ঘাতক নূর চৌধুরী ও বজলুল হুদাকে শেখ কামাল উদ্ধারকারী হিসেবে ভেবেছিল বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
শুক্রবার সকালে বীর মুক্তিযোদ্ধা শহীদ ক্যাপ্টেন শেখ কামালের ৭৩তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে একথা বলেন তিনি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘মুক্তিযুদ্ধের সর্বাধিনায়ক হিসেবে দায়িত্ব নেন জেনারেল ওসমানী। তার এডিসি হিসেবে শেখ কামালকে নিয়োগ দেয়া হয়। কামাল এবং খুনি নূর চৌধুরী একই সঙ্গে ওসমানীর এডিসি ছিল। নিয়তির কী নিষ্ঠুর পরিহাস! ১৫ আগস্ট এ নূরই প্রথম আমাদের বাড়িতে আসে। কারণ কর্নেল ফারুকের নেতৃত্বে যে গ্রুপটা আমাদের বাড়িতে আক্রমণ করে সেখানে কর্নেল নূর, হুদা প্রবেশ করেছিল।’
‘কামাল কিছুটা ধোঁকায় পড়ে গিয়েছিল তাকে দেখে। ভেবেছিল তারা উদ্ধার করতে এসেছে। তারা যে ঘাতক হয়ে এসেছিল সেটা জানতো না। প্রথম তারা কামালকে গুলি করে। এরপর একে একে পরিবারের সব সদস্যকে নির্মমভাবে গুলি করে হত্যা করে।’
তিনি বলেন, ‘১৫ আগস্ট বাঙালি জাতির জীবনে সবচেয়ে কালো অধ্যায়। যার নেতৃত্বে আমরা স্বাধীনতা পেয়েছি, রাষ্ট্র পেয়েছি, জাতি হিসেবে আত্ম-পরিচয় পেয়েছি, যুদ্ধ বিধ্বস্ত দেশকে যিনি অর্থনৈতিকভাবে উন্নয়নের দিকে নিয়ে যাচ্ছিলেন, তাকে হত্যা করা হয়।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘খেলাধুলা আমদের একটা পারিবারিক ঐতিহ্য। আমার দাদা ও ছোট দাদা ফুটবল খেলোয়াড় ছিলেন, আমার আব্বাও (বঙ্গবন্ধু) ফুটবল খেলোয়াড় ছিলেন। খেলাধুলায় আমাদের যুব সমাজ যেন আরও সম্পৃক্ত হয়, তার জন্য তিনি (বঙ্গবন্ধু) উদ্যোগ নিয়েছিলেন।’
তিনি বলেন, ‘আজকে কামালের জন্মদিন। কামাল বহুমুখী প্রতিভার অধিকারী ছিল। একাধারে সে হকি খেলতো, ফুটবল খেলতো, ক্রিকেট খেলতো। ভালো গান গাইতে পারত। নাটকে অংশ নিত, উপস্থিত বক্তৃতায় পুরস্কার পেত। তার রাজনৈতিক সচেতনতা ও দূরদর্শিতা ছিল। ছাত্রলীগের একজন সক্রিয় কর্মী ছিলেন। আমরা সবাই সংগঠন করতাম। কিন্তু পদ নিয়ে আমাদের কোনো চিন্তা ছিল না।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘কামাল সব সময় অত্যন্ত সাধাসিধাভাবে চলাফেরা করতেন। তার পোশাক পরিচ্ছদ, জীবনযাত্রা খুবই সীমিত ছিল। এমনকি দেশ স্বাধীন হওয়ার পর রাষ্ট্রপতি বা প্রধানমন্ত্রীর ছেলে হিসেবে তার কোনো অহমিকা ছিল না। শুধু একজন ক্রীড়াবিদ না, রাজনৈতিক নেতা হিসেবেও তার অনেক দূরদর্শিতা ছিল।’
তিনি বলেন, ‘কামাল একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা। দেশের ক্রীড়া ও সংস্কৃতি জগতে যে অবদান, সেটা সবার মনে থাকবে। সঙ্গে সঙ্গে আমি চাই-আমাদের দেশের যুব সমাজও খেলাধুলা, সংস্কৃতি চর্চা ও সমাজসেবায় যেন আন্তরিক হয়। তারা যেন নিজেদেরকে আরও সম্পৃক্ত করে সেটাই আমার আকাঙ্ক্ষা। সেজন্য আমরা যখন সরকারে এসেছি, তখন চেষ্টা করেছি ক্রীড়া ও সংস্কৃতি জগতকে আরও উন্নত করতে।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘যারা ক্রীড়া ও সাংস্কৃতিক চর্চার জগতে সম্পৃক্ত থাকেন তাদের কারও কারও জীবন একটা সময় খুব দুর্বিষহ হয়ে যায়। শেখ কামালই প্রথম ক্রীড়া জগতে সম্পৃক্তদের সহযোগিতার জন্য ফান্ড গঠন করেছিল। আমি সরকারে আসার পর তাদের জন্য বিভিন্ন ট্রাস্ট ফান্ড গঠন করে দিয়েছি, সিড মানি দিয়েছি এবং আরও ফান্ড জোগাড় করে দেবো যেনও তাদেরকে আর কষ্ট করতে না হয়।’
তিনি বলেন, ‘একটা বয়স আসলে তাদের আর অর্থ উপার্জনের সুযোগ থাকে না, সেটা যেন না হয় আমরা ব্যবস্থা নেব। খেলোয়াড়দের জন্য যেমন কল্যাণ তহবিল গঠন করা হয়েছে, সাংস্কৃতিক জগতের জন্যও আমরা করে দিয়েছি। শিল্প-সংস্কৃতির জগতের সঙ্গে যারা সম্পৃক্ত তাদের জন্য ট্রাস্ট ফান্ড করে আমরা সহযোগিতা দিয়ে যাচ্ছি। কাজেই যেকোনও আপদকালীন সময়ে তারা যেন চিকিৎসা বা অন্যকোনো সহযোগিতা পায় এই চেষ্টা আমরা করে যাচ্ছি।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘মুক্তিযোদ্ধা শেখ কামাল যে নীতি, আদর্শ, কর্মপন্থা, দিক-নির্দেশনা রেখে গেছেন, আমি মনে করি তা অনুসরণ করে আমাদের শিশু ও যুব সমাজ নিজেদেরকে গড়ে তুলবে। শুধু নিজের দেশের জন্য না, মেধা-মনন বিকশিত করে আন্তর্জাতিক পর্যায়েও যেনও আমরা বাংলাদেশের মর্যাদা বৃদ্ধি করতে পারি সেভাবে আমাদের ছেলেমেয়েরা কাজ করবে- সেটাই আমি চাই।’
অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রীর পক্ষে যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী মো. জাহিদ আহসান রাসেল বিজয়ীদের হাতে পুরস্কার তুলে দেন।
প্রবীণ ক্রীড়া সংগঠক হারুনুর রশীদ আজীবন সম্মাননা পেয়েছেন এবং ক্রীড়া ব্যক্তিত্ব বিভাগে লিটন কুমার দাস (ক্রিকেট), আবদুল্লাহ হেল বাকী (শ্যুটিং) এবং মোল্লা সাবিরা সুলতানা (ভারোত্তোলন) পুরস্কার পেয়েছেন।
উদীয়মান ক্রীড়াবিদ হয়েছেন দুজন- দিয়া সিদ্দিক (তিরন্দাজি) ও মোহাম্মদ শরিফুল ইসলাম (ক্রিকেট)। ক্রীড়া সংগঠক ক্যাটাগরিতে পুরস্কার পেয়েছেন দুজন- সাইদুর রহমান প্যাটেল ও নাজমা শামীম।
ক্রীড়া সংস্থা/ফেডারেশন ক্যাটাগরিতে বাংলাদেশ অলিম্পিক সমিতি এবং ক্রীড়া পৃষ্ঠপোষক হিসেবে গ্রীন ডেল্টা ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি লিমিটেড পুরস্কার লাভ করে।
ক্রীড়া সাংবাদিক হিসেবে ‘সংবাদ’ এর কাশীনাথ বসাক পুরস্কার লাভ করেন।
পুরস্কার বিজয়ী প্রত্যেকেই পেয়েছেন এক লাখ টাকা, ক্রেস্ট ও সনদ। যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী জাহিদ আহসান রাসেল প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অনুমতিক্রমে বিজয়ীদের হাতে সনদ ও ক্রেস্ট তুলে দেন।
শুক্রবার, ০৫ আগস্ট ২০২২
ঘাতক নূর চৌধুরী ও বজলুল হুদাকে শেখ কামাল উদ্ধারকারী হিসেবে ভেবেছিল বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
শুক্রবার সকালে বীর মুক্তিযোদ্ধা শহীদ ক্যাপ্টেন শেখ কামালের ৭৩তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে একথা বলেন তিনি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘মুক্তিযুদ্ধের সর্বাধিনায়ক হিসেবে দায়িত্ব নেন জেনারেল ওসমানী। তার এডিসি হিসেবে শেখ কামালকে নিয়োগ দেয়া হয়। কামাল এবং খুনি নূর চৌধুরী একই সঙ্গে ওসমানীর এডিসি ছিল। নিয়তির কী নিষ্ঠুর পরিহাস! ১৫ আগস্ট এ নূরই প্রথম আমাদের বাড়িতে আসে। কারণ কর্নেল ফারুকের নেতৃত্বে যে গ্রুপটা আমাদের বাড়িতে আক্রমণ করে সেখানে কর্নেল নূর, হুদা প্রবেশ করেছিল।’
‘কামাল কিছুটা ধোঁকায় পড়ে গিয়েছিল তাকে দেখে। ভেবেছিল তারা উদ্ধার করতে এসেছে। তারা যে ঘাতক হয়ে এসেছিল সেটা জানতো না। প্রথম তারা কামালকে গুলি করে। এরপর একে একে পরিবারের সব সদস্যকে নির্মমভাবে গুলি করে হত্যা করে।’
তিনি বলেন, ‘১৫ আগস্ট বাঙালি জাতির জীবনে সবচেয়ে কালো অধ্যায়। যার নেতৃত্বে আমরা স্বাধীনতা পেয়েছি, রাষ্ট্র পেয়েছি, জাতি হিসেবে আত্ম-পরিচয় পেয়েছি, যুদ্ধ বিধ্বস্ত দেশকে যিনি অর্থনৈতিকভাবে উন্নয়নের দিকে নিয়ে যাচ্ছিলেন, তাকে হত্যা করা হয়।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘খেলাধুলা আমদের একটা পারিবারিক ঐতিহ্য। আমার দাদা ও ছোট দাদা ফুটবল খেলোয়াড় ছিলেন, আমার আব্বাও (বঙ্গবন্ধু) ফুটবল খেলোয়াড় ছিলেন। খেলাধুলায় আমাদের যুব সমাজ যেন আরও সম্পৃক্ত হয়, তার জন্য তিনি (বঙ্গবন্ধু) উদ্যোগ নিয়েছিলেন।’
তিনি বলেন, ‘আজকে কামালের জন্মদিন। কামাল বহুমুখী প্রতিভার অধিকারী ছিল। একাধারে সে হকি খেলতো, ফুটবল খেলতো, ক্রিকেট খেলতো। ভালো গান গাইতে পারত। নাটকে অংশ নিত, উপস্থিত বক্তৃতায় পুরস্কার পেত। তার রাজনৈতিক সচেতনতা ও দূরদর্শিতা ছিল। ছাত্রলীগের একজন সক্রিয় কর্মী ছিলেন। আমরা সবাই সংগঠন করতাম। কিন্তু পদ নিয়ে আমাদের কোনো চিন্তা ছিল না।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘কামাল সব সময় অত্যন্ত সাধাসিধাভাবে চলাফেরা করতেন। তার পোশাক পরিচ্ছদ, জীবনযাত্রা খুবই সীমিত ছিল। এমনকি দেশ স্বাধীন হওয়ার পর রাষ্ট্রপতি বা প্রধানমন্ত্রীর ছেলে হিসেবে তার কোনো অহমিকা ছিল না। শুধু একজন ক্রীড়াবিদ না, রাজনৈতিক নেতা হিসেবেও তার অনেক দূরদর্শিতা ছিল।’
তিনি বলেন, ‘কামাল একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা। দেশের ক্রীড়া ও সংস্কৃতি জগতে যে অবদান, সেটা সবার মনে থাকবে। সঙ্গে সঙ্গে আমি চাই-আমাদের দেশের যুব সমাজও খেলাধুলা, সংস্কৃতি চর্চা ও সমাজসেবায় যেন আন্তরিক হয়। তারা যেন নিজেদেরকে আরও সম্পৃক্ত করে সেটাই আমার আকাঙ্ক্ষা। সেজন্য আমরা যখন সরকারে এসেছি, তখন চেষ্টা করেছি ক্রীড়া ও সংস্কৃতি জগতকে আরও উন্নত করতে।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘যারা ক্রীড়া ও সাংস্কৃতিক চর্চার জগতে সম্পৃক্ত থাকেন তাদের কারও কারও জীবন একটা সময় খুব দুর্বিষহ হয়ে যায়। শেখ কামালই প্রথম ক্রীড়া জগতে সম্পৃক্তদের সহযোগিতার জন্য ফান্ড গঠন করেছিল। আমি সরকারে আসার পর তাদের জন্য বিভিন্ন ট্রাস্ট ফান্ড গঠন করে দিয়েছি, সিড মানি দিয়েছি এবং আরও ফান্ড জোগাড় করে দেবো যেনও তাদেরকে আর কষ্ট করতে না হয়।’
তিনি বলেন, ‘একটা বয়স আসলে তাদের আর অর্থ উপার্জনের সুযোগ থাকে না, সেটা যেন না হয় আমরা ব্যবস্থা নেব। খেলোয়াড়দের জন্য যেমন কল্যাণ তহবিল গঠন করা হয়েছে, সাংস্কৃতিক জগতের জন্যও আমরা করে দিয়েছি। শিল্প-সংস্কৃতির জগতের সঙ্গে যারা সম্পৃক্ত তাদের জন্য ট্রাস্ট ফান্ড করে আমরা সহযোগিতা দিয়ে যাচ্ছি। কাজেই যেকোনও আপদকালীন সময়ে তারা যেন চিকিৎসা বা অন্যকোনো সহযোগিতা পায় এই চেষ্টা আমরা করে যাচ্ছি।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘মুক্তিযোদ্ধা শেখ কামাল যে নীতি, আদর্শ, কর্মপন্থা, দিক-নির্দেশনা রেখে গেছেন, আমি মনে করি তা অনুসরণ করে আমাদের শিশু ও যুব সমাজ নিজেদেরকে গড়ে তুলবে। শুধু নিজের দেশের জন্য না, মেধা-মনন বিকশিত করে আন্তর্জাতিক পর্যায়েও যেনও আমরা বাংলাদেশের মর্যাদা বৃদ্ধি করতে পারি সেভাবে আমাদের ছেলেমেয়েরা কাজ করবে- সেটাই আমি চাই।’
অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রীর পক্ষে যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী মো. জাহিদ আহসান রাসেল বিজয়ীদের হাতে পুরস্কার তুলে দেন।
প্রবীণ ক্রীড়া সংগঠক হারুনুর রশীদ আজীবন সম্মাননা পেয়েছেন এবং ক্রীড়া ব্যক্তিত্ব বিভাগে লিটন কুমার দাস (ক্রিকেট), আবদুল্লাহ হেল বাকী (শ্যুটিং) এবং মোল্লা সাবিরা সুলতানা (ভারোত্তোলন) পুরস্কার পেয়েছেন।
উদীয়মান ক্রীড়াবিদ হয়েছেন দুজন- দিয়া সিদ্দিক (তিরন্দাজি) ও মোহাম্মদ শরিফুল ইসলাম (ক্রিকেট)। ক্রীড়া সংগঠক ক্যাটাগরিতে পুরস্কার পেয়েছেন দুজন- সাইদুর রহমান প্যাটেল ও নাজমা শামীম।
ক্রীড়া সংস্থা/ফেডারেশন ক্যাটাগরিতে বাংলাদেশ অলিম্পিক সমিতি এবং ক্রীড়া পৃষ্ঠপোষক হিসেবে গ্রীন ডেল্টা ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি লিমিটেড পুরস্কার লাভ করে।
ক্রীড়া সাংবাদিক হিসেবে ‘সংবাদ’ এর কাশীনাথ বসাক পুরস্কার লাভ করেন।
পুরস্কার বিজয়ী প্রত্যেকেই পেয়েছেন এক লাখ টাকা, ক্রেস্ট ও সনদ। যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী জাহিদ আহসান রাসেল প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অনুমতিক্রমে বিজয়ীদের হাতে সনদ ও ক্রেস্ট তুলে দেন।