alt

জাতীয়

ঢাকায় করোনার ৬৮ শতাংশ ভারতীয় ধরন

নিজস্ব বার্তা পরিবেশক : শুক্রবার, ১৮ জুন ২০২১

করোনা সংক্রমণের ঊর্ধ্বগতি, পরীক্ষা করাতে ক্রমাগত ভিড় বাড়ছে। গতকাল মুগদা বিশেষায়িত হাসপাতালে গাদাগাদি করে অপেক্ষায় সবাই, স্বাস্থ্যবিধি উপেক্ষিত -সংবাদ

বাংলাদেশে করোনার ভারতীয় ভ্যারিয়েন্ট ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়েছে। ঢাকার করোনা আক্রান্তদের ৬৮ শতাংশ নমুনায় ভারতীয় ধরন পাওয়া গেছে। আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা কেন্দ্র বাংলাদেশের (আইসিডিডিআর’বি) একটি গবেষণায় এ তথ্য উঠে এসেছে।

করোনার ভারতীয় ভ্যারিয়েন্ট সীমান্ত এলাকায় বেশি ছড়িয়েছে খবর পাওয়া গেলেও এখন তা ঢাকায় ব্যাপক আকার ধারণ করেছে বলে আইসিডিডিআর’বির গবেষণায় উঠে এসেছে।

আইসিডিডিআর’বির জ্যেষ্ঠ বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. মোস্তাফিজুর রহমান এ গবেষণার সঙ্গে যুক্ত। তিনি সংবাদমাধ্যমকে ঢাকায় ভারতীয় ভ্যারিয়েন্ট ছড়িয়ে পড়ার এমন পরিস্থিতি নিশ্চিত করেছেন।

আইসিডিডিআর’বি কর্মকর্তা তারিফুল ইসলাম সংবাদকে জানান, সম্প্রতি আইসিডিডিআর’বির একটি গবেষণায় ৬০টি নমুনার জিনম সিকোয়েন্সিং করে ৬৮ শতাংশ নমুনায় ভারতীয় ধরন পাওয়া গেছে। গত মে মাসের প্রথম সপ্তাহ ও জুন মাসের প্রথম সপ্তাহে এই দুই মাসে ৬০টি নমুনার জিনম সিকোয়েন্সিং করে এই ফলাফল পাওয়া গেছে। ২২ শতাংশ দক্ষিণ আফ্রিকান ভ্যারিয়েন্ট পাওয়া গেছে। এছাড়া এরই মধ্যে নাইজেরিয়া ভ্যারিয়েন্টও পাওয়া গেছে। তিনি আরও বলেন, আইসিডিডিআর’বি বিভিন্ন সময় করোনার নুমনা সংগ্রহ করে জিনম সিকোয়েন্সিং করে থাকেন। সবশেষ জিনম সিকোয়েন্সিংয়ে করোনার ভারতীয় ধরন পাওয়া গেছে।

এ গবেষণার পাশাপাশি করোনা সংক্রমণের হার হ্রাস করার লক্ষ্যে এবং দেশে ভারতীয় ভ্যারিয়েন্টসহ করোনার অন্যান্য ধরনের বিস্তার রোধে জনসাধারণকে সঠিকভাবে মাস্ক ব্যবহার এং অন্যান্য স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার পরামর্শ দিয়েছে আইইডিসিআর।

জানা গেছে, ৪ জুন রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের (আইইডিসিআর) এক গবেষণায় করোনাভাইরাসে আক্রান্ত ৫০ রোগীর জিনোম সিকোয়েন্সিং করে ৪০ জনের ক্ষেত্রে ভারতীয় ভ্যারিয়েন্ট ধরা পড়ে। এই নমুনাগুলো ছিল সারাদেশ থেকে সংগ্রহ করা।

সেই গবেষণায় ৮টি (১৬ শতাংশ) নমুনায় সাউথ আফ্রিকান ভ্যারিয়েন্ট শনাক্ত হয়। এর মধ্যে চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা থেকে সংগৃহীত ১৬টি নমুনার ১৫টিতে, গোপালগঞ্জে সাতটি নমুনার সবগুলোতে ভারতীয় ভ্যারিয়েন্ট শানাক্ত হয়। এছাড়া খুলনা শহর থেকে সংগৃহীত তিনটি নমুনার সবগুলোয়, ঢাকা শহরের চারটি নমুনার দুটিতে ভারতীয় ভ্যারিয়েন্টের উপস্থিতি পাওয়া গেছে। এরপরই আইইডিসিআর গবেষণায় ঢাকায় ব্যাপকভাবে ভারতীয় ভ্যারিয়েন্ট ছড়িয়ে পড়ার তথ্য জানা গেল।

এদিকে দেশে করোনার ভারতীয় ভ্যারিয়েন্টের ‘কমিউনিটি সংক্রমণ’ ঘটছে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার মতে, ভাইরাসে আক্রান্ত ব্যক্তি কার দ্বারা কীভাবে সংক্রমিত হলেন, সেটি যখন আর বোঝা যায় না, তখন সেটিকে সামাজিক সংক্রমণ বলে।

বাংলাদেশে ভ্যারিয়েন্টটির প্রবেশ ঠেকাতে ২৬ এপ্রিল থেকে ভারতের সঙ্গে যাত্রী চলাচলে সীমান্ত বন্ধ করে দেয় সরকার। দফায় দফায় বাড়ানো হয়েছে এর মেয়াদ। ১২ মে ভারতে করোনাভাইরাসের উচ্চ সংক্রমণের জন্য দায়ী ভ্যারিয়েন্টটি ৪৪ দেশে পাওয়ার কথা জানায় বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থা। ভারত ভ্যারিয়েন্টের আগে করোনার যুক্তরাজ্য, ব্রাজিল ও সাউথ আফ্রিকা ভ্যারিয়েন্ট শনাক্ত হয়। করোনার ভ্যারিয়েন্টগুলোকে আদি রূপের চেয়ে বেশি ভয়াবহ মনে করা হয়। কারণ ভ্যারিয়েন্টগুলো হয় বেশি সংক্রামক, প্রাণঘাতী অথবা টিকার বিরুদ্ধে কম কার্যকর।

ভারতীয় ভ্যারিয়েন্ট নিয়ে বিজ্ঞানীরা বলছেন, কিছু মিউটেশনের কারণে ভাইরাসটির স্পাইক প্রোটিনে পরিবর্তন ঘটে। মানবদেহের কোষের সঙ্গে নিজেকে আটকে ফেলতে এবং ভেতরে ঢুকতে ভাইরাসটি এই স্পাইক প্রোটিন ব্যবহার করে। ভাইরাসের মধ্যে যখন এ ধরনের মিউটেশন ঘটে, তখন এর সংক্রমণ ঘটানোর ক্ষমতা সম্ভবত বেড়ে যায়। এ ধরনের ভাইরাসে মানুষ বেশি অসুস্থ হয়ে পড়ে এবং এটি প্রতিরোধে টিকা আর কাজ করে না।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ভারত ভ্যারিয়েন্ট দ্রুত রোগীকে কাবু করে ফেলে। কোন ধরনের উপসর্গ প্রকাশের ১০ ঘণ্টার মধ্যেই অক্সিজেনের চাহিদা তৈরি হয়। অনেক ক্ষেত্রে রোগীকে বাঁচাতে দিতে হয় আইসিইউ সাপোর্ট।

গত বছর সেপ্টেম্বরে করোনাভাইরাস মহামারীর বড় ধাক্কা লাগে ভারতে। নভেম্বর থেকে ভাইরাসের সংক্রমণ ক্রমেই নিম্নমুখী হয় এবং চলতি বছরের মার্চ মাসের মাঝামাঝি পর্যন্ত তা বজায় থাকে। এরপরই আবার ঊর্ধ্বমুখী হতে শুরু করে ভারতীয় করোনার সংক্রমণ।

মহাখালী রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের সাবেক প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ডা. মুশতাক হোসেন গতকাল রাতে সাংবাদকে জানান, এর আগে পরীক্ষায়ও ৫০টি নমুনার মধ্যে ৪০টিতে ডেল্টা ভ্যারিয়েন্ট পাওয়া গিয়েছিল। ‘এটা মোটামুটি অনুমিতই ছিল। ৬৮ শতাংশ ডেল্টা ধরন পাওয়া মানে এই ধরনটি আমাদের এখানে প্রাধান্য বিস্তার করছে। এই ধরন খুব দ্রুত ছড়ায়। আক্রান্ত মানুষকে দীর্ঘদিন হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে হয়। ধরন যাই হোক, করোনাভাইরাস থেকে প্রতিরোধের একটাই উপায় স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা।’

দেশের জন্য বিপজ্জনক

আইসিইউ বিশেষজ্ঞ প্রফেসর ডা. দেবব্রত বনিক গতকাল রাত পৌনে ১০টার দিকে সংবাদকে জানান, এখন দেশে আক্রান্তদের মধ্যে বেশিরভাগই ভারতীয় ভ্যারিয়েন্ট। এছাড়া সাউথ আফ্রিকা, ব্রাজিল ও ইউকে ভ্যারিয়েন্ট রয়েছে। চার ধরনের ভ্যারিয়েন্ট এখন বাংলাদেশে যা দেশের জন্য খুবই বিপজ্জনক। এজন্য সবার স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা উচিত। এছাড়া এলাকাভিত্তিক লকডাউন দেয়া দরকার বলে তিনি মনে করেন।

আগামী ছয় মাস নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় চলবে নিউমুরিং টার্মিনাল: অর্থ উপদেষ্টা

জ্যেষ্ঠতা যোগদানের তারিখ থেকে, রুল হাইকোর্টের

মগবাজারে হোটেলে স্ত্রী-সন্তানসহ প্রবাসীর মৃত্যু

ডেঙ্গু: আরও ৩৮৬ জন আক্রান্ত, মৃত্যু ১

আদালতে সাবেক সিইসি নূরুল হুদার ‘স্বীকারোক্তিমূলক’ জবানবন্দি

ছবি

বারোমাসিয়া নদীর ভাঙা সাঁকোয় বারোমাসই দুঃখ

ছবি

কক্সবাজারের সাবেক ডিসি, জজসহ ৫ জনের বিচার শুরু আগামী ৩ আগস্ট সাক্ষ্যগ্রহণ

ছবি

মুরাদনগরে সামাজিক প্রতিরোধ কমিটির ১৫ সদস্যের দল

ছবি

ইস্টার্ন রিফাইনারিতে গত অর্থবছরে তেল শোধন ১৫ লাখ ৩৫ হাজার মেট্রিক টন

ছবি

এনবিআরের আরও ৫ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে দুদকের অনুসন্ধান শুরু

শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আনা ৫ অভিযোগ সঠিক নয়, দাবি রাষ্ট্র নিযুক্ত আইনজীবীর

ছবি

হবিগঞ্জ গ্যাসফিল্ড খনন প্রকল্পের নামে সমান হচ্ছে পাহাড়

রাজধানীতে বিএনপি নেতাকে কুপিয়ে হত্যা, গ্রেপ্তার ২

ছবি

জুলাই সনদ বাস্তবায়ন করেই ঘরে ফিরবো, ঘোষণা নাহিদ ইসলামের

ছবি

প্রতিবেশী দেশের নেতার সঙ্গে ফোনালাপ, থাইল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রীকে অব্যাহতি

জ্বালানি আমদানিতে শুল্ক নীতি সংশোধন, চাপে বিপিসি

ভোটের তারিখ বা সময় নিয়ে প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে কোনো আলোচনা হয়নি: সিইসি

ছবি

জাতীয় সরকারের কথা বললেন তারেক

ছবি

স্বৈরাচার যেন আর মাথাচাড়া দিতে না পারে: প্রধান উপদেষ্টা

ছবি

পদ্মা সেতু মামলার পুনরুজ্জীবনে উদ্যোগ, ‘গায়ের জোরে’ দায়মুক্তি দেওয়ার অভিযোগ দুদকের

ছবি

ডেঙ্গু আক্রান্ত ১০ হাজার ছাড়াল, মৃতের সংখ্যা ৪৩

ছবি

দেশে নারী ও শিশু নির্যাতন, আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতিতে ড. কামাল হোসেনের উদ্বেগ প্রকাশ

ছবি

জুলাই গণ-অভ্যুত্থান বর্ষপূর্তিতে মাসব্যাপী স্মৃতি উদ্‌যাপন শুরু

ছবি

শেখ হাসিনাসহ ২৩ জনকে হাজিরার নির্দেশ, পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের আদেশ

ছবি

আসিফের ব্যাগে ম্যাগাজিন: শাহজালাল বিমানবন্দরে বাড়ানো হল নিরাপত্তা

ছবি

বাংলাদেশে কোনো জঙ্গি নেই, ছিনতাইকারীরা-ই আসল সমস্যা: ডিএমপি কমিশনার

ছবি

ফেব্রুয়ারিতে জাতীয় নির্বাচন ধরে প্রস্তুতি নিতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে নির্দেশ

ছবি

ইউনূস–রুবিও ফোনালাপে ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে নিরাপত্তা জোরদারে জোর

ছবি

৪৪তম বিসিএসের চূড়ান্ত ফল প্রকাশ, উত্তীর্ণ ১,৬৯০ জন

ছবি

‘ন্যায়সংগত ও টেকসই জ্বালানি রূপান্তরের প্রয়োজনীয়তা জরুরি’

আহমেদ আকবর সোবহান ও তারিক আহমেদ সিদ্দিককে দুদকে তলব

সাড়ে তিন মাসেও সন্ধান মেলেনি নিখোঁজ কলেজছাত্রীর

এনসিপির সততা নিয়ে প্রশ্ন ‘আপ বাংলাদেশ’র

পলাতক লিয়াকত শিকদার, জব্দ ব্যাংক অ্যাকাউন্ট

ছবি

বাবুই পাখির ছানা হত্যা, অভিযুক্ত মোবারক আলী গ্রেপ্তার

শূন্য ইউনিটের বিদ্যুৎ বিল ৪০ হাজার টাকা!

tab

জাতীয়

ঢাকায় করোনার ৬৮ শতাংশ ভারতীয় ধরন

নিজস্ব বার্তা পরিবেশক

শুক্রবার, ১৮ জুন ২০২১

করোনা সংক্রমণের ঊর্ধ্বগতি, পরীক্ষা করাতে ক্রমাগত ভিড় বাড়ছে। গতকাল মুগদা বিশেষায়িত হাসপাতালে গাদাগাদি করে অপেক্ষায় সবাই, স্বাস্থ্যবিধি উপেক্ষিত -সংবাদ

বাংলাদেশে করোনার ভারতীয় ভ্যারিয়েন্ট ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়েছে। ঢাকার করোনা আক্রান্তদের ৬৮ শতাংশ নমুনায় ভারতীয় ধরন পাওয়া গেছে। আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা কেন্দ্র বাংলাদেশের (আইসিডিডিআর’বি) একটি গবেষণায় এ তথ্য উঠে এসেছে।

করোনার ভারতীয় ভ্যারিয়েন্ট সীমান্ত এলাকায় বেশি ছড়িয়েছে খবর পাওয়া গেলেও এখন তা ঢাকায় ব্যাপক আকার ধারণ করেছে বলে আইসিডিডিআর’বির গবেষণায় উঠে এসেছে।

আইসিডিডিআর’বির জ্যেষ্ঠ বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. মোস্তাফিজুর রহমান এ গবেষণার সঙ্গে যুক্ত। তিনি সংবাদমাধ্যমকে ঢাকায় ভারতীয় ভ্যারিয়েন্ট ছড়িয়ে পড়ার এমন পরিস্থিতি নিশ্চিত করেছেন।

আইসিডিডিআর’বি কর্মকর্তা তারিফুল ইসলাম সংবাদকে জানান, সম্প্রতি আইসিডিডিআর’বির একটি গবেষণায় ৬০টি নমুনার জিনম সিকোয়েন্সিং করে ৬৮ শতাংশ নমুনায় ভারতীয় ধরন পাওয়া গেছে। গত মে মাসের প্রথম সপ্তাহ ও জুন মাসের প্রথম সপ্তাহে এই দুই মাসে ৬০টি নমুনার জিনম সিকোয়েন্সিং করে এই ফলাফল পাওয়া গেছে। ২২ শতাংশ দক্ষিণ আফ্রিকান ভ্যারিয়েন্ট পাওয়া গেছে। এছাড়া এরই মধ্যে নাইজেরিয়া ভ্যারিয়েন্টও পাওয়া গেছে। তিনি আরও বলেন, আইসিডিডিআর’বি বিভিন্ন সময় করোনার নুমনা সংগ্রহ করে জিনম সিকোয়েন্সিং করে থাকেন। সবশেষ জিনম সিকোয়েন্সিংয়ে করোনার ভারতীয় ধরন পাওয়া গেছে।

এ গবেষণার পাশাপাশি করোনা সংক্রমণের হার হ্রাস করার লক্ষ্যে এবং দেশে ভারতীয় ভ্যারিয়েন্টসহ করোনার অন্যান্য ধরনের বিস্তার রোধে জনসাধারণকে সঠিকভাবে মাস্ক ব্যবহার এং অন্যান্য স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার পরামর্শ দিয়েছে আইইডিসিআর।

জানা গেছে, ৪ জুন রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের (আইইডিসিআর) এক গবেষণায় করোনাভাইরাসে আক্রান্ত ৫০ রোগীর জিনোম সিকোয়েন্সিং করে ৪০ জনের ক্ষেত্রে ভারতীয় ভ্যারিয়েন্ট ধরা পড়ে। এই নমুনাগুলো ছিল সারাদেশ থেকে সংগ্রহ করা।

সেই গবেষণায় ৮টি (১৬ শতাংশ) নমুনায় সাউথ আফ্রিকান ভ্যারিয়েন্ট শনাক্ত হয়। এর মধ্যে চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা থেকে সংগৃহীত ১৬টি নমুনার ১৫টিতে, গোপালগঞ্জে সাতটি নমুনার সবগুলোতে ভারতীয় ভ্যারিয়েন্ট শানাক্ত হয়। এছাড়া খুলনা শহর থেকে সংগৃহীত তিনটি নমুনার সবগুলোয়, ঢাকা শহরের চারটি নমুনার দুটিতে ভারতীয় ভ্যারিয়েন্টের উপস্থিতি পাওয়া গেছে। এরপরই আইইডিসিআর গবেষণায় ঢাকায় ব্যাপকভাবে ভারতীয় ভ্যারিয়েন্ট ছড়িয়ে পড়ার তথ্য জানা গেল।

এদিকে দেশে করোনার ভারতীয় ভ্যারিয়েন্টের ‘কমিউনিটি সংক্রমণ’ ঘটছে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার মতে, ভাইরাসে আক্রান্ত ব্যক্তি কার দ্বারা কীভাবে সংক্রমিত হলেন, সেটি যখন আর বোঝা যায় না, তখন সেটিকে সামাজিক সংক্রমণ বলে।

বাংলাদেশে ভ্যারিয়েন্টটির প্রবেশ ঠেকাতে ২৬ এপ্রিল থেকে ভারতের সঙ্গে যাত্রী চলাচলে সীমান্ত বন্ধ করে দেয় সরকার। দফায় দফায় বাড়ানো হয়েছে এর মেয়াদ। ১২ মে ভারতে করোনাভাইরাসের উচ্চ সংক্রমণের জন্য দায়ী ভ্যারিয়েন্টটি ৪৪ দেশে পাওয়ার কথা জানায় বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থা। ভারত ভ্যারিয়েন্টের আগে করোনার যুক্তরাজ্য, ব্রাজিল ও সাউথ আফ্রিকা ভ্যারিয়েন্ট শনাক্ত হয়। করোনার ভ্যারিয়েন্টগুলোকে আদি রূপের চেয়ে বেশি ভয়াবহ মনে করা হয়। কারণ ভ্যারিয়েন্টগুলো হয় বেশি সংক্রামক, প্রাণঘাতী অথবা টিকার বিরুদ্ধে কম কার্যকর।

ভারতীয় ভ্যারিয়েন্ট নিয়ে বিজ্ঞানীরা বলছেন, কিছু মিউটেশনের কারণে ভাইরাসটির স্পাইক প্রোটিনে পরিবর্তন ঘটে। মানবদেহের কোষের সঙ্গে নিজেকে আটকে ফেলতে এবং ভেতরে ঢুকতে ভাইরাসটি এই স্পাইক প্রোটিন ব্যবহার করে। ভাইরাসের মধ্যে যখন এ ধরনের মিউটেশন ঘটে, তখন এর সংক্রমণ ঘটানোর ক্ষমতা সম্ভবত বেড়ে যায়। এ ধরনের ভাইরাসে মানুষ বেশি অসুস্থ হয়ে পড়ে এবং এটি প্রতিরোধে টিকা আর কাজ করে না।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ভারত ভ্যারিয়েন্ট দ্রুত রোগীকে কাবু করে ফেলে। কোন ধরনের উপসর্গ প্রকাশের ১০ ঘণ্টার মধ্যেই অক্সিজেনের চাহিদা তৈরি হয়। অনেক ক্ষেত্রে রোগীকে বাঁচাতে দিতে হয় আইসিইউ সাপোর্ট।

গত বছর সেপ্টেম্বরে করোনাভাইরাস মহামারীর বড় ধাক্কা লাগে ভারতে। নভেম্বর থেকে ভাইরাসের সংক্রমণ ক্রমেই নিম্নমুখী হয় এবং চলতি বছরের মার্চ মাসের মাঝামাঝি পর্যন্ত তা বজায় থাকে। এরপরই আবার ঊর্ধ্বমুখী হতে শুরু করে ভারতীয় করোনার সংক্রমণ।

মহাখালী রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের সাবেক প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ডা. মুশতাক হোসেন গতকাল রাতে সাংবাদকে জানান, এর আগে পরীক্ষায়ও ৫০টি নমুনার মধ্যে ৪০টিতে ডেল্টা ভ্যারিয়েন্ট পাওয়া গিয়েছিল। ‘এটা মোটামুটি অনুমিতই ছিল। ৬৮ শতাংশ ডেল্টা ধরন পাওয়া মানে এই ধরনটি আমাদের এখানে প্রাধান্য বিস্তার করছে। এই ধরন খুব দ্রুত ছড়ায়। আক্রান্ত মানুষকে দীর্ঘদিন হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে হয়। ধরন যাই হোক, করোনাভাইরাস থেকে প্রতিরোধের একটাই উপায় স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা।’

দেশের জন্য বিপজ্জনক

আইসিইউ বিশেষজ্ঞ প্রফেসর ডা. দেবব্রত বনিক গতকাল রাত পৌনে ১০টার দিকে সংবাদকে জানান, এখন দেশে আক্রান্তদের মধ্যে বেশিরভাগই ভারতীয় ভ্যারিয়েন্ট। এছাড়া সাউথ আফ্রিকা, ব্রাজিল ও ইউকে ভ্যারিয়েন্ট রয়েছে। চার ধরনের ভ্যারিয়েন্ট এখন বাংলাদেশে যা দেশের জন্য খুবই বিপজ্জনক। এজন্য সবার স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা উচিত। এছাড়া এলাকাভিত্তিক লকডাউন দেয়া দরকার বলে তিনি মনে করেন।

back to top