বাংলাদেশের কাছে অপরিশোধিত জ্বালানি তেল বিক্রির প্রস্তাব দিয়েছে রাশিয়া বলে জানিয়েছেন বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ। এই তেল কিভাবে ক্রয় করা যায় তা পর্যালোচনা করা হচ্ছে বলে জানান তিনি
সোমবার (২৩ মে) বিদ্যুৎ ভবনে বিপিএমআই আয়োজিত ‘বিদ্যুৎ খাতে সাইবার নিরাপত্তা-নীতি এবং অপারেশনাল দৃষ্টিকোণ’ শীর্ষক কর্মশালার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্য প্রতিমন্ত্রী এ তথ্য জানান।
নসরুল হামিদ বলেন, রাশিয়ার পক্ষ থেকে তেল বিক্রির প্রস্তাব এসেছে। বিশেষ করে ক্রুড অয়েলের কথা বলছে তারা। আমরা সেই প্রস্তাব বিবেচনা করে দেখছি।
যুক্তরাষ্ট্র ও সৌদি আরবের পরে বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম তেল উৎপাদনকারী দেশ রাশিয়া আগে প্রতিদিন প্রায় ৫ মিলিয়ন ব্যারেল অপরিশোধিত তেল রপ্তানি করত, যার অর্ধেকের বেশি যেত ইউরোপে।
গত ফেব্রুয়ারিতে রুশ বাহিনী ইউক্রেইনে আগ্রাসন শুরু করলে যুক্তরাষ্ট্র এবং তাদের ইউরোপীয় মিত্ররা একের পর এক অবরোধ আরোপ শুরু করে রাশিয়ার ওপর।
এক পর্যায়ে যুক্তরাষ্ট্র রাশিয়ার তেলের ওপরও নিষেধাজ্ঞা দেয়। ইউরোপীয় ইউনিয়নও জ্বালানির জন্য রাশিয়ার ওপর নির্ভরশীলতা কমিয়ে আনার ঘোষণা দেয়।
নিষেধাজ্ঞার মুখে অন্য ক্রেতারা রুশ তেল কেনা থেকে পিছু হটলেও বিশ্বের তৃতীয় সর্বোচ্চ তেল আমদানিকারক ও ভোক্তা দেশ ভারত সেই সুযোগ কাজে লাগিয়ে ব্যাপক মূল্য ছাড়ে তাৎক্ষণিক টেন্ডারের মাধ্যমে রাশিয়া থেকে বাড়তি তেল কেনা শুরু করে। চীনও আবার রাশিয়া থেকে তেল কেনা বাড়িয়েছে বলে খবর এসেছে আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমে।
এমনিতে মার্কিন নিষেধাজ্ঞার কারণে রাশিয়ার তেল কিনতে অন্য দেশের বাধা নেই। তবে ইউক্রেইন যুদ্ধ নিয়ে কূটনৈতিক টানাপড়েনের মধ্যে রাশিয়া থেকে ভারতের অতরিক্ত তেল কেনার বিষয়টি যে যুক্তরাষ্ট্র ভালোভাবে নেয়নি, তা স্পষ্ট করেই বলেছে ওয়াশিংটন।
রাশিয়ার পণ্য কেনার ক্ষেত্রে দাম পরিশোধ নিয়েও জটিলতা রয়েছে। সুইফটে নিষেধাজ্ঞার কারণে ব্যাংকিং চ্যানেলে ডলারে দাম পরিশোধ সম্ভব না। আর রাশিয়াও অনেক দেশের ক্ষেত্রে রুবলে দাম পরিশোধের শর্ত দিচ্ছে।
বাংলাদেশের ক্ষেত্রে রাশিয়ার প্রস্তাবে ঠিক কী আছে, কত দরে কী পরিমাণ তেল রাশিয়া দিতে পারবে, মূল্য পরিশোধইবা কীভাবে হবে, সেসব বিষয়ে বিস্তারিত কোনো তথ্য দেননি জ্বালানি প্রতিমন্ত্রী।
যুদ্ধ শুরুর পর পর বিশ্ববাজারে অপরিশোধিতি জ্বালানি তেলের দাম ব্যারেলে ১৩০ ডলার ছাড়িয়ে গেলেও এখন তা কিছুটা কমে এসেছে। দেশের বাজার স্থিতিশীল রাখতে ভারতে শুল্ক ছাড় দিয়ে জ্বালানির দাম কমানো হয়েছে।
বাংলাদেশে এই মুহূর্তে জ্বালানির দাম কমানোর চিন্তা আছে কিনা জানতে চাইলে প্রতিমন্ত্রী বলেন, আমরা জ্বালানির দামটা স্থিতিশীল রাখতে চাই। বাড়াতেও চাই না, কমাতেও চাই না। দাম যতটুকু কমেছে, তাতে করে এখনই সমন্বয় করার মত পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়নি।
বাংলাদেশ বর্তমানে প্রতি বছর ৫০ লাখ টন ডিজেল, ১৩ লাখ অপরিশোধিত তেল, দুই লাখ টন ফার্নেস অয়েল এবং ১ লাখ ২০ হাজার টন অকটেন আমদনি করে। আন্তর্জাতিক বাজারে দাম বেড়ে যাওয়ায় ভর্তুকি দিয়ে দেশের বাজারে বিক্রি করতে সরকারকে প্রতিদিন ১৫ কোটি ডলারের ওপর লোকসান গুনতে হচ্ছে বলে গত মার্চের শেষে জানিয়েছিলেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন।
প্রতিমন্ত্রী আরও বলেন, জনগণের ওপর থেকে জ্বালানি খরচের চাপ কমাতে তরল জ্বালানির পরিবর্তে বিদ্যুৎচালিত গণপরিবহন চালু করা উচিত। এখন বৈদ্যুতিক থ্রি হুইলারগুলো চলছে। এগুলো জনগণকে খরচের ব্যাপারে স্বস্তি দিচ্ছে। ভবিষ্যতে বৈদ্যুতিক বাসসহ অন্যান্য গণপরিবহন চালানোর উদ্যোগ নিতে হবে। রেল বিভাগ চাইলে বৈদ্যুতিক ট্রেনও চালু করতে পারে।
বিদ্যুৎকেন্দ্রের ক্ষেত্রেও একই পদক্ষেপ নেওয়ার কথা জানিয়ে তিনি বলেন, আগামী বছর আমাদের বেশ কয়েকটি গ্যাসভিত্তিক ও কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র চালু হতে যাচ্ছে। সেক্ষেত্রে আমরা বেশ কয়েকটি তেলভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র বন্ধ রাখতে পারব। এতে খরচ সাশ্রয় হবে।
চলমান ডলার সংকটের কারণে জ্বালানি আমদানিতে কিছুটা সমস্যা হয়েছিল জানিয়ে তিনি বলেন, সেই সমস্যা এখন কেটে গেছে। কারণ নিয়ম অনুযায়ী যে কোনো রাষ্ট্রীয় কেনাকাটায় বাংলাদেশ ব্যাংক ডলার ছাড় দিতে বাধ্য। আমরা যে ব্যাংক থেকেই এলসি খুলতে চাই, বাংলাদেশ ব্যাংক সেই ব্যাংকের ডলারের যোগান দিতে বাধ্য। বিষয়টি নিয়ে আলাপ আলোচনা হয়েছে। তবে বিশ্বব্যাপী সমুদ্র পরিবহনে জাহাজ সংকট জ্বালানি পরিবহনের ক্ষেত্রেও বিঘ্ন ঘটাচ্ছে বলে জানিয়েছেন তিনি।
উল্লেখ্য, গত নভেম্বরে সরকার ডিজেল ও কেরোসিনের দাম বাড়ায় প্রতি লিটারে ১৫ টাকা। এই দুই ধরনের জ্বালানি তেলের নতুন দর হয় লিটারপ্রতি ৮০ টাকা, যা এর আগে ছিল ৬৫ টাকা। দাম বাড়ানোর কারণ হিসেবে বিশ্ববাজারে তেলের মূল্যবৃদ্ধির কথা উল্লেখ করে সরকার। জ্বালানি মন্ত্রণালয় বলে, আন্তর্জাতিক বাজারে জালানি তেলের দাম বাড়ছে। এ কারণে প্রতিবেশী দেশসহ বিশ্বের অন্যান্য দেশে জ্বালানি তেলের দাম নিয়মিত সমন্বয় করা হচ্ছে।
সোমবার, ২৩ মে ২০২২
বাংলাদেশের কাছে অপরিশোধিত জ্বালানি তেল বিক্রির প্রস্তাব দিয়েছে রাশিয়া বলে জানিয়েছেন বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ। এই তেল কিভাবে ক্রয় করা যায় তা পর্যালোচনা করা হচ্ছে বলে জানান তিনি
সোমবার (২৩ মে) বিদ্যুৎ ভবনে বিপিএমআই আয়োজিত ‘বিদ্যুৎ খাতে সাইবার নিরাপত্তা-নীতি এবং অপারেশনাল দৃষ্টিকোণ’ শীর্ষক কর্মশালার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্য প্রতিমন্ত্রী এ তথ্য জানান।
নসরুল হামিদ বলেন, রাশিয়ার পক্ষ থেকে তেল বিক্রির প্রস্তাব এসেছে। বিশেষ করে ক্রুড অয়েলের কথা বলছে তারা। আমরা সেই প্রস্তাব বিবেচনা করে দেখছি।
যুক্তরাষ্ট্র ও সৌদি আরবের পরে বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম তেল উৎপাদনকারী দেশ রাশিয়া আগে প্রতিদিন প্রায় ৫ মিলিয়ন ব্যারেল অপরিশোধিত তেল রপ্তানি করত, যার অর্ধেকের বেশি যেত ইউরোপে।
গত ফেব্রুয়ারিতে রুশ বাহিনী ইউক্রেইনে আগ্রাসন শুরু করলে যুক্তরাষ্ট্র এবং তাদের ইউরোপীয় মিত্ররা একের পর এক অবরোধ আরোপ শুরু করে রাশিয়ার ওপর।
এক পর্যায়ে যুক্তরাষ্ট্র রাশিয়ার তেলের ওপরও নিষেধাজ্ঞা দেয়। ইউরোপীয় ইউনিয়নও জ্বালানির জন্য রাশিয়ার ওপর নির্ভরশীলতা কমিয়ে আনার ঘোষণা দেয়।
নিষেধাজ্ঞার মুখে অন্য ক্রেতারা রুশ তেল কেনা থেকে পিছু হটলেও বিশ্বের তৃতীয় সর্বোচ্চ তেল আমদানিকারক ও ভোক্তা দেশ ভারত সেই সুযোগ কাজে লাগিয়ে ব্যাপক মূল্য ছাড়ে তাৎক্ষণিক টেন্ডারের মাধ্যমে রাশিয়া থেকে বাড়তি তেল কেনা শুরু করে। চীনও আবার রাশিয়া থেকে তেল কেনা বাড়িয়েছে বলে খবর এসেছে আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমে।
এমনিতে মার্কিন নিষেধাজ্ঞার কারণে রাশিয়ার তেল কিনতে অন্য দেশের বাধা নেই। তবে ইউক্রেইন যুদ্ধ নিয়ে কূটনৈতিক টানাপড়েনের মধ্যে রাশিয়া থেকে ভারতের অতরিক্ত তেল কেনার বিষয়টি যে যুক্তরাষ্ট্র ভালোভাবে নেয়নি, তা স্পষ্ট করেই বলেছে ওয়াশিংটন।
রাশিয়ার পণ্য কেনার ক্ষেত্রে দাম পরিশোধ নিয়েও জটিলতা রয়েছে। সুইফটে নিষেধাজ্ঞার কারণে ব্যাংকিং চ্যানেলে ডলারে দাম পরিশোধ সম্ভব না। আর রাশিয়াও অনেক দেশের ক্ষেত্রে রুবলে দাম পরিশোধের শর্ত দিচ্ছে।
বাংলাদেশের ক্ষেত্রে রাশিয়ার প্রস্তাবে ঠিক কী আছে, কত দরে কী পরিমাণ তেল রাশিয়া দিতে পারবে, মূল্য পরিশোধইবা কীভাবে হবে, সেসব বিষয়ে বিস্তারিত কোনো তথ্য দেননি জ্বালানি প্রতিমন্ত্রী।
যুদ্ধ শুরুর পর পর বিশ্ববাজারে অপরিশোধিতি জ্বালানি তেলের দাম ব্যারেলে ১৩০ ডলার ছাড়িয়ে গেলেও এখন তা কিছুটা কমে এসেছে। দেশের বাজার স্থিতিশীল রাখতে ভারতে শুল্ক ছাড় দিয়ে জ্বালানির দাম কমানো হয়েছে।
বাংলাদেশে এই মুহূর্তে জ্বালানির দাম কমানোর চিন্তা আছে কিনা জানতে চাইলে প্রতিমন্ত্রী বলেন, আমরা জ্বালানির দামটা স্থিতিশীল রাখতে চাই। বাড়াতেও চাই না, কমাতেও চাই না। দাম যতটুকু কমেছে, তাতে করে এখনই সমন্বয় করার মত পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়নি।
বাংলাদেশ বর্তমানে প্রতি বছর ৫০ লাখ টন ডিজেল, ১৩ লাখ অপরিশোধিত তেল, দুই লাখ টন ফার্নেস অয়েল এবং ১ লাখ ২০ হাজার টন অকটেন আমদনি করে। আন্তর্জাতিক বাজারে দাম বেড়ে যাওয়ায় ভর্তুকি দিয়ে দেশের বাজারে বিক্রি করতে সরকারকে প্রতিদিন ১৫ কোটি ডলারের ওপর লোকসান গুনতে হচ্ছে বলে গত মার্চের শেষে জানিয়েছিলেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন।
প্রতিমন্ত্রী আরও বলেন, জনগণের ওপর থেকে জ্বালানি খরচের চাপ কমাতে তরল জ্বালানির পরিবর্তে বিদ্যুৎচালিত গণপরিবহন চালু করা উচিত। এখন বৈদ্যুতিক থ্রি হুইলারগুলো চলছে। এগুলো জনগণকে খরচের ব্যাপারে স্বস্তি দিচ্ছে। ভবিষ্যতে বৈদ্যুতিক বাসসহ অন্যান্য গণপরিবহন চালানোর উদ্যোগ নিতে হবে। রেল বিভাগ চাইলে বৈদ্যুতিক ট্রেনও চালু করতে পারে।
বিদ্যুৎকেন্দ্রের ক্ষেত্রেও একই পদক্ষেপ নেওয়ার কথা জানিয়ে তিনি বলেন, আগামী বছর আমাদের বেশ কয়েকটি গ্যাসভিত্তিক ও কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র চালু হতে যাচ্ছে। সেক্ষেত্রে আমরা বেশ কয়েকটি তেলভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র বন্ধ রাখতে পারব। এতে খরচ সাশ্রয় হবে।
চলমান ডলার সংকটের কারণে জ্বালানি আমদানিতে কিছুটা সমস্যা হয়েছিল জানিয়ে তিনি বলেন, সেই সমস্যা এখন কেটে গেছে। কারণ নিয়ম অনুযায়ী যে কোনো রাষ্ট্রীয় কেনাকাটায় বাংলাদেশ ব্যাংক ডলার ছাড় দিতে বাধ্য। আমরা যে ব্যাংক থেকেই এলসি খুলতে চাই, বাংলাদেশ ব্যাংক সেই ব্যাংকের ডলারের যোগান দিতে বাধ্য। বিষয়টি নিয়ে আলাপ আলোচনা হয়েছে। তবে বিশ্বব্যাপী সমুদ্র পরিবহনে জাহাজ সংকট জ্বালানি পরিবহনের ক্ষেত্রেও বিঘ্ন ঘটাচ্ছে বলে জানিয়েছেন তিনি।
উল্লেখ্য, গত নভেম্বরে সরকার ডিজেল ও কেরোসিনের দাম বাড়ায় প্রতি লিটারে ১৫ টাকা। এই দুই ধরনের জ্বালানি তেলের নতুন দর হয় লিটারপ্রতি ৮০ টাকা, যা এর আগে ছিল ৬৫ টাকা। দাম বাড়ানোর কারণ হিসেবে বিশ্ববাজারে তেলের মূল্যবৃদ্ধির কথা উল্লেখ করে সরকার। জ্বালানি মন্ত্রণালয় বলে, আন্তর্জাতিক বাজারে জালানি তেলের দাম বাড়ছে। এ কারণে প্রতিবেশী দেশসহ বিশ্বের অন্যান্য দেশে জ্বালানি তেলের দাম নিয়মিত সমন্বয় করা হচ্ছে।