alt

জাতীয়

‘খরচের’ চেয়ে কম দামে পাঠ্যপুস্তক ছাপতে চায় মুদ্রাকররা!

রাকিব উদ্দিন : বুধবার, ২৯ জুন ২০২২

সরকারের ‘প্রাক্কলিত মূল্যের’ চেয়ে ‘অস্বাভাবিক’ কম খরচে পাঠ্যপুস্তক মুদ্রণের দরপত্র জমা দেয়ায় বেকায়দায় পড়েছে ‘জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড’ (এনসিটিবি)। সংস্থাটি ভালো মানের কাগজে বই ছাপা নিয়ে শঙ্কিত।

খোলা বাজারে পাঠ্যপুস্তক ছাপার প্রতি টন কাগজের মূল্য এখন এক লাখ থেকে এক লাখ ১০ হাজার টাকার মতো। কিন্তু প্রতি টন কাগজের মূল্য ৭০ থেকে ৮০ হাজার টাকা ধরে নিয়ে ২০২৪ শিক্ষাবর্ষের পাঠ্যপুস্তক মুদ্রণ কাজের দরপত্রে অংশ নিয়েছে এক শ্রেণীর মুদ্রাকর (প্রিন্টার্স)।

এনসিটিবির একাধিক কর্মকর্তা সংবাদকে জানিয়েছেন, দরপত্রের শর্তানুযায়ী প্রাথমিক স্তরের বই ৮০ শতাংশ জিএসএমের (গ্রাম/স্কয়ার মিটার) কাগজে ৮৫ শতাংশ উজ্জ্বলতা বা পাল্প থাকতে হয়। এই মাপের প্রতি টন কাগজের দাম বর্তমানে এক লাখ থেকে এক লাখ ১০ হাজার টাকার মতো। আর বইয়ের কভারে ২৩০ জিএসএমের আর্ট কার্ড (মোটা কাগজ) ব্যবহার করতে হয়, যার প্রতি টনের দাম এক লাখ ২০ হাজার থেকে ৩০ হাজার টাকার মতো।

এছাড়া বই ছাপার কালি, ইউভি লেমিনেটিং ও বাধাঁইয়ের গ্লুসহ এ সংক্রান্ত প্রায় সব উপকরণের দামই এখন চড়া। এই অবস্থায় মুদ্রাকররা ‘অস্বাভাবিক’ কম দামে কীভাবে নির্ধারিত মানের পাঠ্যপুস্তক ছেপে সরবরাহ করবে তা নিয়ে উদ্বিগ্ন এনসিটিবির সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।

এনসিটিবির তথ্য অনুযায়ী, প্রতি ফর্মা বই মুদ্রণের সর্বোচ্চ ‘প্রাক্কলিত খরচ’ দুই টাকা ৯০ পয়সা ধরে দরপত্র আহ্বান করা হয়। কিন্তু কয়েকটি প্রতিষ্ঠান প্রতি ফর্মা বই মুদ্রণের ব্যয় মাত্র এক টাকা ৯০ পয়সা দেখিয়ে সর্বনিম্ন দরদাতা হয়েছে; যা প্রাক্কলিত দরের চেয়ে ৩৫ শতাংশ কম। বাকি কয়েকটি প্রতিষ্ঠান প্রতি ফর্মা বই মুদ্রণ খরচ দুই টাকা ৩০/৩২ পয়সা দেখিয়েই সর্বনিম্ন দরদাতা হয়েছেন।

জানতে চাইলে এনসিটিবির চেয়ারম্যান অধ্যাপক ফরহাদুল ইসলাম সংবাদকে বলেন, ‘লাভ করার জন্য প্রিন্টার্সরা সরকারের বই ছাপার কাজ করেন। আর সরকার বিভিন্ন স্তরের স্টেকহোল্ডারের মতামত ও বাজার মূল্য বিবেচনায় নিয়ে পাঠ্যপুস্তক ছাপার প্রাক্কলিত ব্যয় নির্ধারণ করে। কিন্তু এবার প্রাক্কলিত মূল্যের চেয়ে অপ্রত্যাশিত কম টাকায় দরপত্রে অংশ নিয়েছে অনেক প্রতিষ্ঠান। তারা এত কমদামে কীভাবে ভালোমানের বই দেবেন সেটি নিয়ে আমরাও চিন্তিত।’

দরপত্রের মূল্যায়ন কার্যক্রম এখনও শেষ হয়নি জানিয়ে ফরহাদুল ইসলাম বলেন, পিপিআর বা সরকারি ক্রয় আইন অনুযায়ী প্রাক্কলিত দরের ১০ শতাংশ কম বা বেশি হলে তা গ্রহণযোগ্য বিবেচিত হয়। কিন্তু প্রাথমিক মূল্যায়নে দেখা গেছে, কিছু প্রতিষ্ঠান গড়ে ২৩-২৪ শতাংশ কম দর দেখিয়ে দরপত্র জমা দিয়েছে।

জানতে চাইলে মুদ্রণ শিল্প সমিতির সভাপতি তোফায়েল খান সংবাদকে জানান, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা সচিব ইতোমধ্যে এনসিটিবিকে বলে দিয়েছেন, প্রাক্কলিত দরের চেয়ে ‘১০ শতাংশ কমে’ দরপত্র জমা দিলে তাদের কাজ না দিতে। কিন্তু অনেক প্রতিষ্ঠান ২০/২৫ শতাংশ কম দরে দরপত্রে অংশ নিয়েছেন। এই দরে শুধুমাত্র নিউজপ্রিন্ট কাগজে বই ছাপানো সম্ভব। ‘আমরাও চাই অবিলম্বে এই টেন্ডার বাতিল’ করা হোক। অন্যথায় এনসিটিবি ঘোষণা দিয়ে নিউজপ্রিন্ট কাগজে বই ছাপুক। যাতে সবার সুবিধা হয়।

এনসিটিবির সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ২০২৩ শিক্ষাবর্ষের জন্য এবার প্রায় ৩৪ কোটি ৬১ লাখ ৬৩ হাজার কপি পাঠ্যবই ছাপার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এর মধ্যে প্রাক-প্রাথমিক থেকে প্রাথমিক স্তরের ৯ কোটি ৯৮ লাখ ৫৩ হাজার কপি এবং মাধ্যমিক স্তরের জন্য মোট ২৪ কোটি ৬৩ লাখ ১০ হাজার কপি পাঠ্যবই ছাপা হচ্ছে। প্রাথমিক স্তরের প্রায় ১০ কোটি কপি পাঠ্যবই ছাপতে ৯৮টি লটে দরপত্র আহ্বান করা হয়। গত ১৩ জুন এই দরপত্র উন্মুক্ত করে এনসিটিবি।

সব মিলিয়ে ১৭টি ছাপাখানা প্রতিষ্ঠানই ৯৮টি লটের সর্বনিম্ন দরদাতা হয়েছে বলে এনসিটিবির সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানিয়েছেন। তাদের প্রাথমিক মূল্যায়ন তথ্য অনুযায়ী, ৯৮টি লটের মধ্যে অগ্রণী প্রিন্টিং প্রেস সর্বোচ্চ ১৮টি, সাগরিকা ১৭টি, নুরুল ইসলাম ১৩টি, টাইমস মিডিয়া ১৩টি, আমিন আর্ট পাঁচটি ও আনন্দ প্রিন্টিং প্রেস সাতটি লটের সর্বনিম্ম দরদাতা হয়েছে। বাকি ১১টি প্রতিষ্ঠান একটি বা দুটি করে লটের সর্বনিম্ন দরদাতা হয়েছে।

জানতে চাইলে মুদ্রণ শিল্প সমিতির সাধারণ সম্পাদক জহুরুল ইসলাম সংবাদকে বলেন, ‘টেন্ডার দিয়েছে এনসিটিবি। বইও নেবে এনসিটিবি। তারা এই দামে (প্রাক্কলিত দরের চেয়ে কম) ভালোমানের বই কীভাবে নেবেন সেটাও তাদের বিষয়। গত বছর যারা নিউজপ্রিন্ট কাগজে বই ছেপেছে তারা (এনসিটিবি) কিছু করতে পেরেছে? কেউ কোন ব্যবস্থা নেয়নি।’

এনসিটিবির একাধিক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, সর্বনিম্ন দরদাতা হলেও অনেক প্রতিষ্ঠান কাজ নাও পেতে পারে। কারণ দরপত্রের মূল্যায়নে নানা শর্ত বিশেষ করে ছাপাখানার সক্ষমতা, জনবল, অতীত অভিজ্ঞতাও বিবেচনায় নেয়া হয়। এ কারণে সর্বনিম্ন দরদাতা হলেও চূড়ান্ত মূল্যায়ন কার্যক্রম ও দরপত্রের বিভিন্ন শর্তের আলোকে ওইসব প্রতিষ্ঠানের কাজ ‘কম-বেশি’ হতে পারে।

চলতি ২০২২ শিক্ষাবর্ষে প্রায় ৩৫ কোটি পাঠ্যবই বিতরণ করেছে এনসিটিবি। গত বছর এক শ্রেণীর মুদ্রাকর জোটবদ্ধভাবে প্রাক্কলিত দরের চেয়ে ৩০ শতাংশ বেশি দরে পাঠ্যপুস্তক মুদ্রণের দরপত্রে অংশ নেয়। পরে পুনরায় দরপত্র আহ্বান করা হয়। এ নিয়ে মুদ্রাকরদের মধ্যে দ্বন্দ্ব শুরু হয়। পুনঃদরপত্রে প্রাক্কলিত দরের চেয়ে ২০/২২ শতাংশ কম মূল্যে দরপত্রে অংশ নেয় মুদ্রাকররা। এতে সরকারের প্রায় ২৩০ কোটি টাকা সাশ্রয় হয়।

পরবর্তীতে পাঠ্যপুস্তকের গুণগত মান নিয়ে নানা প্রশ্ন উঠে। এতে নানা অভিযোগে ১৪টি ছাপাখানাকে এক থেকে পাঁচ বছরের জন্য কালো তালিকাভুক্ত করা হয়। কিন্তু প্রতিষ্ঠানের নাম পাল্টিয়ে কালোতালিকাভুক্ত প্রতিষ্ঠানও এবার দরপত্রে অংশ নিয়েছে। এর মধ্যে দু’একটি প্রতিষ্ঠান এবার সর্বনিম্ন দরদাতাও হয়েছে বলে এনসিটিবির সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।

ছবি

১৫ বছরে আমাদের চাল আমদানি করতে হয়নি: এলজিআরডি মন্ত্রী

ছবি

শপথ নিলেন আপিল বিভাগের ৩ বিচারপতি

ছবি

যুদ্ধ অবশ্যই বন্ধ হওয়া উচিত : প্রধানমন্ত্রী

ছবি

গ্যাস সংকটে আগামীর ‘ভরসা’ এলএনজি

ছবি

রানা প্লাজা ধসের ১১ বছর : ‘আমার স্বপ্নও ভেঙে গেছে’

ছবি

এভিয়েশন শিল্পের উন্নয়নে সহযোগিতা করতে চায় যুক্তরাজ্য

ছবি

থাইল্যান্ডে প্রধানমন্ত্রীকে লাল গালিচা সংবর্ধনা

ছবি

সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে ৩ নতুন বিচারক

ছবি

কক্সবাজারে ভোটার হওয়া রোহিঙ্গাদের তালিকা চায় হাই কোর্ট

ছবি

ব্যাংকক পৌঁছেছেন প্রধানমন্ত্রী

ছবি

তাপপ্রবাহের এলাকা আরও বাড়বে

ছবি

ব্যাংককের উদ্দেশে ঢাকা ত্যাগ করলেন প্রধানমন্ত্রী

ছবি

বাংলাদেশ ও কাতারের মধ্যে ৫টি চুক্তি ও ৫টি সমঝোতা স্মারক সই

ছবি

ঢাকা ছাড়লেন কাতারের আমির

ছবি

সোমালি জলদস্যুদের দ্বারা জব্দ করা জাহাজ সংযুক্ত আরব আমিরাতে পৌঁছেছে; ২৩ জন বাংলাদেশি নাবিকের সবাই নিরাপদ

ছবি

পদে থেকেই ইউপি চেয়ারম্যানরা উপজেলা নির্বাচন করতে পারবেন

ছবি

পদত্যাগ না করেই ইউপি চেয়ারম্যানরা উপজেলা নির্বাচন করতে পারবেন

ছবি

বান্দরবানের তিন উপজেলায় ভোট স্থগিত : ইসি সচিব

ছবি

তীব্র দাবদাহের মধ্যেও বিদ্যুৎ উৎপাদনে রেকর্ড , আছে লোড শেডিংও

ছবি

বাংলাদেশ-কাতার ১০ চুক্তি সই

ছবি

ঢাকা থেকে প্রধান ১৫টি রুটে ট্রেনের ভাড়া যত বাড়ল

ছবি

প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকে কাতারের আমির

ছবি

তাপপ্রবাহের সতর্কবার্তা বাড়লো আরও ৩ দিন, দুর্ভোগে সাধারণ মানুষ

ছবি

বাংলাদেশ সেনাবাহিনী ও যুক্তরাষ্ট্রের প্যাসিফিক আর্মি কমান্ড এর যৌথ অংশগ্রহণে টিএল-২০২৪ উদ্বোধন

ছবি

শিশু অধিকার বিষয়ক সচেতনতা সৃষ্টিতে মিডিয়ার ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ--স্পীকার

ছবি

দু’দিনের সফরে কাতারের আমির ঢাকায়

ছবি

পাঁচ দিনের সফরে বুধবার থাইল্যান্ড যাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী

ছবি

৪ মে থেকে বাড়ছে ট্রেনের ভাড়া

ছবি

আনু মুহাম্মদের পায়ে ‌‘কম্বাইন্ড অপারেশন’ দরকার: স্বাস্থ্যমন্ত্রী

ছবি

আমরা জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার হ্রাস করেছি : শেখ হাসিনা

ছবি

তাপপ্রবাহের সতর্কবার্তা, বাড়লো আরও ৩ দিন

ছবি

জলবায়ু পরিবর্তনের কারণেই কি এত তাপ?

ছবি

ভারতের উজানে পানি প্রত্যাহার করে নেয়ায় তিস্তা মরা খালে পরিনত হয়েছে

ছবি

তাপদাহ : হাসপাতাল প্রস্তুত রাখার নির্দেশ স্বাস্থ্যমন্ত্রীর

ছবি

পিছিয়ে নেই নারীরাও তামিলনাড়ু থেকে ট্রাক নিয়ে বেনাপোল এলেন অন্নপূর্ণা

ছবি

দুই দিনের রাষ্ট্রীয় সফরে ঢাকা আসছেন কাতারের আমির, ১১ টি চুক্তি-সমঝোতা

tab

জাতীয়

‘খরচের’ চেয়ে কম দামে পাঠ্যপুস্তক ছাপতে চায় মুদ্রাকররা!

রাকিব উদ্দিন

বুধবার, ২৯ জুন ২০২২

সরকারের ‘প্রাক্কলিত মূল্যের’ চেয়ে ‘অস্বাভাবিক’ কম খরচে পাঠ্যপুস্তক মুদ্রণের দরপত্র জমা দেয়ায় বেকায়দায় পড়েছে ‘জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড’ (এনসিটিবি)। সংস্থাটি ভালো মানের কাগজে বই ছাপা নিয়ে শঙ্কিত।

খোলা বাজারে পাঠ্যপুস্তক ছাপার প্রতি টন কাগজের মূল্য এখন এক লাখ থেকে এক লাখ ১০ হাজার টাকার মতো। কিন্তু প্রতি টন কাগজের মূল্য ৭০ থেকে ৮০ হাজার টাকা ধরে নিয়ে ২০২৪ শিক্ষাবর্ষের পাঠ্যপুস্তক মুদ্রণ কাজের দরপত্রে অংশ নিয়েছে এক শ্রেণীর মুদ্রাকর (প্রিন্টার্স)।

এনসিটিবির একাধিক কর্মকর্তা সংবাদকে জানিয়েছেন, দরপত্রের শর্তানুযায়ী প্রাথমিক স্তরের বই ৮০ শতাংশ জিএসএমের (গ্রাম/স্কয়ার মিটার) কাগজে ৮৫ শতাংশ উজ্জ্বলতা বা পাল্প থাকতে হয়। এই মাপের প্রতি টন কাগজের দাম বর্তমানে এক লাখ থেকে এক লাখ ১০ হাজার টাকার মতো। আর বইয়ের কভারে ২৩০ জিএসএমের আর্ট কার্ড (মোটা কাগজ) ব্যবহার করতে হয়, যার প্রতি টনের দাম এক লাখ ২০ হাজার থেকে ৩০ হাজার টাকার মতো।

এছাড়া বই ছাপার কালি, ইউভি লেমিনেটিং ও বাধাঁইয়ের গ্লুসহ এ সংক্রান্ত প্রায় সব উপকরণের দামই এখন চড়া। এই অবস্থায় মুদ্রাকররা ‘অস্বাভাবিক’ কম দামে কীভাবে নির্ধারিত মানের পাঠ্যপুস্তক ছেপে সরবরাহ করবে তা নিয়ে উদ্বিগ্ন এনসিটিবির সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।

এনসিটিবির তথ্য অনুযায়ী, প্রতি ফর্মা বই মুদ্রণের সর্বোচ্চ ‘প্রাক্কলিত খরচ’ দুই টাকা ৯০ পয়সা ধরে দরপত্র আহ্বান করা হয়। কিন্তু কয়েকটি প্রতিষ্ঠান প্রতি ফর্মা বই মুদ্রণের ব্যয় মাত্র এক টাকা ৯০ পয়সা দেখিয়ে সর্বনিম্ন দরদাতা হয়েছে; যা প্রাক্কলিত দরের চেয়ে ৩৫ শতাংশ কম। বাকি কয়েকটি প্রতিষ্ঠান প্রতি ফর্মা বই মুদ্রণ খরচ দুই টাকা ৩০/৩২ পয়সা দেখিয়েই সর্বনিম্ন দরদাতা হয়েছেন।

জানতে চাইলে এনসিটিবির চেয়ারম্যান অধ্যাপক ফরহাদুল ইসলাম সংবাদকে বলেন, ‘লাভ করার জন্য প্রিন্টার্সরা সরকারের বই ছাপার কাজ করেন। আর সরকার বিভিন্ন স্তরের স্টেকহোল্ডারের মতামত ও বাজার মূল্য বিবেচনায় নিয়ে পাঠ্যপুস্তক ছাপার প্রাক্কলিত ব্যয় নির্ধারণ করে। কিন্তু এবার প্রাক্কলিত মূল্যের চেয়ে অপ্রত্যাশিত কম টাকায় দরপত্রে অংশ নিয়েছে অনেক প্রতিষ্ঠান। তারা এত কমদামে কীভাবে ভালোমানের বই দেবেন সেটি নিয়ে আমরাও চিন্তিত।’

দরপত্রের মূল্যায়ন কার্যক্রম এখনও শেষ হয়নি জানিয়ে ফরহাদুল ইসলাম বলেন, পিপিআর বা সরকারি ক্রয় আইন অনুযায়ী প্রাক্কলিত দরের ১০ শতাংশ কম বা বেশি হলে তা গ্রহণযোগ্য বিবেচিত হয়। কিন্তু প্রাথমিক মূল্যায়নে দেখা গেছে, কিছু প্রতিষ্ঠান গড়ে ২৩-২৪ শতাংশ কম দর দেখিয়ে দরপত্র জমা দিয়েছে।

জানতে চাইলে মুদ্রণ শিল্প সমিতির সভাপতি তোফায়েল খান সংবাদকে জানান, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা সচিব ইতোমধ্যে এনসিটিবিকে বলে দিয়েছেন, প্রাক্কলিত দরের চেয়ে ‘১০ শতাংশ কমে’ দরপত্র জমা দিলে তাদের কাজ না দিতে। কিন্তু অনেক প্রতিষ্ঠান ২০/২৫ শতাংশ কম দরে দরপত্রে অংশ নিয়েছেন। এই দরে শুধুমাত্র নিউজপ্রিন্ট কাগজে বই ছাপানো সম্ভব। ‘আমরাও চাই অবিলম্বে এই টেন্ডার বাতিল’ করা হোক। অন্যথায় এনসিটিবি ঘোষণা দিয়ে নিউজপ্রিন্ট কাগজে বই ছাপুক। যাতে সবার সুবিধা হয়।

এনসিটিবির সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ২০২৩ শিক্ষাবর্ষের জন্য এবার প্রায় ৩৪ কোটি ৬১ লাখ ৬৩ হাজার কপি পাঠ্যবই ছাপার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এর মধ্যে প্রাক-প্রাথমিক থেকে প্রাথমিক স্তরের ৯ কোটি ৯৮ লাখ ৫৩ হাজার কপি এবং মাধ্যমিক স্তরের জন্য মোট ২৪ কোটি ৬৩ লাখ ১০ হাজার কপি পাঠ্যবই ছাপা হচ্ছে। প্রাথমিক স্তরের প্রায় ১০ কোটি কপি পাঠ্যবই ছাপতে ৯৮টি লটে দরপত্র আহ্বান করা হয়। গত ১৩ জুন এই দরপত্র উন্মুক্ত করে এনসিটিবি।

সব মিলিয়ে ১৭টি ছাপাখানা প্রতিষ্ঠানই ৯৮টি লটের সর্বনিম্ন দরদাতা হয়েছে বলে এনসিটিবির সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানিয়েছেন। তাদের প্রাথমিক মূল্যায়ন তথ্য অনুযায়ী, ৯৮টি লটের মধ্যে অগ্রণী প্রিন্টিং প্রেস সর্বোচ্চ ১৮টি, সাগরিকা ১৭টি, নুরুল ইসলাম ১৩টি, টাইমস মিডিয়া ১৩টি, আমিন আর্ট পাঁচটি ও আনন্দ প্রিন্টিং প্রেস সাতটি লটের সর্বনিম্ম দরদাতা হয়েছে। বাকি ১১টি প্রতিষ্ঠান একটি বা দুটি করে লটের সর্বনিম্ন দরদাতা হয়েছে।

জানতে চাইলে মুদ্রণ শিল্প সমিতির সাধারণ সম্পাদক জহুরুল ইসলাম সংবাদকে বলেন, ‘টেন্ডার দিয়েছে এনসিটিবি। বইও নেবে এনসিটিবি। তারা এই দামে (প্রাক্কলিত দরের চেয়ে কম) ভালোমানের বই কীভাবে নেবেন সেটাও তাদের বিষয়। গত বছর যারা নিউজপ্রিন্ট কাগজে বই ছেপেছে তারা (এনসিটিবি) কিছু করতে পেরেছে? কেউ কোন ব্যবস্থা নেয়নি।’

এনসিটিবির একাধিক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, সর্বনিম্ন দরদাতা হলেও অনেক প্রতিষ্ঠান কাজ নাও পেতে পারে। কারণ দরপত্রের মূল্যায়নে নানা শর্ত বিশেষ করে ছাপাখানার সক্ষমতা, জনবল, অতীত অভিজ্ঞতাও বিবেচনায় নেয়া হয়। এ কারণে সর্বনিম্ন দরদাতা হলেও চূড়ান্ত মূল্যায়ন কার্যক্রম ও দরপত্রের বিভিন্ন শর্তের আলোকে ওইসব প্রতিষ্ঠানের কাজ ‘কম-বেশি’ হতে পারে।

চলতি ২০২২ শিক্ষাবর্ষে প্রায় ৩৫ কোটি পাঠ্যবই বিতরণ করেছে এনসিটিবি। গত বছর এক শ্রেণীর মুদ্রাকর জোটবদ্ধভাবে প্রাক্কলিত দরের চেয়ে ৩০ শতাংশ বেশি দরে পাঠ্যপুস্তক মুদ্রণের দরপত্রে অংশ নেয়। পরে পুনরায় দরপত্র আহ্বান করা হয়। এ নিয়ে মুদ্রাকরদের মধ্যে দ্বন্দ্ব শুরু হয়। পুনঃদরপত্রে প্রাক্কলিত দরের চেয়ে ২০/২২ শতাংশ কম মূল্যে দরপত্রে অংশ নেয় মুদ্রাকররা। এতে সরকারের প্রায় ২৩০ কোটি টাকা সাশ্রয় হয়।

পরবর্তীতে পাঠ্যপুস্তকের গুণগত মান নিয়ে নানা প্রশ্ন উঠে। এতে নানা অভিযোগে ১৪টি ছাপাখানাকে এক থেকে পাঁচ বছরের জন্য কালো তালিকাভুক্ত করা হয়। কিন্তু প্রতিষ্ঠানের নাম পাল্টিয়ে কালোতালিকাভুক্ত প্রতিষ্ঠানও এবার দরপত্রে অংশ নিয়েছে। এর মধ্যে দু’একটি প্রতিষ্ঠান এবার সর্বনিম্ন দরদাতাও হয়েছে বলে এনসিটিবির সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।

back to top