alt

জাতীয়

সবার উপরে মানুষের জীবন: প্রধানমন্ত্রী

সংবাদ অনলাইন ডেস্ক : বৃহস্পতিবার, ১৩ মে ২০২১

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যে যেখানে আছেন, সেখানেই ঈদ উদযাপন করতে এবং স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে সবার প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি বলেন, সবার উপরে মানুষের জীবন। জীবনের মূল্য যে সব থেকে বেশি।

পবিত্র ঈদুল ফিতর উপলক্ষে আজ বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় জাতির উদ্দেশে দেওয়া এক ভাষণে সবাইকে শুভেচ্ছা জানিয়ে তিনি বলেন, উদযাপনের এই উপলক্ষ যেন করোনাভাইরাসের সংক্রমণ বৃদ্ধির কারণ না হয়ে ওঠে।

শেখ হাসিনা বলেন, “আপনারা আবেগের বশবর্তী হয়ে আত্মীয়-স্বজনের সঙ্গে ঈদের ছুটি কাটাতে যাবেন না। অনেকের কোনো বাহ্যিক লক্ষণ না থাকায় আপনি বুঝতে পারবেন না আপনার পাশের ব্যক্তিটিই করোনাভাইরাস বহন করছে।

“এর ফলে আপনি যেমন করোনাভাইরাসের ঝুঁকিতে পড়বেন, তেমনি আপনার নিকটাত্মীয় বা পাড়াপ্রতিবেশীকে ঝুঁকির মুখে ফেলবেন।”

প্রধানমন্ত্রী বলেন, “মনে রাখবেন, সবার উপরে মানুষের জীবন। বেঁচে থাকলে আসছে বছর আবার আমরা আনন্দঘন পরিবেশে ঈদ উদযাপন করতে পারব।”

প্রধানমন্ত্রী বলেন, গত এক বছরের বেশি সময় ধরে বিশ্ব এক গভীর সঙ্কটের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে। কোভিড-১৯ নামের এক মারণব্যাধি মানুষের স্বাভাবিক জীবনযাত্রায় অন্তরায় হয়ে দাঁড়িয়েছে।

“দ্রুত ছড়িয়ে পড়ার ক্ষমতাসম্পন্ন এই ভাইরাস একদিকে যেমন অগণিত মানুষের জীবন কেড়ে নিচ্ছে, অন্যদিকে ক্ষতিসাধন করছে মানুষের জীবন-জীবিকার। আমাদের স্বাস্থ্য ব্যবস্থা এবং অর্থনীতির উপর ব্যাপক নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে এই ভাইরাস।”

শেখ হাসিনা বলেন, গত বছরের শেষ দিকে যখন বিশ্বব্যাপী ভাইরাসের প্রকোপ অনেকটা কমতে শুরু করেছিল, তখন এই সঙ্কট থেকে মুক্তির আশা জাগতে শুরু করেছিল। কিন্তু এ বছরের মার্চ থেকে মহামারীর দ্বিতীয় ঢেউ সব পরিকল্পনা ও প্রত্যাশাকে ‘নস্যাৎ করে’ দিয়েছে। ‘কষ্ট হবে জেনেও’ সরকার মানুষের স্বাভাবিক চলাচলে বিধিনিষেধ আরোপ করতে বাধ্য হয়েছে।

“এমনি এক অস্বস্তিকর পরিস্থিতির মধ্যে এবারও আমাদের ঈদুল ফিতর উদযাপন করতে হচ্ছে। আমরা ঈদ উদযাপন করব, তবে অবশ্যই স্বাস্থ্যবিধি মেনে। কোনোভাবেই এই ঈদ উদযাপন যাতে করোনাভাইরাস সংক্রমণ বৃদ্ধির উপলক্ষ হয়ে না ওঠে, সেদিকে আমাদের খেয়াল রাখতে হবে।”

যে যেখানে আছেন, সেখান থেকেই ঈদ আনন্দ উপভোগ করার অনুরোধ জানান প্রধানমন্ত্রী। সেইসঙ্গে এই দুঃসময়ে দরিদ্র প্রতিবেশী, গ্রামবাসী বা এলাকাবাসীর পাশে দাঁড়াতে বিত্তবানদের প্রতি আহ্বান জানান।

তিনি বলেন, “আপনার সাহায্য হয়ত একটি পরিবারের সদস্যদের মুখে হাসি ফোটাবে। দেখবেন, তাদের হাসিমুখ আপনার হৃদয়মনকেও পরিপূর্ণ করে তুলবে ঈদের আনন্দে।”

শেখ হাসিনা তার ভাষণে বলেন, প্রাণঘাতী করোনাভাইরাস শুধু মানুষের জীবন কেড়ে নিচ্ছে না, বিশ্ব অর্থনীতিকেও বিপর্যস্ত করে ফেলেছে। সংক্রমণ এড়াতেই লক-ডাউন বা সাধারণ ছুটি বলবৎ করতে হয়েছে।

গত বছর একটানা দুই মাসের বেশি সময় লকডাউন চলার কথা স্মরণ করে তিনি বলেন, “দ্বিতীয় ঢেউ আঘাত হানার পর গত মাসের ৫ তারিখ থেকে পর্যায়ক্রমে লক-ডাউন কার্যকর করা হয়েছে। এর ফলে অগণিত মানুষের রুটি-রুজির উপর আঘাত এসেছে। কিন্তু এই কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা ছাড়া বিকল্প কোনো উপায় ছিল না।

“আমাদের স্মরণ রাখতে হবে, প্রতিটি দেশেরই স্বাস্থ্য অবকাঠামোর একটি নির্দিষ্ট সক্ষমতা রয়েছে। হঠাৎ করে দ্রুতগতিতে রোগী বাড়তে থাকলে তখন সেবা দেওয়া অসম্ভব হয়ে পড়ে। আপনারা দেখেছেন, উন্নত দেশগুলো পর্যন্ত করোনা রোগীর সেবা দিতে হিমশিম খাচ্ছে। সেজন্য আমাদের কোনোভাবেই রোগীর সংখ্যা বাড়তে দেওয়া যাবে না।”

সরকার মানুষের জীবন ও জীবিকার মধ্যে একটি সামঞ্জস্য বজায় রাখার ‘চেষ্টা করে যাচ্ছে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “যারা কর্মহীন হয়ে পড়েছেন, তাদের সহায়তার জন্য সরকার সর্বাত্মক উদ্যোগ গ্রহণ করেছে।”

ভারতীয় কর্তৃপক্ষ টিকা রপ্তানির উপর সাময়িক নিষেধাজ্ঞা দেওয়ায় সরবরাহ ব্যবস্থায় ‘কিছুটা সমস্যা’ হওয়ার বিষয়টি তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সরকার বিকল্প উৎস থেকে টিকা সংগ্রহের উদ্যোগও ইতোমধ্যে নিয়েছে।

“রাশিয়া এবং চীনের টিকা উৎপাদনকারী সংস্থার সঙ্গে আমাদের আলোচনা চলছে। উপহার হিসেবে চীনের কাছ থেকে টিকা ইতোমধ্যে আমরা পেয়েছি। আমরা টিকা পাওয়ার জন্য আমেরিকার কাছেও অনুরোধ জানিয়েছি। বিশ্ব টিকাকরণ সংস্থা কোভ্যাক্সের কাছ থেকেও আমরা উল্লেখযোগ্য পরিমাণ টিকা পাব।

“বিভিন্ন উৎস থেকে আমরা এক কোটি টিকা ক্রয়ের ব্যবস্থা নিয়েছি। খুব শিগগিরই দেশে টিকা আসতে শুরু করবে। তাছাড়া, দেশেই যাতে টিকা উৎপাদন করতে পারি, সে ব্যবস্থা আমরা নিয়েছি। নিজেদের টিকা তৈরিতে কয়েক মাস সময় লাগবে। আমরা দেশের সকল নাগরিককে টিকার আওতায় নিয়ে আসব, ইনশাআল্লাহ।”

তিনি বলেন, গত বছর মহামারি শুরু হওয়ার পর থেকে এ পর্যন্ত ৬ হাজার ১৬৬ জন ডাক্তার, ৫ হাজার ৫৪ জন নার্স এবং প্রায় সাড়ে ৪ হাজার অন্যান্য স্বাস্থ্যকর্মী নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। জেলা হাসপাতালগুলোসহ দেশের ১৩০টি সরকারি হাসপাতালে কেন্দ্রীয় অক্সিজেন সরবরাহ ব্যবস্থা চালু করা হয়েছে। ঢাকার মহাখালীর ডিএনসিসি মার্কেটে চালু হয়েছে ২ হাজার শয্যার কোভিড হাসপাতাল।

স্বাস্থ্যকর্মী, আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য, সশস্ত্রবাহিনীর সদস্য, প্রশাসনের কর্মকর্তা-কর্মচারীসহ যারা ঝুঁকি নিয়ে করোনাভাইরাস মোকাবেলায় ভূমিকা রেখে যাচ্ছেন, তাদের সবাইকে ধন্যবাদ জানান প্রধানমন্ত্রী।

করোনাভাইরাস প্রতিরোধে নাগরিকদের দায়িত্বেই সবচেয়ে বেশি মন্তব্য করে তিনি বলেন, “এই ভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকাতে মাস্কের ব্যবহার অত্যন্ত ফলপ্রসূ বলে প্রমাণিত হয়েছে। কাজেই বাইরে গেলে অবশ্যই মাস্ক ব্যবহার করবেন। পাশাপাশি যথাসম্ভব ঘনঘন সাবানপানি দিয়ে হাত ধুয়ে নিন অথবা স্যানিটাইজার দিয়ে হাত জীবাণুমুক্ত করুন। সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখুন।”

জনগণের ‘সহযোগিতায়’ এবং সরকারের ‘সময়োচিত কার্যক্রমে’ গত এক বছর করোনাভাইরাস মহামারীর আর্থিক অভিঘাত ‘খুব ভালোভাবেই’ সামাল দেওয়া সম্ভব হয়েছে বলে মনে করেন প্রধানমন্ত্রী। ভাষণে তিনি বলেন, “আমরা যখন প্রথম ঢেউ সামলে অর্থনীতিকে সাবেক অবস্থার দ্বারপ্রান্তে নিয়ে আসার পর্যায়ে, তখনই মার্চ মাসে দ্বিতীয় ঢেউ আঘাত হেনেছে। এতে করে আমাদের প্রত্যাশিত প্রবৃদ্ধিতে হয়ত খানিকটা ভাটা পড়বে।

“তবে আমাদের অভ্যন্তরীণ এবং বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থার হিসেবে এবারও আমরা আশানুরূপ প্রবৃদ্ধি অর্জন করতে সক্ষম হবো। গত সপ্তাহে আমাদের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ৪৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার অতিক্রম করেছে।”

ভাষণের শুরুতেই দেশের জনগণ ও বিশ্ববাসীকে ঈদুল ফিতরের শুভেচ্ছা সবাইকে ‘ঈদ মোবারক’ বলেন শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, “ঈদের দিন আনন্দের দিন। মনের সব কালিমা দূর করে, মানুষে মানুষে ভেদাভেদ ভুলে একে অপরের সঙ্গে মিলিয়ে যাওয়ার মধ্যেই ঈদের আনন্দ। “আজকের দিনে আমরা হিংসা-বিদ্বেষ, ঘৃণা, লোভ, অহমিকা, ক্রোধ, অহঙ্কার ইত্যাদি যাবতীয় কুপ্রবৃত্তি থেকে নিজেদের মুক্ত করে সাম্য, ভ্রাতৃত্ব, ঐক্য, সৌহার্দ্য, সম্প্রীতির বন্ধনে আবদ্ধ হওয়ার শপথ নেব।”

ছবি

লাল চাঁদ হত্যার ঘটনায় বিচারিক কমিশন গঠনের নির্দেশনা চেয়ে হাইকোর্টে রিট

ছেলের ‘পরকীয়া ঠেকাতে’ ফ্লাইটে ‘বোমা’ থাকার উড়ো ফোন

পুলিশকে কার্যকর করার প্রশ্নে ‘অসন্তুষ্ট’ আইজিপি

সিন্ডিকেটের কবজায় বিমানের টিকেট, অভিযোগ আটাবের

মতলবে সেপটিক ট্যাংক থেকে উদ্ধার গৃহবধূর লাশ, স্বামী পলাতক

চাঁদাবাজির অভিযোগে যুবদল নেতা বহিষ্কার

২৮ মাসে ১৪ হাজার ধর্ষণের মামলা

ভাটারা থানা হেফাজতে ‘বিষপানে’ নারীর মৃত্যু, তিন পুলিশ বরখাস্ত

ছবি

মোরেলগঞ্জে ১০ বছরে আলোর মুখ দেখেনি সেলাই প্রশিক্ষণ কেন্দ্রটি

ছবি

প্রশাসনকে ম্যানেজ করে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন

পুতুলকে ‘অনির্দিষ্টকালের ছুটিতে পাঠালো’ বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা: হেলথ পলিসি ওয়াচ

ছবি

ডেঙ্গুতে এ বছর ২৩ জনের মৃত্যু হয়েছে ঢাকা দক্ষিণে

চট্টগ্রামে ৩৯ দখলদারের বিরুদ্ধে অভিযানে নামছে পাউবো

ছবি

নতুন শহর পূর্বাচল: এখনও সব সুবিধা নেই

শেষ হয়েছে শুল্ক নিয়ে আলোচনা, আবার হবে জানানো হলো বিজ্ঞপ্তিতে

বিএনপির পরিণতি হবে আওয়ামী লীগের মতো: যুবশক্তির আহ্বায়ক

‘সম্পূর্ণ সত্য প্রকাশের’ শর্তে রাজসাক্ষী মামুনকে ক্ষমা, লিখিত আদেশে ট্রাইব্যুনাল

অন্যায়কারীদের সরকার প্রশ্রয় দিচ্ছে কিনা, প্রশ্ন তারেক রহমানের

ব্যবসায়ী সোহাগ হত্যার বিচার হবে দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে: আইন উপদেষ্টা

ছবি

ব্যবসায়ী সোহাগ হত্যার প্রতিবাদ সারাদেশে, চাঁদাবাজির বিরুদ্ধে ক্ষোভ

ভয়ে নীরব, স্তব্ধ হয়ে গিয়েছিলাম, নৃশংস হত্যার বর্ণনায় প্রত্যক্ষদর্শী

ছবি

গণঅভ্যুত্থানের বর্ষপূর্তিতে শহীদ মিনারে সোমবার কনসার্ট ও ড্রোন শো’র আয়োজন

ছবি

চলতি বছর ডেঙ্গুতে মৃতের সংখ্যা ৫৫, হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ১৩০২ জন

ছবি

মিটফোর্ডে ব্যবসায়ী খুন: নিহত লাল চাঁদের পরিবার বলছে, ‘এখনো হুমকি পাচ্ছি’

ছবি

পুলিশকে পুরোপুরি কার্যকর করার বিষয়ে ‘অসন্তুষ্ট’ আইজিপি বাহারুল

ছবি

সাবেক আইজিপি মামুনকে শর্তসাপেক্ষে ক্ষমার বিষয়ে ট্রাইব্যুনালের আদেশ প্রকাশ

ছবি

‘সঙ্গে সঙ্গে অ্যাকশন’ তো হচ্ছে: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা

ছবি

ছেলের ‘পরকীয়া ঠেকাতে’ বিমানে বোমার ভুয়া খবর দিলেন মা: র‍্যাব

ছবি

মিটফোর্ডের সামনে লাল চাঁদ হত্যার বিচার দ্রুতবিচার ট্রাইব্যুনালে: আসিফ নজরুল

ছবি

দেড় মাস পর ক্লাসে ফিরলেন ঢাকা মেডিকেল কলেজের শিক্ষার্থীরা

ছবি

সায়মা ওয়াজেদকে ছুটিতে পাঠালো ডব্লিউএইচও: হেলথ পলিসি ওয়াচ

ডেমরায় বাস ও মোটরসাইকেলের মুখোমুখি সংঘর্ষে যুবক নিহত

শেরপুর সীমান্ত দিয়ে নারী-শিশুসহ ১০ জনকে পুশইন

চাঁদপুরে খতিবকে হত্যার চেষ্টা, হামলাকারী আটক

ছবি

শার্শায় বাগআঁচড়া-কায়বা সড়কের বেহাল দশা : চরম দুর্ভোগে মানুষ

ছবি

ডেঙ্গু নিয়ে হাসপাতালে ১৩৮ রোগী, বেশিরভাগই বরিশালের

tab

জাতীয়

সবার উপরে মানুষের জীবন: প্রধানমন্ত্রী

সংবাদ অনলাইন ডেস্ক

বৃহস্পতিবার, ১৩ মে ২০২১

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যে যেখানে আছেন, সেখানেই ঈদ উদযাপন করতে এবং স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে সবার প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি বলেন, সবার উপরে মানুষের জীবন। জীবনের মূল্য যে সব থেকে বেশি।

পবিত্র ঈদুল ফিতর উপলক্ষে আজ বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় জাতির উদ্দেশে দেওয়া এক ভাষণে সবাইকে শুভেচ্ছা জানিয়ে তিনি বলেন, উদযাপনের এই উপলক্ষ যেন করোনাভাইরাসের সংক্রমণ বৃদ্ধির কারণ না হয়ে ওঠে।

শেখ হাসিনা বলেন, “আপনারা আবেগের বশবর্তী হয়ে আত্মীয়-স্বজনের সঙ্গে ঈদের ছুটি কাটাতে যাবেন না। অনেকের কোনো বাহ্যিক লক্ষণ না থাকায় আপনি বুঝতে পারবেন না আপনার পাশের ব্যক্তিটিই করোনাভাইরাস বহন করছে।

“এর ফলে আপনি যেমন করোনাভাইরাসের ঝুঁকিতে পড়বেন, তেমনি আপনার নিকটাত্মীয় বা পাড়াপ্রতিবেশীকে ঝুঁকির মুখে ফেলবেন।”

প্রধানমন্ত্রী বলেন, “মনে রাখবেন, সবার উপরে মানুষের জীবন। বেঁচে থাকলে আসছে বছর আবার আমরা আনন্দঘন পরিবেশে ঈদ উদযাপন করতে পারব।”

প্রধানমন্ত্রী বলেন, গত এক বছরের বেশি সময় ধরে বিশ্ব এক গভীর সঙ্কটের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে। কোভিড-১৯ নামের এক মারণব্যাধি মানুষের স্বাভাবিক জীবনযাত্রায় অন্তরায় হয়ে দাঁড়িয়েছে।

“দ্রুত ছড়িয়ে পড়ার ক্ষমতাসম্পন্ন এই ভাইরাস একদিকে যেমন অগণিত মানুষের জীবন কেড়ে নিচ্ছে, অন্যদিকে ক্ষতিসাধন করছে মানুষের জীবন-জীবিকার। আমাদের স্বাস্থ্য ব্যবস্থা এবং অর্থনীতির উপর ব্যাপক নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে এই ভাইরাস।”

শেখ হাসিনা বলেন, গত বছরের শেষ দিকে যখন বিশ্বব্যাপী ভাইরাসের প্রকোপ অনেকটা কমতে শুরু করেছিল, তখন এই সঙ্কট থেকে মুক্তির আশা জাগতে শুরু করেছিল। কিন্তু এ বছরের মার্চ থেকে মহামারীর দ্বিতীয় ঢেউ সব পরিকল্পনা ও প্রত্যাশাকে ‘নস্যাৎ করে’ দিয়েছে। ‘কষ্ট হবে জেনেও’ সরকার মানুষের স্বাভাবিক চলাচলে বিধিনিষেধ আরোপ করতে বাধ্য হয়েছে।

“এমনি এক অস্বস্তিকর পরিস্থিতির মধ্যে এবারও আমাদের ঈদুল ফিতর উদযাপন করতে হচ্ছে। আমরা ঈদ উদযাপন করব, তবে অবশ্যই স্বাস্থ্যবিধি মেনে। কোনোভাবেই এই ঈদ উদযাপন যাতে করোনাভাইরাস সংক্রমণ বৃদ্ধির উপলক্ষ হয়ে না ওঠে, সেদিকে আমাদের খেয়াল রাখতে হবে।”

যে যেখানে আছেন, সেখান থেকেই ঈদ আনন্দ উপভোগ করার অনুরোধ জানান প্রধানমন্ত্রী। সেইসঙ্গে এই দুঃসময়ে দরিদ্র প্রতিবেশী, গ্রামবাসী বা এলাকাবাসীর পাশে দাঁড়াতে বিত্তবানদের প্রতি আহ্বান জানান।

তিনি বলেন, “আপনার সাহায্য হয়ত একটি পরিবারের সদস্যদের মুখে হাসি ফোটাবে। দেখবেন, তাদের হাসিমুখ আপনার হৃদয়মনকেও পরিপূর্ণ করে তুলবে ঈদের আনন্দে।”

শেখ হাসিনা তার ভাষণে বলেন, প্রাণঘাতী করোনাভাইরাস শুধু মানুষের জীবন কেড়ে নিচ্ছে না, বিশ্ব অর্থনীতিকেও বিপর্যস্ত করে ফেলেছে। সংক্রমণ এড়াতেই লক-ডাউন বা সাধারণ ছুটি বলবৎ করতে হয়েছে।

গত বছর একটানা দুই মাসের বেশি সময় লকডাউন চলার কথা স্মরণ করে তিনি বলেন, “দ্বিতীয় ঢেউ আঘাত হানার পর গত মাসের ৫ তারিখ থেকে পর্যায়ক্রমে লক-ডাউন কার্যকর করা হয়েছে। এর ফলে অগণিত মানুষের রুটি-রুজির উপর আঘাত এসেছে। কিন্তু এই কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা ছাড়া বিকল্প কোনো উপায় ছিল না।

“আমাদের স্মরণ রাখতে হবে, প্রতিটি দেশেরই স্বাস্থ্য অবকাঠামোর একটি নির্দিষ্ট সক্ষমতা রয়েছে। হঠাৎ করে দ্রুতগতিতে রোগী বাড়তে থাকলে তখন সেবা দেওয়া অসম্ভব হয়ে পড়ে। আপনারা দেখেছেন, উন্নত দেশগুলো পর্যন্ত করোনা রোগীর সেবা দিতে হিমশিম খাচ্ছে। সেজন্য আমাদের কোনোভাবেই রোগীর সংখ্যা বাড়তে দেওয়া যাবে না।”

সরকার মানুষের জীবন ও জীবিকার মধ্যে একটি সামঞ্জস্য বজায় রাখার ‘চেষ্টা করে যাচ্ছে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “যারা কর্মহীন হয়ে পড়েছেন, তাদের সহায়তার জন্য সরকার সর্বাত্মক উদ্যোগ গ্রহণ করেছে।”

ভারতীয় কর্তৃপক্ষ টিকা রপ্তানির উপর সাময়িক নিষেধাজ্ঞা দেওয়ায় সরবরাহ ব্যবস্থায় ‘কিছুটা সমস্যা’ হওয়ার বিষয়টি তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সরকার বিকল্প উৎস থেকে টিকা সংগ্রহের উদ্যোগও ইতোমধ্যে নিয়েছে।

“রাশিয়া এবং চীনের টিকা উৎপাদনকারী সংস্থার সঙ্গে আমাদের আলোচনা চলছে। উপহার হিসেবে চীনের কাছ থেকে টিকা ইতোমধ্যে আমরা পেয়েছি। আমরা টিকা পাওয়ার জন্য আমেরিকার কাছেও অনুরোধ জানিয়েছি। বিশ্ব টিকাকরণ সংস্থা কোভ্যাক্সের কাছ থেকেও আমরা উল্লেখযোগ্য পরিমাণ টিকা পাব।

“বিভিন্ন উৎস থেকে আমরা এক কোটি টিকা ক্রয়ের ব্যবস্থা নিয়েছি। খুব শিগগিরই দেশে টিকা আসতে শুরু করবে। তাছাড়া, দেশেই যাতে টিকা উৎপাদন করতে পারি, সে ব্যবস্থা আমরা নিয়েছি। নিজেদের টিকা তৈরিতে কয়েক মাস সময় লাগবে। আমরা দেশের সকল নাগরিককে টিকার আওতায় নিয়ে আসব, ইনশাআল্লাহ।”

তিনি বলেন, গত বছর মহামারি শুরু হওয়ার পর থেকে এ পর্যন্ত ৬ হাজার ১৬৬ জন ডাক্তার, ৫ হাজার ৫৪ জন নার্স এবং প্রায় সাড়ে ৪ হাজার অন্যান্য স্বাস্থ্যকর্মী নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। জেলা হাসপাতালগুলোসহ দেশের ১৩০টি সরকারি হাসপাতালে কেন্দ্রীয় অক্সিজেন সরবরাহ ব্যবস্থা চালু করা হয়েছে। ঢাকার মহাখালীর ডিএনসিসি মার্কেটে চালু হয়েছে ২ হাজার শয্যার কোভিড হাসপাতাল।

স্বাস্থ্যকর্মী, আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য, সশস্ত্রবাহিনীর সদস্য, প্রশাসনের কর্মকর্তা-কর্মচারীসহ যারা ঝুঁকি নিয়ে করোনাভাইরাস মোকাবেলায় ভূমিকা রেখে যাচ্ছেন, তাদের সবাইকে ধন্যবাদ জানান প্রধানমন্ত্রী।

করোনাভাইরাস প্রতিরোধে নাগরিকদের দায়িত্বেই সবচেয়ে বেশি মন্তব্য করে তিনি বলেন, “এই ভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকাতে মাস্কের ব্যবহার অত্যন্ত ফলপ্রসূ বলে প্রমাণিত হয়েছে। কাজেই বাইরে গেলে অবশ্যই মাস্ক ব্যবহার করবেন। পাশাপাশি যথাসম্ভব ঘনঘন সাবানপানি দিয়ে হাত ধুয়ে নিন অথবা স্যানিটাইজার দিয়ে হাত জীবাণুমুক্ত করুন। সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখুন।”

জনগণের ‘সহযোগিতায়’ এবং সরকারের ‘সময়োচিত কার্যক্রমে’ গত এক বছর করোনাভাইরাস মহামারীর আর্থিক অভিঘাত ‘খুব ভালোভাবেই’ সামাল দেওয়া সম্ভব হয়েছে বলে মনে করেন প্রধানমন্ত্রী। ভাষণে তিনি বলেন, “আমরা যখন প্রথম ঢেউ সামলে অর্থনীতিকে সাবেক অবস্থার দ্বারপ্রান্তে নিয়ে আসার পর্যায়ে, তখনই মার্চ মাসে দ্বিতীয় ঢেউ আঘাত হেনেছে। এতে করে আমাদের প্রত্যাশিত প্রবৃদ্ধিতে হয়ত খানিকটা ভাটা পড়বে।

“তবে আমাদের অভ্যন্তরীণ এবং বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থার হিসেবে এবারও আমরা আশানুরূপ প্রবৃদ্ধি অর্জন করতে সক্ষম হবো। গত সপ্তাহে আমাদের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ৪৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার অতিক্রম করেছে।”

ভাষণের শুরুতেই দেশের জনগণ ও বিশ্ববাসীকে ঈদুল ফিতরের শুভেচ্ছা সবাইকে ‘ঈদ মোবারক’ বলেন শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, “ঈদের দিন আনন্দের দিন। মনের সব কালিমা দূর করে, মানুষে মানুষে ভেদাভেদ ভুলে একে অপরের সঙ্গে মিলিয়ে যাওয়ার মধ্যেই ঈদের আনন্দ। “আজকের দিনে আমরা হিংসা-বিদ্বেষ, ঘৃণা, লোভ, অহমিকা, ক্রোধ, অহঙ্কার ইত্যাদি যাবতীয় কুপ্রবৃত্তি থেকে নিজেদের মুক্ত করে সাম্য, ভ্রাতৃত্ব, ঐক্য, সৌহার্দ্য, সম্প্রীতির বন্ধনে আবদ্ধ হওয়ার শপথ নেব।”

back to top