alt

জাতীয়

আন্তর্জাতিক নারী নির্যাতন প্রতিরোধ দিবস আজ

সচেতনতাই নির্যাতন প্রতিরোধের হাতিয়ার

জাহিদা পারভেজ ছন্দা : শুক্রবার, ২৫ নভেম্বর ২০২২

রংপুরের মেয়ে, আফরোজা সরকার। সিঙ্গেল মাদার। পেশায় সাংবাদিক। ৫ মামলা নিয়ে এ আদালত সে আদালত করছেন গত এক বছর ধরে। তার বিরুদ্ধে অনেকের অনেক অভিযোগের কথা জানিয়ে আফরোজা সংবাদকে বলেন, ‘নারী হওয়ার জন্যই মূলত এত অপদস্ত হতে হচ্ছে’।

আফরোজার কাছ থেকে জানা যায়, ২০২১ সালের ২৪ সেপ্টেম্বর রংপুর রিপোর্টার্স ক্লাবের সাধারণ সভায় এক অপ্রীতিকর ঘটনায় আফরোজা সরকারসহ ৫ জন আহত হন। গুরুতর আহত হয়ে সাংবাদিক আজম পারভেজ ও আফরোজা ছয় দিন হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন। হাসপাতালে থাকা অবস্থায় হামলাকারীরা আফরোজা ও আজম পারভেজসহ ১২ জনকে আসামি করে মামলা করে। ঘটনাটি নিয়ে ফেস দ্যা পিপল নামের একটি ফেইসবুক পেইজে লাইভে কথা বলার অপরাধে আফরোজার বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে তিনটি ও হামলা মারপিট এবং ছিনতাইয়ের দুটি মামলা দেয়া হয়।

আফরোজা বলেন, ‘৫ বছরের বিবাহিত জীবনে স্বামীর গালাগাল আর শারীরিক নির্যাতন সহ্য করতে না পেরে আমি নিজেই তাকে ডিভোর্স দেই। বর্তমানে একমাত্র সন্তানকে নিয়ে চরম দুঃখ কষ্ট সহ্য করে চলছি।’

‘নারী নির্যাতন প্রতিরোধে যেভাবে আমাদের এগিয়ে আসা দরকার আমরা তা করি না। বেশিরভাগ মেয়েই তাদের নির্যাতনের কথা বলে না বা বলতে চায় না। কারণ নির্যাতিত নারীদের পরিবার অনেক সময় তাদের সমর্থন দেয় না। আবার নির্যাতনের কথা অন্যরা জানলে সমাজের কাছে ছোট হয়ে যাবেন এমনটাও মনে করা হয়। কিন্তু এটা যে প্রতিবাদ, আর এভাবেই যে প্রতিরোধ তৈরি করা যায় আমরা এসব জানিই না। এটা জানাতে আমাদের কাজ করতে হবে।’

আন্তর্জাতিক নারী নির্যাতন প্রতিরোধ দিবসকে সামনে রেখে নারীদের নিয়ে কাজ করা আন্তর্জাতিক সংগঠন একশন এইড বাংলাদেশ-এর কান্ট্রি ডিরেক্টর ফারাহ্ কবিরের সঙ্গে কথা হয় সংবাদের।

ফারাহ্ কবির বলেন, গত কয়েক বছর ধরে বাংলাদেশে সামাজিক, সাংস্কৃতিক এবং অর্থনৈতিক সমস্যার একটি অন্যতম কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে নারীর প্রতি সহিংসতা। সম্প্রতি মোবাইল ফোন, ট্যাবলেট, ল্যাপটপ, কম্পিউটার এবং ইন্টারনেটের সহজলভ্যতা ও ক্রয়ক্ষমতা মানুষের নাগালে চলে আসায় এর ব্যবহারের ব্যাপকতা যেমন বৃদ্ধি পেয়েছে তেমনি অনলাইন প্ল্যাটফর্মগুলোতে নারীর প্রতি সহিংসতার একটি নতুন কৌশল তৈরি করে দিয়েছে।

তিনি বলেন, ‘অনলাইন সহিংসতার শিকার ভুক্তভোগী ব্যক্তিরা উদ্বেগ, অপরাধবোধ, বিব্রতবোধ, নিজেকে দোষারোপ করাসহ বিভিন্ন ধরনের ক্ষতির সম্মুখীন হোন যা তাদের ব্যক্তিগত, সামাজিক, শিক্ষাগত, অর্থনৈতিক ও পেশাগত জীবনকে প্রভাবিত এবং বাধাগ্রস্ত করে।

‘তথ্য অধিকার আইন-২০০৯ (আরটিআই) থেকে প্রাপ্ত তথ্য মতে, ‘২০১৩ থেকে ২০১৬ সাল পর্যন্ত, সাইবার অপরাধ ট্রাইবুন্যালে ৫২০টি মামলা হয়েছে যার মধ্যে ৩২৮টি মামলা প্রত্যাহার করা হয়েছে। অনলাইনে সংঘটিত প্রায় ৯০ শতাংশ সহিংসতার ঘটনায় ভুক্তভোগীরা কোন রিপোর্ট করেননি বলে জানান ফারাহ্ কবির।

তিনি বলেন, ‘একশন এইড বাংলাদেশ-এর ২০২২-এ করা একটি গবেষণায় পাওয়া তথ্য মতে, ৬৩.৫১ শতাংশ নারী উত্তরাদাতাই অনলাইনে সহিংসতার শিকার হয়েছেন বলে জানিয়েছেন, যা ২০২১-এর ৫০.১৯ শতাংশ থেকে ১৩.৩২ শতাংশ বেশি। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে এ সংক্রান্ত অভিযোগ দায়ের করার হারও অস্বাভাবিকভাবে কম।’

‘কাজেই জনসাধারণের মাঝে অনলাইন সহিংসতা প্রতিরোধে সচেতনতা ও সংবেদনশীলতা তৈরি করা অত্যন্ত জরুরি’ উল্লেখ করে ফারাহ্ কবির বলেন, ‘নারীদের সাহসের সঙ্গে বেরিয়ে আসতে হবে। কথা বলতে হবে। সমস্যার কথা নির্যাতনের কথা না বললে আরেকজন সচেতন হবে কী করে?’

জেড আই (জহিরুল ইসলাম) খান পান্না। সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী। আইন ও সালিশ কেন্দ্রের সাবেক সভাপতি ও ব্লাস্টের ট্রাস্টি বোর্ডের সদস্য। এসব সংগঠনের পক্ষে রাষ্ট্রীয় ও সামাজিক অনাচারের বিরুদ্ধে আইনি লড়াই করা এই আইনজীবী বলেন, ‘পুরুষতান্ত্রিক মানসিকতা থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। আর যা বলতে চাই তা হলো আমাদের পশুর দৃষ্টি, পশুর দৃষ্টিভঙ্গি, পশুর মানসিকতা এটা বন্ধ করতে হবে। তাইলে সমাজ সুস্থ হবে।’

‘আমার আরেকটা আবেদন আছে, আমি চেষ্টা করছি। সপ্তাহে একটা দিন অন্তত গার্লস স্কুলে জুডো কারাতে শেখানো হয়। বাধ্যতামূলকভাবে। এতে নাইনটি নাইন পারসেন্ট দাম্পত্য অত্যাচার কমে যাবে। রাস্তায় ছিনতাই কমে যাবে। এতে মেয়েদের আত্মবিশ্বাস বেড়ে যাবে।’ নারী নির্যাতন কিভাবে প্রতিরোধ করা সম্ভব এমন প্রশ্নে জেড আই খান পান্না বলেন, ‘একটা শিক্ষিত মহিলারে জিজ্ঞেস কইরা দেইখো বিয়ের সময় কাবিননামায় পইড়া সাইন দিছে কি না। না পইড়াই কিন্তু সাইন দিছে। কেন? এ বিষয়ে সচেতনতা আনতে হবে। এইটার জন্য আমার মামলা লড়তে হইছে ২০১৪ সাল থেকে।’

এরপর সাক্ষ্য আইনের ভেতরে ‘চরিত্র’ নিয়ে জিজ্ঞেস করবে সেটা নিয়েও মামলা করতেছি। কেন তারা (নারীরা) প্রটেস্ট করতে পারে নাই, কলতে পারে নাই যে এটা ঠিক না। প্রটেস্ট করতে হবে। ১০ জন হোক, দাঁড়ায় যাক, আমি তো ১০ জনকে নিয়া দাঁড়াতে বলি।

আমাকে আনেক মানুষ, ‘শিক্ষিত লোকজনই বলে যে আপনার কারণে ডিভোর্স বাড়ছে। আমি বলি হাজার বছর ধরে মেয়েদের যেভাবে মাইরা ঘরবন্দী করছেন এখন অন্তত তারা নিজেদের মতো কইরা ডিভোর্স দেয়া শিখছে। এটা কইরা আমি প্রাউড ফিল করি।’

নারীরা নির্যাতনের শিকার হয়ে যে মামলা করে তার নিষ্পত্তি নিয়ে প্রবীণ এই আইনজীবী বলেন, ‘নিষ্পত্তির গতিটা হইলো আদালতের ওপর। আমি জুডিশিয়াল সার্ভিস কমিশনে আলাপ কইরা বলবো দুইটা বিষয়ে সেন্সেটাইজড করা। একটা হচ্ছে, মেইনলি নারীদের সম্পর্কে, সেক্সুয়াল হ্যারসমেন্ট সম্পর্কে এবং এই যে পারিবারিক নির্যাতন টির্যাতন এগুলা সম্পর্কে অর্থাৎ নারী বিষয় নিয়ে তাদের আলাদাভাবে সবক দেয়া। একটা হলো কন্সটিটিউশনাল রাইট, আরেকটা হলো সন্ধ্যার সময় এরেস্ট করা। এটা ঠিক না। এসব বিষয়ে বিচার বিভাগ যদি সচেতন না হয়, তাইলে তারা বিচার কেমনে পাবে।’

‘প্রতিরোধ শব্দের মধ্যেই সীমাবদ্ধ রাখলে চলবে না, অবশ্য থাকবেও না। সময় লাগবে একটু। মনে আছে নিশ্চয়, ঢাকা কোর্টে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে রেইনট্রি মামলায় খালাস দিতে গিয়া এক নারী বিচারক কিছু অসংলগ্ন এবং অনৈতিক কথাবার্তা উচ্চারণ করছিলেন। তার বিরুদ্ধে প্রটেস্ট করার পরে ফৌজদারি মামলায় বিচারিক ক্ষমতা কাড়িয়া নেয়া হইছে না (?)। এইভাবেই প্রটেস্ট করতে করতে এক সময় একটা স্টেজে আসবে। প্রতিরোধ করা জানবে, শিখবে, তখন এগিয়ে যাবে নারী।’

আজ ‘ইন্টারন্যাশনাল ডে ফর দ্য এলিমিনেশন অব ভায়োলেন্স এগেইনস্ট উইমেন’ (আন্তর্জাতিক নারী নির্যাতন প্রতিরোধ) দিবস। আজ থেকে শুরু হচ্ছে আন্তর্জাতিক নারী নির্যাতন প্রতিরোধ পক্ষেরও। আজ থেকে ১০ ডিসেম্বর বিশ্ব মানবাধিকার দিবস পর্যন্ত পৃথিবীর দেশে দেশে বিভিন্ন কর্মসূচির মাধ্যমে এ পক্ষ পালিত হবে। বাংলাদেশের নারী ও মানবাধিকার সংগঠনগুলোও এ উপলক্ষ্যে বিস্তারিত কর্মসূচি নিয়েছে। বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ দিবসটি উপলক্ষে আলোচনা সভার আয়োজন করছে।

সংগঠনের উদ্যোগে ‘নারী ও কন্যা নির্যাতন বন্ধ করি, নতুন সমাজ নির্মাণ করি’ প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে সারাদেশে বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করবে।

নারীর প্রতি সহিংসতা প্রতিরোধে ১৯৮১ সালে লাতিন আমেরিকায় নারীদের এক সম্মেলনে ২৫ নভেম্বর আন্তর্জাতিক নারী নির্যাতন প্রতিরোধ দিবস পালনের ঘোষণা দেয়া হয়। ১৯৯৩ সালে ভিয়েনায় বিশ্ব মানবাধিকার সম্মেলন দিবসটিকে স্বীকৃতি দেয়। জাতিসংঘ দিবসটি পালনের আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি দেয় ১৯৯৯ সালের ১৭ ডিসেম্বর। বাংলাদেশে নারী নির্যাতনের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক প্রতিবাদ দিবস উদ্যাপন কমিটি ১৯৯৭ সাল থেকে এই দিবস ও পক্ষ পালন করছে।

ছবি

ট্রাফিক সদস্যদের ছাতা-স্যালাইন-জুস-শরবত দিলেন আইজিপি

ছবি

ফুলেল শ্রদ্ধায় শিব নারায়ণ দাশকে বিদায়

ছবি

দেশে ইন্টারনেট সেবায় ব্যাঘাত

ছবি

তীব্র দাবদাহ : প্রাথমিক স্কুলে অ্যাসেম্বলি বন্ধ রাখার নির্দেশ

ছবি

শিব নারায়ণের কর্নিয়ায় আলো ফুটবে দুই অন্ধের চোখে

ছবি

একদিনে করোনায় আক্রান্ত ১৬ জন

ছবি

তাপপ্রবাহ নিয়ে ৭২ ঘণ্টার সতর্ক বার্তা আবহাওয়া অধিদপ্তরের

ছবি

বঙ্গবন্ধু টানেলে টোল ফ্রি সুবিধা পেল যেসব গাড়ি

ছবি

সারাদেশে তিন দিনের হিট অ্যালার্ট জারি

ছবি

জাতীয় পতাকার নকশাকার শিবনারায়ণ দাস আর নেই

ছবি

বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে পারস্পরিক সহযোগিতা ও অভিজ্ঞতা বিনিময় করা হবে : আরাফাত

স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র এবং মুজিবনগর দিবস সম্পর্কে নতুন প্রজন্মেকে জানাতে হবে

ছবি

স্থানীয় সরকার নির্বাচ‌নে ভোটার উপ‌স্থি‌তি সংসদ নির্বাচ‌নের ‌চে‌য়ে বে‌শি থাকবে

ছবি

প্রাণিসম্পদ সেবা সপ্তাহ ও প্রদর্শনীর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী

ছবি

থাইল্যান্ড সফরে যাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী

জুন-জুলাইয়ে দেশে ইনফ্লুয়েঞ্জার হার বেশি

মধ্যপ্রাচ্য পরিস্থিতির ওপর নজর রাখতে বললেন প্রধানমন্ত্রী

এথেন্স সম্মেলনে দায়িত্বশীল ও টেকসই সমুদ্র ব্যবস্থাপনায় সম্মিলিত প্রয়াসের আহ্বান পররাষ্ট্রমন্ত্রীর

ছবি

কৃষকরাই অর্থনীতির মূল চালিকাশক্তি: স্পিকার

ছবি

মধ্যপ্রাচ্য পরিস্থিতির ওপর নজর রাখার তাগিদ প্রধানমন্ত্রীর

ছবি

লালমনিরহাট সীমান্তে বিএসএফের গুলিতে সাবেক ইউপি সদস্য গুলিবিদ্ধ

ছবি

তৃতীয় ধাপে ১১২ উপজেলায় ভোট ২৯ মে

ছবি

এমভি আবদুল্লাহ : ২১ নাবিক দেশে ফিরবেন জাহাজে, বাকি দুজন বিমানে

ছবি

৯৬ হাজার ৭৩৬ শিক্ষক নিয়োগে প্রক্রিয়া শুরু, আবেদনের নিয়ম

ছবি

ঢাকায় গ্রিসের দূতাবাস স্থাপন ও জনশক্তি রপ্তানি বৃদ্ধি নিয়ে আলোচনা

ছবি

টিসিবির তালিকা হালনাগাদ করতে চাই:বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী

ছবি

লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে গমের আবাদ কম

ছবি

ভোজ্য তেলের দাম বাড়াতে চায় ব্যবসায়ীরা আপত্তি বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রীর

ছবি

অনিবন্ধিত অনলাইনের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নেবো : তথ্য প্রতিমন্ত্রী

ছবি

জলবায়ু পরিবর্তনে দেশে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে কৃষিখাত : মন্ত্রী

ছবি

দেশে ফিরতে আরও ১০ দিন সময় লাগবে নাবিকদের

ছবি

মুক্ত এমভি আবদুল্লাহর ৩ ছবি প্রকাশ

ছবি

২ মে বসছে সংসদের দ্বিতীয় অধিবেশন

ছবি

কারো যাতে ডেঙ্গু না হয় সেজন্য সবাইকে কাজ করতে হবে : স্বাস্থ্যমন্ত্রী

ছবি

মুক্তিপণ দেওয়ার ছবি নিয়ে যা বললেন নৌ প্রতিমন্ত্রী

ছবি

লঞ্চে বেড়েছে ঢাকায় ফেরা যাত্রীর চাপ

tab

জাতীয়

আন্তর্জাতিক নারী নির্যাতন প্রতিরোধ দিবস আজ

সচেতনতাই নির্যাতন প্রতিরোধের হাতিয়ার

জাহিদা পারভেজ ছন্দা

শুক্রবার, ২৫ নভেম্বর ২০২২

রংপুরের মেয়ে, আফরোজা সরকার। সিঙ্গেল মাদার। পেশায় সাংবাদিক। ৫ মামলা নিয়ে এ আদালত সে আদালত করছেন গত এক বছর ধরে। তার বিরুদ্ধে অনেকের অনেক অভিযোগের কথা জানিয়ে আফরোজা সংবাদকে বলেন, ‘নারী হওয়ার জন্যই মূলত এত অপদস্ত হতে হচ্ছে’।

আফরোজার কাছ থেকে জানা যায়, ২০২১ সালের ২৪ সেপ্টেম্বর রংপুর রিপোর্টার্স ক্লাবের সাধারণ সভায় এক অপ্রীতিকর ঘটনায় আফরোজা সরকারসহ ৫ জন আহত হন। গুরুতর আহত হয়ে সাংবাদিক আজম পারভেজ ও আফরোজা ছয় দিন হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন। হাসপাতালে থাকা অবস্থায় হামলাকারীরা আফরোজা ও আজম পারভেজসহ ১২ জনকে আসামি করে মামলা করে। ঘটনাটি নিয়ে ফেস দ্যা পিপল নামের একটি ফেইসবুক পেইজে লাইভে কথা বলার অপরাধে আফরোজার বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে তিনটি ও হামলা মারপিট এবং ছিনতাইয়ের দুটি মামলা দেয়া হয়।

আফরোজা বলেন, ‘৫ বছরের বিবাহিত জীবনে স্বামীর গালাগাল আর শারীরিক নির্যাতন সহ্য করতে না পেরে আমি নিজেই তাকে ডিভোর্স দেই। বর্তমানে একমাত্র সন্তানকে নিয়ে চরম দুঃখ কষ্ট সহ্য করে চলছি।’

‘নারী নির্যাতন প্রতিরোধে যেভাবে আমাদের এগিয়ে আসা দরকার আমরা তা করি না। বেশিরভাগ মেয়েই তাদের নির্যাতনের কথা বলে না বা বলতে চায় না। কারণ নির্যাতিত নারীদের পরিবার অনেক সময় তাদের সমর্থন দেয় না। আবার নির্যাতনের কথা অন্যরা জানলে সমাজের কাছে ছোট হয়ে যাবেন এমনটাও মনে করা হয়। কিন্তু এটা যে প্রতিবাদ, আর এভাবেই যে প্রতিরোধ তৈরি করা যায় আমরা এসব জানিই না। এটা জানাতে আমাদের কাজ করতে হবে।’

আন্তর্জাতিক নারী নির্যাতন প্রতিরোধ দিবসকে সামনে রেখে নারীদের নিয়ে কাজ করা আন্তর্জাতিক সংগঠন একশন এইড বাংলাদেশ-এর কান্ট্রি ডিরেক্টর ফারাহ্ কবিরের সঙ্গে কথা হয় সংবাদের।

ফারাহ্ কবির বলেন, গত কয়েক বছর ধরে বাংলাদেশে সামাজিক, সাংস্কৃতিক এবং অর্থনৈতিক সমস্যার একটি অন্যতম কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে নারীর প্রতি সহিংসতা। সম্প্রতি মোবাইল ফোন, ট্যাবলেট, ল্যাপটপ, কম্পিউটার এবং ইন্টারনেটের সহজলভ্যতা ও ক্রয়ক্ষমতা মানুষের নাগালে চলে আসায় এর ব্যবহারের ব্যাপকতা যেমন বৃদ্ধি পেয়েছে তেমনি অনলাইন প্ল্যাটফর্মগুলোতে নারীর প্রতি সহিংসতার একটি নতুন কৌশল তৈরি করে দিয়েছে।

তিনি বলেন, ‘অনলাইন সহিংসতার শিকার ভুক্তভোগী ব্যক্তিরা উদ্বেগ, অপরাধবোধ, বিব্রতবোধ, নিজেকে দোষারোপ করাসহ বিভিন্ন ধরনের ক্ষতির সম্মুখীন হোন যা তাদের ব্যক্তিগত, সামাজিক, শিক্ষাগত, অর্থনৈতিক ও পেশাগত জীবনকে প্রভাবিত এবং বাধাগ্রস্ত করে।

‘তথ্য অধিকার আইন-২০০৯ (আরটিআই) থেকে প্রাপ্ত তথ্য মতে, ‘২০১৩ থেকে ২০১৬ সাল পর্যন্ত, সাইবার অপরাধ ট্রাইবুন্যালে ৫২০টি মামলা হয়েছে যার মধ্যে ৩২৮টি মামলা প্রত্যাহার করা হয়েছে। অনলাইনে সংঘটিত প্রায় ৯০ শতাংশ সহিংসতার ঘটনায় ভুক্তভোগীরা কোন রিপোর্ট করেননি বলে জানান ফারাহ্ কবির।

তিনি বলেন, ‘একশন এইড বাংলাদেশ-এর ২০২২-এ করা একটি গবেষণায় পাওয়া তথ্য মতে, ৬৩.৫১ শতাংশ নারী উত্তরাদাতাই অনলাইনে সহিংসতার শিকার হয়েছেন বলে জানিয়েছেন, যা ২০২১-এর ৫০.১৯ শতাংশ থেকে ১৩.৩২ শতাংশ বেশি। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে এ সংক্রান্ত অভিযোগ দায়ের করার হারও অস্বাভাবিকভাবে কম।’

‘কাজেই জনসাধারণের মাঝে অনলাইন সহিংসতা প্রতিরোধে সচেতনতা ও সংবেদনশীলতা তৈরি করা অত্যন্ত জরুরি’ উল্লেখ করে ফারাহ্ কবির বলেন, ‘নারীদের সাহসের সঙ্গে বেরিয়ে আসতে হবে। কথা বলতে হবে। সমস্যার কথা নির্যাতনের কথা না বললে আরেকজন সচেতন হবে কী করে?’

জেড আই (জহিরুল ইসলাম) খান পান্না। সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী। আইন ও সালিশ কেন্দ্রের সাবেক সভাপতি ও ব্লাস্টের ট্রাস্টি বোর্ডের সদস্য। এসব সংগঠনের পক্ষে রাষ্ট্রীয় ও সামাজিক অনাচারের বিরুদ্ধে আইনি লড়াই করা এই আইনজীবী বলেন, ‘পুরুষতান্ত্রিক মানসিকতা থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। আর যা বলতে চাই তা হলো আমাদের পশুর দৃষ্টি, পশুর দৃষ্টিভঙ্গি, পশুর মানসিকতা এটা বন্ধ করতে হবে। তাইলে সমাজ সুস্থ হবে।’

‘আমার আরেকটা আবেদন আছে, আমি চেষ্টা করছি। সপ্তাহে একটা দিন অন্তত গার্লস স্কুলে জুডো কারাতে শেখানো হয়। বাধ্যতামূলকভাবে। এতে নাইনটি নাইন পারসেন্ট দাম্পত্য অত্যাচার কমে যাবে। রাস্তায় ছিনতাই কমে যাবে। এতে মেয়েদের আত্মবিশ্বাস বেড়ে যাবে।’ নারী নির্যাতন কিভাবে প্রতিরোধ করা সম্ভব এমন প্রশ্নে জেড আই খান পান্না বলেন, ‘একটা শিক্ষিত মহিলারে জিজ্ঞেস কইরা দেইখো বিয়ের সময় কাবিননামায় পইড়া সাইন দিছে কি না। না পইড়াই কিন্তু সাইন দিছে। কেন? এ বিষয়ে সচেতনতা আনতে হবে। এইটার জন্য আমার মামলা লড়তে হইছে ২০১৪ সাল থেকে।’

এরপর সাক্ষ্য আইনের ভেতরে ‘চরিত্র’ নিয়ে জিজ্ঞেস করবে সেটা নিয়েও মামলা করতেছি। কেন তারা (নারীরা) প্রটেস্ট করতে পারে নাই, কলতে পারে নাই যে এটা ঠিক না। প্রটেস্ট করতে হবে। ১০ জন হোক, দাঁড়ায় যাক, আমি তো ১০ জনকে নিয়া দাঁড়াতে বলি।

আমাকে আনেক মানুষ, ‘শিক্ষিত লোকজনই বলে যে আপনার কারণে ডিভোর্স বাড়ছে। আমি বলি হাজার বছর ধরে মেয়েদের যেভাবে মাইরা ঘরবন্দী করছেন এখন অন্তত তারা নিজেদের মতো কইরা ডিভোর্স দেয়া শিখছে। এটা কইরা আমি প্রাউড ফিল করি।’

নারীরা নির্যাতনের শিকার হয়ে যে মামলা করে তার নিষ্পত্তি নিয়ে প্রবীণ এই আইনজীবী বলেন, ‘নিষ্পত্তির গতিটা হইলো আদালতের ওপর। আমি জুডিশিয়াল সার্ভিস কমিশনে আলাপ কইরা বলবো দুইটা বিষয়ে সেন্সেটাইজড করা। একটা হচ্ছে, মেইনলি নারীদের সম্পর্কে, সেক্সুয়াল হ্যারসমেন্ট সম্পর্কে এবং এই যে পারিবারিক নির্যাতন টির্যাতন এগুলা সম্পর্কে অর্থাৎ নারী বিষয় নিয়ে তাদের আলাদাভাবে সবক দেয়া। একটা হলো কন্সটিটিউশনাল রাইট, আরেকটা হলো সন্ধ্যার সময় এরেস্ট করা। এটা ঠিক না। এসব বিষয়ে বিচার বিভাগ যদি সচেতন না হয়, তাইলে তারা বিচার কেমনে পাবে।’

‘প্রতিরোধ শব্দের মধ্যেই সীমাবদ্ধ রাখলে চলবে না, অবশ্য থাকবেও না। সময় লাগবে একটু। মনে আছে নিশ্চয়, ঢাকা কোর্টে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে রেইনট্রি মামলায় খালাস দিতে গিয়া এক নারী বিচারক কিছু অসংলগ্ন এবং অনৈতিক কথাবার্তা উচ্চারণ করছিলেন। তার বিরুদ্ধে প্রটেস্ট করার পরে ফৌজদারি মামলায় বিচারিক ক্ষমতা কাড়িয়া নেয়া হইছে না (?)। এইভাবেই প্রটেস্ট করতে করতে এক সময় একটা স্টেজে আসবে। প্রতিরোধ করা জানবে, শিখবে, তখন এগিয়ে যাবে নারী।’

আজ ‘ইন্টারন্যাশনাল ডে ফর দ্য এলিমিনেশন অব ভায়োলেন্স এগেইনস্ট উইমেন’ (আন্তর্জাতিক নারী নির্যাতন প্রতিরোধ) দিবস। আজ থেকে শুরু হচ্ছে আন্তর্জাতিক নারী নির্যাতন প্রতিরোধ পক্ষেরও। আজ থেকে ১০ ডিসেম্বর বিশ্ব মানবাধিকার দিবস পর্যন্ত পৃথিবীর দেশে দেশে বিভিন্ন কর্মসূচির মাধ্যমে এ পক্ষ পালিত হবে। বাংলাদেশের নারী ও মানবাধিকার সংগঠনগুলোও এ উপলক্ষ্যে বিস্তারিত কর্মসূচি নিয়েছে। বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ দিবসটি উপলক্ষে আলোচনা সভার আয়োজন করছে।

সংগঠনের উদ্যোগে ‘নারী ও কন্যা নির্যাতন বন্ধ করি, নতুন সমাজ নির্মাণ করি’ প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে সারাদেশে বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করবে।

নারীর প্রতি সহিংসতা প্রতিরোধে ১৯৮১ সালে লাতিন আমেরিকায় নারীদের এক সম্মেলনে ২৫ নভেম্বর আন্তর্জাতিক নারী নির্যাতন প্রতিরোধ দিবস পালনের ঘোষণা দেয়া হয়। ১৯৯৩ সালে ভিয়েনায় বিশ্ব মানবাধিকার সম্মেলন দিবসটিকে স্বীকৃতি দেয়। জাতিসংঘ দিবসটি পালনের আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি দেয় ১৯৯৯ সালের ১৭ ডিসেম্বর। বাংলাদেশে নারী নির্যাতনের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক প্রতিবাদ দিবস উদ্যাপন কমিটি ১৯৯৭ সাল থেকে এই দিবস ও পক্ষ পালন করছে।

back to top