alt

জাতীয়

নদী ভাঙনে বিলীনের পথে আশ্রয়ণ: ঘর আছে, থাকার পরিবেশ নেই

প্রতিনিধি, কুয়াকাটা : রোববার, ১৭ আগস্ট ২০২৫

নদী ভাঙন: কুয়াকাটায় আশ্রয়ণ প্রকল্পের ৭১ পরিবারের আশ্রয় হারানোর শঙ্কা -সংবাদ

নদীর ভাঙনে কাঁপছে সরকারি আশ্রয়ন প্রকল্প। গৃহহীনদের জন্য নতুন জীবনের স্বপ্ন দেখাতে নির্মিত ঘরবাড়ি আজ নদীতে বিলীন হওয়ার শঙ্কায়। তীব্র নদী ভাঙনে অনিশ্চিত ভবিষ্যৎ। স্বাস্থ্যসেবা, শিক্ষা কিংবা কর্মসংস্থানের কোনো ব্যবস্থা নেই। ফলে ঘর পেলেও পাচ্ছে না বসবাসের পরিবেশ। দুর্ভোগে দিন কাটাচ্ছেন ৭১টি পরিবার। যাদের স্বপ্ন ভেঙে যাচ্ছে নদীর ভাঙনের সঙ্গে।

এ প্রকল্প যেন আশ্রয়ের বদলে দুঃস্বপ্ন হয়ে উঠছে। এটি পটুয়াখালীর মহিপুর থানার লতাচাপলী ইউনিয়নের পশ্চিম খাজুরা গোড়া খাল আশ্রয়ন প্রকল্প।

এ আশ্রয়নের বাসিন্দা লাইলী বেগম বলেন, ‘আমরা যেই ঘরে বসবাস করছি সেই ঘর মানুষ তো দূরের কথা গরুর মহিষও থাকার উপযোগী না।’

সমুদ্রের সঙ্গে লড়াই করে জেলেরা জীবন জীবিকা নির্বাহ করে দেশের সুশীল অর্থনীতিতে ভূমিকা রাখলেও তাদের অনেকেরই বসবাসের জায়গা নেই। নেই এক খণ্ড জমি। যেখানে তারা স্ত্রী সন্তান নিয়ে বসবাস করবে। মারা গেলে মাটি দেয়ার মতো জায়গা টুকুও নেই। ঝড় বন্যা মাথায় নিয়ে সমুদ্রে মৎস্য শিকার করে জীবিকা নির্বাহ করা মানুষগুলো অসহায় হয়ে পড়েছে।

নুর ইসলাম নামের এক ব্যক্তি বলেন, আমরা এখানে যারা বসবাস করছি সবাই জেলে। অনিশ্চিত জীবন নিয়ে এই আশ্রয়ন প্রকল্পে বসবাস করছি। প্রতিটি ঘরের টিন ক্ষয়ে পরছে। ঘরের দরজা জানালা, বেড়া নেই। ঘরে বসেই আমরা আকাশ দেখি। সামান্য বৃষ্টিতেই ঘরের ভিতরে পানি পরছে। কোনো মতে পলিথিন ও তেরপাল দিয়ে বসবাস করছেন তারা। এ ঘরে কোনো মানুষ থাকতে পারে না। বাধ্য হয়ে আমরা বসবাস করছি।

জায়গা কিংবা ঘরবাড়ি নেই এমন জেলেদের কথা চিন্তা করে সরকার ২০০৫ সালে খাপড়াভাঙ্গা নদীর কোল ঘেঁষে ৮০ পরিবারের জন্য গড়ে তোলেন একটি আশ্রয়ন প্রকল্প। যেখানে জেলেদের সুখে শান্তিতে বসবাস করার কথা। কিন্তু বসবাসের দুই বছরের মাথায় ভয়াল সিডর তাদের সেই সুখের নীড়ে হানা দেয়। ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয় আশ্রয়ন প্রকল্পটি। এরপর দীর্ঘ বছর চলে গেলেও মেরামত বা সংস্কার হয়নি। এরই মধ্যে নতুন করে দেখা দিয়েছে আরেক বিপদ। খাপড়াভাঙ্গা নদীটি জেলেদের প্রোতাশ্রয় হওয়ায় দ্রুত গতির মাছ ধরা ট্রলার চলাচলের কারণে নদীর পাড় ভেঙে যাচ্ছে। এতে আশ্রয়ন প্রকল্পটি ঝুঁকির মধ্যে পরেছে। যে কোনো সময় আশ্রয়ন প্রকল্পটি নদী বিলীন হবার আশঙ্কায় রাত দিন পার করছেন আশ্রয়ন প্রকল্পের প্রায় তিনশত বাসিন্দা। নদী ভাঙ্গন রোধে এবং আশ্রয়ন প্রকল্পের ঘরগুলো সংস্থারের দাবি জানিয়ে আসলেও সারা দেয়নি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ।

আশ্রয়ন প্রকল্পের বাসিন্দা জালাল হাওলাদার (৫৫) বলেন, ‘এই আশ্রয়ন প্রকল্পটি বিএনপি সরকারের সময় গড়ে তোলা হয়েছে। তাই আওয়ামী লীগ সরকার তাদের এই ঘর মেরামত করে দেয় নাই।’

সরজমিনে জানা গেছে, পটুয়াখালীর মহিপুর থানার লতাচাপলী ইউনিয়নের পশ্চিম খাজুরা গোড়া খাল আশ্রয়ন প্রকল্প। আন্ধারমানিক ও খাপড়াভাঙ্গা নদীর সংযোগ স্থলে নদীর কোল ঘেঁষে ২০০৫ সালে বিএনপি সরকারের আমলে আশ্রয়ন প্রকল্পটি গড়ে তোলা হয়। আশ্রয়ন প্রকল্পটি গড়ে তোলার পর দীর্ঘ বিশ বছর পেরিয়ে গেছে। এ আশ্রয়ন প্রকল্পের মানুষের ভাগ্যের কোনো পরিবর্তন হয়নি। ঘরের টিনের চালায় মরিচা ধরে ক্ষয়ে ক্ষয়ে পরছে। বেড়া নেই বেশিরভাগ ঘরে।

পলিথিন বিছিয়ে জোড়াতালি দিয়ে কোনো মতে দিন যাপন করছে। আশ্রয়ন প্রকল্পটির অবস্থা এতটাই জরাজীর্ণ যে বসবাস অনুপযোগী হয়ে পরেছে। নেই কোনো স্বাস্থ্য সম্মত শৌচাগার। সুপেয় পানির ব্যবস্থা। নেই শিশু শিক্ষালয়। অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে বসবাস করায় শিশু কিশোররা সব নানা রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। এরই মধ্যে নতুন করে নদী ভাঙনের কবলে পরে প্রতিনিয়ত ঝুঁকিতে ফেলেছে এখানকার বাসিন্দাদের। ইতোমধ্যে জরাজীর্ণ এই আশ্রয়ন প্রকল্পের বাসিন্দা মিরাজ খলিফা, জালাল হাওলাদার, ছগির, জয়নাল, আবুল হোসেন, জামাল মোল্লা, জালাল ফকির, সোহরাবসহ ৯টি পরিবার এখান থেকে চলে গেছে। যারা আছে তারাও এই আশ্রয়ন প্রকল্প ছেড়ে চলে যেতে চান। তবে তাদের অন্য কোথাও যাবার জায়গা না থাকায় যেতে পারছে না।

এখানকার বাসিন্দা কবির হোসেন বলেন, আমাদের অন্য কোথাও যাবার জায়গা নেই। তাই যেতে পারছি না। যাবার জায়গা থাকলে আমরাও চলে যেতাম।

এক খণ্ড জমি, একটি ঘর পেয়ে জেলেরা খুশি হয়েছিল। তাদের সেই খুশি কয়েক বছর যেতে না যেতেই মলিন হতে শুরু করে। আশ্রায়ন প্রকল্পে পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া খাপড়াভাঙ্গা নদী দিয়ে দ্রুত গতির ট্রলারসহ নৌযান আসার যাওয়ায় নদীতে তরঙ্গ সৃষ্টি হয়ে বড় বড় ঢেউ এসে আঁচড়ে পরছে আশ্রয়ন প্রকল্পে। জরাজীর্ণ ঘরে বসবাসরত জেলেদের যেন দুর্ভোগের শেষ নেই। সব সময় আতঙ্ক নিয়ে বসবাস করতে হয় এখানকার বাসিন্দাদের। এই বুঝি ভেঙে নদীতে চলে যাচ্ছে ঘরবাড়ি। সুখের নীড়ই জেলেদের এখন গলার কাটা হয়ে দাড়িয়েছে। অভাব অনটন নিয়ে বসবাসরত জেলেদের দু’বেলা দুমুঠো খাবার জোটাতে যেখানে হিমসিম খেতে হচ্ছে, সেখানে ঘর মেরামত তো অনেক দুরের কথা। তাই ভাঙাচোরা ঘরেই বাধ্য হয়ে বসবাস করছেন তারা। স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, উপজেলা প্রশাসনসহ বিভিন্ন দপ্তরে ধর্না দিয়েও কোনো প্রতিকার পায়নি ভুক্তভোগী জেলেরা এমন অভিযোগ তাদের। তারা এ দেশের নাগরিক কিনা এমন প্রশ্ন এখানকার বাসিন্দাদের।

১ নম্বর সিরিয়ালের ১ নম্বর ঘরে বসবাস করেন আবুল কালাম হাওলাদার (৪৩)। কথা হয় তার সঙ্গে। তিনি আক্ষেপের সঙ্গে বলেন, সিডরে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার পর অনেক সাংবাদিক, এনজিও প্রতিনিধি, সরকারি বেসরকারি কর্মকর্তারা এসেছেন। তারা এসে শুধু আমাদের দুঃখ দুর্দশা দেখে শুনে গেছেন। বিভিন্ন জনে ঘর মেরামতসহ কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করার কথা বললেও কেউ কোন কথা রাখেনি। তার দাবি এই আশ্রয়ন প্রকল্প তাদের জন্য গলার কাটা হয়ে দাড়িয়েছে। সব সময় আতঙ্ক নিয়ে বসবাস করতে হয়। যে কোনো সময় আশ্রয়ন প্রকল্পটি নদীর গর্ভে চলে যেতে পারে। আমরা এই পরিস্থিতিতে কী করবো ভেবে পাচ্ছি না।

আশ্রয়ন প্রকল্পটির বাসিন্দারা এমন পরিস্থিতি থেকে উত্তরণে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ কামনা করছেন। এখানকার বাসিন্দা আবু কালাম বলেন, ‘মাছ ধরা ট্রলারগুলো এত জোরে চালায় যে ঢেউ আমাদের ঘরে ওঠে। নিষেধ করলেও শোনে না। ‘

কলাপাড়া উপজেলা ফিশিং ট্রলার মাঝি ও মৎস্যজীবী সমবায় সমিতি সভাপতি রুহুল আমিন মাঝি বলেন, আশ্রয়নের লোকজন বিষয়টি আমাদের অবহিত করার পর স্থানীয় ট্রলারগুলো আস্তে চালায়। কিন্তু দূর-দূরান্তের ট্রলারগুলো দ্রুত চালাচ্ছে। যার কারণে আশ্রায়ন এলাকার ভাঙন কমছে না।

এ বিষয়ে লতাচাপলী ইউনিয়ন পরিষদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান হাওলাদার বলেন, বিষয়টি আমাকে আশ্রয়নের লোকজন অবহিত করেছে। আগামী দু’একদিনের মধ্যে আমি সরজমিনে গিয়ে দেখে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানাবো। আশা করছি দ্রুত সময়ের মধ্যে নদী ভাঙন রোধ হবে। জরাজীর্ণ আশ্রয়ন প্রকল্পের বর্তমান অবস্থা এবং পরিস্থিতি নিয়ে উপজেলা প্রশাসনের সঙ্গে কথা বলবেন বলে জানান তিনি।

এ প্রসঙ্গে কলাপাড়া উপজেলা নিবার্হী কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) মো. ইয়াসীন সাদেক বলেন, ‘বিষয়টি আপনার মাধ্যমে জানলাম। জরাজীর্ণ আশ্রয়ন প্রকল্পের ঘরগুলো মেরামতের জন্য পটুয়াখালী জেলা প্রশাসক মহোদয়ের সাথে আলোচনা করব। নদী ভাঙন রোধ করার জন্য পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী সঙ্গে বসে দ্রুত সময়ের মধ্যে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

ছবি

অর্থ পাচারকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ প্রধান উপদেষ্টার

রাষ্ট্রপতির ছবি অপসারণ নিয়ে অবগত নন পরিবেশ উপদেষ্টা

ছবি

দলীয় ‘লেজুড়বৃত্তি’ নয়, পাসপোর্ট কর্মকর্তাদেরকে উপদেষ্টা

ছবি

বসুন্ধরা চেয়ারম্যান ও তার স্ত্রীর সম্পদের হিসাব চেয়েছে দুদক

ছবি

দীর্ঘ সাড়ে পাঁচ মাস পর হিলি স্থলবন্দর দিয়ে ভারত থেকে পেঁয়াজ আমদানি শুরু

ছবি

পরিবেশ উপদেষ্টার আপত্তি সত্ত্বেও রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয় প্রকল্প পাস

ছবি

বিদেশে বাংলাদেশি কূটনৈতিক মিশন থেকে রাষ্ট্রপতির ছবি সরানোর নির্দেশ

ছবি

ভোলাগঞ্জের পর এবার লোভাছড়ায় পাথর লুট

ছবি

সংবিধানের ওপরে ‘জুলাই সনদ’, তোলা যাবে না প্রশ্ন

ছবি

‘পাচারের’ ৪০ হাজার কোটি টাকার ‘সম্পদের’ সন্ধান, প্রধান উপদেষ্টাকে তথ্য দিলো এনবিআর

ছবি

ভূপৃষ্ঠের পানি শোধন প্রকল্পের ব্যয় বাড়ল ৩৫ শতাংশ

সিলেটে পাথর লুট: প্রশাসনের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুললেন রিজওয়ানা হাসান

বিদেশে বাংলাদেশের মিশন থেকে রাষ্ট্রপতি সাহাবুদ্দিনের ছবি সরানোর নির্দেশ

ছবি

শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে ট্রাইব্যুনালে বিচার চলছে

ছবি

সেই রিকশাচালকের জামিন, মুক্তিতে বাধা নেই

ছবি

বিদেশের বাংলাদেশি সব কূটনৈতিক মিশন থেকে রাষ্ট্রপতির ছবি সরানোর নির্দেশ

ছবি

ফারুকীর চিকিৎসার বিষয়ে বসছে মেডিকেল বোর্ড

ছবি

জামিন চেয়ে সাবেক প্রধান বিচারপতি এবিএম খায়রুল হকের আবেদনের শুনানি পিছিয়েছে

সাগরে ফের লঘুচাপের সম্ভাবনা, বাড়তে পারে বৃষ্টি

রোহিঙ্গা ইস্যুতে বিদেশি কূটনীতিকদের ব্রিফ করলেন জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা

ছবি

বনানীর সিসা বারে রাব্বি হত্যার পেছনে আধিপত্য বিস্তারের দ্বন্দ্ব : র‌্যাব

ছবি

আসন সমঝোতার কথা বলে এনসিপিকে কেনা যাবে না: হাসনাত

ছবি

সাদা পাথর লুট: চিহ্নিতদের বাদ দিয়ে অজ্ঞাত ২০০০ ব্যক্তির বিরুদ্ধে মামলা, নানা প্রশ্ন

ছবি

নির্বাচন নিয়ে শঙ্কা প্রকাশকারীরা গণতন্ত্রের শত্রু: সালাহউদ্দিন

ছবি

‘আপনারা নিশ্চিন্তে এ দেশে বসবাস করবেন’, জন্মাষ্টমীর অনুষ্ঠানে সেনাপ্রধান

ছবি

সীমান্তে মাইন বিস্ফোরণে আহত বন্যহাতি, চিকিৎসা করতে গিয়ে তিনজন হাসপাতালে

ছবি

বিষের ফাঁদে সুন্দরবন, দাদনে জিম্মি জেলে

ছবি

এয়ার টিকেটের উচ্চমূল্য, নিয়ন্ত্রণহীন হয়ে পড়ছে খাত

ছবি

প্রধান উপদেষ্টা যেই মাসে বলেছেন সেই মাসেই নির্বাচন হবে: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা

ছবি

মুচি সম্প্রদায়ের দু’জনকে পিটিয়ে হত্যা: এখনও গ্রেপ্তার হয়নি শনাক্ত ৫ জন

ছবি

জুলাই সনদ বাস্তবায়নে ৮ দফা অঙ্গীকারনামা, খসড়া রাজনৈতিক দলগুলোকে পাঠিয়েছে ঐকমত্য কমিশন

ছবি

‘অপ্রয়োজনীয়’ স্বাস্থ্য পরীক্ষা বন্ধের আহ্বান আসিফ নজরুলের

ছবি

চট্টগ্রাম থেকে ঢাকায় পাইপলাইনে জ্বালানি সরবরাহ শুরু

ছবি

শনিবার থেকে চট্টগ্রাম–ঢাকা পাইপলাইনে জ্বালানি তেল সরবরাহ শুরু

ছবি

প্রেস সচিবের নির্দেশনার প্রসঙ্গ টেনে ভুল স্বীকার করলেন ওসি

ছবি

১৫ আগস্ট: শেখ মুজিব ও তার পরিবার হত্যার ৫০ বছর

tab

জাতীয়

নদী ভাঙনে বিলীনের পথে আশ্রয়ণ: ঘর আছে, থাকার পরিবেশ নেই

প্রতিনিধি, কুয়াকাটা

নদী ভাঙন: কুয়াকাটায় আশ্রয়ণ প্রকল্পের ৭১ পরিবারের আশ্রয় হারানোর শঙ্কা -সংবাদ

রোববার, ১৭ আগস্ট ২০২৫

নদীর ভাঙনে কাঁপছে সরকারি আশ্রয়ন প্রকল্প। গৃহহীনদের জন্য নতুন জীবনের স্বপ্ন দেখাতে নির্মিত ঘরবাড়ি আজ নদীতে বিলীন হওয়ার শঙ্কায়। তীব্র নদী ভাঙনে অনিশ্চিত ভবিষ্যৎ। স্বাস্থ্যসেবা, শিক্ষা কিংবা কর্মসংস্থানের কোনো ব্যবস্থা নেই। ফলে ঘর পেলেও পাচ্ছে না বসবাসের পরিবেশ। দুর্ভোগে দিন কাটাচ্ছেন ৭১টি পরিবার। যাদের স্বপ্ন ভেঙে যাচ্ছে নদীর ভাঙনের সঙ্গে।

এ প্রকল্প যেন আশ্রয়ের বদলে দুঃস্বপ্ন হয়ে উঠছে। এটি পটুয়াখালীর মহিপুর থানার লতাচাপলী ইউনিয়নের পশ্চিম খাজুরা গোড়া খাল আশ্রয়ন প্রকল্প।

এ আশ্রয়নের বাসিন্দা লাইলী বেগম বলেন, ‘আমরা যেই ঘরে বসবাস করছি সেই ঘর মানুষ তো দূরের কথা গরুর মহিষও থাকার উপযোগী না।’

সমুদ্রের সঙ্গে লড়াই করে জেলেরা জীবন জীবিকা নির্বাহ করে দেশের সুশীল অর্থনীতিতে ভূমিকা রাখলেও তাদের অনেকেরই বসবাসের জায়গা নেই। নেই এক খণ্ড জমি। যেখানে তারা স্ত্রী সন্তান নিয়ে বসবাস করবে। মারা গেলে মাটি দেয়ার মতো জায়গা টুকুও নেই। ঝড় বন্যা মাথায় নিয়ে সমুদ্রে মৎস্য শিকার করে জীবিকা নির্বাহ করা মানুষগুলো অসহায় হয়ে পড়েছে।

নুর ইসলাম নামের এক ব্যক্তি বলেন, আমরা এখানে যারা বসবাস করছি সবাই জেলে। অনিশ্চিত জীবন নিয়ে এই আশ্রয়ন প্রকল্পে বসবাস করছি। প্রতিটি ঘরের টিন ক্ষয়ে পরছে। ঘরের দরজা জানালা, বেড়া নেই। ঘরে বসেই আমরা আকাশ দেখি। সামান্য বৃষ্টিতেই ঘরের ভিতরে পানি পরছে। কোনো মতে পলিথিন ও তেরপাল দিয়ে বসবাস করছেন তারা। এ ঘরে কোনো মানুষ থাকতে পারে না। বাধ্য হয়ে আমরা বসবাস করছি।

জায়গা কিংবা ঘরবাড়ি নেই এমন জেলেদের কথা চিন্তা করে সরকার ২০০৫ সালে খাপড়াভাঙ্গা নদীর কোল ঘেঁষে ৮০ পরিবারের জন্য গড়ে তোলেন একটি আশ্রয়ন প্রকল্প। যেখানে জেলেদের সুখে শান্তিতে বসবাস করার কথা। কিন্তু বসবাসের দুই বছরের মাথায় ভয়াল সিডর তাদের সেই সুখের নীড়ে হানা দেয়। ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয় আশ্রয়ন প্রকল্পটি। এরপর দীর্ঘ বছর চলে গেলেও মেরামত বা সংস্কার হয়নি। এরই মধ্যে নতুন করে দেখা দিয়েছে আরেক বিপদ। খাপড়াভাঙ্গা নদীটি জেলেদের প্রোতাশ্রয় হওয়ায় দ্রুত গতির মাছ ধরা ট্রলার চলাচলের কারণে নদীর পাড় ভেঙে যাচ্ছে। এতে আশ্রয়ন প্রকল্পটি ঝুঁকির মধ্যে পরেছে। যে কোনো সময় আশ্রয়ন প্রকল্পটি নদী বিলীন হবার আশঙ্কায় রাত দিন পার করছেন আশ্রয়ন প্রকল্পের প্রায় তিনশত বাসিন্দা। নদী ভাঙ্গন রোধে এবং আশ্রয়ন প্রকল্পের ঘরগুলো সংস্থারের দাবি জানিয়ে আসলেও সারা দেয়নি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ।

আশ্রয়ন প্রকল্পের বাসিন্দা জালাল হাওলাদার (৫৫) বলেন, ‘এই আশ্রয়ন প্রকল্পটি বিএনপি সরকারের সময় গড়ে তোলা হয়েছে। তাই আওয়ামী লীগ সরকার তাদের এই ঘর মেরামত করে দেয় নাই।’

সরজমিনে জানা গেছে, পটুয়াখালীর মহিপুর থানার লতাচাপলী ইউনিয়নের পশ্চিম খাজুরা গোড়া খাল আশ্রয়ন প্রকল্প। আন্ধারমানিক ও খাপড়াভাঙ্গা নদীর সংযোগ স্থলে নদীর কোল ঘেঁষে ২০০৫ সালে বিএনপি সরকারের আমলে আশ্রয়ন প্রকল্পটি গড়ে তোলা হয়। আশ্রয়ন প্রকল্পটি গড়ে তোলার পর দীর্ঘ বিশ বছর পেরিয়ে গেছে। এ আশ্রয়ন প্রকল্পের মানুষের ভাগ্যের কোনো পরিবর্তন হয়নি। ঘরের টিনের চালায় মরিচা ধরে ক্ষয়ে ক্ষয়ে পরছে। বেড়া নেই বেশিরভাগ ঘরে।

পলিথিন বিছিয়ে জোড়াতালি দিয়ে কোনো মতে দিন যাপন করছে। আশ্রয়ন প্রকল্পটির অবস্থা এতটাই জরাজীর্ণ যে বসবাস অনুপযোগী হয়ে পরেছে। নেই কোনো স্বাস্থ্য সম্মত শৌচাগার। সুপেয় পানির ব্যবস্থা। নেই শিশু শিক্ষালয়। অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে বসবাস করায় শিশু কিশোররা সব নানা রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। এরই মধ্যে নতুন করে নদী ভাঙনের কবলে পরে প্রতিনিয়ত ঝুঁকিতে ফেলেছে এখানকার বাসিন্দাদের। ইতোমধ্যে জরাজীর্ণ এই আশ্রয়ন প্রকল্পের বাসিন্দা মিরাজ খলিফা, জালাল হাওলাদার, ছগির, জয়নাল, আবুল হোসেন, জামাল মোল্লা, জালাল ফকির, সোহরাবসহ ৯টি পরিবার এখান থেকে চলে গেছে। যারা আছে তারাও এই আশ্রয়ন প্রকল্প ছেড়ে চলে যেতে চান। তবে তাদের অন্য কোথাও যাবার জায়গা না থাকায় যেতে পারছে না।

এখানকার বাসিন্দা কবির হোসেন বলেন, আমাদের অন্য কোথাও যাবার জায়গা নেই। তাই যেতে পারছি না। যাবার জায়গা থাকলে আমরাও চলে যেতাম।

এক খণ্ড জমি, একটি ঘর পেয়ে জেলেরা খুশি হয়েছিল। তাদের সেই খুশি কয়েক বছর যেতে না যেতেই মলিন হতে শুরু করে। আশ্রায়ন প্রকল্পে পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া খাপড়াভাঙ্গা নদী দিয়ে দ্রুত গতির ট্রলারসহ নৌযান আসার যাওয়ায় নদীতে তরঙ্গ সৃষ্টি হয়ে বড় বড় ঢেউ এসে আঁচড়ে পরছে আশ্রয়ন প্রকল্পে। জরাজীর্ণ ঘরে বসবাসরত জেলেদের যেন দুর্ভোগের শেষ নেই। সব সময় আতঙ্ক নিয়ে বসবাস করতে হয় এখানকার বাসিন্দাদের। এই বুঝি ভেঙে নদীতে চলে যাচ্ছে ঘরবাড়ি। সুখের নীড়ই জেলেদের এখন গলার কাটা হয়ে দাড়িয়েছে। অভাব অনটন নিয়ে বসবাসরত জেলেদের দু’বেলা দুমুঠো খাবার জোটাতে যেখানে হিমসিম খেতে হচ্ছে, সেখানে ঘর মেরামত তো অনেক দুরের কথা। তাই ভাঙাচোরা ঘরেই বাধ্য হয়ে বসবাস করছেন তারা। স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, উপজেলা প্রশাসনসহ বিভিন্ন দপ্তরে ধর্না দিয়েও কোনো প্রতিকার পায়নি ভুক্তভোগী জেলেরা এমন অভিযোগ তাদের। তারা এ দেশের নাগরিক কিনা এমন প্রশ্ন এখানকার বাসিন্দাদের।

১ নম্বর সিরিয়ালের ১ নম্বর ঘরে বসবাস করেন আবুল কালাম হাওলাদার (৪৩)। কথা হয় তার সঙ্গে। তিনি আক্ষেপের সঙ্গে বলেন, সিডরে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার পর অনেক সাংবাদিক, এনজিও প্রতিনিধি, সরকারি বেসরকারি কর্মকর্তারা এসেছেন। তারা এসে শুধু আমাদের দুঃখ দুর্দশা দেখে শুনে গেছেন। বিভিন্ন জনে ঘর মেরামতসহ কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করার কথা বললেও কেউ কোন কথা রাখেনি। তার দাবি এই আশ্রয়ন প্রকল্প তাদের জন্য গলার কাটা হয়ে দাড়িয়েছে। সব সময় আতঙ্ক নিয়ে বসবাস করতে হয়। যে কোনো সময় আশ্রয়ন প্রকল্পটি নদীর গর্ভে চলে যেতে পারে। আমরা এই পরিস্থিতিতে কী করবো ভেবে পাচ্ছি না।

আশ্রয়ন প্রকল্পটির বাসিন্দারা এমন পরিস্থিতি থেকে উত্তরণে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ কামনা করছেন। এখানকার বাসিন্দা আবু কালাম বলেন, ‘মাছ ধরা ট্রলারগুলো এত জোরে চালায় যে ঢেউ আমাদের ঘরে ওঠে। নিষেধ করলেও শোনে না। ‘

কলাপাড়া উপজেলা ফিশিং ট্রলার মাঝি ও মৎস্যজীবী সমবায় সমিতি সভাপতি রুহুল আমিন মাঝি বলেন, আশ্রয়নের লোকজন বিষয়টি আমাদের অবহিত করার পর স্থানীয় ট্রলারগুলো আস্তে চালায়। কিন্তু দূর-দূরান্তের ট্রলারগুলো দ্রুত চালাচ্ছে। যার কারণে আশ্রায়ন এলাকার ভাঙন কমছে না।

এ বিষয়ে লতাচাপলী ইউনিয়ন পরিষদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান হাওলাদার বলেন, বিষয়টি আমাকে আশ্রয়নের লোকজন অবহিত করেছে। আগামী দু’একদিনের মধ্যে আমি সরজমিনে গিয়ে দেখে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানাবো। আশা করছি দ্রুত সময়ের মধ্যে নদী ভাঙন রোধ হবে। জরাজীর্ণ আশ্রয়ন প্রকল্পের বর্তমান অবস্থা এবং পরিস্থিতি নিয়ে উপজেলা প্রশাসনের সঙ্গে কথা বলবেন বলে জানান তিনি।

এ প্রসঙ্গে কলাপাড়া উপজেলা নিবার্হী কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) মো. ইয়াসীন সাদেক বলেন, ‘বিষয়টি আপনার মাধ্যমে জানলাম। জরাজীর্ণ আশ্রয়ন প্রকল্পের ঘরগুলো মেরামতের জন্য পটুয়াখালী জেলা প্রশাসক মহোদয়ের সাথে আলোচনা করব। নদী ভাঙন রোধ করার জন্য পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী সঙ্গে বসে দ্রুত সময়ের মধ্যে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

back to top