পদ্মা সেতুতে মোটরসাইকেল নিষিদ্ধ ঘোষণার সঙ্গে একমত নন পদ্মা সেতু প্রকল্পের বিশেষজ্ঞ প্যানেলের প্রধান অধ্যাপক ড. এম শামীম জেড বসুনিয়া। তিনি বলেন, ‘ব্রিজে মোটরসাইকেল চলতে না দেয়া অন্যায় হচ্ছে। সব যানই চলবে কিন্তু কেউ নিয়ম ভাঙলে তার জন্য শাস্তি পেতে হবে।’
বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট) প্রকৌশল বিভাগের সাবেক অধ্যাপক ড. শামীম জেড বসুনিয়া পদ্মা সেতুর শুরু থেকেই দায়িত্ব পালন করেছেন। তিনি পদ্মা সেতু প্রকল্পে বিশেষজ্ঞ প্যানেলের প্রধান হিসেবে ২০২০ সালে দায়িত্ব পান। তিনি বলেন, ‘পদ্মা সেতুতে মোটরসাইকেল বন্ধ করা ঠিক না। মোটরসাইকেল চলবে না কেন? আমার নিকট একটা সলুশন মনে হয় : এটার স্পিড (গতি) সর্বোচ্চ ৪০ কিলোমিটারের ওপর যাইতে পারবে না। ৬০ কিলোমিটার করে গেলে ৬ মিনিটে পার হবে আর ৪০ কিলোমিটার করে গেলে ৯ মিনিট পার হবে। অসুবিধা কি! ৪০ কিলোমিটারের ওপর যেতে পারবে না আবার ১০ কিলোমিটারেও যেতে পারবে, থামতে পারবে না। সবাই যখন দেখতে চায়, দেখুক। দেখতে গেলে সময় তো লাগবে, তা লাগুক। যদি কেউ ৪০ কিলোমিটারের বেশি স্পিডে যায়, তবে তার পানিশমেন্ট (শাস্তি) হবে। এই পানিশমেন্টটা হবে নিয়মভঙ্গকারীকে আটক রাখতে হবে। আমি ফাইন-টাইনে বিশ্বাস করি না, আজকাল মানুষের পকেটে এত পয়সা থাকে যে তাদের জন্য ফাইন কোন বিষয়ই না।’
পদ্মা সেতু জনসাধারণের জন্য খুলে দেয়ার পর প্রথম দিনেই সেতুতে মোটরসাইকেল দুর্ঘটনা ঘটেছে। এতে দুজন নিহত হন। ওইদিনই রাতে তথ্য অধিদপ্তরের এক তথ্য বিবরণীতে উল্লেখ করা হয়, পদ্মা সেতুতে ২৭ জুন সোমবার ভোর ৬টা থেকে মোটরসাইকেল চলাচল নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে সরকার। পরে সাধারণ মানুষ যেন সেতুতে চলাচলের সময় নির্ধারিত আইন মেনে চলে, তা নিশ্চিত করতে সোমবার (২৭ জুন) থেকে অতিরিক্ত কড়াকড়ি আরোপ করেছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।
জরিমানার বিষয়টি নিয়ে তার অভিজ্ঞতা বর্ণনা করতে গিয়ে বলেন, ‘আমার বড় ফুপা ছিল তসিরউদ্দিন আহমেদ। আমার ফুপা ট্রেনে উঠে রংপুরে বাসার নিকট নামার সময় চেন টেনে ট্রেন থেকে নামত। সেই সময় বিট্রিশ আমলে চেন টানলে ফাইন দিতে হতো, উনি ফাইন দিয়ে ট্রেন থেকে নেমে পড়তেন। সেরকম এখানে শুধু ফাইন দিলে হবে না।’
কেন নিয়ম ভঙ্গকারীকে আটক রাখতে হবে সেই ব্যাখ্যায় তার বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের ড. আলমগীর হাবীব নামে এক জ্যেষ্ঠ প্রকৌশলীর উদাহরণ দিলেন। তিনি বলেন, ‘উনি (ড. আলমগীর হাবীব) চার-পাঁচ বছর ইরাকে ছিলেন। উনি এসে আমাদের দুইটা গল্প বললেন। একটা হলো- ইরাকে পরীক্ষার খাতা টিচাররা কখনোই বাসায় গিয়ে দেখতে পারতেন না। আরেকটি ছিল- দুইজন রাস্তায় মারপিট করলে পুলিশ তাদের দুইজনকেই একদিনের জন্য আটকে রাখত। আটকের পরদিন বিচারে জরিমানা বা জেল সিদ্ধান্ত হয় সেটার নিষ্পত্তি হতো।’
পদ্মা সেতু বাংলাদেশের বড় সম্পদ, এই সম্পদ নিয়ে পুরো বাঙালির আবেগ কাজ করে। সেই স্থাপনাকে রক্ষা করতেও কিছু সাহসী সিদ্ধান্তের প্রয়োজন বলে তিনি মনে করেন। ড. বসুনিয়া বলেন, ‘পদ্মা সেতুতে কেউ নিয়ম অমান্য করলে তার দুইদিন আটক থাকতে হবে। দুইদিন মানে কাটায় কাটায় ৪৮ ঘণ্টা। এই ৪৮ ঘণ্টা পর তার জরিমানা নির্ধারণ হবে।’
নিয়ম ভঙ্গকারীদের আটকের জায়গাটির বর্ণনায় তিনি বলেন, ‘আটকের স্থানটি খুবই ইন্টারেস্টিংভাবে ডিজাইন করতে হবে। চিড়িয়াখানাতে যেমন থাকে তেমনি। সেখানকার রুমগুলোতে এক সাইডে সোফা, খাট, টয়লেট সবকিছুই থাকবে। একেবারে আধুনিক আবাসন। তবে অন্যসাইড ওপেন থাকবে। প্রত্যেক মানুষ যাতে দেখতে পারে। নিয়মভঙ্গকারীদের ছবি ভাইরাল করা হবে। আরও আছে, প্রাইভেট গাড়ির কোন ড্রাইভার মালিককে গাড়িতে বসিয়ে নিয়ম ভঙ্গ করলে ড্রাইভার যাবে জরিমানা হবে গাড়ির মালিকের।’
তিনি আরও বলেন, ‘পাবলিক বাস বা প্যাসেঞ্জারবাহী বড় বাসগুলো নিয়ম ভঙ্গ বরলে তাদেরও ফাইন হবে। তবে ওইসব বাসগুলো আটকালে তো সাধারণ যাত্রীরা কষ্ট পাবে তাই। বাসের মালিককে বড় একটা জরিমানা গুনতে হবে। এসব বাসের জন্য স্ট্রিকার করতে হবে। সেইসঙ্গে এসব অপরাধের জন্য একটা নেগেটিভ পয়েন্ট হতে হবে। যেমনটা উন্নত বিশ্বের দেশগুলোতে আছে।’
তিনি জোর দিয়ে বলেন, ‘আটক না রাখলে কিচ্ছু হবে না। কারণ, যারা আটকা থাকবে তাদের থাকার সুব্যবস্থা থাকবে। তবে ওই আটক থাকা মানুষদের যেন সাধারণ মানুষ দেখতে পারে। তাহলে সাধারণ মানুষ বুঝবে ও অনুভব করতে পারবে এমন অপরাধ করা যাবে না।’
নিয়ম ভঙ্গকারীদের শনাক্ত করার ব্যাখ্যায় তিনি বলেন, ‘এজন্য ব্রিজের উপর অনেকগুলো স্পিডগান (গতি পরিমাপক যন্ত্র) বসাতে হবে। পুরো ব্রিজজুড়ে ঘন ঘন স্পিডগান থাকবে।’ তিনি আক্ষেপ করে বলেন, ‘একটা জিনিসের প্রতি মানুষের সম্মান নাই, মানুষের দয়া-মায়া নাই। আমাদের চারিত্রিক বৈশিষ্ট এই রকম হইলো কেন, সরকারি মাল, দরিয়ামে ঢাল।’ যমুনা ব্রিজ ও পদ্মা ব্রিজ খুলে দেয়ার অভিজ্ঞতা বর্ণনা করতে গিয়ে তিনি বলেন, ‘তখন তো এত মোটরসাইকেল ছিল না। এখন দেশ উন্নতির দিকে যাওয়ার পর মানুষের ক্রয় ক্ষমতা বেড়েছে।’
‘মোটরসাইকেল বন্ধ করা যাবে না। মোটরসাইকেলে দুইজন গেলে দুইজনের মাথায় হেলমেট থাকতেই হবে। আজকাল তো হেলমেট ছাড়াই তিনজন যাচ্ছে। শাস্তি হিসেবে দুই দিন হাজত বাস নয়, পদ্মা সেতু কর্তৃপক্ষের মেহমান হিসেবে থাকতে হবে বলেও জানান তিনি।
বুধবার, ২৯ জুন ২০২২
পদ্মা সেতুতে মোটরসাইকেল নিষিদ্ধ ঘোষণার সঙ্গে একমত নন পদ্মা সেতু প্রকল্পের বিশেষজ্ঞ প্যানেলের প্রধান অধ্যাপক ড. এম শামীম জেড বসুনিয়া। তিনি বলেন, ‘ব্রিজে মোটরসাইকেল চলতে না দেয়া অন্যায় হচ্ছে। সব যানই চলবে কিন্তু কেউ নিয়ম ভাঙলে তার জন্য শাস্তি পেতে হবে।’
বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট) প্রকৌশল বিভাগের সাবেক অধ্যাপক ড. শামীম জেড বসুনিয়া পদ্মা সেতুর শুরু থেকেই দায়িত্ব পালন করেছেন। তিনি পদ্মা সেতু প্রকল্পে বিশেষজ্ঞ প্যানেলের প্রধান হিসেবে ২০২০ সালে দায়িত্ব পান। তিনি বলেন, ‘পদ্মা সেতুতে মোটরসাইকেল বন্ধ করা ঠিক না। মোটরসাইকেল চলবে না কেন? আমার নিকট একটা সলুশন মনে হয় : এটার স্পিড (গতি) সর্বোচ্চ ৪০ কিলোমিটারের ওপর যাইতে পারবে না। ৬০ কিলোমিটার করে গেলে ৬ মিনিটে পার হবে আর ৪০ কিলোমিটার করে গেলে ৯ মিনিট পার হবে। অসুবিধা কি! ৪০ কিলোমিটারের ওপর যেতে পারবে না আবার ১০ কিলোমিটারেও যেতে পারবে, থামতে পারবে না। সবাই যখন দেখতে চায়, দেখুক। দেখতে গেলে সময় তো লাগবে, তা লাগুক। যদি কেউ ৪০ কিলোমিটারের বেশি স্পিডে যায়, তবে তার পানিশমেন্ট (শাস্তি) হবে। এই পানিশমেন্টটা হবে নিয়মভঙ্গকারীকে আটক রাখতে হবে। আমি ফাইন-টাইনে বিশ্বাস করি না, আজকাল মানুষের পকেটে এত পয়সা থাকে যে তাদের জন্য ফাইন কোন বিষয়ই না।’
পদ্মা সেতু জনসাধারণের জন্য খুলে দেয়ার পর প্রথম দিনেই সেতুতে মোটরসাইকেল দুর্ঘটনা ঘটেছে। এতে দুজন নিহত হন। ওইদিনই রাতে তথ্য অধিদপ্তরের এক তথ্য বিবরণীতে উল্লেখ করা হয়, পদ্মা সেতুতে ২৭ জুন সোমবার ভোর ৬টা থেকে মোটরসাইকেল চলাচল নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে সরকার। পরে সাধারণ মানুষ যেন সেতুতে চলাচলের সময় নির্ধারিত আইন মেনে চলে, তা নিশ্চিত করতে সোমবার (২৭ জুন) থেকে অতিরিক্ত কড়াকড়ি আরোপ করেছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।
জরিমানার বিষয়টি নিয়ে তার অভিজ্ঞতা বর্ণনা করতে গিয়ে বলেন, ‘আমার বড় ফুপা ছিল তসিরউদ্দিন আহমেদ। আমার ফুপা ট্রেনে উঠে রংপুরে বাসার নিকট নামার সময় চেন টেনে ট্রেন থেকে নামত। সেই সময় বিট্রিশ আমলে চেন টানলে ফাইন দিতে হতো, উনি ফাইন দিয়ে ট্রেন থেকে নেমে পড়তেন। সেরকম এখানে শুধু ফাইন দিলে হবে না।’
কেন নিয়ম ভঙ্গকারীকে আটক রাখতে হবে সেই ব্যাখ্যায় তার বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের ড. আলমগীর হাবীব নামে এক জ্যেষ্ঠ প্রকৌশলীর উদাহরণ দিলেন। তিনি বলেন, ‘উনি (ড. আলমগীর হাবীব) চার-পাঁচ বছর ইরাকে ছিলেন। উনি এসে আমাদের দুইটা গল্প বললেন। একটা হলো- ইরাকে পরীক্ষার খাতা টিচাররা কখনোই বাসায় গিয়ে দেখতে পারতেন না। আরেকটি ছিল- দুইজন রাস্তায় মারপিট করলে পুলিশ তাদের দুইজনকেই একদিনের জন্য আটকে রাখত। আটকের পরদিন বিচারে জরিমানা বা জেল সিদ্ধান্ত হয় সেটার নিষ্পত্তি হতো।’
পদ্মা সেতু বাংলাদেশের বড় সম্পদ, এই সম্পদ নিয়ে পুরো বাঙালির আবেগ কাজ করে। সেই স্থাপনাকে রক্ষা করতেও কিছু সাহসী সিদ্ধান্তের প্রয়োজন বলে তিনি মনে করেন। ড. বসুনিয়া বলেন, ‘পদ্মা সেতুতে কেউ নিয়ম অমান্য করলে তার দুইদিন আটক থাকতে হবে। দুইদিন মানে কাটায় কাটায় ৪৮ ঘণ্টা। এই ৪৮ ঘণ্টা পর তার জরিমানা নির্ধারণ হবে।’
নিয়ম ভঙ্গকারীদের আটকের জায়গাটির বর্ণনায় তিনি বলেন, ‘আটকের স্থানটি খুবই ইন্টারেস্টিংভাবে ডিজাইন করতে হবে। চিড়িয়াখানাতে যেমন থাকে তেমনি। সেখানকার রুমগুলোতে এক সাইডে সোফা, খাট, টয়লেট সবকিছুই থাকবে। একেবারে আধুনিক আবাসন। তবে অন্যসাইড ওপেন থাকবে। প্রত্যেক মানুষ যাতে দেখতে পারে। নিয়মভঙ্গকারীদের ছবি ভাইরাল করা হবে। আরও আছে, প্রাইভেট গাড়ির কোন ড্রাইভার মালিককে গাড়িতে বসিয়ে নিয়ম ভঙ্গ করলে ড্রাইভার যাবে জরিমানা হবে গাড়ির মালিকের।’
তিনি আরও বলেন, ‘পাবলিক বাস বা প্যাসেঞ্জারবাহী বড় বাসগুলো নিয়ম ভঙ্গ বরলে তাদেরও ফাইন হবে। তবে ওইসব বাসগুলো আটকালে তো সাধারণ যাত্রীরা কষ্ট পাবে তাই। বাসের মালিককে বড় একটা জরিমানা গুনতে হবে। এসব বাসের জন্য স্ট্রিকার করতে হবে। সেইসঙ্গে এসব অপরাধের জন্য একটা নেগেটিভ পয়েন্ট হতে হবে। যেমনটা উন্নত বিশ্বের দেশগুলোতে আছে।’
তিনি জোর দিয়ে বলেন, ‘আটক না রাখলে কিচ্ছু হবে না। কারণ, যারা আটকা থাকবে তাদের থাকার সুব্যবস্থা থাকবে। তবে ওই আটক থাকা মানুষদের যেন সাধারণ মানুষ দেখতে পারে। তাহলে সাধারণ মানুষ বুঝবে ও অনুভব করতে পারবে এমন অপরাধ করা যাবে না।’
নিয়ম ভঙ্গকারীদের শনাক্ত করার ব্যাখ্যায় তিনি বলেন, ‘এজন্য ব্রিজের উপর অনেকগুলো স্পিডগান (গতি পরিমাপক যন্ত্র) বসাতে হবে। পুরো ব্রিজজুড়ে ঘন ঘন স্পিডগান থাকবে।’ তিনি আক্ষেপ করে বলেন, ‘একটা জিনিসের প্রতি মানুষের সম্মান নাই, মানুষের দয়া-মায়া নাই। আমাদের চারিত্রিক বৈশিষ্ট এই রকম হইলো কেন, সরকারি মাল, দরিয়ামে ঢাল।’ যমুনা ব্রিজ ও পদ্মা ব্রিজ খুলে দেয়ার অভিজ্ঞতা বর্ণনা করতে গিয়ে তিনি বলেন, ‘তখন তো এত মোটরসাইকেল ছিল না। এখন দেশ উন্নতির দিকে যাওয়ার পর মানুষের ক্রয় ক্ষমতা বেড়েছে।’
‘মোটরসাইকেল বন্ধ করা যাবে না। মোটরসাইকেলে দুইজন গেলে দুইজনের মাথায় হেলমেট থাকতেই হবে। আজকাল তো হেলমেট ছাড়াই তিনজন যাচ্ছে। শাস্তি হিসেবে দুই দিন হাজত বাস নয়, পদ্মা সেতু কর্তৃপক্ষের মেহমান হিসেবে থাকতে হবে বলেও জানান তিনি।