alt

জাতীয়

বাংলাদেশ সন্ত্রাস দমন করায় যুক্তরাষ্ট্র নাখোশ? প্রশ্ন প্রধানমন্ত্রীর

সংবাদ অনলাইন রিপোর্ট : বৃহস্পতিবার, ০৬ অক্টোবর ২০২২

সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা । ছবি: সংগৃহীত

বাংলাদেশে সন্ত্রাস না থাকায় আমেরিকা নাখোশ কি না সেই প্রশ্ন তুলেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। র‌্যাবের ওপর নিষেধাজ্ঞা প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘র‌্যাবকে আমেরিকা যেমন ট্রেনিং দিয়েছে, তারা তো তেমনই কাজ করছে।’

বৃহস্পতিবার (৬ অক্টোবর) বিকালে গণভবনে সংবাদ সম্মেলনে এক সাংবাদিকের প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী একথা বলেন। যুক্তরাজ্য ও যুক্তরাষ্ট্রে ১৮ দিনের সফরের অভিজ্ঞতা জানাতে এই সংবাদ সম্মেলনে হাজির হন সরকারপ্রধান।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘নিষেধাজ্ঞা তারা কতটুকু তুলবে জানি না। র‌্যাবকে দিয়ে দেশে সন্ত্রাস দমন হয়েছে। তাদের ওপর নিষেধাজ্ঞার অর্থ কী? যুক্তরাষ্ট্রের কাছে প্রশ্ন। তাহলে কি তারা সন্ত্রাস দমনে নাখোশ?’

প্রধানমন্ত্রী আফগানিস্তানে তালেবানের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের যুদ্ধের বিষয়টি টেনে বলেন, ‘৪০ বছর ধরে তালেবানের সঙ্গে যুদ্ধ করে যুক্তরাষ্ট্র সেই তালেবানকেই ক্ষমতা দিয়ে চলে এলো। ৪০ বছর তারা (যুক্তরাষ্ট্র) রাজত্ব করলো। তাহলে তাদের ব্যর্থতার কথা বলে না কেন?’

‘গুরুতর’ মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগে র‌্যাব ও এর সাবেক-বর্তমান সাত কর্মকর্তার উপর ২০২১ সালের ১০ ডিসেম্বর নিষেধাজ্ঞা দেয় যুক্তরাষ্ট্র। র‌্যাবের সাবেক মহাপরিচালক ও পুলিশের তখনকার আইজিপি বেনজীর আহমেদের পাশাপাশি র‌্যাবের তখনকার মহাপরিচালক ও নতুন আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন এর নামও সেই নিষেধাজ্ঞার তালিকায় রয়েছে।

যুক্তরাষ্ট্র বলে আসছে, নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের বিষয় ‘জটিল ও কঠিন’ একটি প্রক্রিয়া। র‌্যাবের ওপর নিষেধাজ্ঞার ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থানের কোনো পরিবর্তন হয়নি জানিয়ে গত বৃহস্পতিবার দেশটির রাষ্ট্রদূত পিটার হাস বলেছিলেন, জবাবদিহিতা ও সংস্কার নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত নিষেধাজ্ঞা বহাল থাকবে।

প্রশ্নোত্তর পর্বে এক সাংবাদিক জানতে চান, র‌্যাবের সাবেক ও বর্তমান কর্মকর্তা এবং সংস্থাটির বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের স্যাংশন (নিষেধাজ্ঞা) দেওয়ায় দেশটির সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্কে এরকম টানাপোড়েন চলছে। এই সম্পর্ক নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর মূল্যায়ন কী, কীভাবে দেখছেন?

জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, র‌্যাব কাদের তৈরি? র‌্যাব তো তারাই (যুক্তরাষ্ট্রে) তৈরি করেছে।তারা ট্রেনিং, অস্ত্র, প্রযুক্তি- সবকিছু দিচ্ছে।তাহলে যেই সংস্থাটি (র‌্যাব) বাংলাদেশের সন্ত্রাস নির্মূল করল, তাদের বিরুদ্ধে কেন স্যাংশন? তাহলে কি তারা (যুক্তরাষ্ট্র) বাংলাদেশে সন্ত্রাস না থাকায় নাখোশ- আমার সেই প্রশ্ন। আমি এসব বিষয়ে জাতিসংঘের অধিবেশনের ভাষণে বলেছি।

তিনি বলেন, তারা (আমেরিকা) যেভাবে প্রশিক্ষণ দিয়েছেন সেভাবেই কাজ করবে সেটাই স্বাভাবিক। তারাই আবার স্যাংশন দিয়েছে। যাদের দিয়ে সন্ত্রাস দমন করেছি তাদের ওপরই কেন স্যাংশন? স্যাংশন দিয়ে কার ক্ষতি হচ্ছে?

‘কথায় কথায় স্যাংশন দেওয়া, এটা ঠিক নয়। এতে ক্ষতিগ্রস্ত হয় আমাদের মতো দেশের সাধারণ মানুষ। আমি জাতিসংঘে বলেছি, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধ করতে হবে।’

র‌্যাব-পুলিশসহ যে কোনো আইনশৃঙ্খলাবাহিনীর বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ এলে, বাংলাদেশে তার বিচার হয় মন্তব্য করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “কিন্তু মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে আপনারা দেখেছেন যে পুলিশ ইচ্ছামত গুলি করে মারলেও তাদের সহসা বিচার হয় না। শুধু একটা বিচার হল, যখন আমেরিকার লোক সবাই আন্দোলনে নামল, তখন ওই একটা বিচারই সারাজীবনে তারা করতে পেরেছে।”

যুক্তরাষ্ট্র সফরে র‌্যাবের উপর নিষেধাজ্ঞাসহ বিভিন্ন বিষয় জোরালোভাবে তুলে ধরা হয়েছে জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, “আমাদের কতজন বাঙালি মারা গেছে, সেখানে কিন্তু তারা কিছু করে না। সেই কথাগুলো স্পষ্ট আমি তাদেরকে বলেছি। আমি কিন্তু বসে থাকিনি।”

র‌্যাবের নিষেধাজ্ঞার পেছেনে কিছু প্রবাসী বাংলাদেশিরও ‘ভূমিকা’ রয়েছে বলে মন্তব্য করেন শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, “এটাই হচ্ছে সবচেয়ে দুর্ভাগ্যজনক, আমাদের দেশের কিছু লোক তাদের যেসব স্টেটে থাকে, তারা যেখানে যেখানে থাকে, সেখানকার স্থানীয় সেনেটর, কংগ্রেসম্যান অনেকের কাছে বানোয়াট ও মিথ্যা তথ্য দিয়ে থাকে। দিয়ে দিয়ে একটা পরিবেশ সৃষ্টি করে।”

এসব বাংলাদেশিরা ‘কোনো না কোনো অপরাধে অপরাধী বা চাকরিচ্যুত’ মন্তব্য করে শেখ হাসিনা বলেন, “এটা শুধু মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র না, পৃথিবীর অন্যান্য কয়েক দেশেও… দেখবেন কোনো না কোনো একটা অঘটন, কোনো না কোনো একটা খারাপ কাজ করে কিন্তু গেছে।”

তিনি বলেন, সাজাপ্রাপ্ত যুদ্ধাপরাধীদের সন্তানেরাও এসব অপপ্রচারের সঙ্গে জড়িত। জাতিসংঘের কাছ থেকে পাওয়া ‘গুমের’ শিকার ৭৬ ব্যক্তির তালিকায় বিভিন্ন রকমের ‘গলদ’ থাকার কথা সংবাদ সম্মেলনে তুলে ধরেন শেখ হাসিনা।

তিনি বলেন, “কয়েকটা আন্তর্জাতিক সংস্থা খুব তুলল, ‘গুম খুন’, ‘খুন গুম’, ‘খুন গুম’ করল। গুমের হিসাব যখন বের হতে শুরু করল, তখনতো দেখা গেল সবচেয়ে বেশি গুম জিয়াউর রহমানের আমলে হয়েছে। আর তারপর থেকেতো চলছে। এরপর আমরা যখন তালিকা চাইলাম, ৭৬ জনের তালিকা পাওয়া গেল। আর এই ৭৬ জনের মধ্যে কি পাওয়া গেছে, সেটাতো আপনারা নিজেরাই ভালো জানেন।

সেই তালিকায় ‘ভারতের পলাতক আসামির’ নাম থাকার কথা জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, এই রকম কেমন করে হয়? সেখানে কয়েকটা চরমপন্থি, তারা ভারত থেকে পালিয়েছে, কারণ সেখানে তাদের বিরুদ্ধে হুলিয়া জারি… ওই তালিকার মধ্যে তাদেরও নাম দেওয়া। এইরকমভাবে আরও বেশ কিছু নাম, এমনকি নামের তালিকায় কোনো কোনো ব্যক্তি নিজেই লুকিয়ে আছে। সে রকম তথ্যওতো আছে।

নিজে থেকে ‘লুকিয়ে’ থাকার উদাহরণ দিতে গিয়ে ‘প্রতিপক্ষকে ফাঁসাতে মাকে গুম করা’ এবং নাম না করে ফরহাদ মাজহারের নিখোঁজ হওয়ার প্রসঙ্গ টানেন শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, আমাদের দেশে এমনও আছে, মাকে লুকিয়ে রেখে আরেকজনকে শায়েস্তা করতেও মাকে ‘খুন করেছে, গুম করেছে’, সেই ঘটনাও বের হয়েছে। ভালো একজন আঁতেলের কথা… নাম আর বলতে চাই না। ঢাকা থেকে তিনি চলে গেলেন খুলনা, বলে গেলেন তাকে গুম করা হয়েছে… দেখা গেল খুলনা নিউ মার্কেটে ঘুরে বেড়াচ্ছে।

যুক্তরাজ্য ও যুক্তরাষ্ট্রে ১৮ দিনের রাষ্ট্রীয় সফর শেষে সোমবার রাতে ঢাকায় ফেরেন শেখ হাসিনা। ১৫ সেপ্টেম্বর রাষ্ট্রীয় সফরে লন্ডনে যান তিনি। সেখানে তিনি রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথের অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া এবং রাজা তৃতীয় চার্লসের সিংহাসনে আরোহণ অভ্যর্থনা অনুষ্ঠানে অংশ নেন। এরপর নিউইয়র্কের উদ্দেশে ১৯ সেপ্টেম্বর লন্ডন ত্যাগ করেন।

যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থানকালে শেখ হাসিনা ২৩ সেপ্টেম্বর জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের (ইউএনজিএ) ৭৭তম অধিবেশনে ভাষণ দেন এবং এর ফাঁকে বিভিন্ন অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করেন। স্থানীয় সময় ২৪ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যায় সড়কপথে নিউইয়র্ক থেকে ওয়াশিংটন ডিসিতে যান প্রধানমন্ত্রী ও তার সফরসঙ্গীরা।

গত রোববার (২ অক্টোবর) বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সে যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটন থেকে রওয়ানা হয়ে লন্ডনে সংক্ষিপ্ত যাত্রাবিরতি দিয়ে সোমবার (০৩ অক্টোবর) দিনগত রাত ১টায় ঢাকায় ফেরেন তিনি।

ছবি

১৫ বছরে আমাদের চাল আমদানি করতে হয়নি: এলজিআরডি মন্ত্রী

ছবি

শপথ নিলেন আপিল বিভাগের ৩ বিচারপতি

ছবি

যুদ্ধ অবশ্যই বন্ধ হওয়া উচিত : প্রধানমন্ত্রী

ছবি

গ্যাস সংকটে আগামীর ‘ভরসা’ এলএনজি

ছবি

রানা প্লাজা ধসের ১১ বছর : ‘আমার স্বপ্নও ভেঙে গেছে’

ছবি

এভিয়েশন শিল্পের উন্নয়নে সহযোগিতা করতে চায় যুক্তরাজ্য

ছবি

থাইল্যান্ডে প্রধানমন্ত্রীকে লাল গালিচা সংবর্ধনা

ছবি

সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে ৩ নতুন বিচারক

ছবি

কক্সবাজারে ভোটার হওয়া রোহিঙ্গাদের তালিকা চায় হাই কোর্ট

ছবি

ব্যাংকক পৌঁছেছেন প্রধানমন্ত্রী

ছবি

তাপপ্রবাহের এলাকা আরও বাড়বে

ছবি

ব্যাংককের উদ্দেশে ঢাকা ত্যাগ করলেন প্রধানমন্ত্রী

ছবি

বাংলাদেশ ও কাতারের মধ্যে ৫টি চুক্তি ও ৫টি সমঝোতা স্মারক সই

ছবি

ঢাকা ছাড়লেন কাতারের আমির

ছবি

সোমালি জলদস্যুদের দ্বারা জব্দ করা জাহাজ সংযুক্ত আরব আমিরাতে পৌঁছেছে; ২৩ জন বাংলাদেশি নাবিকের সবাই নিরাপদ

ছবি

পদে থেকেই ইউপি চেয়ারম্যানরা উপজেলা নির্বাচন করতে পারবেন

ছবি

পদত্যাগ না করেই ইউপি চেয়ারম্যানরা উপজেলা নির্বাচন করতে পারবেন

ছবি

বান্দরবানের তিন উপজেলায় ভোট স্থগিত : ইসি সচিব

ছবি

তীব্র দাবদাহের মধ্যেও বিদ্যুৎ উৎপাদনে রেকর্ড , আছে লোড শেডিংও

ছবি

বাংলাদেশ-কাতার ১০ চুক্তি সই

ছবি

ঢাকা থেকে প্রধান ১৫টি রুটে ট্রেনের ভাড়া যত বাড়ল

ছবি

প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকে কাতারের আমির

ছবি

তাপপ্রবাহের সতর্কবার্তা বাড়লো আরও ৩ দিন, দুর্ভোগে সাধারণ মানুষ

ছবি

বাংলাদেশ সেনাবাহিনী ও যুক্তরাষ্ট্রের প্যাসিফিক আর্মি কমান্ড এর যৌথ অংশগ্রহণে টিএল-২০২৪ উদ্বোধন

ছবি

শিশু অধিকার বিষয়ক সচেতনতা সৃষ্টিতে মিডিয়ার ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ--স্পীকার

ছবি

দু’দিনের সফরে কাতারের আমির ঢাকায়

ছবি

পাঁচ দিনের সফরে বুধবার থাইল্যান্ড যাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী

ছবি

৪ মে থেকে বাড়ছে ট্রেনের ভাড়া

ছবি

আনু মুহাম্মদের পায়ে ‌‘কম্বাইন্ড অপারেশন’ দরকার: স্বাস্থ্যমন্ত্রী

ছবি

আমরা জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার হ্রাস করেছি : শেখ হাসিনা

ছবি

তাপপ্রবাহের সতর্কবার্তা, বাড়লো আরও ৩ দিন

ছবি

জলবায়ু পরিবর্তনের কারণেই কি এত তাপ?

ছবি

ভারতের উজানে পানি প্রত্যাহার করে নেয়ায় তিস্তা মরা খালে পরিনত হয়েছে

ছবি

তাপদাহ : হাসপাতাল প্রস্তুত রাখার নির্দেশ স্বাস্থ্যমন্ত্রীর

ছবি

পিছিয়ে নেই নারীরাও তামিলনাড়ু থেকে ট্রাক নিয়ে বেনাপোল এলেন অন্নপূর্ণা

ছবি

দুই দিনের রাষ্ট্রীয় সফরে ঢাকা আসছেন কাতারের আমির, ১১ টি চুক্তি-সমঝোতা

tab

জাতীয়

বাংলাদেশ সন্ত্রাস দমন করায় যুক্তরাষ্ট্র নাখোশ? প্রশ্ন প্রধানমন্ত্রীর

সংবাদ অনলাইন রিপোর্ট

সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা । ছবি: সংগৃহীত

বৃহস্পতিবার, ০৬ অক্টোবর ২০২২

বাংলাদেশে সন্ত্রাস না থাকায় আমেরিকা নাখোশ কি না সেই প্রশ্ন তুলেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। র‌্যাবের ওপর নিষেধাজ্ঞা প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘র‌্যাবকে আমেরিকা যেমন ট্রেনিং দিয়েছে, তারা তো তেমনই কাজ করছে।’

বৃহস্পতিবার (৬ অক্টোবর) বিকালে গণভবনে সংবাদ সম্মেলনে এক সাংবাদিকের প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী একথা বলেন। যুক্তরাজ্য ও যুক্তরাষ্ট্রে ১৮ দিনের সফরের অভিজ্ঞতা জানাতে এই সংবাদ সম্মেলনে হাজির হন সরকারপ্রধান।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘নিষেধাজ্ঞা তারা কতটুকু তুলবে জানি না। র‌্যাবকে দিয়ে দেশে সন্ত্রাস দমন হয়েছে। তাদের ওপর নিষেধাজ্ঞার অর্থ কী? যুক্তরাষ্ট্রের কাছে প্রশ্ন। তাহলে কি তারা সন্ত্রাস দমনে নাখোশ?’

প্রধানমন্ত্রী আফগানিস্তানে তালেবানের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের যুদ্ধের বিষয়টি টেনে বলেন, ‘৪০ বছর ধরে তালেবানের সঙ্গে যুদ্ধ করে যুক্তরাষ্ট্র সেই তালেবানকেই ক্ষমতা দিয়ে চলে এলো। ৪০ বছর তারা (যুক্তরাষ্ট্র) রাজত্ব করলো। তাহলে তাদের ব্যর্থতার কথা বলে না কেন?’

‘গুরুতর’ মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগে র‌্যাব ও এর সাবেক-বর্তমান সাত কর্মকর্তার উপর ২০২১ সালের ১০ ডিসেম্বর নিষেধাজ্ঞা দেয় যুক্তরাষ্ট্র। র‌্যাবের সাবেক মহাপরিচালক ও পুলিশের তখনকার আইজিপি বেনজীর আহমেদের পাশাপাশি র‌্যাবের তখনকার মহাপরিচালক ও নতুন আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন এর নামও সেই নিষেধাজ্ঞার তালিকায় রয়েছে।

যুক্তরাষ্ট্র বলে আসছে, নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের বিষয় ‘জটিল ও কঠিন’ একটি প্রক্রিয়া। র‌্যাবের ওপর নিষেধাজ্ঞার ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থানের কোনো পরিবর্তন হয়নি জানিয়ে গত বৃহস্পতিবার দেশটির রাষ্ট্রদূত পিটার হাস বলেছিলেন, জবাবদিহিতা ও সংস্কার নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত নিষেধাজ্ঞা বহাল থাকবে।

প্রশ্নোত্তর পর্বে এক সাংবাদিক জানতে চান, র‌্যাবের সাবেক ও বর্তমান কর্মকর্তা এবং সংস্থাটির বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের স্যাংশন (নিষেধাজ্ঞা) দেওয়ায় দেশটির সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্কে এরকম টানাপোড়েন চলছে। এই সম্পর্ক নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর মূল্যায়ন কী, কীভাবে দেখছেন?

জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, র‌্যাব কাদের তৈরি? র‌্যাব তো তারাই (যুক্তরাষ্ট্রে) তৈরি করেছে।তারা ট্রেনিং, অস্ত্র, প্রযুক্তি- সবকিছু দিচ্ছে।তাহলে যেই সংস্থাটি (র‌্যাব) বাংলাদেশের সন্ত্রাস নির্মূল করল, তাদের বিরুদ্ধে কেন স্যাংশন? তাহলে কি তারা (যুক্তরাষ্ট্র) বাংলাদেশে সন্ত্রাস না থাকায় নাখোশ- আমার সেই প্রশ্ন। আমি এসব বিষয়ে জাতিসংঘের অধিবেশনের ভাষণে বলেছি।

তিনি বলেন, তারা (আমেরিকা) যেভাবে প্রশিক্ষণ দিয়েছেন সেভাবেই কাজ করবে সেটাই স্বাভাবিক। তারাই আবার স্যাংশন দিয়েছে। যাদের দিয়ে সন্ত্রাস দমন করেছি তাদের ওপরই কেন স্যাংশন? স্যাংশন দিয়ে কার ক্ষতি হচ্ছে?

‘কথায় কথায় স্যাংশন দেওয়া, এটা ঠিক নয়। এতে ক্ষতিগ্রস্ত হয় আমাদের মতো দেশের সাধারণ মানুষ। আমি জাতিসংঘে বলেছি, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধ করতে হবে।’

র‌্যাব-পুলিশসহ যে কোনো আইনশৃঙ্খলাবাহিনীর বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ এলে, বাংলাদেশে তার বিচার হয় মন্তব্য করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “কিন্তু মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে আপনারা দেখেছেন যে পুলিশ ইচ্ছামত গুলি করে মারলেও তাদের সহসা বিচার হয় না। শুধু একটা বিচার হল, যখন আমেরিকার লোক সবাই আন্দোলনে নামল, তখন ওই একটা বিচারই সারাজীবনে তারা করতে পেরেছে।”

যুক্তরাষ্ট্র সফরে র‌্যাবের উপর নিষেধাজ্ঞাসহ বিভিন্ন বিষয় জোরালোভাবে তুলে ধরা হয়েছে জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, “আমাদের কতজন বাঙালি মারা গেছে, সেখানে কিন্তু তারা কিছু করে না। সেই কথাগুলো স্পষ্ট আমি তাদেরকে বলেছি। আমি কিন্তু বসে থাকিনি।”

র‌্যাবের নিষেধাজ্ঞার পেছেনে কিছু প্রবাসী বাংলাদেশিরও ‘ভূমিকা’ রয়েছে বলে মন্তব্য করেন শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, “এটাই হচ্ছে সবচেয়ে দুর্ভাগ্যজনক, আমাদের দেশের কিছু লোক তাদের যেসব স্টেটে থাকে, তারা যেখানে যেখানে থাকে, সেখানকার স্থানীয় সেনেটর, কংগ্রেসম্যান অনেকের কাছে বানোয়াট ও মিথ্যা তথ্য দিয়ে থাকে। দিয়ে দিয়ে একটা পরিবেশ সৃষ্টি করে।”

এসব বাংলাদেশিরা ‘কোনো না কোনো অপরাধে অপরাধী বা চাকরিচ্যুত’ মন্তব্য করে শেখ হাসিনা বলেন, “এটা শুধু মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র না, পৃথিবীর অন্যান্য কয়েক দেশেও… দেখবেন কোনো না কোনো একটা অঘটন, কোনো না কোনো একটা খারাপ কাজ করে কিন্তু গেছে।”

তিনি বলেন, সাজাপ্রাপ্ত যুদ্ধাপরাধীদের সন্তানেরাও এসব অপপ্রচারের সঙ্গে জড়িত। জাতিসংঘের কাছ থেকে পাওয়া ‘গুমের’ শিকার ৭৬ ব্যক্তির তালিকায় বিভিন্ন রকমের ‘গলদ’ থাকার কথা সংবাদ সম্মেলনে তুলে ধরেন শেখ হাসিনা।

তিনি বলেন, “কয়েকটা আন্তর্জাতিক সংস্থা খুব তুলল, ‘গুম খুন’, ‘খুন গুম’, ‘খুন গুম’ করল। গুমের হিসাব যখন বের হতে শুরু করল, তখনতো দেখা গেল সবচেয়ে বেশি গুম জিয়াউর রহমানের আমলে হয়েছে। আর তারপর থেকেতো চলছে। এরপর আমরা যখন তালিকা চাইলাম, ৭৬ জনের তালিকা পাওয়া গেল। আর এই ৭৬ জনের মধ্যে কি পাওয়া গেছে, সেটাতো আপনারা নিজেরাই ভালো জানেন।

সেই তালিকায় ‘ভারতের পলাতক আসামির’ নাম থাকার কথা জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, এই রকম কেমন করে হয়? সেখানে কয়েকটা চরমপন্থি, তারা ভারত থেকে পালিয়েছে, কারণ সেখানে তাদের বিরুদ্ধে হুলিয়া জারি… ওই তালিকার মধ্যে তাদেরও নাম দেওয়া। এইরকমভাবে আরও বেশ কিছু নাম, এমনকি নামের তালিকায় কোনো কোনো ব্যক্তি নিজেই লুকিয়ে আছে। সে রকম তথ্যওতো আছে।

নিজে থেকে ‘লুকিয়ে’ থাকার উদাহরণ দিতে গিয়ে ‘প্রতিপক্ষকে ফাঁসাতে মাকে গুম করা’ এবং নাম না করে ফরহাদ মাজহারের নিখোঁজ হওয়ার প্রসঙ্গ টানেন শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, আমাদের দেশে এমনও আছে, মাকে লুকিয়ে রেখে আরেকজনকে শায়েস্তা করতেও মাকে ‘খুন করেছে, গুম করেছে’, সেই ঘটনাও বের হয়েছে। ভালো একজন আঁতেলের কথা… নাম আর বলতে চাই না। ঢাকা থেকে তিনি চলে গেলেন খুলনা, বলে গেলেন তাকে গুম করা হয়েছে… দেখা গেল খুলনা নিউ মার্কেটে ঘুরে বেড়াচ্ছে।

যুক্তরাজ্য ও যুক্তরাষ্ট্রে ১৮ দিনের রাষ্ট্রীয় সফর শেষে সোমবার রাতে ঢাকায় ফেরেন শেখ হাসিনা। ১৫ সেপ্টেম্বর রাষ্ট্রীয় সফরে লন্ডনে যান তিনি। সেখানে তিনি রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথের অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া এবং রাজা তৃতীয় চার্লসের সিংহাসনে আরোহণ অভ্যর্থনা অনুষ্ঠানে অংশ নেন। এরপর নিউইয়র্কের উদ্দেশে ১৯ সেপ্টেম্বর লন্ডন ত্যাগ করেন।

যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থানকালে শেখ হাসিনা ২৩ সেপ্টেম্বর জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের (ইউএনজিএ) ৭৭তম অধিবেশনে ভাষণ দেন এবং এর ফাঁকে বিভিন্ন অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করেন। স্থানীয় সময় ২৪ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যায় সড়কপথে নিউইয়র্ক থেকে ওয়াশিংটন ডিসিতে যান প্রধানমন্ত্রী ও তার সফরসঙ্গীরা।

গত রোববার (২ অক্টোবর) বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সে যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটন থেকে রওয়ানা হয়ে লন্ডনে সংক্ষিপ্ত যাত্রাবিরতি দিয়ে সোমবার (০৩ অক্টোবর) দিনগত রাত ১টায় ঢাকায় ফেরেন তিনি।

back to top