জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হত্যার নেপথ্যে ষড়যন্ত্রকারীদের খুজে বের করতে একটি কমিশন গঠনের প্রক্রিয়া চলছে। ইতিমধ্যে কমিশনের রূপরেখাও প্রনয়ন করা হয়েছে বলে আইনমন্ত্রী জানিয়েছেন। তবে কতদিনের মধ্যে এ কমিশন গঠিত হবে তা পরিস্কার করেননি তিনি।
বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচারে খুনীদের ফাঁসির রায় হয়েছে, কয়েক জনের ফাঁসি কার্যকরও হয়েছে। কিন্তু হত্যার বিচারের দীর্ঘদিন পরও সেই হত্যা ষড়যন্ত্রের পেছনে কারা ছিলেন, কিভাবে কারা হত্যার পরিকল্পনা করেছিলেন তা উদঘাটন করা হয়নি। বিচার কার্যক্রম শেষ হওয়ার পরপরই হত্যার পরিকল্পনা এবং ষড়যন্ত্রকারীদের চিহ্নিত করতে একটি কমিশন গঠনের দাবি ওঠে বিভিন্ন মহল থেকে। সরকারের বিভিন্ন পর্যায় থেকে কমিশন গঠনের কথা বিভিন্ন সময় বলা হলেও এখন পর্যন্ত কমিশন গঠন করা হয়নি।
করোনা মহামারির কারণে কিছুটা ধীরগতি হলেও এরই মধ্যে কমিশনের একটি ‘রূপরেখা’ তৈরি হয়েছে বলে জানিয়েছেন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক। এখন রূপরেখার বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর মতামত নিয়ার পর বাকী প্রক্রিয়া এগিয়ে নেয়া হবে বলেও জানিয়েছেন তিনি।
এদিকে কমিশন গঠনের উদ্যোগ নিয়ে বিভিন্ন মহলে নতুন করে আলোচনা শুরু হয়েছে। শিক্ষাবিদ ও ইতিহাসবিদরাও বলছেন, জাতির প্রয়োজনে বঙ্গবন্ধুর হত্যার কুশীলবদের খুজে বের করার জন্য কমিশন গঠন এখন সময়ের দাবি।
আইনজ্ঞদের মতে, বঙ্গবন্ধু হত্যায় আদালতের রায়ে বিস্তারিত উঠে না এলেও এর পেছনের রাজনৈতিক ষড়যন্ত্রের কথা উল্লেখ রয়েছে। এখন কমিশন গঠনের মধ্য দিয়ে সুষ্ঠুভাবে তদন্ত হলে হত্যার নেপথ্যের জরিতদের বের সম্ভব।
সাবেক আইনমন্ত্রী ও জ্যোষ্ঠ আইনজীবী ব্যারিস্টার শফিক আহমেদ সংবাদকে বলেন, ‘যত দ্রুত সম্ভব কমিশন গঠন করে তদন্ত করা উঠিত। তদন্তের মাধ্যমে যড়যন্ত্রকারীদের বের করা অসম্ভব কিছু নয়।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য ও বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ অধ্যাপক ড. আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক সংবাদকে বলেন, ‘ষড়যন্ত্রকারীরা পনেরোই আগস্টে শুধু বঙ্গবন্ধুকেই হত্যা করা হয়নি। তাকে হত্যা করে জাতিকে পিছিয়ে দেয়ার চেষ্টা হয়েছে। সেই ষড়যন্ত্রের মুখোশ উন্মোচন করা জরুরী’
অধ্যাপক ড. সৈয়দ আনোয়ার হোসেন সংবাদকে বলেন, বঙ্গবন্ধু হত্যাকান্ডে সরাসরি যারা অংশ নিয়েছে তার বাহিরে অনেকে জড়িত ছিল তা ঘটনার প্রেক্ষাপট থেকেই বুঝা যায়। এর সাথে বাইরের রাষ্ট্রের হাত ছিল শুনতে পাই। সবকিছু বের করতে একটি কমিশন গঠন এখন সময়ের দাবি।
কমিশন কেমন হতে পারে?
আইনমন্ত্রী আনিসুল হক জানিয়েছেন, ‘কমিশনের বিষয়ে যে ‘রূপরেখা’ তৈরি হয়েছে সেটি প্রধানমন্ত্রীর চূড়ান্ত অনুমোদনের পর নীতিনির্ধারকদের সাথে আলোচনা করা হবে।’ প্রধানমন্ত্রীর কাছে রূপরেখাটি পাঠানো হচ্ছে বলে এ বিষয়ে বিস্তারিত কিছু বলেননি তিনি। তবে প্রধানমন্ত্রীর অনুমোদন ও নীতিনির্ধারকদের সাথে দ্রুত সময়ে আলোচনা শেষে চলতি বছরের মধ্যেই নাগাদ কমিশন গঠন করার প্রত্যাশা করেছেন তিনি।
ইতিহাসবিদ অধ্যাপক আনোয়ার হোসেন মতে, যেহেতু বঙ্গবন্ধুর হত্যাকান্ড দেশী ও আর্ন্তজাতিক ‘ষড়যন্ত্র’ হয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে, তাই এই কমিশনটাও ‘আর্ন্তজাতিক’ বিশেষজ্ঞদের সমন্বয়ে হওয়া উঠিত। কমিশনে অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি থাকবেন, আইনজীবীসহ অন্যরা থাকবেন। পাশাপাশি অন্যদেশের আইনজীবীদেরও রাখা যায় ।
১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ছাড়াও হত্যা করা হয় তাদের পরিবারের সদস্য ও আত্মীয়স্বজনসহ আরো ১৬ জনকে।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ভাগ্নে শেখ ফজলুল হক মনিকেও ১৫ আগস্ট ঘাতকরা হত্যা করে। শেখ মনির ভাই শেখ ফজলুল করিম সেলিম মনে করেন, বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পেছনে গভীর ষড়যন্ত্র আছে।
তিনি সংবাদকে বলেন, ‘তদন্ত করলে দেখবেন, এটা বিরাট গ্যাং ছিল, যারা বঙ্গবন্ধু এবং আমাদের স্বাধীনতাকে হত্যা করেছিল।’
শেখ সেলিম বলেন, ‘সেই ষড়যন্ত্রকারী কারা তাদেরকে অন্ততপক্ষে চিহ্নিত করে দেশের মানুষের কাছে তাদের মুখোশ উন্মোচন করা দরকার। কমিশন গঠন করে তদন্ত করলে এদের সবার নাম বেরিয়ে আসবে।’
আওয়ামী লীগ নেতারা যা বলছে
আওয়ামী লীগ নেতারা বলছেন, বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলার সাক্ষ্য-প্রমাণ ও আলাপ আলোচনায় স্পষ্ট হয়েছে যে, যারা হত্যাকা- ঘটিয়েছিলেন শুধু তারাই এই হত্যাকা-ে জড়িত নয়। বঙ্গবন্ধুকে হত্যার মধ্যে দিয়ে বাংলাদেশকে হত্যা করার অপচেষ্টা চালিয়েছিল।
বঙ্গবন্ধুর অন্যতম সহচর, আওয়ামী লীগের উপদেষ্টামন্ডলীর সদস্য তোফায়েল আহমেদ সংবাদকে বলেন, বঙ্গবন্ধুকে হত্যার সাথে সাথেই পাকিস্তান রেডিওতে ঘোষণা করলো ইসলামিক রিপাবলিকান অব বাংলাদেশ। খুনিরা বাংলাদেশ বেতারকে ‘রেডিও বাংলাদেশ’ বানালো। জয়বাংলা স্লোগানকে ‘জিন্দাবাদ’ করলো। যার মনে বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করে স্বাধীনতার চেতনা ও মূল্যবোধকে হত্যা করেছিল। বাংলাদেশকে পাকিস্তান বানাতে চেয়েছিল। ’
তিনি বলেন, এমন পরিকল্পনা কারা করেছিল তা খুজে বের করতে কমিশন গঠন জরুরী। কমিশনের মাধ্যমে ষড়যন্ত্রকারীদের খুজের বের করা সম্ভব। এখন সময় ক্ষেপন না করে কমিশন করা দরকার।
সোমবার, ১৫ আগস্ট ২০২২
জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হত্যার নেপথ্যে ষড়যন্ত্রকারীদের খুজে বের করতে একটি কমিশন গঠনের প্রক্রিয়া চলছে। ইতিমধ্যে কমিশনের রূপরেখাও প্রনয়ন করা হয়েছে বলে আইনমন্ত্রী জানিয়েছেন। তবে কতদিনের মধ্যে এ কমিশন গঠিত হবে তা পরিস্কার করেননি তিনি।
বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচারে খুনীদের ফাঁসির রায় হয়েছে, কয়েক জনের ফাঁসি কার্যকরও হয়েছে। কিন্তু হত্যার বিচারের দীর্ঘদিন পরও সেই হত্যা ষড়যন্ত্রের পেছনে কারা ছিলেন, কিভাবে কারা হত্যার পরিকল্পনা করেছিলেন তা উদঘাটন করা হয়নি। বিচার কার্যক্রম শেষ হওয়ার পরপরই হত্যার পরিকল্পনা এবং ষড়যন্ত্রকারীদের চিহ্নিত করতে একটি কমিশন গঠনের দাবি ওঠে বিভিন্ন মহল থেকে। সরকারের বিভিন্ন পর্যায় থেকে কমিশন গঠনের কথা বিভিন্ন সময় বলা হলেও এখন পর্যন্ত কমিশন গঠন করা হয়নি।
করোনা মহামারির কারণে কিছুটা ধীরগতি হলেও এরই মধ্যে কমিশনের একটি ‘রূপরেখা’ তৈরি হয়েছে বলে জানিয়েছেন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক। এখন রূপরেখার বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর মতামত নিয়ার পর বাকী প্রক্রিয়া এগিয়ে নেয়া হবে বলেও জানিয়েছেন তিনি।
এদিকে কমিশন গঠনের উদ্যোগ নিয়ে বিভিন্ন মহলে নতুন করে আলোচনা শুরু হয়েছে। শিক্ষাবিদ ও ইতিহাসবিদরাও বলছেন, জাতির প্রয়োজনে বঙ্গবন্ধুর হত্যার কুশীলবদের খুজে বের করার জন্য কমিশন গঠন এখন সময়ের দাবি।
আইনজ্ঞদের মতে, বঙ্গবন্ধু হত্যায় আদালতের রায়ে বিস্তারিত উঠে না এলেও এর পেছনের রাজনৈতিক ষড়যন্ত্রের কথা উল্লেখ রয়েছে। এখন কমিশন গঠনের মধ্য দিয়ে সুষ্ঠুভাবে তদন্ত হলে হত্যার নেপথ্যের জরিতদের বের সম্ভব।
সাবেক আইনমন্ত্রী ও জ্যোষ্ঠ আইনজীবী ব্যারিস্টার শফিক আহমেদ সংবাদকে বলেন, ‘যত দ্রুত সম্ভব কমিশন গঠন করে তদন্ত করা উঠিত। তদন্তের মাধ্যমে যড়যন্ত্রকারীদের বের করা অসম্ভব কিছু নয়।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য ও বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ অধ্যাপক ড. আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক সংবাদকে বলেন, ‘ষড়যন্ত্রকারীরা পনেরোই আগস্টে শুধু বঙ্গবন্ধুকেই হত্যা করা হয়নি। তাকে হত্যা করে জাতিকে পিছিয়ে দেয়ার চেষ্টা হয়েছে। সেই ষড়যন্ত্রের মুখোশ উন্মোচন করা জরুরী’
অধ্যাপক ড. সৈয়দ আনোয়ার হোসেন সংবাদকে বলেন, বঙ্গবন্ধু হত্যাকান্ডে সরাসরি যারা অংশ নিয়েছে তার বাহিরে অনেকে জড়িত ছিল তা ঘটনার প্রেক্ষাপট থেকেই বুঝা যায়। এর সাথে বাইরের রাষ্ট্রের হাত ছিল শুনতে পাই। সবকিছু বের করতে একটি কমিশন গঠন এখন সময়ের দাবি।
কমিশন কেমন হতে পারে?
আইনমন্ত্রী আনিসুল হক জানিয়েছেন, ‘কমিশনের বিষয়ে যে ‘রূপরেখা’ তৈরি হয়েছে সেটি প্রধানমন্ত্রীর চূড়ান্ত অনুমোদনের পর নীতিনির্ধারকদের সাথে আলোচনা করা হবে।’ প্রধানমন্ত্রীর কাছে রূপরেখাটি পাঠানো হচ্ছে বলে এ বিষয়ে বিস্তারিত কিছু বলেননি তিনি। তবে প্রধানমন্ত্রীর অনুমোদন ও নীতিনির্ধারকদের সাথে দ্রুত সময়ে আলোচনা শেষে চলতি বছরের মধ্যেই নাগাদ কমিশন গঠন করার প্রত্যাশা করেছেন তিনি।
ইতিহাসবিদ অধ্যাপক আনোয়ার হোসেন মতে, যেহেতু বঙ্গবন্ধুর হত্যাকান্ড দেশী ও আর্ন্তজাতিক ‘ষড়যন্ত্র’ হয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে, তাই এই কমিশনটাও ‘আর্ন্তজাতিক’ বিশেষজ্ঞদের সমন্বয়ে হওয়া উঠিত। কমিশনে অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি থাকবেন, আইনজীবীসহ অন্যরা থাকবেন। পাশাপাশি অন্যদেশের আইনজীবীদেরও রাখা যায় ।
১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ছাড়াও হত্যা করা হয় তাদের পরিবারের সদস্য ও আত্মীয়স্বজনসহ আরো ১৬ জনকে।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ভাগ্নে শেখ ফজলুল হক মনিকেও ১৫ আগস্ট ঘাতকরা হত্যা করে। শেখ মনির ভাই শেখ ফজলুল করিম সেলিম মনে করেন, বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পেছনে গভীর ষড়যন্ত্র আছে।
তিনি সংবাদকে বলেন, ‘তদন্ত করলে দেখবেন, এটা বিরাট গ্যাং ছিল, যারা বঙ্গবন্ধু এবং আমাদের স্বাধীনতাকে হত্যা করেছিল।’
শেখ সেলিম বলেন, ‘সেই ষড়যন্ত্রকারী কারা তাদেরকে অন্ততপক্ষে চিহ্নিত করে দেশের মানুষের কাছে তাদের মুখোশ উন্মোচন করা দরকার। কমিশন গঠন করে তদন্ত করলে এদের সবার নাম বেরিয়ে আসবে।’
আওয়ামী লীগ নেতারা যা বলছে
আওয়ামী লীগ নেতারা বলছেন, বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলার সাক্ষ্য-প্রমাণ ও আলাপ আলোচনায় স্পষ্ট হয়েছে যে, যারা হত্যাকা- ঘটিয়েছিলেন শুধু তারাই এই হত্যাকা-ে জড়িত নয়। বঙ্গবন্ধুকে হত্যার মধ্যে দিয়ে বাংলাদেশকে হত্যা করার অপচেষ্টা চালিয়েছিল।
বঙ্গবন্ধুর অন্যতম সহচর, আওয়ামী লীগের উপদেষ্টামন্ডলীর সদস্য তোফায়েল আহমেদ সংবাদকে বলেন, বঙ্গবন্ধুকে হত্যার সাথে সাথেই পাকিস্তান রেডিওতে ঘোষণা করলো ইসলামিক রিপাবলিকান অব বাংলাদেশ। খুনিরা বাংলাদেশ বেতারকে ‘রেডিও বাংলাদেশ’ বানালো। জয়বাংলা স্লোগানকে ‘জিন্দাবাদ’ করলো। যার মনে বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করে স্বাধীনতার চেতনা ও মূল্যবোধকে হত্যা করেছিল। বাংলাদেশকে পাকিস্তান বানাতে চেয়েছিল। ’
তিনি বলেন, এমন পরিকল্পনা কারা করেছিল তা খুজে বের করতে কমিশন গঠন জরুরী। কমিশনের মাধ্যমে ষড়যন্ত্রকারীদের খুজের বের করা সম্ভব। এখন সময় ক্ষেপন না করে কমিশন করা দরকার।