alt

জাতীয়

বসুন্ধরা চেয়ারম্যান ও তার স্ত্রীর সম্পদের হিসাব চেয়েছে দুদক

‘চেক প্রতারণা’: চেয়ারম্যান ও এমডিকে উকিল নোটিশ

সংবাদ অনলাইন রিপোর্ট : রোববার, ১৭ আগস্ট ২০২৫

ছবি: ইন্টারনেট থেকে সংগৃহীত

‘জোর করে জমি দখল, অর্থ আত্মসাৎ ও অর্থ পাচারের’ অভিযোগে দুদকের অনুসন্ধান চলছে বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যান আহমেদ আকবর সোবহান এবং তার স্ত্রী আফরোজা বেগমের বিরুদ্ধে। এবার তাদের সম্পদের হিসাব চেয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন-দুদক। রোববার,(১৭ আগস্ট ২০২৫) দুদকের মহাপরিচালক (প্রতিরোধ) মো. আক্তার হোসেন সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান।

তিনি বলেন, ‘তাদের বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশন আইন, ২০০৪ এর ২৬ (১) ধারা অনুযায়ী সম্পদ বিবরণী দাখিলের নোটিশ জারির করা হয়েছে।’ দুদক বলছে, আহমেদ আকবর সোবহানের দেশে ৬৭ কোটি ৫০ লাখ ৬৮ হাজার ৭৩৫ টাকা মূল্যের স্থাবর সম্পদ এবং ১৮৪ কোটি ৭১ লাখ ২১ হাজার ৪৮৩ টাকা মূল্যের অস্থাবর সম্পদ রয়েছে। তিনি মোট ২৫২ কোটি ২১ লাখ ৯০ হাজার ২১৮ টাকা মূল্যের সম্পদ অর্জন করেছেন।

তিনি ও তার স্ত্রী যৌথভাবে সেন্ট কিটস অ্যান্ড নেভিসে ২ লাখ ৫০ হাজার ডলার ‘পাচার করে’ সে দেশের নাগরিকত্ব নিয়েছেন। সুইজারল্যান্ডের লুগানো, ব্রিটিশ ভার্জিন আইল্যান্ড ও আইল অফ ম্যানে নিবন্ধিত কোম্পানির ব্যাংক হিসাব খুলে বিপুল পরিমাণ অর্থ পাচার করেছেন।

আহমেদ আকবর সোবহানের স্ত্রী আফরোজা বেগম দেশে ১১৭ কোটি ৯৫ লাখ ৩৪ হাজার ৫৭১ টাকা মূল্যের স্থাবর সম্পদ এবং ৩৩৫ কোটি ১৬ লাখ ৬৬ হাজার ২৯৩ টাকা মূল্যের অস্থাবর সম্পদ রয়েছে। তার মোট সম্পদের মূল্য ৪৫৩ কোটি ১২ লাখ ৮৬ হাজার ৪০০ টাকা। স্বামী সঙ্গে তিনিও সেন্ট কিটস অ্যান্ড নেভিসে ২ লাখ পঞ্চাশ ৫০ হাজার ডলার ‘পাচার করে’ সেন্ট কিটস অ্যান্ড নেভিসের নাগরিকত্ব অর্জন করেছেন।

দুদকের অভিযোগ, আহমেদ আকবর সোবহান ও তার স্ত্রী নিজেদের নামে বা তাদের পক্ষে অন্য কোনো ব্যক্তির নামে দেশে ও দেশের বাইরে স্থাবর ও অস্থাবর সম্পত্তির দখলে রয়েছেন বা মালিকানা অর্জন করেছেন, যা ‘অসাধু উপায়ে’ অর্জিত হয়েছে। এসব সম্পদ তাদের জ্ঞাত আয়ের উৎসের সঙ্গে ‘অসঙ্গতিপূর্ণ’ হওয়ায় যথাযথভাবে বাংলাদেশ ব্যাংকের ‘অনুমোদন গ্রহণ না করে নিয়মবহির্ভূতভাবে’ তারা দেশের অর্থ সেন্ট কিটস অ্যান্ড নেভিসে পাচার করেছেন। এছাড়া সুইজারল্যান্ডের লুগানো, ব্রিটিশ ভার্জিন আইল্যান্ড ও আইল অব ম্যানে নিবন্ধিত কোম্পানির ব্যাংক হিসাব খুলে বিপুল পরিমাণ ‘অর্থ পাচার’ করেছেন।

বসুন্ধরা চেয়ারম্যান এবং তার স্ত্রী-সন্তানদের বিরুদ্ধে ‘সরকারের রাজস্ব ফাঁকি, ভূমি জবরদখল, ঋণের অর্থ আত্মসাৎ, অর্থ স্থানান্তর ও হস্তান্তর, অর্থ পাচারের’ অভিযোগের অনুসন্ধান করছে দুদক। এর অংশ হিসেবে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তাদের দুদকে তলবও করা হয়েছিল।

ছাত্র-জনতার আন্দোলনে ২০২৪ সালের ৫ আগস্টে ক্ষমতার পটপরিবর্তনের পর সাবেক আওয়ামী লীগ সরকারের সুবিধাভোগী বড় বড় ব্যবসায়ীদের দুর্নীতি-অনিয়মের বিষয়েও অনুসন্ধানে নামে রাষ্ট্রের বিভিন্ন সংস্থা।

জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) সেন্ট্রাল ইন্টেলিজেন্স সেল (সিআইসি) বসুন্ধরাসহ পাঁচ বড় কোম্পানির মালিকদের বিষয়ে অনুসন্ধান শুরু করে এবং তাদের ও তাদের পরিবারের সদস্যদের লেনদেনের তথ্য চেয়ে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে চিঠি পাঠায়।

এরপর অক্টোবরে আহমেদ আকবার সোবহান ও তার চার ছেলেসহ আটজনের ব্যাংক হিসাব অবরুদ্ধ করার আদেশ দেয় বাংলাদেশ ফিন্যান্সিয়াল ইন্টিলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ)।

ওই মাসেই দুদকের আবেদনে আহমেদ আকবর সোবহানসহ পরিবারের আট সদস্যের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা দেয় আদালত। এছাড়া সিআইডি দেড় লাখ কোটি টাকা মূল্যের জমি দখল এবং অর্থ পাচারের অভিযোগে আহমেদ আকবর সোবহান ও তার ছেলে সায়েম সোবহান আনভীরসহ স্বার্থ সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে অনুসন্ধান করার সিদ্ধান্ত জানায় গত সেপ্টেম্বরে।

এ বছর এপ্রিলে বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যান ও তার পরিবারের সদস্যদের নামে থাকা ব্যাংক হিসাব ও শেয়ার অবরুদ্ধের আদেশ দিয়েছে আদালত। জুনে আহমেদ আকবর সোবহানের দুই ছেলে গ্রুপের ভাইস চেয়ারম্যান সাফিয়াত সোবহান (সানভীর) এবং কো-চেয়ারম্যান সাদাত সোবহানের ‘যুক্তরাজ্যে পাচার করা সম্পদের’ তথ্য জানিয়ে সে দেশে চিঠি পাঠানোর কথা বলেছেন দুদক চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আবদুল মোমেন।

চেয়ারম্যান ও এমডিকে উকিল নোটিশ

চাকরিকালীন আর্থিক সুবিধা না পেয়ে কালের কণ্ঠ কর্তৃপক্ষের কাছে উকিল নোটিশ পাঠিয়েছেন সংবাদমাধ্যমটির সাবেক ১৩ কর্মী। কালের কণ্ঠের স্বত্ত্বাধিকারী ইস্ট ওয়েস্ট মিডিয়া গ্রুপের চেয়ারম্যান আহমেদ আকবর সোবহান, ব্যবস্থাপনা পরিচালক সায়েম সোবহান আনভীর ও কালের কণ্ঠের প্রকাশকসহ ৬ জনের কাছে রোববার এ নোটিশ পাঠানো হয়। নোটিশ দাতারা হলেন- মো. শাহ আলম, মো. জাহেদুল আলম, কাকলী প্রধান, দেওয়ান আতিকুর রহমান, ফারজানা রশিদ, আবু সালেহ মো. শফিক, কে এম লতিফুল হক, আসাদুর রহমান, মো. রোকনুজ্জামান, শামসুন নাহার, মো. লতিফুল বাসার (লিমন বাসার), মাহাবুর রহমান মীর ও হানযালা হান।

নোটিশ দাতাদের অভিযোগ, কালের কণ্ঠ থেকে ২০২৩ সালের অক্টোবরে অর্ধশত সাংবাদিককে কোনো নোটিশ না দিয়েই ছাঁটাই করা হয়। এছাড়া অনেকে বিভিন্ন সময় অব্যাহতি নেন। সব মিলিয়ে অর্ধশতাধিক কর্মীর সার্ভিস বেনিফিটের (গ্রাচুয়িটিসহ) টাকা এখনও পরিশোধ করা হয়নি। এ নিয়ে কালের কণ্ঠের সম্পাদক, প্রকাশক ও বসুন্ধরা গ্রুপের শীর্ষ কর্মকর্তাদের সঙ্গে একাধিকবার দেখা করে ফল পাওয়া যায়নি বলেও অভিযোগ তাদের।

অভিযোগে বলা হয়, ভুক্তভোগীদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে একপর্যায়ে বসুন্ধরা কর্তৃপক্ষ নিজেদের মতো হিসাব করে ২০২৪ সালে ভাগ করে তিন থেকে ১০টি পর্যন্ত চেক দেয়। তারা একেক মাসে একেকটি চেক ব্যাংকে জমা দিতে বলে। সে অনুযায়ী জমা দিলেও জানুয়ারি, ফেব্রুয়ারি, মার্চ, এপ্রিল, মে, জুন, জুলাই ও আগস্ট মাসে চেক ডিসঅনার হয়।

১৩ সাংবাদিকের অভিযোগ, প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে স্মারকলিপি দিয়ে, প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইংয়ে গিয়েও কোনো সমাধান মেলেনি। বাংলাদেশ প্রেস কাউন্সিলে গেলে চেয়ারম্যান বিচারপতি এ কে এম আব্দুল হাকিম লিখিত অভিযোগ গ্রহণ করেননি। তারা বলেন, এরপর কয়েক সাংবাদিক নিম্ন আদালতে মামলা করার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। তখন বসুন্ধরা কর্তৃপক্ষ ২০ সাংবাদিকের পাওনা পরিশোধ করে। বাকিদের আশ্বস্ত করে, দ্রুত টাকা পরিশোধ করা হবে। কিন্তু এরই মধ্যে সবার চেকের মেয়াদ শেষ হয়ে যায়। মেয়াদ বাড়ানোর কথা বলে কালের কণ্ঠের কয়েকজন সাংবাদিকের কাছ থেকে চেক নিয়েছে। এরপর সেই চেকগুলো ফেরত দেয়া হয়নি, মেয়াদও বাড়ানো হয়নি।

নোটিশ দাতাদের একজন হানযালা হান বলেন, কয়েকজন সাংবাদিক নিম্ন আদালতে মামলা করেছেন। দুজনের মামলায় গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি হয়। এর মধ্যে কাজী মো. মোতাহার হোসেন বনাম সায়েম সোবহান আনভীর মামলায় ২০২৫ সালের ১২ ফেব্রুয়ারি গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি হয়েছে। কিন্তু ওই গ্রেপ্তারি পরোয়ানার বিষয়ে কোনো অগ্রগতি নেই বলে হানযালার অভিযোগ। সাত দিনের মধ্যে কোনো ব্যবস্থা না নিলে টাকা আদায়ের জন্য তারা হাইকোর্টে রিট আবেদন করবেন বলে নোটিশে জানানো হয়। এ বিষয়ে ইস্ট ওয়েস্ট মিডিয়া গ্রুপের এক কর্মকর্তা বলেছেন, তারা এ ধরনের কোনো উকিল নোটিশ এখনও পাননি। নোটিশ হাতে পেলে নিজেদের বক্তব্য জানাবেন।

ছবি

অর্থ পাচারকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ প্রধান উপদেষ্টার

রাষ্ট্রপতির ছবি অপসারণ নিয়ে অবগত নন পরিবেশ উপদেষ্টা

ছবি

নদী ভাঙনে বিলীনের পথে আশ্রয়ণ: ঘর আছে, থাকার পরিবেশ নেই

ছবি

দলীয় ‘লেজুড়বৃত্তি’ নয়, পাসপোর্ট কর্মকর্তাদেরকে উপদেষ্টা

ছবি

দীর্ঘ সাড়ে পাঁচ মাস পর হিলি স্থলবন্দর দিয়ে ভারত থেকে পেঁয়াজ আমদানি শুরু

ছবি

পরিবেশ উপদেষ্টার আপত্তি সত্ত্বেও রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয় প্রকল্প পাস

ছবি

বিদেশে বাংলাদেশি কূটনৈতিক মিশন থেকে রাষ্ট্রপতির ছবি সরানোর নির্দেশ

ছবি

ভোলাগঞ্জের পর এবার লোভাছড়ায় পাথর লুট

ছবি

সংবিধানের ওপরে ‘জুলাই সনদ’, তোলা যাবে না প্রশ্ন

ছবি

‘পাচারের’ ৪০ হাজার কোটি টাকার ‘সম্পদের’ সন্ধান, প্রধান উপদেষ্টাকে তথ্য দিলো এনবিআর

ছবি

ভূপৃষ্ঠের পানি শোধন প্রকল্পের ব্যয় বাড়ল ৩৫ শতাংশ

সিলেটে পাথর লুট: প্রশাসনের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুললেন রিজওয়ানা হাসান

বিদেশে বাংলাদেশের মিশন থেকে রাষ্ট্রপতি সাহাবুদ্দিনের ছবি সরানোর নির্দেশ

ছবি

শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে ট্রাইব্যুনালে বিচার চলছে

ছবি

সেই রিকশাচালকের জামিন, মুক্তিতে বাধা নেই

ছবি

বিদেশের বাংলাদেশি সব কূটনৈতিক মিশন থেকে রাষ্ট্রপতির ছবি সরানোর নির্দেশ

ছবি

ফারুকীর চিকিৎসার বিষয়ে বসছে মেডিকেল বোর্ড

ছবি

জামিন চেয়ে সাবেক প্রধান বিচারপতি এবিএম খায়রুল হকের আবেদনের শুনানি পিছিয়েছে

সাগরে ফের লঘুচাপের সম্ভাবনা, বাড়তে পারে বৃষ্টি

রোহিঙ্গা ইস্যুতে বিদেশি কূটনীতিকদের ব্রিফ করলেন জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা

ছবি

বনানীর সিসা বারে রাব্বি হত্যার পেছনে আধিপত্য বিস্তারের দ্বন্দ্ব : র‌্যাব

ছবি

আসন সমঝোতার কথা বলে এনসিপিকে কেনা যাবে না: হাসনাত

ছবি

সাদা পাথর লুট: চিহ্নিতদের বাদ দিয়ে অজ্ঞাত ২০০০ ব্যক্তির বিরুদ্ধে মামলা, নানা প্রশ্ন

ছবি

নির্বাচন নিয়ে শঙ্কা প্রকাশকারীরা গণতন্ত্রের শত্রু: সালাহউদ্দিন

ছবি

‘আপনারা নিশ্চিন্তে এ দেশে বসবাস করবেন’, জন্মাষ্টমীর অনুষ্ঠানে সেনাপ্রধান

ছবি

সীমান্তে মাইন বিস্ফোরণে আহত বন্যহাতি, চিকিৎসা করতে গিয়ে তিনজন হাসপাতালে

ছবি

বিষের ফাঁদে সুন্দরবন, দাদনে জিম্মি জেলে

ছবি

এয়ার টিকেটের উচ্চমূল্য, নিয়ন্ত্রণহীন হয়ে পড়ছে খাত

ছবি

প্রধান উপদেষ্টা যেই মাসে বলেছেন সেই মাসেই নির্বাচন হবে: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা

ছবি

মুচি সম্প্রদায়ের দু’জনকে পিটিয়ে হত্যা: এখনও গ্রেপ্তার হয়নি শনাক্ত ৫ জন

ছবি

জুলাই সনদ বাস্তবায়নে ৮ দফা অঙ্গীকারনামা, খসড়া রাজনৈতিক দলগুলোকে পাঠিয়েছে ঐকমত্য কমিশন

ছবি

‘অপ্রয়োজনীয়’ স্বাস্থ্য পরীক্ষা বন্ধের আহ্বান আসিফ নজরুলের

ছবি

চট্টগ্রাম থেকে ঢাকায় পাইপলাইনে জ্বালানি সরবরাহ শুরু

ছবি

শনিবার থেকে চট্টগ্রাম–ঢাকা পাইপলাইনে জ্বালানি তেল সরবরাহ শুরু

ছবি

প্রেস সচিবের নির্দেশনার প্রসঙ্গ টেনে ভুল স্বীকার করলেন ওসি

ছবি

১৫ আগস্ট: শেখ মুজিব ও তার পরিবার হত্যার ৫০ বছর

tab

জাতীয়

বসুন্ধরা চেয়ারম্যান ও তার স্ত্রীর সম্পদের হিসাব চেয়েছে দুদক

‘চেক প্রতারণা’: চেয়ারম্যান ও এমডিকে উকিল নোটিশ

সংবাদ অনলাইন রিপোর্ট

ছবি: ইন্টারনেট থেকে সংগৃহীত

রোববার, ১৭ আগস্ট ২০২৫

‘জোর করে জমি দখল, অর্থ আত্মসাৎ ও অর্থ পাচারের’ অভিযোগে দুদকের অনুসন্ধান চলছে বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যান আহমেদ আকবর সোবহান এবং তার স্ত্রী আফরোজা বেগমের বিরুদ্ধে। এবার তাদের সম্পদের হিসাব চেয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন-দুদক। রোববার,(১৭ আগস্ট ২০২৫) দুদকের মহাপরিচালক (প্রতিরোধ) মো. আক্তার হোসেন সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান।

তিনি বলেন, ‘তাদের বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশন আইন, ২০০৪ এর ২৬ (১) ধারা অনুযায়ী সম্পদ বিবরণী দাখিলের নোটিশ জারির করা হয়েছে।’ দুদক বলছে, আহমেদ আকবর সোবহানের দেশে ৬৭ কোটি ৫০ লাখ ৬৮ হাজার ৭৩৫ টাকা মূল্যের স্থাবর সম্পদ এবং ১৮৪ কোটি ৭১ লাখ ২১ হাজার ৪৮৩ টাকা মূল্যের অস্থাবর সম্পদ রয়েছে। তিনি মোট ২৫২ কোটি ২১ লাখ ৯০ হাজার ২১৮ টাকা মূল্যের সম্পদ অর্জন করেছেন।

তিনি ও তার স্ত্রী যৌথভাবে সেন্ট কিটস অ্যান্ড নেভিসে ২ লাখ ৫০ হাজার ডলার ‘পাচার করে’ সে দেশের নাগরিকত্ব নিয়েছেন। সুইজারল্যান্ডের লুগানো, ব্রিটিশ ভার্জিন আইল্যান্ড ও আইল অফ ম্যানে নিবন্ধিত কোম্পানির ব্যাংক হিসাব খুলে বিপুল পরিমাণ অর্থ পাচার করেছেন।

আহমেদ আকবর সোবহানের স্ত্রী আফরোজা বেগম দেশে ১১৭ কোটি ৯৫ লাখ ৩৪ হাজার ৫৭১ টাকা মূল্যের স্থাবর সম্পদ এবং ৩৩৫ কোটি ১৬ লাখ ৬৬ হাজার ২৯৩ টাকা মূল্যের অস্থাবর সম্পদ রয়েছে। তার মোট সম্পদের মূল্য ৪৫৩ কোটি ১২ লাখ ৮৬ হাজার ৪০০ টাকা। স্বামী সঙ্গে তিনিও সেন্ট কিটস অ্যান্ড নেভিসে ২ লাখ পঞ্চাশ ৫০ হাজার ডলার ‘পাচার করে’ সেন্ট কিটস অ্যান্ড নেভিসের নাগরিকত্ব অর্জন করেছেন।

দুদকের অভিযোগ, আহমেদ আকবর সোবহান ও তার স্ত্রী নিজেদের নামে বা তাদের পক্ষে অন্য কোনো ব্যক্তির নামে দেশে ও দেশের বাইরে স্থাবর ও অস্থাবর সম্পত্তির দখলে রয়েছেন বা মালিকানা অর্জন করেছেন, যা ‘অসাধু উপায়ে’ অর্জিত হয়েছে। এসব সম্পদ তাদের জ্ঞাত আয়ের উৎসের সঙ্গে ‘অসঙ্গতিপূর্ণ’ হওয়ায় যথাযথভাবে বাংলাদেশ ব্যাংকের ‘অনুমোদন গ্রহণ না করে নিয়মবহির্ভূতভাবে’ তারা দেশের অর্থ সেন্ট কিটস অ্যান্ড নেভিসে পাচার করেছেন। এছাড়া সুইজারল্যান্ডের লুগানো, ব্রিটিশ ভার্জিন আইল্যান্ড ও আইল অব ম্যানে নিবন্ধিত কোম্পানির ব্যাংক হিসাব খুলে বিপুল পরিমাণ ‘অর্থ পাচার’ করেছেন।

বসুন্ধরা চেয়ারম্যান এবং তার স্ত্রী-সন্তানদের বিরুদ্ধে ‘সরকারের রাজস্ব ফাঁকি, ভূমি জবরদখল, ঋণের অর্থ আত্মসাৎ, অর্থ স্থানান্তর ও হস্তান্তর, অর্থ পাচারের’ অভিযোগের অনুসন্ধান করছে দুদক। এর অংশ হিসেবে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তাদের দুদকে তলবও করা হয়েছিল।

ছাত্র-জনতার আন্দোলনে ২০২৪ সালের ৫ আগস্টে ক্ষমতার পটপরিবর্তনের পর সাবেক আওয়ামী লীগ সরকারের সুবিধাভোগী বড় বড় ব্যবসায়ীদের দুর্নীতি-অনিয়মের বিষয়েও অনুসন্ধানে নামে রাষ্ট্রের বিভিন্ন সংস্থা।

জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) সেন্ট্রাল ইন্টেলিজেন্স সেল (সিআইসি) বসুন্ধরাসহ পাঁচ বড় কোম্পানির মালিকদের বিষয়ে অনুসন্ধান শুরু করে এবং তাদের ও তাদের পরিবারের সদস্যদের লেনদেনের তথ্য চেয়ে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে চিঠি পাঠায়।

এরপর অক্টোবরে আহমেদ আকবার সোবহান ও তার চার ছেলেসহ আটজনের ব্যাংক হিসাব অবরুদ্ধ করার আদেশ দেয় বাংলাদেশ ফিন্যান্সিয়াল ইন্টিলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ)।

ওই মাসেই দুদকের আবেদনে আহমেদ আকবর সোবহানসহ পরিবারের আট সদস্যের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা দেয় আদালত। এছাড়া সিআইডি দেড় লাখ কোটি টাকা মূল্যের জমি দখল এবং অর্থ পাচারের অভিযোগে আহমেদ আকবর সোবহান ও তার ছেলে সায়েম সোবহান আনভীরসহ স্বার্থ সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে অনুসন্ধান করার সিদ্ধান্ত জানায় গত সেপ্টেম্বরে।

এ বছর এপ্রিলে বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যান ও তার পরিবারের সদস্যদের নামে থাকা ব্যাংক হিসাব ও শেয়ার অবরুদ্ধের আদেশ দিয়েছে আদালত। জুনে আহমেদ আকবর সোবহানের দুই ছেলে গ্রুপের ভাইস চেয়ারম্যান সাফিয়াত সোবহান (সানভীর) এবং কো-চেয়ারম্যান সাদাত সোবহানের ‘যুক্তরাজ্যে পাচার করা সম্পদের’ তথ্য জানিয়ে সে দেশে চিঠি পাঠানোর কথা বলেছেন দুদক চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আবদুল মোমেন।

চেয়ারম্যান ও এমডিকে উকিল নোটিশ

চাকরিকালীন আর্থিক সুবিধা না পেয়ে কালের কণ্ঠ কর্তৃপক্ষের কাছে উকিল নোটিশ পাঠিয়েছেন সংবাদমাধ্যমটির সাবেক ১৩ কর্মী। কালের কণ্ঠের স্বত্ত্বাধিকারী ইস্ট ওয়েস্ট মিডিয়া গ্রুপের চেয়ারম্যান আহমেদ আকবর সোবহান, ব্যবস্থাপনা পরিচালক সায়েম সোবহান আনভীর ও কালের কণ্ঠের প্রকাশকসহ ৬ জনের কাছে রোববার এ নোটিশ পাঠানো হয়। নোটিশ দাতারা হলেন- মো. শাহ আলম, মো. জাহেদুল আলম, কাকলী প্রধান, দেওয়ান আতিকুর রহমান, ফারজানা রশিদ, আবু সালেহ মো. শফিক, কে এম লতিফুল হক, আসাদুর রহমান, মো. রোকনুজ্জামান, শামসুন নাহার, মো. লতিফুল বাসার (লিমন বাসার), মাহাবুর রহমান মীর ও হানযালা হান।

নোটিশ দাতাদের অভিযোগ, কালের কণ্ঠ থেকে ২০২৩ সালের অক্টোবরে অর্ধশত সাংবাদিককে কোনো নোটিশ না দিয়েই ছাঁটাই করা হয়। এছাড়া অনেকে বিভিন্ন সময় অব্যাহতি নেন। সব মিলিয়ে অর্ধশতাধিক কর্মীর সার্ভিস বেনিফিটের (গ্রাচুয়িটিসহ) টাকা এখনও পরিশোধ করা হয়নি। এ নিয়ে কালের কণ্ঠের সম্পাদক, প্রকাশক ও বসুন্ধরা গ্রুপের শীর্ষ কর্মকর্তাদের সঙ্গে একাধিকবার দেখা করে ফল পাওয়া যায়নি বলেও অভিযোগ তাদের।

অভিযোগে বলা হয়, ভুক্তভোগীদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে একপর্যায়ে বসুন্ধরা কর্তৃপক্ষ নিজেদের মতো হিসাব করে ২০২৪ সালে ভাগ করে তিন থেকে ১০টি পর্যন্ত চেক দেয়। তারা একেক মাসে একেকটি চেক ব্যাংকে জমা দিতে বলে। সে অনুযায়ী জমা দিলেও জানুয়ারি, ফেব্রুয়ারি, মার্চ, এপ্রিল, মে, জুন, জুলাই ও আগস্ট মাসে চেক ডিসঅনার হয়।

১৩ সাংবাদিকের অভিযোগ, প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে স্মারকলিপি দিয়ে, প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইংয়ে গিয়েও কোনো সমাধান মেলেনি। বাংলাদেশ প্রেস কাউন্সিলে গেলে চেয়ারম্যান বিচারপতি এ কে এম আব্দুল হাকিম লিখিত অভিযোগ গ্রহণ করেননি। তারা বলেন, এরপর কয়েক সাংবাদিক নিম্ন আদালতে মামলা করার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। তখন বসুন্ধরা কর্তৃপক্ষ ২০ সাংবাদিকের পাওনা পরিশোধ করে। বাকিদের আশ্বস্ত করে, দ্রুত টাকা পরিশোধ করা হবে। কিন্তু এরই মধ্যে সবার চেকের মেয়াদ শেষ হয়ে যায়। মেয়াদ বাড়ানোর কথা বলে কালের কণ্ঠের কয়েকজন সাংবাদিকের কাছ থেকে চেক নিয়েছে। এরপর সেই চেকগুলো ফেরত দেয়া হয়নি, মেয়াদও বাড়ানো হয়নি।

নোটিশ দাতাদের একজন হানযালা হান বলেন, কয়েকজন সাংবাদিক নিম্ন আদালতে মামলা করেছেন। দুজনের মামলায় গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি হয়। এর মধ্যে কাজী মো. মোতাহার হোসেন বনাম সায়েম সোবহান আনভীর মামলায় ২০২৫ সালের ১২ ফেব্রুয়ারি গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি হয়েছে। কিন্তু ওই গ্রেপ্তারি পরোয়ানার বিষয়ে কোনো অগ্রগতি নেই বলে হানযালার অভিযোগ। সাত দিনের মধ্যে কোনো ব্যবস্থা না নিলে টাকা আদায়ের জন্য তারা হাইকোর্টে রিট আবেদন করবেন বলে নোটিশে জানানো হয়। এ বিষয়ে ইস্ট ওয়েস্ট মিডিয়া গ্রুপের এক কর্মকর্তা বলেছেন, তারা এ ধরনের কোনো উকিল নোটিশ এখনও পাননি। নোটিশ হাতে পেলে নিজেদের বক্তব্য জানাবেন।

back to top