আগামী ২১ নভেম্বর সশস্ত্র বাহিনী দিবস। দিবসটি উপলক্ষে দেশের সকল সেনানিবাস, নৌ ঘাঁটি ও স্থাপনা এবং বিমান বাহিনী ঘাঁটির মসজিদসমূহে দেশের কল্যাণ ও সমৃদ্ধি এবং সশস্ত্র বাহিনীর উত্তরোত্তর উন্নতি ও অগ্রগতি কামনা করে ফজরের নামাজ শেষে বিশেষ মোনাজাতের মধ্য দিয়ে দিবসের কর্মসূচি শুরু হবে। দিবসটি উপলক্ষ্যে রাষ্ট্রপতি ও সশস্ত্র বাহিনীর সর্বাধিনায়ক মোঃ আবদুল হামিদ এবং প্রধানমন্ত্রী ও প্রতিরক্ষা মন্ত্রী শেখ হাসিনা পৃথক পৃথক বাণী প্রদান করেছেন।

দিবসটি উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মো: আবদুল হামিদ তার বানীতে বলেছেন সশস্ত্র বাহিনী দিবস ২০২২ উপলক্ষে আমি বাংলাদেশ সেনা, নৌ ও বিমান বাহিনীর সকল সদস্যকে জানাই আন্তরিক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন। সশস্ত্র বাহিনী দিবসে আমি পরম শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করছি সর্বকালের সর্ব শ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধ শেখ মুজিবর রহমানকে, যার নেতৃত্বে দীর্ঘ নয় মাস সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর আমরা চূড়ান্ত বিজয় অর্জন করি। আমি গভীর শ্রদ্ধা জানাচ্ছি, সাতজন বীরশ্রেষ্ঠকে যারা মাতৃভূমির জন্য জীবন উৎসর্গ করেছেন। আমি গভীর শ্রদ্ধায় স্মরণ করছি মহান মুক্তিযুদ্ধসহ বিভিন্ন সময়ে দেশ ও দেশের বাইরে পোশাগত দায়িত্ব পালনকালে আত্মোৎসর্গকারী সশস্ত্র বাহিনীর বীর সদস্যদের। আমি তাদের আত্মার মাগফিরাত ও শান্তি কামনা করি। আমি সশস্ত্র বাহিনীর যুদ্ধাহত সদস্য শহিদ পরিবারের সদস্যদের প্রতি গভীর সমবেদনা জানাচ্ছি।

বাহিনী রাষ্ট্রপতি বলেন, মহান মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে গড়ে ওঠা সশস্ত্র বাহিনী জাতির গর্ব ও আস্থার প্রতীক। মহান মুক্তিযুদ্ধকালীন ১৯৭১ সালের ২১ নভেম্বর তিন বাহিনী সম্মিলিতভাবে পাকিস্তানী হানাদার বাহিনীর উপর সর্বাত্মক আক্রমণ পরিবচালনা করে। তাদের সম্মিলিত আক্রমণে হানাদার বাহিনী দিশেহারা হয়ে পড়ে যা আমাদের বিজয়কে তরান্বিত করে। তাই বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাসে ২১ নভেম্বর একটি স্মরণীয় দিন। মুক্তিযুদ্ধে সশস্ত্র বাহিনীর আবদান ও বীরত্বগাথা জাতি গভীর শ্রদ্ধার সাথে স্বরণ করে।

দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষার মহান দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি যেকোন প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকালিলায় বেসামরিক প্রশাসনকে সহযোগিতাসহ জাতিগঠনমূলক কর্মকান্ডে সশস্ত্র বাহিনীর ভূমিকা প্রশংসনীয়। সম্প্রতি দেশের পূর্বাঞ্চলে বন্যা পরিস্থিতি মোকাবিলয়া সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যরা ম্ঠা পর্যায়ে নিয়োজিত থেকে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। এছাড়া বাংলাদেশে করোনা সংক্রামন প্রতিরোধ ও মহামারি মোকাবিলায়ও সশস্ত্র বাহিনী কার্যকর ভূমিকা পালন করেছে। কেবল দেশেই নয়, সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যগণ জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে অংশ নিয়ে পেশাগত দক্ষতা, সর্বোচ্চ শৃঙখলা, সততা ও নিষ্ঠার সাথে দায়িত্ব পালন করে বহির্বিশ্বে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি উজ্জল করে চলেছেন।

রাষ্ট্রপতি বলেন, একটি শক্তিশালী আধুনিক ও প্রশিক্ষিত সশস্ত্র বাহিনী দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষার অন্যতম পূবশর্ত। সরকার সশস্ত্র বাহিনীর আধুনিকায়নের লক্ষ্যে ফোর্সেস গোল ২০৩০ প্রণয়ন করেছে। এর আওতায় সশস্ত্র বাহিনীতে যুক্ত হচ্ছে অত্যাধুনিক সামরিক সরঞ্জাম যা নি:সন্দেহে সশস্ত্র বাহিনীকে আরও আধুনিক, দক্ষ ও গতিশীল করবে। তবে যেকোন বাহিনীর উন্নয়নের জন্য নেতৃত্বের প্রতি গভীর আস্থা, পারস্পারিক বিশ্বাস ও শ্রদ্ধাবোধ, পেশাগত দক্ষতা, এবং সর্বোপরি শৃঙ্খলা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। মহান মুক্তির যুদ্ধের চেতনায় উদ্বুদ্ধ সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যগন রাষ্ট্র ও নেতৃত্বের প্রতি পরিপূর্ণ অনুগত থেকে কঠোর অনুশীলনও দেশপ্রেমের সমন্বয়ে সশস্ত্র বাহিনীর গৌরব সমুন্নত রাখতে সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালাবেন এ প্রত্যশা করি।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার বাণীতে বলেছেন আমাদের মহান স্বাধীনতা যুদ্দের ইতিহাসে ১৯৭১ সালের ২১ নভেম্বর একটি বিশেষ গৌরবময় দিন। বাংলাদেশ আওয়ামীলীগ সরকার পরিচালিত মুক্তিযুদ্ধে সেনা ,নৌ ও বিমান বাহিনীর অকুতোভয় সদস্যরা এ দিন সম্মিলিতভাবে দখলদার বাহিনীর বিরুদ্ধে পাল্টা আক্রমণের সূচনা করেন। মুক্তি বাহিনী, বিভিন্ন আধা সামরিক বাহিনীর সদস্যাগন ও দেশ প্রেমিক জনতা এই সমন্বিত আক্রমণে একতাবদ্ধ হন। দখলদার বাহিনী আত্মসমর্পনে বাধ্য হন। হানাদার পাকিস্তানি বাহিনীকে পরাজিত করে ১৬ ডিসেম্বর আমরা চুড়ান্ত বিজয় আর্জন করি। মহান মুক্তিযুদ্ধে বাঙালি জাতির অগ্রযাত্রা ও বিজয়ের স্মারক হিসেবে প্রতি বছর ২১ এ নভেম্বরও ‘সশস্ত্র বাহিনী দিবস’ পালন করা হয়।

প্রধানমন্ত্রী তার বানীতে বলেন, জাতির পিতা স্বাধীনতার পর একটি আধুনিক ও চৌকস সশস্ত্র বাহিনী গড়ে তোলার কাজ শুরু করেন। সেনা বাহিনীর জন্য তিনি মিলিটারী একাডেমি, কম্বাইড আমর্ড স্কুল ও প্রতিটি কোরের জন্য টেনিংস্কুলসহ আরও অনেক সামরিক প্রতিষ্ঠান ও ইউনিট গঠন করেন। তিনি চট্টগ্রামে বাংলাদেশ নৌ বাহিনীর ঘাটি ঈসা খা উদ্বোধন করেন। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের ব্যক্তিগত উদ্যোগে তৎকালীন যুগোশ্লাভিয়া থেকে নৌবাহিনীর জন্য দুটি জাহাজ সংগ্রহ করা হয়। বিমান বাহিনীর জন্য তিনি তৎকালীন সোভিয়েত ইউনিয়ন থেকে সুপারসনিক মিগ ২১ জঙ্গি বিমানসহ হেলিকপ্টার, পরিবহন বিমান ও রাডার সংগ্রহ করেন।

প্রধানমন্ত্রী তার বানীতে বলেন, বাংলাদেশ আওয়ামীলীগ ২০০৯ সালে সরকার পরিচালনার দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকে সশস্ত্র বাহিনীর আধুনিকায়নে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। আমরা সেনা,নৌ ও বিমান বাহিনীকে দেশে -বিদেশে উন্নততর প্রশিক্ষন প্রদানসহ আধুনিক প্রযুক্তিসপন্ন সরঞ্জাম দিয়ে সজ্জিত করেছি। জাতির পিতার নির্দেশে একটি স্বাধীন ও সার্বভৌমত্ব রাষ্ট্রের উপযোগী ১৯৭৪ সালে প্রনীত প্রতিরক্ষা নীতিমালার আলোকে ফোর্সেস গোল ২০৩০ প্রনয়ন করা হয়েছে। এর আওতায় তিন বাহিনীর পূর্র্নগঠন ও আধুনিয়কানের কার্যক্রমসমূহ পর্যায়ক্রমে বাস্তবায়ন করা হচ্ছে।

প্রধানমন্ত্রী তার বাণীতে বলেন, পেশাগত দায়িত্ব পালনের পাশাপশি সশস্ত্র বাহিনী দুর্যোগ মোকাবিলা, অবকাঠামো নির্মাণ, আর্ত মানবতার সেবা, বেসমামরিক প্রশসনকে সহায়ত ও বিভিন্ন জাতিগঠনমূলক কর্মকান্ডে অংশগহণ করছে। জাতিসংঘের শান্তিরক্ষা কার্যক্রমে নিষ্ঠার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করে সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যগন আন্তর্জাতিক পরিমন্ডলে দেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করেছেন । এভাবে সশস্ত্র বাহিনী আজ জাতির আস্থার প্রতীক হিসেকে গড়ে উঠেছে।

আইএসপিআর জানিয়েছে, ১৯৭১ সালের মহান স্বাধীনতা যুদ্ধে আত্মোৎসর্গকারী সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যদের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী আগামী সোমবার সকালে ঢাকা সেনানিবাসের শিখা অনির্বাণে পু¯পস্তবক অর্পণ করবেন। এরপর সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল এস এম শফিউদ্দিন আহমেদ, নৌবাহিনী প্রধান এডমিরাল মোহাম্মদ শাহীন ইকবাল এবং বিমান বাহিনী প্রধান এয়ার চীফ মার্শাল শেখ আব্দুল হান্নান নিজ নিজ বাহিনীর পক্ষ থেকে শিখা অনির্বাণে পু¯পস্তবক অর্পণ করবেন। তিন বাহিনী প্রধানগণ সশস্ত্র বাহিনী বিভাগে প্রধানমন্ত্রীর সাথে এবং বঙ্গভবনে রাষ্ট্রপতির সাথে সৌজন্য সাক্ষাৎ করবেন।

‘সশস্ত্র বাহিনী দিবস-২০২২’ উপলক্ষ্যে প্রধানমন্ত্রী ও প্রতিরক্ষা মন্ত্রী ঢাকা সেনানিবাসস্থ আর্মি মাল্টিপারপাস কমপ্লেক্সে বীরশ্রেষ্ঠদের উত্তরাধিকারী এবং নির্বাচিত সংখ্যক খেতাবপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধা ও তাঁদের উত্তরাধিকারীদের সংবর্ধনা প্রদান করবেন। এ সময় প্রধানমন্ত্রী কর্তৃক ৪ জন সেনা, ২ জন নৌ এবং ২ জন বিমান বাহিনী সদস্যদের ২০২১-২০২২ সালের শান্তিকালীন পদকে ভূষিত করবেন। অনুষ্ঠানে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী, প্রধানমন্ত্রীর নিরাপত্তা বিষয়ক উপদেষ্টা, সেনাবাহিনী প্রধান, নৌবাহিনী প্রধান, বিমান বাহিনী প্রধান, প্রধানমন্ত্রীর মূখ্য সচিব, সশস্ত্র বাহিনী বিভাগের প্রিন্সিপাল স্টাফ অফিসার (পিএসও), প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব, মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিবসহ অসামরিক ও সামরিক কর্মকর্তাগণ উপস্থিত থাকবেন।দিবসটি উদ্যাপন উপলক্ষ্যে প্রধানমন্ত্রীর পক্ষ হতে ২১ নভেম্বর বিকাল ৪ টায় ঢাকা সেনানিবাসস্থ সেনাকুঞ্জে সংবর্ধনা অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হবে।

সশস্ত্র বাহিনী দিবস উপলক্ষ্যে তিন বাহিনী প্রধানগণ নিজ নিজ বাহিনীর খেতাবপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধা/তাঁদের উত্তরাধিকারীদের অনুরূপ সংবর্ধনা প্রদান করবেন। ঢাকা ছাড়াও বরিশাল, কক্সবাজার, বগুড়া, সিলেট, ঘাটাইল, চট্টগ্রাম, যশোর, রংপুর ও খুলনা সেনানিবাস/ঘাঁটিতে সংশ্লিষ্ট এরিয়া সদর দপ্তরের ব্যবস্থাপনায় সংবর্ধনা অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হবে।