আ-মরি বাংলা ভাষা
মিজানুর রহমান লাকী, কুষ্টিয়া
কুষ্টিয়ার ভাষা আন্দোলনে সক্রিয় অবদান ছিল ভাষাসৈনিক অধ্যক্ষ আবদুস সাত্তারের। ১৯৫২ সালে ভাষা আন্দোলনের সময় তিনি ছিলেন ভাষা আন্দোলনে নেতৃস্থানীয় সংগঠন তমুদ্দুন মজলিসের কুষ্টিয়া জেলা কমিটির সভাপতি।
ভাষা আন্দোলনের ৭০ বছরের মাথায় কুষ্টিয়ার প্রবীণ মানুষেরা ভাষাসৈনিক অধ্যক্ষ আবদুস সাত্তারকে নিয়ে গৌরববোধ করলেও কুষ্টিয়ার তরুণ প্রজন্ম তার কথা, ভাষা আন্দোলনে তার গৌরবময় অবদানের বিবরণ কিছুই জানে না। ফেব্রুয়ারি মাসব্যাপী বিভিন্ন সংগঠন নানা আয়োজন করলেও কুষ্টিয়ার কোন সরকারি বা বেসরকারি সংগঠনের আয়োজিত কোন অনুষ্ঠানে এ ভাষা সৈনিকের কথা উল্লেখ করতে তেমন একটা দেখা যায় না।
রাষ্ট্রভাষা আন্দোলনে তৎকালীন কুষ্টিয়ায় সক্রীয় ও কার্যকর ভূমিকা রেখেছিলেন অধ্যক্ষ আবদুস সাত্তার। তিনি ১৯৫০ সালের মার্চ মাসে কুষ্টিয়া সরকারি কলেজে রাষ্ট্র বিজ্ঞান বিভাগে যোগদানের মধ্য দিয়ে শিক্ষকতা শুরু করেন। ১৯৪৭-৪৮ এর ভাষা আন্দোলনের সময় তিনি ঢাকা অবস্থান করেন। তখন তিনি ভাষা আন্দোলনের অন্যতম নেতা অধ্যাপক আবুল কাশেম, সাহিত্যিক অধ্যাপক শাহেদ আলী প্রমুখের ঘনিষ্টজন ছিলেন। ভাষা আন্দোলনের সূত্রে তৎকালীন তমুদ্দুন মজলিসের সঙ্গে তার যোগাযোগ ছিল। ১৯৫০ সালে কুষ্টিয়া আসার পরও তিনি আন্দোলনে আরও বেশি সক্রীয় হন। ১৯৫১ সালে কুষ্টিয়ার তমুদ্দুন মজলিসের পুর্ণাঙ্গ কমিটি গঠিত হলে তিনি কুষ্টিয়া জেলা সভাপতি নির্বাচিত হন।
ভাষা আন্দোলনে তার গুরুত্বপূর্ণ অবদানের স্বীকৃতি স্বরূপ ২০০৪ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা উদযাপন পরিষদ কর্তৃক তাকে সম্মাননা ক্রেস্ট প্রদান করা হয়। তার কর্মময় জীবনে শিক্ষকতার পাশাপাশি বিভিন্ন সামাজিক কাজের সঙ্গে জড়িত ছিলেন। সমগ্র কুষ্টিয়ায় ছড়িয়ে আছে তার অসংখ্য গুণগ্রাহী ছাত্র-ছাত্রী।
অধ্যক্ষ আবদুস সাত্তার ১৯২৩ সালের ২ জানুয়ারি নাটোর জেলার গুরুদাসপুর থানার হাসমারী গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। ছাত্রজীবনে সব পরীক্ষায় বৃত্তি লাভ করেন তিনি। ১৯৪০ সালে হাই মাদ্রাসা পরীক্ষায় তিনি সমগ্র বাংলায় তৃতীয় স্থান অধিকার করেন। ১৯৪২ সালে প্রথম বিভাগে বৃত্তি লাভ করে আই এ এবং ১৯৪৫ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় হতে রাষ্ট্র বিজ্ঞান বিষয়ে ২য় শ্রেণীতে বি এ অনার্স এবং ১৯৪৬ সালে এম এ পাশ করেন। এছাড়া ২০০৫ সালে জাতীয় শিক্ষক দিবসে জেলা প্রশাসনের পক্ষ হতে তাকে কুষ্টিয়া জেলার প্রবীণ ও কৃতী শিক্ষকের সম্মাননাপত্র ও ক্রেস্ট প্রদান করা হয়। কর্মজীবনের পাশাপাশি তিনি বিভিন্ন সামাজিক কাজের সঙ্গে জড়িত ছিলেন। ১৯৮১ সালে কুষ্টিয়া সরকারি গার্লস কলেজ থেকে অবসর গ্রহণ করেন। অবসর গ্রহণের পর কুষ্টিয়ার মিরপুর উপজেলার হালসা আদর্শ মহাবিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেন। ২০০৬ সালের ২৯ জানুয়ারি তিনি মৃত্যুবরণ করেন।
ভাষা সৈনিক অধ্যক্ষ আবদুস সাত্তার সম্পর্কে কথা হয় তার একমাত্র পুত্র কুষ্টিয়ার আলাউদ্দিন আহমেদ ডিগ্রি কলেজের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের সহকারি অধ্যাপক সিহাব উদ্দিনের সঙ্গে। তিনি অনেকটা আক্ষেপের সুরেই বলেন, গুণিজনদের কথা তাদের ইতিহাস ঐতিহ্য নিয়ে আলোচনা, তাদের স্মরণ করা বা তাদের মূল্যায়ন করা না হলে আগামী প্রজন্মের কাছে হারিয়ে যাবে আমাদের অনেক গুণিজনের আত্মত্যাগের কথা। ভাষা সৈনিকসহ দেশের জন্য যাদের অবদান তাদের চেতনা ধরে রাখতে হলে সে সব গুণিজনদের কথা প্রতিনিয়ত নতুন প্রজন্মকে জানাতে হবে। কুষ্টিয়ার মানুষ আমার বাবাকে নিয়ে গর্বিত। কিন্তু ভাষা আন্দোলনে তার গৌরবময় অবদানের কথা কুষ্টিয়ার তরুণ প্রজন্ম জানে না। তিনি আশা প্রকাশ করে বলেন, জাতীয় পর্যায়ে না হলেও জেলা পর্যায়ে ভাষা সৈনিককে আগামী প্রজন্মের কাছে বাঁচিয়ে রাখতে শিক্ষা ক্ষেত্রে তার নামে পুরস্কারের প্রথা চালু করা যেতে পারে। ভাষার মাসে জেলায় যে আলোচনা সভা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয় সেখানে জেলাসহ সারাদেশের যেসব ভাষা সৈনিকের ভূমিকা ছিল তাদের নিয়ে আলোচনা করলে তাদের স্মরণ করা হবে।
আ-মরি বাংলা ভাষা
মিজানুর রহমান লাকী, কুষ্টিয়া
শনিবার, ১৯ ফেব্রুয়ারী ২০২২
কুষ্টিয়ার ভাষা আন্দোলনে সক্রিয় অবদান ছিল ভাষাসৈনিক অধ্যক্ষ আবদুস সাত্তারের। ১৯৫২ সালে ভাষা আন্দোলনের সময় তিনি ছিলেন ভাষা আন্দোলনে নেতৃস্থানীয় সংগঠন তমুদ্দুন মজলিসের কুষ্টিয়া জেলা কমিটির সভাপতি।
ভাষা আন্দোলনের ৭০ বছরের মাথায় কুষ্টিয়ার প্রবীণ মানুষেরা ভাষাসৈনিক অধ্যক্ষ আবদুস সাত্তারকে নিয়ে গৌরববোধ করলেও কুষ্টিয়ার তরুণ প্রজন্ম তার কথা, ভাষা আন্দোলনে তার গৌরবময় অবদানের বিবরণ কিছুই জানে না। ফেব্রুয়ারি মাসব্যাপী বিভিন্ন সংগঠন নানা আয়োজন করলেও কুষ্টিয়ার কোন সরকারি বা বেসরকারি সংগঠনের আয়োজিত কোন অনুষ্ঠানে এ ভাষা সৈনিকের কথা উল্লেখ করতে তেমন একটা দেখা যায় না।
রাষ্ট্রভাষা আন্দোলনে তৎকালীন কুষ্টিয়ায় সক্রীয় ও কার্যকর ভূমিকা রেখেছিলেন অধ্যক্ষ আবদুস সাত্তার। তিনি ১৯৫০ সালের মার্চ মাসে কুষ্টিয়া সরকারি কলেজে রাষ্ট্র বিজ্ঞান বিভাগে যোগদানের মধ্য দিয়ে শিক্ষকতা শুরু করেন। ১৯৪৭-৪৮ এর ভাষা আন্দোলনের সময় তিনি ঢাকা অবস্থান করেন। তখন তিনি ভাষা আন্দোলনের অন্যতম নেতা অধ্যাপক আবুল কাশেম, সাহিত্যিক অধ্যাপক শাহেদ আলী প্রমুখের ঘনিষ্টজন ছিলেন। ভাষা আন্দোলনের সূত্রে তৎকালীন তমুদ্দুন মজলিসের সঙ্গে তার যোগাযোগ ছিল। ১৯৫০ সালে কুষ্টিয়া আসার পরও তিনি আন্দোলনে আরও বেশি সক্রীয় হন। ১৯৫১ সালে কুষ্টিয়ার তমুদ্দুন মজলিসের পুর্ণাঙ্গ কমিটি গঠিত হলে তিনি কুষ্টিয়া জেলা সভাপতি নির্বাচিত হন।
ভাষা আন্দোলনে তার গুরুত্বপূর্ণ অবদানের স্বীকৃতি স্বরূপ ২০০৪ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা উদযাপন পরিষদ কর্তৃক তাকে সম্মাননা ক্রেস্ট প্রদান করা হয়। তার কর্মময় জীবনে শিক্ষকতার পাশাপাশি বিভিন্ন সামাজিক কাজের সঙ্গে জড়িত ছিলেন। সমগ্র কুষ্টিয়ায় ছড়িয়ে আছে তার অসংখ্য গুণগ্রাহী ছাত্র-ছাত্রী।
অধ্যক্ষ আবদুস সাত্তার ১৯২৩ সালের ২ জানুয়ারি নাটোর জেলার গুরুদাসপুর থানার হাসমারী গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। ছাত্রজীবনে সব পরীক্ষায় বৃত্তি লাভ করেন তিনি। ১৯৪০ সালে হাই মাদ্রাসা পরীক্ষায় তিনি সমগ্র বাংলায় তৃতীয় স্থান অধিকার করেন। ১৯৪২ সালে প্রথম বিভাগে বৃত্তি লাভ করে আই এ এবং ১৯৪৫ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় হতে রাষ্ট্র বিজ্ঞান বিষয়ে ২য় শ্রেণীতে বি এ অনার্স এবং ১৯৪৬ সালে এম এ পাশ করেন। এছাড়া ২০০৫ সালে জাতীয় শিক্ষক দিবসে জেলা প্রশাসনের পক্ষ হতে তাকে কুষ্টিয়া জেলার প্রবীণ ও কৃতী শিক্ষকের সম্মাননাপত্র ও ক্রেস্ট প্রদান করা হয়। কর্মজীবনের পাশাপাশি তিনি বিভিন্ন সামাজিক কাজের সঙ্গে জড়িত ছিলেন। ১৯৮১ সালে কুষ্টিয়া সরকারি গার্লস কলেজ থেকে অবসর গ্রহণ করেন। অবসর গ্রহণের পর কুষ্টিয়ার মিরপুর উপজেলার হালসা আদর্শ মহাবিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেন। ২০০৬ সালের ২৯ জানুয়ারি তিনি মৃত্যুবরণ করেন।
ভাষা সৈনিক অধ্যক্ষ আবদুস সাত্তার সম্পর্কে কথা হয় তার একমাত্র পুত্র কুষ্টিয়ার আলাউদ্দিন আহমেদ ডিগ্রি কলেজের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের সহকারি অধ্যাপক সিহাব উদ্দিনের সঙ্গে। তিনি অনেকটা আক্ষেপের সুরেই বলেন, গুণিজনদের কথা তাদের ইতিহাস ঐতিহ্য নিয়ে আলোচনা, তাদের স্মরণ করা বা তাদের মূল্যায়ন করা না হলে আগামী প্রজন্মের কাছে হারিয়ে যাবে আমাদের অনেক গুণিজনের আত্মত্যাগের কথা। ভাষা সৈনিকসহ দেশের জন্য যাদের অবদান তাদের চেতনা ধরে রাখতে হলে সে সব গুণিজনদের কথা প্রতিনিয়ত নতুন প্রজন্মকে জানাতে হবে। কুষ্টিয়ার মানুষ আমার বাবাকে নিয়ে গর্বিত। কিন্তু ভাষা আন্দোলনে তার গৌরবময় অবদানের কথা কুষ্টিয়ার তরুণ প্রজন্ম জানে না। তিনি আশা প্রকাশ করে বলেন, জাতীয় পর্যায়ে না হলেও জেলা পর্যায়ে ভাষা সৈনিককে আগামী প্রজন্মের কাছে বাঁচিয়ে রাখতে শিক্ষা ক্ষেত্রে তার নামে পুরস্কারের প্রথা চালু করা যেতে পারে। ভাষার মাসে জেলায় যে আলোচনা সভা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয় সেখানে জেলাসহ সারাদেশের যেসব ভাষা সৈনিকের ভূমিকা ছিল তাদের নিয়ে আলোচনা করলে তাদের স্মরণ করা হবে।