alt

জাতীয়

র‌্যাবে নিষেধাজ্ঞা : যুক্তরাষ্ট্রের উদ্দেশ্য নিয়ে প্রশ্ন প্রধানমন্ত্রীর

সংবাদ অনলাইন রিপোর্ট : বৃহস্পতিবার, ০৬ অক্টোবর ২০২২

যুক্তরাষ্ট্রের পরামর্শেই বাংলাদেশে সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ দমনে র‌্যাব গঠন করা হয়েছিল উল্লেখ করে এলিট এই বাহিনীর ওপর মার্কিন নিষেধাজ্ঞা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, ‘আমরা যাদের দিয়ে এ দেশের সন্ত্রাস দমন করেছি, তাদের ওপর স্যাংশন দেয়ার অর্থটা কি সন্ত্রাসীদের মদদ দেয়া? আমার এটাও প্রশ্ন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কাছে, তাহলে কি তারা সন্ত্রাস দমনে নাখোশ?’

যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যে সদ্য সমাপ্ত রাষ্ট্রীয় সফর নিয়ে গতকাল আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন।

সংবাদ সম্মেলনে প্রশ্নোত্তর পর্বে প্রধানমন্ত্রী বৈশ্বিক অর্থনৈতিক মন্দা এবং বাংলাদেশের ওপর এর প্রভাব, সমসাময়িক রাজনীতি, আসন্ন জাতীয় নির্বাচন, বিএনপির আন্দোলন, রোহিঙ্গা ইস্যু সমস্যাসহ নানা বিষয়ে কথা বলেন।

বিকেল ৪টা ৫ মিনিটে প্রধানমন্ত্রী সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত হন। পরনে ছিল হালকা গোলাপি রঙের জামদানি শাড়ি। ৪টা ৯ মিনিটে তিনি লিখিত বক্তব্য পাঠ শুরু করেন। ১১ মিনিটের ওই বক্তব্যে তিনি যুক্তরাজ্য ও যুক্তরাষ্ট্র সফরের বিস্তারিত তথ্য তুলে ধরেন। বিকেল ৪টা ২১ মিনিটে শুরু হয় প্রশ্নোত্তর পর্ব। প্রধানমন্ত্রী একে একে সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দিতে থাকেন।

র‌্যাবের ওপর মার্কিন নিষেধাজ্ঞা প্রসঙ্গে এক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, ‘স্যাংশন তারা কতটুকু তুলবে জানি না। তবে স্যাংশন দিয়ে তারা ক্ষতি করেছে, আমরা যাদের দিয়ে এ দেশের সন্ত্রাস দমন করেছি, তাদের ওপর স্যাংশন দেয়ার অর্থটা কী?

‘গুরুতর’ মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগে র‌্যাব ও এর সাবেক-বর্তমান সাত কর্মকর্তার ওপর ২০২১ সালের ১০ ডিসেম্বর নিষেধাজ্ঞা দেয় যুক্তরাষ্ট্র। র‌্যাবের সাবেক মহাপরিচালক ও পুলিশের তৎকালীন আইজিপি (সদ্য সাবেক) বেনজীর আহমেদের পাশাপাশি র‌্যাবের তখনকার মহাপরিচালক ও নতুন আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের নামও সেই নিষেধাজ্ঞার তালিকায় রয়েছে।

র‌্যাবের ওপর নিষেধাজ্ঞার ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থানের কোন পরিবর্তন হয়নি জানিয়ে গত বৃহস্পতিবার দেশটির রাষ্ট্রদূত পিটার হাস বলেছিলেন, জবাবদিহিতা ও সংস্কার নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত নিষেধাজ্ঞা বহাল থাকবে। এর মধ্যে সেপ্টেম্বরের শেষে নিউইয়র্কে জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনে যোগ দেয়ার পাশাপাশি ওয়াশিংটন ডিসি সফর করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সে সময় বিভিন্ন বৈঠকে নিষেধাজ্ঞার বিষয়টি আলোচনায় আসে বলে প্রধানমন্ত্রী সংবাদ সম্মেলনে জানান।

তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্র সময়ে সময়ে আমাদের ওপর নানা ধরনের স্যাংশন, অথবা এক সময় জিএসপি বাদ দিল, নানা রকমের ঘটনা ঘটায়। তো, আমেরিকা যখন স্যাংশন দেয় বা আর কোন কথা বলে বা অভিযোগ আনে, আমার একটাই কথা- যেমন আপনারা ট্রেনিং দিয়েছেন, তেমন তারা কার্যক্রম করেছে। কাজেই আমাদের করার কী আছে? আপনাদের ট্রেনিংটা যদি একটু ভালো হতো, তাহলে না কথা ছিল।’

র‌্যাব-পুলিশসহ যেকোন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বিরুদ্ধে কোন অভিযোগ এলে বাংলাদেশে তার বিচার হয় মন্তব্য করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘কিন্তু মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে আপনারা দেখেছেন যে পুলিশ ইচ্ছেমতো গুলি করে মারলেও তাদের সহসা বিচার হয় না। শুধু একটা বিচার হলো, যখন আমেরিকার লোক সবাই আন্দোলনে নামল, তখন ওই একটা বিচারই সারাজীবনে তারা করতে পেরেছে।’

যুক্তরাষ্ট্র সফরে র‌্যাবের ওপর নিষেধাজ্ঞাসহ বিভিন্ন বিষয় জোরালোভাবে তুলে ধরা হয়েছে জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমাদের কতজন বাঙালি মারা গেছে, সেখানে কিন্তু তারা কিছু করে না। সেই কথাগুলো স্পষ্ট আমি তাদের বলেছি। আমি কিন্তু বসে থাকিনি।’

র‌্যাবের নিষেধাজ্ঞার পেছেনে কিছু প্রবাসী বাংলাদেশিরও ‘ভূমিকা’ রয়েছে বলে মন্তব্য করেন শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, ‘এটাই হচ্ছে সবচেয়ে দুর্ভাগ্যজনক, আমাদের দেশের কিছু লোক তাদের যেসব স্টেটে থাকে, তারা যেখানে থাকে, সেখানকার স্থানীয় সেনেটর, কংগ্রেসম্যান অনেকের কাছে বানোয়াট ও মিথ্যা তথ্য দিয়ে থাকে। দিয়ে একটা পরিবেশ সৃষ্টি করে।’ এসব বাংলাদেশিরা ‘কোন না কোন অপরাধে অপরাধী বা চাকরিচ্যুত’ মন্তব্য করে শেখ হাসিনা বলেন, এটা শুধু মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র না, পৃথিবীর অন্য কয়েক দেশেও দেখবেন কোন না কোন একটা অঘটন, কোন না কোন একটা খারাপ কাজ করে কিন্তু গেছে।’

বৈশ্বিক মন্দা আসছে, সবাইকে সাশ্রয়ী হওয়ার পরামর্শ

২০২৩ সালে বৈশ্বিক মন্দা আসতে পারে, বিশ্বব্যাপী দুর্ভিক্ষ হতে পারেÑ এসর ইঙ্গিত দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, তিনি আগে থেকেই সবাইকে সাশ্রয়ী হওয়ার পরামর্শ দিচ্ছেন। যার যতটুকু জমি আছে সেখানে ফসল উৎপাদনের কথা বলছেন। এটা তিনি এবারের সফরে প্রবাসী বাংলাদেশিদেরও বলেছেন। বিদ্যুৎ, জ্বালানিসহ নিত্যপ্রয়োজীন অন্য দ্রব্য ব্যবহারে মিতব্যয়ী হওয়ার কথাও বলছেন।

এক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘দেশের সবাই প্রস্তুত হোন। বিশ্বব্যাপী যে অবস্থা সৃষ্টি হচ্ছে, তাতে শেষমেষ ভেন্না ও রেড়ির তেল দিয়ে সবাইকে চলতে হবে। সেটা দিয়ে মাটির প্রদীপ বা হারিকেন জ্বালাতে হবে।’

সরকারপ্রধান বলেন, বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেলের দাম ক্রমেই বৃদ্ধি পাচ্ছে। ভূ-গর্ভস্থ গ্যাস হ্রাস হচ্ছে। ফলে এখনই সেসব ব্যবহারে সচেতন হতে হবে। জনগণকে অনুরোধ জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, উন্নত দেশগুলোর দিকে তাকান আপনারা। তাদের অবস্থাও শোচনীয়। ব্রিটেনে বিদ্যুতের দাম ৮০ শতাংশ বাড়ানো হয়েছে জানিয়ে সাংবাদিকদের প্রতি তিনি প্রশ্ন রাখেন, দেশে বিদ্যুতের দাম যদি ৪০ শতাংশ বাড়ানো হয়, তাহলে কী হবে।

তবে ডিজিটাল বাংলাদেশ চালানোর জন্য যেটুকু বিদ্যুৎ প্রয়োজন সেটা দিতে পারব বলে জানান তিনি। বঙ্গবন্ধু কন্যা বলেন, আমরা গ্যাস সংরক্ষণের চেষ্টা করছি। বাপেক্সের কার্যক্ষমতা অনেক বৃদ্ধি করেছি। নতুন গ্যাসক্ষেত্র অনুসন্ধান করা হচ্ছে। সব মিলিয়ে আপনারা সচেতন হোন।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশবাসীকে আশ্বস্ত করে বলেছেন, বাংলাদেশের অর্থনীতি বেশ শক্তিশালী অবস্থানে থাকায় উদ্বিগ্ন হওয়ার কিছু নেই। তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের অর্থনীতি, মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদি দিক বিবেচনা করে কোন ঝুঁকির মধ্যে নেই। এই কথা আমি দিতে পারি। ’

এক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী জানান, রোহিঙ্গা ইস্যুতেও জাতিসংঘে কথা বলেছেন তিনি। বিষয়টি সমাধানে তার সরকার মায়ানমারের সঙ্গেও আলোচনা করছে। সরকারপ্রধান বলেন, ‘পাঁচ বছর তারা আমাদের কাঁধে বোঝা হয়ে আছে। বৈদেশিক সাহায্যও সীমিত হয়ে আসছে।

একজন কাউন্সিলরও যদি বলে আমাকে চায় না, আমি থাকব না

আওয়ামী লীগের আগামী সম্মেলনে একজন কাউন্সিরও যদি তাকে দলের নেতৃত্বে দেখতে না চান, তাহলে তিনি বিদায় নিতে প্রস্তুত আছেন বলে জানান আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। এক প্রশ্নের জবাবে চার দশকের বেশি দলীয় সভাপতির দায়িত্বে থাকা শেখ হাসিনা গত দুটি সম্মেলনের আগে নিজেই তার বয়সের কথা তুলে ধরে বলেছিলেন, নতুন নেতৃত্বের হাতে দায়িত্ব বুঝিয়ে দিতে পারলে তিনি খুশি হবেন। তবে প্রতিবার সম্মেলনে বঙ্গবন্ধু কন্যাকেই নেতৃত্বে রেখেছেন নেতাকর্মীরা। সে বিষয়টি মনে করিয়ে দিয়ে ওই সাংবাদিক প্রশ্ন করেছিলেন, এবার কোন চমক সম্মেলনে থাকবেন কি না, শেখ হাসিনা কোন নতুন নেতৃত্বকে সামনে নিয়ে আসবেন কি না।

উত্তরে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আওয়ামী লীগের একটি কাউন্সিলর যদি বলে, আমাকে চায় না, আমি কোনদিনই থাকব না। যেদিন থেকে আমাকে আওয়ামী লীগের প্রেসিডেন্ট করেছিল, সেদিন থেকেই এই শর্তটা মেনে যাচ্ছি।’ আগামী ডিসেম্বরে আওয়ামী লগের ২২তম জাতীয় সম্মেলন হবে বলে তিনি সংবাদ সম্মেলনে জানান।

বিএনপির খুঁটিতে জোর থাকলে বিদেশিদের কাছে যেতে হতো না

নিজের দেশের মাটিতেই যদি বিএনপির সমর্থন থাকত, যদি তাদের খুঁটিতে জোর থাকত, তাহলে বিদেশিদের কাছে ধরনা দেয়ার প্রয়োজন হতো না বলে মনে করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। একজন সাংবাদিকের প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘জনসমর্থন ও জনগণের ওপর আস্থা থাকলে, বিশ্বাস থাকলে তারা (বিএনপি) জনগণের কাছে যেত, বিদেশিদের কাছে দৌড়ে বেড়াত না। এটাই হলো বাস্তবতা।’

বিএনপি প্রতি সপ্তাহে কোন না কোন বিদেশি রাষ্ট্রদূতের কাছে যাচ্ছে, নির্বাচন নিয়ে কথা বলছে। নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতার পরিবর্তন হবে, নাকি বিদেশি দূতাবাসের মাধ্যমে সরকার পরিবর্তন হবে? ওই সাংবাদিকের এমন প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বিএনপিকে জিজ্ঞেস করলে ভালো হয়, নির্বাচনটা কে করে দিয়ে যাবে।’

জনসমর্থন, জনগণের ওপর আস্থা ও বিশ্বাস, এই শক্তি বিএনপির নেই বলে মনে করেন শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, ‘তারা কোন মুখে জনগণের কাছে ভোট চাইতে যাবে। আগুন দিয়ে পোড়ানো, মানুষ খুন করা, বোমা মারা, গ্রেনেড মারা- সব জায়গায় তো আছে। তারা যদি সামনে এসে দাঁড়ায়, তখন কী জবাব দেবে বিএনপি। এ জন্যই তারা বিদেশিদের কাছে ধরনা দিয়ে বেড়ায়। দেশের মানুষের কাছে যায় না।’

বিএনপির আন্দোলন প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আন্দোলন সংগ্রামের হুমকি পাওয়া যাচ্ছে। সেটা বিরোধীদলের কাজ। তবে বিরোধীদল যদি শক্তিশালী হতো, তাহলে অনেক কিছুই হতো।’ গণতান্ত্রিক আন্দোলনে বিএনপিকে বাধা দেয়া হচ্ছে না উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমরা তো বাধা দিচ্ছি না। আন্দোলন করেন, সংগ্রাম করেন। যত আন্দোলন করবেন তত ভালো। কিন্তু পারে না তো। কী করব।’

সংবাদ সম্মেলনে শেখ হাসিনা বলেন, আওয়ামী লীগ যতবার ক্ষমতায় এসেছে, ভোটের মাধ্যমেই এসেছে; নির্বাচনের মাধ্যমেই এসেছে। এ দেশে নির্বাচনের যতটুকু উন্নতি, যতটুকু সংস্কার, এটা আওয়ামী লীগ সবাইকে নিয়েই করে দিয়েছে। বিএনপিকে ইঙ্গিত করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এরপরও যদি কেউ না আসে, সেখানে আমাদের কী করণীয়। হারার ভয়ে আসবে না। একেবারে সবাইকে লোকমা তুলে খাইয়ে দিতে হবে; জিতিয়ে দিতে হবে; তবেই আসব। এটা তো হয় না।’

চায়ের আমন্ত্রণের সুযোগ নেই

প্রধানমন্ত্রীর কাছে এক সাংবাদিকের প্রশ্ন ছিল সামনে নির্বাচন। সবকিছু মিলিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোকে এবারও চায়ের আমন্ত্রণ জানাবেন কি না? তবে চলমান করোনাভাইরাস মহামারীর মধ্যে আগামী জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে বিরোধীদলগুলোর সঙ্গে সংলাপে বসার সুযোগ নেই বলে ইঙ্গিত দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

নির্বাচনে কে অংশ নেবে, কে নেবে না, সেটি যেকোন রাজনৈতিক দলের সিদ্ধান্ত উল্লেখ করে সরকারপ্রধান বলেন, ‘আমরা তো কিছু চাপিয়ে দিতে পারি না। রাজনীতি করতে হলে দলগুলো নিজে সিদ্ধান্ত নেবে। আমরা অবশ্যই চাই সব দল অংশগ্রহণ করুক। এতদিন কাজ করার পর নিশ্চয়ই আমরা চাইব, সবাই আসুক।’ প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘গতবার যে সবার সঙ্গে বৈঠক করলাম, আলোচনা করলাম, নির্বাচনে এসে দেখা গেল, তিনশ সিটে সাত নমিনেশন দিয়ে যখন নিজেরা হেরে গেল তখন সব দোষ কার, আমাদের।’

ওয়াশিংটন ডিসিতে অবস্থানকালে প্রভাবশালী মার্কিন গণমাধ্যম এনার্জি-এনভায়রনমেন্ট নিউজ, সিবিএস, ওয়াশিংটন পোস্ট এবং দ্য পলিটিকো তার সাক্ষাৎকার নিয়েছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এসব সাক্ষাৎকারে জলবায়ু পরিবর্তন, রোহিঙ্গা সংকট, রাশিয়া-ইউক্রেনের যুদ্ধের ফলে বৈশি^ক সংকট এবং অভ্যন্তরীণ রাজনীতির বিষয়সমূহ উঠে আসে।

আওয়ামী লীগ সরকারের উন্নয়ন দেশের কয়েকটি পত্রিকার ভালো লাগে না মন্তব্য করে সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা যতই ভালো করি তাদের চোখে কোনদিন ভালো লাগে না, তারা যেন এক ধরনের পরশ্রীকাতরতায় ভোগে। তবে, আমাদের কাজে জনগণ কতটুকু লাভবান হলো আমরা সেদিকেই বিশেষভাবে দৃষ্টি দেই।’

টানা ৫৫ মিনিট চলার পর প্রশ্নোত্তর পর্ব শেষ হয়। এরপর সবাইকে বিদায় জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী সংবাদ সম্মেলন কক্ষ ত্যাগ করেন। আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর সদস্য মতিয়া চৌধুরী, আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আবদুল মোমেন এ সময় মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন।

অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব ইহাসানুল করিম। মন্ত্রীসভার সদস্য এবং ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের জ্যেষ্ঠ নেতারাও সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন।

প্রসঙ্গত, প্রধানমন্ত্রী ১৫ সেপ্টেম্বর থেকে যুক্তরাজ্য ও যুক্তরাষ্ট্রে তার ১৮ দিনের রাষ্ট্রীয় সফর শেষ ৪ অক্টোবর দেশে ফেরেন। যুক্তরাজ্যে অবস্থানকালে তিনি রানী দ্বিতীয় এলিজাবেথের রাষ্ট্রীয় অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ায় যোগ দেন এবং পরে যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থানকালে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ৭৭তম অধিবেশনে ভাষণ দেন এবং বিভিন্ন সাইড ইভেন্টে অংশগ্রহণ এবং গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তির সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ এবং বৈঠক করেন।

ছবি

রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির চেয়ারম্যান হলেন এম ইউ কবীর চৌধুরী

বাল্যবিবাহ রোধে সামাজিক আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে : মানবাধিকার কমিশন

ছবি

১৫ বছরে আমাদের চাল আমদানি করতে হয়নি: এলজিআরডি মন্ত্রী

ছবি

শপথ নিলেন আপিল বিভাগের ৩ বিচারপতি

ছবি

যুদ্ধ অবশ্যই বন্ধ হওয়া উচিত : প্রধানমন্ত্রী

ছবি

গ্যাস সংকটে আগামীর ‘ভরসা’ এলএনজি

ছবি

রানা প্লাজা ধসের ১১ বছর : ‘আমার স্বপ্নও ভেঙে গেছে’

ছবি

এভিয়েশন শিল্পের উন্নয়নে সহযোগিতা করতে চায় যুক্তরাজ্য

ছবি

থাইল্যান্ডে প্রধানমন্ত্রীকে লাল গালিচা সংবর্ধনা

ছবি

সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে ৩ নতুন বিচারক

ছবি

কক্সবাজারে ভোটার হওয়া রোহিঙ্গাদের তালিকা চায় হাই কোর্ট

ছবি

ব্যাংকক পৌঁছেছেন প্রধানমন্ত্রী

ছবি

তাপপ্রবাহের এলাকা আরও বাড়বে

ছবি

ব্যাংককের উদ্দেশে ঢাকা ত্যাগ করলেন প্রধানমন্ত্রী

ছবি

বাংলাদেশ ও কাতারের মধ্যে ৫টি চুক্তি ও ৫টি সমঝোতা স্মারক সই

ছবি

ঢাকা ছাড়লেন কাতারের আমির

ছবি

সোমালি জলদস্যুদের দ্বারা জব্দ করা জাহাজ সংযুক্ত আরব আমিরাতে পৌঁছেছে; ২৩ জন বাংলাদেশি নাবিকের সবাই নিরাপদ

ছবি

পদে থেকেই ইউপি চেয়ারম্যানরা উপজেলা নির্বাচন করতে পারবেন

ছবি

পদত্যাগ না করেই ইউপি চেয়ারম্যানরা উপজেলা নির্বাচন করতে পারবেন

ছবি

বান্দরবানের তিন উপজেলায় ভোট স্থগিত : ইসি সচিব

ছবি

তীব্র দাবদাহের মধ্যেও বিদ্যুৎ উৎপাদনে রেকর্ড , আছে লোড শেডিংও

ছবি

বাংলাদেশ-কাতার ১০ চুক্তি সই

ছবি

ঢাকা থেকে প্রধান ১৫টি রুটে ট্রেনের ভাড়া যত বাড়ল

ছবি

প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকে কাতারের আমির

ছবি

তাপপ্রবাহের সতর্কবার্তা বাড়লো আরও ৩ দিন, দুর্ভোগে সাধারণ মানুষ

ছবি

বাংলাদেশ সেনাবাহিনী ও যুক্তরাষ্ট্রের প্যাসিফিক আর্মি কমান্ড এর যৌথ অংশগ্রহণে টিএল-২০২৪ উদ্বোধন

ছবি

শিশু অধিকার বিষয়ক সচেতনতা সৃষ্টিতে মিডিয়ার ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ--স্পীকার

ছবি

দু’দিনের সফরে কাতারের আমির ঢাকায়

ছবি

পাঁচ দিনের সফরে বুধবার থাইল্যান্ড যাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী

ছবি

৪ মে থেকে বাড়ছে ট্রেনের ভাড়া

ছবি

আনু মুহাম্মদের পায়ে ‌‘কম্বাইন্ড অপারেশন’ দরকার: স্বাস্থ্যমন্ত্রী

ছবি

আমরা জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার হ্রাস করেছি : শেখ হাসিনা

ছবি

তাপপ্রবাহের সতর্কবার্তা, বাড়লো আরও ৩ দিন

ছবি

জলবায়ু পরিবর্তনের কারণেই কি এত তাপ?

ছবি

ভারতের উজানে পানি প্রত্যাহার করে নেয়ায় তিস্তা মরা খালে পরিনত হয়েছে

ছবি

তাপদাহ : হাসপাতাল প্রস্তুত রাখার নির্দেশ স্বাস্থ্যমন্ত্রীর

tab

জাতীয়

র‌্যাবে নিষেধাজ্ঞা : যুক্তরাষ্ট্রের উদ্দেশ্য নিয়ে প্রশ্ন প্রধানমন্ত্রীর

সংবাদ অনলাইন রিপোর্ট

বৃহস্পতিবার, ০৬ অক্টোবর ২০২২

যুক্তরাষ্ট্রের পরামর্শেই বাংলাদেশে সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ দমনে র‌্যাব গঠন করা হয়েছিল উল্লেখ করে এলিট এই বাহিনীর ওপর মার্কিন নিষেধাজ্ঞা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, ‘আমরা যাদের দিয়ে এ দেশের সন্ত্রাস দমন করেছি, তাদের ওপর স্যাংশন দেয়ার অর্থটা কি সন্ত্রাসীদের মদদ দেয়া? আমার এটাও প্রশ্ন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কাছে, তাহলে কি তারা সন্ত্রাস দমনে নাখোশ?’

যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যে সদ্য সমাপ্ত রাষ্ট্রীয় সফর নিয়ে গতকাল আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন।

সংবাদ সম্মেলনে প্রশ্নোত্তর পর্বে প্রধানমন্ত্রী বৈশ্বিক অর্থনৈতিক মন্দা এবং বাংলাদেশের ওপর এর প্রভাব, সমসাময়িক রাজনীতি, আসন্ন জাতীয় নির্বাচন, বিএনপির আন্দোলন, রোহিঙ্গা ইস্যু সমস্যাসহ নানা বিষয়ে কথা বলেন।

বিকেল ৪টা ৫ মিনিটে প্রধানমন্ত্রী সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত হন। পরনে ছিল হালকা গোলাপি রঙের জামদানি শাড়ি। ৪টা ৯ মিনিটে তিনি লিখিত বক্তব্য পাঠ শুরু করেন। ১১ মিনিটের ওই বক্তব্যে তিনি যুক্তরাজ্য ও যুক্তরাষ্ট্র সফরের বিস্তারিত তথ্য তুলে ধরেন। বিকেল ৪টা ২১ মিনিটে শুরু হয় প্রশ্নোত্তর পর্ব। প্রধানমন্ত্রী একে একে সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দিতে থাকেন।

র‌্যাবের ওপর মার্কিন নিষেধাজ্ঞা প্রসঙ্গে এক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, ‘স্যাংশন তারা কতটুকু তুলবে জানি না। তবে স্যাংশন দিয়ে তারা ক্ষতি করেছে, আমরা যাদের দিয়ে এ দেশের সন্ত্রাস দমন করেছি, তাদের ওপর স্যাংশন দেয়ার অর্থটা কী?

‘গুরুতর’ মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগে র‌্যাব ও এর সাবেক-বর্তমান সাত কর্মকর্তার ওপর ২০২১ সালের ১০ ডিসেম্বর নিষেধাজ্ঞা দেয় যুক্তরাষ্ট্র। র‌্যাবের সাবেক মহাপরিচালক ও পুলিশের তৎকালীন আইজিপি (সদ্য সাবেক) বেনজীর আহমেদের পাশাপাশি র‌্যাবের তখনকার মহাপরিচালক ও নতুন আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের নামও সেই নিষেধাজ্ঞার তালিকায় রয়েছে।

র‌্যাবের ওপর নিষেধাজ্ঞার ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থানের কোন পরিবর্তন হয়নি জানিয়ে গত বৃহস্পতিবার দেশটির রাষ্ট্রদূত পিটার হাস বলেছিলেন, জবাবদিহিতা ও সংস্কার নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত নিষেধাজ্ঞা বহাল থাকবে। এর মধ্যে সেপ্টেম্বরের শেষে নিউইয়র্কে জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনে যোগ দেয়ার পাশাপাশি ওয়াশিংটন ডিসি সফর করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সে সময় বিভিন্ন বৈঠকে নিষেধাজ্ঞার বিষয়টি আলোচনায় আসে বলে প্রধানমন্ত্রী সংবাদ সম্মেলনে জানান।

তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্র সময়ে সময়ে আমাদের ওপর নানা ধরনের স্যাংশন, অথবা এক সময় জিএসপি বাদ দিল, নানা রকমের ঘটনা ঘটায়। তো, আমেরিকা যখন স্যাংশন দেয় বা আর কোন কথা বলে বা অভিযোগ আনে, আমার একটাই কথা- যেমন আপনারা ট্রেনিং দিয়েছেন, তেমন তারা কার্যক্রম করেছে। কাজেই আমাদের করার কী আছে? আপনাদের ট্রেনিংটা যদি একটু ভালো হতো, তাহলে না কথা ছিল।’

র‌্যাব-পুলিশসহ যেকোন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বিরুদ্ধে কোন অভিযোগ এলে বাংলাদেশে তার বিচার হয় মন্তব্য করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘কিন্তু মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে আপনারা দেখেছেন যে পুলিশ ইচ্ছেমতো গুলি করে মারলেও তাদের সহসা বিচার হয় না। শুধু একটা বিচার হলো, যখন আমেরিকার লোক সবাই আন্দোলনে নামল, তখন ওই একটা বিচারই সারাজীবনে তারা করতে পেরেছে।’

যুক্তরাষ্ট্র সফরে র‌্যাবের ওপর নিষেধাজ্ঞাসহ বিভিন্ন বিষয় জোরালোভাবে তুলে ধরা হয়েছে জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমাদের কতজন বাঙালি মারা গেছে, সেখানে কিন্তু তারা কিছু করে না। সেই কথাগুলো স্পষ্ট আমি তাদের বলেছি। আমি কিন্তু বসে থাকিনি।’

র‌্যাবের নিষেধাজ্ঞার পেছেনে কিছু প্রবাসী বাংলাদেশিরও ‘ভূমিকা’ রয়েছে বলে মন্তব্য করেন শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, ‘এটাই হচ্ছে সবচেয়ে দুর্ভাগ্যজনক, আমাদের দেশের কিছু লোক তাদের যেসব স্টেটে থাকে, তারা যেখানে থাকে, সেখানকার স্থানীয় সেনেটর, কংগ্রেসম্যান অনেকের কাছে বানোয়াট ও মিথ্যা তথ্য দিয়ে থাকে। দিয়ে একটা পরিবেশ সৃষ্টি করে।’ এসব বাংলাদেশিরা ‘কোন না কোন অপরাধে অপরাধী বা চাকরিচ্যুত’ মন্তব্য করে শেখ হাসিনা বলেন, এটা শুধু মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র না, পৃথিবীর অন্য কয়েক দেশেও দেখবেন কোন না কোন একটা অঘটন, কোন না কোন একটা খারাপ কাজ করে কিন্তু গেছে।’

বৈশ্বিক মন্দা আসছে, সবাইকে সাশ্রয়ী হওয়ার পরামর্শ

২০২৩ সালে বৈশ্বিক মন্দা আসতে পারে, বিশ্বব্যাপী দুর্ভিক্ষ হতে পারেÑ এসর ইঙ্গিত দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, তিনি আগে থেকেই সবাইকে সাশ্রয়ী হওয়ার পরামর্শ দিচ্ছেন। যার যতটুকু জমি আছে সেখানে ফসল উৎপাদনের কথা বলছেন। এটা তিনি এবারের সফরে প্রবাসী বাংলাদেশিদেরও বলেছেন। বিদ্যুৎ, জ্বালানিসহ নিত্যপ্রয়োজীন অন্য দ্রব্য ব্যবহারে মিতব্যয়ী হওয়ার কথাও বলছেন।

এক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘দেশের সবাই প্রস্তুত হোন। বিশ্বব্যাপী যে অবস্থা সৃষ্টি হচ্ছে, তাতে শেষমেষ ভেন্না ও রেড়ির তেল দিয়ে সবাইকে চলতে হবে। সেটা দিয়ে মাটির প্রদীপ বা হারিকেন জ্বালাতে হবে।’

সরকারপ্রধান বলেন, বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেলের দাম ক্রমেই বৃদ্ধি পাচ্ছে। ভূ-গর্ভস্থ গ্যাস হ্রাস হচ্ছে। ফলে এখনই সেসব ব্যবহারে সচেতন হতে হবে। জনগণকে অনুরোধ জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, উন্নত দেশগুলোর দিকে তাকান আপনারা। তাদের অবস্থাও শোচনীয়। ব্রিটেনে বিদ্যুতের দাম ৮০ শতাংশ বাড়ানো হয়েছে জানিয়ে সাংবাদিকদের প্রতি তিনি প্রশ্ন রাখেন, দেশে বিদ্যুতের দাম যদি ৪০ শতাংশ বাড়ানো হয়, তাহলে কী হবে।

তবে ডিজিটাল বাংলাদেশ চালানোর জন্য যেটুকু বিদ্যুৎ প্রয়োজন সেটা দিতে পারব বলে জানান তিনি। বঙ্গবন্ধু কন্যা বলেন, আমরা গ্যাস সংরক্ষণের চেষ্টা করছি। বাপেক্সের কার্যক্ষমতা অনেক বৃদ্ধি করেছি। নতুন গ্যাসক্ষেত্র অনুসন্ধান করা হচ্ছে। সব মিলিয়ে আপনারা সচেতন হোন।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশবাসীকে আশ্বস্ত করে বলেছেন, বাংলাদেশের অর্থনীতি বেশ শক্তিশালী অবস্থানে থাকায় উদ্বিগ্ন হওয়ার কিছু নেই। তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের অর্থনীতি, মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদি দিক বিবেচনা করে কোন ঝুঁকির মধ্যে নেই। এই কথা আমি দিতে পারি। ’

এক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী জানান, রোহিঙ্গা ইস্যুতেও জাতিসংঘে কথা বলেছেন তিনি। বিষয়টি সমাধানে তার সরকার মায়ানমারের সঙ্গেও আলোচনা করছে। সরকারপ্রধান বলেন, ‘পাঁচ বছর তারা আমাদের কাঁধে বোঝা হয়ে আছে। বৈদেশিক সাহায্যও সীমিত হয়ে আসছে।

একজন কাউন্সিলরও যদি বলে আমাকে চায় না, আমি থাকব না

আওয়ামী লীগের আগামী সম্মেলনে একজন কাউন্সিরও যদি তাকে দলের নেতৃত্বে দেখতে না চান, তাহলে তিনি বিদায় নিতে প্রস্তুত আছেন বলে জানান আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। এক প্রশ্নের জবাবে চার দশকের বেশি দলীয় সভাপতির দায়িত্বে থাকা শেখ হাসিনা গত দুটি সম্মেলনের আগে নিজেই তার বয়সের কথা তুলে ধরে বলেছিলেন, নতুন নেতৃত্বের হাতে দায়িত্ব বুঝিয়ে দিতে পারলে তিনি খুশি হবেন। তবে প্রতিবার সম্মেলনে বঙ্গবন্ধু কন্যাকেই নেতৃত্বে রেখেছেন নেতাকর্মীরা। সে বিষয়টি মনে করিয়ে দিয়ে ওই সাংবাদিক প্রশ্ন করেছিলেন, এবার কোন চমক সম্মেলনে থাকবেন কি না, শেখ হাসিনা কোন নতুন নেতৃত্বকে সামনে নিয়ে আসবেন কি না।

উত্তরে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আওয়ামী লীগের একটি কাউন্সিলর যদি বলে, আমাকে চায় না, আমি কোনদিনই থাকব না। যেদিন থেকে আমাকে আওয়ামী লীগের প্রেসিডেন্ট করেছিল, সেদিন থেকেই এই শর্তটা মেনে যাচ্ছি।’ আগামী ডিসেম্বরে আওয়ামী লগের ২২তম জাতীয় সম্মেলন হবে বলে তিনি সংবাদ সম্মেলনে জানান।

বিএনপির খুঁটিতে জোর থাকলে বিদেশিদের কাছে যেতে হতো না

নিজের দেশের মাটিতেই যদি বিএনপির সমর্থন থাকত, যদি তাদের খুঁটিতে জোর থাকত, তাহলে বিদেশিদের কাছে ধরনা দেয়ার প্রয়োজন হতো না বলে মনে করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। একজন সাংবাদিকের প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘জনসমর্থন ও জনগণের ওপর আস্থা থাকলে, বিশ্বাস থাকলে তারা (বিএনপি) জনগণের কাছে যেত, বিদেশিদের কাছে দৌড়ে বেড়াত না। এটাই হলো বাস্তবতা।’

বিএনপি প্রতি সপ্তাহে কোন না কোন বিদেশি রাষ্ট্রদূতের কাছে যাচ্ছে, নির্বাচন নিয়ে কথা বলছে। নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতার পরিবর্তন হবে, নাকি বিদেশি দূতাবাসের মাধ্যমে সরকার পরিবর্তন হবে? ওই সাংবাদিকের এমন প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বিএনপিকে জিজ্ঞেস করলে ভালো হয়, নির্বাচনটা কে করে দিয়ে যাবে।’

জনসমর্থন, জনগণের ওপর আস্থা ও বিশ্বাস, এই শক্তি বিএনপির নেই বলে মনে করেন শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, ‘তারা কোন মুখে জনগণের কাছে ভোট চাইতে যাবে। আগুন দিয়ে পোড়ানো, মানুষ খুন করা, বোমা মারা, গ্রেনেড মারা- সব জায়গায় তো আছে। তারা যদি সামনে এসে দাঁড়ায়, তখন কী জবাব দেবে বিএনপি। এ জন্যই তারা বিদেশিদের কাছে ধরনা দিয়ে বেড়ায়। দেশের মানুষের কাছে যায় না।’

বিএনপির আন্দোলন প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আন্দোলন সংগ্রামের হুমকি পাওয়া যাচ্ছে। সেটা বিরোধীদলের কাজ। তবে বিরোধীদল যদি শক্তিশালী হতো, তাহলে অনেক কিছুই হতো।’ গণতান্ত্রিক আন্দোলনে বিএনপিকে বাধা দেয়া হচ্ছে না উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমরা তো বাধা দিচ্ছি না। আন্দোলন করেন, সংগ্রাম করেন। যত আন্দোলন করবেন তত ভালো। কিন্তু পারে না তো। কী করব।’

সংবাদ সম্মেলনে শেখ হাসিনা বলেন, আওয়ামী লীগ যতবার ক্ষমতায় এসেছে, ভোটের মাধ্যমেই এসেছে; নির্বাচনের মাধ্যমেই এসেছে। এ দেশে নির্বাচনের যতটুকু উন্নতি, যতটুকু সংস্কার, এটা আওয়ামী লীগ সবাইকে নিয়েই করে দিয়েছে। বিএনপিকে ইঙ্গিত করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এরপরও যদি কেউ না আসে, সেখানে আমাদের কী করণীয়। হারার ভয়ে আসবে না। একেবারে সবাইকে লোকমা তুলে খাইয়ে দিতে হবে; জিতিয়ে দিতে হবে; তবেই আসব। এটা তো হয় না।’

চায়ের আমন্ত্রণের সুযোগ নেই

প্রধানমন্ত্রীর কাছে এক সাংবাদিকের প্রশ্ন ছিল সামনে নির্বাচন। সবকিছু মিলিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোকে এবারও চায়ের আমন্ত্রণ জানাবেন কি না? তবে চলমান করোনাভাইরাস মহামারীর মধ্যে আগামী জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে বিরোধীদলগুলোর সঙ্গে সংলাপে বসার সুযোগ নেই বলে ইঙ্গিত দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

নির্বাচনে কে অংশ নেবে, কে নেবে না, সেটি যেকোন রাজনৈতিক দলের সিদ্ধান্ত উল্লেখ করে সরকারপ্রধান বলেন, ‘আমরা তো কিছু চাপিয়ে দিতে পারি না। রাজনীতি করতে হলে দলগুলো নিজে সিদ্ধান্ত নেবে। আমরা অবশ্যই চাই সব দল অংশগ্রহণ করুক। এতদিন কাজ করার পর নিশ্চয়ই আমরা চাইব, সবাই আসুক।’ প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘গতবার যে সবার সঙ্গে বৈঠক করলাম, আলোচনা করলাম, নির্বাচনে এসে দেখা গেল, তিনশ সিটে সাত নমিনেশন দিয়ে যখন নিজেরা হেরে গেল তখন সব দোষ কার, আমাদের।’

ওয়াশিংটন ডিসিতে অবস্থানকালে প্রভাবশালী মার্কিন গণমাধ্যম এনার্জি-এনভায়রনমেন্ট নিউজ, সিবিএস, ওয়াশিংটন পোস্ট এবং দ্য পলিটিকো তার সাক্ষাৎকার নিয়েছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এসব সাক্ষাৎকারে জলবায়ু পরিবর্তন, রোহিঙ্গা সংকট, রাশিয়া-ইউক্রেনের যুদ্ধের ফলে বৈশি^ক সংকট এবং অভ্যন্তরীণ রাজনীতির বিষয়সমূহ উঠে আসে।

আওয়ামী লীগ সরকারের উন্নয়ন দেশের কয়েকটি পত্রিকার ভালো লাগে না মন্তব্য করে সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা যতই ভালো করি তাদের চোখে কোনদিন ভালো লাগে না, তারা যেন এক ধরনের পরশ্রীকাতরতায় ভোগে। তবে, আমাদের কাজে জনগণ কতটুকু লাভবান হলো আমরা সেদিকেই বিশেষভাবে দৃষ্টি দেই।’

টানা ৫৫ মিনিট চলার পর প্রশ্নোত্তর পর্ব শেষ হয়। এরপর সবাইকে বিদায় জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী সংবাদ সম্মেলন কক্ষ ত্যাগ করেন। আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর সদস্য মতিয়া চৌধুরী, আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আবদুল মোমেন এ সময় মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন।

অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব ইহাসানুল করিম। মন্ত্রীসভার সদস্য এবং ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের জ্যেষ্ঠ নেতারাও সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন।

প্রসঙ্গত, প্রধানমন্ত্রী ১৫ সেপ্টেম্বর থেকে যুক্তরাজ্য ও যুক্তরাষ্ট্রে তার ১৮ দিনের রাষ্ট্রীয় সফর শেষ ৪ অক্টোবর দেশে ফেরেন। যুক্তরাজ্যে অবস্থানকালে তিনি রানী দ্বিতীয় এলিজাবেথের রাষ্ট্রীয় অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ায় যোগ দেন এবং পরে যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থানকালে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ৭৭তম অধিবেশনে ভাষণ দেন এবং বিভিন্ন সাইড ইভেন্টে অংশগ্রহণ এবং গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তির সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ এবং বৈঠক করেন।

back to top