকজন সারাজীবনের জন্য পঙ্গুত্ব বরণ করেন।
১৫ আগস্টের সেই হত্যাকাণ্ডের পর ইনডেমনিটি আইনের ফলে এর বিচার হয়নি। আর মোহাম্মদপুরের ঘটনা নিয়ে মামলাও করতে পারেননি নিহতদের পরিবারের সদস্যরা।
২১ বছর পর ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় যাওয়ার পর খুনিদের রক্ষাকবচ ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ বাতিল করে বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচার শুরু হয়। আর ১৫ আগস্টকে জাতীয় শোক দিবস এবং সরকারি ছুটি ঘোষণা করা হয়।
১৯৯৮ সালের ৮ নভেম্বর শেখ মুজিব হত্যা মামলায় ১৫ জনের মৃত্যুদণ্ড দেয় আদালত। পরে উচ্চ আদালত ১২ আসামির মৃত্যুদণ্ড বহাল রাখে। এখন পর্যন্ত ছয় আসামির মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়েছে। একজন বিদেশে মারা গেছেন। পাঁচজন এখনো পলাতক।
মোহাম্মদপুর হত্যাকান্ড
তবে মোহাম্মদপুরের সেই হত্যাকান্ডের বিচার এখনও শেষ হয়নি। ২১ বছর পর ১৯৯৬ সালের ২৯ নভেম্বর মোহাম্মদপুর থানায় এ ঘটনায় মামলা করেন শেরশাহ সুরী রোডের টিনশেড বস্তির ৮ নম্বর বাড়ির মালিক মোহাম্মদ আলী, যিনি কামানের গোলায় আহত হয়েছিলেন। ঢাকার চতুর্থ অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ আদালতে মামলাটি বিচারাধীন ছিল।
২০১৯ সালের ২২ জানুয়ারি সিআইডির তৎকালীন এএসপি মুন্সী আতিকুর রহমান ১৮ তম সাক্ষী হিসেবে এ মামলায় সাক্ষ্য দেন। এরপর আর কোনো সাক্ষী আদালতে হাজির হননি।
গণঅভ্যুত্থানের পর ১৫ আগস্ট
২০০৮ সালের ডিসেম্বরের নির্বাচনে বিপুল জয় নিয়ে শেখ হাসিনার আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসে। এ দফায় টানা প্রায় সাড়ে ১৫ বছরের শাসনকালে আওয়ামী লীগ ১৫ আগস্ট এবং ২১ আগস্টের গ্রেনেড হামলাকে ঘিরে মাসব্যাপী কর্মসূচি পালন করত। ১৫ আগস্ট ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে এবং গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায় তার কবরে শ্রদ্ধা জানানোসহ নানা আয়োজন করা হতো।
তবে পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে শেখ মুজিবের মৃত্যুবার্ষিকীতে এখন আর সরকারি ছুটি নেই। গত বছর গণঅভ্যুত্থানে শেখ হাসিনা সরকারের ১৫ বছরের কর্তৃত্ববাদী শাসনের পতন হয়। আর তারপরই এই ছুটি বাতিল করা হয়।
৩২ নম্বরের সেই বাড়ি
গত বছরের ৫ আগস্ট গণঅভ্যুত্থানের দিন ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে বঙ্গবন্ধুর বাসভবনে আগুন দেয়া হয় এবং ভাঙচুর করা হয়। আর এর ছয় মাস পর ঘোষণা দিয়ে, হামলা চালিয়ে কয়েকদিন ধরে বাংলাদেশের স্বাধীনতা আন্দোলনের বাড়িটি ভেঙে ফেলা হয়।
শেখ মুজিব থেকে বঙ্গবন্ধু
গত শতকের ষাটের দশকের শেষ দিকে দেশে সুপরিচিত অনেক রাজনীতিবিদ ছিলেন। তবে অন্যদের ছাপিয়ে শীর্ষে চলে যান শেখ মুজিবুর রহমান। বাঙালি জাতীয়তাবাদকে সামনে রেখে পাকিস্তানি অপশাসন-শোষণের বিরুদ্ধে দীর্ঘ সংগ্রামের মধ্য দিয়ে হয়ে ওঠেন বাংলাদেশের স্বাধীনতাসংগ্রামের অবিসংবাদিত নেতা। তাকে উপাধি দেয়া হয় বঙ্গবন্ধু।
১৯৭১ সালের ৭ মার্চ তৎকালীন রমনার রেসকোর্স ময়দানে (বর্তমানে সোহরাওয়ার্দী উদ্যান) সমবেত লাখো মানুষের সামনে শেখ মুজিব বলেছিলেন, ‘এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম।’