alt

আ-মরি বাংলা ভাষা

যশোরে ভাষা আন্দোলন

রুকুনউদ্দৌলাহ, যশোর : বৃহস্পতিবার, ১০ ফেব্রুয়ারী ২০২২

১৯৪৭ সালের ১৪ আগস্ট পাকিস্তান নামক রাষ্ট্রের জন্ম হয়। বুদ্ধিজীবী মহলে উর্দুকে রাষ্ট্রভাষা করা নিয়ে আলোচনা চলছিল আর এটার প্রচারণা চালাচ্ছিল কলকাতা থেকে প্রকাশিত ‘আজাদ’ পত্রিকা। জুলাই মাসের প্রথম সপ্তাহে আজাদে এই বিষয়ে নিবন্ধ প্রকাশিত হয়। তারই প্রেক্ষিতে, বাংলা ভাষার দাবিতে ১০ জুলাই কলকাতার ‘স্বাধীনতা’ পত্রিকায় হামিদা রহমান প্রতিবাদ জানিয়ে একটি চিঠি লিখেন। হামিদা রহমান ছিলেন যশোর মাইকেল মধুসূদন কলেজের (এম এম কলেজ) একজন ছাত্রী। বর্তমানে তার নামে একটি ছাত্রী হল রয়েছে এম এম কলেজে।

‘পাকিস্তান জনগণের রাষ্ট্র। তাই তার ভাষা হবে জনগণের ভাষা। বাংলার সাড়ে চার কোটি লোক যে ভাষায় কথা বলে, যে ভাষায় সাহিত্য রচনা করে, যে ভাষায় মনের ভাব ব্যক্ত করে সে ভাষা তাদের নিজস্ব ভাষা হবে না, এও কি বিশ্বাস করতে হবে?’ বাংলা ভাষার দাবিতে ১৯৪৭ সালের ১০ জুলাই কলকাতা থেকে প্রকাশিত কমিউনিস্ট পার্টির মুখপাত্র ‘স্বাধীনতা’ পত্রিকায় এই চিঠিটি লিখেছিলেন যশোর মাইকেল মধুসূদন কলেজের ছাত্রী হামিদা রহমান। বাংলা ভাষার দাবিতে এটিই ছিল পত্রিকায় ছাপা প্রথম চিঠি।

রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদ গঠন করে এম এম কলেজের এলভি মিটার লেকচার হল থেকে পরিচালিত হয় ভাষা আন্দোলন। এটিকেই অনেকে ভাষা আন্দোলনের আঁতুরঘর বলে থাকেন। এই রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদে যারা সদস্য ছিলেন, তারা হলেন- আলমগীর সিদ্দিকী, রঞ্জিত মিত্র, হামিদা সেলিম, সুধির কুমার রায়, দেবীপদ, নাজিম উদ্দিন, আফসার আহমেদ সিদ্দিকী, হামিদা রহমান, হায়বাতুল্লাহ জোয়ার্দ্দার, সুনীল রায়, অশোক ঘোষ প্রমুখ এবং পরে এই কমিটিতে ডা. জীবন রতন ধর, অ্যাডভোকেট মশিউর রহমান, অনন্ত মিত্র, ও আবদুল খালেক প্রমুখকে যুক্ত করা হয়।

১৯৪৮ সালের ফেব্রুয়ারিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররা সভা করে রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদ গঠন করে রাষ্ট্রভাষা বাংলার দাবিতে এবং সেটা জাতীয় সংবাদ মাধ্যমে প্রচারিত হয়। এর ফলে ভাষা আন্দোলনের গতি আরও বেড়ে যায়। ফেব্রুয়ারিতেই শিক্ষার্থী আলমগীর সিদ্দিকী, নাজিম উদ্দিন, আফসার আহমেদ সিদ্দিকী, হামিদা রহমান, হায়বাতুল্লাহ জোয়ার্দ্দারসহ আরও কয়েকজন রাষ্ট্রভাষা বাংলার দাবিতে সংবাদপত্রে বিবৃতি প্রকাশ করেন।

২৮ ফেব্রুয়ারি এম এম কলেজের পুরাতন কলেজ ভবনের লেকচার হলে ছাত্রসভা অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে ২ মার্চ কলেজে ছাত্র ধর্মঘট পালনের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। টানটান উত্তেজনার মধ্যে ২ মার্চ কলেজে পূর্ণ ছাত্র ধর্মঘট পালিত হয়। এরপর ১০ মার্চ যশোরের জেলা ম্যাজিস্ট্রেট নোমানী শহরে ১৪৪ ধারা জারি করে সভা, সমাবেশ, মিছিল, পিকেটিং নিষিদ্ধ ঘোষণা করেন।

সেই ১৪৪ ধারা ভেঙে ১১ মার্চ বেশিরভাগ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা ক্লাস বর্জন করে রাজপথে নেমে আসে। সেই মিছিল শহরের বিভিন্ন এলাকা ঘুরে টিএন্ডটি ভবনের সামনে সমাবেশ করলে পুলিশ সেখান থেকে বহু নেতা ও ছাত্রকে গ্রেপ্তার করে। এই নির্যাতনের প্রতিবাদে ১২ মার্চ আবারও ছাত্র ধর্মঘট পালিত হয় যশোরে।

১৩ মার্চ হরতাল সফল করতে শিক্ষার্থী ও যশোরের সব শ্রেণী-পেশার মানুষ রাজপথে নেমে আসে। সকালে যশোর মাইকেল মধুসূদন কলেজ থেকে বিক্ষোভ মিছিল বের হয়। মিছিলে সব শ্রেণীর মানুষ ও সরকারি কর্মচারী যোগ দেন। মিছিলটি ডিস্ট্রিক ম্যাজিস্ট্রেটের কার্যালয় যশোর কালেক্টরেট ভবনের দিকে এগোতে চাইলে দড়াটানায় পুলিশ বাধা দেয়।

যশোর কোতয়ালি থানার ওসি আবদুল জব্বারের নেতৃত্বে পুলিশ মিছিলে হামলা চালায়। বেধড়ক লাঠিপেটায় মিছিল ছত্রভঙ্গ করে দেয় পুলিশ, কিন্তু সংগ্রামী ছাত্র-জনতা হামলার বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলে। সংগ্রামী ছাত্র-জনতা পুলিশের ওপর ইট-পাটকেল ছোড়ে। একপর্যায়ে ডা. জীবন রতন ধর, আলমগীর সিদ্দিকী, আফসার আহম্মেদ সিদ্দিকীর নেতৃত্বে বিক্ষুব্ধ ছাত্র-জনতা কালেক্টরেট ভবনে ঢুকে জানালা-দরজা ভাঙচুর করে। জেলা ম্যাজিস্ট্রেট নোমানীর অফিসেও হামলা চালায়। ছাত্রদের ইটের আঘাতে আহত হন ওসি জব্বার। কোতয়ালি থানার দারোগার মাথা ফেটে যায়।

পুলিশ ছাত্র-জনতার ওপর গুলি চালালে সংগ্রাম পরিষদের যুগ্ম আহ্বায়ক আলমগীর সিদ্দিকী আহত হন। তার পায়ে গুলি লাগে। পরে এসব বিষয় যশোরের আইন পরিষদের সদস্য খান বাহাদুর লুৎফর রহমানকে জানান সংগ্রাম পরিষদ নেতারা এবং পূর্ববঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী খাজা নাজিমউদ্দিনকে ঘটনা জানিয়ে টেলিগ্রাম করেন।

১৮ মার্চ রাজবন্দী মুক্তি দিবস পালন করা হয়। এ বিষয়ে কলকাতা থেকে প্রকাশিত ২০ মার্চ ‘আনন্দবাজার’ পত্রিকায় খবর প্রকাশিত হয়। চারিদিকে এই নিয়ে আন্দোলন শুরু হলে ১৯৪৮ সালের ২৯ মার্চ তারিখে আটক ভাষা সৈনিকদের মুক্তি দেয়া হয়। এভাবে প্রথম ধাপে যশোরে রাষ্ট্রভাষা বাংলার দাবিতে ভাষা আন্দোলনের কার্যক্রম চলে। পরবর্তীতে ১৯৫২ সালে দেশব্যাপী যখন ভাষা আন্দোলন আরও তুঙ্গে তখনও যশোর ছিল সরব। ২২ ফেব্রুয়ারিতেই প্রথম শহীদ মিনার তৈরি করে মশিউর রহমান সর্দারের বাড়ির সামনে, যেটা বর্তমান সার্কিট হাউজের সামনে। অবশ্য ১৯৬২ সালে এম এম কলেজের দক্ষিণ গেটের পাশে স্থায়ীভাবে যশোরের কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার নির্মাণ করা হয়।

ভাষা আন্দোলনের ইতিহাসে যশোর নামটি এক অবাক বিস্ময়, কিন্তু দুঃখজনকভাবে সেসব কালেরসাক্ষী ধরে রাখতে তেমন কোন উদ্যেগ নেই। কেবলমাত্র যশোর টাউন হলের নামকরণ করা হয়েছে ভাষাসৈনিক আলমগীর সিদ্দিকী হল এবং ভাষাসৈনিক হামিদা রহমানের নামে যশোর এম এম কলেজে একটি ছাত্রী হলের নামকরণ করা হয়েছে। কিন্তু আন্দোলনের সূতিকাগার যে পুরাতন কলেজ ভবন, সেটি আজ ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে।

ছবি

নেপালে মারধর ও লুটের শিকার এক বাংলাদেশি পরিবার

ছবি

ভোটকেন্দ্রের খসড়া তালিকা প্রকাশ, ‘ব্যবস্থাপনার সুবিধার্থে’ কমেছে ভোটকক্ষের সংখ্যা

ছবি

নেপালে আটকে পড়া বাংলাদেশিরা নিরাপদে আছেন: পররাষ্ট্র উপদেষ্টা

ছবি

হাই কোর্টের আদেশ: পান্থকুঞ্জ পার্ক ও হাতিরঝিলে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণ স্থগিত

ছবি

কাতারে ইসরাইলি আগ্রাসনের নিন্দা জানালো বাংলাদেশ

ছবি

জুলাই সনদ: দলগুলোর সঙ্গে ফের বসবে ঐকমত্য কমিশন

ছবি

১৬ বছরেই মিলবে জাতীয় পরিচয়পত্র: ইসি

ছবি

২০ জনের হাত বা পা কাটতে হয়েছিল, ট্রাইব্যুনালে চিকিৎসকের ভাষ্য

ছবি

আইনশৃঙ্খলা নিয়ে প্রেস উইংয়ের বয়ান

ছবি

নেপাল পরিস্থিতির ওপরে নজর রাখছে ঢাকা, বাংলাদেশীদের বাইরে না বেরুনোর নির্দেশনা

ছবি

‘মঞ্চ ৭১’: এবার গ্রেপ্তার সাবেক সচিব ভূঁইয়া সফিকুল ইসলাম

ছবি

দুর্গাপূজা: ৩৩ হাজার পূজা মণ্ডপে ‘পর্যাপ্ত’ নিরাপত্তা থাকবে, বললেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা

ছবি

সাংবাদিকরা স্বাবলম্বী না হলে পাপেট হয়ে যায়: তথ্য উপদেষ্টা

ছবি

জুলাই সনদ নিয়ে দফায় দফায় বৈঠক, ‘বিশেষ আদেশে’ বাস্তবায়নে মত

মুক্তিযোদ্ধা বা মুক্তিযুদ্ধকে ছোট করার সুযোগ নেই: সেনাবাহিনী

মুক্তিযোদ্ধা বা মুক্তিযুদ্ধকে ছোট করার সুযোগ নেই: সেনাবাহিনী

ছবি

ছাত্র সংসদ নির্বাচন নিয়ে গুজবের অভিযোগ অস্বীকার সেনাবাহিনীর

ছবি

সাবেক সচিব আবু আলম শহীদ খান গ্রেপ্তার

ছবি

বদরুদ্দীন উমরের প্রতি সর্বস্তরের মানুষের শ্রদ্ধা

ছবি

ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচন: ৫২ আসনের সীমানায় ব্যাপক রদবদল

ছবি

বিভিন্ন স্থানে বিক্ষোভ, অবরোধ, সিদ্ধান্তে অনড় ইসি

ছবি

ভাদ্রের তালপাকা গরমে হাঁসফাঁস, আসছে বৃষ্টি

ছবি

স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার স্বীকারোক্তি: আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির কিছুটা অবনতি

ছবি

ডেঙ্গুতে এক দিনে সর্বোচ্চ ৫৮০ জন হাসপাতালে ভর্তি, মৃত্যু ৩ জন

ছবি

ঝটিকা মিছিল ও বেআইনি সমাবেশে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ অন্তর্বর্তী সরকারের

ছবি

শহীদ মিনারে সোমবার বদরুদ্দীন উমরকে সর্বস্তরের মানুষের শ্রদ্ধা

ছবি

চলে গেলেন বদরুদ্দীন উমর

ছবি

নির্বাচন ভণ্ডুলের শঙ্কা, সহিংসতা রোধে জনগণকে এগিয়ে আসার আহ্বান সমাজকল্যাণ উপদেষ্টা

ছবি

ডেঙ্গুতে আরও ২ জনের মৃত্যু, নতুন ভর্তি ৩৬৪

ছবি

নির্বাচন পেছানোর ষড়যন্ত্র চলছে: স্থানীয় সরকার উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ

ছবি

ঈদে মিলাদুন্নবীতে রাজধানীতে বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা

এই ধরনের বর্বরতা কোনো অবস্থাতেই সহ্য করা হবে না: অন্তর্বর্তীকালীন সরকার

ছবি

আজ ঈদে মিলাদুন্নবী

ছবি

আফগানিস্তানে জরুরি ত্রাণ সহায়তা পাঠাল বাংলাদেশ :

ছবি

বাঁকখালী নদীতীরে অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদে স্থবিরতা

আদালতে সাংবাদিকদের ওপর হামলার ঘটনায় জড়িত আইনজীবীদের শাস্তি দাবি

tab

news » national

আ-মরি বাংলা ভাষা

যশোরে ভাষা আন্দোলন

রুকুনউদ্দৌলাহ, যশোর

বৃহস্পতিবার, ১০ ফেব্রুয়ারী ২০২২

১৯৪৭ সালের ১৪ আগস্ট পাকিস্তান নামক রাষ্ট্রের জন্ম হয়। বুদ্ধিজীবী মহলে উর্দুকে রাষ্ট্রভাষা করা নিয়ে আলোচনা চলছিল আর এটার প্রচারণা চালাচ্ছিল কলকাতা থেকে প্রকাশিত ‘আজাদ’ পত্রিকা। জুলাই মাসের প্রথম সপ্তাহে আজাদে এই বিষয়ে নিবন্ধ প্রকাশিত হয়। তারই প্রেক্ষিতে, বাংলা ভাষার দাবিতে ১০ জুলাই কলকাতার ‘স্বাধীনতা’ পত্রিকায় হামিদা রহমান প্রতিবাদ জানিয়ে একটি চিঠি লিখেন। হামিদা রহমান ছিলেন যশোর মাইকেল মধুসূদন কলেজের (এম এম কলেজ) একজন ছাত্রী। বর্তমানে তার নামে একটি ছাত্রী হল রয়েছে এম এম কলেজে।

‘পাকিস্তান জনগণের রাষ্ট্র। তাই তার ভাষা হবে জনগণের ভাষা। বাংলার সাড়ে চার কোটি লোক যে ভাষায় কথা বলে, যে ভাষায় সাহিত্য রচনা করে, যে ভাষায় মনের ভাব ব্যক্ত করে সে ভাষা তাদের নিজস্ব ভাষা হবে না, এও কি বিশ্বাস করতে হবে?’ বাংলা ভাষার দাবিতে ১৯৪৭ সালের ১০ জুলাই কলকাতা থেকে প্রকাশিত কমিউনিস্ট পার্টির মুখপাত্র ‘স্বাধীনতা’ পত্রিকায় এই চিঠিটি লিখেছিলেন যশোর মাইকেল মধুসূদন কলেজের ছাত্রী হামিদা রহমান। বাংলা ভাষার দাবিতে এটিই ছিল পত্রিকায় ছাপা প্রথম চিঠি।

রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদ গঠন করে এম এম কলেজের এলভি মিটার লেকচার হল থেকে পরিচালিত হয় ভাষা আন্দোলন। এটিকেই অনেকে ভাষা আন্দোলনের আঁতুরঘর বলে থাকেন। এই রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদে যারা সদস্য ছিলেন, তারা হলেন- আলমগীর সিদ্দিকী, রঞ্জিত মিত্র, হামিদা সেলিম, সুধির কুমার রায়, দেবীপদ, নাজিম উদ্দিন, আফসার আহমেদ সিদ্দিকী, হামিদা রহমান, হায়বাতুল্লাহ জোয়ার্দ্দার, সুনীল রায়, অশোক ঘোষ প্রমুখ এবং পরে এই কমিটিতে ডা. জীবন রতন ধর, অ্যাডভোকেট মশিউর রহমান, অনন্ত মিত্র, ও আবদুল খালেক প্রমুখকে যুক্ত করা হয়।

১৯৪৮ সালের ফেব্রুয়ারিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররা সভা করে রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদ গঠন করে রাষ্ট্রভাষা বাংলার দাবিতে এবং সেটা জাতীয় সংবাদ মাধ্যমে প্রচারিত হয়। এর ফলে ভাষা আন্দোলনের গতি আরও বেড়ে যায়। ফেব্রুয়ারিতেই শিক্ষার্থী আলমগীর সিদ্দিকী, নাজিম উদ্দিন, আফসার আহমেদ সিদ্দিকী, হামিদা রহমান, হায়বাতুল্লাহ জোয়ার্দ্দারসহ আরও কয়েকজন রাষ্ট্রভাষা বাংলার দাবিতে সংবাদপত্রে বিবৃতি প্রকাশ করেন।

২৮ ফেব্রুয়ারি এম এম কলেজের পুরাতন কলেজ ভবনের লেকচার হলে ছাত্রসভা অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে ২ মার্চ কলেজে ছাত্র ধর্মঘট পালনের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। টানটান উত্তেজনার মধ্যে ২ মার্চ কলেজে পূর্ণ ছাত্র ধর্মঘট পালিত হয়। এরপর ১০ মার্চ যশোরের জেলা ম্যাজিস্ট্রেট নোমানী শহরে ১৪৪ ধারা জারি করে সভা, সমাবেশ, মিছিল, পিকেটিং নিষিদ্ধ ঘোষণা করেন।

সেই ১৪৪ ধারা ভেঙে ১১ মার্চ বেশিরভাগ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা ক্লাস বর্জন করে রাজপথে নেমে আসে। সেই মিছিল শহরের বিভিন্ন এলাকা ঘুরে টিএন্ডটি ভবনের সামনে সমাবেশ করলে পুলিশ সেখান থেকে বহু নেতা ও ছাত্রকে গ্রেপ্তার করে। এই নির্যাতনের প্রতিবাদে ১২ মার্চ আবারও ছাত্র ধর্মঘট পালিত হয় যশোরে।

১৩ মার্চ হরতাল সফল করতে শিক্ষার্থী ও যশোরের সব শ্রেণী-পেশার মানুষ রাজপথে নেমে আসে। সকালে যশোর মাইকেল মধুসূদন কলেজ থেকে বিক্ষোভ মিছিল বের হয়। মিছিলে সব শ্রেণীর মানুষ ও সরকারি কর্মচারী যোগ দেন। মিছিলটি ডিস্ট্রিক ম্যাজিস্ট্রেটের কার্যালয় যশোর কালেক্টরেট ভবনের দিকে এগোতে চাইলে দড়াটানায় পুলিশ বাধা দেয়।

যশোর কোতয়ালি থানার ওসি আবদুল জব্বারের নেতৃত্বে পুলিশ মিছিলে হামলা চালায়। বেধড়ক লাঠিপেটায় মিছিল ছত্রভঙ্গ করে দেয় পুলিশ, কিন্তু সংগ্রামী ছাত্র-জনতা হামলার বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলে। সংগ্রামী ছাত্র-জনতা পুলিশের ওপর ইট-পাটকেল ছোড়ে। একপর্যায়ে ডা. জীবন রতন ধর, আলমগীর সিদ্দিকী, আফসার আহম্মেদ সিদ্দিকীর নেতৃত্বে বিক্ষুব্ধ ছাত্র-জনতা কালেক্টরেট ভবনে ঢুকে জানালা-দরজা ভাঙচুর করে। জেলা ম্যাজিস্ট্রেট নোমানীর অফিসেও হামলা চালায়। ছাত্রদের ইটের আঘাতে আহত হন ওসি জব্বার। কোতয়ালি থানার দারোগার মাথা ফেটে যায়।

পুলিশ ছাত্র-জনতার ওপর গুলি চালালে সংগ্রাম পরিষদের যুগ্ম আহ্বায়ক আলমগীর সিদ্দিকী আহত হন। তার পায়ে গুলি লাগে। পরে এসব বিষয় যশোরের আইন পরিষদের সদস্য খান বাহাদুর লুৎফর রহমানকে জানান সংগ্রাম পরিষদ নেতারা এবং পূর্ববঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী খাজা নাজিমউদ্দিনকে ঘটনা জানিয়ে টেলিগ্রাম করেন।

১৮ মার্চ রাজবন্দী মুক্তি দিবস পালন করা হয়। এ বিষয়ে কলকাতা থেকে প্রকাশিত ২০ মার্চ ‘আনন্দবাজার’ পত্রিকায় খবর প্রকাশিত হয়। চারিদিকে এই নিয়ে আন্দোলন শুরু হলে ১৯৪৮ সালের ২৯ মার্চ তারিখে আটক ভাষা সৈনিকদের মুক্তি দেয়া হয়। এভাবে প্রথম ধাপে যশোরে রাষ্ট্রভাষা বাংলার দাবিতে ভাষা আন্দোলনের কার্যক্রম চলে। পরবর্তীতে ১৯৫২ সালে দেশব্যাপী যখন ভাষা আন্দোলন আরও তুঙ্গে তখনও যশোর ছিল সরব। ২২ ফেব্রুয়ারিতেই প্রথম শহীদ মিনার তৈরি করে মশিউর রহমান সর্দারের বাড়ির সামনে, যেটা বর্তমান সার্কিট হাউজের সামনে। অবশ্য ১৯৬২ সালে এম এম কলেজের দক্ষিণ গেটের পাশে স্থায়ীভাবে যশোরের কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার নির্মাণ করা হয়।

ভাষা আন্দোলনের ইতিহাসে যশোর নামটি এক অবাক বিস্ময়, কিন্তু দুঃখজনকভাবে সেসব কালেরসাক্ষী ধরে রাখতে তেমন কোন উদ্যেগ নেই। কেবলমাত্র যশোর টাউন হলের নামকরণ করা হয়েছে ভাষাসৈনিক আলমগীর সিদ্দিকী হল এবং ভাষাসৈনিক হামিদা রহমানের নামে যশোর এম এম কলেজে একটি ছাত্রী হলের নামকরণ করা হয়েছে। কিন্তু আন্দোলনের সূতিকাগার যে পুরাতন কলেজ ভবন, সেটি আজ ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে।

back to top