বিচার দাবিতে সমাবেশ করেছে দলিতরা
রংপুরের তারাগঞ্জে মুচি সম্প্রদায়ের দুইজনকে নৃশংসভাবে পিটিয়ে হত্যার ঘটনায় ভাইরাল হওয়া ভিডিও দেখে জড়িত ৫ জনকে চিহ্নিত করা গেলেও পুলিশ তাদের গ্রেপ্তার করছে না বলে অভিযোগ উঠেছে।
হত্যার ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী, নিহত রুপলাল দাস ও তার ভাগ্নিজামাই প্রদীপ দাসের স্বজন এবং এলাকাবাসীও ওই পাঁচজনকে শনাক্ত করে। এরা হলেন ঘটনাস্থল বুড়িরহাট পাইকার পাড়া গ্রামের বিএনপি কর্মী রুবেল, স্থানীয় কৃষক লীগের কর্মী মেহেদী, একই এলাকার সোহাগ ও সাইফুল।
প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে, অটোভ্যান ছিনতাই এবং ধর্মীয় রীতি অনুযায়ী বিয়ের অনুষ্ঠানের জন্য তাদের সঙ্গে আনা বাংলা মদ কেড়ে নেয়াই টার্গেট ছিল হত্যাকারীদের।
তবে চিহ্নিত ৫ জনকে গ্রেপ্তার করা গেলে নেপথ্যের সব কারণই নিশ্চিত হওয়া যাবে বলে মনে করেন স্বজন ও এলাকাবাসী।
এ ব্যাপারে তারাগঞ্জ থানার ওসি এম এ ফারুখ বলেন, ভাইরাল হওয়া ভিডিও দেখে আমরা কয়েকজনকে চিহ্নিত করছি। তাদের খুজে পাওয়া যাচ্ছে না। তবে তাদের গ্রেপ্তার করার সব পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে।
এদিকে মুচি সম্প্রদায়ের দুইজনকে মব সৃষ্টি করে হত্যার ঘটনার বিচার, ভুক্তভোগী পরিবারকে পর্যাপ্ত ক্ষতিপূরণ প্রদানসহ ৫ দফা দাবিতে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ করেছে দলিত সম্প্রদায়।
শনিবার,(১৬ আগস্ট ২০২৫) দুপুরে রংপুর প্রেসক্লাবের সামনে হয় তাদের এই কর্মসূচি। বাংলাদেশ দলিত ও বঞ্চিত জনগোষ্ঠী অধিকার আন্দোলন ও বাংলাদেশ দলিত পরিষদ কেন্দ্রীয় পরিষদ আয়োজিত এ কর্মসূচিতে নিহত প্রদীপ দাসের পুত্র ও কন্যাসহ সংগঠনের নেতারা ছাড়াও বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতারা উপস্থিত ছিলেন।
সমাবেশে বক্তব্য দেন, বাংলাদেশ দলিত পরিষদের আইনবিষয়ক সম্পাদক অ্যাডভোকেট বাবুল রবিদাস, বাংলাদেশ দলিত পরিষদ রংপুর জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক গোপাল চন্দ্র দাস, রংপুর জেলা শাখার সভাপতি স্বপন কুমার রায়, সাধারণ সম্পাদক গৌতম কুমার দাস, বাংলাদেশ রবিদাস ফোরাম- রংপুর জেলা শাখার আহ্বায়ক প্রদীপ রবিদাস, হরিজন অধিকার আদায় সংগঠন- রংপুরের সাধারণ সম্পাদক সাজু বাঁশফোর, বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল (বাসদ) রংপুর জেলা শাখার আহ্বায়ক কমরেড আব্দুল কুদ্দুস, শ্রমিক অধিকার আন্দোলন- আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট পলাশ কান্তিনাগ এবং নিহত প্রদীপ রবিদাসের পুত্র আপন রবিদাস ও কন্যা পলাশী রানী দাসসহ অন্যরা।
বক্তারা অভিযোগ করেন, গত ৯ আগস্ট রাতে রংপুরের তারাগঞ্জ উপজেলার বুড়িরহাট বটতলা এলাকায় ভ্যান চোর আখ্যায়িত করে মব ভায়োলেন্সের মাধ্যমে মুচি সম্প্রদায়ের রুপলাল দাস ও তার ভাগ্নিজামাই প্রদীপ দাসকে নৃশংসভাবে পিটিয়ে হত্যা করা হয়। রুপলাল দাস তারাগঞ্জে জুতা স্যান্ডেল সেলাই করে জীবিকা নির্বাহ করতেন। আর প্রদীপ দাস প্রতিবন্ধী হওয়ায় এলাকাবাসী চাঁদা তুলে তাকে একটি অটোভ্যান কিনে দিয়েছিলেন। সেটা চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করতেন।
বক্তারা অভিযোগ করেছেন, রুপলাল দাস ও তার ভাগ্নিজামাইকে ভ্যানসহ আটক করে পেটানো হচ্ছিলো, এরপর যখন তাদের বুড়িরহাট উচ্চবিদ্যালয়ে আনা হয়, তখনও তারা দুজনই জীবিত ছিলেন। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ৫ মিনিট ২১ সেকেন্ডের একটি ভিডিওতে দেখা যায়, পুলিশ ঘটনাস্থলে উপস্থিত থেকেও তাদের বাঁচাতে পারেনি। ভিডিওতে দেখা যায়, বিদ্যালয়ের মাঠে একটি ভ্যানের ওপর রাখা হয়েছে রুপলাল ও প্রদীপকে। চারপাশে কয়েকশ’ মানুষ প্রথম সারিতে তরুণ ও যুবকরা। পুলিশের চার সদস্য ভ্যানটি ঘিরে বাঁশিতে ফুঁ দিচ্ছিলেন এবং হাত তুলে জনতাকে নিবৃত্ত করার চেষ্টা করেছেন। এ সময় রুপলাল দাঁড়াতে চেষ্টা করেও ব্যর্থ হন। শোয়া অবস্থায় খুলে যাওয়া লুঙ্গি ঠিক করছিলেন তিনি। পুলিশ ধাক্কা দিয়ে জনতাকে সরানোর চেষ্টা করলে তারা আরও উত্তেজিত হয়ে ওঠেন।
মব ভায়োলেন্সের হাত থেকে বাঁচতে হাতজোড় করে আকুতি জানিয়েছিলেন রুপলাল ও প্রদীপ । কিন্তু মন গলেনি সেখানে উপস্থিত থাকা লোকজনের। শোরগোল শুরু হলে পুলিশ নিজেরাই ভয়ে গণপিটুনিতে অর্ধমৃত দু’জনকে উদ্ধার না করে ঘটনাস্থল থেকে চলে আসে।
অথচ সে সময় পুলিশ যদি থানায় ফোন করে আরও পুলিশের সহায়তা নিতো কিংবা উপজেলা সদরে অবস্থান করা সেনাবাহিনীর সাহায্য নিতো, তাহলেও রুপলাল ও প্রদীপ দাসকে রক্ষা করা যেত। যেটা পুলিশ করে নাই। এর দায় তাদের নিতে হবে বলে বক্তারা অভিযোগ করেন।
সমাবেশে নিহত প্রদীপ দাসের কন্যা পলাশী রানী ও ছেলে আপন মববাজদের দ্রুত গ্রেপ্তার করে তাদের এতিম বানানোর দায়ীদের কঠোর শাস্তি দেবার দাবি জানান। সেই সঙ্গে তারা কীভাবে তাদের জীবন জীবিকা চলবে সে ব্যাপারে সরকারকে পর্যাপ্ত সহায়তা দেয়ার দাবি জানান তারা।
বিচার দাবিতে সমাবেশ করেছে দলিতরা
শনিবার, ১৬ আগস্ট ২০২৫
রংপুরের তারাগঞ্জে মুচি সম্প্রদায়ের দুইজনকে নৃশংসভাবে পিটিয়ে হত্যার ঘটনায় ভাইরাল হওয়া ভিডিও দেখে জড়িত ৫ জনকে চিহ্নিত করা গেলেও পুলিশ তাদের গ্রেপ্তার করছে না বলে অভিযোগ উঠেছে।
হত্যার ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী, নিহত রুপলাল দাস ও তার ভাগ্নিজামাই প্রদীপ দাসের স্বজন এবং এলাকাবাসীও ওই পাঁচজনকে শনাক্ত করে। এরা হলেন ঘটনাস্থল বুড়িরহাট পাইকার পাড়া গ্রামের বিএনপি কর্মী রুবেল, স্থানীয় কৃষক লীগের কর্মী মেহেদী, একই এলাকার সোহাগ ও সাইফুল।
প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে, অটোভ্যান ছিনতাই এবং ধর্মীয় রীতি অনুযায়ী বিয়ের অনুষ্ঠানের জন্য তাদের সঙ্গে আনা বাংলা মদ কেড়ে নেয়াই টার্গেট ছিল হত্যাকারীদের।
তবে চিহ্নিত ৫ জনকে গ্রেপ্তার করা গেলে নেপথ্যের সব কারণই নিশ্চিত হওয়া যাবে বলে মনে করেন স্বজন ও এলাকাবাসী।
এ ব্যাপারে তারাগঞ্জ থানার ওসি এম এ ফারুখ বলেন, ভাইরাল হওয়া ভিডিও দেখে আমরা কয়েকজনকে চিহ্নিত করছি। তাদের খুজে পাওয়া যাচ্ছে না। তবে তাদের গ্রেপ্তার করার সব পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে।
এদিকে মুচি সম্প্রদায়ের দুইজনকে মব সৃষ্টি করে হত্যার ঘটনার বিচার, ভুক্তভোগী পরিবারকে পর্যাপ্ত ক্ষতিপূরণ প্রদানসহ ৫ দফা দাবিতে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ করেছে দলিত সম্প্রদায়।
শনিবার,(১৬ আগস্ট ২০২৫) দুপুরে রংপুর প্রেসক্লাবের সামনে হয় তাদের এই কর্মসূচি। বাংলাদেশ দলিত ও বঞ্চিত জনগোষ্ঠী অধিকার আন্দোলন ও বাংলাদেশ দলিত পরিষদ কেন্দ্রীয় পরিষদ আয়োজিত এ কর্মসূচিতে নিহত প্রদীপ দাসের পুত্র ও কন্যাসহ সংগঠনের নেতারা ছাড়াও বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতারা উপস্থিত ছিলেন।
সমাবেশে বক্তব্য দেন, বাংলাদেশ দলিত পরিষদের আইনবিষয়ক সম্পাদক অ্যাডভোকেট বাবুল রবিদাস, বাংলাদেশ দলিত পরিষদ রংপুর জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক গোপাল চন্দ্র দাস, রংপুর জেলা শাখার সভাপতি স্বপন কুমার রায়, সাধারণ সম্পাদক গৌতম কুমার দাস, বাংলাদেশ রবিদাস ফোরাম- রংপুর জেলা শাখার আহ্বায়ক প্রদীপ রবিদাস, হরিজন অধিকার আদায় সংগঠন- রংপুরের সাধারণ সম্পাদক সাজু বাঁশফোর, বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল (বাসদ) রংপুর জেলা শাখার আহ্বায়ক কমরেড আব্দুল কুদ্দুস, শ্রমিক অধিকার আন্দোলন- আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট পলাশ কান্তিনাগ এবং নিহত প্রদীপ রবিদাসের পুত্র আপন রবিদাস ও কন্যা পলাশী রানী দাসসহ অন্যরা।
বক্তারা অভিযোগ করেন, গত ৯ আগস্ট রাতে রংপুরের তারাগঞ্জ উপজেলার বুড়িরহাট বটতলা এলাকায় ভ্যান চোর আখ্যায়িত করে মব ভায়োলেন্সের মাধ্যমে মুচি সম্প্রদায়ের রুপলাল দাস ও তার ভাগ্নিজামাই প্রদীপ দাসকে নৃশংসভাবে পিটিয়ে হত্যা করা হয়। রুপলাল দাস তারাগঞ্জে জুতা স্যান্ডেল সেলাই করে জীবিকা নির্বাহ করতেন। আর প্রদীপ দাস প্রতিবন্ধী হওয়ায় এলাকাবাসী চাঁদা তুলে তাকে একটি অটোভ্যান কিনে দিয়েছিলেন। সেটা চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করতেন।
বক্তারা অভিযোগ করেছেন, রুপলাল দাস ও তার ভাগ্নিজামাইকে ভ্যানসহ আটক করে পেটানো হচ্ছিলো, এরপর যখন তাদের বুড়িরহাট উচ্চবিদ্যালয়ে আনা হয়, তখনও তারা দুজনই জীবিত ছিলেন। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ৫ মিনিট ২১ সেকেন্ডের একটি ভিডিওতে দেখা যায়, পুলিশ ঘটনাস্থলে উপস্থিত থেকেও তাদের বাঁচাতে পারেনি। ভিডিওতে দেখা যায়, বিদ্যালয়ের মাঠে একটি ভ্যানের ওপর রাখা হয়েছে রুপলাল ও প্রদীপকে। চারপাশে কয়েকশ’ মানুষ প্রথম সারিতে তরুণ ও যুবকরা। পুলিশের চার সদস্য ভ্যানটি ঘিরে বাঁশিতে ফুঁ দিচ্ছিলেন এবং হাত তুলে জনতাকে নিবৃত্ত করার চেষ্টা করেছেন। এ সময় রুপলাল দাঁড়াতে চেষ্টা করেও ব্যর্থ হন। শোয়া অবস্থায় খুলে যাওয়া লুঙ্গি ঠিক করছিলেন তিনি। পুলিশ ধাক্কা দিয়ে জনতাকে সরানোর চেষ্টা করলে তারা আরও উত্তেজিত হয়ে ওঠেন।
মব ভায়োলেন্সের হাত থেকে বাঁচতে হাতজোড় করে আকুতি জানিয়েছিলেন রুপলাল ও প্রদীপ । কিন্তু মন গলেনি সেখানে উপস্থিত থাকা লোকজনের। শোরগোল শুরু হলে পুলিশ নিজেরাই ভয়ে গণপিটুনিতে অর্ধমৃত দু’জনকে উদ্ধার না করে ঘটনাস্থল থেকে চলে আসে।
অথচ সে সময় পুলিশ যদি থানায় ফোন করে আরও পুলিশের সহায়তা নিতো কিংবা উপজেলা সদরে অবস্থান করা সেনাবাহিনীর সাহায্য নিতো, তাহলেও রুপলাল ও প্রদীপ দাসকে রক্ষা করা যেত। যেটা পুলিশ করে নাই। এর দায় তাদের নিতে হবে বলে বক্তারা অভিযোগ করেন।
সমাবেশে নিহত প্রদীপ দাসের কন্যা পলাশী রানী ও ছেলে আপন মববাজদের দ্রুত গ্রেপ্তার করে তাদের এতিম বানানোর দায়ীদের কঠোর শাস্তি দেবার দাবি জানান। সেই সঙ্গে তারা কীভাবে তাদের জীবন জীবিকা চলবে সে ব্যাপারে সরকারকে পর্যাপ্ত সহায়তা দেয়ার দাবি জানান তারা।