alt

জাতীয়

নওগাঁর ঘটনা, বিশেষ মহলের ‘সাম্প্রদায়িক উসকানি’

শিক্ষার্থীদের প্রহার করা হয় স্কুল ড্রেস না পরায়

কাজী কামাল হোসেন, নওগাঁ : শনিবার, ০৯ এপ্রিল ২০২২

হিজাব বিতর্কের ঘটনার শিক্ষার্থীদের পেটানোর মূল কারণ ছিল স্কুল ড্রেস পরে না আসা। তবে পরে ঘটনাটি একটি মহল হিজাব বিতর্কের দিকে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে। নওগাঁর মহাদেবপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার মিজানুর রহমানও একই কথা বলেছেন।

নওগাঁর মহাদেবপুর উপজেলার দাউল বারবাকপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষিকা আমোদিনি পাল কর্তৃক কয়েকজন শিক্ষার্থীকে মারধরের ঘটনায় তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. আবদুল মালেককে প্রধান করে ৩ সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। শনিবার (৯ এপ্রিল) মহাদেবপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মিজানুর রহমান এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

মিজানুর রহমান বলেন, বৃহস্পতিবার (৭ এপ্রিল) রাতে উপজেলা প্রশাসন ও পুলিশের একজন এএসপির সমন্বয়ে গঠিত একটি টিম অভিযুক্ত সহকারী প্রধান শিক্ষিকা আমোদিনি পাল, ভুক্তভোগী শিক্ষার্র্থী ও বিদ্যালয়ের অন্য শিক্ষকদের সঙ্গে কথা বলে। সব পক্ষের বক্তব্য শুনে মনে হয়েছে স্কুল ড্রেস না পরে আসায় শিক্ষার্থীদের শাসন করেছেন ওই শিক্ষিকা। পিটুনির শিকার শিক্ষার্থীদের মধ্যে একজন সনাতন ধর্মেরও ছিল। শুধু তাই নয়, ঘটনার দিন ৬ এপ্রিল স্কুল ড্রেস পরে না আসার কারণে একজন শিক্ষকও কয়েকজন ছেলে শিক্ষার্থীকে শাসন করেছেন। ঘটনাটি পরে হিজাব বিতর্কের দিকে নিয়ে যাওয়া হয়েছে বলে মনে হয়েছে।

তিনি বলেন, গঠিত তদন্ত কমিটি আগামী ৩ দিনের মধ্যে তাদের প্রতিবেদন জমা দেবেন। এদিকে যেকোন অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে দাউল বারবাকপুর উচ্চ বিদ্যালয় ও এর আশপাশের এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।

‘উদ্দেশ্যপ্রণোদিত মিথ্যাচার’ করা হচ্ছে -আমোদিনি পাল

এদিকে ছাত্রীদের পেটানোর এবং পরে হিজাব বিতর্কে রূপ নেয়া বিষয়টিকে ‘উদ্দেশ্যপ্রণোদিত মিথ্যাচার’ বলছেন ওই বিদ্যালয়ের সহকারী প্রধান শিক্ষক আমোদিনি পাল। তিনি বলছেন, স্কুল ইউনিফর্মের নিয়ম না মানায় তিনি কয়েকজন ছাত্রীকে ‘শাসন’ করেছেন, সেখানে হিজাবের কোন বিষয় ছিল না। তার অভিযোগ, স্কুলের ব্যবস্থাপনা কমিটির ‘বড় সমস্যা আড়াল করতে’ এবং নিজদের স্বার্থে বিভিন্ন মহল ‘সাম্প্রদায়িক উসকানিমূলক এই ভিত্তিহীন মিথ্যাচার’ করছে।

শুক্রবার (৮ এপ্রিল) আমোদিনি পাল ফেইসবুকে এক ভিডিও বার্তায় নিজের বক্তব্য তুলে ধরেন। সেখানে শরীরচর্চার শিক্ষক বদিউল আলমও ছিলেন এবং তিনি ইউনিফর্মের নিয়ম না মানায় ছেলেদের শাসন করেন। তাহলে বদিউল আলমের কথা না বলে হিজাব জড়িয়ে কেবল তার কথা কেন সংবাদমাধ্যমে বলা হচ্ছে, সেই প্রশ্ন রেখেছেন আমোদিনি পাল।

দাউল বারবাকপুর এলাকায় গিয়ে ছাত্র-ছাত্রীদের সঙ্গে কথা বলে দুই রকম বক্তব্য পাওয়া গেছে। একপক্ষের অভিযোগ, হিজাব পরার কারণে ছাত্রীদের পেটানো হয়েছে। অন্য পক্ষের দাবি, স্কুলের ইউনিফর্ম না পরায় ছাত্র ও ছাত্রী উভয়েকেই বেত মারা হয়েছে। কয়েকজন শিক্ষার্থী ও তাদের অভিভাবক অভিযোগ করেন, বুধবার (৬ এপ্রিল) স্কুলে জাতীয় সংগীতের পর সহকারী প্রধান শিক্ষিকা ও শরীরচর্চার শিক্ষক বদিউল আলম সপ্তম থেকে দশম শ্রেণীর ১৮ ছাত্রীকে ডেকে নিয়ে ‘হিজাব পরার কারণে’ গালমন্দ করেন এবং পিটুনি দেন।

সন্তানদের কাছ থেকে এমন অভিযোগ পেয়ে পরদিন সকালে অভিভাবকরা স্কুলে গিয়ে বিক্ষোভ করেন। কিন্তু দুই শিক্ষকের কেউ সেদিন স্কুলে যাননি। এ সময় বিক্ষুব্ধরা স্কুলের চেয়ার ভাঙচুর করেন। স্কুলের অষ্টম শ্রেণীর এক ছাত্রী বলে, ‘ম্যাডাম এসে আমাকে ও আমার কয়েকজন সহপাঠীকে বলেন, ‘তোমরা হিজাব পরে আসছ কেন’? তখন আমরা বলি, স্কুল ড্রেস পরে তারপর হিজাব পরেছি।

‘কয়েকজন হিজাববিহীন ছাত্রীকে দেখিয়ে ম্যাডাম বলেন, এদের মতো করে স্কুলের নিয়ম মেনে আসতে হবে। এই বলে তিনি আমাকেসহ আরও কয়েকজনকে ছড়ি দিয়ে হাতে-পিঠে মারেন। পরে বাড়ি এসে বিষয়টি আমাদের বাবাকে জানাই।’ স্কুলের অষ্টম শ্রেণীর এক ছাত্র বলে, ‘আমোদিনি ম্যাডাম সেদিন আমাদের সামনে পাঁচ-ছয়জন ছাত্র এবং ১০-১৫ জন ছাত্রীকে মেরেছেন। সঙ্গে বদিউল আলম স্যারও মেরেছেন।’ তবে দশম শ্রেণীর এক ছাত্রী বলেছে, ‘হিজাবের জন্য নয়, স্কুল ড্রেস না পরায় আট থেকে ১০ জনকে মারা হয়েছে। এখন হয়ত ম্যাডামকে ফাঁসাতে হিজাবের কথা বলা হচ্ছে।’

বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক শাহাদত হোসেন রতন বলেন, ‘বিদ্যালয়ের শৃঙ্খলা রক্ষায় মেয়েদের আমোদিনি ম্যাডাম এবং ছেলেদের বদিউল আলম স্যার শাসন করেছেন। এখানে হিজাব নিয়ে কোন কথা হয়নি।’ তার দাবি, স্কুলের শিক্ষক কর্মচারীদের কেউ কেউ হয়ত এই ‘অপপ্রচারের সঙ্গে’ জড়িত থাকতে পারে।

সহকারী প্রধান শিক্ষক আমোদিনি পাল বলেন, বুধবার রাতে শামীম আহমেদ জয় নামে স্থানীয় একজনের ফেইসবুক আইডি থেকে প্রথম এ ধরনের অভিযোগ পোস্ট করা হয়। রাতে তার সঙ্গে কথা বলতে গেলে তিনি কথা বলেননি। পরে রাতে আবার সেই পোস্ট ডিলিট করে দেন। তিনি অভিযোগ করে বলেন, ‘উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে হেয়-প্রতিপন্ন করার জন্য এসব করা হচ্ছে’। ‘স্কুল ড্রেস পরে বিদ্যালয়ের আসার জন্য অনেককে বার বার বলা হয়েছে। কিন্তু তারা সেটি শোনেনি। আমি তাদের স্কুল ড্রেস পরে আসার কথা বলি এবং নামমাত্র শাসন করি।’

তিনি বলেন, ‘স্কুলে ১০ বছর অনেক সমস্যা ছিল, যার ফলে স্কুলে অনেক গ্রুপ তৈরি হয়েছে। এখন প্রধান শিক্ষকের চাকরি শেষের পথে, যার ফলে বিভিন্ন মহল নিজ স্বার্থ উদ্ধারের জন্য অপপ্রচার করছে। যেহেতু আমি হিন্দু শিক্ষক, সেহেতু এটা দাঙ্গা সৃষ্টির উসকানির মতো পরিস্থিতি সৃষ্টি করছে। কমিটির প্রধান সমস্যা আড়াল করার জন্য বিনাদোষে আমাকে অপরাধী করার চেষ্টা করছে। আমি হিজাব বা ধর্মীয় বিষয়ে কোন কথা বলিনি। এই অপপ্রচার মিথ্যা ও ভিত্তিহীন।’

শনিবার দাউল বারবাকপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষক, শিক্ষার্থী, অভিভাবক ও এলাকাবাসীর সঙ্গে কথা বলেছেন এই প্রতিনিধি। শনিবার দুপুরে বিদ্যালয়টিতে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, অভিযোগকারী শিক্ষার্থীদের মধ্যে যে দুইজন ছাত্রীর ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয় তারা কেউ বিদ্যালয়ে উপস্থিত হয়নি। ওই দুই ছাত্রীর সঙ্গে কথা বলতে বাড়িতে গেলে তাদের একজনের বাড়ি তালাবদ্ধ অবস্থায় পাওয়া যায়। অন্যজনকে বাড়িতে পাওয়া গেলেও সে ও তার অভিভাবকেরা কেউ এ বিষয়ে কথা বলতে রাজি হননি। এদিকে কেন শুধু শিক্ষিকা আমোদিনি পালের বিরুদ্ধে হিজাব পরার কারণে ছাত্রীদের মারধরের যে অভিযোগ উঠল এবং বিদ্যালয়ের হামলার ঘটনার বিষয়ে বিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও এলাকাবাসীর মধ্যে চলছে নানা আলোচনা।

গত বুধবার ঘটনার সময় উপস্থিত ছিল দাবি করে বিদ্যালয়ের কয়েকজন শিক্ষার্থী জানায়, সেদিন সকালে স্কুলের সমাবেশ বা অ্যাসেম্বলির সময় ছেলে ও মেয়েদের লাইনের সামনে সহকারী প্রধান শিক্ষক আমোদিনি পাল, শারীরিক শিক্ষক বদিউল আলম ও সহকারী শিক্ষক সুনিতা রানী মন্ডল উপস্থিত ছিলেন। সমাবেশ শেষ হওয়ার পর উপস্থিত শিক্ষকেরা যেসব শিক্ষার্থী স্কুলের নির্ধারিত পোশাক (স্কুল ড্রেস) পরে আসেনি এমন ১৮-২০ জন শিক্ষার্থীকে আলাদা করে। পরে সহকারী প্রধান শিক্ষক আমোদিনি পাল স্কুল ড্রেস পরে না আসা ছাত্রীদের এবং শারীরিক শিক্ষক বদিউল আলম ছাত্রদের বেত্রাঘাত করেন। এ সময় তারা স্কুল ড্রেস পরে না আসার জন্য ছাত্র-ছাত্রীদের ভৎর্সনা ও বকাঝকা করেন। স্কুল ড্রেস পরে না আসা শিক্ষার্থীদের মধ্যে হিন্দু ও ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী ছাত্র-ছাত্রীও ছিল।

ঘটনার সময় সেখানে উপস্থিত ছিল বলে দাবি করা নাম প্রকাশ না করার শর্তে দশম শ্রেণীর দুই ছাত্রী বলে, ‘আমোদিনি পাল ম্যাম ও বদিউল স্যার মূলত স্কুল ড্রেস পরে না আসার কারণেই ছাত্রী-ছাত্রীদের মেরেছেন। তবে তাদের মধ্যে হিজাব পরে থাকা কয়েকজন ছাত্রীর উদ্দেশে বকা দেয়ার সময় ম্যাম (আমোদিনি) বলেন, মহাদেবপুর বাজারে মার্কেট করার সময় তো তোমাদের হিজাব পরতে দেখি না, আর স্কুলে হিজাব পরে আসো। আর হিজাব যদি পরতেই হয়, তাহলে স্কুল ড্রেসের সঙ্গে মিল করে পরে আসবা। হিজাব পরে আসার জন্য তাদের মারা হয়েছে বলে যেভাবে বলা হচ্ছে, সেটা ঠিক নয়। অন্যদেরও ম্যাম বকা দিয়েছেন।’

ঘটনার পর শনিবার বিদ্যালয়ে পাঠদান করিয়েছেন শিক্ষিকা আমোদিনি পাল। বিষয়টি নিয়ে জানতে চাইলে আমোদিনি পাল ছাত্রীদের বেত্রাঘাত করার কথা স্বীকার করে করে বলেন, ‘হিজাব পরে এসেছে বলে ছাত্রীদের মারা হয়েছে এ কথা ঠিক নয়। স্কুল ড্রেস পরে না আসার জন্য মাঠের মধ্যে পড়ে থাকা মরা গাছের ডাল দিয়ে আমি কয়েকজন ছাত্রীকে হালকা শাসন করেছি। আমাদের আরেক শিক্ষক বদিউল আলম স্কুল ড্রেস না পরার জন্য ছাত্রদের শাসন করেন। আমরা দুজনেই শিক্ষার্থীদের শাসন করেছি তাহলে শুধু আমাদের অভিযোগ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হলো? আমাকে হেয় করার জন্য বা একটা উত্তেজনা ছড়ানোর জন্য একটা মহল ‘উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে অপপ্রচার’ ছড়িয়েছে।’

চক্রান্তের অভিযোগের প্রধান শিক্ষক ধরনী কান্ত বর্মন সংবাদকে বলেন, ‘বুধবার সমাবেশে ছাত্র-ছাত্রীদের মারার ঘটনার দিন আমি রাজশাহী শিক্ষা বোর্ডে গিয়েছিলাম। পরদিন অনেক অভিভাবক স্কুলে দল বেঁধে এসেছিলেন। তারা বেশ উত্তেজিত ছিলেন। তাদের অভিযোগ, আমোদিনি পাল মেয়েদের হিজাব পরার জন্য মারধর করেছে। এমন পরস্থিতিতে আমি তৎক্ষণিক উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসারের সঙ্গে কথা বলি। শিক্ষা অফিসারের পরামর্শে পরিস্থিতি সামাল দেয়ার জন্য ওইদিনই আমি আমোদিনি পালকে শোকজ করি। এখানে কোন চক্রান্ত হয়নি। আমি তো কয়েকদিন পর অবসরেই যাচ্ছি। এখানে কে স্কুলে কে প্রধান শিক্ষক হলো আর না হলো তাতে আমার কি যায় আসে?’

তিনি বলেন, ‘বৃহস্পতিবার স্কুলে অভিভাবকদের হামলার সময় স্থানীয় কিছু সাংবাদিক ও পুলিশের সামনেই হিজাব পরার কারণে আমোদিনি পাল মারধর করছে বলে অভিযোগ করেন। ওইসব কথা ফেইসবুকে পরে ভাইরালও হয়েছে।’

ওই স্কুলের ম্যানেজিং কমিটির আহ্বায়ক দাউল বারবাকপুর গ্রামের বাসিন্দা মাহমুদুল হাসান বলেন, ‘যেদিন স্কুলে হামলার ঘটনা ঘটে সেদিনই আমাদের কমিটি অনুমোদন পেয়েছি। এখানে হিজাব ইস্যু নিয়ে একটা উত্তেজনা ছড়ানো হয়েছে এবং সে ঘটনা তদন্তে প্রশাসনের তরফ থেকে তদন্ত কমিটি হয়েছে। তদন্ত হলেই প্রকৃত ঘটনা বের হয়ে আসবে এখানে চক্রান্ত হয়েছে না অন্য কিছু হয়েছে?’

জানতে চাইলে নওগাঁ জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা লুৎফর রহমান বলেন, ‘শিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা (মাউশি) অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের নির্দেশনা অনুযায়ী ঘটনাটি গুরুত্ব সহকারে দেখা হচ্ছে। এ ঘটনায় একটি বিভাগীয় তদন্ত হবে। বিষয়টি আমি নিজেই দেখছি। হিজাব হোক বা স্কুল ড্রেস, যে কারণেই হোক শিক্ষার্থীদের শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন করা যাবে না, এ ধরনের সরকারি নির্দেশনা রয়েছে। তদন্তে কারো বিরুদ্ধে সরকারি নির্দেশনা ভঙ্গের প্রমাণ পেলে অবশ্যই বিভাগীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।’

উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা হাবিবুর রহমান বলেন, তিনি ঘটনাটি শুনে সহকারী প্রধান শিক্ষিকাকে ‘শোকজ’ করার নির্দেশ দিয়েছেন। আজ তিনি নিজে স্কুলে যাবেন এবং বিষয়টি তদন্ত করে দেখবেন। এ ব্যাপারে তদন্ত কমিটি করা হবে।

মহাদেবপুর থানার ওসি আজম উদ্দিন মাহমুদ বলেন, ‘ওই শিক্ষিকার বাড়িতে পুলিশ পাহারা রাখা হয়েছে। আর ঘটনাটি গভীরভাবে খতিয়ে দেখছি আমরা।’

হাসপাতালে গিয়ে হাসিনা নির্দেশ দেন ‘নো ট্রিটমেন্ট, নো রিলিজ’: চিফ প্রসিকিউটর

ডিসেম্বরে জাতীয় নির্বাচন করার ‘প্রস্তুতি নিয়ে এগোচ্ছে’ ইসি

ছবি

প্রস্তাবিত নবায়নযোগ্য জ্বালানি নীতি ‘দায়সারা’, ব্যবসায়ীদের মুনাফা ‘বাড়বে’

মেয়র ও চেয়ারম্যান পদে সরাসরি ভোট নয়: সংস্কার কমিশন

ছবি

এখনো পদত্যাগ করিনি : উপদেষ্টা নাহিদ

ছবি

নাহিদ ইসলামের পদত্যাগের গুঞ্জন, নতুন রাজনৈতিক দলে যোগ দেওয়ার সম্ভাবনা

ছবি

২৫ ফেব্রুয়ারি জাতীয় শহীদ সেনা দিবস ঘোষণা

ছবি

শেখ হাসিনার প্রত্যর্পণ ও ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্কের টানাপোড়েন

ছবি

ইলন মাস্ককে বাংলাদেশ সফরের আমন্ত্রণ জানালেন প্রধান উপদেষ্টা

ছবি

বাধ্যতামূলক অবসরে চার ডিআইজি

ছবি

সাবেক ওসি আরশাদসহ তিন পুলিশের বিরুদ্ধে তদন্ত প্রতিবেদন ২২ এপ্রিল দাখিলের নির্দেশ

ছবি

হাবে ঐক্য কল্যাণ পরিষদের নিরঙ্কুশ জয়

ছবি

গ্যাসের দাম দ্বিগুণ হলে আমদানিনির্ভরতা বাড়বে, চাপে পড়বে অর্থনীতি: মাসরুর রিয়াজ

ছবি

দু-একদিনের মধ্যে সচিব পদে পদোন্নতি পাচ্ছেন ৯ কর্মকর্তা

ছবি

কোনো দল বা গোষ্ঠীর নয়, পুলিশ সব নাগরিকের : স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা

পুলিশের জলকামান ও সাউন্ড গ্রেনেডে আউটসোর্সিং কর্মচারীদের কর্মসূচি পণ্ড

ছবি

চলন্ত বাসে ডাকাতি ও নারীর শ্লীলতাহানির মামলায় গ্রেপ্তার ৩

‘এ মুহূর্তে’ সব স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানের নির্বাচন করা ‘সম্ভব’

রোহিঙ্গাসহ চার মানবপাচারকারী গ্রেপ্তার

৬ মাসে ১৪শ’র বেশি মামলা, আসামি এক লাখ, গ্রেপ্তার ১৩ হাজার

গরমে কেন স্যুট পরতে হবে, প্রশ্ন বিদ্যুৎ উপদেষ্টার

ঝিনাইদহে গুলি করে তিন জনকে হত্যা, দায় স্বীকার চরমপন্থি দলের

বাংলাদেশ সরকারকে থলোস ফাউন্ডেশনের চিঠি নিরাপদ নিকোটিন বিকল্পের প্রস্তাবিত নিষেধাজ্ঞা পুনর্বিবেচনার আহ্বান

ছবি

বাসে ডাকাতির সময় কোনো ধর্ষণের ঘটনা ঘটেনি : পুলিশ সুপার

ছবি

‘ডেভিল হান্ট’: ১২ দিনে গ্রেপ্তার ১৮ হাজারের বেশি

ছবি

জুলাই বিপ্লবের কৃতিত্ব কাদের, জানালেন মির্জা ফখরুল

ছবি

দিনে কমে রাতে বাড়তে পারে তাপমাত্রা

ছবি

সীমান্তে স্থাপনা-বেড়া নির্মাণে যৌথ পরিদর্শন-দলিলের সিদ্ধান্ত

ছবি

শ্রদ্ধা-ভালোবাসায় অমর একুশে শহীদদের স্মরণ

ছুটির দিনেও ঢাকার বাতাস ছিল অস্বাস্থ্যকর, দূষণের শীর্ষে

মোহাম্মদপুরে অভিযানের ঘটনায় পুলিশের দুই মামলা

ছবি

নতুন ভাষা শিখলে মাতৃভাষায় দুর্বল হয়, এ ধারণা ভিত্তিহীন : মুহাম্মদ ইউনূস

চলন্ত বাসে ডাকাতি ও শ্লীলতাহানির ঘটনায় দুই থানার ঠেলাঠেলিতে ৩ দিন পর মামলা, ওসি প্রত্যাহার

নিরাপত্তা বাহিনীর তৎপরতা ‘ভাটা পড়া’ বিক্ষোভ উসকে দিয়েছিল

ছবি

নিরাপত্তা ইস্যুতে স্থগিত বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কনসার্ট

ছবি

মালয়েশিয়ার বিমানবন্দর থেকে ফেরত পাঠানো হলো ৪৫ বাংলাদেশিকে

tab

জাতীয়

নওগাঁর ঘটনা, বিশেষ মহলের ‘সাম্প্রদায়িক উসকানি’

শিক্ষার্থীদের প্রহার করা হয় স্কুল ড্রেস না পরায়

কাজী কামাল হোসেন, নওগাঁ

শনিবার, ০৯ এপ্রিল ২০২২

হিজাব বিতর্কের ঘটনার শিক্ষার্থীদের পেটানোর মূল কারণ ছিল স্কুল ড্রেস পরে না আসা। তবে পরে ঘটনাটি একটি মহল হিজাব বিতর্কের দিকে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে। নওগাঁর মহাদেবপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার মিজানুর রহমানও একই কথা বলেছেন।

নওগাঁর মহাদেবপুর উপজেলার দাউল বারবাকপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষিকা আমোদিনি পাল কর্তৃক কয়েকজন শিক্ষার্থীকে মারধরের ঘটনায় তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. আবদুল মালেককে প্রধান করে ৩ সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। শনিবার (৯ এপ্রিল) মহাদেবপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মিজানুর রহমান এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

মিজানুর রহমান বলেন, বৃহস্পতিবার (৭ এপ্রিল) রাতে উপজেলা প্রশাসন ও পুলিশের একজন এএসপির সমন্বয়ে গঠিত একটি টিম অভিযুক্ত সহকারী প্রধান শিক্ষিকা আমোদিনি পাল, ভুক্তভোগী শিক্ষার্র্থী ও বিদ্যালয়ের অন্য শিক্ষকদের সঙ্গে কথা বলে। সব পক্ষের বক্তব্য শুনে মনে হয়েছে স্কুল ড্রেস না পরে আসায় শিক্ষার্থীদের শাসন করেছেন ওই শিক্ষিকা। পিটুনির শিকার শিক্ষার্থীদের মধ্যে একজন সনাতন ধর্মেরও ছিল। শুধু তাই নয়, ঘটনার দিন ৬ এপ্রিল স্কুল ড্রেস পরে না আসার কারণে একজন শিক্ষকও কয়েকজন ছেলে শিক্ষার্থীকে শাসন করেছেন। ঘটনাটি পরে হিজাব বিতর্কের দিকে নিয়ে যাওয়া হয়েছে বলে মনে হয়েছে।

তিনি বলেন, গঠিত তদন্ত কমিটি আগামী ৩ দিনের মধ্যে তাদের প্রতিবেদন জমা দেবেন। এদিকে যেকোন অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে দাউল বারবাকপুর উচ্চ বিদ্যালয় ও এর আশপাশের এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।

‘উদ্দেশ্যপ্রণোদিত মিথ্যাচার’ করা হচ্ছে -আমোদিনি পাল

এদিকে ছাত্রীদের পেটানোর এবং পরে হিজাব বিতর্কে রূপ নেয়া বিষয়টিকে ‘উদ্দেশ্যপ্রণোদিত মিথ্যাচার’ বলছেন ওই বিদ্যালয়ের সহকারী প্রধান শিক্ষক আমোদিনি পাল। তিনি বলছেন, স্কুল ইউনিফর্মের নিয়ম না মানায় তিনি কয়েকজন ছাত্রীকে ‘শাসন’ করেছেন, সেখানে হিজাবের কোন বিষয় ছিল না। তার অভিযোগ, স্কুলের ব্যবস্থাপনা কমিটির ‘বড় সমস্যা আড়াল করতে’ এবং নিজদের স্বার্থে বিভিন্ন মহল ‘সাম্প্রদায়িক উসকানিমূলক এই ভিত্তিহীন মিথ্যাচার’ করছে।

শুক্রবার (৮ এপ্রিল) আমোদিনি পাল ফেইসবুকে এক ভিডিও বার্তায় নিজের বক্তব্য তুলে ধরেন। সেখানে শরীরচর্চার শিক্ষক বদিউল আলমও ছিলেন এবং তিনি ইউনিফর্মের নিয়ম না মানায় ছেলেদের শাসন করেন। তাহলে বদিউল আলমের কথা না বলে হিজাব জড়িয়ে কেবল তার কথা কেন সংবাদমাধ্যমে বলা হচ্ছে, সেই প্রশ্ন রেখেছেন আমোদিনি পাল।

দাউল বারবাকপুর এলাকায় গিয়ে ছাত্র-ছাত্রীদের সঙ্গে কথা বলে দুই রকম বক্তব্য পাওয়া গেছে। একপক্ষের অভিযোগ, হিজাব পরার কারণে ছাত্রীদের পেটানো হয়েছে। অন্য পক্ষের দাবি, স্কুলের ইউনিফর্ম না পরায় ছাত্র ও ছাত্রী উভয়েকেই বেত মারা হয়েছে। কয়েকজন শিক্ষার্থী ও তাদের অভিভাবক অভিযোগ করেন, বুধবার (৬ এপ্রিল) স্কুলে জাতীয় সংগীতের পর সহকারী প্রধান শিক্ষিকা ও শরীরচর্চার শিক্ষক বদিউল আলম সপ্তম থেকে দশম শ্রেণীর ১৮ ছাত্রীকে ডেকে নিয়ে ‘হিজাব পরার কারণে’ গালমন্দ করেন এবং পিটুনি দেন।

সন্তানদের কাছ থেকে এমন অভিযোগ পেয়ে পরদিন সকালে অভিভাবকরা স্কুলে গিয়ে বিক্ষোভ করেন। কিন্তু দুই শিক্ষকের কেউ সেদিন স্কুলে যাননি। এ সময় বিক্ষুব্ধরা স্কুলের চেয়ার ভাঙচুর করেন। স্কুলের অষ্টম শ্রেণীর এক ছাত্রী বলে, ‘ম্যাডাম এসে আমাকে ও আমার কয়েকজন সহপাঠীকে বলেন, ‘তোমরা হিজাব পরে আসছ কেন’? তখন আমরা বলি, স্কুল ড্রেস পরে তারপর হিজাব পরেছি।

‘কয়েকজন হিজাববিহীন ছাত্রীকে দেখিয়ে ম্যাডাম বলেন, এদের মতো করে স্কুলের নিয়ম মেনে আসতে হবে। এই বলে তিনি আমাকেসহ আরও কয়েকজনকে ছড়ি দিয়ে হাতে-পিঠে মারেন। পরে বাড়ি এসে বিষয়টি আমাদের বাবাকে জানাই।’ স্কুলের অষ্টম শ্রেণীর এক ছাত্র বলে, ‘আমোদিনি ম্যাডাম সেদিন আমাদের সামনে পাঁচ-ছয়জন ছাত্র এবং ১০-১৫ জন ছাত্রীকে মেরেছেন। সঙ্গে বদিউল আলম স্যারও মেরেছেন।’ তবে দশম শ্রেণীর এক ছাত্রী বলেছে, ‘হিজাবের জন্য নয়, স্কুল ড্রেস না পরায় আট থেকে ১০ জনকে মারা হয়েছে। এখন হয়ত ম্যাডামকে ফাঁসাতে হিজাবের কথা বলা হচ্ছে।’

বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক শাহাদত হোসেন রতন বলেন, ‘বিদ্যালয়ের শৃঙ্খলা রক্ষায় মেয়েদের আমোদিনি ম্যাডাম এবং ছেলেদের বদিউল আলম স্যার শাসন করেছেন। এখানে হিজাব নিয়ে কোন কথা হয়নি।’ তার দাবি, স্কুলের শিক্ষক কর্মচারীদের কেউ কেউ হয়ত এই ‘অপপ্রচারের সঙ্গে’ জড়িত থাকতে পারে।

সহকারী প্রধান শিক্ষক আমোদিনি পাল বলেন, বুধবার রাতে শামীম আহমেদ জয় নামে স্থানীয় একজনের ফেইসবুক আইডি থেকে প্রথম এ ধরনের অভিযোগ পোস্ট করা হয়। রাতে তার সঙ্গে কথা বলতে গেলে তিনি কথা বলেননি। পরে রাতে আবার সেই পোস্ট ডিলিট করে দেন। তিনি অভিযোগ করে বলেন, ‘উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে হেয়-প্রতিপন্ন করার জন্য এসব করা হচ্ছে’। ‘স্কুল ড্রেস পরে বিদ্যালয়ের আসার জন্য অনেককে বার বার বলা হয়েছে। কিন্তু তারা সেটি শোনেনি। আমি তাদের স্কুল ড্রেস পরে আসার কথা বলি এবং নামমাত্র শাসন করি।’

তিনি বলেন, ‘স্কুলে ১০ বছর অনেক সমস্যা ছিল, যার ফলে স্কুলে অনেক গ্রুপ তৈরি হয়েছে। এখন প্রধান শিক্ষকের চাকরি শেষের পথে, যার ফলে বিভিন্ন মহল নিজ স্বার্থ উদ্ধারের জন্য অপপ্রচার করছে। যেহেতু আমি হিন্দু শিক্ষক, সেহেতু এটা দাঙ্গা সৃষ্টির উসকানির মতো পরিস্থিতি সৃষ্টি করছে। কমিটির প্রধান সমস্যা আড়াল করার জন্য বিনাদোষে আমাকে অপরাধী করার চেষ্টা করছে। আমি হিজাব বা ধর্মীয় বিষয়ে কোন কথা বলিনি। এই অপপ্রচার মিথ্যা ও ভিত্তিহীন।’

শনিবার দাউল বারবাকপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষক, শিক্ষার্থী, অভিভাবক ও এলাকাবাসীর সঙ্গে কথা বলেছেন এই প্রতিনিধি। শনিবার দুপুরে বিদ্যালয়টিতে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, অভিযোগকারী শিক্ষার্থীদের মধ্যে যে দুইজন ছাত্রীর ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয় তারা কেউ বিদ্যালয়ে উপস্থিত হয়নি। ওই দুই ছাত্রীর সঙ্গে কথা বলতে বাড়িতে গেলে তাদের একজনের বাড়ি তালাবদ্ধ অবস্থায় পাওয়া যায়। অন্যজনকে বাড়িতে পাওয়া গেলেও সে ও তার অভিভাবকেরা কেউ এ বিষয়ে কথা বলতে রাজি হননি। এদিকে কেন শুধু শিক্ষিকা আমোদিনি পালের বিরুদ্ধে হিজাব পরার কারণে ছাত্রীদের মারধরের যে অভিযোগ উঠল এবং বিদ্যালয়ের হামলার ঘটনার বিষয়ে বিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও এলাকাবাসীর মধ্যে চলছে নানা আলোচনা।

গত বুধবার ঘটনার সময় উপস্থিত ছিল দাবি করে বিদ্যালয়ের কয়েকজন শিক্ষার্থী জানায়, সেদিন সকালে স্কুলের সমাবেশ বা অ্যাসেম্বলির সময় ছেলে ও মেয়েদের লাইনের সামনে সহকারী প্রধান শিক্ষক আমোদিনি পাল, শারীরিক শিক্ষক বদিউল আলম ও সহকারী শিক্ষক সুনিতা রানী মন্ডল উপস্থিত ছিলেন। সমাবেশ শেষ হওয়ার পর উপস্থিত শিক্ষকেরা যেসব শিক্ষার্থী স্কুলের নির্ধারিত পোশাক (স্কুল ড্রেস) পরে আসেনি এমন ১৮-২০ জন শিক্ষার্থীকে আলাদা করে। পরে সহকারী প্রধান শিক্ষক আমোদিনি পাল স্কুল ড্রেস পরে না আসা ছাত্রীদের এবং শারীরিক শিক্ষক বদিউল আলম ছাত্রদের বেত্রাঘাত করেন। এ সময় তারা স্কুল ড্রেস পরে না আসার জন্য ছাত্র-ছাত্রীদের ভৎর্সনা ও বকাঝকা করেন। স্কুল ড্রেস পরে না আসা শিক্ষার্থীদের মধ্যে হিন্দু ও ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী ছাত্র-ছাত্রীও ছিল।

ঘটনার সময় সেখানে উপস্থিত ছিল বলে দাবি করা নাম প্রকাশ না করার শর্তে দশম শ্রেণীর দুই ছাত্রী বলে, ‘আমোদিনি পাল ম্যাম ও বদিউল স্যার মূলত স্কুল ড্রেস পরে না আসার কারণেই ছাত্রী-ছাত্রীদের মেরেছেন। তবে তাদের মধ্যে হিজাব পরে থাকা কয়েকজন ছাত্রীর উদ্দেশে বকা দেয়ার সময় ম্যাম (আমোদিনি) বলেন, মহাদেবপুর বাজারে মার্কেট করার সময় তো তোমাদের হিজাব পরতে দেখি না, আর স্কুলে হিজাব পরে আসো। আর হিজাব যদি পরতেই হয়, তাহলে স্কুল ড্রেসের সঙ্গে মিল করে পরে আসবা। হিজাব পরে আসার জন্য তাদের মারা হয়েছে বলে যেভাবে বলা হচ্ছে, সেটা ঠিক নয়। অন্যদেরও ম্যাম বকা দিয়েছেন।’

ঘটনার পর শনিবার বিদ্যালয়ে পাঠদান করিয়েছেন শিক্ষিকা আমোদিনি পাল। বিষয়টি নিয়ে জানতে চাইলে আমোদিনি পাল ছাত্রীদের বেত্রাঘাত করার কথা স্বীকার করে করে বলেন, ‘হিজাব পরে এসেছে বলে ছাত্রীদের মারা হয়েছে এ কথা ঠিক নয়। স্কুল ড্রেস পরে না আসার জন্য মাঠের মধ্যে পড়ে থাকা মরা গাছের ডাল দিয়ে আমি কয়েকজন ছাত্রীকে হালকা শাসন করেছি। আমাদের আরেক শিক্ষক বদিউল আলম স্কুল ড্রেস না পরার জন্য ছাত্রদের শাসন করেন। আমরা দুজনেই শিক্ষার্থীদের শাসন করেছি তাহলে শুধু আমাদের অভিযোগ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হলো? আমাকে হেয় করার জন্য বা একটা উত্তেজনা ছড়ানোর জন্য একটা মহল ‘উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে অপপ্রচার’ ছড়িয়েছে।’

চক্রান্তের অভিযোগের প্রধান শিক্ষক ধরনী কান্ত বর্মন সংবাদকে বলেন, ‘বুধবার সমাবেশে ছাত্র-ছাত্রীদের মারার ঘটনার দিন আমি রাজশাহী শিক্ষা বোর্ডে গিয়েছিলাম। পরদিন অনেক অভিভাবক স্কুলে দল বেঁধে এসেছিলেন। তারা বেশ উত্তেজিত ছিলেন। তাদের অভিযোগ, আমোদিনি পাল মেয়েদের হিজাব পরার জন্য মারধর করেছে। এমন পরস্থিতিতে আমি তৎক্ষণিক উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসারের সঙ্গে কথা বলি। শিক্ষা অফিসারের পরামর্শে পরিস্থিতি সামাল দেয়ার জন্য ওইদিনই আমি আমোদিনি পালকে শোকজ করি। এখানে কোন চক্রান্ত হয়নি। আমি তো কয়েকদিন পর অবসরেই যাচ্ছি। এখানে কে স্কুলে কে প্রধান শিক্ষক হলো আর না হলো তাতে আমার কি যায় আসে?’

তিনি বলেন, ‘বৃহস্পতিবার স্কুলে অভিভাবকদের হামলার সময় স্থানীয় কিছু সাংবাদিক ও পুলিশের সামনেই হিজাব পরার কারণে আমোদিনি পাল মারধর করছে বলে অভিযোগ করেন। ওইসব কথা ফেইসবুকে পরে ভাইরালও হয়েছে।’

ওই স্কুলের ম্যানেজিং কমিটির আহ্বায়ক দাউল বারবাকপুর গ্রামের বাসিন্দা মাহমুদুল হাসান বলেন, ‘যেদিন স্কুলে হামলার ঘটনা ঘটে সেদিনই আমাদের কমিটি অনুমোদন পেয়েছি। এখানে হিজাব ইস্যু নিয়ে একটা উত্তেজনা ছড়ানো হয়েছে এবং সে ঘটনা তদন্তে প্রশাসনের তরফ থেকে তদন্ত কমিটি হয়েছে। তদন্ত হলেই প্রকৃত ঘটনা বের হয়ে আসবে এখানে চক্রান্ত হয়েছে না অন্য কিছু হয়েছে?’

জানতে চাইলে নওগাঁ জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা লুৎফর রহমান বলেন, ‘শিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা (মাউশি) অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের নির্দেশনা অনুযায়ী ঘটনাটি গুরুত্ব সহকারে দেখা হচ্ছে। এ ঘটনায় একটি বিভাগীয় তদন্ত হবে। বিষয়টি আমি নিজেই দেখছি। হিজাব হোক বা স্কুল ড্রেস, যে কারণেই হোক শিক্ষার্থীদের শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন করা যাবে না, এ ধরনের সরকারি নির্দেশনা রয়েছে। তদন্তে কারো বিরুদ্ধে সরকারি নির্দেশনা ভঙ্গের প্রমাণ পেলে অবশ্যই বিভাগীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।’

উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা হাবিবুর রহমান বলেন, তিনি ঘটনাটি শুনে সহকারী প্রধান শিক্ষিকাকে ‘শোকজ’ করার নির্দেশ দিয়েছেন। আজ তিনি নিজে স্কুলে যাবেন এবং বিষয়টি তদন্ত করে দেখবেন। এ ব্যাপারে তদন্ত কমিটি করা হবে।

মহাদেবপুর থানার ওসি আজম উদ্দিন মাহমুদ বলেন, ‘ওই শিক্ষিকার বাড়িতে পুলিশ পাহারা রাখা হয়েছে। আর ঘটনাটি গভীরভাবে খতিয়ে দেখছি আমরা।’

back to top