সম্মিলিত সামাজিক আন্দোলনের নেতারা বলেছেন, শুধু নড়াইল বা আশুলিয়ার ঘটনা দিয়ে শেষ নয়, ইতোপূর্বে ধারাবাহিকভাবে এই ঘটনা ঘটে আসছে দেশে। কিন্তু প্রশাসনের সামনে এমন জঘন্য ঘটনা প্রমাণ করে রাষ্ট্র আজ কতটা অসহায়। এই দৈন্যতা আর সাম্প্রদায়িকতার সাথে আঁতাত করে মুক্তিযুদ্ধ বাঁচানো যাবে না।
শনিবার শাহবাগ জাতীয় জাদুঘরের সামনে সম্মিলিত সামাজিক আন্দোলনের মানববন্ধন ও সমাবেশে বক্তারা এসব কথা বলেন।
বিশিষ্ট নাট্য ব্যক্তিত্ব বাংলা একাডেমির পুরস্কার প্রাপ্ত অধ্যাপক রতন সিদ্দিকীর বাসায় হামলা, সাভারে কলেজ শিক্ষক উৎপল কুমারকে পিটিয়ে হত্যা, নড়াইলে কলেজ শিক্ষক স্বপন কুমার বিশ্বাসকে প্রশাসনের উপস্থিতিতে জুতার মালা পরিয়ে অপমান করার প্রতিবাদে ও বিচারের দাবি এবং মহান মুক্তিযুদ্ধের অসাম্প্রদায়িক চেতনায় সম্প্রীতির স্বদেশ গড়ে তোলার দাবিতে এই কর্মসূচি আয়োজন করা হয়।
সংগঠনের কেন্দ্রীয় নেতা ড. সেলু বাসিতের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সমাবেশে বক্তব্য রাখেন সংগঠনের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা সদস্য, মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক, ঐক্য ন্যাপ সভাপতি পঙ্কজ ভট্টাচার্য (ভার্চুয়াল), সাম্প্রদায়িকতা-জঙ্গীবাদ বিরোধী মঞ্চের সদস্য সচিব শিক্ষক নেতা ড. নূর মোহাম্মদ তালুকদার, সম্মিলিত সামাজিক আন্দোলনের অন্যতম প্রেসিডিয়াম সদস্য ও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের চেয়ারম্যান ড. সৈয়দ আব্দুল্লাহ আল মামুন চেধুরী, সাধারণ সম্পাদক সালেহ আহমেদ, সাংগঠনিক সম্পাদক অধ্যাপক জাহাঙ্গীর আলম সবুজ, সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য অলোক দাস গুপ্ত, মামুনুর রশীদ, জাতীয় শ্রমিক জোটের কার্যকরী সভাপতি আবদুল ওয়াহেদ, সাধারণ সম্পাদক মো. নূরুল আমীন, সম্মিলিত সামাজিক আন্দোলনের ঢাকা মহানগর নেতা জাহাঙ্গীর আলম ফজলু, জুবায়ের আলম, নারী নেত্রী খালেদা ইয়াসমিন কনা, সম্প্রতি মুন্সিগঞ্জে সাম্প্রদায়িকতার বিষবাস্পে নিস্পেষিত কারানির্যাতিত শিক্ষক হৃদয় মন্ডল প্রমুখ।
সভায় ঘোষণা পাঠ করেন সম্মিলিত সামাজিক আন্দোলনের আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক এডভোকেট পারভেজ হাসেম। সভা পরিচালনা করেন সংগঠনের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এ কে আজাদ।
সভায় পঙ্কজ ভট্টাচার্য বলেন, ‘৫২ বছর পার করেও চেতনার ৭১’র দেশকে না ফেরাতে পারার ব্যর্থতা নিয়ে আমাদের চলে যেতে হবে। এখানে ক্ষমতায় যাওয়া ও টিকে থাকার হাতিয়ার সাম্প্রদায়িক শক্তি, মাফিয়া, লুটেরা শ্রেণী, এই অপশক্তির ইন্ধন দিয়ে কেউ ক্ষমতায় যাওয়ার স্বপ্ন দেখে, যার জন্য আজকে দেশ বিপদগ্রস্ত, প্রতিনিয়ত মুক্তিযুদ্ধকে হত্যা করা হয়।’
তিনি আরও বলেন, ‘এক্ষুনি সাম্প্রদায়িক-উগ্রবাদীদের রাজনীতি নিষিদ্ধ করতে হবে। দেশকে মুক্তিযুদ্ধের ধারায় ফিরিয়ে আনতে হবে।’
ড. নূর মোহাম্মদ তালুকদার বলেন, ‘গোটা শিক্ষা ব্যবস্থাকে ধ্বংস ও প্রশ্নবিদ্ধ করার ষড়যন্ত্র চলছে। এখনই অপশক্তি সাম্প্রদায়িকতাবাদীরা সবকিছু দখল করার প্রতিযোগিতায় নেমেছে। নড়াইলের ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত হলে থলের বেড়াল বের হয়ে আসবে।’
ড. সৈয়দ আবদুল্লাহ আল মামুন বলেন, ‘জাতিকে বাঁচাতে হলে শিক্ষা ব্যবস্থা থেকে সাম্প্রদায়িক-উগ্রবাদীদের চিহ্নিত করতে হবে। এদের কঠোর হস্তে দমন করতে হবে।’
সালেহ আহমেদ বলেন, ‘অবস্থাদৃষ্টে মনে হয় আমরা বাঙালি সংস্কৃতি ও অসাম্প্রদায়িক চেতনাকে বিসর্জন দিয়ে আবার ৪৭ এর ধারায় নেমে যাচ্ছি। এখানে নাটক, গান, জারি-সারি, ভাটিয়ারীসহ আবহমান বাংলার যে সংস্কৃতি তা অঘোষিতভাবে নিষিদ্ধ করা হয়েছে। দেশে কোথাও পহেলা বৈশাখ, গান-নাটক করতে হলে সময় বেঁধে দেওয়া হয় এই সংস্কৃতি থেকে রাষ্ট্রকে বের হয়ে আসতে হবে। সামাজিক মূল্যবোধ ফিরিয়ে আনতে অপসংস্কৃতি, আকাশ সংস্কৃতি, সাম্প্রদায়িক-উগ্রবাদীদের অপপ্রচার কঠোর হস্তে দমন করতে হবে।’
সারাদেশে শিক্ষক ও সংস্কৃতি কর্মীদের উপর নিপীড়ন, নির্যাতন ও হত্যার প্রতিবাদ সমাবেশের ঘোষণা:
সারাদশে শিক্ষক নিপীড়ন, নির্যাতন ও হত্যা, ধর্মীয় সংখ্যালঘু ও প্রগতিশীল মানুষদের উপর হামলার ঘটনা আমাদের উদ্বিগ্ন করে। নড়াইলে অধ্যক্ষ স্বপন কুমার বিশ্বাসকে ধর্ম অবমাননার মিথ্যা অভিযোগ এনে মৌলবাদী গোষ্ঠী প্রশাসনের উপস্থিতিতে গলায় জুতার মালা পরিয়ে সমগ্র শিক্ষক সমাজ, শিক্ষা ও সভ্যতাকে লাঞ্ছিত করেছে। আশুলিয়ায় প্রভাষক উৎপল কুমার সরকারকে বখাটে ছাত্র কলেজ চলাকালীন সময়ে পিটিয়ে হত্যা করে শিক্ষা ব্যবস্থার দীনতা ও নৈতিকতার অবক্ষয়ের ভয়ংকর চিত্র তুলে ধরে।
রংপুরের ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক স্কুল ও কলেজের দশম শ্রেণীর ইসলাম ও নৈতিক শিক্ষা বিষয়ে পরীক্ষার প্রশ্নপত্রে ইভটিজিং এর পেছনে নারীর পোশাকের উপর দায় চাপানো বিষয়ে একজন শিক্ষাবিদ হিসেবে হতাশা পোষণ করে ফেসবুকে পোস্ট দিয়েছিলেন বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক উন্মেষ রায়। এই কারণে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই শিক্ষক উন্মেষ রায় এবং সঞ্জয় সরকারকে লাঞ্ছনার শিকার হতে হয়েছে।
নওগাঁর মহাদেবপুরে একটি উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী প্রধান শিক্ষিকা আমোদিনি পালকে ছাত্রীদের হিজাব পরে আসায় মারধরের মিথ্যা অভিযোগে লাঞ্ছনার শিকার হতে হয়েছিল। নারায়নগঞ্জের শিক্ষক শ্যামল কান্তি ভক্তকে কান ধরে উঠ বস করতে বাধ্য করেছিল দুর্বৃত্তরা। বিজ্ঞান পড়াতে গিয়ে মৌলবাদীদের ষড়যন্ত্রে জেলে যেতে হয়েছিল বিজ্ঞান শিক্ষক হৃদয় মন্ডলকে। এক্ষেত্রে একটি বিষয়ে মিল দেখা যায় যে, সকল সহিংসতার শিকার ব্যক্তিরা সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের।
গত ১ জুলাই তারিখ দুপুরে জুমার নামাজের সময় সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব অধ্যাপক ড. রতন সিদ্দিকীর বাসায় একদল ধর্মান্ধ হামলা চালিয়েছে এবং তাকে লাঞ্ছিত করেছে।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে কথিত ধর্ম অবমাননার অভিযোগ তুলে সংখ্যালঘুদের হত্যা, নিপীড়ন, নির্যাতন, ধর্মীয় উপাসনালয়ে অগ্নিসংযোগ, বাড়ীঘরে হামলা-লুন্ঠন বাংলাদেশে একটি প্রবণতা হয়ে দাড়িয়েছে। কক্সবাজারের রামু, ব্রাহ্মনবাড়িয়ার নাসিরনগর, সুনামগঞ্জের শাল্লা, ভোলা ও রংপুর সর্বত্র একই প্রবণতা, সহিংসতা ও ঘটনা দৃশ্যমান। এর আগেও সংখ্যালঘুদের উপর সংঘটিত সহিংসতায় অনেক মামলা হয়েছে কিন্তু কোন মামলা নিস্পত্তি হয়েছে এমন কোন তথ্য পাওয়া যায় না।
সম্মিলিত সামাজিক আন্দোলন মনে করে সংখ্যালঘু জনগণের উপর সহিংসতার ঘটনাগুলোর সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচার না হওয়ায় এধরনের ঘটনা বার বার ঘটছে, যা তাদেরকে ভীতি, নিরাপত্তাহীনতা ও অনিশ্চিয়তার দিকে ঠেলে দিচ্ছে। মুক্তচিন্তা, বিশ্বাস কিংবা ধর্মপালনের স্বাধীনতা একটি নাগরিক অধিকার। সকল নাগরিকের বিশ্বাস, ধর্ম পালনের স্বাধীনতা নিশ্চিত করার দায়িত্ব রাষ্ট্রের। সংখ্যালঘুদের উপর সহিংসতা সংবিধান ও মানবাধিকার পরিপন্থি।
স্বাধীনতার পর থেকেই রাষ্ট্র মুক্তচিন্তার মানুষ ও সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ হয়েছে। বাংলাদেশে প্রাথমিক শিক্ষা থেকে উচ্চশিক্ষা সর্বস্তরেই শিক্ষার মান নিম্নগামী। ধর্মীয় শিক্ষার অতিবিস্তার এবং মূল ধারার শিক্ষায় বিজ্ঞান ও আধুনিকতার সংকোচন দেশে বিজ্ঞান ও আধুনিকতা বিরোধী প্রতিক্রিয়াশীল প্রজন্ম তৈরী করছে, যা দেশকে ক্রমশ পিছনের দিকে নিয়ে যাচ্ছে। এই প্রতিক্রিয়াশীল প্রজন্মই ভিন্নমত, মুক্তচিন্তা ও সংখ্যালঘুদের আক্রমণের লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত করেছে।
আমরা সারাদেশে শিক্ষক হত্যা, নিপীড়ন ও সংখ্যালঘু ও মুক্তচিন্তার মানুষের উপর হামলা ও নিপীড়নের নিরপেক্ষ তদন্ত, অপরাধীদের গ্রেফ্তার ও শাস্তির দাবী জানাচ্ছি।
শনিবার, ০২ জুলাই ২০২২
সম্মিলিত সামাজিক আন্দোলনের নেতারা বলেছেন, শুধু নড়াইল বা আশুলিয়ার ঘটনা দিয়ে শেষ নয়, ইতোপূর্বে ধারাবাহিকভাবে এই ঘটনা ঘটে আসছে দেশে। কিন্তু প্রশাসনের সামনে এমন জঘন্য ঘটনা প্রমাণ করে রাষ্ট্র আজ কতটা অসহায়। এই দৈন্যতা আর সাম্প্রদায়িকতার সাথে আঁতাত করে মুক্তিযুদ্ধ বাঁচানো যাবে না।
শনিবার শাহবাগ জাতীয় জাদুঘরের সামনে সম্মিলিত সামাজিক আন্দোলনের মানববন্ধন ও সমাবেশে বক্তারা এসব কথা বলেন।
বিশিষ্ট নাট্য ব্যক্তিত্ব বাংলা একাডেমির পুরস্কার প্রাপ্ত অধ্যাপক রতন সিদ্দিকীর বাসায় হামলা, সাভারে কলেজ শিক্ষক উৎপল কুমারকে পিটিয়ে হত্যা, নড়াইলে কলেজ শিক্ষক স্বপন কুমার বিশ্বাসকে প্রশাসনের উপস্থিতিতে জুতার মালা পরিয়ে অপমান করার প্রতিবাদে ও বিচারের দাবি এবং মহান মুক্তিযুদ্ধের অসাম্প্রদায়িক চেতনায় সম্প্রীতির স্বদেশ গড়ে তোলার দাবিতে এই কর্মসূচি আয়োজন করা হয়।
সংগঠনের কেন্দ্রীয় নেতা ড. সেলু বাসিতের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সমাবেশে বক্তব্য রাখেন সংগঠনের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা সদস্য, মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক, ঐক্য ন্যাপ সভাপতি পঙ্কজ ভট্টাচার্য (ভার্চুয়াল), সাম্প্রদায়িকতা-জঙ্গীবাদ বিরোধী মঞ্চের সদস্য সচিব শিক্ষক নেতা ড. নূর মোহাম্মদ তালুকদার, সম্মিলিত সামাজিক আন্দোলনের অন্যতম প্রেসিডিয়াম সদস্য ও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের চেয়ারম্যান ড. সৈয়দ আব্দুল্লাহ আল মামুন চেধুরী, সাধারণ সম্পাদক সালেহ আহমেদ, সাংগঠনিক সম্পাদক অধ্যাপক জাহাঙ্গীর আলম সবুজ, সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য অলোক দাস গুপ্ত, মামুনুর রশীদ, জাতীয় শ্রমিক জোটের কার্যকরী সভাপতি আবদুল ওয়াহেদ, সাধারণ সম্পাদক মো. নূরুল আমীন, সম্মিলিত সামাজিক আন্দোলনের ঢাকা মহানগর নেতা জাহাঙ্গীর আলম ফজলু, জুবায়ের আলম, নারী নেত্রী খালেদা ইয়াসমিন কনা, সম্প্রতি মুন্সিগঞ্জে সাম্প্রদায়িকতার বিষবাস্পে নিস্পেষিত কারানির্যাতিত শিক্ষক হৃদয় মন্ডল প্রমুখ।
সভায় ঘোষণা পাঠ করেন সম্মিলিত সামাজিক আন্দোলনের আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক এডভোকেট পারভেজ হাসেম। সভা পরিচালনা করেন সংগঠনের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এ কে আজাদ।
সভায় পঙ্কজ ভট্টাচার্য বলেন, ‘৫২ বছর পার করেও চেতনার ৭১’র দেশকে না ফেরাতে পারার ব্যর্থতা নিয়ে আমাদের চলে যেতে হবে। এখানে ক্ষমতায় যাওয়া ও টিকে থাকার হাতিয়ার সাম্প্রদায়িক শক্তি, মাফিয়া, লুটেরা শ্রেণী, এই অপশক্তির ইন্ধন দিয়ে কেউ ক্ষমতায় যাওয়ার স্বপ্ন দেখে, যার জন্য আজকে দেশ বিপদগ্রস্ত, প্রতিনিয়ত মুক্তিযুদ্ধকে হত্যা করা হয়।’
তিনি আরও বলেন, ‘এক্ষুনি সাম্প্রদায়িক-উগ্রবাদীদের রাজনীতি নিষিদ্ধ করতে হবে। দেশকে মুক্তিযুদ্ধের ধারায় ফিরিয়ে আনতে হবে।’
ড. নূর মোহাম্মদ তালুকদার বলেন, ‘গোটা শিক্ষা ব্যবস্থাকে ধ্বংস ও প্রশ্নবিদ্ধ করার ষড়যন্ত্র চলছে। এখনই অপশক্তি সাম্প্রদায়িকতাবাদীরা সবকিছু দখল করার প্রতিযোগিতায় নেমেছে। নড়াইলের ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত হলে থলের বেড়াল বের হয়ে আসবে।’
ড. সৈয়দ আবদুল্লাহ আল মামুন বলেন, ‘জাতিকে বাঁচাতে হলে শিক্ষা ব্যবস্থা থেকে সাম্প্রদায়িক-উগ্রবাদীদের চিহ্নিত করতে হবে। এদের কঠোর হস্তে দমন করতে হবে।’
সালেহ আহমেদ বলেন, ‘অবস্থাদৃষ্টে মনে হয় আমরা বাঙালি সংস্কৃতি ও অসাম্প্রদায়িক চেতনাকে বিসর্জন দিয়ে আবার ৪৭ এর ধারায় নেমে যাচ্ছি। এখানে নাটক, গান, জারি-সারি, ভাটিয়ারীসহ আবহমান বাংলার যে সংস্কৃতি তা অঘোষিতভাবে নিষিদ্ধ করা হয়েছে। দেশে কোথাও পহেলা বৈশাখ, গান-নাটক করতে হলে সময় বেঁধে দেওয়া হয় এই সংস্কৃতি থেকে রাষ্ট্রকে বের হয়ে আসতে হবে। সামাজিক মূল্যবোধ ফিরিয়ে আনতে অপসংস্কৃতি, আকাশ সংস্কৃতি, সাম্প্রদায়িক-উগ্রবাদীদের অপপ্রচার কঠোর হস্তে দমন করতে হবে।’
সারাদেশে শিক্ষক ও সংস্কৃতি কর্মীদের উপর নিপীড়ন, নির্যাতন ও হত্যার প্রতিবাদ সমাবেশের ঘোষণা:
সারাদশে শিক্ষক নিপীড়ন, নির্যাতন ও হত্যা, ধর্মীয় সংখ্যালঘু ও প্রগতিশীল মানুষদের উপর হামলার ঘটনা আমাদের উদ্বিগ্ন করে। নড়াইলে অধ্যক্ষ স্বপন কুমার বিশ্বাসকে ধর্ম অবমাননার মিথ্যা অভিযোগ এনে মৌলবাদী গোষ্ঠী প্রশাসনের উপস্থিতিতে গলায় জুতার মালা পরিয়ে সমগ্র শিক্ষক সমাজ, শিক্ষা ও সভ্যতাকে লাঞ্ছিত করেছে। আশুলিয়ায় প্রভাষক উৎপল কুমার সরকারকে বখাটে ছাত্র কলেজ চলাকালীন সময়ে পিটিয়ে হত্যা করে শিক্ষা ব্যবস্থার দীনতা ও নৈতিকতার অবক্ষয়ের ভয়ংকর চিত্র তুলে ধরে।
রংপুরের ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক স্কুল ও কলেজের দশম শ্রেণীর ইসলাম ও নৈতিক শিক্ষা বিষয়ে পরীক্ষার প্রশ্নপত্রে ইভটিজিং এর পেছনে নারীর পোশাকের উপর দায় চাপানো বিষয়ে একজন শিক্ষাবিদ হিসেবে হতাশা পোষণ করে ফেসবুকে পোস্ট দিয়েছিলেন বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক উন্মেষ রায়। এই কারণে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই শিক্ষক উন্মেষ রায় এবং সঞ্জয় সরকারকে লাঞ্ছনার শিকার হতে হয়েছে।
নওগাঁর মহাদেবপুরে একটি উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী প্রধান শিক্ষিকা আমোদিনি পালকে ছাত্রীদের হিজাব পরে আসায় মারধরের মিথ্যা অভিযোগে লাঞ্ছনার শিকার হতে হয়েছিল। নারায়নগঞ্জের শিক্ষক শ্যামল কান্তি ভক্তকে কান ধরে উঠ বস করতে বাধ্য করেছিল দুর্বৃত্তরা। বিজ্ঞান পড়াতে গিয়ে মৌলবাদীদের ষড়যন্ত্রে জেলে যেতে হয়েছিল বিজ্ঞান শিক্ষক হৃদয় মন্ডলকে। এক্ষেত্রে একটি বিষয়ে মিল দেখা যায় যে, সকল সহিংসতার শিকার ব্যক্তিরা সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের।
গত ১ জুলাই তারিখ দুপুরে জুমার নামাজের সময় সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব অধ্যাপক ড. রতন সিদ্দিকীর বাসায় একদল ধর্মান্ধ হামলা চালিয়েছে এবং তাকে লাঞ্ছিত করেছে।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে কথিত ধর্ম অবমাননার অভিযোগ তুলে সংখ্যালঘুদের হত্যা, নিপীড়ন, নির্যাতন, ধর্মীয় উপাসনালয়ে অগ্নিসংযোগ, বাড়ীঘরে হামলা-লুন্ঠন বাংলাদেশে একটি প্রবণতা হয়ে দাড়িয়েছে। কক্সবাজারের রামু, ব্রাহ্মনবাড়িয়ার নাসিরনগর, সুনামগঞ্জের শাল্লা, ভোলা ও রংপুর সর্বত্র একই প্রবণতা, সহিংসতা ও ঘটনা দৃশ্যমান। এর আগেও সংখ্যালঘুদের উপর সংঘটিত সহিংসতায় অনেক মামলা হয়েছে কিন্তু কোন মামলা নিস্পত্তি হয়েছে এমন কোন তথ্য পাওয়া যায় না।
সম্মিলিত সামাজিক আন্দোলন মনে করে সংখ্যালঘু জনগণের উপর সহিংসতার ঘটনাগুলোর সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচার না হওয়ায় এধরনের ঘটনা বার বার ঘটছে, যা তাদেরকে ভীতি, নিরাপত্তাহীনতা ও অনিশ্চিয়তার দিকে ঠেলে দিচ্ছে। মুক্তচিন্তা, বিশ্বাস কিংবা ধর্মপালনের স্বাধীনতা একটি নাগরিক অধিকার। সকল নাগরিকের বিশ্বাস, ধর্ম পালনের স্বাধীনতা নিশ্চিত করার দায়িত্ব রাষ্ট্রের। সংখ্যালঘুদের উপর সহিংসতা সংবিধান ও মানবাধিকার পরিপন্থি।
স্বাধীনতার পর থেকেই রাষ্ট্র মুক্তচিন্তার মানুষ ও সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ হয়েছে। বাংলাদেশে প্রাথমিক শিক্ষা থেকে উচ্চশিক্ষা সর্বস্তরেই শিক্ষার মান নিম্নগামী। ধর্মীয় শিক্ষার অতিবিস্তার এবং মূল ধারার শিক্ষায় বিজ্ঞান ও আধুনিকতার সংকোচন দেশে বিজ্ঞান ও আধুনিকতা বিরোধী প্রতিক্রিয়াশীল প্রজন্ম তৈরী করছে, যা দেশকে ক্রমশ পিছনের দিকে নিয়ে যাচ্ছে। এই প্রতিক্রিয়াশীল প্রজন্মই ভিন্নমত, মুক্তচিন্তা ও সংখ্যালঘুদের আক্রমণের লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত করেছে।
আমরা সারাদেশে শিক্ষক হত্যা, নিপীড়ন ও সংখ্যালঘু ও মুক্তচিন্তার মানুষের উপর হামলা ও নিপীড়নের নিরপেক্ষ তদন্ত, অপরাধীদের গ্রেফ্তার ও শাস্তির দাবী জানাচ্ছি।