সরকার ও দুদক কী পদক্ষেপ নিয়েছে, তাও জানাতে নির্দেশ
অবৈধভাবে সুইস ব্যাংকে বাংলাদেশিদের যেসব অর্থ জমা রয়েছে সে বিষয়ে সরকার এবং দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) কী পদক্ষেপ নিয়েছেন তা জানতে চেয়েছে উচ্চ আদালত। সেই সঙ্গে বাংলাদেশ সরকার সুইজারল্যান্ডের কাছে আদৌ অর্থপাচারকারীদের তথ্য জানতে চেয়েছে কি না সেই তথ্য জানানোর নির্দেশ দেয়া হয়েছে। আগামী রোববারের মধ্যে এসব তথ্য জানাতে বলেছে আদালত। গতকাল বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম তালুকদার এবং বিচারপতি খিজির হায়াতের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ দুদক এবং রাষ্ট্রপক্ষের কাছে এসব তথ্য জানতে চায়। আদালতকে তাৎক্ষণিকভাবে এ বিষয়ে কোন তথ্য দিতে পারেননি দুদকের আইনজীবী অ্যাডভোকেট খুরশিদ আলম খান ও রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল এ কে এম আমিন উদ্দিন মানিক।
ঢাকায় নিযুক্ত সুইস রাষ্ট্রদূত নাথালি চুয়ার্ড গত বুধবার ডিপ্লোমেটিক করেসপনডেন্টস অ্যাসোসিয়েশন বাংলাদেশের (ডিক্যাব) আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে জানিয়েছেন, ‘সুইজারল্যান্ডের বিভিন্ন ব্যাংকে বাংলাদেশিদের টাকার বিষয়ে বাংলাদেশ নির্দিষ্ট কোন তথ্য জানতে চায়নি।’
সুইস রাষ্ট্রদূতের ওই বক্তব্যে তোলপাড় শুরু হয়। সুইস রাষ্ট্রদূতের ওই বক্তব্য নিয়ে প্রকাশিত সংবাদের রেফারেন্স টেনে গতকাল উচ্চ আদালত স্বপ্রণোদিত হয়ে সুইস ব্যাংকে বাংলাদেশিদের অর্থ জমা রাখা ও পাচারের তথ্য জানতে চায়।
জানা গেছে, সুইজারল্যান্ডের কেন্দ্রীয় ব্যাংক সুইস ন্যাশনাল ব্যাংকের (এসএনবি) বার্ষিক প্রতিবেদন অনুযায়ী সে দেশের ব্যাংকগুলোতে বিগত দুই দশকের মধ্যে গত বছর সর্বোচ্চ অর্থ জমা রেখেছে বাংলাদেশিরা। বাংলাদেশি ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের নামে সুইজারল্যান্ডের বিভিন্ন ব্যাংকে এসব অর্থ জমা রাখা হয়।
এসএনবির তথ্যানুযায়ী, ২০২১ সাল শেষে সুইস ব্যাংকে বাংলাদেশিদের অর্থের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৮৭ কোটি ১১ লাখ সুইস ফ্রাঁ। প্রতি সুইস ফ্রাঁর বিনিময় মূল্য ৯৫ টাকা ধরে হিসাব করলে বাংলাদেশি মুদ্রায় যার পরিমাণ দাঁড়ায় প্রায় ৮ হাজার ২৭৬ কোটি টাকা।
অন্যদিকে গত ২০২০ সালে সুইস ব্যাংকে বাংলাদেশিদের অর্থের পরিমাণ ছিল ৫৬ কোটি ২৯ লাখ সুইস ফ্রাঁ বা বাংলাদেশি মুদ্রায় ৫ হাজার ৩৪৮ কোটি টাকা। সেই হিসাবে এক বছরের ব্যবধানে সুইস ব্যাংকে বাংলাদেশিদের জমা রাখা অর্থের পরিমাণ ২ হাজার ৯২৮ কোটি টাকা বা ৫৫ শতাংশ বেড়েছে।
সারা বিশ্বের ধনীদের অর্থ, গোপনে গচ্ছিত রাখার জন্য বহুদিনের খ্যাতি সুইজারল্যান্ডের। কঠোরভাবে গ্রাহকদের নাম-পরিচয় গোপন রাখে সুইস ব্যাংকগুলো। যে কারণে প্রচলিত বিশ্বাস, অবৈধ আয় আর কর ফাঁকি দিয়ে জমানো টাকা জমা রাখা হয় সুইস ব্যাংকে। যদি কেউ নাগরিকত্ব গোপন রেখে অর্থ জমা রেখে থাকেন তবে ওই টাকা বাংলাদেশি হিসাবে অন্তর্ভুক্ত করা হয় না।
বাংলাদেশ থেকে কি পরিমাণ পাচারের অর্থ সুইস ব্যাংকে জমা হচ্ছে বা কারা কারা জমা রাখছে সেই হিসাব বাংলাদেশ সরকারের কাছে নেই। এ নিয়ে দীর্ঘদিন ধরেই বেশ আলোচনা হচ্ছে। বিভিন্ন মহল থেকে পাচারের অর্থ উদ্ধারের দাবিও জানিয়েছে। তবে এ বিষয়ে উদ্যোগ নেয়ার কথা জানায় সরকার।
সম্প্রতি (১৮ জুন) এক সেমিনারে বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের (বিএফআইইউ) অতিরিক্ত পরিচালক মো. কামাল হোসেন বলেছিলেন, ‘বাংলাদেশ থেকে পাচার হওয়া অর্থের বিষয়ে জানতে সুইস কর্তৃপক্ষের কাছে তথ্য চেয়ে আবেদন করেছে বিএফআইইউ।’ তিনি বলেন, ‘পাচার হওয়া অর্থ উদ্ধার করা একটি জটিল কাজ। বিভিন্ন সময়ে সুইস ন্যাশনাল ব্যাংকের কাছ থেকে বাংলাদেশের ৬৭ ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের অর্থ পাচার সম্পর্কে তথ্য পেয়েছে বিএফআইইউ। সেই তথ্য বাংলাদেশের বিভিন্ন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, দুদক ও তদন্তকারী সংস্থাগুলোকে দেয়া হয়েছে।’
সরকার ও দুদক কী পদক্ষেপ নিয়েছে, তাও জানাতে নির্দেশ
বৃহস্পতিবার, ১১ আগস্ট ২০২২
অবৈধভাবে সুইস ব্যাংকে বাংলাদেশিদের যেসব অর্থ জমা রয়েছে সে বিষয়ে সরকার এবং দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) কী পদক্ষেপ নিয়েছেন তা জানতে চেয়েছে উচ্চ আদালত। সেই সঙ্গে বাংলাদেশ সরকার সুইজারল্যান্ডের কাছে আদৌ অর্থপাচারকারীদের তথ্য জানতে চেয়েছে কি না সেই তথ্য জানানোর নির্দেশ দেয়া হয়েছে। আগামী রোববারের মধ্যে এসব তথ্য জানাতে বলেছে আদালত। গতকাল বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম তালুকদার এবং বিচারপতি খিজির হায়াতের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ দুদক এবং রাষ্ট্রপক্ষের কাছে এসব তথ্য জানতে চায়। আদালতকে তাৎক্ষণিকভাবে এ বিষয়ে কোন তথ্য দিতে পারেননি দুদকের আইনজীবী অ্যাডভোকেট খুরশিদ আলম খান ও রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল এ কে এম আমিন উদ্দিন মানিক।
ঢাকায় নিযুক্ত সুইস রাষ্ট্রদূত নাথালি চুয়ার্ড গত বুধবার ডিপ্লোমেটিক করেসপনডেন্টস অ্যাসোসিয়েশন বাংলাদেশের (ডিক্যাব) আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে জানিয়েছেন, ‘সুইজারল্যান্ডের বিভিন্ন ব্যাংকে বাংলাদেশিদের টাকার বিষয়ে বাংলাদেশ নির্দিষ্ট কোন তথ্য জানতে চায়নি।’
সুইস রাষ্ট্রদূতের ওই বক্তব্যে তোলপাড় শুরু হয়। সুইস রাষ্ট্রদূতের ওই বক্তব্য নিয়ে প্রকাশিত সংবাদের রেফারেন্স টেনে গতকাল উচ্চ আদালত স্বপ্রণোদিত হয়ে সুইস ব্যাংকে বাংলাদেশিদের অর্থ জমা রাখা ও পাচারের তথ্য জানতে চায়।
জানা গেছে, সুইজারল্যান্ডের কেন্দ্রীয় ব্যাংক সুইস ন্যাশনাল ব্যাংকের (এসএনবি) বার্ষিক প্রতিবেদন অনুযায়ী সে দেশের ব্যাংকগুলোতে বিগত দুই দশকের মধ্যে গত বছর সর্বোচ্চ অর্থ জমা রেখেছে বাংলাদেশিরা। বাংলাদেশি ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের নামে সুইজারল্যান্ডের বিভিন্ন ব্যাংকে এসব অর্থ জমা রাখা হয়।
এসএনবির তথ্যানুযায়ী, ২০২১ সাল শেষে সুইস ব্যাংকে বাংলাদেশিদের অর্থের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৮৭ কোটি ১১ লাখ সুইস ফ্রাঁ। প্রতি সুইস ফ্রাঁর বিনিময় মূল্য ৯৫ টাকা ধরে হিসাব করলে বাংলাদেশি মুদ্রায় যার পরিমাণ দাঁড়ায় প্রায় ৮ হাজার ২৭৬ কোটি টাকা।
অন্যদিকে গত ২০২০ সালে সুইস ব্যাংকে বাংলাদেশিদের অর্থের পরিমাণ ছিল ৫৬ কোটি ২৯ লাখ সুইস ফ্রাঁ বা বাংলাদেশি মুদ্রায় ৫ হাজার ৩৪৮ কোটি টাকা। সেই হিসাবে এক বছরের ব্যবধানে সুইস ব্যাংকে বাংলাদেশিদের জমা রাখা অর্থের পরিমাণ ২ হাজার ৯২৮ কোটি টাকা বা ৫৫ শতাংশ বেড়েছে।
সারা বিশ্বের ধনীদের অর্থ, গোপনে গচ্ছিত রাখার জন্য বহুদিনের খ্যাতি সুইজারল্যান্ডের। কঠোরভাবে গ্রাহকদের নাম-পরিচয় গোপন রাখে সুইস ব্যাংকগুলো। যে কারণে প্রচলিত বিশ্বাস, অবৈধ আয় আর কর ফাঁকি দিয়ে জমানো টাকা জমা রাখা হয় সুইস ব্যাংকে। যদি কেউ নাগরিকত্ব গোপন রেখে অর্থ জমা রেখে থাকেন তবে ওই টাকা বাংলাদেশি হিসাবে অন্তর্ভুক্ত করা হয় না।
বাংলাদেশ থেকে কি পরিমাণ পাচারের অর্থ সুইস ব্যাংকে জমা হচ্ছে বা কারা কারা জমা রাখছে সেই হিসাব বাংলাদেশ সরকারের কাছে নেই। এ নিয়ে দীর্ঘদিন ধরেই বেশ আলোচনা হচ্ছে। বিভিন্ন মহল থেকে পাচারের অর্থ উদ্ধারের দাবিও জানিয়েছে। তবে এ বিষয়ে উদ্যোগ নেয়ার কথা জানায় সরকার।
সম্প্রতি (১৮ জুন) এক সেমিনারে বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের (বিএফআইইউ) অতিরিক্ত পরিচালক মো. কামাল হোসেন বলেছিলেন, ‘বাংলাদেশ থেকে পাচার হওয়া অর্থের বিষয়ে জানতে সুইস কর্তৃপক্ষের কাছে তথ্য চেয়ে আবেদন করেছে বিএফআইইউ।’ তিনি বলেন, ‘পাচার হওয়া অর্থ উদ্ধার করা একটি জটিল কাজ। বিভিন্ন সময়ে সুইস ন্যাশনাল ব্যাংকের কাছ থেকে বাংলাদেশের ৬৭ ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের অর্থ পাচার সম্পর্কে তথ্য পেয়েছে বিএফআইইউ। সেই তথ্য বাংলাদেশের বিভিন্ন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, দুদক ও তদন্তকারী সংস্থাগুলোকে দেয়া হয়েছে।’