alt

জাতীয়

আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে

রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে প্রধানমন্ত্রীর ৫ প্রস্তাব

সংবাদ অনলাইন রিপোর্ট : বৃহস্পতিবার, ২২ সেপ্টেম্বর ২০২২

https://sangbad.net.bd/images/2022/September/22Sep22/news/%E0%A7%A7%E0%A7%AE.PNG

ফাইল ছবি

জাতিগত ও ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের অব্যাহত দমন-পীড়ন বন্ধে মিয়ানমারের ওপর চাপ সৃষ্টির পাশাপাশি সংকটের টেকসই সমাধানে জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে শক্তিশালী ও বাস্তবভিত্তিক পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। একই সঙ্গে পাঁচটি পদক্ষেপ নেওয়ার অনুরোধ করেন তিনি।

জাতিসংঘে সাধারণ পরিষদে যোগ দিতে নিউ ইয়র্ক সফররত প্রধানমন্ত্রী স্থানীয় সময় বৃহস্পতিবার লোটে প্যালেস হোটেলে রোহিঙ্গা সঙ্কট নিয়ে একটি হাই-লেভেল সাইড ইভেন্টে এই পাঁচটি প্রস্তাব তুলে ধরেন।

প্রস্তাবে রয়েছে

  1. রোহিঙ্গাদের রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সহযোগিতা প্রদান;
  2. আন্তর্জাতিক আইনের প্রয়োগ এবং মিয়ানমারে মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিরুদ্ধে লড়াই জোরদার করতে আন্তর্জাতিক বিচার আদালতে (আইসিজে) গাম্বিয়াকে সমর্থন করাসহ আন্তর্জাতিক বিচার আদালত, আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত এবং জাতীয় আদালতের কার্যক্রম বাস্তবায়নে সহায়তা করা;
  3. জাতিগত ও ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের ওপর অব্যাহত দমন-পীড়ন বন্ধে মিয়ানমারের ওপর চাপ সৃষ্টি করা;
  4. আসিয়ানের পাঁচ-দফা ঐক্যমত মেনে চলার অঙ্গীকার পূরণে মিয়ানমারকে দৃঢ়ভাবে আহ্বান জানানো;
  5. মিয়ানমার যাতে বাধাহীন মানবিক প্রবেশাধিকারে রাজি হয় সেজন্য উদ্যোগ নেওয়া।

এতদিনেও রোহিঙ্গা প্রত্যাবর্তন না হওয়ায় আক্ষেপ প্রকাশ করে এ ইভেন্টে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, একজন রোহিঙ্গাকেও তাদের মাতৃভূমিতে ফিরতে না দেখেই গত মাসে আমরা দীর্ঘায়িত রোহিঙ্গা সংকটের ষষ্ঠ বছরে পা দিয়েছি। তাদের টেকসই প্রত্যাবর্তনের পরিবেশ সৃষ্টিতে জাতিসংঘ ও আন্তর্জাতিক অংশীদারদের বাস্তব পদক্ষেপ এবং প্রকল্প গ্রহণ করা প্রয়োজন।

শেখ হাসিনা বলেন, কিছু নির্বাচিত ব্যক্তির ওপর নিষেধাজ্ঞা মিয়ানমারের উপর প্রভাব ফেলতে পারে না। সংকট সমাধানে মিয়ানমার কর্তৃপক্ষের রাজনৈতিক সদিচ্ছা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। মিয়ানমারের সঙ্গে বাণিজ্য ও সামরিক সম্পর্ক বৃদ্ধি মিয়ানমারের স্বার্থকে বাড়িয়ে তুলছে। বাংলাদেশ মনে করে- রোহিঙ্গাদের টেকসই প্রত্যাবাসন এবং একটি টেকসই সমাধান খুঁজে পেতে আন্তর্জাতিক ন্যায়বিচার ও জবাবদিহিতার প্রশ্নটি গুরুত্বপূর্ণ।

জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো শক্তিশালী ভূমিকা নেবে আশা প্রকাশ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ ন্যায়বিচার থেকে দায়মুক্তির বিরুদ্ধে এবং ন্যায়বিচার নিশ্চিত করতে যেকোনো উদ্যোগকে সমর্থন করবে। যদিও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়, জাতিসংঘ এবং আশিয়ানের বর্তমান ফোকাস মিয়ানমারে স্বাভাবিকতা ফিরিয়ে আনা- মিয়ানমারের জনগণের জন্য শান্তি ও ন্যায়বিচার আনতে এবং নিজেদের জন্মভূমিতে রোহিঙ্গাদের টেকসই প্রত্যাবাসন নিশ্চিত করতে বাংলাদেশ এই সংস্থাগুলোর শক্তিশালী ভূমিকার জন্য অপেক্ষা করছে।

রোহিঙ্গা ইস্যুতে আসিয়ানের শক্ত ভূমিকা প্রত্যাশা করে শেখ হাসিনা বলেন, এ সংকট নিরসনে আঞ্চলিক সংস্থা হিসেবে আশিয়ান প্রধান ভূমিকা নিতে পারে। রোহিঙ্গাদের নাগরিকত্ব নিশ্চিতে রাখাইন রাজ্যের ওপর কফি আনান উপদেষ্টা কমিশনের সুপারিশগুলো সম্পূর্ণরূপে বাস্তবায়নের ব্যাপক প্রচেষ্টা গ্রহণ করা উচিত। বেসামরিক পর্যবেক্ষক হিসেবে তাদের অর্থবহ উপস্থিতি স্বেচ্ছায় নিজের মাতৃভূমিতে প্রত্যাবর্তনের জন্য রোহিঙ্গাদের আত্মবিশ্বাস বাড়াবে।

https://sangbad.net.bd/images/2022/September/22Sep22/news/%E0%A7%A7%E0%A7%AF.jpg

মিয়ানমারের রাজনৈতিক ইতিহাসে রোহিঙ্গাদের অবস্থানের কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আরাকানে, বর্তমানে যা মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্য হিসেবে পরিচিত, অষ্টম শতক থেকেই রোহিঙ্গারা বসবাস করে আসছে।

তিনি বলেন, ১৯৪৮ সালে মিয়ানমার যখন স্বাধীন হয়, নতুন সরকার কোন কোন জাতিসত্তা নাগরিকত্ব পেতে পারে তা সংজ্ঞায়িত করে নাগরিকত্ব আইন পাস করে। এতে রোহিঙ্গাদের ভিন্ন জাতির বহিরাগত হিসেবে টার্গেট করা হয়েছে। তারপরে ১৯৮২ সালে নতুন একটি নাগরিকত্ব আইন পাস করা হয়েছিল যেটি রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে থাকা ১৩৫ জাতিগোষ্ঠীর একটি হিসেবে স্বীকৃতি দেয়নি।

তিনি আরও বলেন, ১৯৫২ সালে যখন ইউ নু রাষ্ট্রপতি হন, তিনি তার মন্ত্রিসভায় দুন মুসলিম রোহিঙ্গাকে অন্তর্ভুক্ত করেন- বাণিজ্য ও উন্নয়ন মন্ত্রী হিসাবে ইউ রশিদ এবং স্বাস্থ্য মন্ত্রী হিসেবে সুলতান মাহমুদকে। তার পার্লামেন্টে আব্দুল বাশার, জোহোরা বেগম, আবুল খায়ের, আবদুস সোবহান, রশিদ আহমেদ, নাসিরুদ্দিন এবং দুজন সংসদীয় সচিব, সুলতান আহমেদ এবং আব্দুল গাফফার নামে ছয়জন মুসলিম রোহিঙ্গা ছিলেন। এটি প্রমাণ করে মুসলিম রোহিঙ্গারা এখনও মিয়ানমারের নাগরিক এবং একজন নাগরিক হিসেবে মুসলিম রোহিঙ্গারা মিয়ানমারের মন্ত্রিসভা এবং সংসদে থাকতে পারে।

রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবর্তনই এ সংকটের একমাত্র সমাধান সে কথা পুর্নব্যক্ত করে শেখ হাসিনা বলেন, বর্তমান সংকটের উৎপত্তি মিয়ানমারে এবং সেখানেই এর সমাধান রয়েছে। রোহিঙ্গাদের পদ্ধতিগতভাবে বাদ দেওয়া এবং নির্বিচার নিপীড়নের মাধ্যমে মিয়ানমার সরকার ১৯৬০ সাল থেকে রোহিঙ্গাদের অব্যহতভাবে বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ ঘটিয়েছে।

আজকে বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া জোরপূর্বক বিতাড়িত মিয়ানমারের রোহিঙ্গা নাগরিকের সংখ্যা ১ দশমিক ২ মিলিয়ন (১২ লাখ) এবং ক্যাম্পে প্রতিদিন শিশুর জন্ম হচ্ছে।

শান্তিপূর্ণভাবে রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে বাংলাদেশের প্রচেষ্টার কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, শুরু থেকেই বাংলাদেশ আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে একটি টেকসই ও শান্তিপূর্ণ সমাধান চেয়েছে। ২০১৭ সালে গণহারে রোহিঙ্গা বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়ার পর রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবর্তনে দুই দেশ তিনটি চুক্তি স্বাক্ষর করেছিল। প্রত্যাবাসন শুরু করার জন্য ২০১৮ এবং ২০১৯ সালে দুটি প্রচেষ্টাও চালানো হয়েছিল। কিন্তু রাখাইনে অনুকূল পরিবেশ সৃষ্টি না হওয়ায় বাছাই করা সেসব রোহিঙ্গারা ফিরতে রাজি ছিল না। তাদের নিরাপত্তা ও নিরাপত্তা, সহিংসতার পুনরাবৃত্তি না হওয়া, জীবিকার সুযোগ এবং নাগরিকত্বের পথসহ মৌলিক অধিকারের ইস্যুগুলো তাদের উদ্বেগের কারণ ছিল।

অব্যহতভাবে মিয়ানমার তার অঙ্গীকার অমান্য করায়, ত্রিপক্ষীয় একটি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে চীনের সহায়তায় প্রত্যাবর্তন আলোচনা শুরু করার জন্য বাংলাদেশ বিকল্পের আশ্রয় নেয়। তবে আজ পর্যন্ত তেমন কোনো অগ্রগতি হয়নি বলেও জানান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

ছবি

কয়লা সংকটে বিপদে পায়রার বিদ্যুৎ

ছবি

আর কোন অশান্তি, সংঘাত চাই না : প্রধানমন্ত্রী

ছবি

সব নির্বাচন গাজীপুরের মতই সুষ্ঠু হবে : সিইসি

ছবি

প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করলেন আজমত উল্লা

ছবি

আরও ৭৩ জন করোনায় আক্রান্ত, ২৯ সপ্তাহের সর্বোচ্চ

ছবি

লিবিয়ায় প্রবাসী বাংলাদেশিদের কল্যাণে কাজ করার আহ্বান রাষ্ট্রপতির

ছবি

শান্তিপূর্ণ পরিবেশই অর্থনৈতিক মুক্তির সহায়ক: প্রধানমন্ত্রী

ছবি

১০৬৬ রোহিঙ্গা ডেঙ্গু আক্রান্ত, ব্যবস্থাপনা কঠিন বলছে অধিদপ্তর

ছবি

সোমবার আন্তর্জাতিক জাতিসংঘ শান্তিরক্ষী দিবস

ছবি

শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিনের ৪৭তম মৃত্যুবার্ষিকী আজ

ছবি

নির্বাচন বাধাগ্রস্ত করা হলে কঠোর হাতে দমন: সিইসি

অনলাইন জুয়া-মাদক পাচার রোধে বাংলাদেশকে সহায়তা দেবে চীন

ছবি

যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা নীতি অর্থপাচার কমাবে, আশা পররাষ্ট্রমন্ত্রীর

ছবি

অক্টোবর থেকে ১১ টোল প্লাজায় বাধ্যতামূলক হচ্ছে ই-টোল

ছবি

২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে ৮০ জন হাসপাতালে ভর্তি

ছবি

অনলাইন জুয়া-মাদক পাচার রোধে বাংলাদেশকে সহায়তা দেবে চীন

ছবি

আরও ৬১ জন করোনায় আক্রান্ত

ছবি

দেশের সব বিমানবন্দর থেকে কোভিড বিধিনিষেধ উঠে গেল

ছবি

বর্তমান সরকারের মেয়াদেই ভূমি অপরাধ আইন প্রণয়নের চেষ্টা চলছে - ভূমিমন্ত্রী

ছবি

যুক্তরাষ্ট্র থেকে বেশি রেমিট্যান্স আসাকে সন্দেহের চোখে দেখছে সিপিডি

ছবি

ঢাকাসহ দেশের ১৩ অঞ্চলে বৃষ্টিসহ ঝড় হওয়ার সম্ভাবনা: আবহাওয়া অধিদপ্তর

ছবি

ঢাকা-বেইজিং বৈঠকে আলোচনায় যেসব বিষয়

বাংলাদেশে সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন চায় যুক্তরাষ্ট্র

ছবি

২৪ ঘন্টায় ২৮ জন করোনায় আক্রান্ত

বাংলাদেশে সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন চায় যুক্তরাষ্ট্র

ছবি

জাপানের ন্যাশনাল মিউজিয়াম ফর ইমার্জিং সাইন্স এন্ড ইনোভেশন পরিদর্শন করলেন স্পীকার

ছবি

শান্তি মিশনে আত্মত্যাগ: ৫ বাংলাদেশি পেলেন ‘দ্যাগ হ্যামারশোল্ড’ পদক

ছবি

‘সরকারি’ লেখার অনুমতি পেল ৩ ক্যাটাগরির স্কুল

ছবি

বাংলাদেশে অধিকতর বিনিয়োগের আহ্বান

ছবি

স্বেচ্ছায় ফিরতে আগ্রহী রোহিঙ্গাদের তালিকা করে প্রত্যাবাসন শুরু হবে

ছবি

এশিয়ার লৌহমানবী শেখ হাসিনা : দ্য ইকোনমিস্ট

প্রতিবছর মৃত্যু ২৫০ , সতর্কতার অভাবেই বজ্রপাতে মৃত্যু বাড়ছে

ছবি

সিসি ক্যামেরার জন্য অনিয়ম করতে ভয় পেয়েছে: ইসি আলমগীর

করোনায় আক্রান্তের সংখ্যা ৬ মাসে সর্বোচ্চ ৬৮ জন

ছবি

ভিসা নীতি বাংলাদেশের নির্বাচনপ্রক্রিয়া সমর্থনের অংশ : মার্কিন রাষ্ট্রদূত

ছবি

যুক্তরাষ্ট্রের ভিসানীতি নিয়ে কোনও চাপে নেই সরকার: পররাষ্ট্রমন্ত্রী

tab

জাতীয়

আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে

রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে প্রধানমন্ত্রীর ৫ প্রস্তাব

সংবাদ অনলাইন রিপোর্ট

বৃহস্পতিবার, ২২ সেপ্টেম্বর ২০২২

https://sangbad.net.bd/images/2022/September/22Sep22/news/%E0%A7%A7%E0%A7%AE.PNG

ফাইল ছবি

জাতিগত ও ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের অব্যাহত দমন-পীড়ন বন্ধে মিয়ানমারের ওপর চাপ সৃষ্টির পাশাপাশি সংকটের টেকসই সমাধানে জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে শক্তিশালী ও বাস্তবভিত্তিক পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। একই সঙ্গে পাঁচটি পদক্ষেপ নেওয়ার অনুরোধ করেন তিনি।

জাতিসংঘে সাধারণ পরিষদে যোগ দিতে নিউ ইয়র্ক সফররত প্রধানমন্ত্রী স্থানীয় সময় বৃহস্পতিবার লোটে প্যালেস হোটেলে রোহিঙ্গা সঙ্কট নিয়ে একটি হাই-লেভেল সাইড ইভেন্টে এই পাঁচটি প্রস্তাব তুলে ধরেন।

প্রস্তাবে রয়েছে

  1. রোহিঙ্গাদের রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সহযোগিতা প্রদান;
  2. আন্তর্জাতিক আইনের প্রয়োগ এবং মিয়ানমারে মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিরুদ্ধে লড়াই জোরদার করতে আন্তর্জাতিক বিচার আদালতে (আইসিজে) গাম্বিয়াকে সমর্থন করাসহ আন্তর্জাতিক বিচার আদালত, আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত এবং জাতীয় আদালতের কার্যক্রম বাস্তবায়নে সহায়তা করা;
  3. জাতিগত ও ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের ওপর অব্যাহত দমন-পীড়ন বন্ধে মিয়ানমারের ওপর চাপ সৃষ্টি করা;
  4. আসিয়ানের পাঁচ-দফা ঐক্যমত মেনে চলার অঙ্গীকার পূরণে মিয়ানমারকে দৃঢ়ভাবে আহ্বান জানানো;
  5. মিয়ানমার যাতে বাধাহীন মানবিক প্রবেশাধিকারে রাজি হয় সেজন্য উদ্যোগ নেওয়া।

এতদিনেও রোহিঙ্গা প্রত্যাবর্তন না হওয়ায় আক্ষেপ প্রকাশ করে এ ইভেন্টে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, একজন রোহিঙ্গাকেও তাদের মাতৃভূমিতে ফিরতে না দেখেই গত মাসে আমরা দীর্ঘায়িত রোহিঙ্গা সংকটের ষষ্ঠ বছরে পা দিয়েছি। তাদের টেকসই প্রত্যাবর্তনের পরিবেশ সৃষ্টিতে জাতিসংঘ ও আন্তর্জাতিক অংশীদারদের বাস্তব পদক্ষেপ এবং প্রকল্প গ্রহণ করা প্রয়োজন।

শেখ হাসিনা বলেন, কিছু নির্বাচিত ব্যক্তির ওপর নিষেধাজ্ঞা মিয়ানমারের উপর প্রভাব ফেলতে পারে না। সংকট সমাধানে মিয়ানমার কর্তৃপক্ষের রাজনৈতিক সদিচ্ছা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। মিয়ানমারের সঙ্গে বাণিজ্য ও সামরিক সম্পর্ক বৃদ্ধি মিয়ানমারের স্বার্থকে বাড়িয়ে তুলছে। বাংলাদেশ মনে করে- রোহিঙ্গাদের টেকসই প্রত্যাবাসন এবং একটি টেকসই সমাধান খুঁজে পেতে আন্তর্জাতিক ন্যায়বিচার ও জবাবদিহিতার প্রশ্নটি গুরুত্বপূর্ণ।

জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো শক্তিশালী ভূমিকা নেবে আশা প্রকাশ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ ন্যায়বিচার থেকে দায়মুক্তির বিরুদ্ধে এবং ন্যায়বিচার নিশ্চিত করতে যেকোনো উদ্যোগকে সমর্থন করবে। যদিও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়, জাতিসংঘ এবং আশিয়ানের বর্তমান ফোকাস মিয়ানমারে স্বাভাবিকতা ফিরিয়ে আনা- মিয়ানমারের জনগণের জন্য শান্তি ও ন্যায়বিচার আনতে এবং নিজেদের জন্মভূমিতে রোহিঙ্গাদের টেকসই প্রত্যাবাসন নিশ্চিত করতে বাংলাদেশ এই সংস্থাগুলোর শক্তিশালী ভূমিকার জন্য অপেক্ষা করছে।

রোহিঙ্গা ইস্যুতে আসিয়ানের শক্ত ভূমিকা প্রত্যাশা করে শেখ হাসিনা বলেন, এ সংকট নিরসনে আঞ্চলিক সংস্থা হিসেবে আশিয়ান প্রধান ভূমিকা নিতে পারে। রোহিঙ্গাদের নাগরিকত্ব নিশ্চিতে রাখাইন রাজ্যের ওপর কফি আনান উপদেষ্টা কমিশনের সুপারিশগুলো সম্পূর্ণরূপে বাস্তবায়নের ব্যাপক প্রচেষ্টা গ্রহণ করা উচিত। বেসামরিক পর্যবেক্ষক হিসেবে তাদের অর্থবহ উপস্থিতি স্বেচ্ছায় নিজের মাতৃভূমিতে প্রত্যাবর্তনের জন্য রোহিঙ্গাদের আত্মবিশ্বাস বাড়াবে।

https://sangbad.net.bd/images/2022/September/22Sep22/news/%E0%A7%A7%E0%A7%AF.jpg

মিয়ানমারের রাজনৈতিক ইতিহাসে রোহিঙ্গাদের অবস্থানের কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আরাকানে, বর্তমানে যা মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্য হিসেবে পরিচিত, অষ্টম শতক থেকেই রোহিঙ্গারা বসবাস করে আসছে।

তিনি বলেন, ১৯৪৮ সালে মিয়ানমার যখন স্বাধীন হয়, নতুন সরকার কোন কোন জাতিসত্তা নাগরিকত্ব পেতে পারে তা সংজ্ঞায়িত করে নাগরিকত্ব আইন পাস করে। এতে রোহিঙ্গাদের ভিন্ন জাতির বহিরাগত হিসেবে টার্গেট করা হয়েছে। তারপরে ১৯৮২ সালে নতুন একটি নাগরিকত্ব আইন পাস করা হয়েছিল যেটি রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে থাকা ১৩৫ জাতিগোষ্ঠীর একটি হিসেবে স্বীকৃতি দেয়নি।

তিনি আরও বলেন, ১৯৫২ সালে যখন ইউ নু রাষ্ট্রপতি হন, তিনি তার মন্ত্রিসভায় দুন মুসলিম রোহিঙ্গাকে অন্তর্ভুক্ত করেন- বাণিজ্য ও উন্নয়ন মন্ত্রী হিসাবে ইউ রশিদ এবং স্বাস্থ্য মন্ত্রী হিসেবে সুলতান মাহমুদকে। তার পার্লামেন্টে আব্দুল বাশার, জোহোরা বেগম, আবুল খায়ের, আবদুস সোবহান, রশিদ আহমেদ, নাসিরুদ্দিন এবং দুজন সংসদীয় সচিব, সুলতান আহমেদ এবং আব্দুল গাফফার নামে ছয়জন মুসলিম রোহিঙ্গা ছিলেন। এটি প্রমাণ করে মুসলিম রোহিঙ্গারা এখনও মিয়ানমারের নাগরিক এবং একজন নাগরিক হিসেবে মুসলিম রোহিঙ্গারা মিয়ানমারের মন্ত্রিসভা এবং সংসদে থাকতে পারে।

রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবর্তনই এ সংকটের একমাত্র সমাধান সে কথা পুর্নব্যক্ত করে শেখ হাসিনা বলেন, বর্তমান সংকটের উৎপত্তি মিয়ানমারে এবং সেখানেই এর সমাধান রয়েছে। রোহিঙ্গাদের পদ্ধতিগতভাবে বাদ দেওয়া এবং নির্বিচার নিপীড়নের মাধ্যমে মিয়ানমার সরকার ১৯৬০ সাল থেকে রোহিঙ্গাদের অব্যহতভাবে বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ ঘটিয়েছে।

আজকে বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া জোরপূর্বক বিতাড়িত মিয়ানমারের রোহিঙ্গা নাগরিকের সংখ্যা ১ দশমিক ২ মিলিয়ন (১২ লাখ) এবং ক্যাম্পে প্রতিদিন শিশুর জন্ম হচ্ছে।

শান্তিপূর্ণভাবে রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে বাংলাদেশের প্রচেষ্টার কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, শুরু থেকেই বাংলাদেশ আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে একটি টেকসই ও শান্তিপূর্ণ সমাধান চেয়েছে। ২০১৭ সালে গণহারে রোহিঙ্গা বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়ার পর রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবর্তনে দুই দেশ তিনটি চুক্তি স্বাক্ষর করেছিল। প্রত্যাবাসন শুরু করার জন্য ২০১৮ এবং ২০১৯ সালে দুটি প্রচেষ্টাও চালানো হয়েছিল। কিন্তু রাখাইনে অনুকূল পরিবেশ সৃষ্টি না হওয়ায় বাছাই করা সেসব রোহিঙ্গারা ফিরতে রাজি ছিল না। তাদের নিরাপত্তা ও নিরাপত্তা, সহিংসতার পুনরাবৃত্তি না হওয়া, জীবিকার সুযোগ এবং নাগরিকত্বের পথসহ মৌলিক অধিকারের ইস্যুগুলো তাদের উদ্বেগের কারণ ছিল।

অব্যহতভাবে মিয়ানমার তার অঙ্গীকার অমান্য করায়, ত্রিপক্ষীয় একটি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে চীনের সহায়তায় প্রত্যাবর্তন আলোচনা শুরু করার জন্য বাংলাদেশ বিকল্পের আশ্রয় নেয়। তবে আজ পর্যন্ত তেমন কোনো অগ্রগতি হয়নি বলেও জানান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

back to top