alt

জাতীয়

ভোলাগঞ্জের পর এবার লোভাছড়ায় পাথর লুট

নিজস্ব বার্তা পরিবেশক, সিলেট : রোববার, ১৭ আগস্ট ২০২৫

জাফলং ও ভোলাগঞ্জের পর লোভাছড়ায়ও লুট হচ্ছে পাথর

নদীকেন্দ্রিক পর্যটন স্পট জাফলং ও ভোলাগঞ্জের পর তৃতীয় বৃহত্তম পর্যটন স্পট লোভাছড়াও পাথর লুটের কারণে বিনষ্ট হতে যাচ্ছে প্রাকৃতিক সৌন্দর্য। এখানেও ছাত্রদলের এক নেতার মোড়কে আওয়ামী লীগের লুটেরা চক্র সক্রিয়। স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের সদস্যসহ সাধারণ মানুষ লাগাতার প্রতিবাদ করলেও লুটের ধারায় কোনো হের-ফের নেই।

২০২০ সালে এ এলাকার পর্যটন রক্ষায় স্থানীয় পাথর কোয়ারির পাথর লিজ নেয় খনিজ সম্পদ উন্নয়ন ব্যুরো। তখন পরিবেশ অধিদপ্তরের ভ্রাম্যমাণ আদালত এক কোটি চার লাখ ঘনফুট পাথর জব্দ করে কানাইঘাট থানার ওসি জিম্মায় দেয়। এ পাথর প্রায় পাঁচ বছর সেখানে থাকলেও গত তিন মাস আগে সেখান থেকে ৪৪ লাখ ঘনফুট পাথর নিলামে ৯টি শর্ত সাপেক্ষে পিয়াস ট্রেডার্স নামের একটি প্রতিষ্ঠানের কাছে বিক্রি করা হয়। পাথর সরানোর জন্য ৬ মে ২০২৫ ইংরেজি থেকে ৪৫ দিন সময় দেয়া হয়। বাকি ৬০ হাজার ঘনফুট পাথর তিনটি রিট মামলা (রিট পিটিশন নং ভিসি ১০৩১/২০২০, ভিসি ১০৫০/২০২০, ভিসি ১০৫৫/২০২০) এর জব্দ পাথর হিসেবে কানাইঘাট থানার ওসি জিম্মায় রেখে দেয়া হয়।

পিয়াস ট্রেডার্সের মালিক সিলেট মহানগর ছাত্রদলের দপ্তর সম্পাদক কামরুল হাসান, কানাইঘাট উপজেলা আওয়ামী লীগের অর্থ সম্পাদক পলাতক নেতা তমিজ উদ্দিন ও আওয়ামী লীগ নেতা মইনুলের সঙ্গে পার্টনারশিপে ব্যবসা শুরু করেন। এই আওয়ামী লীগ নেতারা স্থানীয় আরও চল্লিশজন নেতাকে তাদের পাথর ব্যবসায় যুক্ত করেন।

এর পরই শুরু হয় কোয়ারিতে পাথর লুট। গোটা লোভাছড়ার সর্বত্র খনন করে পাথর উত্তোলন করতে থাকে এই একচল্লিশ লুটেরা। তারা প্রথম ৪৫ দিনে তাদের নিলামের পাথর সরিয়ে নেয়ার পর নতুন করে উত্তলিত ২০ লাখ ঘনফুট পাথর সিলেট, ছাতক ও আটগ্রামে নিয়ে যায়। এরপর বন্যার কারণ দেখিয়ে তারা আরও এক মাস সময় বাড়ায়। সে মেয়াদও গত ২৩ জুলাই শেষ হয়ে যায়।

এই মেয়াদোত্তীর্ণের পর তারা চোখ রাখে রিট মামলার ৬০ লাখ ঘনফুট জব্দ পাথরের ওপর। কানাইঘাট থানার ওসি মো. আব্দুল আউয়ালের নিষ্ক্রিয়তাকে পুঁজি করে হাইকোর্টের মামলার বিষয়টিও উপেক্ষা করে লুট অব্যাহত রাখে। এতে স্থানীয় ব্যবসায়ী ও শ্রমিকরা আপত্তি করলে শ্রমিকদের বাঁশের খুঁটিতে বেঁধে নির্যাতন চালায় আওয়ামী লীগ নেতা তমিজ উদ্দিন চেয়ারম্যানের লোকজন। পরে নির্যাতিতরা কানাইঘাট থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করে সিলেটে সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে অভিযোগ জানায়।

বর্তমানে লোভাছড়ার গোটা পর্যটন এলাকাজুড়ে এই লুটেরা চক্র ক্রাশিং মিল বসিয়ে দিনরাত পাথর ভাঙছে এবং পর্যটন স্পট থেকে আহরণ করছে পাথর। এসব এলাকায় প্রতিদিন পর্যটকরা বাধার সম্মুখীন হচ্ছেন লুটেরাদের সন্ত্রাসীদের হাতে।

লক্ষীপ্রাসাদ পূর্ব ইউনিয়নের ইউপি সদস্য মো. নাজিম উদ্দিন জানান, ‘তাদের এই পাথর লুটে গত ২ মাস ধরে সরকারের সব দপ্তরে অভিযোগ দেয়ার পরও আজ পর্যন্ত সরকারের কোনো বিভাগ এই অভিযোগসমূহকে গুরুত্ব দেয়নি।’ তাই ইউনিয়নবাসী তাদের ন্যায্য প্রতিকার পেতে উচ্চ আদালতে যাওয়ার পরিকল্পনা করছেন বলে জানান তিনি।

পিয়াস ট্রেডার্সের স্বত্ত্বাধিকারী ছাত্রদল নেতা কামরুল হাসান বলেন, ‘আমার নিলামের পাথর এখনো লোভাছড়ায় রয়েছে। তাই সেখান থেকে আমার লোকজন পাথর পরিবহন করছে। মেয়াদ শেষে সময় বাড়ানোর জন্য আমরা হাইকোর্টে মামলা করেছি। এখনও আদালতের আদেশ বিএমডিতে যায়নি।’

কানাইঘাট থানার ওসি মো. আব্দুল আউয়াল বলেন, তাদের পুলিশের পাথর কোয়ারিতে কোনোভাবে সম্পৃক্ত নয়। একটি টহল টিম কাজ করে। তিনি আরও বলেন, উপজেলা প্রশাসন অভিযানের জন্য যখনই পুলিশ চায় তখন তারা পুলিশ দিয়ে সহায়তা করে থাকেন।

সাদা পাথর লুটপাট : তদন্ত কমিটি প্রতিবেদন দাখিলে ব্যর্থ: সময় চেয়েছে তিন দিন

সিলেটের ভোলাগঞ্জে সাদা পাথর লুটপাটের ঘটনায় গঠিত জেলা প্রশাসনের তদন্ত কমিটি নির্ধারিত সময়ের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দিতে ব্যর্থ হয়েছে। তিন কর্মদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন দাখিল করার কথা থাকলেও রোববার,(১৭ আগস্ট ২০২৫) সময়সীমা শেষ হলেও কোনো প্রতিবেদন জমা দেয়নি। এ অবস্থায় তদন্তের স্বার্থে আবারও তিন দিনের সময় বৃদ্ধির আবেদন জানিয়েছে কমিটি।

তদন্ত কমিটির প্রধান অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (উন্নয়ন ও মানবসম্পদ ব্যবস্থাপনা) পদ্মাসেন সিংহ বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, ‘তদন্ত এখনও শেষ হয়নি। বিস্তারিত যাচাইয়ের স্বার্থে আরও কিছুটা সময় প্রয়োজন। তাই জেলা প্রশাসকের কাছে তিন দিনের সময় বৃদ্ধির আবেদন করা হয়েছে।’

গত বছরের ৫ আগস্ট থেকে ভোলাগঞ্জের সাদা পাথর এবং সংলগ্ন রেলওয়ে বাঙ্কারে ভয়াবহ লুটপাট চলে আসছে। প্রথমে রাতের আঁধারে হলেও পরে দিনের আলোতেও প্রকাশ্যে এই লুট চলে।

এক সময় দৃষ্টিনন্দন পর্যটন এলাকা এখন প্রায় পাথরশূন্য। আর রেলওয়ে বাঙ্কার ধসে পড়েছে খানাখন্দে। দেশজুড়ে এই ঘটনায় সমালোচনার ঝড় ওঠার পর জেলা প্রশাসক শের মাহবুব মুরাদ ১২ আগস্ট তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেন। কমিটির প্রধান করা হয় পদ্মাসেন সিংহকে। আর সদস্য হিসেবে রাখা হয়- কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আজিজুন্নাহার ও পরিবেশ অধিদপ্তরের ভারপ্রাপ্ত সহকারী পরিচালক আফজারুল ইসলাম।

এ তদন্ত কমিটি নিয়েই বিতর্ক দেখা দেয়। অভিযোগ রয়েছে, যাদের দায়িত্বকালে লুটপাট বেড়েছে, তারাই এখন কমিটির সদস্য।

ইউএনও আজিজুন্নাহার এ বছরের জানুয়ারিতে কোম্পানীগঞ্জে যোগদান করেন। স্থানীয়দের অভিযোগ, তার দায়িত্বকালে লোকদেখানো অভিযান আরও শিথিল হয়ে গেছে এবং সেই সুযোগে লুটপাটকারীরা আরও বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। এছাড়া প্রতিদিন পাথর কোয়ারি থেকে পরিবেশ অধিদপ্তরের নামে টাকা উত্তোলন করা হয়।

স্থানীয়রা জানান, এই টাকা উত্তোলনের দায়িত্বে থাকা তাজুল ইসলাম মোল্লাকে সবাই ‘পরিবেশ মোল্লা’ নামে চেনে। অথচ পরিবেশ অধিদপ্তরের একজন কর্মকর্তাকেও রাখা হয়েছে কমিটিতে?

পরিবেশবাদী সংগঠনগুলো বলছে, যাদের গাফিলতিতে রাষ্ট্রীয় সম্পদ লুট হয়েছে, তাদের দিয়ে তদন্ত করলে সত্য উদ্ঘাটন সম্ভব নয়।

পরিবেশ আইনবিদ সমিতি বেলার সমন্বয়কারী অ্যাডভোকেট শাহ শাহেদা আক্তার বলেন, ‘যার ব্যর্থতায় লুট হলো, তাকেই আবার তদন্তে বসানো জনগণের সঙ্গে তামাশা ছাড়া কিছু নয়।’

বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) সিলেটের সাধারণ সম্পাদক কাশমীর রেজা বলেন, ‘প্রশাসনের নাকের ডগায় লুটপাট হয়েছে। যোগসাজশ ছাড়া দিনের পর দিন এমন লুটপাট সম্ভব নয়।’

জেলা প্রশাসন জানাচ্ছে, ইউএনও এবং পরিবেশ অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের রাখা হয়েছে সাচিবিক দায়িত্ব পালনের জন্য।

জেলা প্রশাসক শের মাহবুব মুরাদ গণমাধ্যমকে বলেন, ‘তাদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য-উপাত্ত আছে, যা তদন্তে কাজে দেবে। যদি কারও গাফিলতি প্রমাণিত হয়, অবশ্যই ব্যবস্থা নেয়া হবে।’

কমিটির প্রধান পদ্মাসেন সিংহও ইউএনওর উপস্থিতিকে সমর্থন করে বলেন, ‘তিনি অনেক অভিযান পরিচালনা করেছেন, সাজা দিয়েছেন। তার উপস্থিতি তদন্তে কাজে দেবে।’

তবে সাধারণ মানুষ ও পরিবেশবাদী সংগঠনগুলো মনে করছে, যাদের ব্যর্থতার কারণে কোটি কোটি টাকার রাষ্ট্রীয় সম্পদ লুট হয়েছে, তাদের দিয়ে তদন্ত করানো হলে প্রকৃত সত্য বের হবে কিনা তা নিয়ে সংশয় রয়েছে।

স্থানীয়দের ভাষায়, ‘ব্যর্থদের দিয়ে তদন্ত করানো মানেই সত্যকে চাপা দেয়ার চেষ্টা।’

ছবি

অর্থ পাচারকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ প্রধান উপদেষ্টার

রাষ্ট্রপতির ছবি অপসারণ নিয়ে অবগত নন পরিবেশ উপদেষ্টা

ছবি

নদী ভাঙনে বিলীনের পথে আশ্রয়ণ: ঘর আছে, থাকার পরিবেশ নেই

ছবি

দলীয় ‘লেজুড়বৃত্তি’ নয়, পাসপোর্ট কর্মকর্তাদেরকে উপদেষ্টা

ছবি

বসুন্ধরা চেয়ারম্যান ও তার স্ত্রীর সম্পদের হিসাব চেয়েছে দুদক

ছবি

দীর্ঘ সাড়ে পাঁচ মাস পর হিলি স্থলবন্দর দিয়ে ভারত থেকে পেঁয়াজ আমদানি শুরু

ছবি

পরিবেশ উপদেষ্টার আপত্তি সত্ত্বেও রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয় প্রকল্প পাস

ছবি

বিদেশে বাংলাদেশি কূটনৈতিক মিশন থেকে রাষ্ট্রপতির ছবি সরানোর নির্দেশ

ছবি

সংবিধানের ওপরে ‘জুলাই সনদ’, তোলা যাবে না প্রশ্ন

ছবি

‘পাচারের’ ৪০ হাজার কোটি টাকার ‘সম্পদের’ সন্ধান, প্রধান উপদেষ্টাকে তথ্য দিলো এনবিআর

ছবি

ভূপৃষ্ঠের পানি শোধন প্রকল্পের ব্যয় বাড়ল ৩৫ শতাংশ

সিলেটে পাথর লুট: প্রশাসনের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুললেন রিজওয়ানা হাসান

বিদেশে বাংলাদেশের মিশন থেকে রাষ্ট্রপতি সাহাবুদ্দিনের ছবি সরানোর নির্দেশ

ছবি

শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে ট্রাইব্যুনালে বিচার চলছে

ছবি

সেই রিকশাচালকের জামিন, মুক্তিতে বাধা নেই

ছবি

বিদেশের বাংলাদেশি সব কূটনৈতিক মিশন থেকে রাষ্ট্রপতির ছবি সরানোর নির্দেশ

ছবি

ফারুকীর চিকিৎসার বিষয়ে বসছে মেডিকেল বোর্ড

ছবি

জামিন চেয়ে সাবেক প্রধান বিচারপতি এবিএম খায়রুল হকের আবেদনের শুনানি পিছিয়েছে

সাগরে ফের লঘুচাপের সম্ভাবনা, বাড়তে পারে বৃষ্টি

রোহিঙ্গা ইস্যুতে বিদেশি কূটনীতিকদের ব্রিফ করলেন জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা

ছবি

বনানীর সিসা বারে রাব্বি হত্যার পেছনে আধিপত্য বিস্তারের দ্বন্দ্ব : র‌্যাব

ছবি

আসন সমঝোতার কথা বলে এনসিপিকে কেনা যাবে না: হাসনাত

ছবি

সাদা পাথর লুট: চিহ্নিতদের বাদ দিয়ে অজ্ঞাত ২০০০ ব্যক্তির বিরুদ্ধে মামলা, নানা প্রশ্ন

ছবি

নির্বাচন নিয়ে শঙ্কা প্রকাশকারীরা গণতন্ত্রের শত্রু: সালাহউদ্দিন

ছবি

‘আপনারা নিশ্চিন্তে এ দেশে বসবাস করবেন’, জন্মাষ্টমীর অনুষ্ঠানে সেনাপ্রধান

ছবি

সীমান্তে মাইন বিস্ফোরণে আহত বন্যহাতি, চিকিৎসা করতে গিয়ে তিনজন হাসপাতালে

ছবি

বিষের ফাঁদে সুন্দরবন, দাদনে জিম্মি জেলে

ছবি

এয়ার টিকেটের উচ্চমূল্য, নিয়ন্ত্রণহীন হয়ে পড়ছে খাত

ছবি

প্রধান উপদেষ্টা যেই মাসে বলেছেন সেই মাসেই নির্বাচন হবে: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা

ছবি

মুচি সম্প্রদায়ের দু’জনকে পিটিয়ে হত্যা: এখনও গ্রেপ্তার হয়নি শনাক্ত ৫ জন

ছবি

জুলাই সনদ বাস্তবায়নে ৮ দফা অঙ্গীকারনামা, খসড়া রাজনৈতিক দলগুলোকে পাঠিয়েছে ঐকমত্য কমিশন

ছবি

‘অপ্রয়োজনীয়’ স্বাস্থ্য পরীক্ষা বন্ধের আহ্বান আসিফ নজরুলের

ছবি

চট্টগ্রাম থেকে ঢাকায় পাইপলাইনে জ্বালানি সরবরাহ শুরু

ছবি

শনিবার থেকে চট্টগ্রাম–ঢাকা পাইপলাইনে জ্বালানি তেল সরবরাহ শুরু

ছবি

প্রেস সচিবের নির্দেশনার প্রসঙ্গ টেনে ভুল স্বীকার করলেন ওসি

ছবি

১৫ আগস্ট: শেখ মুজিব ও তার পরিবার হত্যার ৫০ বছর

tab

জাতীয়

ভোলাগঞ্জের পর এবার লোভাছড়ায় পাথর লুট

নিজস্ব বার্তা পরিবেশক, সিলেট

জাফলং ও ভোলাগঞ্জের পর লোভাছড়ায়ও লুট হচ্ছে পাথর

রোববার, ১৭ আগস্ট ২০২৫

নদীকেন্দ্রিক পর্যটন স্পট জাফলং ও ভোলাগঞ্জের পর তৃতীয় বৃহত্তম পর্যটন স্পট লোভাছড়াও পাথর লুটের কারণে বিনষ্ট হতে যাচ্ছে প্রাকৃতিক সৌন্দর্য। এখানেও ছাত্রদলের এক নেতার মোড়কে আওয়ামী লীগের লুটেরা চক্র সক্রিয়। স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের সদস্যসহ সাধারণ মানুষ লাগাতার প্রতিবাদ করলেও লুটের ধারায় কোনো হের-ফের নেই।

২০২০ সালে এ এলাকার পর্যটন রক্ষায় স্থানীয় পাথর কোয়ারির পাথর লিজ নেয় খনিজ সম্পদ উন্নয়ন ব্যুরো। তখন পরিবেশ অধিদপ্তরের ভ্রাম্যমাণ আদালত এক কোটি চার লাখ ঘনফুট পাথর জব্দ করে কানাইঘাট থানার ওসি জিম্মায় দেয়। এ পাথর প্রায় পাঁচ বছর সেখানে থাকলেও গত তিন মাস আগে সেখান থেকে ৪৪ লাখ ঘনফুট পাথর নিলামে ৯টি শর্ত সাপেক্ষে পিয়াস ট্রেডার্স নামের একটি প্রতিষ্ঠানের কাছে বিক্রি করা হয়। পাথর সরানোর জন্য ৬ মে ২০২৫ ইংরেজি থেকে ৪৫ দিন সময় দেয়া হয়। বাকি ৬০ হাজার ঘনফুট পাথর তিনটি রিট মামলা (রিট পিটিশন নং ভিসি ১০৩১/২০২০, ভিসি ১০৫০/২০২০, ভিসি ১০৫৫/২০২০) এর জব্দ পাথর হিসেবে কানাইঘাট থানার ওসি জিম্মায় রেখে দেয়া হয়।

পিয়াস ট্রেডার্সের মালিক সিলেট মহানগর ছাত্রদলের দপ্তর সম্পাদক কামরুল হাসান, কানাইঘাট উপজেলা আওয়ামী লীগের অর্থ সম্পাদক পলাতক নেতা তমিজ উদ্দিন ও আওয়ামী লীগ নেতা মইনুলের সঙ্গে পার্টনারশিপে ব্যবসা শুরু করেন। এই আওয়ামী লীগ নেতারা স্থানীয় আরও চল্লিশজন নেতাকে তাদের পাথর ব্যবসায় যুক্ত করেন।

এর পরই শুরু হয় কোয়ারিতে পাথর লুট। গোটা লোভাছড়ার সর্বত্র খনন করে পাথর উত্তোলন করতে থাকে এই একচল্লিশ লুটেরা। তারা প্রথম ৪৫ দিনে তাদের নিলামের পাথর সরিয়ে নেয়ার পর নতুন করে উত্তলিত ২০ লাখ ঘনফুট পাথর সিলেট, ছাতক ও আটগ্রামে নিয়ে যায়। এরপর বন্যার কারণ দেখিয়ে তারা আরও এক মাস সময় বাড়ায়। সে মেয়াদও গত ২৩ জুলাই শেষ হয়ে যায়।

এই মেয়াদোত্তীর্ণের পর তারা চোখ রাখে রিট মামলার ৬০ লাখ ঘনফুট জব্দ পাথরের ওপর। কানাইঘাট থানার ওসি মো. আব্দুল আউয়ালের নিষ্ক্রিয়তাকে পুঁজি করে হাইকোর্টের মামলার বিষয়টিও উপেক্ষা করে লুট অব্যাহত রাখে। এতে স্থানীয় ব্যবসায়ী ও শ্রমিকরা আপত্তি করলে শ্রমিকদের বাঁশের খুঁটিতে বেঁধে নির্যাতন চালায় আওয়ামী লীগ নেতা তমিজ উদ্দিন চেয়ারম্যানের লোকজন। পরে নির্যাতিতরা কানাইঘাট থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করে সিলেটে সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে অভিযোগ জানায়।

বর্তমানে লোভাছড়ার গোটা পর্যটন এলাকাজুড়ে এই লুটেরা চক্র ক্রাশিং মিল বসিয়ে দিনরাত পাথর ভাঙছে এবং পর্যটন স্পট থেকে আহরণ করছে পাথর। এসব এলাকায় প্রতিদিন পর্যটকরা বাধার সম্মুখীন হচ্ছেন লুটেরাদের সন্ত্রাসীদের হাতে।

লক্ষীপ্রাসাদ পূর্ব ইউনিয়নের ইউপি সদস্য মো. নাজিম উদ্দিন জানান, ‘তাদের এই পাথর লুটে গত ২ মাস ধরে সরকারের সব দপ্তরে অভিযোগ দেয়ার পরও আজ পর্যন্ত সরকারের কোনো বিভাগ এই অভিযোগসমূহকে গুরুত্ব দেয়নি।’ তাই ইউনিয়নবাসী তাদের ন্যায্য প্রতিকার পেতে উচ্চ আদালতে যাওয়ার পরিকল্পনা করছেন বলে জানান তিনি।

পিয়াস ট্রেডার্সের স্বত্ত্বাধিকারী ছাত্রদল নেতা কামরুল হাসান বলেন, ‘আমার নিলামের পাথর এখনো লোভাছড়ায় রয়েছে। তাই সেখান থেকে আমার লোকজন পাথর পরিবহন করছে। মেয়াদ শেষে সময় বাড়ানোর জন্য আমরা হাইকোর্টে মামলা করেছি। এখনও আদালতের আদেশ বিএমডিতে যায়নি।’

কানাইঘাট থানার ওসি মো. আব্দুল আউয়াল বলেন, তাদের পুলিশের পাথর কোয়ারিতে কোনোভাবে সম্পৃক্ত নয়। একটি টহল টিম কাজ করে। তিনি আরও বলেন, উপজেলা প্রশাসন অভিযানের জন্য যখনই পুলিশ চায় তখন তারা পুলিশ দিয়ে সহায়তা করে থাকেন।

সাদা পাথর লুটপাট : তদন্ত কমিটি প্রতিবেদন দাখিলে ব্যর্থ: সময় চেয়েছে তিন দিন

সিলেটের ভোলাগঞ্জে সাদা পাথর লুটপাটের ঘটনায় গঠিত জেলা প্রশাসনের তদন্ত কমিটি নির্ধারিত সময়ের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দিতে ব্যর্থ হয়েছে। তিন কর্মদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন দাখিল করার কথা থাকলেও রোববার,(১৭ আগস্ট ২০২৫) সময়সীমা শেষ হলেও কোনো প্রতিবেদন জমা দেয়নি। এ অবস্থায় তদন্তের স্বার্থে আবারও তিন দিনের সময় বৃদ্ধির আবেদন জানিয়েছে কমিটি।

তদন্ত কমিটির প্রধান অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (উন্নয়ন ও মানবসম্পদ ব্যবস্থাপনা) পদ্মাসেন সিংহ বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, ‘তদন্ত এখনও শেষ হয়নি। বিস্তারিত যাচাইয়ের স্বার্থে আরও কিছুটা সময় প্রয়োজন। তাই জেলা প্রশাসকের কাছে তিন দিনের সময় বৃদ্ধির আবেদন করা হয়েছে।’

গত বছরের ৫ আগস্ট থেকে ভোলাগঞ্জের সাদা পাথর এবং সংলগ্ন রেলওয়ে বাঙ্কারে ভয়াবহ লুটপাট চলে আসছে। প্রথমে রাতের আঁধারে হলেও পরে দিনের আলোতেও প্রকাশ্যে এই লুট চলে।

এক সময় দৃষ্টিনন্দন পর্যটন এলাকা এখন প্রায় পাথরশূন্য। আর রেলওয়ে বাঙ্কার ধসে পড়েছে খানাখন্দে। দেশজুড়ে এই ঘটনায় সমালোচনার ঝড় ওঠার পর জেলা প্রশাসক শের মাহবুব মুরাদ ১২ আগস্ট তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেন। কমিটির প্রধান করা হয় পদ্মাসেন সিংহকে। আর সদস্য হিসেবে রাখা হয়- কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আজিজুন্নাহার ও পরিবেশ অধিদপ্তরের ভারপ্রাপ্ত সহকারী পরিচালক আফজারুল ইসলাম।

এ তদন্ত কমিটি নিয়েই বিতর্ক দেখা দেয়। অভিযোগ রয়েছে, যাদের দায়িত্বকালে লুটপাট বেড়েছে, তারাই এখন কমিটির সদস্য।

ইউএনও আজিজুন্নাহার এ বছরের জানুয়ারিতে কোম্পানীগঞ্জে যোগদান করেন। স্থানীয়দের অভিযোগ, তার দায়িত্বকালে লোকদেখানো অভিযান আরও শিথিল হয়ে গেছে এবং সেই সুযোগে লুটপাটকারীরা আরও বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। এছাড়া প্রতিদিন পাথর কোয়ারি থেকে পরিবেশ অধিদপ্তরের নামে টাকা উত্তোলন করা হয়।

স্থানীয়রা জানান, এই টাকা উত্তোলনের দায়িত্বে থাকা তাজুল ইসলাম মোল্লাকে সবাই ‘পরিবেশ মোল্লা’ নামে চেনে। অথচ পরিবেশ অধিদপ্তরের একজন কর্মকর্তাকেও রাখা হয়েছে কমিটিতে?

পরিবেশবাদী সংগঠনগুলো বলছে, যাদের গাফিলতিতে রাষ্ট্রীয় সম্পদ লুট হয়েছে, তাদের দিয়ে তদন্ত করলে সত্য উদ্ঘাটন সম্ভব নয়।

পরিবেশ আইনবিদ সমিতি বেলার সমন্বয়কারী অ্যাডভোকেট শাহ শাহেদা আক্তার বলেন, ‘যার ব্যর্থতায় লুট হলো, তাকেই আবার তদন্তে বসানো জনগণের সঙ্গে তামাশা ছাড়া কিছু নয়।’

বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) সিলেটের সাধারণ সম্পাদক কাশমীর রেজা বলেন, ‘প্রশাসনের নাকের ডগায় লুটপাট হয়েছে। যোগসাজশ ছাড়া দিনের পর দিন এমন লুটপাট সম্ভব নয়।’

জেলা প্রশাসন জানাচ্ছে, ইউএনও এবং পরিবেশ অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের রাখা হয়েছে সাচিবিক দায়িত্ব পালনের জন্য।

জেলা প্রশাসক শের মাহবুব মুরাদ গণমাধ্যমকে বলেন, ‘তাদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য-উপাত্ত আছে, যা তদন্তে কাজে দেবে। যদি কারও গাফিলতি প্রমাণিত হয়, অবশ্যই ব্যবস্থা নেয়া হবে।’

কমিটির প্রধান পদ্মাসেন সিংহও ইউএনওর উপস্থিতিকে সমর্থন করে বলেন, ‘তিনি অনেক অভিযান পরিচালনা করেছেন, সাজা দিয়েছেন। তার উপস্থিতি তদন্তে কাজে দেবে।’

তবে সাধারণ মানুষ ও পরিবেশবাদী সংগঠনগুলো মনে করছে, যাদের ব্যর্থতার কারণে কোটি কোটি টাকার রাষ্ট্রীয় সম্পদ লুট হয়েছে, তাদের দিয়ে তদন্ত করানো হলে প্রকৃত সত্য বের হবে কিনা তা নিয়ে সংশয় রয়েছে।

স্থানীয়দের ভাষায়, ‘ব্যর্থদের দিয়ে তদন্ত করানো মানেই সত্যকে চাপা দেয়ার চেষ্টা।’

back to top