alt

জাতীয়

সংবিধানের ওপরে ‘জুলাই সনদ’, তোলা যাবে না প্রশ্ন

সংবাদ অনলাইন রিপোর্ট : রোববার, ১৭ আগস্ট ২০২৫

ছবি: ইন্টারনেট থেকে সংগৃহীত

শিক্ষার্থী-জনতার অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর রাষ্ট্র সংস্কার ইস্যুতে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে দফায় দফায় সংলাপের ভিত্তিতে তৈরি ‘জুলাই জাতীয় সনদ’ সাংবিধানিক ও আইনগতভাবে কার্যকর করতে চায় জাতীয় ঐকমত্য কমিশন।

বিদ্যমান সংবিধান বা অন্য কোনো আইনে ভিন্নতর কিছু থাকলেও ‘জুলাই জাতীয় সনদের’ বিধান, প্রস্তাব বা সুপারিশ প্রাধান্য পাবে, এমন প্রস্তাবও রেখেছে কমিশন। এ সনদের যেসব সুপারিশ অবিলম্বে বাস্তবায়নযোগ্য, দেরি না করে সেগুলো পরবর্তী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগেই বাস্তবায়নের পদক্ষেপ নেয়ার কথাও বলা হয়েছে সনদের খসড়ায়।

বিদ্যমান সংবিধানে ভিন্ন কিছু থাকলে প্রাধান্য পাবে জুলাই সনদ

অবিলম্বে বাস্তবায়নযোগ্য সুপারিশগুলো সংসদ নির্বাচনের আগেই বাস্তবায়ন করবে অন্তর্বর্তী সরকার

থাকবে ‘নোট অব ডিসেন্ট’

মূলনীতি পরিবর্তনের প্রস্তাবে ‘নতুন বিতর্ক’

২০ আগস্ট মতামত জানাবে বিএনপি

জুলাই সনদকে

বর্তমান সংবিধানের ওপরে গিয়ে সর্বোচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন দলিল হিসেবে প্রতিষ্ঠা করার চেষ্টা করা হয়েছে। তবে এই সনদের সংবিধানকে অতিক্রম করা উচিত- এমন ভাবাটাও সম্পূর্ণ ভুল: ডেভিড বার্গম্যান

এ সনদ নিয়ে ভবিষ্যতে কোনো আদালতে প্রশ্ন তোলা যাবে না, এই অঙ্গীকারসহ মোট আটটি অঙ্গীকারনামা রেখে গতকাল শনিবার রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে সনদের চূড়ান্ত সমন্বিত খসড়া পাঠিয়েছে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন।

‘জুলাই সনদের’ সমন্বিত খসড়া পড়েছেন দাবি করে যুক্তরাজ্যের সাংবাদিক ডেভিড বার্গম্যান রোববার,(১৭ আগস্ট ২০২৫) নিজের ফেইসবুক পেইজে এক পোস্টে এই সনদ সম্পর্কে ব্যক্তিগত অভিমত জানিয়েছেন।

অনেক বছর ধরে বাংলাদেশের রাজনীতি নিয়ে লিখে আসা এই বিশ্লেষক পোস্টের এক অংশে বলেছেন (লিখেছেন), জুলাই সনদের শেষ অংশে এই নথিকে সর্বোচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন দলিল হিসেবে প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করা হয়েছে বলে মনে হয়। এমনকি বর্তমান সংবিধানেরও ওপরে গিয়ে। তবে এই সনদের সংবিধানকে অতিক্রম করা উচিত- এমন ভাবাটাও সম্পূর্ণ ভুল।

‘জুলাই জাতীয় সনদের’ খসড়া পাওয়ার পর সমাজতান্ত্রিক দল (বাসদ মার্কসবাদী)এর প্রধান সমন্বয়ক মাসুদ রানা সাংবাদিকদের বলেছেন, এ সনদের বৈধতা, প্রয়োজনীয়তা, কিংবা জারির কর্তৃত্ব সম্পর্কে কোনো আদালতে প্রশ্ন তোলা যাবে না- এমন প্রস্তাব তারা মানতে পারছেন না।

মাসুদ রানা বলেন, ‘যে কোনো বিষয়ে প্রশ্ন তোলার অধিকার জনগণের আছে এবং থাকা উচিত। সেখানে অঙ্গীকারনামায় সনদের বৈধতা, প্রয়োজনীয়তা কিংবা জারির কর্তৃত্ব সম্পর্কে কোনো আদালতে প্রশ্ন তোলা যাবে না বলা হয়েছে- এটা কীভাবে সম্ভব?’

খসড়া পাওয়ার পর কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স সংবাদমাধ্যমকে বলেছেন, ‘ঐকমত্য কমিশনের পাঠানো প্রস্তাব দেখে মনে হয়েছে, ওনারা ঐকমত্যের প্রস্তাব না, বিশেষ গোষ্ঠীর প্রস্তাব দিয়েছেন।’

ত্রুটি সংশোধন

জুলাই সনদের খসড়ায় কোনো ত্রুটি ধরা পড়লে আগামী ২০ আগস্টের মধ্যে লিখিতভাবে জানাতে বলেছে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন। গত ফেব্রুয়ারিতে গঠিত এই কমিশনের নেতৃত্বে (সভাপতি হিসেবে) আছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস। সহ-সভাপতি হিসেবে আছেন আলী রীয়াজ। ‘জুলাই সনদের’ চূড়ান্ত খসড়ায় কিছু বিষয়ে অসামঞ্জস্য রয়েছে মন্তব্য করে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ সংবাদমাধ্যমকে বলেছেন, গতকাল শনিবার বিএনপির হাতে খসড়া এসেছে। দলীয় ফোরামে আলোচনা করে আগামী ২০ আগস্ট ঐকমত্য কমিশনকে মতামত জানানো হবে।

নতুন বন্দোবস্তের দলিল

‘নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্তের দলিল’ হিসেবে ‘জুলাই জাতীয় সনদ-২০২৫’ বাস্তবায়নে ঐকমত্য কমিশন ইতোমধ্যে বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে আলোচনা শুরু করেছে। চূড়ান্ত এ খসড়া নিয়ে চলিত মাসের শেষ দিকে কমিশন আবার দলগুলোর সঙ্গে বসবে বলে জানা গেছে।

সবশেষে সংলাপে অংশ নেয়া রাজনৈতিক দলগুলোর পাশাপাশি ঐকমত্য কমিশন সংশ্লিষ্টরা এ সনদে সই করবেন, বলে কথা রয়েছে।

যদিও বেশ কিছু মৌলিক ইস্যুতে ঐকমত্য কমিশনের প্রস্তাবে কিছু দলের এখনও অমত রয়েছে। ঐকমত্য হয়নি এমন বিষয়গুলো সনদে ‘নোট অব ডিসেন্ট (ভিন্নমত)’ হিসেবে উল্লেখ থাকবে।

নোট অব ডিসেন্ট সেসব বিষয়ে

১. রাষ্ট্রের মূলনীতি: এই প্রস্তাবে ভিন্নমত আছে বাংলাদেশ জাসদ, সিপিবি, বাসদ, বাসদ (মার্ক্সবাদী), গণফোরামের। ২. রাষ্ট্রপতির নির্বাচনপদ্ধতি: ভিন্নমত আছে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের।

৩. রাষ্ট্রপতির ক্ষমতা ও দায়িত্ব: কিছু ক্ষেত্রে ভিন্নমত আছে বিএনপি, এনডিএম, জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম, বাংলাদেশ লেবার পার্টি, ১২-দলীয় জোট, এলডিপির।

৪. প্রধানমন্ত্রীর একাধিক পদে থাকার বিধান: ভিন্নমত আছে বিএনপি, এনডিএম, ১২-দলীয় জোট ও জাতীয়তাবাদী সমমনা জোটের।

৫. তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা: বিএনপি (গঠনপ্রক্রিয়া সংসদের হাতে ন্যস্ত করার পক্ষে), কিছু অংশে ভিন্নমত আছে বাংলাদেশ লেবার পার্টি, এনডিএম, জাতীয়তাবাদী সমমনা জোট, ১২-দলীয় জোট, জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশ, বাংলাদেশ নেজামে ইসলাম পার্টির।

৬. উচ্চকক্ষে পিআর: বিএনপি, এনডিএমের ভিন্নমত। ৭. উচ্চকক্ষের প্রার্থী তালিকা প্রকাশ: বিএনপি, এনডিএমের ভিন্নমত। ৮. উচ্চকক্ষের দায়িত্ব ও ভূমিকা: সিপিবি, এনডিএম, জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশ, আম জনতার দলের ভিন্নমত।

৯. নারী আসনের বিধান: সিপিবি, বাসদ, আম জনতার দলের ভিন্নমত। ১০. ন্যায়পাল নিয়োগ, সরকারি কর্ম কমিশনে নিয়োগ, মহাহিসাব নিরীক্ষক ও নিয়ন্ত্রক নিয়োগ ও দুর্নীতি দমন কমিশনে নিয়োগ: বিএনপি, এনডিএম, ১২-দলীয় জোট, জাতীয়তাবাদী সমমনা জোটের ভিন্নমত। ১১. ওপেন গভর্নমেন্ট পার্টনারশিপের পক্ষভুক্ত হওয়া: জামায়াতে ইসলামী, গণতান্ত্রিক বাম ঐক্য, জাকের পার্টি, জেএসডি ও বিএসপির ভিন্নমত আছে।

*সনদের তিন ভাগ*

জুলাই সনদের সমন্বিত এ খসড়াকে তিনটি ভাগে ভাগ করা হয়েছে- যেটির প্রথম ভাগে জুলাই সনদের পটভূমি, সংস্কার কমিশন গঠন, জাতীয় ঐকমত্য কমিশন গঠন ও কমিশনের কার্যক্রমের বিষয়ে বর্ণনা করা আছে।

দ্বিতীয় ভাগে ঐকমত্য হওয়া ৮৪ সংস্কার প্রস্তাব এবং সর্বশেষ ভাগে রয়েছে জুলাই সনদ বাস্তবায়নের অঙ্গীকারনামা, যেখানে ৯ দফায় দলগুলোর কাছ থেকে অঙ্গীকারের বিষয় তুলে ধরা হয়েছে।

অঙ্গীকারনামার পটভূমিতে বলা হয়, ‘যেহেতু বাংলাদেশের সাংবিধানিক কনভেনশনের অংশ হিসেবে ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ হতে ১৯৭২ সালের ৪ নভেম্বর পর্যন্ত দেশে কার্যত কোনো সংবিধান না থাকা সত্ত্বেও উক্ত সময়ের সব কার্যাবলি ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের মহান শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে ১৯৭২ সালের সংবিধানে সন্নিবেশিত করে এর আইনি ও সাংবিধানিক বৈধতা প্রদান করা হয়;’

‘একইভাবে যেহেতু ১৯৯০ সালের ৬ ডিসেম্বর গণঅভ্যুত্থান-উত্তর সময়ে প্রধান বিচারপতি পদত্যাগ করে উপ-রাষ্ট্রপতি হিসেবে শপথ গ্রহণ, অতঃপর অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি পদের দায়িত্ব গ্রহণ এবং পরবর্তীতে প্রধান বিচারপতি পদে ফিরে যাওয়া সংক্রান্ত কোনো আইনি কাঠামো না থাকা সত্ত্বেও রাজনৈতিক দল ও জোটসমূহের রূপরেখা ও অঙ্গীকারের ভিত্তিতে ওই ধরনের কার্যাবলিকে বৈধতা দিয়ে পরবর্তী সংসদ গণঅভ্যুত্থানে প্রদত্ত জনগণের ইচ্ছার প্রতিফলন ঘটিয়ে সাংবিধানিক কনভেনশন এবং গণতন্ত্রকে সংহত করে।’

উপরিল্লেখ করা এমন গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ, জনগণের ইচ্ছার প্রতি শ্রদ্ধাবোধ এবং ‘সাংবিধানিক কনভেনশন’ বজায় রেখে ২০২৪ সালের জুলাই গণঅভ্যুত্থানে জনগণের ইচ্ছাকে প্রাধান্য দিয়ে নিচের অঙ্গীকারগুলো করার কথা বলা হয়েছে।

*সনদে ৮টি অঙ্গীকার*

‘জুলাই সনদের’ খসড়ায় সনদ বাস্তবায়নে আট দফা অঙ্গীকারনামা রাখা হয়েছে। অঙ্গীকারগুলোর মধ্যে রয়েছে:

১. জনগণের অধিকার ফিরে পাওয়া এবং গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠার সুদীর্ঘ আন্দোলন-সংগ্রামের ধারাবাহিকতায় ২০২৪ সালের জুলাই-আগস্টের গণঅভ্যুত্থানে হাজারো মানুষের জীবন ও রক্তদান এবং অগণিত মানুষের সীমাহীন ক্ষয়ক্ষতি ও ত্যাগ-তিতিক্ষার বিনিময়ে অর্জিত সুযোগ এবং তৎপ্রেক্ষিতে জন-আকাক্সক্ষা প্রতিফলন হিসেবে দীর্ঘ ধারাবাহিক প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে প্রণীত ও ঐকমত্যের ভিত্তিতে গৃহীত নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্তের দলিল হিসেবে ‘জুলাই জাতীয় সনদ ২০২৫’-এর পরিপূর্ণ বাস্তবায়ন নিশ্চিত করা।

২. এই রাষ্ট্রের মালিক জনগণ; তাদের অভিপ্রায়ই সর্বোচ্চ আইন এবং গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় জনগণের অভিপ্রায় প্রতিফলিত ও প্রতিষ্ঠিত হয় রাজনৈতিক দলের মাধ্যমে। এমতাবস্থায় রাজনৈতিক দল ও জোটসমূহ সম্মিলিতভাবে দীর্ঘ আলাপ-আলোচনার ভিত্তিতে জনগণের অভিপ্রায়ের সুস্পষ্ট ও সর্বোচ্চ অভিব্যক্তি হিসেবে ‘জুলাই জাতীয় সনদ ২০২৫’ প্রণয়ন করেছে বিধায় এই সনদের সব বিধান, নীতি ও সিদ্ধান্ত সংবিধানে অন্তর্ভুক্তকরণ নিশ্চিত করবে এবং বিদ্যমান সংবিধান বা অন্য কোনো আইনে ভিন্নতর কিছু থাকলে, সে ক্ষেত্রে এই সনদের বিধান/প্রস্তাব/সুপারিশ প্রাধান্য পাবে।

৩. এই সনদের কোনো বিধান, প্রস্তাব বা সুপারিশের ব্যাখ্যাসংক্রান্ত যে কোনো প্রশ্নের চূড়ান্ত মীমাংসার এখতিয়ার সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের ওপর ন্যস্ত থাকবে। ৪. সনদের প্রতিটি বিধান, প্রস্তাব ও সুপারিশ সাংবিধানিক ও আইনগতভাবে বলবৎ হিসেবে গণ্য হবে বিধায় এর বৈধতা, প্রয়োজনীয়তা কিংবা জারির কর্তৃত্ব সম্পর্কে কোনো আদালতে প্রশ্ন তোলা যাবে না।

৫. সনদে বাংলাদেশের সামগ্রিক রাষ্ট্রব্যবস্থা তথা সংবিধান, বিচারব্যবস্থা, নির্বাচনব্যবস্থা, জনপ্রশাসন, পুলিশি ব্যবস্থা ও দুর্নীতি দমনব্যবস্থার বিষয়ে যেসব প্রস্তাব/সুপারিশ লিপিবদ্ধ রয়েছে, সেগুলো বাস্তবায়নের জন্য সংবিধানের প্রয়োজনীয় সংশোধন, সংযোজন, পরিমার্জন, লিখন ও পুনর্লিখন এবং বিদ্যমান আইনের প্রয়োজনীয় সংশোধন, পরিবর্তন, পরিমার্জন, লিখন, পুনর্লিখন বা নতুন আইন প্রণয়ন, প্রয়োজনীয় বিধি প্রণয়ন বা বিদ্যমান বিধি ও প্রবিধির পরিবর্তন বা সংশোধন করা। ৬. গণতন্ত্র, মানবাধিকার ও আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার জন্য জনগণের নিরবচ্ছিন্ন সংগ্রাম এবং বিশেষত ২০২৪ সালের অভূতপূর্ব গণঅভ্যুত্থানের ঐতিহাসিক তাৎপর্যকে সাংবিধানিক তথা রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি দেয়া হবে।

৭. রাষ্ট্র ২০২৪ সালের জুলাই-আগস্টের গণঅভ্যুত্থানকালে সংঘটিত সব হত্যাকা-ের বিচার, শহীদদের রাষ্ট্রীয় মর্যাদা প্রদান ও শহীদ পরিবারসমূহকে যথোপযুক্ত সহায়তা প্রদান এবং আহতদের সুচিকিৎসা ও পুনর্বাসনে ব্যবস্থা নিশ্চিত করবে। ৮. জুলাই জাতীয় সনদ ২০২৫-এর যেসব প্রস্তাব/সুপারিশ অবিলম্বে বাস্তবায়নযোগ্য বলে বিবেচিত হবে, সেগুলো কোনো প্রকার কালক্ষেপণ না করেই পরবর্তী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে সরকার ও অন্যান্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষসমূহ সম্পূর্ণরূপে বাস্তবায়ন করবে।

*চার মূলনীতি*

বর্তমান সংবিধানে রাষ্ট্রের মূলনীতি হিসেবে ‘জাতীয়তাবাদ, সমাজতন্ত্র, গণতন্ত্র ও ধর্মনিরপেক্ষতা’ রয়েছে। তবে মূলনীতি পরিবর্তনের প্রস্তাব আগেই রেখেছিল ঐকমত্য কমিশন। যদিও এতে কঠোর আপত্তি জানিয়েছিল সংলাপে অংশ নেয়া বামপন্থি কয়েকটি দল। মূলনীতি পরিবর্তন করা হলে তারা সনদে সই করবে না বলেও হুঁশিয়ারি দিয়েছিল।

এর পরও সনদের খসড়ায় সংবিধানের বিদ্যমান মূলনীতিতে পরিবর্তন আনার প্রস্তাব করা হয়েছে। চার মূলনীতি নিয়ে কমিশনের প্রস্তাবে বলা হয়েছে, “সংবিধানে রাষ্ট্র পরিচালনার মূলনীতি অংশে ‘সাম্য, মানবিক মর্যাদা, সামাজিক সুবিচার, গণতন্ত্র, ধর্মীয় স্বাধীনতা ও সম্প্রীতি’ উল্লেখ থাকবে।’

তবে এ নিয়ে পাঁচটি দলের আপত্তি থাকায় তা আবারও ‘নতুন বিতর্ক তৈরি করতে পারে’ বলে মনে করছেন একাধিক বাম দলের জ্যেষ্ঠ নেতারা। আপত্তি জানানো দলগুলো ইতোমধ্যে সনদের চূড়ান্ত খসড়া হাতে পেয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করেছে। তারা সনদে সই করবে কিনা, তা নিয়েও প্রশ্ন রয়েছে।

ছবি

অর্থ পাচারকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ প্রধান উপদেষ্টার

রাষ্ট্রপতির ছবি অপসারণ নিয়ে অবগত নন পরিবেশ উপদেষ্টা

ছবি

নদী ভাঙনে বিলীনের পথে আশ্রয়ণ: ঘর আছে, থাকার পরিবেশ নেই

ছবি

দলীয় ‘লেজুড়বৃত্তি’ নয়, পাসপোর্ট কর্মকর্তাদেরকে উপদেষ্টা

ছবি

বসুন্ধরা চেয়ারম্যান ও তার স্ত্রীর সম্পদের হিসাব চেয়েছে দুদক

ছবি

দীর্ঘ সাড়ে পাঁচ মাস পর হিলি স্থলবন্দর দিয়ে ভারত থেকে পেঁয়াজ আমদানি শুরু

ছবি

পরিবেশ উপদেষ্টার আপত্তি সত্ত্বেও রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয় প্রকল্প পাস

ছবি

বিদেশে বাংলাদেশি কূটনৈতিক মিশন থেকে রাষ্ট্রপতির ছবি সরানোর নির্দেশ

ছবি

ভোলাগঞ্জের পর এবার লোভাছড়ায় পাথর লুট

ছবি

‘পাচারের’ ৪০ হাজার কোটি টাকার ‘সম্পদের’ সন্ধান, প্রধান উপদেষ্টাকে তথ্য দিলো এনবিআর

ছবি

ভূপৃষ্ঠের পানি শোধন প্রকল্পের ব্যয় বাড়ল ৩৫ শতাংশ

সিলেটে পাথর লুট: প্রশাসনের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুললেন রিজওয়ানা হাসান

বিদেশে বাংলাদেশের মিশন থেকে রাষ্ট্রপতি সাহাবুদ্দিনের ছবি সরানোর নির্দেশ

ছবি

শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে ট্রাইব্যুনালে বিচার চলছে

ছবি

সেই রিকশাচালকের জামিন, মুক্তিতে বাধা নেই

ছবি

বিদেশের বাংলাদেশি সব কূটনৈতিক মিশন থেকে রাষ্ট্রপতির ছবি সরানোর নির্দেশ

ছবি

ফারুকীর চিকিৎসার বিষয়ে বসছে মেডিকেল বোর্ড

ছবি

জামিন চেয়ে সাবেক প্রধান বিচারপতি এবিএম খায়রুল হকের আবেদনের শুনানি পিছিয়েছে

সাগরে ফের লঘুচাপের সম্ভাবনা, বাড়তে পারে বৃষ্টি

রোহিঙ্গা ইস্যুতে বিদেশি কূটনীতিকদের ব্রিফ করলেন জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা

ছবি

বনানীর সিসা বারে রাব্বি হত্যার পেছনে আধিপত্য বিস্তারের দ্বন্দ্ব : র‌্যাব

ছবি

আসন সমঝোতার কথা বলে এনসিপিকে কেনা যাবে না: হাসনাত

ছবি

সাদা পাথর লুট: চিহ্নিতদের বাদ দিয়ে অজ্ঞাত ২০০০ ব্যক্তির বিরুদ্ধে মামলা, নানা প্রশ্ন

ছবি

নির্বাচন নিয়ে শঙ্কা প্রকাশকারীরা গণতন্ত্রের শত্রু: সালাহউদ্দিন

ছবি

‘আপনারা নিশ্চিন্তে এ দেশে বসবাস করবেন’, জন্মাষ্টমীর অনুষ্ঠানে সেনাপ্রধান

ছবি

সীমান্তে মাইন বিস্ফোরণে আহত বন্যহাতি, চিকিৎসা করতে গিয়ে তিনজন হাসপাতালে

ছবি

বিষের ফাঁদে সুন্দরবন, দাদনে জিম্মি জেলে

ছবি

এয়ার টিকেটের উচ্চমূল্য, নিয়ন্ত্রণহীন হয়ে পড়ছে খাত

ছবি

প্রধান উপদেষ্টা যেই মাসে বলেছেন সেই মাসেই নির্বাচন হবে: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা

ছবি

মুচি সম্প্রদায়ের দু’জনকে পিটিয়ে হত্যা: এখনও গ্রেপ্তার হয়নি শনাক্ত ৫ জন

ছবি

জুলাই সনদ বাস্তবায়নে ৮ দফা অঙ্গীকারনামা, খসড়া রাজনৈতিক দলগুলোকে পাঠিয়েছে ঐকমত্য কমিশন

ছবি

‘অপ্রয়োজনীয়’ স্বাস্থ্য পরীক্ষা বন্ধের আহ্বান আসিফ নজরুলের

ছবি

চট্টগ্রাম থেকে ঢাকায় পাইপলাইনে জ্বালানি সরবরাহ শুরু

ছবি

শনিবার থেকে চট্টগ্রাম–ঢাকা পাইপলাইনে জ্বালানি তেল সরবরাহ শুরু

ছবি

প্রেস সচিবের নির্দেশনার প্রসঙ্গ টেনে ভুল স্বীকার করলেন ওসি

ছবি

১৫ আগস্ট: শেখ মুজিব ও তার পরিবার হত্যার ৫০ বছর

tab

জাতীয়

সংবিধানের ওপরে ‘জুলাই সনদ’, তোলা যাবে না প্রশ্ন

সংবাদ অনলাইন রিপোর্ট

ছবি: ইন্টারনেট থেকে সংগৃহীত

রোববার, ১৭ আগস্ট ২০২৫

শিক্ষার্থী-জনতার অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর রাষ্ট্র সংস্কার ইস্যুতে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে দফায় দফায় সংলাপের ভিত্তিতে তৈরি ‘জুলাই জাতীয় সনদ’ সাংবিধানিক ও আইনগতভাবে কার্যকর করতে চায় জাতীয় ঐকমত্য কমিশন।

বিদ্যমান সংবিধান বা অন্য কোনো আইনে ভিন্নতর কিছু থাকলেও ‘জুলাই জাতীয় সনদের’ বিধান, প্রস্তাব বা সুপারিশ প্রাধান্য পাবে, এমন প্রস্তাবও রেখেছে কমিশন। এ সনদের যেসব সুপারিশ অবিলম্বে বাস্তবায়নযোগ্য, দেরি না করে সেগুলো পরবর্তী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগেই বাস্তবায়নের পদক্ষেপ নেয়ার কথাও বলা হয়েছে সনদের খসড়ায়।

বিদ্যমান সংবিধানে ভিন্ন কিছু থাকলে প্রাধান্য পাবে জুলাই সনদ

অবিলম্বে বাস্তবায়নযোগ্য সুপারিশগুলো সংসদ নির্বাচনের আগেই বাস্তবায়ন করবে অন্তর্বর্তী সরকার

থাকবে ‘নোট অব ডিসেন্ট’

মূলনীতি পরিবর্তনের প্রস্তাবে ‘নতুন বিতর্ক’

২০ আগস্ট মতামত জানাবে বিএনপি

জুলাই সনদকে

বর্তমান সংবিধানের ওপরে গিয়ে সর্বোচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন দলিল হিসেবে প্রতিষ্ঠা করার চেষ্টা করা হয়েছে। তবে এই সনদের সংবিধানকে অতিক্রম করা উচিত- এমন ভাবাটাও সম্পূর্ণ ভুল: ডেভিড বার্গম্যান

এ সনদ নিয়ে ভবিষ্যতে কোনো আদালতে প্রশ্ন তোলা যাবে না, এই অঙ্গীকারসহ মোট আটটি অঙ্গীকারনামা রেখে গতকাল শনিবার রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে সনদের চূড়ান্ত সমন্বিত খসড়া পাঠিয়েছে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন।

‘জুলাই সনদের’ সমন্বিত খসড়া পড়েছেন দাবি করে যুক্তরাজ্যের সাংবাদিক ডেভিড বার্গম্যান রোববার,(১৭ আগস্ট ২০২৫) নিজের ফেইসবুক পেইজে এক পোস্টে এই সনদ সম্পর্কে ব্যক্তিগত অভিমত জানিয়েছেন।

অনেক বছর ধরে বাংলাদেশের রাজনীতি নিয়ে লিখে আসা এই বিশ্লেষক পোস্টের এক অংশে বলেছেন (লিখেছেন), জুলাই সনদের শেষ অংশে এই নথিকে সর্বোচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন দলিল হিসেবে প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করা হয়েছে বলে মনে হয়। এমনকি বর্তমান সংবিধানেরও ওপরে গিয়ে। তবে এই সনদের সংবিধানকে অতিক্রম করা উচিত- এমন ভাবাটাও সম্পূর্ণ ভুল।

‘জুলাই জাতীয় সনদের’ খসড়া পাওয়ার পর সমাজতান্ত্রিক দল (বাসদ মার্কসবাদী)এর প্রধান সমন্বয়ক মাসুদ রানা সাংবাদিকদের বলেছেন, এ সনদের বৈধতা, প্রয়োজনীয়তা, কিংবা জারির কর্তৃত্ব সম্পর্কে কোনো আদালতে প্রশ্ন তোলা যাবে না- এমন প্রস্তাব তারা মানতে পারছেন না।

মাসুদ রানা বলেন, ‘যে কোনো বিষয়ে প্রশ্ন তোলার অধিকার জনগণের আছে এবং থাকা উচিত। সেখানে অঙ্গীকারনামায় সনদের বৈধতা, প্রয়োজনীয়তা কিংবা জারির কর্তৃত্ব সম্পর্কে কোনো আদালতে প্রশ্ন তোলা যাবে না বলা হয়েছে- এটা কীভাবে সম্ভব?’

খসড়া পাওয়ার পর কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স সংবাদমাধ্যমকে বলেছেন, ‘ঐকমত্য কমিশনের পাঠানো প্রস্তাব দেখে মনে হয়েছে, ওনারা ঐকমত্যের প্রস্তাব না, বিশেষ গোষ্ঠীর প্রস্তাব দিয়েছেন।’

ত্রুটি সংশোধন

জুলাই সনদের খসড়ায় কোনো ত্রুটি ধরা পড়লে আগামী ২০ আগস্টের মধ্যে লিখিতভাবে জানাতে বলেছে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন। গত ফেব্রুয়ারিতে গঠিত এই কমিশনের নেতৃত্বে (সভাপতি হিসেবে) আছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস। সহ-সভাপতি হিসেবে আছেন আলী রীয়াজ। ‘জুলাই সনদের’ চূড়ান্ত খসড়ায় কিছু বিষয়ে অসামঞ্জস্য রয়েছে মন্তব্য করে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ সংবাদমাধ্যমকে বলেছেন, গতকাল শনিবার বিএনপির হাতে খসড়া এসেছে। দলীয় ফোরামে আলোচনা করে আগামী ২০ আগস্ট ঐকমত্য কমিশনকে মতামত জানানো হবে।

নতুন বন্দোবস্তের দলিল

‘নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্তের দলিল’ হিসেবে ‘জুলাই জাতীয় সনদ-২০২৫’ বাস্তবায়নে ঐকমত্য কমিশন ইতোমধ্যে বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে আলোচনা শুরু করেছে। চূড়ান্ত এ খসড়া নিয়ে চলিত মাসের শেষ দিকে কমিশন আবার দলগুলোর সঙ্গে বসবে বলে জানা গেছে।

সবশেষে সংলাপে অংশ নেয়া রাজনৈতিক দলগুলোর পাশাপাশি ঐকমত্য কমিশন সংশ্লিষ্টরা এ সনদে সই করবেন, বলে কথা রয়েছে।

যদিও বেশ কিছু মৌলিক ইস্যুতে ঐকমত্য কমিশনের প্রস্তাবে কিছু দলের এখনও অমত রয়েছে। ঐকমত্য হয়নি এমন বিষয়গুলো সনদে ‘নোট অব ডিসেন্ট (ভিন্নমত)’ হিসেবে উল্লেখ থাকবে।

নোট অব ডিসেন্ট সেসব বিষয়ে

১. রাষ্ট্রের মূলনীতি: এই প্রস্তাবে ভিন্নমত আছে বাংলাদেশ জাসদ, সিপিবি, বাসদ, বাসদ (মার্ক্সবাদী), গণফোরামের। ২. রাষ্ট্রপতির নির্বাচনপদ্ধতি: ভিন্নমত আছে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের।

৩. রাষ্ট্রপতির ক্ষমতা ও দায়িত্ব: কিছু ক্ষেত্রে ভিন্নমত আছে বিএনপি, এনডিএম, জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম, বাংলাদেশ লেবার পার্টি, ১২-দলীয় জোট, এলডিপির।

৪. প্রধানমন্ত্রীর একাধিক পদে থাকার বিধান: ভিন্নমত আছে বিএনপি, এনডিএম, ১২-দলীয় জোট ও জাতীয়তাবাদী সমমনা জোটের।

৫. তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা: বিএনপি (গঠনপ্রক্রিয়া সংসদের হাতে ন্যস্ত করার পক্ষে), কিছু অংশে ভিন্নমত আছে বাংলাদেশ লেবার পার্টি, এনডিএম, জাতীয়তাবাদী সমমনা জোট, ১২-দলীয় জোট, জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশ, বাংলাদেশ নেজামে ইসলাম পার্টির।

৬. উচ্চকক্ষে পিআর: বিএনপি, এনডিএমের ভিন্নমত। ৭. উচ্চকক্ষের প্রার্থী তালিকা প্রকাশ: বিএনপি, এনডিএমের ভিন্নমত। ৮. উচ্চকক্ষের দায়িত্ব ও ভূমিকা: সিপিবি, এনডিএম, জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশ, আম জনতার দলের ভিন্নমত।

৯. নারী আসনের বিধান: সিপিবি, বাসদ, আম জনতার দলের ভিন্নমত। ১০. ন্যায়পাল নিয়োগ, সরকারি কর্ম কমিশনে নিয়োগ, মহাহিসাব নিরীক্ষক ও নিয়ন্ত্রক নিয়োগ ও দুর্নীতি দমন কমিশনে নিয়োগ: বিএনপি, এনডিএম, ১২-দলীয় জোট, জাতীয়তাবাদী সমমনা জোটের ভিন্নমত। ১১. ওপেন গভর্নমেন্ট পার্টনারশিপের পক্ষভুক্ত হওয়া: জামায়াতে ইসলামী, গণতান্ত্রিক বাম ঐক্য, জাকের পার্টি, জেএসডি ও বিএসপির ভিন্নমত আছে।

*সনদের তিন ভাগ*

জুলাই সনদের সমন্বিত এ খসড়াকে তিনটি ভাগে ভাগ করা হয়েছে- যেটির প্রথম ভাগে জুলাই সনদের পটভূমি, সংস্কার কমিশন গঠন, জাতীয় ঐকমত্য কমিশন গঠন ও কমিশনের কার্যক্রমের বিষয়ে বর্ণনা করা আছে।

দ্বিতীয় ভাগে ঐকমত্য হওয়া ৮৪ সংস্কার প্রস্তাব এবং সর্বশেষ ভাগে রয়েছে জুলাই সনদ বাস্তবায়নের অঙ্গীকারনামা, যেখানে ৯ দফায় দলগুলোর কাছ থেকে অঙ্গীকারের বিষয় তুলে ধরা হয়েছে।

অঙ্গীকারনামার পটভূমিতে বলা হয়, ‘যেহেতু বাংলাদেশের সাংবিধানিক কনভেনশনের অংশ হিসেবে ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ হতে ১৯৭২ সালের ৪ নভেম্বর পর্যন্ত দেশে কার্যত কোনো সংবিধান না থাকা সত্ত্বেও উক্ত সময়ের সব কার্যাবলি ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের মহান শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে ১৯৭২ সালের সংবিধানে সন্নিবেশিত করে এর আইনি ও সাংবিধানিক বৈধতা প্রদান করা হয়;’

‘একইভাবে যেহেতু ১৯৯০ সালের ৬ ডিসেম্বর গণঅভ্যুত্থান-উত্তর সময়ে প্রধান বিচারপতি পদত্যাগ করে উপ-রাষ্ট্রপতি হিসেবে শপথ গ্রহণ, অতঃপর অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি পদের দায়িত্ব গ্রহণ এবং পরবর্তীতে প্রধান বিচারপতি পদে ফিরে যাওয়া সংক্রান্ত কোনো আইনি কাঠামো না থাকা সত্ত্বেও রাজনৈতিক দল ও জোটসমূহের রূপরেখা ও অঙ্গীকারের ভিত্তিতে ওই ধরনের কার্যাবলিকে বৈধতা দিয়ে পরবর্তী সংসদ গণঅভ্যুত্থানে প্রদত্ত জনগণের ইচ্ছার প্রতিফলন ঘটিয়ে সাংবিধানিক কনভেনশন এবং গণতন্ত্রকে সংহত করে।’

উপরিল্লেখ করা এমন গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ, জনগণের ইচ্ছার প্রতি শ্রদ্ধাবোধ এবং ‘সাংবিধানিক কনভেনশন’ বজায় রেখে ২০২৪ সালের জুলাই গণঅভ্যুত্থানে জনগণের ইচ্ছাকে প্রাধান্য দিয়ে নিচের অঙ্গীকারগুলো করার কথা বলা হয়েছে।

*সনদে ৮টি অঙ্গীকার*

‘জুলাই সনদের’ খসড়ায় সনদ বাস্তবায়নে আট দফা অঙ্গীকারনামা রাখা হয়েছে। অঙ্গীকারগুলোর মধ্যে রয়েছে:

১. জনগণের অধিকার ফিরে পাওয়া এবং গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠার সুদীর্ঘ আন্দোলন-সংগ্রামের ধারাবাহিকতায় ২০২৪ সালের জুলাই-আগস্টের গণঅভ্যুত্থানে হাজারো মানুষের জীবন ও রক্তদান এবং অগণিত মানুষের সীমাহীন ক্ষয়ক্ষতি ও ত্যাগ-তিতিক্ষার বিনিময়ে অর্জিত সুযোগ এবং তৎপ্রেক্ষিতে জন-আকাক্সক্ষা প্রতিফলন হিসেবে দীর্ঘ ধারাবাহিক প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে প্রণীত ও ঐকমত্যের ভিত্তিতে গৃহীত নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্তের দলিল হিসেবে ‘জুলাই জাতীয় সনদ ২০২৫’-এর পরিপূর্ণ বাস্তবায়ন নিশ্চিত করা।

২. এই রাষ্ট্রের মালিক জনগণ; তাদের অভিপ্রায়ই সর্বোচ্চ আইন এবং গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় জনগণের অভিপ্রায় প্রতিফলিত ও প্রতিষ্ঠিত হয় রাজনৈতিক দলের মাধ্যমে। এমতাবস্থায় রাজনৈতিক দল ও জোটসমূহ সম্মিলিতভাবে দীর্ঘ আলাপ-আলোচনার ভিত্তিতে জনগণের অভিপ্রায়ের সুস্পষ্ট ও সর্বোচ্চ অভিব্যক্তি হিসেবে ‘জুলাই জাতীয় সনদ ২০২৫’ প্রণয়ন করেছে বিধায় এই সনদের সব বিধান, নীতি ও সিদ্ধান্ত সংবিধানে অন্তর্ভুক্তকরণ নিশ্চিত করবে এবং বিদ্যমান সংবিধান বা অন্য কোনো আইনে ভিন্নতর কিছু থাকলে, সে ক্ষেত্রে এই সনদের বিধান/প্রস্তাব/সুপারিশ প্রাধান্য পাবে।

৩. এই সনদের কোনো বিধান, প্রস্তাব বা সুপারিশের ব্যাখ্যাসংক্রান্ত যে কোনো প্রশ্নের চূড়ান্ত মীমাংসার এখতিয়ার সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের ওপর ন্যস্ত থাকবে। ৪. সনদের প্রতিটি বিধান, প্রস্তাব ও সুপারিশ সাংবিধানিক ও আইনগতভাবে বলবৎ হিসেবে গণ্য হবে বিধায় এর বৈধতা, প্রয়োজনীয়তা কিংবা জারির কর্তৃত্ব সম্পর্কে কোনো আদালতে প্রশ্ন তোলা যাবে না।

৫. সনদে বাংলাদেশের সামগ্রিক রাষ্ট্রব্যবস্থা তথা সংবিধান, বিচারব্যবস্থা, নির্বাচনব্যবস্থা, জনপ্রশাসন, পুলিশি ব্যবস্থা ও দুর্নীতি দমনব্যবস্থার বিষয়ে যেসব প্রস্তাব/সুপারিশ লিপিবদ্ধ রয়েছে, সেগুলো বাস্তবায়নের জন্য সংবিধানের প্রয়োজনীয় সংশোধন, সংযোজন, পরিমার্জন, লিখন ও পুনর্লিখন এবং বিদ্যমান আইনের প্রয়োজনীয় সংশোধন, পরিবর্তন, পরিমার্জন, লিখন, পুনর্লিখন বা নতুন আইন প্রণয়ন, প্রয়োজনীয় বিধি প্রণয়ন বা বিদ্যমান বিধি ও প্রবিধির পরিবর্তন বা সংশোধন করা। ৬. গণতন্ত্র, মানবাধিকার ও আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার জন্য জনগণের নিরবচ্ছিন্ন সংগ্রাম এবং বিশেষত ২০২৪ সালের অভূতপূর্ব গণঅভ্যুত্থানের ঐতিহাসিক তাৎপর্যকে সাংবিধানিক তথা রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি দেয়া হবে।

৭. রাষ্ট্র ২০২৪ সালের জুলাই-আগস্টের গণঅভ্যুত্থানকালে সংঘটিত সব হত্যাকা-ের বিচার, শহীদদের রাষ্ট্রীয় মর্যাদা প্রদান ও শহীদ পরিবারসমূহকে যথোপযুক্ত সহায়তা প্রদান এবং আহতদের সুচিকিৎসা ও পুনর্বাসনে ব্যবস্থা নিশ্চিত করবে। ৮. জুলাই জাতীয় সনদ ২০২৫-এর যেসব প্রস্তাব/সুপারিশ অবিলম্বে বাস্তবায়নযোগ্য বলে বিবেচিত হবে, সেগুলো কোনো প্রকার কালক্ষেপণ না করেই পরবর্তী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে সরকার ও অন্যান্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষসমূহ সম্পূর্ণরূপে বাস্তবায়ন করবে।

*চার মূলনীতি*

বর্তমান সংবিধানে রাষ্ট্রের মূলনীতি হিসেবে ‘জাতীয়তাবাদ, সমাজতন্ত্র, গণতন্ত্র ও ধর্মনিরপেক্ষতা’ রয়েছে। তবে মূলনীতি পরিবর্তনের প্রস্তাব আগেই রেখেছিল ঐকমত্য কমিশন। যদিও এতে কঠোর আপত্তি জানিয়েছিল সংলাপে অংশ নেয়া বামপন্থি কয়েকটি দল। মূলনীতি পরিবর্তন করা হলে তারা সনদে সই করবে না বলেও হুঁশিয়ারি দিয়েছিল।

এর পরও সনদের খসড়ায় সংবিধানের বিদ্যমান মূলনীতিতে পরিবর্তন আনার প্রস্তাব করা হয়েছে। চার মূলনীতি নিয়ে কমিশনের প্রস্তাবে বলা হয়েছে, “সংবিধানে রাষ্ট্র পরিচালনার মূলনীতি অংশে ‘সাম্য, মানবিক মর্যাদা, সামাজিক সুবিচার, গণতন্ত্র, ধর্মীয় স্বাধীনতা ও সম্প্রীতি’ উল্লেখ থাকবে।’

তবে এ নিয়ে পাঁচটি দলের আপত্তি থাকায় তা আবারও ‘নতুন বিতর্ক তৈরি করতে পারে’ বলে মনে করছেন একাধিক বাম দলের জ্যেষ্ঠ নেতারা। আপত্তি জানানো দলগুলো ইতোমধ্যে সনদের চূড়ান্ত খসড়া হাতে পেয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করেছে। তারা সনদে সই করবে কিনা, তা নিয়েও প্রশ্ন রয়েছে।

back to top