alt

জাতীয়

বিষের ফাঁদে সুন্দরবন, দাদনে জিম্মি জেলে

নিজস্ব বার্তা পরিবেশক, খুলনা : শনিবার, ১৬ আগস্ট ২০২৫

দাদনের চাপ, পাওয়া যায় না মাছ, আর লোভ- প্রয়োগ করা হচ্ছে বিষ, ব্যবহার করা হচ্ছে নিষিদ্ধ জাল, বিপন্ন হচ্ছে সুন্দরবনের প্রতিবেশ, আরও ঝুঁকিতে পড়ছে জেলেদের জীবিকা -সংবাদ

প্রজনন মৌসুমেও পূর্ব ও পশ্চিম সুন্দরবনের বিভিন্ন নদী ও খালে দেদারসে চলছে বিষ প্রয়োগে মাছ শিকার। কিছু অসাধু জেলে বিষ ব্যবহার করে মাছ ধরায় বনের গহিনে থাকা বিভিন্ন প্রজাতির মাছ, মাছের পোনা, অন্যান্য জলজ প্রাণী ও উদ্ভিদ প্রতিনিয়ত ধ্বংস হচ্ছে। ফলে প্রজনন মৌসুমে সুন্দরবনে মাছ ধরা পাস পারমিট বন্ধ রাখা শুধু ‘কাগজে কলমে’ সীমাবদ্ধ থাকছে বলে অভিযোগ উঠেছে।

সুন্দরবনের সবচেয়ে বড় বিপদ হলো বনের নদী-খালে বিষ দিয়ে মাছ ধরার প্রতিযোগিতা

‘প্রবেশ নিষেধাজ্ঞার’ সময়টাতে বন অপরাধ বেড়ে যায় কয়েকগুণ: স্থানীয়রা

নিরাপত্তাহীনতায় বিপন্ন বনজীবীরা

প্রতি বছর ১ জুন থেকে ৩১ আগস্ট পর্যন্ত সুন্দরবনসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে মাছ ধরা নিষিদ্ধ করা হয়। এ সময় সুন্দরবনে সাধারণ মানুষের চলাচলসহ বনজীবীদের প্রবেশের পাশাপাশি পর্যটক প্রবেশেও নিষেধাজ্ঞা থাকে।

খুলনা অঞ্চলের বন সংরক্ষক ইমরান আহমেদ বলেন, ‘জুন থেকে আগস্ট-এই তিন মাস সুন্দরবনের নদী-খালের মাছের প্রজনন মৌসুম হিসেবে ধরা হয়। এ তিন মাস সুন্দরবনের নদী ও খালে থাকা বেশিরভাগ মাছ ডিম ছাড়ে। এছাড়া এই সময়ে বন্যপ্রাণীরও প্রজনন মৌসুম। এই তিন মাস বনে পর্যটক ও বনজীবীরা না গেলে বনের জীববৈচিত্র্য ও বন্যপ্রাণী নিরুপদ্রব থাকে।’

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সুন্দরবনের প্রশাসনিক অবকাঠামো খুবই দুর্বল। অধিকাংশ টহল ফাঁড়ি ভাঙাচোরা। আধুনিক অস্ত্র, প্রশিক্ষণ, জলযানের অভাবে ডাকাত, চোরাশিকারির পিছু নিতে বন কর্মকর্তা-প্রহরীদের আগ্রহ কম। এ কারণে বন অপরাধী চক্রের সঙ্গে তারা মিলেমিশে থাকেন।

জনবল সংকটসহ বেশ কিছু সীমাবদ্ধতা থাকলেও সুন্দরবনকেন্দ্রিক সব ধরনের অপরাধ দমনে বন কর্মকর্তা ও প্রহরীরা সচেষ্ট রয়েছেন বলে দাবি খুলনা অঞ্চলের বন সংরক্ষক ইমরান আহমেদের।

এছাড়া সুন্দরবনের বিস্তীর্ণ উপকূল এবং নদীর মোহনায় ‘নেট জাল’ দিয়ে চিংড়ির পোনা ধরছেন স্থানীয়রা। জালগুলো মশারির মতো প্রায় নিছিদ্র । এতে চিংড়ির সঙ্গে নানা জাতের মাছের রেণু, পোনা, ডিমওয়ালা মা মাছ ও মাছের প্রাকৃতিক খাদ্য-সামুদ্রিক প্রাণীর লার্ভাও মারা পড়ছে। সব মিলিয়ে হুমকির মুখে পড়েছে বনের মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ।

‘পূর্ব’ ও ‘পশ্চিম’ এই দুটি প্রশাসনিক বিভাগে সুন্দরবনের বাংলাদেশ অংশ বিভক্ত। খুলনা ও সাতক্ষীরা অংশ নিয়ে পশ্চিম সুন্দরবন। আর বাগেরহাট ও খুলনার সামান্য অংশ নিয়ে পূর্ব সুন্দরবন। সুন্দরবনের এই দুই বিভাগের খুলনার কয়রা, পাইকগাছা ও দাকোপ, বাগেরহাটের মোংলা, শরণখোলা, মোরেলগঞ্জ, সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলার বেশিরভাগ বাসিন্দাদের দৈনন্দিন জীবন সুন্দরবনের ওপর নির্ভরশীল। কিন্তু বর্তমানে নানা সংকট এসব বনজীবীদের জীবন-জীবিকার ওপর প্রভাব পড়তে শুরু করেছে।

# মহাজন-বন বিভাগের যোগসাজশ

সুন্দরবনের সবচেয়ে বড় বিপদ হলো বনের নদী-খালে বিষ দিয়ে মাছ ধরার প্রতিযোগিতা। এই অপতৎপরতার পেছনে কাজ করছে প্রভাবশালী কয়েকটি গোষ্ঠী। একটি গোষ্ঠী বন উপকূলের একশ্রেণীর মাছ ব্যবসায়ী, যাদের বলা হয় ‘কোম্পানি মহাজন’। তারা নিজেদের নিয়ন্ত্রিত জেলেদের প্ররোচনা দেন বিষ ছিটিয়ে দ্রুত বেশি মাছ শিকারে। আরেক গোষ্ঠী হলো অসাধু বনরক্ষী। এসব চক্রকে সহযোগিতা করছেন এক শ্রেণীর সাংবাদিক।

খুলনার সুন্দরবন ঘেঁষা কয়রা উপজেলার তেঁতুলতলার চর এলাকার বনজীবী গফুর গাজী বলেন, জঙ্গল ব্যবসায়ী ‘মহাজনদের’ টাকা দিয়ে তারা বনের অভয়ারণ্যের নদ-খাল ইজারা নেন। বন কর্মকর্তাদের ‘ম্যানেজ’ করেন মহাজনরা। তবে বন্ধের সময় তাদের টাকা ‘বেশি’ দিতে হয়।

‘আর বনের প্রহরীদের সঙ্গে আমরা সমঝোতা করে নেই। প্রহরীরা না চাইলে বনের একটা খালের পানিও জেলেদের ছোঁয়ার ক্ষমতা নেই। বন বিভাগের লোকজন ডিউটি খরচের নামে বন ফাঁড়িতে আমাদের কাছ থেকে সারাবছরই সমানে টাকা আদায় করে।’

তিনি বলেন, “বনের অন্য সব খালের চেয়ে অভয়ারণ্যে বেশি মাছ পাওয়া যায়। যে কারণে অভয়ারণ্যের খাল দখল নিয়ে স্থানীয় মহাজনদের মধ্যে ‘প্রতিযোগিতা’ রয়েছে। মহাজনরা দালালদের মাধ্যমে বন বিভাগকে ‘মোটা অঙ্কের টাকা দিয়ে’ অভয়ারণ্যের খাল দখল নেন। পরে তা জেলেদের কাছে চুক্তিতে ইজারা দেয়া হয়।”

“তবে বিপত্তি বাধে যখন বড় ব্যবসায়ীর কাছ থেকে ‘বেশি টাকা’ নিয়ে ছোট ব্যবসায়ীদের ওই এলাকা থেকে সরিয়ে দিতে জেলেদের বিরুদ্ধে মামলা দেয়া হয়, তখন।”

সুন্দরবন উপকূলীয় অঞ্চলে জলবায়ু, দুর্যোগ, সুন্দরবন সুরক্ষা ও শিক্ষা সহায়তা বিষয়ে নিয়ে কাজ করা কয়রা সাংবাদিক ফোরামের সভাপতি তারিক লিটু বলেন, ‘সুন্দরবনসংলগ্ন জনপদের কিছু প্রভাবশালী বন বিভাগকে ম্যানেজ করে অভয়ারণ্য এলাকাতে সারাবছরই বিষ প্রয়োগে মাছ শিকার করেন। এমনি হরিণসহ বন্যপ্রাণী নিধনও থামানো যায়নি।’

খুলনা অঞ্চলের বন সংরক্ষক ইমরান আহমেদ বলেন, ‘জনবল সংকটসহ বেশ কিছু সীমাবদ্ধতা থাকলেও সুন্দরবনকেন্দ্রিক সব ধরনের অপরাধ দমনে সচেষ্ট রয়েছেন বন কর্মকর্তা ও প্রহরীরা। প্রায়ই কীটনাশক, কীটনাশক প্রয়োগে ধরা মাছ, নিষিদ্ধ ঘন জাল ও হরিণ শিকারের ফাঁদ, মাংসসহ অনেককে আটক করা হচ্ছে। ধ্বংস করা হচ্ছে গহিন বনে বানানো শুঁটকির মাচা।’

‘তবে টহল বোটের শব্দ পেলেই অপরাধীরা পালিয়ে যায়।’ যোগ করেন তিনি।

# বেপরোয়া অপরাধী চক্র

সুন্দরবনের সাধারণ জেলে, বাওয়ালি, মৌয়াল ও স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ‘প্রবেশ নিষেধাজ্ঞার’ সময়টাতে বনঅপরাধ বেড়ে যায় কয়েকগুণ। এ সময় দর্শনার্থী এবং সাধারণ জেলেরা না থাকার সুযোগে একাধিক অপরাধী চক্র বেপরোয়া হয়ে ওঠে।

খুলনার সুন্দরবন প্রভাবিত দাকোপ উপজেলার সুতারখালি এলাকার বনজীবী জেলে মোজাম ফকির বলছিলেন,

‘সুন্দরবনে এখন মাছ ধরতে গেলে কোম্পানি মহাজনদের তালিকাভুক্ত হতে হয়। ওই চক্রের বাইরে কোনো বনজীবী জেলে সুন্দরবনে মাছ ধরতে গেলে বন কর্মকর্তা-প্রহরী বা পুলিশ দিয়ে মাছসহ ধরিয়ে দেয়া হয়।’

সম্প্রতি সুন্দরবনের বনজসম্পদ আহরণে অবৈধ ও অনৈতিক পন্থা অবলম্বন করার এ পরিস্থিতিকে উদ্বেগজনক বলছেন, সুন্দরবন ও উপকূল সুরক্ষায় কর্মরত স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ‘সুন্দরবন ও উপকূল সুরক্ষা ফাউন্ডেশন’-এর নির্বাহী পরিচালক সাংবাদিক শুভ্র শচীন।

তিনি বলেন, ‘আগে দেখা যেত, অভয়ারণ্য এলাকায় একটি-দুটি দল বিষ দিয়ে মাছ ধরত; তারা মৎস্যজীবী ছিলেন। কিন্তু এখন সেখানে দাদনদাতা হয়ে গেছেন সুন্দরবনসংলগ্ন এলাকার স্থানীয় কিছু প্রভাবশালী মাছ ব্যবসায়ী মহাজন। তারাই এখন বন বিভাগের সঙ্গে রফা করেন। পরবর্তীতে বনের অভয়ারণ্যের বিভিন্ন নদী-খাল জেলেদের কাছে অলিখিত ইজারা দেন। এসব চক্র অবৈধ নানা উপায়ে সুন্দরবনের বনজসম্পদ আহরণ ও পাচারে জড়িত।’

তবে নিষেধাজ্ঞার মধ্যে সুন্দরবনে প্রবেশ করে মাছ-কাঁকড়া ধরা বা বন্যপ্রাণী শিকারের কোন সুযোগ নেই দাবি করে সুন্দরবন পশ্চিম বন বিভাগের বিভাগীয় কর্মকর্তা এ জেড এম হাছানুর রহমান বলেন, ‘সুন্দরবনে সারাবছরই বন বিভাগের নিয়মিত জোরালো টহল অভিযান অব্যাহত রয়েছে।’

# বিষ দিয়ে ধরা মাছ শুঁটকি করে বিক্রি

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ‘প্রবেশ নিষেধাজ্ঞার’ মাঝেই পশ্চিম সুন্দরবনের গহিন বনের বিভিন্ন পয়েন্টে খাল ও ভারানিতে ২০০-২৫০টি নৌকায় চিংড়ি ও বিভিন্ন প্রজাতির মাছ শিকার করছেন ‘একদল জেলে’।

সুন্দরবন ঘেঁষা কয়রা উপজেলার দক্ষিণ বেদকাশি ইউনিয়নের আনোয়ার হোসেন নামের এক জেলে বলেন, ‘বিষ দিয়ে ধরা চিংড়ি থেকে বিষের গন্ধ আসে- লোকালয়ে আনা যায় না। যে কারণে বনের মধ্যেই এখন চিংড়ি শুকানোর ব্যবস্থা করা হয়। প্রতি কেজি শুঁটকি ১ হাজার ৫০০ টাকায় বিক্রি হয়।’

বিষ দিয়ে মাছ ধরে তারপর শুঁটকি তৈরির বিষয়টি সুন্দরবন পশ্চিম বন বিভাগের চাঁদপাই রেঞ্জের সহকারী বন সংরক্ষক দীপক চন্দ্র দাসও শিকার করেছেন। তিনি বলেন, ‘কিছু অসাধু জেলে সুন্দরবনের গহিনে কীটনাশক ছিটিয়ে চিংড়ি ধরেন। পরে গাছ কেটে আগুনে শুকিয়ে শুঁটকি বানান। আমরা অভিযানে গহিন বনে এমন কারখানার সন্ধান পাচ্ছি। এসব শুঁটকির কারখানাগুলো আগে সুন্দরবনসংলগ্ন এলাকার লোকালয়ে ছিল। বন বিভাগ ও প্রশাসনের অভিযান এড়াতে এখন সেগুলো বনের গভীরে চলে গেছে।’

তবে নীলকোমল ফরেস্ট স্টেশন কর্মকর্তা রবিউল ইসলাম ও কাশিয়াবাদ ফরেস্ট স্টেশন কর্মকর্তা নাসির উদ্দীন মাছ ব্যবসায়ী মহাজন চক্রের কাছ থেকে ‘উৎকোচ নিয়ে’ অভয়ারণ্য এলাকাতে জেলেদের বিষ প্রয়োগে মাছ শিকারের সুযোগ করে দেয়ার অভিযোগ অস্বীকার করেন।

# নিরাপত্তাহীনতায় বিপণ্য বনজীবীরা

খুলনার সুন্দরবন ঘেঁষা কয়রা উপজেলার তেঁতুলতলার চর এলাকার বনজীবী গফুর গাজী বলেন, “নিয়ম মানলে তো আর পেট চলে না। আমাদের সঞ্চয় নেই। বছরের একটা বড় সময় নিষেধাজ্ঞার কারণে ৯২ দিন বনে ঢোকা যায় না।”

এখন শুধু সুন্দরবনের ওপর নির্ভর করে ‘সংসার চলে না’ জানিয়ে তিনি বলেন, ‘বনে আগের মত মাছ-মধু, গোলপাতা মিলছে না। তাছাড়া দিন যত যাচ্ছে, বন কর্মকর্তা-প্রহরীদের ঘুষের পরিমাণ এবং মহাজনদের নির্দয় আচরণও তত বাড়ছে।’

যদিও সুন্দরবন পশ্চিম বন বিভাগের বিভাগীয় কর্মকর্তা এ জেড এম হাছানুর রহমানের ভাষ্য, নিষেধাজ্ঞার তিন মাস প্রান্তিক জেলে-বাওয়ালিদের বিকল্প খাদ্য সহায়তার দেয়ার চেষ্টা করছেন তারা। এটা প্রক্রিয়াধীন আছে।

তাদের ভাষ্য, ‘জঙ্গলে’ ব্যবসা করতে হলে স্থানীয় দালাল চক্রের মাধ্যমে সারা বছরই বন কর্মকর্তা-প্রহরীদের টাকা দিতে হয়। তাদের চাহিদা মতো টাকা না দিলে বন্যপ্রাণী হত্যা ও পাচার মামলায় ফাঁসিয়ে দেয়া হয়। বন নিষেধাজ্ঞার সময়ে আরও বেশি টাকা দিতে হয়। এবার নৌকাপ্রতি ১০-১৫ হাজার টাকা করে দিয়ে বন বিভাগকে ‘ম্যানেজ’ করে তারা বনে ঢুকছেন।

মহাজনদের অভিযোগ, খুলনার বিভাগীয় বন কর্মকর্তা এ জেড এম হাছানুর রহমান দীর্ঘ প্রায় তিন বছর পশ্চিম সুন্দরবনের খুলনা রেঞ্জের সহকারী বন সংরক্ষক ছিলেন। এ সময়ে তিনি কয়েকটি বনঅপরাধী চক্রের সঙ্গে জড়িয়ে পড়েন। নামের আদ্যক্ষর ‘ম’ দিয়ে শুরু হওয়া দুই বন প্রহরীর যোগসাজশে খুলনা রেঞ্জের আওতাধীন বিভিন্ন স্টেশনে তার পছন্দের লোক বসিয়ে তিনি মোটা অঙ্কের অর্থ লেনদেনের মাধ্যমে ওইসব বনঅপরাধী চক্রের মাছ ধরার সুযোগ করে দিচ্ছেন। রয়েছে বনদস্যুদের অত্যাচার।

তবে বনঅপরাধীদের সঙ্গে বন কর্মকর্তা-প্রহরীদের সখ্যর অভিযোগকে ভিত্তিহীন দাবি করেছেন সুন্দরবন পশ্চিম বন বিভাগের বিভাগীয় কর্মকর্তা এ জেড এম হাছানুর রহমান।

# বিষের মাছ জীববৈচিত্র্যের জন্য মারাত্মক হুমকি

খুলনার ডেপুটি সিভিল সার্জন সৈকত মো. রেজওয়ানুল হক বলেন, ‘বিষাক্ত পানির মাছ খেলে মানুষের পেটের পীড়াসহ কিডনি ও লিভার ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে এবং ক্যান্সারেরও ঝুঁকি তৈরি করে। যা জনস্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক হুমকি।’

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সুন্দরবনের নদী-খালে বিষ প্রয়োগের ফলে পানি বিষাক্ত হয়ে জলজপ্রাণী মারা যাচ্ছে। বনের উদ্ভিদের ওপরও এর ক্ষতিকর প্রভাব পড়ছে; হুমকির মুখে রয়েছে গোটা বনের জীববৈচিত্র্য।

খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ বিজ্ঞান অনুষদের শিক্ষক অধ্যাপক আবদুল্লাহ হারুন চৌধুরী বলেন, ‘সুন্দরবনের যেসব খালে কীটনাশক প্রয়োগ করা হয়, তার বিষক্রিয়া ওই এলাকায় চার মাস থেকে কয়েক বছর পর্যন্ত থাকে। এর ফলে জলজপ্রাণীদের প্রজনন ক্ষমতা কমে যাওয়ার পাশাপাশি স্বাস্থ্য ক্ষতিগ্রস্ত ও সংখ্যা কমে যাচ্ছে।’

এ বিষয়ে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিশারিজ অ্যান্ড মেরিন টেকনোলজি ডিসিপ্লিনের অধ্যাপক নাজমুল আহসান বলেন, ‘দীর্ঘমেয়াদে বিষ দিতে থাকলে পরিবেশে এটা থেকে যায়। এটা খাদ্যচক্রে থেকে যাচ্ছে। এটা সরাসরি মাছের শরীরে যাচ্ছে, সেই মাছ আমরা খাচ্ছি। বিষক্রিয়ায় মাছ দুর্বল হয়ে পড়ে। মাছের ক্ষেত্রে পানি থেকে অক্সিজেন ফুলকার মাধ্যমে ডিফিউশন হয়ে ব্লাডে যায়। ডিজলভ অক্সিজেন থেকে ব্লাডে যায় ডিফিউজড অক্সিজেন। বিষের কারণে ফুলকাটা তখন ইন-অ্যাকটিভ হয়ে যায়; মাছটা অবশ হয়ে যায়। তবে বিষটা মাছের শরীরে থেকে যায়।’

বন বিভাগের তথ্য বলছে, সুন্দরবনের ৬০১৭ বর্গকিলোমিটার বাংলাদেশ অংশে জলভাগের পরিমাণ ১৮৭৪ দশমিক ১ বর্গকিলোমিটার, যা পুরো সুন্দরবনের আয়তনের ৩১ দশমিক ১৫ শতাংশ। ১৩টি বড় নদীসহ ৪৫০টির মতো খাল রয়েছে সুন্দরবনে। সুন্দরবনের আয়তনের অর্ধেকের বেশি এলাকা এখন অভয়ারণ্য। এসব এলাকায় জেলেদের প্রবেশ সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ।

প্রায় ২৮৯ প্রজাতির স্থলজপ্রাণী বাস সুন্দরবনে। আছে প্রায় ৪২ প্রজাতির স্তন্যপায়ী, ৩৫ প্রজাতির সরীসৃপ, ৮ প্রজাতির উভচর, বিভিন্ন প্রজাতির মাছসহ ২১৯ প্রজাতির জলজ প্রাণী। জোয়ারে পানিতে প্লাবিত হওয়া বনের জলাধার ইলিশসহ ২১০ প্রজাতির সাদা মাছের আবাস। রয়েছে গলদা, বাগদা, চাকা, চালী, চামীসহ ২৪ প্রজাতির চিংড়ি। শিলাসহ ১৪ প্রজাতির কাঁকড়ার প্রজননও হয় এখানে। পাশাপাশি এখানে ৪৩ প্রজাতির মালাস্কা ও এক প্রজাতির লবস্টার রয়েছে।

সুন্দরবন পূর্ব বিভাগে (বাগেরহাট ও খুলনার সামান্য অংশ) পাঁচ হাজার ৮০০ জন আর পশ্চিম বিভাগে (খুলনা ও সাতক্ষীরা অংশ) ছয় হাজার ৩১০ জন তালিকাভুক্ত বনজীবী রয়েছেন। আর বছরে ২ লাখেরও বেশি দেশি-বিদেশি পর্যটক সুন্দরবন ভ্রমণ করেন।

# যা করণীয়

এ বিষয়ে কোস্টগার্ডের মিডিয়া কর্মকর্তা লেফটেন্যান্ট কমান্ডার সিয়াম-উল-হক বলেন, সুন্দরবন ও উপকূলীয় অঞ্চল দস্যুমুক্ত এবং চোরাচালান ও অবৈধ কর্মকাণ্ড প্রতিরোধে কোস্টগার্ডের অভিযান অব্যাহত রয়েছে।

বিষ দিয়ে মাছ শিকার ঠেকাতে বর্তমানে ড্রোন ব্যবহার করা হচ্ছে সুন্দরবন পূর্ব বন বিভাগের বিভাগীয় কর্মকর্তা রেজাউল করিম চৌধুরী বলেন, ‘এর মাধ্যমে সুন্দরবনে অবৈধভাবে প্রবেশ করা জেলেদের শনাক্ত করে গ্রেপ্তার করা হচ্ছে। জব্দ করা হচ্ছে বিষ এবং বিষ দিয়ে ধরা মাছ। বনের গহিন এলাকায় শুঁটকি তৈরির স্থান চিহ্নিত করে ধ্বংস করা হচ্ছে।’

সাম্প্রতিক সময়ে বন অপরাধ কমিয়ে আনা সম্ভব হয়েছে দাবি করে প্রধান বন সংরক্ষক মো. আমীর হোসাইন চৌধুরী বলেন, গত পাঁচ বছরে সার্বিকভাবে সুন্দরবনের উদ্ভিদ ও প্রাণীর পরিমাণ বেড়েছে। বাঘের সংখ্যা বৃদ্ধির পাশাপাশি বাঘ যেসব প্রাণীকে খাদ্য হিসেবে গ্রহণ করে সেগুলোর পরিমাণও বৃদ্ধি পেয়েছে।

‘সুন্দরবন সুরক্ষায় বন কর্মকর্তাদের পাশাপাশি কমিউনিটিভিত্তিক সুরক্ষা বলয় তৈরি করা হচ্ছে। এসব ক্ষেত্রে ডিজিটাল প্রযুক্তির ব্যবহার বাড়ানো হয়েছে।’

কোনো অনৈতিক কাজে বন বিভাগের কারও জড়িত থাকার প্রমাণ পেলে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে জানান এ বন কর্মকর্তা।

ছবি

বনানীর সিসা বারে রাব্বি হত্যার পেছনে আধিপত্য বিস্তারের দ্বন্দ্ব : র‌্যাব

ছবি

আসন সমঝোতার কথা বলে এনসিপিকে কেনা যাবে না: হাসনাত

ছবি

সাদা পাথর লুট: চিহ্নিতদের বাদ দিয়ে অজ্ঞাত ২০০০ ব্যক্তির বিরুদ্ধে মামলা, নানা প্রশ্ন

ছবি

নির্বাচন নিয়ে শঙ্কা প্রকাশকারীরা গণতন্ত্রের শত্রু: সালাহউদ্দিন

ছবি

‘আপনারা নিশ্চিন্তে এ দেশে বসবাস করবেন’, জন্মাষ্টমীর অনুষ্ঠানে সেনাপ্রধান

ছবি

সীমান্তে মাইন বিস্ফোরণে আহত বন্যহাতি, চিকিৎসা করতে গিয়ে তিনজন হাসপাতালে

ছবি

এয়ার টিকেটের উচ্চমূল্য, নিয়ন্ত্রণহীন হয়ে পড়ছে খাত

ছবি

প্রধান উপদেষ্টা যেই মাসে বলেছেন সেই মাসেই নির্বাচন হবে: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা

ছবি

মুচি সম্প্রদায়ের দু’জনকে পিটিয়ে হত্যা: এখনও গ্রেপ্তার হয়নি শনাক্ত ৫ জন

ছবি

জুলাই সনদ বাস্তবায়নে ৮ দফা অঙ্গীকারনামা, খসড়া রাজনৈতিক দলগুলোকে পাঠিয়েছে ঐকমত্য কমিশন

ছবি

‘অপ্রয়োজনীয়’ স্বাস্থ্য পরীক্ষা বন্ধের আহ্বান আসিফ নজরুলের

ছবি

চট্টগ্রাম থেকে ঢাকায় পাইপলাইনে জ্বালানি সরবরাহ শুরু

ছবি

শনিবার থেকে চট্টগ্রাম–ঢাকা পাইপলাইনে জ্বালানি তেল সরবরাহ শুরু

ছবি

প্রেস সচিবের নির্দেশনার প্রসঙ্গ টেনে ভুল স্বীকার করলেন ওসি

ছবি

১৫ আগস্ট: শেখ মুজিব ও তার পরিবার হত্যার ৫০ বছর

ছবি

বিচার ও সংস্কার ছাড়া নির্বাচন হলে পুরোনো সমস্যা ফিরবে: প্রধান উপদেষ্টা

ছবি

সরকারি কর্মচারীদের প্রশিক্ষণ ভাতা ও সম্মানী বৃদ্ধি

ছবি

গুলশানে চাঁদাবাজি: সেদিন ওই এলাকায় গিয়েছিলেন কি না, ‘মনে নেই’ উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদের

ছবি

ঢাকায় ফিলিস্তিনি রাষ্ট্রদূতের অবস্থান: এইউডব্লিউ ফিলিস্তিন সরকারের স্বীকৃত নয়

ছবি

বিধিমালা লঙ্ঘনের কারণে রাজউকের ১৫ গাড়িচালকের প্লট বাতিল

ছবি

ফরিদা আখতার ভুল মন্তব্য করেছেন: প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব

ছবি

প্রধান বিচারপতির সঙ্গে মার্কিন রাষ্ট্রদূতের সাক্ষাৎ

ছবি

সুষ্ঠু নির্বাচনের স্বার্থে পদত্যাগ জরুরি, জানালেন আসিফ মাহমুদ সজীব

ছবি

অবৈধ সম্পদ অর্জনের মামলায় পাপিয়া ও তার স্বামীর সাজা

ছবি

নারী ও কন্যাশিশুর প্রতি সহিংসতা: জুনেও বেশি ঢাকা ও চট্টগ্রামে

ছবি

ডাকসু নির্বাচন: নারী ভোটকেন্দ্রের স্থান পরিবর্তন চায় ছাত্রসংসদ, প্রশাসনের ‘না’

ছবি

১১ মাসেই ৭ হাজার পোষা প্রাণী চুরির অভিযোগ পুলিশে

ছবি

সম্পর্ক জোরদারে ঢাকা সফরে আসছেন পাকিস্তানের বাণিজ্যমন্ত্রী ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী

ছবি

মুচি সম্প্রদায়ের দুই ব্যক্তিকে নৃশংসভাবে হত্যার ঘটনায় গ্রেপ্তার ৪ আসামি ৩ দিনের রিমান্ডে

ছবি

আগামী সপ্তাহে নির্বাচনের রোডম্যাপ, ডিসেম্বরে তফসিল ফেব্রুয়ারিতে ভোট

ছবি

উজান ঢল ও ভারী বৃষ্টিতে জেলায় জেলায় পানি বৃদ্ধি, উত্তরাঞ্চলে বন্যার পদধ্বনি

ছবি

অবৈধ সম্পদ অর্জন ও অর্থ পাচারের অভিযোগে জয়ের বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু

ছবি

জানে আলম অপু প্রকাশ্যে বললেন চাঁদাবাজির ঘটনায় অভিযুক্তদের নাম

ছবি

রাষ্ট্রপতির শপথ স্পিকারের পড়ানোর বিধান নিয়ে রুল শুনানিতে ৭ অ্যামিকাস কিউরি নিয়োগ

ছবি

শারীরিকভাবে অক্ষম কাউকে হজে পাঠানো যাবে না: ধর্ম উপদেষ্টা

ছবি

ডিএমটিসিএলের ১০ পদে নিয়োগ পরীক্ষা স্থগিত

tab

জাতীয়

বিষের ফাঁদে সুন্দরবন, দাদনে জিম্মি জেলে

নিজস্ব বার্তা পরিবেশক, খুলনা

দাদনের চাপ, পাওয়া যায় না মাছ, আর লোভ- প্রয়োগ করা হচ্ছে বিষ, ব্যবহার করা হচ্ছে নিষিদ্ধ জাল, বিপন্ন হচ্ছে সুন্দরবনের প্রতিবেশ, আরও ঝুঁকিতে পড়ছে জেলেদের জীবিকা -সংবাদ

শনিবার, ১৬ আগস্ট ২০২৫

প্রজনন মৌসুমেও পূর্ব ও পশ্চিম সুন্দরবনের বিভিন্ন নদী ও খালে দেদারসে চলছে বিষ প্রয়োগে মাছ শিকার। কিছু অসাধু জেলে বিষ ব্যবহার করে মাছ ধরায় বনের গহিনে থাকা বিভিন্ন প্রজাতির মাছ, মাছের পোনা, অন্যান্য জলজ প্রাণী ও উদ্ভিদ প্রতিনিয়ত ধ্বংস হচ্ছে। ফলে প্রজনন মৌসুমে সুন্দরবনে মাছ ধরা পাস পারমিট বন্ধ রাখা শুধু ‘কাগজে কলমে’ সীমাবদ্ধ থাকছে বলে অভিযোগ উঠেছে।

সুন্দরবনের সবচেয়ে বড় বিপদ হলো বনের নদী-খালে বিষ দিয়ে মাছ ধরার প্রতিযোগিতা

‘প্রবেশ নিষেধাজ্ঞার’ সময়টাতে বন অপরাধ বেড়ে যায় কয়েকগুণ: স্থানীয়রা

নিরাপত্তাহীনতায় বিপন্ন বনজীবীরা

প্রতি বছর ১ জুন থেকে ৩১ আগস্ট পর্যন্ত সুন্দরবনসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে মাছ ধরা নিষিদ্ধ করা হয়। এ সময় সুন্দরবনে সাধারণ মানুষের চলাচলসহ বনজীবীদের প্রবেশের পাশাপাশি পর্যটক প্রবেশেও নিষেধাজ্ঞা থাকে।

খুলনা অঞ্চলের বন সংরক্ষক ইমরান আহমেদ বলেন, ‘জুন থেকে আগস্ট-এই তিন মাস সুন্দরবনের নদী-খালের মাছের প্রজনন মৌসুম হিসেবে ধরা হয়। এ তিন মাস সুন্দরবনের নদী ও খালে থাকা বেশিরভাগ মাছ ডিম ছাড়ে। এছাড়া এই সময়ে বন্যপ্রাণীরও প্রজনন মৌসুম। এই তিন মাস বনে পর্যটক ও বনজীবীরা না গেলে বনের জীববৈচিত্র্য ও বন্যপ্রাণী নিরুপদ্রব থাকে।’

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সুন্দরবনের প্রশাসনিক অবকাঠামো খুবই দুর্বল। অধিকাংশ টহল ফাঁড়ি ভাঙাচোরা। আধুনিক অস্ত্র, প্রশিক্ষণ, জলযানের অভাবে ডাকাত, চোরাশিকারির পিছু নিতে বন কর্মকর্তা-প্রহরীদের আগ্রহ কম। এ কারণে বন অপরাধী চক্রের সঙ্গে তারা মিলেমিশে থাকেন।

জনবল সংকটসহ বেশ কিছু সীমাবদ্ধতা থাকলেও সুন্দরবনকেন্দ্রিক সব ধরনের অপরাধ দমনে বন কর্মকর্তা ও প্রহরীরা সচেষ্ট রয়েছেন বলে দাবি খুলনা অঞ্চলের বন সংরক্ষক ইমরান আহমেদের।

এছাড়া সুন্দরবনের বিস্তীর্ণ উপকূল এবং নদীর মোহনায় ‘নেট জাল’ দিয়ে চিংড়ির পোনা ধরছেন স্থানীয়রা। জালগুলো মশারির মতো প্রায় নিছিদ্র । এতে চিংড়ির সঙ্গে নানা জাতের মাছের রেণু, পোনা, ডিমওয়ালা মা মাছ ও মাছের প্রাকৃতিক খাদ্য-সামুদ্রিক প্রাণীর লার্ভাও মারা পড়ছে। সব মিলিয়ে হুমকির মুখে পড়েছে বনের মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ।

‘পূর্ব’ ও ‘পশ্চিম’ এই দুটি প্রশাসনিক বিভাগে সুন্দরবনের বাংলাদেশ অংশ বিভক্ত। খুলনা ও সাতক্ষীরা অংশ নিয়ে পশ্চিম সুন্দরবন। আর বাগেরহাট ও খুলনার সামান্য অংশ নিয়ে পূর্ব সুন্দরবন। সুন্দরবনের এই দুই বিভাগের খুলনার কয়রা, পাইকগাছা ও দাকোপ, বাগেরহাটের মোংলা, শরণখোলা, মোরেলগঞ্জ, সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলার বেশিরভাগ বাসিন্দাদের দৈনন্দিন জীবন সুন্দরবনের ওপর নির্ভরশীল। কিন্তু বর্তমানে নানা সংকট এসব বনজীবীদের জীবন-জীবিকার ওপর প্রভাব পড়তে শুরু করেছে।

# মহাজন-বন বিভাগের যোগসাজশ

সুন্দরবনের সবচেয়ে বড় বিপদ হলো বনের নদী-খালে বিষ দিয়ে মাছ ধরার প্রতিযোগিতা। এই অপতৎপরতার পেছনে কাজ করছে প্রভাবশালী কয়েকটি গোষ্ঠী। একটি গোষ্ঠী বন উপকূলের একশ্রেণীর মাছ ব্যবসায়ী, যাদের বলা হয় ‘কোম্পানি মহাজন’। তারা নিজেদের নিয়ন্ত্রিত জেলেদের প্ররোচনা দেন বিষ ছিটিয়ে দ্রুত বেশি মাছ শিকারে। আরেক গোষ্ঠী হলো অসাধু বনরক্ষী। এসব চক্রকে সহযোগিতা করছেন এক শ্রেণীর সাংবাদিক।

খুলনার সুন্দরবন ঘেঁষা কয়রা উপজেলার তেঁতুলতলার চর এলাকার বনজীবী গফুর গাজী বলেন, জঙ্গল ব্যবসায়ী ‘মহাজনদের’ টাকা দিয়ে তারা বনের অভয়ারণ্যের নদ-খাল ইজারা নেন। বন কর্মকর্তাদের ‘ম্যানেজ’ করেন মহাজনরা। তবে বন্ধের সময় তাদের টাকা ‘বেশি’ দিতে হয়।

‘আর বনের প্রহরীদের সঙ্গে আমরা সমঝোতা করে নেই। প্রহরীরা না চাইলে বনের একটা খালের পানিও জেলেদের ছোঁয়ার ক্ষমতা নেই। বন বিভাগের লোকজন ডিউটি খরচের নামে বন ফাঁড়িতে আমাদের কাছ থেকে সারাবছরই সমানে টাকা আদায় করে।’

তিনি বলেন, “বনের অন্য সব খালের চেয়ে অভয়ারণ্যে বেশি মাছ পাওয়া যায়। যে কারণে অভয়ারণ্যের খাল দখল নিয়ে স্থানীয় মহাজনদের মধ্যে ‘প্রতিযোগিতা’ রয়েছে। মহাজনরা দালালদের মাধ্যমে বন বিভাগকে ‘মোটা অঙ্কের টাকা দিয়ে’ অভয়ারণ্যের খাল দখল নেন। পরে তা জেলেদের কাছে চুক্তিতে ইজারা দেয়া হয়।”

“তবে বিপত্তি বাধে যখন বড় ব্যবসায়ীর কাছ থেকে ‘বেশি টাকা’ নিয়ে ছোট ব্যবসায়ীদের ওই এলাকা থেকে সরিয়ে দিতে জেলেদের বিরুদ্ধে মামলা দেয়া হয়, তখন।”

সুন্দরবন উপকূলীয় অঞ্চলে জলবায়ু, দুর্যোগ, সুন্দরবন সুরক্ষা ও শিক্ষা সহায়তা বিষয়ে নিয়ে কাজ করা কয়রা সাংবাদিক ফোরামের সভাপতি তারিক লিটু বলেন, ‘সুন্দরবনসংলগ্ন জনপদের কিছু প্রভাবশালী বন বিভাগকে ম্যানেজ করে অভয়ারণ্য এলাকাতে সারাবছরই বিষ প্রয়োগে মাছ শিকার করেন। এমনি হরিণসহ বন্যপ্রাণী নিধনও থামানো যায়নি।’

খুলনা অঞ্চলের বন সংরক্ষক ইমরান আহমেদ বলেন, ‘জনবল সংকটসহ বেশ কিছু সীমাবদ্ধতা থাকলেও সুন্দরবনকেন্দ্রিক সব ধরনের অপরাধ দমনে সচেষ্ট রয়েছেন বন কর্মকর্তা ও প্রহরীরা। প্রায়ই কীটনাশক, কীটনাশক প্রয়োগে ধরা মাছ, নিষিদ্ধ ঘন জাল ও হরিণ শিকারের ফাঁদ, মাংসসহ অনেককে আটক করা হচ্ছে। ধ্বংস করা হচ্ছে গহিন বনে বানানো শুঁটকির মাচা।’

‘তবে টহল বোটের শব্দ পেলেই অপরাধীরা পালিয়ে যায়।’ যোগ করেন তিনি।

# বেপরোয়া অপরাধী চক্র

সুন্দরবনের সাধারণ জেলে, বাওয়ালি, মৌয়াল ও স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ‘প্রবেশ নিষেধাজ্ঞার’ সময়টাতে বনঅপরাধ বেড়ে যায় কয়েকগুণ। এ সময় দর্শনার্থী এবং সাধারণ জেলেরা না থাকার সুযোগে একাধিক অপরাধী চক্র বেপরোয়া হয়ে ওঠে।

খুলনার সুন্দরবন প্রভাবিত দাকোপ উপজেলার সুতারখালি এলাকার বনজীবী জেলে মোজাম ফকির বলছিলেন,

‘সুন্দরবনে এখন মাছ ধরতে গেলে কোম্পানি মহাজনদের তালিকাভুক্ত হতে হয়। ওই চক্রের বাইরে কোনো বনজীবী জেলে সুন্দরবনে মাছ ধরতে গেলে বন কর্মকর্তা-প্রহরী বা পুলিশ দিয়ে মাছসহ ধরিয়ে দেয়া হয়।’

সম্প্রতি সুন্দরবনের বনজসম্পদ আহরণে অবৈধ ও অনৈতিক পন্থা অবলম্বন করার এ পরিস্থিতিকে উদ্বেগজনক বলছেন, সুন্দরবন ও উপকূল সুরক্ষায় কর্মরত স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ‘সুন্দরবন ও উপকূল সুরক্ষা ফাউন্ডেশন’-এর নির্বাহী পরিচালক সাংবাদিক শুভ্র শচীন।

তিনি বলেন, ‘আগে দেখা যেত, অভয়ারণ্য এলাকায় একটি-দুটি দল বিষ দিয়ে মাছ ধরত; তারা মৎস্যজীবী ছিলেন। কিন্তু এখন সেখানে দাদনদাতা হয়ে গেছেন সুন্দরবনসংলগ্ন এলাকার স্থানীয় কিছু প্রভাবশালী মাছ ব্যবসায়ী মহাজন। তারাই এখন বন বিভাগের সঙ্গে রফা করেন। পরবর্তীতে বনের অভয়ারণ্যের বিভিন্ন নদী-খাল জেলেদের কাছে অলিখিত ইজারা দেন। এসব চক্র অবৈধ নানা উপায়ে সুন্দরবনের বনজসম্পদ আহরণ ও পাচারে জড়িত।’

তবে নিষেধাজ্ঞার মধ্যে সুন্দরবনে প্রবেশ করে মাছ-কাঁকড়া ধরা বা বন্যপ্রাণী শিকারের কোন সুযোগ নেই দাবি করে সুন্দরবন পশ্চিম বন বিভাগের বিভাগীয় কর্মকর্তা এ জেড এম হাছানুর রহমান বলেন, ‘সুন্দরবনে সারাবছরই বন বিভাগের নিয়মিত জোরালো টহল অভিযান অব্যাহত রয়েছে।’

# বিষ দিয়ে ধরা মাছ শুঁটকি করে বিক্রি

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ‘প্রবেশ নিষেধাজ্ঞার’ মাঝেই পশ্চিম সুন্দরবনের গহিন বনের বিভিন্ন পয়েন্টে খাল ও ভারানিতে ২০০-২৫০টি নৌকায় চিংড়ি ও বিভিন্ন প্রজাতির মাছ শিকার করছেন ‘একদল জেলে’।

সুন্দরবন ঘেঁষা কয়রা উপজেলার দক্ষিণ বেদকাশি ইউনিয়নের আনোয়ার হোসেন নামের এক জেলে বলেন, ‘বিষ দিয়ে ধরা চিংড়ি থেকে বিষের গন্ধ আসে- লোকালয়ে আনা যায় না। যে কারণে বনের মধ্যেই এখন চিংড়ি শুকানোর ব্যবস্থা করা হয়। প্রতি কেজি শুঁটকি ১ হাজার ৫০০ টাকায় বিক্রি হয়।’

বিষ দিয়ে মাছ ধরে তারপর শুঁটকি তৈরির বিষয়টি সুন্দরবন পশ্চিম বন বিভাগের চাঁদপাই রেঞ্জের সহকারী বন সংরক্ষক দীপক চন্দ্র দাসও শিকার করেছেন। তিনি বলেন, ‘কিছু অসাধু জেলে সুন্দরবনের গহিনে কীটনাশক ছিটিয়ে চিংড়ি ধরেন। পরে গাছ কেটে আগুনে শুকিয়ে শুঁটকি বানান। আমরা অভিযানে গহিন বনে এমন কারখানার সন্ধান পাচ্ছি। এসব শুঁটকির কারখানাগুলো আগে সুন্দরবনসংলগ্ন এলাকার লোকালয়ে ছিল। বন বিভাগ ও প্রশাসনের অভিযান এড়াতে এখন সেগুলো বনের গভীরে চলে গেছে।’

তবে নীলকোমল ফরেস্ট স্টেশন কর্মকর্তা রবিউল ইসলাম ও কাশিয়াবাদ ফরেস্ট স্টেশন কর্মকর্তা নাসির উদ্দীন মাছ ব্যবসায়ী মহাজন চক্রের কাছ থেকে ‘উৎকোচ নিয়ে’ অভয়ারণ্য এলাকাতে জেলেদের বিষ প্রয়োগে মাছ শিকারের সুযোগ করে দেয়ার অভিযোগ অস্বীকার করেন।

# নিরাপত্তাহীনতায় বিপণ্য বনজীবীরা

খুলনার সুন্দরবন ঘেঁষা কয়রা উপজেলার তেঁতুলতলার চর এলাকার বনজীবী গফুর গাজী বলেন, “নিয়ম মানলে তো আর পেট চলে না। আমাদের সঞ্চয় নেই। বছরের একটা বড় সময় নিষেধাজ্ঞার কারণে ৯২ দিন বনে ঢোকা যায় না।”

এখন শুধু সুন্দরবনের ওপর নির্ভর করে ‘সংসার চলে না’ জানিয়ে তিনি বলেন, ‘বনে আগের মত মাছ-মধু, গোলপাতা মিলছে না। তাছাড়া দিন যত যাচ্ছে, বন কর্মকর্তা-প্রহরীদের ঘুষের পরিমাণ এবং মহাজনদের নির্দয় আচরণও তত বাড়ছে।’

যদিও সুন্দরবন পশ্চিম বন বিভাগের বিভাগীয় কর্মকর্তা এ জেড এম হাছানুর রহমানের ভাষ্য, নিষেধাজ্ঞার তিন মাস প্রান্তিক জেলে-বাওয়ালিদের বিকল্প খাদ্য সহায়তার দেয়ার চেষ্টা করছেন তারা। এটা প্রক্রিয়াধীন আছে।

তাদের ভাষ্য, ‘জঙ্গলে’ ব্যবসা করতে হলে স্থানীয় দালাল চক্রের মাধ্যমে সারা বছরই বন কর্মকর্তা-প্রহরীদের টাকা দিতে হয়। তাদের চাহিদা মতো টাকা না দিলে বন্যপ্রাণী হত্যা ও পাচার মামলায় ফাঁসিয়ে দেয়া হয়। বন নিষেধাজ্ঞার সময়ে আরও বেশি টাকা দিতে হয়। এবার নৌকাপ্রতি ১০-১৫ হাজার টাকা করে দিয়ে বন বিভাগকে ‘ম্যানেজ’ করে তারা বনে ঢুকছেন।

মহাজনদের অভিযোগ, খুলনার বিভাগীয় বন কর্মকর্তা এ জেড এম হাছানুর রহমান দীর্ঘ প্রায় তিন বছর পশ্চিম সুন্দরবনের খুলনা রেঞ্জের সহকারী বন সংরক্ষক ছিলেন। এ সময়ে তিনি কয়েকটি বনঅপরাধী চক্রের সঙ্গে জড়িয়ে পড়েন। নামের আদ্যক্ষর ‘ম’ দিয়ে শুরু হওয়া দুই বন প্রহরীর যোগসাজশে খুলনা রেঞ্জের আওতাধীন বিভিন্ন স্টেশনে তার পছন্দের লোক বসিয়ে তিনি মোটা অঙ্কের অর্থ লেনদেনের মাধ্যমে ওইসব বনঅপরাধী চক্রের মাছ ধরার সুযোগ করে দিচ্ছেন। রয়েছে বনদস্যুদের অত্যাচার।

তবে বনঅপরাধীদের সঙ্গে বন কর্মকর্তা-প্রহরীদের সখ্যর অভিযোগকে ভিত্তিহীন দাবি করেছেন সুন্দরবন পশ্চিম বন বিভাগের বিভাগীয় কর্মকর্তা এ জেড এম হাছানুর রহমান।

# বিষের মাছ জীববৈচিত্র্যের জন্য মারাত্মক হুমকি

খুলনার ডেপুটি সিভিল সার্জন সৈকত মো. রেজওয়ানুল হক বলেন, ‘বিষাক্ত পানির মাছ খেলে মানুষের পেটের পীড়াসহ কিডনি ও লিভার ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে এবং ক্যান্সারেরও ঝুঁকি তৈরি করে। যা জনস্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক হুমকি।’

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সুন্দরবনের নদী-খালে বিষ প্রয়োগের ফলে পানি বিষাক্ত হয়ে জলজপ্রাণী মারা যাচ্ছে। বনের উদ্ভিদের ওপরও এর ক্ষতিকর প্রভাব পড়ছে; হুমকির মুখে রয়েছে গোটা বনের জীববৈচিত্র্য।

খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ বিজ্ঞান অনুষদের শিক্ষক অধ্যাপক আবদুল্লাহ হারুন চৌধুরী বলেন, ‘সুন্দরবনের যেসব খালে কীটনাশক প্রয়োগ করা হয়, তার বিষক্রিয়া ওই এলাকায় চার মাস থেকে কয়েক বছর পর্যন্ত থাকে। এর ফলে জলজপ্রাণীদের প্রজনন ক্ষমতা কমে যাওয়ার পাশাপাশি স্বাস্থ্য ক্ষতিগ্রস্ত ও সংখ্যা কমে যাচ্ছে।’

এ বিষয়ে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিশারিজ অ্যান্ড মেরিন টেকনোলজি ডিসিপ্লিনের অধ্যাপক নাজমুল আহসান বলেন, ‘দীর্ঘমেয়াদে বিষ দিতে থাকলে পরিবেশে এটা থেকে যায়। এটা খাদ্যচক্রে থেকে যাচ্ছে। এটা সরাসরি মাছের শরীরে যাচ্ছে, সেই মাছ আমরা খাচ্ছি। বিষক্রিয়ায় মাছ দুর্বল হয়ে পড়ে। মাছের ক্ষেত্রে পানি থেকে অক্সিজেন ফুলকার মাধ্যমে ডিফিউশন হয়ে ব্লাডে যায়। ডিজলভ অক্সিজেন থেকে ব্লাডে যায় ডিফিউজড অক্সিজেন। বিষের কারণে ফুলকাটা তখন ইন-অ্যাকটিভ হয়ে যায়; মাছটা অবশ হয়ে যায়। তবে বিষটা মাছের শরীরে থেকে যায়।’

বন বিভাগের তথ্য বলছে, সুন্দরবনের ৬০১৭ বর্গকিলোমিটার বাংলাদেশ অংশে জলভাগের পরিমাণ ১৮৭৪ দশমিক ১ বর্গকিলোমিটার, যা পুরো সুন্দরবনের আয়তনের ৩১ দশমিক ১৫ শতাংশ। ১৩টি বড় নদীসহ ৪৫০টির মতো খাল রয়েছে সুন্দরবনে। সুন্দরবনের আয়তনের অর্ধেকের বেশি এলাকা এখন অভয়ারণ্য। এসব এলাকায় জেলেদের প্রবেশ সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ।

প্রায় ২৮৯ প্রজাতির স্থলজপ্রাণী বাস সুন্দরবনে। আছে প্রায় ৪২ প্রজাতির স্তন্যপায়ী, ৩৫ প্রজাতির সরীসৃপ, ৮ প্রজাতির উভচর, বিভিন্ন প্রজাতির মাছসহ ২১৯ প্রজাতির জলজ প্রাণী। জোয়ারে পানিতে প্লাবিত হওয়া বনের জলাধার ইলিশসহ ২১০ প্রজাতির সাদা মাছের আবাস। রয়েছে গলদা, বাগদা, চাকা, চালী, চামীসহ ২৪ প্রজাতির চিংড়ি। শিলাসহ ১৪ প্রজাতির কাঁকড়ার প্রজননও হয় এখানে। পাশাপাশি এখানে ৪৩ প্রজাতির মালাস্কা ও এক প্রজাতির লবস্টার রয়েছে।

সুন্দরবন পূর্ব বিভাগে (বাগেরহাট ও খুলনার সামান্য অংশ) পাঁচ হাজার ৮০০ জন আর পশ্চিম বিভাগে (খুলনা ও সাতক্ষীরা অংশ) ছয় হাজার ৩১০ জন তালিকাভুক্ত বনজীবী রয়েছেন। আর বছরে ২ লাখেরও বেশি দেশি-বিদেশি পর্যটক সুন্দরবন ভ্রমণ করেন।

# যা করণীয়

এ বিষয়ে কোস্টগার্ডের মিডিয়া কর্মকর্তা লেফটেন্যান্ট কমান্ডার সিয়াম-উল-হক বলেন, সুন্দরবন ও উপকূলীয় অঞ্চল দস্যুমুক্ত এবং চোরাচালান ও অবৈধ কর্মকাণ্ড প্রতিরোধে কোস্টগার্ডের অভিযান অব্যাহত রয়েছে।

বিষ দিয়ে মাছ শিকার ঠেকাতে বর্তমানে ড্রোন ব্যবহার করা হচ্ছে সুন্দরবন পূর্ব বন বিভাগের বিভাগীয় কর্মকর্তা রেজাউল করিম চৌধুরী বলেন, ‘এর মাধ্যমে সুন্দরবনে অবৈধভাবে প্রবেশ করা জেলেদের শনাক্ত করে গ্রেপ্তার করা হচ্ছে। জব্দ করা হচ্ছে বিষ এবং বিষ দিয়ে ধরা মাছ। বনের গহিন এলাকায় শুঁটকি তৈরির স্থান চিহ্নিত করে ধ্বংস করা হচ্ছে।’

সাম্প্রতিক সময়ে বন অপরাধ কমিয়ে আনা সম্ভব হয়েছে দাবি করে প্রধান বন সংরক্ষক মো. আমীর হোসাইন চৌধুরী বলেন, গত পাঁচ বছরে সার্বিকভাবে সুন্দরবনের উদ্ভিদ ও প্রাণীর পরিমাণ বেড়েছে। বাঘের সংখ্যা বৃদ্ধির পাশাপাশি বাঘ যেসব প্রাণীকে খাদ্য হিসেবে গ্রহণ করে সেগুলোর পরিমাণও বৃদ্ধি পেয়েছে।

‘সুন্দরবন সুরক্ষায় বন কর্মকর্তাদের পাশাপাশি কমিউনিটিভিত্তিক সুরক্ষা বলয় তৈরি করা হচ্ছে। এসব ক্ষেত্রে ডিজিটাল প্রযুক্তির ব্যবহার বাড়ানো হয়েছে।’

কোনো অনৈতিক কাজে বন বিভাগের কারও জড়িত থাকার প্রমাণ পেলে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে জানান এ বন কর্মকর্তা।

back to top